ল্যাম্পপোস্ট (১)

0
1162

বিয়ের এক সপ্তাহ আগে বয়ফ্রেন্ডের মৃ ত্যু সংবাদ টা কর্ণপাত হতেই কেঁদে জ্ঞান হারিয়ে ফেলেছে বিভা। এই তো কিছু সময় আগে খবর এসেছে সুপার স্টার আরহাম আরাজ মা রা গেছেন। জানা গেছে কেউ খুব যত্ন নিয়ে তাঁকে খু’ন করেছে। শরীরের প্রতি টা অংশ যেন একটু একটু করে কাঁ’ টা হয়েছে। যার দরুন বডি সাধারণ দৃষ্টিতে চেনা যাচ্ছে না। চিন্তিত মুখে ঘরময় পায়চারি করে যাচ্ছে বিভার বাবা ইফতেখার আহমেদ। মেয়ের জ্ঞান হারানো টা স্বাভাবিক তবে পরবর্তী সময় নিয়েই ওনার যত রকম চিন্তা। প্রচন্ড জেদি ধাঁচের মেয়ে বিভা। চোখ গুলো বড় বড় হওয়ায় একটু ক্রোধ হলেই যেন আত্মা কেঁপে উঠে। বড়োলোক বাবার এক মাত্র মেয়ে হলে ও অহংকার একদম ই নেই। সাধারন ভাবেই চলা ফেরা করে। তবে রেগে গেলে বাঘে গরু তে এক ঘাটে জল খাওয়ার জন্য প্রস্তুত। বিভার সাথে আরাজের সম্পর্ক বছর দেড়েক হলে ও পরিচয় কয়েক বছর যাবত। আরাজের ফ্যামিলির সাথে আহমেদ ফ্যামিলির বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক। তার সূত্র পাত ধরে বিভার সাথে পরিচয় হয় আরাজের। অস্ট্রিয়াতে সেটেল আরাজের ফ্যামিলি। বিজনেস এর কাজেই বিডি তে আসা। বাল্য কালের পরিচয় হলে ও দেড় বছর আগে পরিচয়টা আরো গাঢ় হয়। নিজ বার্থডে তে আরাজের প্রপোজ পায় বিভা। কয়েক শ মানুষের সামনেই প্রপোজ করে আরাজ। অতি সহজেই গ্রহন করে নেয় বিভা। প্রেমের শুরুটা এভাবে হলে ও প্রেম গাঢ় হলো তো ঐ মাস তিনেক আগে। সেদিন ই বাগদান হয়েছিল ওদের। কথা ছিল বিয়ে হবে। কিন্তু কি থেকে কি হয়ে গেল। ইফতেখার ফোন হাতে ব্যস্ত হলেন।

তিন ঘন্টা বাদে জ্ঞান ফিরে বিভার। সব কথা মনে হতেই পাগলের মতো হয়ে যায় মেয়েটি। আরাজের কাছে যাওয়ার জন্য পাগলামি শুরু করে। দুজন পরিচারিকা বিভা কে সামলাতে ব্যর্থ হয়। যেন কোনো অদৃশ্য শক্তি এসেছে বিভার শরীরে। আর শক্তি বেড়ে চলেছে অকলিপ্ত ভাবে। নিজ মেয়ের এমন কান্ডে বিচলিত হয়ে পড়লেন ইফতেখার। বিভা কে বাঁধা প্রদান করে ব্যগ্র কণ্ঠে বলেন,
“শান্ত হও বিভা। এমন পরিস্থিতি তে উম্মাদের মতো আচরণ ঠিক নয় মামুনি।”

“আরাজ,আমি আরাজের কাছে যাব পাপা। খুব বেশি ভালোবাসি ওকে। আমাদের তো বিয়ে হওয়ার কথা। আর আরাজ তো আজকেই বিডি তে আসবে। আমাকে যেতে দাও পাপা। যেতে দাও প্লিজ। ওর কিছু হয় নি পাপা। কিছু হয় নি।”

“বিভা মামুনি আমার শান্ত হও।”

কথাটা বলেই কান্নায় ভেঙ্গে পড়লেন ইফতেখার। বিভা কে অনেক বেশি ভালোবাসেন তিনি। এই মেয়ে কে নিয়েই তো ওনার জীবন। ইফতেখারের চোখের জল বিভার চোখে লাগে না। মেয়েটির অশ্রু সিক্ত চোখ দুটি ব্যগ্র হয়েছে আরাজের কাছে যাওয়ার জন্য। আশে পাশে চোখ বুলিয়ে ইফতেখারের দিকে তাকায়। মাথায় হাত দিয়ে নিচু হয়ে বসে আছেন তিনি। এক মুহূর্ত অপচয় করে না সে। বাসা থেকে বের হয়ে যায় মুহূর্তেই।

এক মাস পর
ডাবলিনের ( আয়ারল্যান্ড এর রাজধানী ) একটি প তি তাল য়ে ২০ টি মেয়ে কে ধরা হয়েছে। জানা গেছে এরা প তি তা বৃত্তে প্রফেশনালি কাজ করে। গ্লাস ভর্তি ওয়াইন নিয়ে হাজির হলো রবার্ট। অফিসার ইস্টন এর সাথে কথা বলছে অ্যাড। অত্যন্ত রাগি ছেলে অ্যাড। রবার্ট এর সাহস হয় না কথা বলার। ইস্টনের সাথে কথা বলে এগিয়ে আসে অ্যাড। রবার্টের হাত থেকে গ্লাস তুলে নিয়ে এক নিশ্বাসে শেষ করে ওয়াইনের সর্বশেষ ফোঁটা অবধি। ভয় পেয়ে দু হাত পিছিয়ে যায় রবার্ট। ফর্সা মুখ টা লাল হয়ে গেছে। কপালের ভাঁজ যেন খুলে পড়বে। ইংলিশে অ্যাড বলল,
“আমাকে ভয় পাচ্ছ তুমি?”

“দুঃখিত স্যার।”

“নোলান কে সমস্ত ইনফরমেশন দাও। বলবে ২০ জন মেয়ে পাওয়া গেছে।”

“ওকে স্যার।”

রবার্ট মাথা নিচু করে চলে যায়। অ্যাডের দু ভ্রু এর ফাঁকে সূক্ষ্ম ভাঁজ পড়েছে। মেয়ে গুলো কে এখনো দেখে নি সে। কিছুক্ষণ পর অফিসার ইস্টন কিছু পেপার নিয়ে ফিরে আসেন। পেপার গুলো চেইক করে অ্যাড। সব ঠিক ঠাক থাকায় বলে,
“আমি এখন ওদের সাথে দেখা করতে চাই। সমস্ত কিছু রেডি করে রাখো।”

“ওকে।”

যাওয়ার জন্য পথ আগায় অ্যাড। আচানাক ইস্টন পিছু ডাকে,”অ্যাড দাঁড়াও। তোমাকে একটা বিশেষ কথা বলা হয় নি।”

“হুম বলো।”

“যে মেয়ে গুলো কে লিস্ট করা হয়েছে তাদের মাঝে একজন ভিনদেশী।”

“হোয়াট!”

কথাটা অবাক হয়েই বলে অ্যাড। আয়ারল্যান্ডে ভিনদেশী মেয়ে প তি তার সাথে জড়িত তা ও আবার প্রফেশনালি! বিষয় টা কেমন অদ্ভুত লাগে ওর। যদি ও বিশেষ রহস্য নয়। জাতিগত ভিন্নতা থাকলে ও নারীর বাহ্যিক রূপে তো হের ফের নেই। তবু খটকা লাগে। তথ্য অনুযায়ী এমন টা হওয়ার কথা না! এক মুহূর্ত দেড়ি করে না সে, সোজা হাঁটা লাগায়। ইস্টন আবার ও পিছু ডেকে বলে,
“অ্যাড এভাবে যাওয়া উচিত হবে না। তুমি দাঁড়াও আমি সব ব্যবস্থা করছি। আমার কথা শোনো , অ্যাড!”

লম্বা পা ফেলে এগিয়ে যায় অ্যাড। ইস্টনের ডাক তার কর্ণপাত ঘটে নি। বোকার মতো দাঁড়িয়ে থাকে ইস্টন। অ্যাড কে কোনো কালেই বোঝাতে পারল না!

বদ্ধ রুমের কাছে এসে থামে অ্যাড। আগের ছয় টা রুমে গিয়ে ভিনদেশীর দেখা মিলে নি। এখন এই বদ্ধ ঘর টাই বাকি। লম্বা করে দম নেয় ছেলেটা। ঘরটার আগা থেকে গোঁড়া অবধি দেখে নিয়ে স্থির করল এই ঘর টায় যাবে সে। দরজায় বহু কালের ময়লা জমে আছে। পকেট থেকে মাস্ক বের করে মুখে মাস্ক লাগায় বেশ ভালো করে। দরজায় ধাক্কা দিতেই গায়ে কিছু ধুলো এসে পড়ে। কাশি উঠে যায়। কাশতে কাশতে আশে পাশে চোখ বুলায়। বদ্ধ ঘরের অবস্থা মোটে ও ভালো নয়। এ ঘরের চারপাশে রয়েছে সব অযোগ্য আসবাবপত্র। দেয়ালে হাত বুলিয়ে লাইট জ্বালায় তবে লাইট ও জ্বলছে না। পরিশেষে ফোনের ফ্লাস অন করে। অসর্তক থাকায় ভাঙা চেয়ারের সাথে পা উল্টে যায়। মেঝে তে পড়ে ফর্সা হাতের অবস্থা হয় র ক্তলাল। কিছু টা ছিঁলে গেছে বোধহয়। হালকা ব্যথা অনুভব হয়। মেঝে থেকে উঠে জ্যাকেট পরিষ্কার করার সময় চোখে পরে ধুলো তে জড়ানো ভিনদেশী। হলদেটে মুখে কিছুটা চুল লেপ্টে আছে। শীতের মাঝে ও ঘেমে একাকার। ছিমছাম গড়ন তবে রুগ্ন। ফ্লাস টা আরেকটু কাছে নিতেই ভিনদেশীর পূর্ন রূপ দেখতে পায় সে। পাতলা ঠোঁটের গড়নের চিকন নাকের অধিকারিনী ভিনদেশীর দেশ সম্পর্কে আন্দাজ করতে পারে না তৎক্ষণাৎ। ভিনদেশীর নাক থেকে মৃদু র ক্তে র স্রোত নেমে যায়। এবার সচকিত হয় ছেলেটা। দ্রুত মেয়েটার মুখে হাত রেখে হালকা হাতে থাপ্পড় দেয়। মেয়েটা সম্পূর্ণ নিস্তেজ হয়ে পরে আছে। পোষাকের সাজসজ্জা দেখে মেয়েটা আদৌ কি প তি তা নাকি অন্য কিছু তা ঠিক বুঝতে পারল না। প তি তা হলে জ্ঞান শূন্য হয়ে পড়ে আছে কেন? নানান প্রশ্নে পাগল প্রায় অবস্থা। এ দিকে ভিনদেশীর নাক থেকে র ক্তে র ফোয়ারা নেমে যাচ্ছে। সময় নষ্ট করে না সে। মেয়েটা কে কোলে তুলে নিয়ে স্টোর রুম থেকে বেরিয়ে আসে।

করিডোর দিয়ে অ্যাড কে দেখতে পায় ইস্টন। প্রচন্ড অবাকের সহিত কিছুক্ষণ তাকিয়ে থাকে। অ্যাডের কণ্ঠ পেয়ে ছুটে আসে।
“দ্রুত ওকে হসপিটালে নেওয়ার ব্যবস্থা করো। কাকে পাঠিয়েছিলে তুমি? মেয়েটা জ্ঞান শূন্য হয়ে আছে দেখতে পাও নি? এত টা কেয়ারলেস!”

“সরি। আসলে আমি অতো টা মূল্য দেই নি। বাট তুমি ওকে কোলে তুলে নিলে? সে প তি তা দলের সহিত যুক্ত।”

“সময় নষ্ট করো না ইস্টন। সী ইজ ভেরি উইক। দ্রুত ট্রিটমেন্ট এর প্রয়োজন। না হলে যা তা হতে পারে। এটা আমি চাচ্ছি না। সকল কে সুস্থ রাখতে হবে। একদম ই সুস্থ।”

ইস্টন অবাক চোখে তাকায়। অ্যাড একটা প তি তার জন্য এত ব্যগ্র হচ্ছে! প তি তা দের প্রতি ঘৃনা পোষন করা অ্যাড আজ সেই প তি তা কেই কোলে তুলে নিয়েছে। ইস্টন কে নড়চড়হীন দেখে অ্যাডের বিরক্তি জাগে।
“ইস্টন তুমি কি আমার কথা বুঝতে পারো নি?”

অ্যাডের চিৎকারের ধ্যান ভাঙে ইস্টনের। মাথা নত করে বলে,
“আমি এখনি সব ব্যবস্থা করছি।”

দ্রুত পায়ে হাঁটা লাগায় ইস্টন। ভিনদেশী কে কোলে নিয়েই দাঁড়িয়ে থাকে অ্যাড। কেন যেন মনে হচ্ছে এ মেয়ে প তি তা হতে পারে না। ওর মনের সাথে বাস্তবতা যেন উল্টো পথে চলছে। বিরক্ত হয় সে। কি করছে কিছুই বুঝতে পারছে না। কে এই ভিনদেশী? কিই বা তার আসল পরিচয়। কোন দেশের বাসিন্দা সে?

#ল্যাম্পপোস্ট (১)
কলমে ~ ফাতেমা তুজ নৌশি
চলবে……

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here