লারিসা পর্ব ৯

0
473

গল্প : লারিসা | পর্ব : নয়

ছেলেটা এসেছিল কাকভেজা হয়ে। বলল তার গায়ে আগুন লেগেছে। কারণ সে নাকি পানিতে ঝাঁপ দিয়েছিল। ওই পানিই নাকি আগুন! তারপর আবার ধোঁয়া ওঠা টগবগে জল নিজের গায়ে ঢেলে বলতে লাগল, আঃ! কী আরাম! এসব দেখে লারিসা খুবই অবাক হয়েছিল। এবং ভেবেছিল, এমন অদ্ভুত মানুষও পৃথিবীতে আছে!
অথচ, আসল জিনিসটা সে এখনও দেখেইনি। এখনো সে জানে না যে, এই ছেলেটা আসলে লি রি! যে কিনা…

ছেলেটা সেই কখন থেকে ঘুমুচ্ছে। টেবিলের উপর মাথা রেখে একরকম নাক ডেকে সময় কাটাচ্ছে। লারিসার বিরক্ত লাগছিল। সে শপ ক্লোজ করে ঘরে ফিরবে। কিন্তু এই ছেলেটার জন্য পারছে না। একে ভেতরে রেখে কীভাবে শপে তালা দেয় সে? তাছাড়া ছেলেটা যে পরিমাণ অদ্ভুত, বলা তো যায় না, কাল ভোর হবার আগেই পুরো শপের বারোটা বাজিয়ে দিতে পারে।

অগত্যা ঘুমে ঢলোঢলো চোখে নির্বাক চেয়ে রইল লারিসা।
একটু পর ছেলেটার মুখোমুখি চেয়ারে বসে পড়ল সে। সময় গড়িয়ে যেতে যেতে কখন যে তার চোখ লেগে এসেছিল তা সে জানে না। পুরোপুরি ঘুমের রাজ্যে তলিয়ে যাবার পর, যখন বাস্তব জগত অন্ধকার হয়ে এসেছে, তখন লারিসা একটা বাজে স্বপ্ন দেখে ফেলল। স্বপ্নটা খুবই বাজে এবং জঘন্য। কিন্তু ঘুম ভেঙে যাবার পর তার আর কিছুই মনে রইল না। শুধু সে আবিষ্কার করল, তার ঘুম ভেঙে গেছে এবং সে খুব হাঁপাচ্ছে। বুক উঠানামা করছে খুব। গা ঘেমে গেছে। টাইট অন্তর্বাসের ভেতরে একরকম পানি জমে গেছে বলা যায়। খুলে ফেলতে ইচ্ছে করছিল। কিন্তু সামনে একটা ছেলেমানুষ। সুতরাং তা আর করল না।

এবার লারিসা আবিষ্কার করল, তার চারপাশ পুরোটা অন্ধকার। এতটাই অন্ধকার যে, তার মুখোমুখি চেয়ারে বসে যে ছেলেটা ঘুমুচ্ছে, তাকেও দেখা যাচ্ছে না। ছেলেটা কি এখনও আছে? না কি চলে গেছে? একবার হাত বাড়িয়ে ছুঁয়ে দেখবে?

লারিসা ভেবে পায় না।
অন্ধের মতো হেঁটে যায় ক্যাশ-কাউন্টার পর্যন্ত। উঁচু টেবিলের এক কোণে বড়ো সাইজের ক্যান্ডেল রাখা। সেটাতে আগুন দিতেই মৃদু আলো চারপাশে ছড়িয়ে পড়ল। শপটা একেবারে ছোটো। পনেরো বাই বিশ ফিট হবে। তবে পুরোটা লারিসার মনের মতো করে সাজানো। ডিটেইলস্ বলার সময় নেই কারণ এখনি লারিসা এমন কিছুর সম্মুখীন হতে চলেছে, যা তার কল্পনাকেও হার মানায়।

ঢুকঢুক করে পানি খায় লারিসা।
গলা একেবারে শুকিয়ে গেছে। বুকটা এখনও ধড়ফড় করছে। ঠিকমতো নিঃশ্বাস নেওয়া যাচ্ছে না। আরো একটা ব্যাপার হলো, তার চোখে জল!
কী এমন স্বপ্ন দেখেছে সে?

একটা ভুল হয়ে গেছে।
পানি মনে করে লারিসা ড্রিংক করে ফেলেছে। মদ।
সে কখনো ড্রিংক করে না। এক কাস্টমারের জন্য তৈরি করেছিল। সেটা রয়ে গেছে টেবিলে এবং এখন তার গলা দিয়ে পেটের ভেতরে চলে গেছে। ইয়াক! মনে হচ্ছে গলার ভেতর দিয়ে আগুন যাচ্ছে। ভেতরটা জ্বলেপুড়ে ছাই হয়ে যাচ্ছে। ইয়াক!

লারিসা টের পায়, সে হুঁশ হারিয়ে ফেলছে। এখনই হয়তো সেন্সলেস হয়ে পড়বে। মাথা ঘুরছে, চোখ ঝাঁপসা, চারপাশটা কেমন যেন কাঁপছে, চক্কর কাটছে। লারিসা স্থির হয়ে দাঁড়াতে চায়, চোখ খুলে ভালো করে তাকাতে চায়। কিন্তু পেরে উঠে না।

ক্যান্ডেল হাতে নিয়ে কোনোরকমে ওই টেবিলের কাছে পৌঁছায় সে। ক্যান্ডেলটা টেবিলের উপর রেখে চেয়ারে বসে পড়ে। তার ঠিক উল্টো পাশের চেয়ারে বসে টেবিলের উপর মাথা রেখে ঘুমুচ্ছে ছেলেটা। কিন্তু একি!

এক ঝটকায় যেন নেশা কেটে গেল লারিসার।
না কি নেশা করেছে বলেই এমন দেখছে সে?
লারিসা চোখ কচলে আবার তাকায়। ভালো করে চেয়ে দেখে। এবং নিশ্চিত হয়, তার সামনে এমন একজন মানুষ ঘুমুচ্ছে, যার গায়ের লোমগুলো জঙলী পশুর মতো ঘন এবং বড়োবড়ো! হাতের নখগুলো অনেক লম্বা লম্বা। মাথার চুল সিংহের মতো ঘন। আর পিঠে হাতির দাঁতের মতো তিনটি শিং!

শপের মেঝেতে নিজেকে আবিষ্কার করল লারিসা। তার ঠিক সামনে হাঁটুতে ভর দিয়ে বসে আছে ছেলেটা। লারিসাকে জাগতে দেখে সে শিম্পাঞ্জির মতো মুখ করে বলে, “আপনি মরেননি? আমি ভাবলাম মারা গেছেন।”

লারিসার ঘোর এখনও পুরোপুরি কেটে যায়নি। মাথাটা এখনও ঘুরছে। সে কোনোমতে উঠে বসে তাকায় ছেলেটার দিকে। এই ছেলেটাই তো কাল রাতে… ঘন লোমশ দেহ ছিল তার, হাতের নখ ছিল কুকুরের মতো, পিঠের উপর হাতির দাঁতের মতো শিং…
কিন্তু এখন তো সব স্বাভাবিক। লারিসা ভেবে পায় না, আসলেই কি ছেলেটা এমন হয়ে গিয়েছিল? না কি মদ্যপ অবস্থায় ভ্রম হয়েছিল তার?

চলবে
মো. ইয়াছিন

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here