লাভনীতি -০৯

0
2004

#লাভনীতি
বিথি হাসান-০৯

২৭.
সকাল ঘুম থেকে ওঠেই আসাদ চলে যায়। তাতে যেন কোন মাথা ব্যাথাই নেই নম্রতার।তার এখন আরো ফ্রি ফ্রি লাগছে।আসাদ যাওয়ার আগে কিছু বলে যায়নি।নম্রতা মনে মনে ভাবছে,আসাদের উচিত শিক্ষা হয়েছে।তার আত্মসম্মান থাকলে আর এই মুখো হবে না।নম্রতা মনে সুখে গান গেয়ে যাচ্ছে।

“আহা!!কি আনন্দ,,
আকাশে বাতাসে,”

নম্রতার খুশিটা দ্বিগুন হলো নিজের ভাইকে দেখে।অর্ক এসেই জরিয়ে ধরে নম্রতা কে।নম্রতাকে খুশি দেখে অর্কের ও ভালো লাগছে।তার মন বলছে,বোন হয়তো সুখেই আছে।অর্ক আর নম্রতার দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে আফসানা।অর্ককে দেখে আফসানা কোন রকম রিয়েক্ট করছে না।

না রাগ দেখাচ্ছে আর না কান্না করছে।একদম স্বাভাবিক আচরন করছে।এমনকি অর্কর সাথে কুশলাদি ও করেছে।অর্কের ভেতরটা আফসানা কে দেখার পরই স্যাঁত করে ওঠেছিলো।এখন আবার এমন আচরন।সামান্য টেনশন ও হচ্ছে এবার অর্কের।কিন্তু বোন সামনে থাকায় কিছু বলতে ও পারছে না।

—-“নম্রু যাহ!!আমি এখন ফ্রেশ হবো!!

আফসানা আর নম্রতা ওঠে দাড়াতেই পিছন থেকে আফসানার হাত ধরে ফেলে অর্ক।আফসানা দাড়িয়ে গেলেও নম্রতা বেরিয়ে যায়।নম্রতা খেয়াল করেনি তার সাথে আফসানা বের হয়েছে নাকি।নম্রতা যেতেই দরজা আটকে দেয় অর্ক।তারপর ঘুরে আফসানার দিকে তাকায়।আফসানার দৃষ্টি একবারে নরমাল।এতে নরমাল চাহনি হয়তো রিলেশনের আগেও ছিলো না আফসানার।

দরজা লাগানো দেখে আফসানা ভ্রু কুচকে তাকিয়ে থাকে অর্কের দিকে।অর্কের শান্ত দৃষ্টি দেখে আফসানা একটা বড় শ্বাস ছেড়ে পাশ কাটিয়ে চলে আসতে নিলে অর্ক আফসানা কে টেনে নিজের কাছে নিয়ে যায়।আফসানা ও নিজেকে ছাড়ানোর বিন্দু পরিমান চেষ্টা ও করছে না।সে মুখ শক্ত করে অন্য দিকে তাকিয়ে থাকে।অর্ক কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে আফসানার ঠোটে হাতের বৃদ্ধা আঙুল দিয়ে স্লাইড করতে থাকে।

আফসানা এবার চুপ থাকতে পারে না।সে রাগ করে না বিরক্ত হয়ে যায়।মহা বিরক্ত। অর্ক আপাতত আফসানর কাছে বিরক্তিকর পার্সন।যাকে আর সহ্য করার শক্তি হচ্ছে না আফসানার।সে এক ঝটকা দেয় অর্কের হাত সরানোর জন্য। কিন্তু একটু নড়াতে পারলেও সরাতে পারেনি।

—–“কি করছেন টা কি অর্ক ভাই??

—-“চুপ!ভাই কি?হ্যা ভাই কি রে?আমি তোর ভাই?

—-“ভাই না তো কি হাই?আপনি আমার জামাই লাগেন?

আফসানার দু হাত পিছনে নিয়ে চেপে ধরে অর্ক।চেচিয়ে ওঠে আফসানা।লোক টা কি করতে চাইছে টা কি?যাই করুক সে কোন প্রকার রিয়েক্ট করবে না।

—-“ছাড়ুন আমায়!!কিসব অসভ্যতামি??কেয়ারলেস ছিলেন এখন কি কারেক্টারলেস ও হতে চান??

—-“কারেক্টার আমার ঠিকিই আছে পাখি।তোমাকে তা নিয়ে গবেষণা করতে বলেনি কেউ!!!

—-“উফফফফ!! অসহ্য!!ছাড়ুন বলছি।আমার মন ভেঙে পোষেনি আপনার এখন কি ঘৃনার পাত্র হতে চান???

আফসানার হাতটা ছেড়ে দেয় অর্ক।তারপর সোজা দরজা খুলে বেরিয়ে যায়।আফসানা শব্দ করে কেদে দেয়।জীবনটা বড্ড বিভিষীকাময় লাগছে তার কাছে।কোন কিছুই তার মন মত হচ্ছে না।যার ফলে জীবনের প্রতি এই আফসোস আফসানার।

—————————-
২৮.
আসাদ তার চেম্বারে বসে বসে মনযোগ দিয়ে একটা ভিডিও দেখছে।ভিডিও তে একটা মেয়ের বার্থডে সেলিব্রেশনে করছে তার বন্ধুরা।মেয়েটা নম্রতার একটা ফ্রেন্ড। আর নম্রতা ও আছে এই ভিডিও তে।নম্রতা খুব ইনজয় করছে দেখেই বুঝা যাচ্ছে। হঠাৎ একটা ছেলে নম্রতার গালে কেক লাগিয়ে দেয়।নম্রতা ও হেসে ছেলেটার গালে লাগিয়ে দেয় নিজের গালের থেকে।তারপর তারা উভয়েই হেসে দেয়।

খুব শান্ত মেজাজে আসাদ ফুল ভিডিও টা দেখে।ভিডিও টা দেখে প্রথমে রাগ লাগলেও।মনের কোথায় যেন একটা ধুক করে ওঠে।মনটা কেমন যেন বেসামাল লাগছে।একটা দ্বীর্ঘশ্বাস দিয়ে মোবাইলটা টেবিলে রেখে দেয়।

তার মানে নম্রতার লাইফে অন্য কেউ আছে।এই জন্যই কি নম্রতা তার সাথে এমন করছে??তাহলে সেটা প্রকাশ করে না কেন মেয়েটা?যদি আসাদ জোর করে তাহলে নম্রতা কিছুই করতে পারবে না সেটা আসাদ জানে।তারপর ও তাকে এই বিষয় টা জানতেই হবে এবং তাও নম্রতার থেকে।কোন কিছুই পরিকল্পনা ছাড়া আসাদ করে না।প্রত্যেকটা কাজ তার পরিকল্পনা মোতাবেক হয়।সে এমন কোন কিছু করতে চায় না যাতে তার রাজনীতিতে বেগ পেতে হয়।এর জন্য না বাবা আবারও তার উপর রেগে যায়।

আসাদ দ্রুত বেরিয়ে পরে নম্রতার কলেজের উদ্দেশ্যে।পিছে তার বিশাল গার্ড বাহিনী।আসাদ আজকে প্রকাশে এসেছে নম্রতার কলেজে।আজকেই সে জানবে নম্রতার জীবনে সে ছাড়া কে আছে?আর কেউ থাকলেও তাকেও দেখে নিবে কার এতো বড় কলিজা?

নম্রতা মাত্রই ক্লাসে বসে ব্যাগে বই ডাকাচ্ছিলো।আফসানা আজকে আসেনি।তার নাকি মন ভালো না।আর আজকে ইম্পর্ট্যান্ট ক্লাসও ছিলো।নম্রতা মিস দিতে পারেনি।এর মধ্যেই কেউ চেচিয়ে বলে ওঠে।

—-“ঐ বাবু এসেছে আসাদুজ্জামান বাবু।দেখে যা কত সুন্দর সে!!আমার তো খেয়ে ফেলতে ইচ্ছে করছে।”

নম্রতার মাথাটা চট করে গরম হয়ে যায়।এই লোকটা এখানে কেন এসেছে?মেয়েদের মাথা খাওয়ার জন্য? এতে রঙডঙ করার কি আছে?বিয়ে হয়েছে বউ আছে কয়দিন পর বাচ্চা হবে!! না তারতো সুন্দর দেখানো প্রয়োজন মেয়েদের মাথা খাওয়ার জন্য। যত্তসব!!!

বকবক করতে করতে ক্লাস থেকে বের হয় নম্রতা। কলেজের কেউ এখনো জানেই না নম্রতাই এই বাবুর বউ।আজকে সে সবাইকে জানাবে এই সুন্দর লোকটা আর সিঙ্গেল নেই।সে এখন অন্য কারো সম্পদ।আর সেই সম্পদের মালিক আর কেউ না এই নম্রতা।

আসাদ প্রিন্সিপালের রুমে বসে স্যারের সাথে কথা বলছিলো।এর মধ্যে অনুমতি চেয়ে ভেতরে প্রবেশ করে নম্রতা। নম্রতা কে দেখে আসাদের চেহারায় কোন পরিবর্তন আসেনি।যা দেখে নম্রতা রাগ বেড়ে যায়।সে প্রিন্সিপালের সাথে একটা ইম্পর্ট্যান্ট বিষয়ে নিয়ে কথা বলে আসাদের দিকে তাকিয়ে চলে আসে।নম্রতা বেরিয়ে যেতেই আসাদ একটা মুচকি হাসি দেয়।কারন সে বুঝতে পারছে নম্রতা এখানে শুধু তাকে দেখতেই এসেছিলো।

আসাদ প্রিন্সিপালের কাছে এসেছে নম্রতার বিষয়ে কিছু ইনফরমেশন নিতে।এবং সতর্ক করতে যাতে তার বউ সেফ থাকে।প্রিন্সিপালের রুম ত্যাগ করে বেরিয়ে আসে আসাদ।মাঠে আসতেই কোথা থেকে যেন নম্রতা তার হাত ধরে একঝাক সাংবাদিক এর কাছে নিয়ে যায়।আসাদ সামান্য অবাক হয়।মেয়েটা আসলে করতে চাইছেটা কি?। আর এগুলো কে জানালো?আর এতো দ্রুত কিভাবে এগুলো পৌছালো?মুহূর্তেই আসাদ ও নম্রতার চারপাশে আসাদের গার্ড ছড়িয়ে পরে।

—-“ম্যাম আপনি স্যারের কি হোন?
—-“ম্যাম আপনার নাম কি?
—-“স্যার আপনি এখানে কি করেন?
—-“আপনারা কি কোন সম্পর্কে জরিত?

এমন হাজার টা প্রশ্ন ছুড়ে মারে সাংবাদিক গন নম্রতা ও আসাদের উপর।আসাদ নম্রতার হাতটা চেপে ধরে কিছুটা ভেতরে নিয়ে আসে।নম্রতার দিকে অগ্নি চোখে তাকিয়ে বলে,

—-“কি হচ্ছে টা কি নম্রতা? এসবের মানে কি?কি করতে চাও?

—-“দেখুন না কি চাই আমি!!

আসাদের হাতটা ছাড়িয়ে নম্রতা সাংবাদিকদের কাছে চলে আসে।তার পিছন পিছন আসাদও এসে দাড়ায়।এর মাঝেই নম্রতা বলে ওঠে,

—-“আমি কে জানতে চান?তাই তো বলবো,
এই লোকটা কে দেখছেন?আপনারা হয়তো জানেন না উনি বিবাহিত!!হ্যা আর আমিই তার স্ত্রী।

চলবে,

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here