#লাভনীতি
বিথি হাসান-০৩
০৮.
আসাদের একটা দারুন বদঅভ্যেস হলো, সে তার জীবন খুবই স্টাইলিশ ভাবে যাপন করে। এক্ষেত্রে তার জীবনে কত মেয়ে এসেছে আর গেছে তা অগুনিত। কত রাত ক্লাবে কেটেছে তা অজানা।এমনকি বাংলাদেশের নেতাদের মধ্যে সবচেয়ে রিচ ইয়াং ব্যাচেলার রাখার জন্য কত শত টাকা উড়িয়েছে তার হিসেব নেই।এসব মূলত তার বংশগত স্বভাব থেকেই এসেছে।সে রিচ পরিবারে বিলং করার বেনিফিট সে স্ব ধরে গ্রহন করেছে।তার পরিবারই তাকে এমন জীবন লীড করার সুযোগ দিয়েছে।আর কেন তা সে ছোট থেকেই জানে।
আজকেও আসাদ ক্লাবে এসেছে।নেতা ফেতাদের মিটিং এসব ক্লাবেই হয়ে থাকে।বা কাসিনো তে হয়ে থাকে।যদিও এখন আর তেমন সময় নেই ক্লাবে আশার মত।তারপর ও বড় বড় নেতাদের সাথে ওঠাবসা করতে হলেও ক্লাবে আশা হয়।ক্লাবে এসেছে সে ও তার সাথে তিনজন। এদের মধ্যে একজন ছাত্রলীগের আর দুজন নতুন রাজনীতি তে যোগ দিয়েছে।মূলত আজকে এদের সাথেই একটা মিটিং। ভিন্ন রকম একটা নিরিবিলি রুমে বসে ডিস্কাস করছে চারজন।কারো সাথেই কোন ধরনের অস্ত্র নেই।নেই কোন ভারতি মানুষ। যার যার পি এ তার তার জন্য মিটিং রুমের বাহিরেই অপেক্ষা করছে।এখানে প্রবেশ করার আগে রেখে আসতে হয়।মিটিং শেষে করা হয় রমরমা আয়োজন।
মিটিং শেষ হওয়ার মিনিট দুই পরেই রুমে প্রবেশ করে দুজন ওয়েস্টার্ন নারী।বয়স কি বা হবে ৩০-৩২বছর।এরা যে বাঙালি না তা তাদের চলাফেরা দেখেই বুঝা যায়।তাদের চেহারা তো আছেই।দুজনেই অর্ধনগ্ন। কয়েকজন ক্লাব কর্মকর্তা তাদের সেন্টার টেবিলে নানা ধরনের নেশা সাজিয়ে যাচ্ছে।গান ছেড়ে নাচা শুরু করে দিয়েছে নারীগন।কিন্তু আসাদ পায়ের ওপর পা তুলে সোফায় হেলান দিয়ে ফোন টিপছে।এসবে সে অবস্তু। তাই তার ভাবান্তর নেই।
—–একবার সে ফোন থেকে চোখ ওঠিয়ে তার সাথিদের অবস্থা দেখে নিলো।সবাই হাতে ওয়াইনের গ্লাস হাতে নিয়ে মজা নিচ্ছে।আসাদ আবার ফোনে ব্যস্ত হয়ে পরল।আসলে ও ফোনে একজনের সম্পর্কে তথ্য খুজতেছে।এর কিছুক্ষণ পর রুমে ডুকে আরো ২টা মেয়ে।তরুনী বলা চলে এদের।আসাদ এবার হাতের ফোনটা বন্ধ করে দিলো।টেবিলের ওপর রাখল।মেয়ে দুটো যে বাঙালি তা তাদের শরীরের গঠন ও নাচ বলে দিচ্ছে। বাঙালিদের দেখলেই চেনা যায়।কেমন যেন তাদের চেহারার আদল।
একটা মেয়ে এসে আসাদের কোলে বসে পরে।আর হাত দুলিয়ে গলা জরিয়ে নাচতে থাকে।আসাদ একটা হাত দিয়ে মেয়েটার কোমর জরিয়ে ধরে।ও সামনের দিকে তাকিয়ে দেখে তাদের সাথেও সেম কাজ হচ্ছে।আসাদ এবার মেয়েটার দিকে ভালো করে তাকালো।মেয়েটা হাসি দিয়ে আছে।বা গালে আবার টোল পরেছে।টোল টা দেখেই আসাদের কারো কথা মনে পরে গেলো।এক মুহূর্তে মেয়েটরা চেহারার জায়গা নম্রতার চেহারা ভেসে ওঠল তার কাছে।সে জোট করে দাড়িয়ে যায়।মেয়েটা পরে যায় তার কোল থেকে।আসাদ মেয়েটা কে না ওঠিয়ে হাতে একটা ওয়াইনের গ্লাস নিয়ে আবার বসে পরে।ঢকঢক করে গিলে ফেলে সবটা।
এবার একটু মাতলামো এসেছে। মেয়েটা আবার তার কাছে আসে।এবার আসাদের কল্পনায় চলে আসে নম্রতা তার সামনে দাড়িয়ে আছে।সে তার হাত ধরে মেয়েটা কে সামনে বসায়।মেয়েটা আবার হাত দিয়ে নাচতে চাইলে আসাদ বাধা দেয়।নাচতে দেয় না।সে মাতলামো কন্ঠে বলে,
—“হুশশশশশ।চুপ করেরররর বসে থাকো লাল সুন্দরী। তোমাকে আজ দেখতে আরো সুন্দর লাগছে।আমাকে তোমাকে দেখতে দাওওও।
মেয়েটা ভ্রু কুচকে তাকিয়ে আছে।আজকে এই বেটা নেতার কি হলো?অন্য দিন তো কত বোতল শেষ করেও তার নেশা চরে না।সে ও কতরাত পার করেছে এর সাথে।কই কখনো তো একে এতো নেশা চরতে দেখিনি?তবে আজ?আর আমাকে দেখতে চাইছে কেন?
—————————-
০৯.
নম্রতা মাত্র রাতের খাবার খেয়ে ঘুমানোর জন্য রেডি হচ্ছিল।আফসানা এসে থামিয়ে দেয়।নম্রতা ভ্রু কুচকে তাকিয়ে থাকে।এই মেয়েটা এতো উল্টো পাল্টো কাজ করে কেন?এখন ঘুমানোর সময় বলছে, ছাদে যাবে!!!এসবের কোন মানে হয়?একে তো বর্ষাকাল যে কোন সময় বৃষ্টি চলে আসে।তার ওপর এতো রাতে।ভুতের ভয় অবশ্য নম্রতা পায় না।তবে মামা মামী?আসলে আফসানার বয়ফ্রেন্ড আসবে নিচে!!!আফসানা সেটা ছাদ থেকে রিসিভ করবে।যত্তসব নেকামি।কিছু বলতে ও পারছে না তাকে নম্রতা। একে তে তাদের বাসায় থাকে সে।তার ওপর মামা মামীর কানে গেলে সব শেষ।এই আফসানার বিয়ে দিয়ে দিবে।তারপর তার ও করিয়ে দিবে।মামার কথা তার বাবা সু শুনে।
—–যথারীতি নম্রতা আর আফসানা ছাদে এসে একটু হাটাহাটি করছে।তিনতালার ছাদ।বাসার সামনে গাড়ির রাস্তা।শা শা করে একটু পর পর গাড়ি যাচ্ছে। নম্রতা একটু অন্য সাইডে চলে আসল আফসানা কে রেখে।কারন সে ফোনে তার বয়ফ্রেন্ড এর সাথে টক করছে।একটা ভেংচি কেটে আকাশের দিকে তাকায় সে।হঠাৎ চোখ বন্ধ করে ফেলে সাথে সাথে তার চোখের সামনে ভেসে ওঠে আসাদের সেই তার নাম নেওয়ার মুহূর্ত টা।সে মনে মনেই হেসে ওঠে।
ঝপঝপ করে বৃষ্টির ফোটা পরছে নম্রতার গায়ে।আফসানা সেই কখন থেকে তাকে ডাকছে সিরির রুমটায় যেতে।সে তার কথা পাত্তা না দিয়ে দুহাত ওপরে ওঠিয়ে বৃষ্টি গুলে নিজের গায়ে শুষে নিতে থাকে।সে যতটা খারাপ ভেবে ছিলো এই সিজনাল বৃষ্টি ততটা খারাপ না একচুয়ালি।তার পিঠে লম্বা লম্বা চুল বেয়ে বৃষ্টির ফোটা গড়িয়ে পরছে।নাক মুখ কান বেয়ে বেয়ে ঠান্ডা পানি গুলো গরম হয়ে পরছে।
—“আমি তোমার ও বিরহে রহিব বিলীন, তোমাতে করিব বাস। দীর্ঘ দিবস আর দীর্ঘ রজনী, দীর্ঘ বরষও মাস।
————-গাড়ির জানালা খোলা থাকায় বৃষ্টির ফোটা এসে ভিজিয়ে দিচ্ছে আসাদকে।নম্রতার গায়ে যে বৃষ্টি স্পর্শ করছে সেটা তার গায়েও করছে বলে সে সরে যাচ্ছে না।বরং স্ব ধরে তা গায়ে লাগাচ্ছে। নম্রতার ভিজে শরীর দুহাত মেলে দাড়িয়ে থাকা দেখে আসাদের মাতলামো আরো বেরে যাচ্ছে। সে এই মেয়েটার নেশায় কিভাবে পরছে?এতো এতো মেয়েরা কেন তাকে নেশা করতে পারল না?মেয়েটা কে পাওয়ার আকাঙ্ক্ষা বেড়ে গেলো কয়েক গুন।
ক্লাবে তার সামনে বসানো মেয়েটা যখন তাকে স্পর্শ করল তখন সে জাটকা মেয়ে সরে গেলো।এবং সোজা নম্রতাদের বাসার সামনে চলে এসেছে।পিছনে তার পি এ অনেকবার তাকে ডেকেছে।সে শুধু বলেছে, “কেউ যাতে তাকে ডিস্টার্ব না করে”
এসেছেই সে নম্রতাকে ছাদের কিনারায় দেখতে পায়। প্রথম ভরকে গিয়েছিলো এতো রাতে মেয়েটা এখানে একা কেন?একটু পরে আরেক পাশে আফসানা কে দেখে শান্ত হয়।তার জানালা খুলে মুখে মাফলার পেচিয়ে তাকিয়ে থাকে।যদিও এতো রাতে এখানে কোন মানুষ নেই।তারপর ও সে একজন সাধারন সম্পাদক। তার এতো সাধারন জীবন যাপন নেই।কেউ যদি ভুলেও দেখে মিডিয়া এক মিনিটে হাজির হয়ে যাবে।সে আশার সময় তার পি এ এর গাড়ি নিয়ে এসেছে।তার গাড়ির নাম্বার ও সবার চেনা।তার জীবনটা কত কঠিন।সব জায়গায় সাবধানতা অবলম্বন করতে হয়।
এসব ভাবতে ভাবতে বৃষ্টি এসে যায়।সে ভেবেছিলো নম্রতা মনে হয় এবার নেমে যাবে।কিন্তু না সে বৃষ্টি তে নিজের হাত মেলে ধরে। আর বৃষ্টি তাকে ভিজিয়ে দেয়।আসাদের ঘোর ঘোর লাগছে।
তার ও খুব ইচ্ছে করছে বৃষ্টি তে নম্রতা কে একটু জরিয়ে ধরতে। সে চাইলে এখনই ছুটে যেতে পারে।কিন্তু এমনটা করা বোকামি। মাত্রই তার ক্যারিয়ার দাড়ালো।তার বাবা এসব শুনলে কষ্ট পাবে।একমাত্র ছেলে বলে, রাগ,অভিমান,খুশি,কান্না সব ছেলেকে দেখায়। যদিও তার একটা বোন আছে।কিন্তু তার বাবা অন্য রকম মানুষ।
——————–
১০.
সকালে ঘুম থেকে ওঠে আসাদ জীম করে।এটা তার কলেজ লাইফের রুটিন।জীমের জন্য তার শরীর এতো ফিট থাকে।যে সে চাইলেই মিডিয়া তে হিরো রোল পেতে পারে।এসব তার চুটকির ব্যাপার।সে চাইলেই তার লাইফে অনেক কিছু হতে পারত।কিন্তু তার বাবা যা চায় তাই সে প্রাধান্য দেয়।সে মনে করে,তার বাবার জন্যই সে এতোটা সফল হয়েছে।
জুসের বোতল হাতে নিয়ে এক ঢোক জুস গিলে আরক ঢোক দিতে যাবে ফোনের দিকে তাকিয়ে তা আর দেওয়া হয় না।বোতলটা রেখে টাওয়াল দিয়ে শরীর মুছে সে বসে পরে।তারপর একটা হাসি দিয়ে কাকে যেন ফোন করে।
—“ইয়েস!! আসাদ স্পিকিং।আপনার সব ইনফরমেশন সঠিক?একটা ও ভুল নেই তো?
আচ্ছা ঠিক আছে,আই কল ইউ লেটার!!!
আসাদ একটা বাকা হাসি দেয় নিজেকে আয়নায় দেখতে দেখতে।লাল সুন্দরী ইউ আর ফিনিশড।আই ফিমিশড ইউ টু মাই ওয়ে।
আসাদের মা এর মধ্যে দরজায় নক করে।আসাদ তার মায়ের সাথে একদম ফ্রি।সে নম্রতার কথা তার মাকে সেই প্রথমদিনই বলে দিয়েছিলো।এর মধ্যে অনেকদিনই লুকিয়ে লুকিয়ে দেখেছে সে নম্রতা কে।কি নেশাই না লাগে মেয়েটার প্রতি তার।যেখানে সে মেয়েদের শুধু ভোগ করেই এসেছে।সেখানে এই মেয়েটা কি করল তাকে?কেন সে তাকে নিয়ে এতোটা পজেসিভ।
।
মিসেস লায়লা বেগম দরজা খুলে ছেলের মুখের মিস্টি হাসিটা দেখে সেও মুচকি হাসে,
মেয়েটা কি করলো তার ছেলেকে তা দেখে তিনি অবাক হয়।যে ছেলে মেয়েদের প্রতি কোনদিন এতো খেয়াল করেনি।যার একসপ্তাহ একটা গার্লফ্রেন্ড ছিলে সে নাকি কোন মেয়ের প্রতি দূর্বল হয়ে পরল।নম্রতার পিক ও দেখেছেন উনি।আসলেই মেয়েটা সুন্দর। না সুন্দর বললেও হয়ত কম হবে।কিন্তু তার ছেলে ও তো সুন্দর। আর নম্রতার থেকেও সুন্দরী রিচ মেয়েরা আসাদের পিছনে গুরে।আসাদ কে কখনো সে কোন মেয়ের প্রতি এতোটা সিরিয়াস হতে দেখেনি।এই ব্যাপার টা তার হাসবেন্ড তোফাজ্জল করিম এখনো জানেন না।না জানি জানলে কেমন রিয়েক্ট করেন।
আসাদের বাবা মি.তোফাজ্জল করিম।সে সারাজীবন নিজের স্টাটাস বজায় রেখে চলা ফেরা করেছে।কেউ কোনদিন তার আত্মসম্মানে আঘাত করতে পারেনি।তার স্বভাব যদিও একটু পয়সাওয়ালা দের মতই।কিন্তু উনি খাটি মনের মানুষ।পয়সা আর মন ভিন্ন পাল্লায় মাপে।দুটো একত্রে কখনো যোগ করেন নাহ।যার জন্য আজ ২৫বছর যাবত এই রাজনৈতিক কাজে জড়িত থাকতে পেরেছে।উনার মতে,রাজনীতি হলো একটা খেলা যেখানে যেকোন সময় যে কারো গুটি উল্টে যেতে পারে।ঠিক যেন সাদা কালো দাবা খেলার মত।এখানে রাজা যদিও একজন তবে তার মন্ত্রী হবার ইচ্ছে সকলের থাকে।সে না জানি কি করে এই সাধারন ঘরের মেয়েটার কথা শুনে।আর আসাদও তার বাবার মতই যা বলবে তাই করবে।যদিও সে তার বাবার ওপর কখনো কথা বলেনি।তবে সে তো মা জানে তার সন্তান কেমন?দুশ্চিন্তায় তার মাথা ধরে।তাই সে এসব চিন্তা ছেড়ে আসাদের দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসে,
আসাদও তার এতোদিনের কাজটা সম্পুর্ন হওয়া এবং মায়ের মুখে সকাল সকাল এতো সুন্দর হাসি দেখে তার মনটা খুবই খুশি হয়।
চলবে,
কালকে আমার প্রথম বিবাহ বার্ষিকী ছিল ।এজন্য অনলাইনে আসা হয় নি।আশা করি,সবাই ব্যাপার টা বুঝতে পারবে নিশ্চয়ই।ভুলত্রুটি ক্ষমা করবেন। ধন্যবাদ