রৌদ্দুরে প্রেমের বৃষ্টি পর্ব ৪ +৫

0
926

রৌদ্দুরে_প্রেমের_বৃষ্টি
#পার্টঃ৪,,,৫
রুবাইদা_হৃদি(sheikh ridy rahman)

বারান্দায় রাখা বেতের দোলনায় বসে আছি মাথায় হাত দিয়ে৷ জিনিয়া আমার পাশে কাচুমাচু করে বসে আছে৷ ওর হাতে কাব্য ভাইয়ের দেওয়া আইফোন টুয়েলভ৷ এই মোবাইলের বিনিময়ে আমার একমাএ বোন মি’থ্যা জা’লে আমায় ফাঁ’সিয়ে দিয়েছে৷ রাগে আমার শরীর কাঁপছে!আমি ওর সামনে দাঁড়িয়ে জোরে একটা থা’প্পড় লাগিয়ে হাফ ছাড়লাম৷ ইচ্ছা হচ্ছে আরো কয়েকটা থা’প্পড় ওর গালে লাগিয়ে দেই৷ জিনিয়া ভ্যা ভ্যা করে কেঁদে উঠলো৷ ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে বলল,

–‘তু….তুই আ…মায় মারতে পারলি আপু?’

আমি ওর আরেক গালে থা’প্পড় দিয়ে বললাম,

–‘তোকে আমার খু’ন করতে ইচ্ছা হচ্ছে জানিস!এতো বড় লো’ভী কেন তুই?সামান্য একটা ফোনের জন্য তুই বাড়ি ভর্তি মানুষের সামনে কাব্য ভাইয়ের কথায় তাল মেলাতে পারলি৷ আর বাবা,সেও তোর কথা চোখ বন্ধ করে বিশ্বাস করে!তুই সেটা জেনেও তোর বোনের জীবন দোটানায় মি’থ্যার বেড়াজালে জড়াবি?’

কান্না করতে করতে হেঁচকি তুলে ফেলেছে ও৷ গালের হাত সরাতেই দেখি পাঁচ আঙুলের ছাপ বসে গেছে৷ বুকের মাঝে চিনচিনে ব্যা’থা হলো ওর কান্নামাখা মুখ টা দেখে৷ ওর যখন ছয় বছর তখন মা হঠাৎ করে আমাদের ছেড়ে আল্লাহর কাছে চলে যায়৷ আর আমার তখন নয় বছর৷ বাবা আমাদের কষ্ট হবে দেখে বিয়ে করে নি৷ সেই ছয় বছরের জিনিয়াকে আমি আগলে আগলে রাখতাম সব সময় ৷ কিন্তু ও ভুল করেছে৷ যা ক্ষ’মার যোগ্য না৷ আমি ওর দিক থেকে মুখ ঘুরিয়ে অন্যদিকে তাকিয়ে রাগী স্বরে বললাম,

–‘কাব্য ভাইয়া তোকে কি বলেছিলো!সব বলবি, নাহলে আবার থা’প্পড় মারবো তোকে৷ ফা’জিল মেয়ে!’

–‘কিছুই বলে নি,শুধু বলেছিলো তুই নীতুর বিয়ের দিন আমি যা বলবো তাতে হ্যাঁ বলবি৷ আমি কারণ জিজ্ঞাসা করতে ভাইয়া বলেছিলো,এই ছেলের সাথে তোর বিয়ে হলে নাকি অনেক বড় সমস্যা হবে৷ বিশ্বাস কর আপু আমি মানা করেছিলাম বাট তোর সমস্যা হবে শুনে রাজি হয়ে গিয়েছি৷’

আমি বাইরের দিকে তাকিয়ে থমথমে কন্ঠে বললাম,

–‘তোর ফোন আমার কাছে দিয়ে যাবি তুই৷ আর একটাও কথা বলবি না৷ আমার রাগ পড়ে গেলে তোর সাথে কথা বলবো৷ যদি এই বাড়িতে থাকতে চাস তবে থাক আর না হলে বাসায় চলে যাবি এখুনি৷’

–‘জিনিয়া কোথাও যাবে না৷ ও ওর ফুপির বাসায় এসেছে ওকে চলে যাওয়ার বলার তুই কে?’

কোথা থেকে কাব্য ভাই এসে বললেন কথাটা৷ আমি ঘুরে তাকিয়ে দেখি সে প্যান্টের পকেটে হাত গুজে আমার দিকে তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছেন৷ জিনিয়া কাব্য ভাইয়া কে দেখেই জড়িয়ে ধরে ফুঁপিয়ে কেঁদে উঠে৷ কাব্য ভাইয়া ওর মাথায় হাত বুলিয়ে আদুরে কন্ঠে বলল,

–‘কি হয়েছে জিনিয়া রাণীর?ওর কথায় কষ্ট পেয়েছো?’

–‘ভাইয়া,তুমি মোবাইল দিয়েছ দেখে আপু আমায় মেরেছে৷’

জিনিয়ার কথা শুনে রাগ আবার মাথা চারা দিয়ে উঠলো আমার৷ ওকে কাব্য ভাইয়ের কাছে থেকে ছাড়িয়ে হাতে থেকে মোবাইল নিয়ে কাব্য ভাইয়ের দিকে ছুড়ে দিয়ে বললাম,

–‘আপনি অনেক খারাপ কাব্য ভাই৷ যাকে বলে নির্ল’জ্জ!আপনার সাহস কি করে হলো এমন করার?আপনার হাতের পুতুল আমি৷ যে ভাবে নাচাবেন সেই ভাবে নাঁচবো ভেবেছেন?’

কাব্য ভাইয়া আমার দিকে শান্ত চোখে তাকিয়ে জিনিয়াকে উদ্দেশ্য করে বললেন,

–‘জিনিয়া তুই ড্রয়িং রুমে আম্মুর কাছে যা৷ যাওয়ার আগে মোবাইলটা উঠিয়ে নিয়ে যাস৷ আর ভুলেও আম্মুকে কিছু বলবি না কেমন?আর বললে তোকে ল্যাপটপ কিনে দিবো না৷’

জিনিয়া মোবাইল উঠিয়ে চোখ মুছে চলে যেতেই কাব্য ভাই হাত গুজে দাঁড়িয়ে বললেন,

–‘এইবার শুরু কর৷’

–‘বিয়ে নামক পবিএ সম্পর্ক নিয়ে আপনি মি’থ্যা বলেছেন কেন৷’

–‘তারপর?’

উনার গা ছাড়া ভাব দেখে আমি রেগে তার একদম কাছে গিয়ে চিল্লিয়ে বলি,
–‘তারপর মানে?কারণ বলবেন আপনি৷ আমি কারণ জানতে চাই৷ আমার বাবাকে,ফুপিকে সমস্ত কিছু বলবেন৷আপনি আমার সম্মান নিয়ে খেলছেন কাব্য ভাই৷ বুঝেছেন আপনি!’

কাব্য ভাই এক পাঁ আমার দিকে এগিয়ে আসলেন৷ আর আমি পিছিয়ে যেতেই দেয়ালে পিঠ ঠেকে৷ উনি দুই হাত দেয়ালে রাখেন৷ আমি উনার হাতের ভেতর আটকা পড়ে গেছি৷ এখন প্রচুর অস্বস্তি হচ্ছে আমার৷ হৃ’দপি’ণ্ড ধাক ধাক করে লাফাচ্ছে মনে হচ্ছে৷ এখুনি মনে হয় বুকের বা পাশ থেকে বেরিয়ে কাব্য ভাইয়ের উপরে পড়বে৷
–‘দূরে যান!’
–‘কেনো৷’
–‘আমার করা প্রশ্নের উত্তর দিন আপনি৷ হুটহাট একদম কাছে আসা আমার পছন্দ নয়৷’

কাব্য ভাই হু হা করে হেসে উঠলেন৷ আমি উনার হাসি দেখছি৷ সে হাসতে হাসতে একদম শান্ত হয়ে আমার মুখে ফুঁ দেয়৷ তার এমন কাজে আমার শরীরের ভেতর শিহরণ অনুভব হয়৷ কেঁপে উঠি আমি৷ উনি আবার নিজের মুখ এগিয়ে আনে৷ আমি উনার হাতের নিচে দিয়ে বেরিয়ে আসতে চাইলে উনি হাত নিচু করে ফেলেন৷ আমি উনার দিকে তাকিয়ে বলি,

–‘অস’ভ্যতামি করছেন কেন আপনি? নিজের সীমার মধ্যে থাকুন৷’

উনি হাত সরিয়ে দিতেই আমি অন্য পাশে গিয়ে দাঁড়িয়ে হাফ ছাড়ি৷ এইবার মিনতির সুরে বললাম,
–‘আপনি কারণ টা বলে দিন আমি সত্যি বলছি চলে যাবো আমি৷ ফুপি বা বাবাকে কাওকে কিছু বলা লাগবে না৷ আমি সামলিয়ে নিবো৷’

উনি শান্ত কন্ঠে বললেন,
–‘তোকে যেতে দেওয়ার জন্য নিয়ে এসেছি?যেতে দিলে তো বিয়ের দিন যেতেই দিতাম৷’

উনার ধাঁধার মতো কথা শুনে প্রচন্ড রা’গ লাগছে আমার৷ আমি তেতে উঠে বললাম,
–‘তাহলে বিয়ে না করেই রাখবেন?কি হিসেবে রাখবেন৷ বোন হিসেবে তো রাখতে পারবেন না সেই স্কোপ টা আপনি মি’থ্যা বলে বন্ধ করে দিয়েছেন৷ র’ক্ষিতা হিসেবে রাখবেন বুঝি?’

গালে সজোরে উনার শক্ত হাতের থা’প্পর পড়তেই আমি নিজেকে সামলাতে না পেরে পড়ে যাই৷ মাথা ঝি’ম ধরে গেছে আমার৷ চারদিক কেমন ঘোলাটে লাগছে৷ আমার চোখ দিয়ে পানি গড়িয়ে পড়ে৷ উনি আমার সামনে হাটু ভেঙে বসে চিল্লিয়ে বলেন,

–‘তুই যেমন ফা’লতু তোর কথা বার্তাও তোর মতো ফা’লতু৷ থা’প্পর টা তোকে আরো আগে দেওয়া উচিৎ ছিলো৷ এতো জানার আগ্রহ কেন তোর?যেভাবে চলছে সেই ভাবে চলতে দিতে বলেছিলাম না?এখন থেকে যত বার এই বিষয় নিয়ে বলবি ততোবার থা’প্পর পড়বে৷’

উনি উঠে দরজা জোরে হাত দিয়ে বাড়ি মেরে চলে যায়। ওইখানে বসেই কান্না করতে থাকি৷ আমার সাথে হয়েছে আর আমিই জিজ্ঞেস করতে পারবো না এইটা কেমন কথা৷ সাইডে থাকা ফুলদানি হাত দিয়ে ধাক্কা মেরে ফেলে জোরে জোরে কান্না করতে লাগলাম৷ এমন কেন উনি?মি’থ্যা বলে এখন আবার আমায় মারলো? সব কিছু শেষ করে দিবো!আমার সাথে করা অন্যা’য়ের প্র’তিশোধ নিতে পারবো কিনা জানি না কিন্তু নিজেকে শেষ করে দিবো!!!
________________________________________
বেডের এককোণায় বসে এখনো কেঁদে চলেছি আমি৷ ফুঁপি এসে অনেক বার ডেকে গেছে৷ আমি তার কথার কোনো জবাব দেই নি৷ নিজেকে কেমন ছোট ছোট লাগছে৷ আমি কি মূল্যহীন?আমাকে নিয়ে এতো ঝা’মেলা, সব ছেড়ে চলে যাবো৷ দরজায় আবারো শব্দ হতে চোখের পানি মুছে নিজেকে স্বাভাবিক করে ‘কে’ জিজ্ঞেস করতেই ফুঁপি বলল,
–‘নীতু আম্মু,কি হয়েছে৷ খেতে আয়৷’
–‘কিছু না ফুঁপি৷ তুমি যাও খিদে লাগলে খেয়ে নিবো আমি।’
–‘আম্মু,যে খাবে না তাকে এতো জোড় করছো কেন?’

কাব্য ভাইয়ের গলার আওয়াজ পেতেই না খাওয়ার জেদ আরো চেঁপে বসলো৷

–‘ফুঁপি তুমি ঘুমিয়ে পড়ো৷ আমার চিন্তা তোমাদের কারো করতে হবে না৷ আর আমাকে কারো জোড় করতেও হবে না৷’

ফুঁপি হাল ছেড়ে দিয়ে বলল,
–‘কাব্য কি কিছু বলেছে তোকে?’

কাব্য ভাই আবারও বললেন,
–‘আমার কি ঠে’কা পড়েছে? আমার টাইমের দাম আছে আম্মু৷ আর আমি অস’ভ্য নই যে কাওকে সেধে সেধে কিছু বলবো৷’

উনার বাঁকা কথা শুনে আমার চোখের পানি আবারও চলে আসলো৷ আমি পানি টুকু মুছে নিজেকে শক্ত রাখার চেষ্টা করলাম৷ আপনাকে আর আমার মুখ দেখতে হবে না কাব্য ভাইয়া৷ আর না কোনো প্রশ্নের জবাব দিতে হবে৷ কোথাও যেতে না পারলে নিজেকে শেষ তো করতে পারবো৷ আর হ্যাঁ এইটাই করবো আমি!!!!!
চলবে…..

(ভুল গুলো ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন৷)

রৌদ্দুরে_প্রেমের_বৃষ্টি
#পার্টঃ৫
রুবাইদা_হৃদি(sheikh ridy rahman)

ঘুমের মাঝে অনুভব হচ্ছে কেও আমার ঘরজুড়ে অস্থির ভাবে হাটাহাটি করছে৷ একটু আগে চোখটা লেগেছে!কান্নার ফলে মাথা ব্যা’থা করছে যার ফলে হাজার চেয়েও চোখ খুলে তাকাতে পারছি না৷ পায়ের আওয়াজ না পেয়ে ঘুমিয়ে যেতেই কারো ঠান্ডা হাতের ছোয়া আমার গালে পেতেই বিরবির করে বললাম,

–‘হাত বুলিয়ে দিবেন আমার গালে? অনেক জ্বলছে জানেন!’

ঘুমের ঘোরে সত্যিই কেও হাত বুলিয়ে দিচ্ছে৷তার হাতের ছোঁয়ায় জাদু আছে৷ শান্তির ঘুম হবে!যেখানে থাকবে না কোনো দোটানার পাহা’ড়৷গালের হাতের ছোঁয়া হঠাৎ মাথায় পেতেই টনক নড়ে আমার৷ এতো রাতে ঘরে কে?গভীর ঘুম ছুটে যায়৷ আমার যতদূর মনে পড়ে দরজা বন্ধ৷ তাহলে কি ওই আপুর আ’ত্মা? চোখ খুলে তাকাতে ভয় হচ্ছে৷ চোখ খুললেই মনে হয় ভয়ানক চেহারা দেখতে পাবো৷ আল্লাহ বাচাও আমায়!দিনে কাব্য ভাইয়ের ভয় আর রাতে ভুতের৷ আমার ভাগ্যে আর কি রেখেছ তুমি? আমি ভয়ে গুটিশুটি মেরে শুয়ে বিরবির করে বললাম,

–‘দেখুন আপু,আমি আপনার কোনো ক্ষ’তি করি নি৷ আমার ঘরে থেকে চলে যান প্লিজজজ!আর কাওকে ধরতে হলে আমার পাশের রুমে কাব্য ভাইয়া আছে উনায় ধরতে পারেন৷ উনি ভুত অনেক ভালোবাসে৷’

–‘কাব্য ভুত ভালোবাসে আর আমিই জানি না!হাও পসিবল৷’

কাব্য ভাইয়ের কন্ঠস্বর শুনে একচোখ খুলে দেখি সে আমার দিকে ঝুকে বসে আছে৷ উনায় দেখে তাড়াহুড়ো করে উঠতে গিয়ে উনার মাথায় বাড়ি খাই৷ এতো শক্ত মাথার বাড়ি খেয়ে আমার পুরো দুনিয়া ঘুরে গেছে । মাথায় হাত দিয়ে ঘ’ষে উনার থেকে সরে বসি৷ ব্যা’থা পেয়ে নিজের ভুল ধারণা চলে গেছে৷ আমার ঘরে হাটাহাটি করা উনিই হচ্ছে জিন্দা আ’ত্মা৷ উনি নিজের মাথায় হাত বুলিয়ে বললেন,

–‘এতো তাড়াহুড়ো কেন তোর সব বিষয়ে৷’

–‘আপনি আমার রুমে কি করছেন?’

–‘তোর জানার দরকার আছে?’

আমি চিল্লিয়ে কিছু বলতে যাবো তার আগে উনি আমার মুখে তার হাত দিয়ে নিচু স্বরে বলল,

–‘আস্তে কথা বলতে পারলে কথা বলবি৷আম্মুর প্রে’শার বেড়েছে তোর চিন্তায় চিন্তায়৷ একটু আগে ঘুমিয়েছে তাই একদম চিৎকার করবি না৷’

আমি উনার হাত আমার মুখের উপর থেকে সরিয়ে দিয়ে রাগী ভাবে বললাম,

–‘আপনি কি আমায় আবার মারতে এসেছেন?তাহলে নিন মারুন সম’স্যা নেই৷ আপনার হাতের পুতুল আমি তাই যেইভাবে খুশি ব্যবহার করতেই পারেন আপনি৷ থা’প্পর মেরে চলে যান!আমায় একটু শান্তিতে ঘুমাতে দিন৷ নাকি আমার ঘুমও আপনার ইশারায় চলবে?’

উনি আমার গালে হাত বুলিয়ে শান্তভাবে বললেন,

–‘খুব বেশী কি ব্যা’থা পেয়েছিস নীতু?’

উনার এতোটুকু কথায় আমার কান্নারা পাল্লা দিয়ে আছ’ড়ে পড়লো৷ তার সাথে বড্ড অ’ভিমান এসে জড়ো হলো৷ আমি মুখ ঘুরিয়ে বললাম,

–‘হ্যাঁ!পেয়েছি এখন আমার ব্যা’থা কি আপনি কমাতে পারবেন?’

–‘ব্যা’থা যাতে না হয় সেই জন্যই তো এসেছি৷’

–‘আপনার এতো ঠে’কা কেন পড়েছে?আমাকে আমায় মতো থাকতে দিন৷আর আপনি রুম থেকে বেরিয়ে যাবেন এখুনি৷ কোন অধিকারে অন্য একটা মেয়ের রুমে এসেছেন আপনি৷’

–‘আমার বাড়ি আমি যেখানে ইচ্ছা সেখানে যাবো৷ তোকে কৈ…..

কাব্য ভাইয়ের অসম্পূর্ণ কথাটা শুনে আমি তা’চ্ছিল্যের হাসি দিয়ে বললাম,

–‘কৈ’ফিয়ত কেন দিবেন আমাকে৷ এইটা একটা সুন্দর পয়েন্ট কাব্য ভাই।আপনাকে বলছি কেন দিবেন আপনি৷’

উনি আমার কথার মাঝে উঠে দাঁড়িয়ে বললেন,

–‘রাত বিরাতে ঝ’গড়া করার মুড একদম আমার নেই নীতু৷ দরজা বন্ধ করে বসেছিলি বিকেল থেকে তাই ভাবলাম ম’রে টরে গেলি নাকি একটু দেখে আসি৷ শত হোক আমি একজন দায়িত্বশীল মানুষ কেও আমার সামনে এমন মরার মতো থাকলে আমার আবার প্রচুর কষ্ট লাগে৷ আর তুই তো আমার অনাগত বাচ্চার “মা” তোর জন্য তো আমার সেই পরিমাণের ক’ষ্ট হয়৷’

আমি বেড থেকে নেমে উনার সামনে দাঁড়িয়ে বললাম,
–‘পয়েন্ট টু বি নোটেট কাব্য ভাই! আপনার বাচ্চার “মা” আমি কবে হলাম?আপনার সাথে আমার সম্পর্ক আছে?তাহলে এই মি’থ্যা কেন বলেছিলেন৷’

উনি আমার বই খাতা নেড়েচেড়ে দেখছেন গভীর ভাবে৷ ম্যানেজমেন্টের নোট বের করে বললেন,

–‘লেনদেন বুঝিস তুই?’

সিরিয়াস কথার মাঝে উনার আ’জব কথা শুনে অবাক হয়ে তাকিয়ে থাকি৷ আমাকে তাকিয়ে থাকতে দেখে বই দিয়ে আমার মাথায় বাড়ি মেরে বললেন,

–‘এইভাবে তাকিয়ে থাকিস না তোর ন’জর লাগবে আমার৷ আর উত্তর দে বুঝিস কি না?’

উনার দিক থেকে দৃষ্টি সরিয়ে বললাম,

–‘আমি ম্যানেজমেন্টের স্টুডেন্ট কাব্য ভাই৷’

–‘গুড! লেনদেন কাকে বলে ছোট করে আন্সার দে ঝটপট৷’

–‘কোনো কিছুর বিনিময়ে অন্য কিছু নেওয়াকে লেনদেন বলে৷ বাট এর অনেক বড় সংজ্ঞা আছে৷’

উনি বই ঘাটতে ঘাটতে বললেন,

–‘আমার বিয়ের পর বাচ্ছা হবে রাইট? আর তোর বিয়ের পর তোর বাচ্চা হবে৷’

–‘তো?’

–‘আমার বাচ্চাকে তোর কাছে তোর বাচ্চার বিনিময়ে লেনদেন করলে তুই আমার বাচ্চার মা হবি আর আমি তোর বাচ্চার বাবা রাইট?’

আমি বো’কার মতো দুদিকে মাথা দুলাতেই উনি আমার মাথায় হালকা টোকা দিয়ে বই আমার হাতে দিয়ে বিশ্ব জয়ের হাসি হেসে বারান্দার দিকে পা বাড়ায়৷ আমি উনার যাওয়ার দিকে তাকিয়ে থেকে হিসাব মিলাচ্ছি৷ উনার লেনদেন কি সঠিক?না আবারও আমায় বো’কা বানিয়ে চলে গেলেন উনি!
___________________________________________

সূর্যের হালকা কিরণ আমার বারান্দা জুড়ে বিচরণ করছে৷ ফজরের নামাজ পড়ে বারান্দায় এসে দাঁড়িয়েছি আমি৷ সারা সিলেট এখনো ঘুমিয়ে আছে৷ রাস্তায় মানুষের আনাগোনা নেই৷ ফুপি দের বাড়িটা তিনতলা৷ নিচের দুই প্লট ভাড়া আর উপরের পুরোটা ফুপিরা থাকে৷ পূর্ব দিকের দুটো রুমে আমি আর কাব্য ভাইয়া থাকি আর পশ্চিমের দুটো রুমের একটি কবিতা আপুর আর একটি ফুপির৷ কবিতা আপুর বিয়ে হয়েছে একবছর আগে৷ বর্তমানে সে ইটালি তে আছে৷ একটা প্রজাপতি উড়ে এসে আমার হাতের উপর বসতেই আনন্দে আমার মন নেঁচে উঠে৷ ইশ!ওর মতো দুটো পাখা থাকলে আমিও ফুলের বাগানে উড়ে বেড়াতাম৷ যেখানে থাকতো না কোনো ঝামেলা৷ সারাদিন ফুলের সৌরভে মাতামাতি করে কোনো এক ফুলের পাশে চুপটি মেরে বসে থাকতাম৷ আজগুবি সব চিন্তা ভেবেই হাসি পেলো৷ সাথে একরাশ মন খারাপ এসে ভর করলো৷ জীবনের গন্ডি থেমে গেছে অজানা কোনো সুতোর মাঝে৷ আমি চোখ বন্ধ করতেই কানে ভেসে এলো,

আমার একলা আকাশ থমকে গেছে,
রাতের স্রোতে ভেসে!
শুধু তোমায় ভালোবেসে৷
আমার দিনগুলো সব রঙ চিনেছে তোমার কাছে এসে,
শুধু তোমায় ভালোবেসে৷
তুমি চোখ মেললেই ফুল ফুটেছে আমার ছাদে এসে!’

হঠাৎ গানের আওয়াজ বন্ধ হতেই পাশ ফিরে কাব্য ভাইয়ের বারান্দায় তাকিয়ে দেখি সে গিটার হাতে গান থামিয়ে আমার দিকে অদ্ভুত দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে৷ তার চোখের ভাষা পড়া আমার পক্ষে সম্ভব নয়৷ উনার গানের আওয়াজ এখনো আমার কানে বাজছে৷ আমি অস্ফুটস্বরে উনার বারান্দার কাছে গিয়ে বললাম,

–‘থামলেন কেন?অনেক সুন্দর গাইছিলেন তো৷’

–‘আমার ইচ্ছে৷’

–‘শুনতে ভালো লাগছিলো৷’

উনি গিটার পাশে রেখে বাঁকা ভাবে বললেন,

–‘তোকে শুনাতে আমার ভালোলাগছিলো না৷ কেন এসেছিস বারান্দায়?আমাকে ডি’স্টার্ব না করলে শান্তি হয় না তোর?নিজের ইচ্ছা মতো কোথাও গানও গাওয়া যায় না৷’

উনি বির’ক্ত হয়ে উঠে চলে যাওয়ার আগে বললেন,
–‘হ্যা’বলার মতো দাঁড়িয়ে না থেকে আম্মুর সাথে কাজে হাত লাগাতেও তো পারিস৷ এইখানে নিয়ে এসেই ভুল হয়েছে৷ অসহ্য একটা৷’

আমি থম মেরে দাঁড়িয়ে আছি৷ সুন্দর সকাল হঠাৎ করেই কেমন জঘ’ন্যতম মনে হতে লাগলো আমার কাছে৷ উনি এমন করেন কেন আমার সাথে? কখনো মিষ্টি রৌদ্দুর কখনো আবার কাঠ ফাটা রৌদ্দুর৷ আমি উনার উত্তা’পে জ্বলে পু’ড়ে শেষ হয়ে যাচ্ছি৷ সব কেমন পো’ড়ানো লাগছে আমার৷ চোখে পানির অস্তিত্ব পেলাম না তবে গলার কাছে একদলা কষ্ট পাঁকিয়ে আঁছে৷ সেইটা বৃষ্টির মতো ঝড়াতে পারলে শান্তি লাগতো৷ থাকবো না আর এই বাড়িতে!
কোনোকিছু না ভেবেই ড্রয়িং রুমে কাওকে দেখতে না পেয়ে গেইট খুলে রাস্তায় বেরিয়ে এলাম৷ সব মেনে নেওয়া যায় তবে এতো অপমান?যেখানে আমার কোনো দো’ষ নেই৷

চারদিকে গুমোট পরিবেশ৷ সকালের নিস্ত’ব্ধতা ছাড়িয়ে কোলাহল পূর্ণ হয়ে গেছে রাস্তা ঘাট৷ ঘুরেফিরে আমার কানের মাঝে এসে বাড়ি খাচ্ছে কাব্য ভাইয়ের তীক্ষ্ণ কথা গুলো৷ আমার মনের দেয়ালে দেয়ালে বি’ষাদের ছায়া ঘুরে বেড়াচ্ছে৷ দুনিয়ার সবচেয়ে নিকৃ’ষ্ট মানুষ আমার নিজেকে নিজে মনে হচ্ছে৷ কি করবো!কোথায় যাবো? নানা প্রশ্নে অস্থির হয়ে উঠছে মনের কোঠায়৷ কাব্য ভাইয়া!কাব্য ভাইয়া এই একটা নাম আমার জীবন রৌদ্দুরের তীক্ষ্ণ আলোয় জ্বলসে দিয়েছে৷ যেইখানে কোনো নিজের অস্তিত্ব নেই!নেই কোনো প্রশ্নের জবাব৷ হেটে চলেছি অজানা কোনো পথের উদ্দেশ্যে!তবে সেই অজানার ঠিকানা কোথায়??

চলবে………

(ভুল গুলো ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন৷)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here