রৌদ্দুরে_প্রেমের_বৃষ্টি
#পার্টঃ২৩_২৪
রুবাইদা_হৃদি(sheikh ridy)
সন্ধ্যার নিজস্ব লালচে আলো বাগানের পুকুরের উপর আছড়ে পড়ছে৷ সন্ধ্যা মালতি গাছে থেকে সুন্দর সৌরভ ভেঁসে আসছে৷ আমার পাঁ একদম চলছে না৷ পিছনে ঘুরে দাঁড়িয়ে থাকা মানুষটা যে আমার বড্ড চেনা৷ পুরো বাগান ফাঁকা..! আমি আর সামনে দাঁড়িয়ে থাকা মানুষটা ছাড়া আর কেও নেই৷ আমি ধীর পায়ে তার দিকে এগিয়ে গেলাম৷ কান্না উঁপচে আসছে৷ ব্লু কালারের শার্টে হালকা লালচে আলোয় তাকে পিছনে থেকে সুপুরুষ লাগছে৷ আমি পিছনে দাঁড়িয়ে আছি৷ হুট করে তাকে পিছন থেকে জড়িয়ে ধরে ডুকরে কেঁদে উঠি৷ সে হাসছে..! হাসির শব্দ আমার কানে আসছে৷ আমার রাগ হলো৷ আমি কিনা তাকে হারিয়ে ফেলার ভয়ে ম’রমে ম’রে যাচ্ছি আর সে কিনা হাসছে৷ আমি তাকে ছেড়ে দিতে নিলেই আমার হাতের উপর তার হাত রাখলেন৷ আমি ছুটতে চেয়েও পারলাম না৷ ফুঁপিয়ে কান্না করেই যাচ্ছি৷
–‘ দুদিন পরে বুঝি আমার কথা মনে পড়েছে? ‘
উনার কথা শুনে উনায় আমি আরেকটু জোড়ে আঁকড়ে ধরি৷ তার পিঠে মাথা ঠেকিয়ে কান্নারত অবস্থায় বললাম,
–‘ আ..পনি আমার সাথে যোগাযোগ কেন করেন নি? আপনি কি বুঝেন না.. আমার কষ্ট হয়৷ ‘
উনি আমাকে সামনে নিয়ে এলেন৷ হুট করে টান দেওয়ায় ভয় পেয়ে গেলেও নিজেকে সামলে নিয়ে উনার কাছে থেকে দূরে যাওয়ার চেষ্টা করি৷ বড্ড অভিমান লাগছে৷ এতো এমন কেন উনি? আমি উনার দিকে একদম তাকাচ্ছি না৷ আমার গালের উপর তার ঠান্ডা শীতল হাত রাখেন৷ আমি কেঁপে উঠে তার দিকে তাকাই৷ মুখ শুকনো লাগছে..! জাম রাঙা ঠোঁটের কোণে এখনো র”ক্তের দাগ আছে৷ চুল গুলো উ’ষ্ক’খু’ষ্ক৷ কিন্তু মুখে তার সেই মন ভুলানো হাসি৷ আমার চোখের পানির দিকে সে তাকিয়ে আছে৷ একদৃষ্টিতে..! সে অস্থির কন্ঠে বলল,
–‘ মাথায় কি হয়েছে..! ‘
তার বলা কথায় এতোক্ষণে ঝি’মিয়ে থাকা ব্যা’থা হুট করেই বেড়ে গেল৷ তীব্র ব্যা’থা৷ আমি মাথায় হাত দিয়ে বললাম,
–‘ পড়ে গিয়েছিলাম..! ‘
উনি আমার ব্যা”ন্ডেজের উপর হাত রাখলেন৷ তার চোখেমুখে আ”তং”কের ছাঁপ৷
–‘ এতো লাফালাফি করিস কেন তুই? সাবধানে চলতে জানিস না? আমি দুইদিন বাড়িতে নেই এতেই মাথা ফা”টিয়ে দুভাগ করে ফেলেছিস৷ আল্লাহ মালুম আমি না থাকলে তুই নিজেই বোধহয় নাই হয়ে যাবি৷ ‘
উনার কথা শুনে নিজের ভেতরের রা’গ হঠাৎ করেই উঁপচে পড়লো৷ উঁচু হয়ে উনার ক’লার টেনে ধরে ঝাঁঝালো কন্ঠে বললাম,
–‘ নিজেকে কি মনে করেন আপনি? কি মনে করেন? আমাকে খে’লনার পু’তুল পেয়েছেন? আমার অনুভূতি না বুঝেই একা ফেলে চলে এসেছেন৷ কেন ফেলে চলে এসেছেন? আমার মাথা ফেঁ”টে গুড়াগুড়া হয়ে মশ”লা হয়ে যাক৷ তাতে আপনার কি? আমাকে কাঁদিয়ে মজা পান তাই না? চলে যান..! দরকার নেই আপনাকে আমার৷ খুব তো ফেলে একা হারিয়ে গিয়েছিলেন৷ ‘
উনি নীরব দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছেন৷ রাগে হাঁত পা কাঁপছে আমার৷ অস”ভ্য লোক একটা৷ এখন এসেছে দরদ দেখাতে৷
–‘ খুজতে কেন এসেছিস তাহলে? ‘
উনার গা ছাড়া কথা শুনে আরো রাগ হলো৷ হাতের মুঠোয় থাকা কাগজ উনার দিকে ছুড়ে দিয়ে নিজেকে ছাড়িয়ে বললাম,
–‘ বয়েই গেছে তোকে খুজতে আসার৷ তুই যা..! যেখানে ইচ্ছা যা৷ বাড়ির সবার কথা চিন্তা করেই তোকে খুজতে এসেছিলাম৷ আর তোর ডায়েরি..! কেন দিয়েছিস আমাকে? যা চলে যা..! ‘
উনি আমার কথা শুনে স্তব্দ হয়ে ফাটাফাটা চোখে তাকিয়ে আছেন৷ আমার সেইদিকে কোনো হুশ নেই৷ আমি উনার বুকের পাশে হাত দিয়ে ধা”ক্কা দিয়ে বললাম,
–‘ যা চলে যা..! আবার এখানে সারপ্রাইজের ব্যবস্থা করেছে৷ তোর সব প্ল্যা”ন করা৷ তুই ইচ্ছা করে কষ্ট দিয়ে আমাকে ভুলাতে এসেছিস৷ দরকার নেই তোকে৷ আমি তোর প্রেমের বৃষ্টি হবো না৷ তুই কা”ঠ’ফা’টা রোদ..সেই রোদেই তোকে মানায়৷ ‘
–‘ নীতু,..! ‘
উনার গম্ভীর আওয়াজে ডাক শুনে রা’গী দৃষ্টিতে তাকালাম উনার দিকে৷ উনি আমার চোখ দেখে ভয় পেলেন কিনা জানি না৷ সে তার ভালো হাত দিয়ে আমাকে পিছন দিকে ঘুরিয়ে তার বুকের সাথে একদম মিশিয়ে নিলেন৷ আমি মূহুর্তেই নিজের কথা মনে করে বড়সড় একটা ঢোক গিললাম৷ নীতু ইউ ফি’নিশ..! ইমোশনাল মোমেন্টে শেষে কিনা তুই বলে ফেলেছিস?
–‘ তারপর.?’
উনি আমার ঘাড়ে থুতনি রেখে বললেন৷ আমার শরীরে শিহরণ বয়ে গেলো৷ ভাষা খুজে পেলাম না৷ উনি কোমড়ে এক হাত দিয়ে আবার আমাকে সামনে ঘুরালেন৷ আমি চোখ খিঁ’চে বন্ধ করে তার শার্ট খাঁ’চমে ধরলাম৷ আমার কঁপালে তার কঁপাল ঠেকিয়ে মৃদু স্বরে বলল,
–‘ ক’ষ্টে পেয়েছিস? ‘
আমি উনার কথা শুনে থতমত খেয়ে গেলাম৷ ভেবেছিলাম চ’ড় টর খাবো তুই বলার অপ”রাধে৷ কিন্তু আমাকে ভুল প্রমাণিত করে দিলেন উনি৷ আমি কি বলবো খুজে পেলাম না৷ আবার কান্না পাচ্ছে৷ তাকে ছাড়া নিজেকে কল্পনা করা কেন দু”ষ্কর হয়ে যাচ্ছে আমার জন্য? আমি চোখ বন্ধ করেই উত্তর দিলাম,
–‘ আপনাকে না দেখলে আমার বুকের বাঁ পাশে তীব্র ব্যা”থা হয়..! আপনাকে হারিয়ে ফেলার ভয়ে নিজেকে হারিয়ে ফেলি৷ কেন? আপনি এমন করে ক’ষ্ট কেন দেন? আমার জন্য মায়া হয় না আপনার?’
উনি স্লো ভয়েসে বললেন,
–‘ আমার ঠিকানা তো তোর মাঝে..! হারিয়ে গেলে খুজে বেড়াবি৷ তোর জন্য আমার ভালোবাসার চিরকুট থাকবে৷ সেই চিরকুটে আমার হারানোর মধ্যেও খুজে পাবি তুই৷ ‘
কান্নার মাএা বাড়ছে৷ তাকে পেয়ে শূন্য বুক পূর্ণ লাগছে এখন৷ আমি তাকে নিজে থেকে আঁকড়ে ধরতে চেয়েও ধরলাম না৷ শুধু থেমে থেমে বললাম,
–‘ আপনি জানতেন আমি আসবো?’
উনি আবার হাসলেন,
–‘ হ্যাঁ, জানতাম..!কিন্তু মহারাণী দুইদিন পরে আসবে সেটা জানতাম না৷ আর একটু পর বেরিয়ে পড়তাম ফ্লাইটের উদ্দেশ্য..! ‘
আমার বুকের ভেতরে মোচড় দিয়ে উঠলো৷ সত্যি যদি চলে যেতেন তাহলে পেতাম কোথায়৷
–‘ আমি যাবো আপনার সাথে..! ‘
–‘ উহু..! নিবো না৷ ‘
আমি কেঁদে উঠলাম আবার৷ এখন নিবেন না? আর তখন যেতে চাই নি বলে ফেলে চলে এসেছিলেন৷ কথাই বলবো না আর৷ উনি আবার গম্ভীর ভাবে বলল,
–‘ তুই তু’কারি করার শা”স্তি তুই নিবি? না আমি দিবো..!’
এতোক্ষণে ট’নক নড়লো আমার৷ ইশ..! আমি কিভাবে পারলাম তুই বলতে? আমি লজ্জায় তাকাতে পারলাম না তার দিকে৷ উনি ঠোঁট কা’মড়ে ধরে ফিসফিস করে বললেন,
–‘ তোকে শা”স্তির দুটো অপশন দিচ্ছি..!’
আমি ভ্রুকুচকে ফেললাম৷ শা”স্তির আবার অপশন আছে বুঝি? উনি আমার কুচকানো ভ্রুতে তার আঙুল দিয়ে ছুঁয়ে দিতেই আমি ঝটপট করে বললাম,
–‘ ক.. কি শা”স্তি? আর অপশন টপশন আবার কি?’
উনি আমায় ওইভাবেই রেখেই সামনে এগিয়ে গেলেন৷ আমিও পাঁ য়ে পা মিলিয়ে পিছাতে লাগলাম৷ উনি এখনো আমার কঁপালে তার প
কঁপাল ঠেকিয়ে আছেন৷ উনার কি ভয় হচ্ছে না?দুজনের মাথা ফাঁটা পড়লে নি”র্ঘাত আজ আর র’ক্ষা থাকবে না৷ উনি এগুতে এগুতেই বললেন,
–‘ ফার্স্ট অপশন, আমাকে চুমু দিবি..! ‘
–‘ নো.. সেকেন্ড অপশন..! ‘ আমি কাঁপা কাঁপা কন্ঠে বলতেই উনি দাঁড়িয়ে পড়লেন৷ পাশে থাকা ফুল দিয়ে সাজানো দোলনায় আমাকে বসতে বললেন৷ আমি অবাক চোখে তাকিয়ে আছি৷ রজনীগন্ধা, গোঁলাপ আর টিউলিপ দিয়ে অসম্ভব সুন্দর করে সাজানো দোলনা৷ পাশেই বেলুন আর ফেইরি লাইট দিয়ে সাজানো একটা কটেজ..! আমি চোখ ঘুরিয়ে সব দেখছি৷
–‘ এইগুলা..? ‘
উনি আমার কানের কাছে এসে বললেন,
–‘ আমার প্রেমের বৃষ্টির জন্য৷ ‘
আমি ঘুরে উনাকে আমার একদম সামনে পেলাম৷ তার বুকের মাঝে আমার মাথা৷ এতো লম্বা কেন উনি৷ ভেবেই আবার ভ্রু কুচকে ফেললাম৷ পাশে থাকা একটা রজনীগন্ধা আমায় দিয়ে বললেন,
–‘ গত দুই দিন ধরে ফুল পঁচে যাচ্ছে,,আবার পাল্টিয়েছি..! আজ অবশেষে আমার সে এসেছে৷ ‘
আমার খুশি হওয়ার দরকার কিন্তু হতে পারলাম না মনের মাঝে সেই খুশি উঁপচে পড়ছে৷ ইশ! আগে কেন আসলাম না? উহু..! আগে আসলে সেটা আজ সেদিনের ঘটনা হয়ে যেত৷ অপেক্ষার ফল মিষ্টি..! সেটার আ”ক্ষেপ থাকলেও কষ্টে মিশ্রিত ভালোলাগা থাকে৷ উনি আবার আমার কানের পিছনে একটা লাল গোলাপ গুজে দিলেন৷ আমি দোলনায় বসতেই উনিও আমার পাশে এসে বসলেন৷ আমি সরে যেতেই আমার কোমরে ধরে কাছে টেনে নিয়ে এলেন৷ আমার কাঁধে মাথা রাখতেই আমার হৃ”দ’পি’ন্ডের মাঝে ঢেউ খেলে যায়৷
~” পূর্ণিমা সন্ধ্যায়, তোমার রজনীগন্ধ্যায়
রুপসাগরের পারের পানে উদাসী মন ধায়…!
~ ” পূর্ণিমা সন্ধ্যায়,তোমার রজনীগন্ধ্যায়,
রুপ সাগরের পারের পানে উদাসী মন ধায়..!
তোমার প্রজাপতির পাখা..আমার আঁকাশ চাওয়া মুগ্ধ চোখে রঙিন সপ্ন মাখা…!(২)
~” তোমার চাঁদের আলো… মিলায় আমার দুঃ’খ সুখের সকল অবসান…!”
ফাগুন হাওয়ায় হাওয়ায় করেছি যে গান…!
তোমার হাওয়ায় হাওয়ায় করেছি যে গান…!
~” আমার আপন হারা প্রাণ…আমার বাঁধন ছেড়া প্রাণ…
ফাগুন………! ”
আমি চোখ বুজে তার গান উপভোগ করছি৷ উনি আমার গালে চুমু দিতেই আমি তাড়াহুড়ো করে চোখ খুলে ফেলি৷ উনি মাথা উঠিয়ে বললেন,
–‘ এই..! তোকে শা”স্তি দেওয়ার বদলে আমি গান শুনাচ্ছি কেন? ‘
–‘ আপনার গানের গলা এতো ভালো কেন? ‘ আমি কথা ঘুরানোর জন্য বলতেই উনি হাসলেন৷ আমি ধরা পড়ে গেলাম৷ শুকনো ঢোক গিলে আবার বললাম,
–‘ হাঁতে হাত ধরে হাটবেন? পূর্ণিমা চাঁদ.. রজনীগন্ধ্যা..! ‘
আমি আর কিছু বলার আগেই উনি আমার কাছে একদম ঘেষে রইলেন৷ আমি সরতে চাইলে উনি বললেন,
–‘ সব হবে..! তার আগে তুই তো’কারির করার শা”স্তির সেকেন্ড অপশন শুনে নে..!’
আমি সাহস জুগিয়ে বললাম,
–‘ শা”স্তি দেওয়ার জন্য আপনার দুদিন হারিয়ে যাওয়া কি যথেষ্ট নয়? ‘
–‘ আর আমাকে ফিরিয়ে দেওয়া কি অ”পরাধ নয়? ‘
আমি যাই বলি সেটার গুছানো উত্তর উনার কাছে আছেই৷ আমি হার না মেনে আবার বললাম,
–‘ আমায় কষ্ট দেওয়া এইটা কি অ”ন্যায় নয়? ‘
উনি আমার গালে আবার চুমু দিলেন৷ আমি ভ’ড়কে গেলাম৷ নিজের কামিজ আঁকড়ে ধরে নিজেকে স্বাভাবিক করার চেষ্টায় আছি৷ উনি আমার হাতের আঙুল তার হাতের আঙুলে আবদ্ধ করে বলল,
–‘ প্রেমে পড়েছি..! সেই লাজুকলতার..! তাই শা”স্তির সেকেন্ড অপশন বাসর ঘরের জন্য তুলে রাখলাম..! ‘
আমি উনার কথা শুনে রা’গ করবো না লজ্জায় পড়বো ভাবতেই উনি আমার হাঁত ধরে উঠে দাঁড়ালেন৷ রি’সোর্ট থেকে বেরিয়ে পিচ ঢালা রাস্তা,,পূর্ণিমার মস্ত চাঁত আর রজনীগন্ধ্যার ফাগুন হাওয়া..!
______________________
পূর্ণিমার সন্ধ্যার ঘুরে রাতের আঁধার ঠিকরে পড়ছে৷ আমি আর সে বাসায় ঢুকতেই সবাইকে ড্রয়িংরুমে বসে থাকতে দেখেই একটু ভয় পেয়ে যাই৷ বাবা আর রেদুয়ান ফুঁপার মুখের দিকে তাকিয়ে আমি উনার হাত ছেড়ে জিনিয়ার কাছে গিয়ে দাঁড়াই৷ ফুঁপি উনাকে শা”সন করলেন আবার নিজেই কেঁদে উঠে জড়িয়ে ধরলেন৷ আমার চোখের কোণে পানির আভাস পাচ্ছি৷
–‘ এতো রা’গ কেন তোর? আমার বুঝি টে”নশন হয় না? ‘
ফুঁপির কথার জবান দিতে পারলেন না উনি৷ ফুঁপা উঠে গিয়ে তার গালে থা”প্পড় মারলেন৷ থা”প্পড়ের শব্দে কেঁপে উঠলাম৷ ফুঁপি রেগে কিছু বলার আগেই ফুঁপা থামিয়ে দিয়ে বলল,
–‘ ওর প্রাপ্য এইটা..! এতোটা অবুঝ কেন ও? ‘
উনার দিকে তাকিয়ে দেখলাম চুপ করে দাঁড়িয়ে আছেন৷
–‘ নীতু এইদিকে আয়..! ‘ ফুঁপার ডাকে ভয় পেয়ে কাব্য ভাইয়া আর আব্বুর মুখের দিকে তাকালাম৷ তাদের কাছে থেকে কোনো রেসপন্স না পেয়ে আমি কাছে গিয়ে দাঁড়াতেই তার হাতে থাকা একটা কাগজ এগিয়ে দিয়ে রাগী স্বরে বলল,
–‘ সাইন কর..! ‘
আমি ভয় পেয়ে গেলাম..! কিসের পেঁপার এইটা? আমি কিছু জিজ্ঞেস করার আগেই আব্বু পিছনে থেকে বলল,
–‘ কাব্য তোর শা”স্তি এইটা..! কথা না মানার শাস্তি৷ ‘
আমি ছলছল চোখে উনার দিকে তাকাতেই দেখতে পেলাম ভয়ে তার মুখ অন্যধরনের এক রঙ নিয়েছে..! কি আছে কাগজে?এতো ভয় পাচ্ছেন কেন উনি?
চলবে..
( ভালো হয়েছে কিনা জানাবেন..! ভুল গুলো ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন..!)
রৌদ্দুরে_প্রেমের_বৃষ্টি
#পার্টঃ২৪
রুবাইদা_হৃদি(sheikh ridy)
নিস্তব্ধতার মাঝে সুখ দুঃখ একে অপরকে জড়িয়ে থাকে৷ হুট করে সব শেষ হওয়ার মাঝে অশান্তি জড়িত ভালোলাগা আছে৷ তপ্ত নিশ্বাসের উঠানামা গুলো বড্ড ভারী হলেও এক চিলতে সুখ আষ্ঠেপৃষ্ঠে জড়িয়ে আছে৷ আমি কাঁদছি..! চোখ বেয়ে নেমে পড়া পানির ফোঁটা গুলো জানান দিচ্ছে অজানা সুর৷ বুকের মাঝে প্রশান্তির বাতাস বইছে৷ আমার সামনে দাঁড়িয়ে থাকা কাব্য ভাইয়ার মুখেও উঁপচে পড়া খুশি৷ উনি হয়তো বড়রা সামনে না থাকলে শক্ত করে জড়িয়ে ধরতো আমায়৷ গুটিগুটি পাঁয়ে আমার পাশ ঘেষে দাঁড়ালেন উনি৷ আমি একটু ভয় পেলাম সবার সামনে কিছু করলে লজ্জায় মাথা কাঁ”টা যাবে৷ উনি আমাকে ভুল প্রমাণিত করে দিয়ে বললেন,
–‘ এতো জলদি সব কিছু এরেঞ্জ করলে কি করে আব্বু? ‘
ফুঁপা আর আব্বু হাসলেন৷ উনাদের মুখে হাসি দেখে আমাদের মুখেও হাঁসি ফুঁটে উঠলো৷ কাগজ টা আমার হাতে দিয়ে ফুঁপা বলল,
–‘ আমাদের ছেলে-মেয়ের ক’ষ্টের ভা’গী’দার তো আমরা হতে পারি না৷ আর তুমি এডাল্ট..!কথাটা বারবার ভুলে যাই৷ তোমার আম্মু কথাটা না মনে করালে আমি হয়তো মেনেই নিতাম না৷ আর আমরা জানি তুমি নীতুকে ভালো রাখবে৷ আমাদের চেয়ে হয়তো ওর ভালো তুমি’ই চাও বেশি৷ কিন্তু বাবারা খারাপ চায় না, তাদের মাথায় হাজারো ভাবনা থাকে..! ছেলে-মেয়ের ভালো থাকবে কি ভাবে সেই ভাবনা থাকে৷ তোমরা যতই বড় হও না কেন,আমাদের চোখে এখনো সেই ছোট’ই আছো৷ ‘
কাগজটা মূলত আমার ভার্সিটির ট্রান্সফার সার্টিফিকেট ছিলো৷ কাব্য ভাইয়া ফুঁপার কাছে গিয়ে জড়িয়ে ধরলেন৷ ফুঁপি তার পিঠে হাত বুলিয়ে দিচ্ছে৷ আর আব্বু আমার কাছে এসে মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে বলল,
–‘ তোমাকে ওর কাছে দিয়ে দিয়েছি সেই কবেই৷ আমি চাই ভালো থাকো..! তোমার আম্মু বেঁচে থাকলে হয়তো সবকিছু আরো সুন্দর হতো৷ সেই সুন্দর পৃথীবিটা না হয় কাব্যের সাথে থেকেই হোক তোমার৷ ‘
আমি কাঁদলাম আব্বুর বুকের মাঝে মাথা রেখে..! হয়তো ভালোর জন্যই বাবারা ক’ঠো’র হয়৷ বাবাদের ক’ঠো’রতায় ভালোবাসা থাকে,আগলে রাখার প্রচেষ্টা থাকে৷ একমুঠো সুখের অংশ বাবারা বি’লিয়ে তাদের সন্তানদের জন্য৷ কিছু কিছু ক্ষেত্রে সেটা আমাদের কাছে বারাবাড়ি মনে হলেও দিনশেষে তারা সঠিক..!
______________________
হাতে মাএ ছয় ঘন্টা সময় আছে৷ আর উনি এখনো ঘুমুচ্ছেন৷ গত দুইদিনের ঘুম৷ আমি নিজের জিনিসপত্র গোছাচ্ছি..! তার লাগেজ প্যাঁক করা৷ একরাশ মন খারাপের সাথে ভালোলাগা আছে আজ৷ বাড়ি ছেড়ে, ফুঁপি-ফুঁপা,বাবা, জিনিয়াকে ছেড়ে যেতে অনেক কষ্ট হচ্ছে৷ কিন্তু যেতে যে হবেই..! আমাকে ছাড়া সে যাবে না আর সে না গেলে তার সপ্ন পূরণ হয়েও হবে না৷ আমি চাই না দিনশেষে এইটার জন্য সে আফসোস করুক৷ আমি তার প্রত্যেকটা ভালো জিনিসের মাঝে বেঁচে থাকতে চাই৷ এতোটা আবেগ তার প্রতি কবে জমা হয়েছে আমার? যাকে দেখলে ভয়ে পিছিয়ে থাকতাম আজ তার সাথে সারাজীবন থাকার আপ্রাণ চেষ্টার মাঝে আছি৷ আমাকে তার কবে থেকে ভালো লাগে? এই একটা কথা ঘুরেফিরে ভেবে যাচ্ছি৷ ইশ..! সে কি আমায় সেই আগে থেকেই ভালোবাসে? যদি তাই হয় এই অসভ্য বলে নি কেনো৷ এখনো কোথায় বলেছে..! একদম বলে নি৷ ঘড়ির কাঁটায় আটটার ঘন্টা বেজে উঠতেই আমার ভাবনার সুতো ছিড়ে৷ আমি তাড়াহুড়ো করে নিজে ফ্রেশ হয়ে এসে উনার সামনে গিয়ে দাঁড়াই৷ ডাকবো কিভাবে? হাত দিয়ে ধাক্কা দিবো..! মুখ দিয়ে আওয়াজ বের হচ্ছে না একদম৷ শার্ট খুলে শুয়ে আছেন উনি৷ ফর্সা বুকের লোম গুলো দেখা যাচ্ছে৷ আমি দুই পাঁ পিছিয়ে গেলাম৷ ছিঃ! এইভাবে কেও শোয়? উনার লজ্জা নেই আমার তো আছে৷ কিন্তু উনায় তো ডাকতে হবে৷ আমি নিজের গলার স্বর পরিষ্কার করে বললাম,
–‘ ক..ক..কাব্য ভ… উচ্চারণ করতেই নিজেই লজ্জায় মিইয়ে যাই৷ সে আমার বর৷ এতোদিন পর ব্যাপারটা খেয়াল হলো৷ ইশ! মানুষ কি ভাববে৷ তাহলে ডাকবো কি বলে?
— ‘ এইযে..এইযে শুনছেন..! ‘
আমার ডাকে সারা না দিয়ে উলটোদিকে মুখ ঘুরিয়ে আবার শুয়ে পড়লেন উনি৷ লাগিয়েছেন টা কি? উফফ! অস’হ্য ব্যাক্তি..! আমি রেগে বেডের উপর উঠে তার সামনে বসে বললাম,
–‘ শুনছেন? উঠুন..! ফ্লাইটের টাইম আর কিছুক্ষণ বাকি৷ ‘
–‘ তো?’ উনি ঘুম জড়ানো কন্ঠে বললেন৷ আমার হা’র্ট বি’ট একবার মিস হলো মনে হচ্ছে৷ এতো সুন্দর কারো ঘুম জড়ানো কন্ঠ হয় বুঝি৷ সব ভুলে আমি উনার দিকে তাকিয়ে আছি৷ ঘুমের মাঝেও তার ভ্রু কুচকানো৷ আমি তার মতো আঙুল দিয়ে স্লাইড করে গম্ভীর ভাবে বললাম,
–‘ নীতু, তুই আমাকে বুঝিস না কেন? শা”স্তির অপশন তোর জন্য দুইটা..! ফার্স্ট অপশ…
কথা শেষ করার আগেই সে একটানে আমাকে শুয়িয়ে আমার উপর ঝুঁকে শুয়ে পড়লেন৷ আমি ভয় পেয়ে তার গলা আঁকড়ে ধরে রেখেছি৷ এইটা কি হলো? অস’ভ্য তো ঘুমিয়ে ছিলো৷ উনার সম্পূর্ণ ভার আমার উপরে ছেড়ে দিয়েছেন৷ আমি উঠতে চেয়েও পারলাম না৷
–‘ কি হচ্ছিলো? ‘ উনি আমার গালে স্লাইড করে বললেন কথাটা৷ আমি কেঁপে উঠে আমতা আমতা করে বললাম,
–‘ কো..থায় কি হচ্ছিলো? আমি তো ডাকছিলাম৷ ওহহ হ্যাঁ আপনার ফ্লাইট ছেড়ে চলে গেছে৷ ‘
অ’স্থিরতায় উল্টাপাল্টা কি বলছি নিজেই জানি না৷ উনি নিজের মুখ সামনে এগিয়ে আনতেই আমি চোখ মুখ খিঁচে বন্ধ করে নেই৷ আজ হাত দিয়ে ঢেকে ফেলার উপায় নেই৷ কারণ একহাত বাঁধা আরেক হাত তার গলায় আঁকড়ে রাখা৷ উনি স্থির দৃষ্টিতে আমার দিকে তাকিয়ে আছেন৷ আমি একচোখ খুলে তাকিয়ে আবার বন্ধ করে নেই৷ উনি আমার চোঁখের উপর ছুঁয়ে দিতেই আমি উনার থেকে হাত নামিয়ে নেই৷ উনি ঘোর লাগানো কন্ঠে বললেন,
— ‘ তোর চোখের মাঝে ডুবিয়ে আমাকে মা’রতে চাস?
তোর গোঁলাপি ঠোঁটের কাঁপুনি তে আমি যে হারিয়ে ফেলেছি নিজেকে..!
তোর লাল হওয়া গালের ডানপাশের ছোট কালো তিলটার অধিকারে মাঝে নিজেকে কেন খুজে বেড়াই বলতে পারবি? ‘
আমার হাত ডানপাশে যেতেই উনি হেসে উঠেন৷ হাসতে হাসতে বলল,
–‘ চা”লাক হয়ে গেছিস..! ‘
আমি দুদিকে মাথা দিয়ে না করতেই উনি আবার হেসে ফেললেন৷
–‘ আপনি হাসবেন না তো..! হিং”সে হয় আমার৷ ‘
উনি আরো হেসে উঠলেন৷ আমি বির’ক্ত হলাম৷ আমার হাসির চেয়ে তার হাসি সুন্দর৷ অনেক সুন্দর..! উনি আমার গালে হাত রেখে বললেন,
–‘ কারো হাসির তালে নিজেকে হারিয়েছি তো আমি সেই আগেই৷ আর সে কিনা বলে আমার হাসিতে তার হিং”সে হয়৷ দ্যাটস নট ফেয়ার..! আমি তো তার হাসির ঝং”কারে পু’ড়ে যাচ্ছি..! সেই হাসির কারণ আমি হতে চাই বলেই এতোশত কাহিনী৷ তা কি জানে সে?’
আমি নিজেই হেসে ফেললাম এইবার৷ আমার হাসি নিজের দেখতে বড্ড ইচ্ছা হচ্ছে৷ তার হাসির চেয়ে আমার টা সুন্দর..! ভাবতেই একরাশ লজ্জা এসে ভীর করলো আমার মাঝে৷ উনি এগিয়ে এসে আমার গালে নিজের গাল দিয়ে স্লাইড করতেই আমি ভ’ড়কে যাই৷ আবারও এতোটা কাছে৷ আমি চোখ বন্ধ করে নিতেই সে আমার নাকের সাথে তার নাক ঘষে উঠে দাঁড়ায়৷ আমি সেখানে সেইভাবেই আছি৷ ঘোরের মাঝে৷ আমাকে উঠতে না দেখে সে বলল,
–‘ রোম্যান্সের মুড এখন থাকলে লাভ নেই বেবি..! এখন রোমান্স করতে গেলে বাচ্চা সহ জার্মান যেতে হবে৷ ‘
আমি উনার কথা শুনে উঠে বসে একটা বালিশ ছুড়ে মা”রি৷ ছিঃ! অস”ভ্য..!
গাড়ির সামনে দাঁড়িয়ে আছি সবাই৷ আজ শুধু মোস্তাকিম ভাইয়া আমাদের সাথে যাবেন৷ তার ধারণা, আজ আবার কিছু একটা কাব্য ভাইয়া ঘটাবেন৷ আবার গাছের সাথে গাড়ি ধাক্কা লাগিয়ে বলবেন,সে বাচ্চা নিয়ে জার্মান যেতে চায়৷ তার উপর উনার হাতের ব্যাথা এখনো আছে৷ দুজনের মাথায় ব্যা”ন্ডেজ করা৷ এইটা কোনো কথা?সবার থেকে বিদায় নিতে কান্না পাচ্ছে আমার৷ জিনিয়াকে ছেড়ে যেতে বেশি কষ্ট হচ্ছে৷ যদিও ও ফুঁপির সাথে থাকবে৷ তাও ভালো লাগছে না৷ সেও সবার থেকে বিদায় নিয়ে গাড়িতে উঠে বসেন৷ আমি উঠছি না দেখে আবার নেমে আসেন৷ মিষ্টি স্বরে বললেন,
–‘ বউ তোকে কি কোলে করে গাড়িতে উঠাবো? ‘
উনার কথা শুনে আমি জলদি গাড়িতে উঠে বসি৷ বউ তোকে..কথাটা বড্ড আপন মনে হলো৷ আমি এক কোণায় বসতেই উনি আমার দিকে এসে বসলেন৷ মোস্তাকিম ভাইয়াকে উদ্দেশ্য করে বলল,
–‘ বিয়ে শাদী করে ফেলিস..! তোর মেয়ের সাথে আমার প্রথম ছেলের বিয়ে দিবো৷ এর পরে মেয়ের সাথে রাহুলের ছেলের বিয়ে দিবো৷ সিনানের ছেলের সাথে আবার মেয়ে বিয়ে দিবো আরেকটা৷ ‘
আমি উনার পেটের উপর জোরে চি”মটি দিতেই৷ উনি মুখ দিয়ে শব্দ করতেই মোস্তাকিম ভাইয়া হেসে উঠলো৷ আমি লজ্জায় মাথা নীচু করে উনায় ইচ্ছা মতো বকে চলেছি৷ ছেলে -মেয়ে হবে কবে তার ঠিক নেই এখুনি তাদের বিয়ের ব্যাবস্থা করে ফেলেছেন৷ একমাএ তার দ্বারাই সম্ভব এইগুলা৷ নিমিষেই মন খারাপ উধাও হয়ে গেছে৷ আমাকে রাগ করতে দেখে উনি ফিসফিস করে বললেন,
–‘ আমার বাচ্চাকাচ্চার আম্মুর মুড এমন পা”নসে থাকলে তাদের বাবা কিন্তু ভুল ভাল কাজ করে বসবে৷ পরে দো”ষ দিলে আমি মানবো না..! ‘
আমি উনার কথা শুনে মুচকি হাসলাম৷ এখন উনি কতটা পরিবর্তন হয়েছে..! রু”ড স্বভাবের মানুষ এতোটা অস”ভ্য হয় কি করে ভাবতেই অবাক লাগে৷
_________________
বিকেলের সূর্য প্লেনের জানালা দিয়ে আমাদের ছুঁতে চাচ্ছে৷ সব ফর্মালিটি শেষ করে অজানার উদ্দেশ্য পাড়ি জমাচ্ছি৷ একরাশ ভালোলাগা আর একটু খানি ভালোবাসায় মোড়া অনুভূতি গুলো মন ছুঁয়ে যাচ্ছে৷ আমাকে জানালার পাশের সিটে বসতে দিয়ে উনি আমার দিকে ঘুরে বসে আছেন৷ আমি ভ্রু কুচকে তাকাতেই উনি হাসেন৷ আমি ‘, কি হয়েছে জিজ্ঞেস করতেই উনি বললেন,
–‘ আমার বুকে মাথা রাখবি..? ‘
আমি অবাক চোখে তাকাতেই উনি মাথার চুল গুলো হাত দিয়ে ব্রা’শ করলেন৷ আমি কিছু না বলেই উনার দিকে এগিয়ে চুপ করে তার বুঁকে মাথা রাখি৷ এইখানে শান্তি আছে..! এতোসময়ের মাথা ব্যা’থা হঠাৎ করেই উধাও হয়ে মাথার ভেতর হালকা লাগতে শুরু করলো৷ উনি আমার মাথা আলতো করে চাঁ”প দিয়ে ধরে রেখেছেন৷ একটু পর বললেন,
–‘ একরাশ বৃষ্টি এসেছে আমার ঘরে,,
সে বৃষ্টি শুধুই প্রেমের বৃষ্টি..! ‘
চলবে….!
(আল্লাহ জানেন আজকের পার্ট কেমন হয়েছে৷ভুল গুলো ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন..!)