রঙিন খামে বিষাদের চিঠি পর্ব ৬

0
295

#রঙিন_খামে_বিষাদের_চিঠি
#পর্বঃ০৬
#আর্শিয়া_ইসলাম_উর্মি

১১,
রাতের ২টা, সবাই যখন খেয়েদেয়ে ঘুমাতে ব্যস্ত, তখন একহাতে বারান্দার গ্রিল ধরে দাড়িয়ে আছে রিয়ানা। রাতের নিকোষ কালো আধারের সাথে চোখের কোণায় জমা অশ্রু বিসর্জন দিতে ব্যস্ত সে। আজ ভীষণ করে কাঁদতে মন চাচ্ছে তার। ইচ্ছে করছে একটু চিৎকার করে কাঁদতে। নিজপর বাড়ি হলেৃএতক্ষণে ছাঁদে উঠে কান্না করে দিতো। কিন্তু অন্যের বাড়িতে তা সম্ভব হচ্ছে না। নিজের ভেতরটায় আফসোস জমতে জমতে কেমন একটা দম বন্ধকর পরিস্থিতি এসে গেছে তার জীবনে। আহারে জীবন, সুন্দর ভয়ংকর সুন্দর। প্রতি মুহুর্ত কাঁদিয়ে ছাড়ে৷ অন্য হাতে থাকা ফোন টা সুইচ ওন করে ডাটা ওন করলো রিয়ানা। আইডি লগ ইন করে কাঙ্ক্ষিত একটি আইডি সার্চ করে তাতে ঢুকলো। প্রোফাইল পিকে জ্বলজ্বল করছে প্রিয় পুরুষের ছবি সাথে অন্য একজন নারী। রিয়ানা মুচকি হাসলো। ঠোঁটের কোণো হাসির রেখা প্রশস্ত করে আনমনে বিরবির করে বললো,

“আপনি আমার অনেক শখের দূরের মানুষ। আপনাকে ছুয়ে দেখেও, জড়িয়ে ধরিয়েও বাঙালির নারীর শাড়ির মতো আপনাকে লেপ্টে রাখতে পারলাম না সর্বাঙ্গে। আমার সব সৌন্দর্য, আপনিহীন বড্ড ফিকে। কিন্তু আপনি অন্য নারীর স্বামী। আপনাকে নিয়ে ভাবাও আমার জন্য বড্ড অন্যায়। এর শাস্তি আপনার দহনের অনলে আমায় পুড়তে হয়। আমি পুড়তে চাই না। সুস্থ থাকতে চাই। যাকে শুধরে দিতে এসেছিলেন! যে আপনাকে পেয়ে একটু একটু করে শোধরাতে শুরু করলো? আপনি তাকেই ছেড়ে গেলেন! সেই উচ্ছৃঙ্খল জীবনের দোহায় দিয়ে সরে গেলেন? ভাগ্যিস গিয়েছিলেন। নয়তো আমার রাত্রীর দ্বিপ্রহরের আফসোস কে হতো বলুন তো! আমার ভাগ্য টাই এমন। কারোর ভালোবাসা আমি ডিজার্ভ করিনা। সেখানে আপনার ভালোবাসা পেয়ে গেলে হয়তো আমার সব পাওয়া হয়ে যেতো। আর মানুষ সব পেয়ে গেলে তার আফসোস থাকেনা। আর আফসোস বিহীন মানুষ হয় না। যে মানুষ আফসোস হীন সুখের একটা জীবন পায়! তার আফসোস থাকে আমার এতো সুখ কেনো? আমার লাইফটা কেনো একটু স্ট্রাগল পূর্ণ নয়! কিন্তু ট্রাস্ট মি, আপনাকে পেলে আমার এ আফসোস টুকুও হতো না। এজন্য হয়তো আপনাকে আমার পাওয়া হলো না। আপনি বড্ড ভালো মানুষ জানেন তো! অবশ্য জানবেন কি করে! সব সময় তো অসভ্যতামি করেছি। আপনাকে আমায় শুধরে দেবার সুযোগ দিয়েও আপনার কথা শুনিনি। পরাজয় টা আমারই! আমি আপনার ভালোবাসা বুঝতে পারিনি। ভাবতাম লোক টা তো আছে-ই আমার সাথে। কি দরকার অযথা তার কথা শুনে নিজেকে বদলানোর! আমি যেমন, তেমনই তো ভালোবাসা উচিত! কিন্তু ভুলে গিয়েছিলাম, আমার লাইফ স্টাইল কোনো বাঙালি পরিবার, তার মা-বাবা এলাউ করবেনা। উফফ কি দীর্ঘশ্বাস এসে যায় দেখলেন! আপনার সাথে কথা হয়না বছর হয়ে আসলো। আপনার কণ্ঠস্বর শোনার প্রচন্ড নেশা চাপে। কিন্তু অন্যের স্বামীকে কি করে কল দিই! অথচ দেখুন অন্যের স্বামীকে নিয়ে ঠিকই ভাবছি। যা একদমই উচিত নয়, অনুচিত এক কথায়। আমি আপনাকে নিয়ে আর ভাববো না। দেখলেন এর আগেও কত একলা রাত জাগতে গেলে আপনার ভাবনা চলে আসতো। অথচ বারবার বলাম আপনাকে নিয়ে আর ভাববো না। ভাবতে না চাইলেও যে ভাবনায় চলে আসেন! এটার ক্লারিফিকেশন কি বলুন তো?”

রিয়ানা আনমনেই ছবি টার দিকে তাকিয়ে প্রশ্ন টা করে থেমে যায়। হু হু করে ছবি-টা বুকে জড়িয়ে কেঁদে উঠে। কাঁদতে কাঁদতে বলে,

“তুমি ভাগ্যবতী মেয়ে, তাকে আগলে রেখো। সে আমার অনেক শখের, অনেক অনেক শখের।”

“রিয়ানা আপু! তুমি না আমার সাথে শুয়ে পরলে? অথচ না ঘুমিয়ে এখানে এসে দাড়িয়ে আছো? কিছু হয়েছে তোমার?”

অকস্মাৎ রোজার কণ্ঠস্বরে প্রশ্ন শুনে দ্রুত চোখের জল মুছে নেয় রিয়ানা। পিছন ফিরে তাকায়। ড্রিম লাইটের মৃদু মন্দ আলোয় মানুষের আবছা অবয়ব ভালো মতোই দেখা যায়। সে হালকা হাসির রেখা ঠোঁটে টেনে বললো,

“কিছুই তো হয়নি রোজা। তুমি না ঘুমিয়ে উঠে আসলে যে!”

“ওয়াশরুমে যাবো বলে উঠেছিলাম। তোমায় খুজে না পেয়ে বারান্দায় আসলাম। হালকা কান্নার আওয়াজও কানে আসলো। তুমি কাঁদছিলে আপু?”

১২,
“উফ পিচ্ছি, এত প্রশ্ন করো কেন? ঘুমাবে চলো।”

রিয়ানার জবাবে সন্তুষ্ট হলো না রোজা। সে রুমে যাওয়ার বদলে রিয়ানার পাশে দাড়িয়ে আকাশে দৃষ্টি নিক্ষেপ করে জিগাসা করলো,

“আকাশকে দেখছ আপু? কতটা বিশাল আর সাদা মেঘ নীল রঙে সুন্দর! আবার রাত হলে অন্ধকারে তারার জ্বলজ্বলে আলোয় সে সুন্দর। পূর্ণিমার সময় গোল থালার মতো চাঁদ টায় সে সুন্দর। তুমিও তেমন সুন্দর আপু৷ বিষাদের হাতছানির মাঝেও তোমার এই জোড় করে হাসার বিষয় টা নিকোষ অন্ধকার আকাশে গোল থালার মতো পূর্ণিমার চাঁদের মতো সুন্দর। ”

“আমার সৌন্দর্যের তুলনা করার জন্য তোমায় রাত জাগতে হবে না মেয়ে। এসো ঘুমাবে৷”

রিয়ানা হাত ধরে টেনে এনে রোজাকে বিছায়নায় শুইয়ে দেয়। নিজেও পাশে কাথা টেনে ঘুমিয়ে পরার চেষ্টায় মত্ত হয়।

সময় টা সকাল ১০টা। হানিফ সাহেব সকালের নাস্তা সেরে নিজ রুমে বিছানায় আধশোয়া হয়ে রেস্ট করছিলেন। তখনই আয়াত বাবার রুমের দরকার সামনে দাড়িয়ে দরজায় ঠোকা দেয়। হানিফ সাহেব দরজার দিকে তাকিয়ে বড় মেয়েকে দেখে স্ব আনন্দে মেয়েকে উদ্দেশ্য করে বললেন,

“ভেতরে আসো আম্মু। ভেতরে আসতে আবার তোমার অনুমতি লাগে?”

“আব্বু আমার কিছু জরুরী কথা বলার ছিলো।”

আয়াত বাবার সামনে এসে দাড়িয়ে কথাটা বললো। হানিফ সাহেব চিন্তিত চাহনীতে মেয়েকে একবার দেখলেন। আয়াত একমাত্র রিয়ানার বিষয়ে কথা বলতে এতটা সিরিয়াস থাকে। তবে রিয়ানা কি আবার কোনো অঘটন ঘটালো? হানিফ সাহেব এসব চিন্তায় অন্যমনস্ক হয়ে পরলেন। আয়াত বাবার কোনো সাড়াশব্দ না পেয়ে হানিফ সাহেবের সামনে বসে সরাসরি মুখের দিকে তাকিয়ে জিগাসা করে,

“বাবা! রিয়ানাকে আমাদের সাথে বাড়িতে আনলে কি হত? অযথা নিজের মেয়েকে পরের বাড়িতে অপমানিত হতে রেখে এসেছো। দিনশেষে তোমারই মেয়ে। এত রাগ পুষে রাখছো কেনো?”

আয়াতের কথাগুলো হানিফ সাহেবে কর্ণগোচর হতেই তিনি আলতো হাসলেন। হাসি বজায় রেখে বললেন,

“হয়তো ভাবছো তোমার বোনের খারাপ করছি বা চাইছি! আসলে তা নয়। ওখানে থাকলে নিজেকে একটু সামলে রাখবে। বাড়িতে আসলে কি করতো! ভুলে গেছো? ও যে কতটা ডেস্পারেট! এটা তোমার থেকে ভালো তো আমিও জানিনা।”

হানিফ সাহেবের জবাবে আয়াতের মুখের কথা ফুরালো। বাবার সামনে বসেই হাতের আঙুলগুলো ফুটাচ্ছে এক এক করে। হানিফ সাহেব ফের বললেন,

“তুমি তো জানো ওকে না আনার কারণ। কেনো ঐ বাসায় গিয়ে ভুল কিছু দেখলে? ওরা কি রিয়ানার যত্ন ঠিকঠাক নিচ্ছে না? হঠাৎ ঐ বাসা থেকে ফিরে বারবার একই কথা বলে যাচ্ছো। আসার পর থেকে এ কথা।”

“না বাবা, রিয়ানা একদন পাল্টে গেছে বিশ্বাস করো। যাকে ভাষা শিখাতে গিয়ে বা বা বা করতো! সে আজও বাবা পাগল মেয়ে আব্বু। শুধু তুমিই ব্যস্ত থাকো।”

আয়াত ফিচেল হেসে উত্তর দিলো। হানিফ সাহেব বিছানা ছেড়ে দাড়িয়ে স্যান্ডেল পায়ে ঢোকাতে ঢোকাতে বললো,

“একে তো দোষের শেষ নেই! তার মাঝে দোসর কিছু মানুষ। যাদের প্রশয়ে আমার মেয়ে একদম উচ্ছন্নে গেছে। এর আগের বার দেশে এসে কি কি করেছিলো! তোমায় কতটা অপমানিত হতে হয়েছিলো! ভুলে গেছো? এ বাড়িতে আনলে কত যে রঙ তামাশা খাড়া করিয়ে দিতো মানুষ! চিন্তা করতেও পারবে না। আমি চাইনি সেই ঘটনার আবারও রিপিট হোক। মানুষ তোমায় বলুক! বোন বেশ সুন্দর সিগারেট খায় অথচ বোন হাজি! এটাও বিশ্বাস করতে হবে? এসব কথা একজন বাবা হয়ে ব্যর্থ বাবা-ই বলা চলে। সেই বাবা-টা শুধুমাত্র বড় মেয়েকে ভালোবাসে এমনটাই ভাবে! কিন্তু ছোটো মেয়েটার জীবনে আমার শাসন কতটা গুরুত্বপূর্ণ!এটা কেউ বলেনা। বাদ দাও। নিজের সবকিছু গুছিয়ে নাও। আমরা এখান থেকে চলে যাচ্ছি।”

আয়াত বিস্মিত হয় হানিফ সাহেবের শেষের কথায়। চলে যাচ্ছি মানে? সে উত্তরের আশায় বলে,

“যাবো তো ঠিক আছে, কিন্তু যাবে কোথায়? ”

চলবে?
ভুলত্রুটি মার্জনীয়, ঘুম চোখে লিখেছি। জানিনা কেমন হয়েছে। এক্সাম+জবের চাপ। আমি ভর্তা, ভুলুলো ধরিয়ে দিবেন পারলে। আসসালামু আলাইকুম

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here