রক্তের_বন্ধন
Part_32 (অন্তিম)
কাল সন্ধ্যায় রাইসাকে নিয়ে কথার বাড়ি যাওয়ার সময় গাড়িকে আমার ভাড়া ট্রাক ধাক্কা দেয়। এতে করে ড্রাইভার মারা গেলেই ঘটনাস্থলে রাজ আর ছোট বাচ্চাটা বেঁচে যায়। তবে অবস্থা মরার মতোই। আর না মরলে হসপিটালেই মরার ব্যবস্থা করব।
– কথা এসব শুনে আর ঠিক থাকতে পারছে না। রাজের কিছু হয়ে গেলে সে কি করবে?চোখ দিয়ে অনবরত পানি বের হচ্ছে। মন চাচ্ছে ‘শয়তানটাকে নিজের হাতে খুন করি ‘।
– হঠাৎ, সাথির ম্যাসেজ আপু রাজ ভাইয়া শেখ মুজিব হসপিটালে আছে ”’
– কথা আর কিছু না ভেবেই হসপিটালে চলে যায়।
– কথা হসপিটালে যাওয়ার সাথে সাথে, সাথির সাথে দাঁড়ানো একটা ছেলেকে দেখতে পায়।
– আপু আসসালামু আলাইকুম।
– ওলাইকুম সালাম।
– আপু আমি সবুজ। সাথি আমার স্ত্রী! সাথীর ব্যবহারের জন্য আপনি অনেক কষ্ট পেয়েছেন। এজন্য সাথির পক্ষ থেকে আপনার কাছে ক্ষমা চাচ্ছি।
– আরে না, আমি কিছু মন করিনি। এ ছাড়া সাথির জায়গায় আমি হলেও তাই করতাম। সাথি আমার ছোট বোনের মত।
– আচ্ছা সাথি, রাজ আর রাইসা কোথায়।
– আপু রাজের অবস্থা ভালো না। অন্যদিকে রাইসা কিছুটা সুস্থ। রাইসাকে রাজ বাঁচাতে গিয়ে আরো গুরুতর আহত হয়ে গেছে।
– কথা কাঁপা কাঁপা গলায় বলল ‘ রাজ কোথায়!
– আপু তুমি আমার সাথে আস।
– কথা সাথির সাথে যাচ্ছে!
– সাথি রাজের কেবিনে নিয়ে গিয়ে দেখিয়ে দেয়, ওই যে আপনার রাজ!
– কথা ধীরগতিতে, রাজের কাছে যাচ্ছে। বুকের ভেতরটা কেমন যেন করছে।
– কথা রাজের কাছে যেতেই দেখে, রাজের সাথে, রাজকন্যাটাও চুপটি করে শুয়ে আছে।
-কথা নিজের অজান্তেই রাইসার কপালে হাত রাখে।
– রাইসার কপালে হাত রাখতেই রাইসা জেগে ওঠে!
– রাইসা কথাকে দেখেই চমকে ওঠে!
– তোমার না আজ বিয়ে কেন আসছ হসপিটালে? ওহ্ বর দেখাতে আসছ?
– তোমার বর দেখবো না। তুমি চলে যাও। আমার বাবার কাছে এসে না দেখছ না বাবাই ঘুমাচ্ছে!
– মামনি আমার বুকে আসো।
– কে আপনার মামনি। আমার মামনি তো শুয়ে আছে।
– মানে?
– আমার বাবাই আর মম একটাই!
– কথা আর কিছু বলতে পারছে না। তার বিয়ের কার্ড দেখে রাইসার মনে তার প্রতি বিরুপ প্রভাব পড়েছে।
– মামনি তোমার বাবাইকে ছেড়ে আমি কোথাও যাবো না। আমার বুকে আস। আমার বুকটা কেমন যেন করছে।
– না না না। তুমি চলে যাও প্লিজ। তোমার জন্য বাবাই কত কেঁদেছে। তুমি পঁচা। তোমার জন্যই আমার বাবাই একসিডেন্ট করেছে। বাবাই কে তুমি কাঁদিয়েছ।
– আমার বাবাই তোমাকে এত্তো এত্তো ভালবাসতো। বাবা কখন কাঁদত জানো?
– না তুমি বল।
– আচ্ছা শুনো। শুনে কিন্তু চলে যাবা। বাবাই তোমার সাথে কথা বলতে দেখলে রাগ করে কাঁদবে। তুমি জানো আমি বাবাই এর মা। বাবাই বলেছে।
– ও তোমাকে তো বলাই হয়নি, আমি যখন বাবার বুকে ঘুমিয়ে যেতাম। আবার সজাগ পেতাম মাঝরাতে তখন বাবাইকে দেখতাম বাবাই এর বুকের উপর একটা ছবি রেখে কথা বলত। আমি ঘুমের মতো শুয়ে থাকতাম। কিছুক্ষণ পর বাবাই যখন তোমার ছবিটা বুকের সাথে জড়িয়ে কাঁদতো তখন আমি ও জুরে করে কেঁদে দিতাম। বাবাই তখন আমাকে বুকে নিয়ে কাঁদত।
– জানো বাবাই তোমাকে অনেক ভালবাসত। আমিও বাসি। তুমি বুঝ না। বাবাইকেও কষ্ট দাও সাথে আমাকেও। আচ্ছা বলোতো আমার বাবাই দেখতে কি পচাঁ?
– না না তোমার বাবা আমার কাছে পৃথিবীর সবচেয়ে সুন্দর।
– তাহলে বুঝি সুন্দর মানুষকে কষ্ট দিতে হয়। আচ্ছা মম, আমি কি দেখতে পঁচা।
– রাইসার কথা শুনে কথা নিজেকে স্থির রাখতে পারল না। বুকের সাথে জড়িয়ে নিল। রাইসার অভিমান থাকলেও তার মমকে সে সরানোর বিন্দুমাএ চেষ্টাও করছে না। আরো শক্ত করে কথাকে জড়িয়ে ধরছে। কথাকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে বলছে, মম ও মম তুমি বাবাইকে ছেড়ে যেয়ো না।
– জানো মম, বৃহস্পতিবার বিকেল বেলা বাবাই হুট করেই আমাকে জড়িয়ে ধরে কান্না করে দেয়।
– আমি বাবাইকে বলি ‘ চল বাবাই মমকে বলি মম যেন তোমাকে ছেড়ে না যায়। বাবাই মাথা নাড়িয়ে হ্যাঁ বলে। তখন সন্ধ্যাবেলা যখন তোমার বাসাতে আসার জন্য, গাড়িতে করে রওয়ানা দেয়। হঠাৎ বড় একটা ট্রাক এসে গাড়িতে ধাক্কা দেয়। বাবা আমাকে বুকের সাথে জড়িয়ে নেয়! তার পর আর কিছু মনে নেই।
– কথার চোখ থেকে টপটপ করে পানি পড়ছে। বুকের ভেতরটা ধুমড়ে মুচড়ে যাচ্ছে।
– হঠাৎ নার্স এসে বলল, এভাবে কথা বললে রোগীর ক্ষতি হবে।
– আমি কিছু না বলেই, নার্সকে বললাম ডাক্তার কোথায়?
– নার্স ডাক্তারকে দেখিয়ে দিলেন।
– স্যার রাজের অবস্থা কেমন?.
– কোন রাজ?
– কাল ট্রাক একসিডেন্টে আসছে।
– ওহ্! পেশেন্টের অবস্থা বেশি ভালো না। বিশেষ অবর্জারভেশনে রাখতে হবে।মাথায় অনেক আঘাত পেয়েছে। প্রচুর ব্ল্যাড গিয়েছে। আর অনেক টাকার প্রয়োজন।
– কত টাকার প্রয়োজন?
– পাঁচ-ছয় লাখ তো লাগবেই।
– এমন সময় নার্স এসে বলল, স্যার ১২২ কেবিনের রোগীটা কেমন যেন করছে।
– আচ্ছা তুমি যাও আমি আসছি।
– কথা এমন সময়, তার একটা কার্ড বের করে দিয়ে বলল, আমি এই শহরের সবচেয়ে বড় কোম্পানি কথা গ্রুপ অব ইন্ডাস্টিজের চেয়্যারমান। আর যে ১২২ নাম্বার কেবিনে আছে সে আমার স্বামী। আর লাখ কেন? কত কোটি টাকা লাগে আমি দিবো কিন্তু আমার স্বামীর কিছু হলে আপনাকে আমি ছাড়বো না।
– ডাক্তার কথার পরিচয় পেয়ে অনেকটা থমকে যায়। ডাক্তার আসিফ নার্সকে তাড়াতাড়ি ডেকে বলে অপারেশন রেডি করো।
– ম্যাডাম আপনি চিন্তা করবেন না আমি দেখছি। ডাক্তার আসিফ, অপারেশন রেডি করে মেডিকেল বোর্ড বসালো কয়েকজন বড় বড় ডাক্তার নিয়ে।
– অপারেশন রেডি করে, রাজকে অপারেশন থিয়েটারে নেওয়া হল!
– রাজের অপারেশন চলছে অন্যদিকে, কথা অপারেশন থিয়েটারের বাহিরে পায়চারি করছে আর মনে মনে আল্লাহ্কে ডাকছে।
– প্রায় ঘন্টা দুয়েক পর ডাক্তার আসিফ অপারেশন থিয়েটার থেকে বিষন্ন মনে বের হতেই কথা জিজ্ঞেস করে ‘ ডক্টর আমার স্বামীর কি অবস্থা!
– আমাদের যতটুকু চেষ্টা করার কথা ততটাই করেছি বাকিটা আল্লাহর হাতে। মাথার চোটটা অনেক বড়। অনেক বেশি ব্ল্যাড গিয়েছে । জানি না কি হবে? আল্লাহকে ডাকেন। জ্ঞান না ফেরা পর্যন্ত কিছু বলা যাবে না।
-অন্যদিকে, আকাশ সাহেব বিয়ের জন্য রেডি হচ্ছে।কতদিনের প্ল্যান আজ সাকসেস হচ্ছে। এ কথা ভেবেই কেমন যেন খুশিখুশি লাগছে। এমন সময় মাথাটা কেমন যেন ঘুরে ওঠল! আকাশ তার বাবাকে ডাক দিয়েই ফ্লরে পড়ে গেল।
– আকাশের বাবা ছেলের এমন অবস্থা দেখে তাড়াহুড়া করে হসপিটালে নিয়ে গেল। আকাশ সাহেবকে দেখে ডাক্তার কিছু টেস্ট দিল।
– টেস্ট গুলো হাতে পাওয়ার পর ডাক্তার আকাশকে কিছু প্রশ্ন করল এবং জানতে পারল। আকাশ ছোটবেলা থেকে লন্ডনে থাকত। ডাক্তার পুরোপুরি সিউর হয়ে নিল রোগটা সে লন্ডন থেকেই বাঁধিয়ে এসেছ। হঠাৎ এমন সময় আকাশের বাবা ডাক্তারকে বলল’কি হয়েছে আমার ছেলের?
– আমার ছেলের আজ বিয়ে। দেখেন না কি একটা ঝামেলাতে পড়লাম।
– মানে কি বলছেন?
– হুম ডাক্তার সাহেব।
– শুনেন আপনার ছেলের HIV পজেটিভ। রোগটা অনেকদিন ধরেই বয়ে বেড়াচ্ছে। বাট লাস্টটেজে এসে প্রক্রিয়া দেখাতে শুরু করেছে।
– লতিফ সাহেব ডাক্তারের মুখে এমন কথা শুনে চেয়ার থেকে পড়ে যায়।
– ডাক্তার নার্স ডাকতে ডাকতেই ডাক্তার আকাশের হাতেই স্টক করে মারা যায় আকাশের বাবা।
– এদিকে আকাশ জানতে পারে তার বাবা মারা গিয়েছে। আকাশটা অনেকটা ভেঙে পড়ে। যখন জানতে পারে, তার মরণব্যাধি এইডস হয়েছে। তখন তার পুরো পৃথিবীটা উলট-পালট হয়ে যায়। চোখের সামনে ভেসে ওঠে, লন্ডনে ক্লাবে প্রতিদিন ড্রেস চেন্জ করার মতো মেয়েদের সাথে শারীরীক সম্পর্ক করার কথা। চোখ থেকে অনিচ্ছা সত্ত্বেও দু’ ফুটা পানি গড়িয়ে পড়ে। সারাজীবন যে টাকার পিছনে ছুটেছে সে টাকা আজ তাকে বাঁচাতে পারবে না।
– আজ আকাশ- প্রাণে চেয়ে আকাশের খুব বলতে ইচ্ছে করছে’ সত্যিই আল্লাহ তোমার বিচার অনেক কঠিন। এসব আমার কর্মের ফল। খুব করে আকাশের আজ মন চাচ্ছে মরার আগে যদি রাজ আর কথার পায়ে ধরে ক্ষমা চেয়ে নিতে পারতাম তাহলে মরেও শান্তি পেতাম। হসপিটালের বেডে শুয়ে শুয়ে এসব ভাবতে লাগলম
-এদিকে ১৮ ঘন্টা হয়ে গেল এখনো রাজের জ্ঞান ফিরছে না।
– ডাক্তার রাজের যে এখনো জ্ঞান ফিরছে না।
– ম্যাডাম আমাদের যতটুকু চেষ্টা করার করেছি ।হতে পারে পেশেন্টকে বিদেশ পাঠাতে হবে। আমি সিঙ্গাপুরে রোগীর সব ডিটেলস ফ্যাক্স করেছি। তারা আজকে রেজাল্ট জানানোর কথা।
– সিঙ্গাপুরে আমাদের বাংলাদেশের ডাক্তার মন রয়েছে। তার সাথেও কথা হয়েছে।
– ডক্টর প্লিজ যা করা লাগে তবুও আমার স্বামীকে বাঁচান।
– ঘন্টাখানেক পর সিঙ্গাপুর থেকে ফাক্স এসেছে। রোগীকে নিয়ে যাওয়ার পারমিট দিয়েছে।
– কথা রাজ এবং রাইসা নিয়ে সিঙ্গাপুর চলে যায়।
– সিঙ্গাপুরে রাজের আরেকটা অপারেশন হয়। ডাক্তার যখন অপারেশন থিয়েটারে নিয়ে যায়।
– এদিকে ডাক্তার মন অপারেশন থিয়েটারের আগে কথাকে দেখে থমকে যায়।
– আপু আপনি? এখানে কেন?
– কথা তখন রাজের সব কথা খুলে বলে।
– আপু এর আগেও রাজের চিকিৎসা আল্লাহ তায়ালা আমার হাতেই করিয়েছে। এবারও তাই। যাই হোক রাজের সব রির্পোট দেখলাম। আপনি এক কাজ করেন, আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করেন। এই কথা বলে যখন ডাক্তার মন অপারেশন থিয়েটারে যাবে, তখন রাইসা ডেকে বলে ‘ আন্টি আমার বাবাই যেন কষ্ট না পায়। মনে রেখ।
– আচ্ছা তুমি আল্লাহকে বল যেন আল্লাহ তোমার বাবাইকে কষ্ট না দেয়।
– আচ্ছা তুমি যাও।
– ডাক্তার মন অপারেশন থিয়েটার থেকে দীর্ঘ ২ঘন্টা পর বের হতেই। কথা ডাক্তার মনকে বলল’ আপু আমার রাজের কি অবস্থা?
-আমাদের কাজ আমরা করেছি, বাকিটা আল্লাহর কাছে কথাটা বলতেই মনের চোখে অজানা কারণে পানি এসে যায়। কথার বুঝতে বাকি থাকে না রাজের অবস্থা ভালো না।
-এদিকে রাজের অবস্থা ভালো না। ডাক্তার মন তার কেবিনে বসে চিন্তা করছে।
– এমন সময় তার সহযোগী অধ্যাপক বলল’ ম্যাম রোগীর বাঁচার চান্স ৪০ %থাকার সত্ত্বেও কেন অযথা অপারেশন করলেন। ধরতে গেলে রোগীর যে অবস্থা এতে করে নিশ্চিত মৃত্যু।
– হ্যা মিঃ ফিলিপস এটা আমিও জানি। তারপরও অপারেশনটা আমি করেছি। ছোট বাচ্চাটা দেখছ না সে বাচ্চা এবং তাদের শ্বাশত প্রেমের কথা ভেবে।
– যখন অপারেশনের দশ ঘন্টা পার হওয়ার পরও রাজের জ্ঞান ফিরছে না তখন, ডাক্তার মন, কথাকে বলল ‘ আপু ২৪ ঘন্টার মাঝে জ্ঞান না ফিরলে, আর বাঁচানো যাবে না।
– রাইসা কথার কুলে নিশ্চুপ হয়ে বসে আছে। রাইসার মাথায় মন হাত বুলিয়ে দিয়ে বলল’ মামনি বাচ্চাদের দো’আ আল্লাহ কবুল করে। তুমি তোমার আল্লাহকে বল তোমার বাবাকে যেন সুস্থ করে দেয়।
– মন চলে গেলে,কথা সুন্দরভাবে অযু করে নেয়। কথার সাথে সাথে রাইসাও অযু করে নেয় মা’র মতো।
– কথা অযু শেষ করে, কমন রুমের এককোণে নামাযে দাঁড়িয়ে যায়। কথা যখন সিজদা করে কথার সিজদার সাথে সাথে ছোট রাইসা মামনিও সিজদা করে।
– নামায শেষ করে কথা দু’খানা হাত আকাশের দিকে উওোলন করে বলল’ হে আল্লাহ তোমার দরবারে ফকিরের বেশে দু’খানা হাত তুলে ধরেছি। কথা চেয়ে দেখে কথার সাথে সাথে ছোট দু’খানা হাত রাইসাও তুলে ধরেছে। কথার চোখ থেকে টপ করে সাথে সাথে একফোটা অশ্রু জায়নামাযে পড়ে যায়। ও আল্লাহ দেখ তোমার মাসুম বান্দাটাওও তার বাবার জন্য ছোট্ট দু’খানা হাত তুলে ধরেছে। সে তো কোন পাপ করেনি। নিষ্পাপ শিশু তোমার প্রতি অগাধ বিশ্বাস নিয়ে তোমার দরবারে হাত তুলে ধরেছে। তুমি পারবে ছোট চোখের অশ্রু সহ্য করতে?
– ও আমার আল্লাহ্ – এ পৃথিবীতে আমি ছাড়া তোমার কোটি কোটি বান্দা আছে। ও আমার রহমান, কিন্তু তুমি ছাড়া যে আমার কেউ নেই? কার কাছে চাইব। ফকিরে এক জায়গায় ভিক্ষা না পেলে অন্য দরজায় যায়। কিন্তু আমার যে তোমায় ছাড়া আর কারো কাছে যাওয়ার জায়গা নাই।
-তুমি দুনিয়ার একটা ফকির কেও খালিহাতে ফেরত দিতে নিষেধ করেছ। ও মাবুদ তুমি কিভাবে তোমার বান্দীর হাতটা খালি হাতে ফেরাবে? তুমি না রহমান?তুমি না রাহিম । তুমি আমার স্বামীকে সুস্থ করে দাও।
– এদিকে ছোট্ট রাইসা ঠিকমতো কথা বলতে পারে না। ঠিকমতো কারো কাছে চাইতে পারে না। কিন্তু আজ সবশক্তিমান আল্লাহ তায়ালার কাছে ছোট হাতখানা তুলে বলছে ‘ আল্লাহ তুমি কোথায় থাকো? দেখ আল্লাহ তোমার কাছে আমি কিভাবে হাত পেতেছি। আমি তোমার কাছে চকলেট চায় না। আমি তোমার কাছে আইসক্রিম চায় না। চাই আমার বাবাইকে দিবে না তুমি? তুমি কি আমার কথা শুনতে পাচ্ছো না। তুমি জানো না ছোটদের কাঁদাতে হয় না। কিন্তু আমি কাঁদছি। তুমি না ভালো, মা বলছে। তুমাকে বললেই বাবাইকে সুস্থ করে দিবে। ও আল্লাহ আমি বাবাই এর বুকে যাবো। তুমি বাবাইকে ভালো করে দাও। দেখ আমি কাঁদছি। দেখ ফকিরেরা এভাবে হাত পাতে না আমি তোমার কাছে পেতেছি। ছোটদের খালি হাতে ফেরত দেয় না। তুমি আমার বাবাইকে সুস্থ করে দিবে। আমি জানি তোমার অনেক দয়া। তোমার দয়ার বদলতে বাবাইকে সুস্থ করে দাও।
– এদিকে কথা মোনাজাত শেষ করার সাথে সাথে রাইসাও শেষ করে। মোনাজাত শেষ করার পর কথা রাজের কেবিনের সামনে যেতেই দেখে ডাক্তার মন বের হচ্ছে ।
– আপু রাজের কি অবস্থা?
– ডাক্তার মন, চোখের পানি ছেড়ে দিয়ে বলল’ সরি আপু ‘ ভেতরে যান বাকিটা বলতে পারব না।
– ডাক্তারের কথা শুনে বুকের ভেতরটা কেমন করে ছ্যাঁত করে ওঠে। না এ হতে পারে না। কথা দৌড়ে গিয়ে রাজকে বুকের সাথে জড়িয়ে ধরে কাঁদতে কাঁদতে বলতে থাকে ‘ তুমি আমায় ছেড়ে যেতে পারো না। আমি তোমাকে ছাড়া কেমনে বাঁচবো। হঠাৎ কথার কানে কে যেন কামড় দিয়ে বলে’ কিরে পাগলী কি করে ভাবলি, তোকে একা রেখেই চলে যাবো বড্ড বেশি ভালবাসি যে তোকে। আমার জ্ঞান ফিরতেই ডাক্তার মনকে বলি তোমাকে যেন এভাবে বলে।
যাহ দুষ্ট আর কিছু বলতে পারে না কথা । রাজের বুকের উপর মাথাটা রেখে, চোখের জল ছেড়ে দেয়।
– কি হলো মামনি বাবাই না অসুস্থ।
– কথা লজ্জা পেয়ে উঠে পড়ে।
এমন সময় আমি রাইসার দিকে দু’খানা হাত বাড়িয়ে দেয়। রাইসা এক দৌড়ে আমার বুকে আছড়ে পড়ে । রাইসা আমার কপালে চুমু দিয়ে বলে, বাবাই আমাকে রেখে কোথাও যাবে না। প্রমিজ করো?
– আচ্ছা প্রমিজ।
– এমন সময়, ডাক্তার মন এসে বলে’ আপু আজকে স্বয়ং আল্লাহ তায়ালা রাজের হায়াত দান করেছে। তা না হলে মৃত্যু যেখানে নিশ্চিত সেখান থেকেও রাজ বেঁচে ফিরেছে। আর আপু তোমার প্রতি অনুরোধ রইল, তোমার স্বামীকে নিরাপদে রেখে।
– কথা হসপিটালে কয়েকদিন থেকে রাজকে নিয়ে দেশে ফিরে আসে। দেশে ফিরে জানতে পারে আকাশ মারা গিয়েছে এইডস রোগে। কথা মনে মনে বলল ‘ নিশ্চয়ই আল্লাহ সর্বোওম বিচারকারী।
– এদিকে রাজ এখন পুরোপুরি সুস্থ।
– একদিন সকাল বেলা কথা ওয়াশরুমে গিয়ে শাওয়ার নিতে সময় দরজা লর্ক করার কথা ভুলে যায়।
– আমি ওয়াশরুমের দরজা ধাক্কা দিতেই চোখ বন্ধ করে ফেলি।
– কথা অ্যা করে চিৎকার মারে এটা ভাবছেন না? কথা দরজাটা লাগিয়ে দিয়ে বলে শাড়িটা পড়তে পারছি না পড়িয়ে দেও।
– কথার শাড়ি পড়িয়ে দিচ্ছি। যখন শাড়ির কুচিটা কথার কুমড়ে গুজে দিব ঠিক তখনি বলল’ আজ যে আমাদের ৮ তম বিবার্হবার্ষিকী তুমি জানো?
– আমি মনে মনে ভাবলাম আল্লাই জানে এখন যদি বলি মনে নাই কপালে শনি আছে তাই কথাকে কুলে করে নিয়ে, রুমে চলে গেলাম।
– নিজ হাতে কথার গলায় সোনার একটা নিকলেস পড়িয়ে দিলাম!
– তারপর রাইসা আর কথাকে নিয়ে ঘুরতে বের হলাম। রাএিবেলা কথা আমার কানের কাছে মুখ নিয়ে বলল’ আমাদের বিবাহবার্ষিকীতে তোমার কাছে একটা জিনিস চাইব দিবে?
– কথা সম্পূর্ণ কথা শেষ
করার আগেই কথার ঠোঁটে লাগিয়ে দিয়ে বললাম ‘ তোমার কাব্যকে চাই।
কথা ছাড়িয়ে নিয়ে বলল ‘ যাহ দুষ্ট! বলার আগেই বুঝে ফেলে।
-বুঝবোই তো, রাইসার একটা ভাই দরকার। কাব্য কে তো লাগবেই এ কথা বলে কথাকে আপন করে নিলাম।
– – – – – – – – ♥সমাপ্ত♥- – – – – – – – –
বিঃদ্রঃগল্পটা আমি চেষ্টা করেছি আপনাদের মনের মতো তৈরি করার জন্য। হয়ত কিছুটা পেয়েছি। কিছুটা পারিনি, তারপরও যারা আমার পাশে ছিলেন। সবার প্রতি কৃতজ্ঞ।
চিরকাল অটুট থাকুক রক্তের বন্ধন গুলো।
গল্পটা কেমন হল জানাবেন অবশ্যই।
‘আসসালামু আলাইকুম’।