#রক্তের_বন্ধন
Part_13+14
কথা পতিতালয়ে ঢুকার সময় একটা মাঝবয়সী লোক মুচকি হেসে বলল ‘ আগে কখনো দেখেনিতো তোমায়?
– খদ্দের লাগবে? যদি খদ্দের ধরিয়ে দেয় আমাকে অর্ধেক দিতে হবে। নইলে যেতে দেওয়া হবে না। কথা তার পার্স থেকে ১ হাজার টাকার নোট বের করে লোকটার হাতে ধরিয়ে দিল! লোকটা হা করে দাঁড়িয়ে আছে।
– কথা পতিতালয়ের ভেতরে ঢুকতেই দেখে রাজ একটা রুমে যাচ্ছে। রুমে গিয়ে দরজাটা লাগিয়ে দিল!
কথা জানালা ফাঁক করে ভেতরে তাকিয়ে যা দেখলে তা দেখার মুটেই প্রস্তুত ছিল না। রাজ একটা বয়স্ক মহিলারর পা ছুঁয়ে সালাম করছে।
.
হঠাৎ, মহিলাটি রাজকে পা থেকে তুলে বলল’ বাবারে, সত্যি তোরমতো ছেলে পেয়ে আমি অনেক ভাগ্যবতী ‘ জানিনা পতিতা হয়েও কি এমন ভালোকাজ করেছিলাম যার জন্য তোর মতো একটা ছেলেকে পেয়েছি!
.
মাগো এমন কথা বলো না তুমি, আমার কাছে তোমার পরিচয় মা। যে আমাকে কত কষ্ট করে লালন পালন করেছে। মা আমার মাথায় একটু হাত ভুলিয়ে দিবে? আমার না খুব কষ্ট হয়, আমি এত কষ্ট রাখব কোথায় মা। তবুও তোমার কুলে মাথা রাখলে যে আমি শান্তি পায়।
.
কি হয়েছে বাবা? তুই ছোট্ট বাচ্চার মতো কাঁদছিস কেন? আমার দাদু ভাইয়ের কিছু হয়েছে?
.
হুমম মা, অনেক অসুস্থ আমার কলিজার টুকরাটা। আচ্ছা মা ‘ কোন মা কি তার সন্তানকে না দেখেই চিনতে পারে?
.
হঠাৎ এমন প্রশ্ন?
.
বল মা?
‘ হ্যাঁ। বাবা, মাতৃত্বের একটা শক্তি আছে। এই অদৃশ্য শক্তি বলেই একজন মা তার সন্তানকে চিনতে পারে!
.
জানো মা, আমার মেয়েটাকে তার মা চিনতে পারল না। আমার কলিজার টুকরাকে বাঁচাতে তার মার কাছে ফেরত দিতে গিয়েছিলাম। জানো মা, তার মা তাকে কি বলছে? বলছে যে’ আমার মেয়েটা নাকি কোন পতিতার গর্ভ থেকে জন্ম নিয়েছে! একটা কথায় আমার কলিজাটা রক্তাক্ত হয়ে গেছে। যাকে নিজের থেকে বেশি ভালোবেসেছিলাম সে মানুষটা এভাবে আঘাত করবে ভাবতে পারিনি। মা আমার মেয়েটার প্রায় দু’টি কিডনীই ড্যামেজ হয়ে গেছে, বাধ্য হয়ে মেয়েটাকে বাঁচাতে তার মায়ের কাছে গিয়েছিলাম। কিন্তু সব আশা ব্যর্থ করে এমন ভাবে তাড়িয়ে দিয়েছে, কোন কুকুরকেও এভাবে তাড়িয়ে দেয় না। আমার মেয়েটা তার মায়ের কাছেই পতিতায় মেয়ে!
.
কথা ধপ্ করে ফ্লরে বসে পড়ল! মুখটা বামহাতে চেপে ধরে কাঁদতে লাগল। একি করেছে সে, কাকে কষ্ট দিয়েছে! রাজ কি তাকে ক্ষমা করবে?
.
মা আমায় একটু ঘুম পাড়িয়ে দিবে? আমার যে নিঃশ্বাস নিতেও আমার কষ্ট হয়। আমার মাথায় মা হাত ভুলিয়ে দিচ্ছে! মায়ের কুলে মাথা রেখে, আমার কিডনী ডুনেট সবকিছু বললাম। মা বলল ‘ বাবা তোর দুঃখিনী মায়ের দোয়া তোর প্রতি সবসময় রয়েছে! মা’র কাছ থেকে বিদায় নিয়ে পতিতালয় থেকে বের হলাম। পতিতালয় সবার কাছে খারাপ হলেও আমার কাছে এক পরম আশ্রয়স্থল। কারণ আমার নতুন জীবন যে সেই নিষিদ্ধ পল্লী থেকে!
.
এদিকে কথা কি করবে ভাবতে পারছে না। হঠাৎ ছোট্ট একটা বাচ্চা এসে বলল’আপনি কাঁদেন কেন? কাঁদবেন না! জানেন আমার মাও কাঁদে, যখন অন্য মানুষ আমাকে বাহিরে বের করে দিয়ে মাকে ভেতরে নিয়ে দরজা লাগিয়ে দেয়! আপনারো কি, বাচ্চাকে বাহিরে বের করে দিছে?
.
পতিতারা খারাপ, তাদের সন্তানও সে পাপের ফসল! কিন্তু কথার কাছে আজ এ সমীকরণ মিথ্যা লাগছে, কেন জানি বাচ্চাটাকে বুকের সাথে জড়িয়ে কাঁদতে মন চাচ্ছে!
.
আপনি কাদবেন না কেমন? চলেন দিদার কাছে যায়!
.
ছোট্ট বাচ্চাটার কথা শুনে, রাইসার কথা গুলো মনে পড়ল’ তুমি পঁচা তুমি বাবাইকে বকা দাও! তোমার সাথে কথা বলব না’ রাইসার কথাগুলো মনে পড়তেই বুকের ভেতরটা নাড়া দিয়ে উঠে। নিজের মেয়েকে এতটা কষ্ট দিয়েছে, নিজের এক ফোটা দুধ তো দূরের কথা, একটা বার বুকে পর্যন্ত জড়িয়ে নেওয়া হয়নি। রাজ কি আমায় ক্ষমা করবে? একটা মানুষ কতটা কষ্ট বুকে চাঁপা দিয়ে রেখেছিল! এতটা ভালবাসার পরও যে আমি তাকে কষ্টই দিয়েছি। আমাকে কি আমার স্বামী ক্ষমা করবে? মাকে সবটা বললে মা হয়তো ক্ষমা করবে আমায়।
.
কথা হাটিহাটি পায়ে রুমটাতে প্রবেশ করল! রুমটাতে রাজের কলেজ জীবনের ছবি! আরো অনেক ছবি রয়েছে! হঠাৎ বিছানায় শুয়ে থাকা মহিলাটি বলল’ কে মা তুমি? ‘
.
কথা কাঁপা কাঁপা গলায় বলল’ মা আমি আপনার এক হতভাগী সন্তান! যে সত্যিকারের ভালবাসাকে কাছে পাওয়ার পরও পা দিয়ে দূরে ঠেলে দিয়েছে!
.
মা আমি বুঝতে পারছি না তুমি কে?
.
‘মা আমি, আপনার ছেলের বউ! মা আমাকে ক্ষমা করে দাও। ‘কথাটা বলেই, কথা মা’র পা দুটি ঝাপটে ধরল।
.
কি করছো মা ছাড়ো? এভাবে পা ধরেছো কেন? সন্তানতো পায়ের পায়ে নয় বুকে থাকে!
.
মা’গো আমি যে আমার স্বামীকে কষ্ট দিয়েছি, কষ্ট দিয়েছি আপনার ছেলেকে। আপনি ক্ষমা না করলে যে আমার স্বামী আমায় ক্ষমা করবে না! মা জানেন ছোটবেলায় মাকে হারিয়ে মায়ের স্নেহ মমতা, ভালবাসা কী তা কখনো বুঝিনি। বাবার অর্থ প্রাচুর্যের মাঝে বড় হয়েছি। জীবনে প্রথম আপনাকে মা বলে ডাকলাম। আপনি কি আপনার সন্তানের অধিকারটুকু আমায় ভিক্ষা দিবেন!
.
কি করছো মা, সন্তান যত বড় অপরাধ করুক না কেন মায়ের কাছে কান্না করে দিলে, সে অপরাধ ভালবাসায় পূর্ণ হয়।
.
কথাকে পা থেকে বিছানায় নিয়ে বলল ‘ কেনরে মা আমার ছেলেটাকে এতো কষ্ট দিলে? কেনই ডির্ভোস দিয়েছিলে?
.
মা পরিবারের অমতে রাজকে বিয়ে করেছিলাম রাজকে। আমাদের ঘরে অন্য কিছুর অভাব থাকলেও কখনো ভালবাসার অভাব ছিল না। রাজকে বড্ড বেশি ভালবাসতাম। দিনগুলো ভালোই কাটতেছিল! যখন রাইসা আমার গর্ভে এলো তখন নিজেকে আরো বেশি সুখী মনে হয়েছিল! কত স্বপ্নছিল রাইসাকে নিয়ে, কিন্তু আমার কপালে যে সুখ নেই। একদিন হঠাৎ বাবা এসে বলল’ মারে, তুই না হয় ভুল করছিস। আমি তোর ভুলটা মনে মনে মেনেও নিয়েছিলাম। কিন্তু মা’রে রাজের চরিএ ভালো না। তোকে যে কিভাবে বলি?
.
সেদিন বাবার মুখের উপর দরজা লাগিয়ে দিয়েছিলাম! এর কয়েকদিন পর বাবা একদিন ফোন দিয়ে বলল ‘ দেখে যা তোর বরের চরিএ! আমি জানতাম আমার রাজের মতো ভালোমানুষ হয় না। কিন্তু সেদিন যখন ফার্মেসি থেকে মেডিসিন নিয়ে পতিতালয়ে ঢুকলো রাজ। তখন আমার পৃথিবীটা অম্যাবস্যার অন্ধকারে ডাকা পড়ে গেল। তারপর ওখানেই ডাস করে পড়ে যায়। বাবা হসপিটালে নিয়ে গেলেও, জ্ঞান ফিরাই সাথে সাথে আমি বাসায় চলে আসি! সারারাত আমি ব্যথায় ছটফট করছি, কিন্তু সেদিন রাতে আর রাজ বাসায় ফিরেনি। পরের দিন বাসায় ফিরলে, রাজকে যখন জিজ্ঞেস করি তুমি কাল সারারাত কোথায় ছিলে ‘ ওর সোজাসাপ্টা উওর ছিল, আমি বন্ধুর বাড়িতে ছিলাম!
.
তখন আর বলতে পারিনি, তুমি গর্ভবতী স্ত্রী রেখে সারারাত পতিতালয়ে কাটিয়েছো। বার্থরুমে শাওয়ার নিতে গিয়ে চিৎকার দিয়ে কান্না করেছি। এদিকে কয়েকদিন পর পর পতিতালয়ে রাজ গিয়ে থাকতো। আমি যদি বলতাম কোথায় ছিলে, রাগ দেখিয়ে বলতো, বন্ধুর বাসায়। আমার খুব কষ্ট হতো। এরই মাঝে বাবা আমাকে নিতে আসল। সেদিন আর না করতে পারিনি। মনে মনে স্থির করে নিয়েছিলাম বাকি জীবনটা রাজের ভালবাসার ফসল গর্ভের সন্তানটাকে নিয়েই পার করে দিবো। কিছুদিন পরেই রাজকে ডির্ভোস দেয়। এদিকে বাচ্চা প্রসবের সময় ঘনিয়ে আসলে ‘ হসপিটালে নিয়ে যায় বাবা আমাকে। যখন জ্ঞান ফিরে তখন জানতে পারি আমার মৃত বাচ্চা হয়েছে! মা আমি কি করবো বলেন? রাজ আমায় কিছুই বলেনি আপনার কথা। মা আপনার দু’টো পায়ে পড়ি, আমার স্বামীর ঘরে আমাকে ফিরিয়ে দেন। আমি যে রাজকে ছাড়া বাঁচবো না!
.
মা’রে ক্ষমা তুই কেন চাচ্ছিস ক্ষমা আমাকে তুই করে দে! আমি যে রাজকে কসম দিয়েছিলাম, আমার কথা কাউকে না বলতে। যেদিন রাজকে ওষুধ নিয়ে পতিতালয়ে ঢুকতে দেখেছিলি। সেদিন আমার প্রচন্ড জ্বর ছিল। সারারাত মাথায় পানি দিয়েছিল রাজ। তাই বাসায় যেতে পারিনি।
.
জানিস মা আমার জন্য আমার ছেলেটার জীবন থেকে অনেকটি বছর নষ্ট হয়ে গেছে! তুকে যে কিভাবে বলি রাজ আমার নিজের সন্তান নয়?
পর্বঃ১৪
মা আপনার দু’টো পায়ে পড়ি, আমার স্বামীর ঘরে আমাকে ফিরিয়ে দেন। আমি যে রাজকে ছাড়া বাঁচবো না!
.
মা’রে ক্ষমা তুই কেন চাচ্ছিস ক্ষমা আমাকে তুই করে দে! আমি যে রাজকে কসম দিয়েছিলাম, আমার কথা কাউকে না বলতে। যেদিন রাজকে ওষুধ নিয়ে পতিতালয়ে ঢুকতে দেখেছিলি। সেদিন আমার প্রচন্ড জ্বর ছিল। সারারাত মাথায় পানি দিয়েছিল রাজ। তাই বাসায় যেতে পারিনি।
.
জানিস মা আমার জন্য আমার ছেলেটার জীবন থেকে অনেকটি বছর নষ্ট হয়ে গেছে! তুকে যে কিভাবে বলি রাজ আমার নিজের সন্তান নয়!
.
মা তাহলে রাজ কে?
.
রাজ ‘ রাজ্জাক চৌধুরির ছেলে। ছোটবেলায় রাজের বাবাকে রোড একসিডেন্টে তারই সালা মেরে ফেলে! নিজের বোনকে বিধবা বানায়! আজ থেকে ২৫ বছর আগের কথা ‘ আগের কথা। আমি তখন ১৮ বছরের যৌবতী। বিয়ের আসরে পালিয়ে এসেছিলাম । কিন্তু, মন্দ কপাল নিয়ে যারা জন্মগ্রহন করে তাদের কপালে সুখ নেই! ছোট বেলায় মাকে হারায়। বাবা আরেকটা বিয়ে করলে বাবাও হয়েও যায় সৎ মায়ের মতো। জোর করে টাকার লোভে, ৫০ বছরের এক বয়স্ক লোকের সাথে বিয়ে দিতে চায়। তাই বিয়ের আসরে ‘ রায়হানের সাথে পালিয়ে ঢাকা আসি! কিন্তু ভালোবাসার মানুষটি বিয়ে করার নাম করে পতিতালয়ে বিক্রি করে দিয়ে যায়! খুব কেদেছিলাম ! জানিস মা একদিন সর্দারনি বলল তুই আজকের রাতটা বিশিষ্ট শিল্পপতি ‘ নিয়ান, সাহেবের সাথে কাটাবি। আমি মাথা নাড়িয়ে হ্যাঁ সূচক জবাব দিলাম। না করার যে কোন ক্ষমতা আমার মতো মেয়ের ছিল না!
– সেদিন রাতেই আসিফ সাহেব তাদের বাংলোয় নিয়ে যায়! রাতে অনেক নেশা করে!
– আসিফ সাহেব, আমাকে ভোগ করতে ব্যস্ত! এমন সময় দরজাটা খুলে যায়! দরজাটা খুলার সাথে সাথেই একটা মহিলা চিৎকার করে বলে উঠে! আসিফ সাহেব আমাকে চলে যেতে বলে। আমি কাপড়টা ঠিক করে, বাড়ি থেকে বের হতে গিয়েই কিসের যেন অজানা টানে বাড়িতে ফিরে আসি। ঘরের বাহির থেকে জানালা দিয়ে সবকিছু দেখছি!
আসিফ তুই! তোকে তো ভালো ভেবেছিলাম। কিন্তু তুই ছিঃ তুই এতটা নীচ। আমার ঘৃণা হচ্ছে, তুই আমার ভাই আমার স্বামীর পবিএ বাংলোকে তুই কলঙ্কিত করছিস। তুই আজকেই আমাদের বাড়ি থেকে বেড়িয়ে যাবি।
.
আসিফ তুই কি বলছিস? মদ খেয়ে নষ্টামি করে তুই কাকে কি বলছিস সব ভুলে গেলি?
. না ভুলিনি! আর এই বাংলো তোর না আপু বাংলো সহ সব সম্পত্তি আমার!
-মুখ সামলে কথা বল!
-” হাহাহা, তোর স্বামীকে যেমন গাড়ি চাঁপা দিয়ে মেরেছিলাম আজ তোকে আগুনে পুড়ে মারবো সাথে তোর বাচ্চাটাকে।” আসিফ কথাটা বলেই তার বোনকে, সজোরে দেয়ালের সাথে ধাক্কা মারলো। দেয়ালের সাথে মাথাটা বারি খাওয়াই মাথা ফেটে ফেলকি দিয়ে রক্ত পড়তে লাঘলো! বাচ্চাটা ফ্লরে পড়ে কান্না করতে লাঘল!
.
রক্তমাখা শরীর নিয়ে বোন তার ভাইয়ের পা ধরে বলেছিল ‘ ভাইরে তোর কাছে আমার ছেলের জীবনটা ভিক্ষা চাই, ওকে তুই মারিস না! ”
মায়ের সামনেই বাচ্চাটিকে লাথি মারল। মুখ দিয়ে রক্ত ঝরছে! আর মা ছ্যাচড়েঁ ছ্যাঁচড়ে বাচ্চাকে বুকের সাথে জড়িয়ে নিল! বাচ্চার কান্নাটা হঠাৎ যেন নিঃস্তব্ধ হয়ে গেল! আমার কাছে মনে হচ্ছে পৃথিবীর নিসৃংস কোন ঘটনা দেখছি। বুকের ভেতরটা কেমন কেঁপে ওঠছে! পাপিষ্ঠ আসিফ এরপর যা করলো তা আমি কল্পনায় ভাবিনি! ঘরে আগুন লাগিয়ে দরজাটা লাগিয়ে দিয়ে বের হয়ে পড়লো আমি আড়ালে লুকিয়ে পড়লাম। ঘরের ভেতর আগুন দাউ-দাউ করে জ্বলছে! লোকটি হাসতে হাসতে বেড়িয়ে গেল! লোকটি চলে যাওয়ার সাথে সাথেই আমি ঘরে ঢুকেই দেখি, মেয়েটির শাড়িতে আগুন লেগেছে! বাচ্চাটি, তার মায়ের দুধ খাচ্ছে! মেয়েটির হাত ধরে দেখলাম নাড়ির স্পর্দন বন্ধ হয়ে গেছে! শরীরের অর্ধেক অংশ আগুনে পুড়ে গেছে! অন্যদিকে বাচ্চাটির দুধ খাওয়ার দৃশ্যটি হৃদয়ে দাগ কেটে যাচ্ছে! বাচ্চাটিকে নিজের অজান্তে বুকে টেনে নিলাম! হঠাৎ দেখি আগুনের স্ফুলিঙ্গ আমার শরীরে পড়ছে। বাচ্চাটিকে নিয়ে একবারে পতিতা পল্লীতে এসে পড়ি! সর্দারনি খালাকে সব বললে খালা আমাকে লুকিয়ে রাখে। আর আমি রাজকে নিজের ছেলের মতো বড় করি! রাজের মতো কষ্ট পৃথিবীতে কোন ছেলে হয়তো করেনি। রাজের বয়স যখন ছয়বছর তখন এই নিষিদ্ধ পল্লীতে রাখিনি। রাজকে আবাসিক এক স্কুলে ভর্তি করিয়ে দিয়েছিলাম। রাজের বাবার নাম ছিল না, আমি পারিনি রাজকে তার-বাবা মার পরিচয় দিতে! সবাই রাজ বিশ্রী ভাষায় কথা বলতো। রাজকে নিয়ে তাই পতিতালয় ছেড়ে কোথাও যায়নি। আমি চাইনি আমার ছেলেটা যেন আর কোন কষ্ট না পায়। কিন্তু আজ জানতে পারলাম আমার ছেলেটা বিরহের অনলে পুড়তে পুড়তে শেষ!
.
নিজের মামাই যে রাজের বাবা -মায়ের খুনি! রাজকে বলিনি তার বাবা খুনি, তারই মামা। পারিনি বলতে আমি রাজের মা না। রাজ এখনো জানে না তার বাবা মা কে!
.
মা কোন এই আসিফ সাহেব যে, আমার স্বামীর জীবনটাকে নষ্ট করে দিয়েছে!
.
মা আমি ঠিক চিনি না! তবে উনার বাড়ি ছিল মিরপুর চৌদ্দতে!
.
রাজের মায়ের মুখে, কথা মিরপুরের কথা শুনে চমকে উঠলো! তাড়াতাড়ি মোবাইল ফোনটা বের করে তার আর তার বাবার ছোটবেলার একটা ছবি দেখিয়ে বলে দেখেন তো মা লোকটাকে চিনেন কিনা? ‘ এইতো সেই পাপিষ্ঠ আসিফ, যে আমার রাজের জীবনটা নষ্ট করে দিয়েছে! কথার হাতটা কাঁপতে কাঁপতে ফোনটা ফ্লরে পড়ে যায়। কথার মাথায় যেন আকাশ ভেঙ্গে পড়ল। তার- বাবাই তার ফুপি-ফুপাকে খুন করেছে! রাজ তাহলে আমার ফুপাতো ভাই। কথার মাথায় কিছু ঢুকছে না। রাজ যদি জানতে পারে, আমি তার বাবা- মায়ের হত্যাকারীর ছেলে রাজ কী আমায় ক্ষমা করবে? বুকের ভেতরে কষ্টের পাথর এসে জমাট বাঁধছে।
.
মা এভাবে ফোন ফেলে দিলে কেন?
– কথা,আকস্মিকভাবে রাজের মায়ের পা দু’টি ধরে বলে ‘ মা- মাগো, আমি যে খুনীর মেয়ে। আমার শ্বশুর আর শাশুড়ীর হত্যাকারী যে আমারই জন্মদাতা পিতা। আমার স্বামী কি আমায় ক্ষমা করবে। আমার স্বামীকে যে আমি নিষ্ঠুর ভাবে আঘাত করেছি। কুকুরের মতো ব্যবহার করেছি। বলেন মা রাজ আমায় ক্ষমা করবে?
– মা’রে তোর ভালবাসা তোমামার আদায় করে নাও। আর তুমিতো খুন করোনি মা, খুন করেছে তোমার বাবা! জানো মা সম্পত্তির জন্য মানুষ কতটা নিষ্ঠুর হতে পারে সেদিন তোমার বাবাকে দেখেছি।
.
মা আমি এখন কি করবো?
– তুমি এক কাজ করো, হসপিটালে যাও রাজের কাছে ক্ষমা চাও!
-কথা, মা’র কাছ থেকে বিদায় নিয়ে সোজা হসপিটালে চলে যায়। হসপিটালের কাউন্টার থেকে রাইসার বেড নম্বর টা জেনে নেয়। ১০ নম্বর কেবিনের সামনে যেতেই বুকের ভেতরটা ধর্ক করে ওঠে!
.
রাজ রাইসাকে বুকে নিয়ে শুয়ে আছে, রাজের মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছে সাথি।
.
রাজের মাথায় সাথির হাতটা দেখেই বুকের ভেতর কেমন করে উঠলো। কথা যে রাজের ভাগ কাউকে দিতে চায় না। কথা দৌড়ে গিয়ে সাথিকে বলে তুমি রাজকে স্পর্শ করবে না।
– ম্যাডাম আপনি এখানে?
– হ্যাঁ আমি।
– তো রাজের কাছে কেন? আর কত কষ্ট দিবেন রাজকে। রাজ আপনার কে?
– রাজ আমার স্বামী কথাটা বলতে গলাটা ধরে এলো!
– আমি ঠাস করে কথার গালে চড় বসিয়ে দিলাম! ছিঃ লজ্জা করে না। আবার কিসের জন্য আসছেন? অফিসের সবার সামনে চরিএহীন বানিয়ে আপনার প্রতিশোধ নেওয়া শেষ হয়নি। আর কি চান? আমাদের বাঁচতে দিবেন না। রাইসাকে জড়িয়ে ধরে বললাম।
.
রাজ আমি তোমার পায়ে পড়ি আমাকে ক্ষমা করে দাও।
.
কিসের ক্ষমা? এতটা ভালবাসার পরও যাকে আপনি কুকুরের মতো তাড়িয়ে দিয়েছেন। আর আমি আপনাকে সেখানেই ক্ষমা করে দিয়েছি। আপনার প্রতি কোন অভিযোগ নেই। আপনার মুখটা আমার দেখতে মন চায় না। কথাটা বলতে বুকটা ছ্যাঁত করে উঠল!
– হ্যাঁ আমি অপরাধী! কিন্তু তুমি যখন সাথিকে নিয়ে একই বাসায় থাকো তখন আমার কষ্ট হয়। আমি তোমাকে বলেছি শুনোনি তুমি।
.
প্লিজ রিমোশনাল ড্রামা বন্ধ করেন।
.
রাজ আমি ড্রামা করছি না।
.
প্লিজ আপনাকে কড়জোরে মিনতি করছি, আপনি চলে যান আমার মেয়েটা এমনেতেই অনেক অসুস্থ!
– রাজ, রাইসাকে একটিবার বুকে নিতে দিবে? আমার হৃদয়রের রক্তক্ষরণটা বন্ধ করতাম।
.
ছিঃ আপনার লজ্জা করে না, পতিতার মেয়েকে আপনার মেয়ে বলছেন।
– হঠাৎ সাথি, কথার গালে ঠাস করে চড় বসিয়ে দিল!
“”””” পরবর্তী পর্বের অপেক্ষায় থাকেন।
বিঃদ্রঃ ভুলক্রুটি ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন।