রক্তের_বন্ধন পর্বঃ১২

0
880

রক্তের_বন্ধন
পর্বঃ১২

কথার মুখে এমন কথা শুনে কলিজাটা ফেঁটে যাচ্ছে। চোখের পানি মুছে কথা ম্যাডামকে বললাম’ ম্যাডাম আপনি আপনার মেয়েকে নিবেন? আমার টাকাটা খুব প্রয়োজন।
.
আমার কথা শেষ না হতেই ‘ আকাশ বললো সুইট হার্ট, তোমার মেয়ে তো মারা গিয়েছে।হসপিটালে আমি নিজের চোখে দেখছি তোমার মৃত মেয়ে হয়েছে। এই চরিএহীনটা তোমার সাথে ব্যবসা করতে এসেছে। তুমি এই ছোটলোকটার কথা বিশ্বাস করলে?
.
কথা আমার কাছে এসে বলল’ ছিঃ! শেষ পর্যন্ত এমন ঘৃণ্য অভিনয় করতে পারলি? কার না কার জারজ সন্তানকে টাকার লোভে আমার মেয়ে বানাতে তোর লজ্জা করলো না? জানি না কোন পতিতার ঘরে এর জন্ম। আর আমার ঘাড়ে তুলে দিতে চাচ্ছিস। এই জন্যই তো বলি পতিতায় মেয়ে কেন আমায় মা ডাকবে। পতিতার মেয়ে তো সাথীর মত নষ্ট মেয়েকেই মা ডাকবে।
– ঠাস, ঠাস, ঠাস! কথার গালে চড় বসিয়ে দিয়ে বলতে লাগলাম” এই তুই মেয়ে। তোর লজ্জা করে না? নিজের মেয়েকে পতিতার মেয়ে বানাতে। তুই আর কোনদিন রাইসাকে মেয়ে বলে পরিচয় দিবি না। লজ্জা করে না। তুই মেয়ে জাতির কলঙ্ক।
.
তোরমতো চরিএহীনের মুখে এসব মানায় না। আর তোর কি করে সাহস হয় আমার গায়ে হাত তুলতে?
.
চুপ একদম চুপ, আজ তুই অর্থবিত্তের জন্য যে ভুল করছিস এর ফল তোকে পেতেই হবে। কথাগুলো বলে অহংকারী মেয়ের বাড়ির থেকে বেরিয়ে গেলাম। চোখ থেকে অশ্রুর বার্ণ বেড়িয়ে আসছে। কি করবো আমি। আমার যেকোন মূল্যে রাইসাকে যে বাঁচাতেই হবে। চোখে মুখে অন্ধকার দেখছি।
.
বাসায় এসে ফ্রেশ হয়ে না খেয়েই শুয়ে পড়লাম। স্বপ্নে দেখি রাইসা মারা গিয়েছে।
ঘুম ভাঙতেই মনে হলো, যার জন্য পৃথিবীর সব দরজা বন্ধ হয়ে যায়। তার জন্য আল্লাহর দরজাটা খোলা থাকে। বান্দা আল্লাহকে ভুলে গেলেও আল্লাহ কখনো বান্দাকে ভুলে না। তাই ওযু করে ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখি রাত ৩ টা বাজে। দু’রাকাত নামায শেষ করে, আল্লাহর কাছে দু’খানা হাত তুলে বলতে লাগলাম’ হে বিশ্বজাহানের মালিক, হে পরওয়ার দেগার; পৃথিবীর সকল মানুষ যখন গভীর ঘুমে আসক্ত। তখন তোমার এ গোনাহগার বান্দা তোমার দরবারে দু’টি হাত তুলে ধরেছি। আল্লাহ কি এমন অপরাধ করেছি, যার জন্য এতো কষ্ট দিচ্ছো আমায়। যাকে এতটা ভালবাসতাম তাকে দূরে সরিয়ে দিয়েছো। আজ সে অন্যের বুকে। হে আল্লাহ আমি তোমার কাছে কিছুই চাই না। আমার বেঁচে থাকার শেষ অবলম্বন, আমার কলিজার টুকরা রাইসাকে সুস্থতা দান করো। হে আল্লাহ শেষ রাতে তুমি বান্দার ফরিয়াদ শুনতে নাকি চতুর্থ আসমানে অবতরণ করো? আল্লাহ তুমি কি আমার ডাক শুনতে পাচ্ছো? পৃথিবীতে কোন সন্তান যদি কোন অপরাধ করে মা বলে ডাকদিয়ে কান্না করে দেয়। তখন সে মা আর রাগ করে থাকতে পারে না। ছোট্ট সন্তানকে টান দিয়ে কুলে তুলে নেয়। হে আল্লাহ তুমি তো দুনিয়ার মায়ের চেয়ে তোমার বান্দাকে লক্ষ কোটিগুণ বেশি ভালবাসে। হে আল্লাহ তোমার গায়েবী মদদ দ্বারা আমার মেয়েকে সুস্থ করে দাও। তুমি তো জানো, আমার মেয়েটা কতটা অভাগী জন্মের পর মায়ের এক ফোটা দুধ ও পান করতে পারেনি। মায়ের স্নেহ ভালবাসা কি জিনিস বুঝেনি। নিজের মায়ের কাছে শুনতে হয় সে একটা নষ্টা মায়ের গর্ভে জন্ম নেয়েছি। হে আল্লাহ আমার মেয়েটাতো কোন অপরাধ করেনি। তবে কেন এতো শাস্তি দিচ্ছো। ও আমার মাবুদ আমার মেয়েটাকে তুমি সুস্থতা দান করো, নয়তো কোন পথ তৈরি করে দাও। আল্লাহ ফকির একদরজায় ভিক্ষা না পেলে অন্য দরজায় যায়। তুমি ছাড়া তো তোমার বান্দার কোন জায়গায় যাওয়ার জায়গা নেই। সুস্থ করে দাও না আমার কলিজার টুকরাকে।
.
মোনাজাতে শেষ করে কখন যে জায়নামাজেই ঘুমিয়ে গেছি খেয়াল নেই। সকালবেলা প্রভাতের সূর্যের আলো চোখে পড়তেই ঘুম ভেঙে যায়। সকাল সকাল ঘুম থেকে উঠে ফ্রেশ হয়ে বাসা থেকে বের হতেই, পিছন থেকে কে যেন হাতটা টেনে ধরল।
.
পিছনে তাকাতেই দেখি সাথি! এই তুমি যাওনি?
.
হুম যেতে চেয়েছিলাম, কিন্তু কোন এক অদৃশ্য মায়া যেতে দেয়নি। তুমি খেয়ে নাও।
.
না খেদে নেই। সাথিকে বাসায় রেখেই হসপিটালে চলে গেলাম।
.
বাবাই তুমি আসছো? বাবাই আমার না এখানে থাকতে একদম বিরক্তি লাগে। তুমি জানো না তুমি বুকে না নিলে তোমার মহারাণী ঘুমাতে পারে না। বাবাই আমাকে কবে নিয়ে যাবে? আমার না খুব কষ্ট হয় এখানে। বাবাই আবারো তুমি কাঁদছো? কেঁদো না বাবাই! তুমি কাঁদলে আমারো খুব কান্না পায়। আমি এখানেই থাকবো বাবাই তাও কেঁদো না তুমি।
.
রাইসার প্রতিটা কথা মর্মে আঘাত করছে। জানিনা কবে তুতা পাখির মতো কথা বলা পাখিটা হারিয়ে যাবে। তুতা পাখিটাকে বুকের সাথে জড়িয়ে নিয়ে বললাম’ মহারাণী এই দেখ তোর বাবাই তোকে বুকে নিয়েছে, এই বুক থেকে আর কোথাও তুকে যেতে দিবে না!
.
হঠাৎ এমন সময় নার্স এসে বলল’ স্যার আপনাকে তার রুমে যেতে বলছে ‘।
.
আপনি যান আমি আসছি। নার্স চলে গেলে আমি ডাক্তারের রুমে অনুমতি না নিয়েই প্রবেশ করে ফেলি। ডাক্তার এর সাথে একটা মেয়ে কথা বলছে ‘ স্যার যতটাকা লাগে, আমার স্বামীকে বাঁচান। আমি যে কোন মূল্যে আমার স্বামীকে সুস্থ করতে চায়।
.
মিস, জুথি আপনার স্বামীকে বাঁচাতে হলে A+ গ্রুপের কিডনী লাগবে। আমরা দেশের সকল হাসপাতালেই খুঁজ নিয়েছি, কোথাও পায়নি। জানেন মিস জুথি আমরা চাই প্রতিটা রোগিই সুস্থ হোক। কিন্তু এমন একসময় নিয়ে আসছেন আপনার স্বামীকে, যখন কোন হসপিটালেই কিডনী সংগ্রহ করা যায়নি। এ দিকে রোগীর অবস্থাও আশঙ্কাজনক। যে কোন মুহূর্তে একটা কিছু হয়ে যেতে পারে।
.
স্যার ভালবেসে বিয়ে করেছিলাম তিসানকে। ওকে ছাড়া আমি যে নিজেকে কল্পনা করতে পারি না। ওকে ছাড়া আমি কিভাবে বাঁচব? আপনার পায়ে পড়ি দরকার হলে আমার সমস্ত সম্পদের বিনিময়ে তিসানকে সুস্থ করেন।
.
মিস জুথি, তোমার মতো আমারো একটা মেয়ে আছে। তুমি আমার মেয়ের মতো। আল্লাহকে ডাকো তিনি যদি কিছু একটা করেন।
.
কিডনীটা যদি আমি দেয়? আমার কথা শুনে, ডাক্তার আর মেয়েটা কেমন করে যেন তাকালো।
.
আপনার রক্তের গ্রুপ কী A+?
হুম, স্যার ওই আপুর স্বামীকে আমি কিডনী দিতে চাই! তবে একটা শর্ত আছে।
.
কিসের শর্ত বলেন?
.
আমার দশ লাখটাকা লাগবে!
.
মাএ দশলাখ, আপনি চাইলে আমি কোটি টাকা দিতেও রাজি! আমি আপনাকে বিশলাখ দিবো।
.
না আপু আমার দশলাখ হলেই চলবে।
.
ভাইয়া একটা কথা বলবো? যদি ছোট বোন ভাবেন?
.
জ্বি বলেন।
.
আপনাকে বিশলাখ টাকা দিতে চাইলেও আপনি দশলাখ টাকায় কেনো নিলেন? টাকা গুলো দিয়ে কি করবেন। যদি বলতেন।
.
আপু আমার মেয়ের অপারেশন তিনদিন পর। অপারেসন করতে দশলাখটাকা লাগবে। অনেক চেষ্টা করেও টাকা জোগাড় করতে পারিনি। আল্লাহ আমার দিকে মুখ তুলে তাকিয়েছে। আমার মেয়ের চিকিৎসা করার একটা ব্যবস্থা করে দিয়েছে। আমার মেয়েটা ছাড়া যে আর এই ভূবনে কেউ নেই। আরেকটা কথা, যদি আমার টাকাটা না লাগত তাহলে আপনার স্বামীকে বিনি মূল্যেই কিডনী ডুনেট করতাম। আপনাদের ভালবাসাকে বাঁচাতে।
.
ডাক্তার কাঁধে হাত রেখে বলল’ ইউ আর গ্রেট রাজ “!
.
আমার কোন ভাই নেই আজ থেকে তুমি আমার ভাই! সত্যি আজ মানুষরুপী ফেরেশতা দেখলাম! কোন চিন্তা করবেন না, রাইসার অপারেসন ঠিক টাইমে হবে।
.
আলহামদুলিল্লাহ্!
.
ডাক্তারের রুম থেকে বের হয়ে, দু’ রাকাত নফল নামায পড়ে নিলাম। আল্লাহ তায়ালার রহমতে, রাইসার অপারেশনের সব ব্যবস্থা হয়েছে।
.
পরের দিন, রুপপুর পতিতালয়ের সামনে থেকে কিছু মেডিসিন নিয়ে ভেতরে ঢুকলাম।
.
এদিকে কথা অফিস থেকে ফেরার পথে আমাকে আবারো পতিতালয়ে ঢুকতে দেখে! মনে মনে স্থির করে নিলো, চরিএহীনটাকে উচিত সাক্ষী দিবো।
– কথা পতিতালয়ে ঢুকার সময় একটা মাঝবয়সী লোক মুচকি হেসে বলল ‘ আগে কখনো দেখেনিতো তোমায়?
– খদ্দের লাগবে? যদি খদ্দের ধরিয়ে দেয় আমাকে অর্ধেক দিতে হবে। নইলে যেতে দেওয়া হবে না। কথা তার পার্স থেকে ১ হাজার টাকার নোট বের করে লোকটার হাতে ধরিয়ে দিল! লোকটা হা করে দাঁড়িয়ে আছে।
– কথা পতিতালয়ের ভেতরে ঢুকতেই দেখে রাজ একটা রুমে যাচ্ছে। রুমে গিয়ে দরজাটা লাগিয়ে দিল!
কথা জানালা ফাঁক করে ভেতরে তাকিয়ে যা দেখলে তা দেখার মুটেই প্রস্তুত ছিল না।

চলবে ???

বিঃ দ্রঃ — ভুলক্রুটি হলে ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here