রক্তের বন্ধন
Part_31
– এ কথা বলে সাথি কথার দু’ পা ঝাপটে ধরে বলে ‘ আপু আমাকে মাফ করে দেন।  আপনাদের পবিএ ভালবাসা ভাঙার জন্য।  আমাকে রাজ ভাইয়া কিছু করেনি। আমি আপনাদের সাথে,  রাজ ভাইয়ার সাথে মিথ্যা ভালবাসার অভিনয় করেছি।  এ ছাড়া আমার কোন উপায় ছিল না।  আমার স্বামীকে বাচাঁনোর এই একটি মাএই পথ খুলা ছিল।  আমার স্বামী আইসিইউতে যখন ঠিকমতো চিকিৎসার অভাবে মৃত্যুর প্রহর গুনতেছিল। তখন আমার এ অভিনয় ছাড়া কোন উপায় ছিল না।
– কি বলছ এসব তাহলে রাজ আর তোমার যে পিক দেখলাম।
– আপু পিকগুলে সব ইডিট করা। রাজকে পানির সাথে ঘুমের ওষধ খাইয়ে অচেতন করে।  বাকিটা ইডিট করে করা হয়েছে।
– ছিঃ তুমি মেয়ে হয়ে কি করে পারলে আরেকটা মেয়ের ক্ষতি করতে? তুমি না আমায় বোন ডেকেছিলে!
– আপু কি করব। আমার  সবুজ কে যে আমার বাঁচাতেই হতো।  ওকে ছাড়া যে আমি নিজেকে কল্পনা করতে পারি না।  ও যে আমার স্পর্দন।
– কথা সাথিকে পা থেকে  তুলে বুকে টেনে নিল।
– আপু তোমাকে এতো কষ্ট দেওয়ার পরও তুমি বুকে টেনে নিলে?
– হুম তুমি যেদিন থেকে বোন ডেকেছ সেদিন থেকেই বোনের আসনটা তোমাকে দিয়েছি।
– আচ্ছা সাথি তোমাকে কে অভিনয় করতে বলেছে?
– আপু হয়ত বিশ্বাস করবেন না।  আমাকে এসব কিছু করিয়েছে আকাশ!
– what! আকাশ মানে?
– হ্যাঁ আপু আকাশই এসব কিছুই মূলে!
-তোমার স্বামী অসুস্থ, আকাশ সবকিছুর মূলে আমি কিছু বুঝতেছি না আমাকে বুঝিয়ে বলবে?
– শুনেন তাহলে আপু।  সবুজ আর আমি কাকাতো ভাইবোন।  ছোটবেলায় সবুজের মা মারা যায় প্রাইমারিতে উঠে চাচাও মারা যায়।  সবুজ   -মা মারা যায়  বাবা সবুজকে আমাদের বাসায় নিয়ে আসে। ছোটবেলা থেকেই সবুজ আর আমি একসাথে স্কুলে যেতাম। দু’জন যেখানে যেতাম একসাথেই যেতাম।  বলতে পারেন সেই শৈশব থেকেই দু’জন দু’জনকে ভালবাসতাম।  একসাথে নৌকা করে শাপলা ফুল তুলে নিয়ে আসা।  সবকিছু মিলিয়ে দিনগুলি খুব সুন্দর যাচ্ছিল।  ক্লাস টেনে,  উঠার পর হঠাৎ আমার বাবা পেরালাইস্ট হয়ে যায়।  সজিব তখন লেখা পড়া ছেড়ে কাজে লেগে যায়।  সজিবের টাকায় আমাদের সংসার চলত।  সজিবের অনেক বড় স্বপ্ন ছিল আমি লেখাপড়া করে অনেক বড় হব।  এই জন্য এইচএসসি পাস করার পর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে চান্স পায়।  সবুজ আমাকে তার মায়ের রাখা বালা বিক্রি করে দেয়। সবুজ যখন আমাকে ঢাকার গাড়িতে তুলে দিতে চায়।  বাসষ্টান্ডের সবার সামনে সবুজকে সেদিন জড়িয়ে ধরেছিলাম। এদিকে অনার্স সেকেন্ড ইয়ারে সবুজ না চাইতেই মায়ের জোড়াজুড়িতে সবুজ আমাকে বিয়ে করে।  সবুজ মাকে নিয়ে ঢাকায় এসে পড়ে। ওই সারাদিন গাড়ি চালাতো আর আমি মন দিয়ে পড়তাম।  আমাদের সংসারটা ছিল পরম সুখের।  কিন্তু এ সুখ বেশিদিন টিকল না।  সেদিনটার কথা আমার আজও মনে পড়ে,। দিনটি ছিল মঙ্গলবার আমাদের প্রথম বিবার্হবার্ষিকী।  তাই সবুজ বলেছে সকাল সকাল গাড়ি গ্যারেজে জমা দিয়ে চলে আসবে। কিন্তু  রাত যখন আট’টা তখনও সবুজ বাড়ি ফিরছিল না।  খুব চিন্তা হচ্ছিল। বার বার ফোন দিয়েও ফোনটা বন্ধ পাওয়া যাচ্ছিল। হঠাৎ হাতে থাকা ফোনটা তার চেনা সুরে বেজে উঠল।  ফোনের দিকে তাকিয়ে দেখি সবুজের ফোন। খপ করে ফোনটা ধরেই বললাম কই তুমি ঠিক আছো তো? কখন আসবে তুমি।  তুমি জানো না,  তোমার জন্য আমার কত টেনশন হয়। একদমে কথাগুলো বলে ফেললাম।
হঠাৎ ওপাশ থেকে অপরিচিত কন্ঠে কেউ বলে ওঠল’ আপু,  যার ফোন আজ বিকেলে সে একসিডেন্ট করেছে।  ঢাকা বঙ্গবন্ধু হাসপাতালে ২৮ নাম্বার কেবিনে রয়েছে।  আপনি আসুন। লোকটি ফোনটা রেখে দেওয়ার সাথে সাথেই আমার হাত থেকে ফোনটা পরে গেল।  আমার সবকিছু মূহূর্তে উলট -পালট হয়ে গেল!
-হসপিটালে গিয়ে দেখি সবুজের অবস্থা ভালো না।  ডাক্তার বলল’ সবুজকে আইসিএউতে রাখা লাগবে।  অনেক খরচ!  আমি কোন উপায় না পেয়ে,  ডাক্তারের পায়ে পড়ে যায়।
– কিন্তু সেদিন ডাক্তারের মন গলেনি। ডাক্তার চলে গেলে পিছন থেকে কারো হাতের স্পর্শ নিজের মাথায় অনুভব করি।
– পিছন ঘুরে তাকাতেই একটা লোক বলল’ আপনার স্বামীর সম্পূর্ণ চিকিৎসার ব্যয়ভার যদি আমি বহন করি? তবে আমার ছোট্ট একটা কাজ করে দিতে হবে!
– আপনি বলেন কি কাজ?  আমার স্বামীকে বাঁচাতে আমি সবরকম কাজ করতে রাজি।
– বেশি কিছু না একটা ছেলের সাথে মিথ্যা ভালবাসার অভিনয় করতে হবে।
– আচ্ছা ঠিক আছে আমার তো কোন ক্ষতি হবে না?
– আমি যতটুকু জানি সে ছেলে আপনাকে স্পর্শ পর্যন্ত করবে না।
– তার পর লোকটির পরিচয় জানতে পারলাম তিনি আকাশ চৌধুরি।
– আকাশ চৌধুরি আপনার অফিসে চাকরি নেওয়া থেকে শুরু করে!  রাজকে হসপিটালে খুনের চক্রান্ত পর্যন্ত সেই করে।
– সেদিন আমি ইচ্ছা করেই হসপিটাল থেকে বের হয়ে নার্সকে ফোন দিয়ে রুম থেক বের করে নিয়ে আসি। এ সুযোগে আকাশ সাহেব মুখোশ পড়ে রাজের অক্সিজেন মাক্স খুলে দেয়।  কিন্তু দুভাগ্যক্রমে আপনি রাজকে দেখতে যান।  জানেন সেদিন অনেক প্রার্থনা করেছিলাম যেন রাজের কিছু না হয়।  সত্যি রাজ ভাইয়া মহান একটা মানুষ।
-আমার স্বামীকে বাঁচানোর জন্য এ ছাড়া কোন উপায় ছিল না!  আমার মা এসবের সবই জানত।  প্রথমে মা না করলেও পরে সবুজকে বাঁচাতে আমার মা মরার আগে আমাকে আকাশের কথা মতো সবুজের হাতে তুলে দেয়।
– এ  ছাড়া আমি প্রতিদিন নামাযের মোনাজাতে আমার স্বামীকেই চাইতাম।  আল্লাহ যেন তাকে সুস্থ করে দেয়।
মাঝে মাঝে অভিনয় করে রাজকে শুনানোর জন্য মোনাজাতে রাজের কথা বলতাম যেন রাজ বুঝতে পারে তাকে অনেক ভালবাসি।
– কিন্তু আমার কথা বিশ্বাস কর আপু।  আমার প্রতিটা রক্ত কণিকায় সবুজের নাম লেখা।  সবুজের জন্য আমি কাজ কেন আমার নিজের জীবনও দিতে পারি।  আপু আমাকে ক্ষমা করে দাও।  আমি যা করেছি আমার স্বামীকে বাঁচানোর জন্য করেছি।  রাজকে আমি ভালবাসতাম বাহ্যিক ভাবে প্রেমিক হিসেবে হলেও মন থেকে নিজের বন্ধুর মতো মনে করতাম।  রাজ ভাইয়া শুধু তোমাকেই ভালবাসে।  তার মনে শুধু তুমিই আছো।  অন্য কেউ নেই।  তুমি সত্যিই অনেক ভাগ্যবতী।  যে তোমার ভালবাসার মানুষ তোমার স্বামী অন্য কারো প্রতি আকৃষ্ট নয়।  জানো আপু সবুজ এখন সম্পূর্ণ সুস্থ!  হসপিটাল থেকে রিলিজ দিয়েছে।  ওকে আমি সব বলেছি। সবুজ তোমাকে সব বলে দিতে বলেছে।  যদি আকাশ আমাদের মেরেও ফেলে তবুও চাই তুমি আর রাজ ভাইয়া সুখী হও!
– তোমাদের কিছুই হবে না।  তার আগে আকাশ নামক কালপিন্ডটাকে শায়েস্তা করতে হবে।
– কথা গাড়ি বের করে সরাসরি আকাশদের বাড়িতে চলে যায়।  ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখে সকাল ছয়টা! এখনো কেউ ঘুম থেকে উঠে নাই মনে হচ্ছে!
– কথা বাসায় ঢুকতেই আকাশের রুমে অট্রহাসির আওয়াজ শুনতে পেল।
– দেখছ বাবা আমি বলেছিলাম নাহ্!  রাজকন্যা  আর রাজত্ব দু’টাই আমার হবে।  ঠিক তেমনটিই হলো।  কথাকে বিয়ে করতে পারলেই হাজার কোটি টাকার মালিক।  কত দিনের প্ল্যান সাকসেস হতে যাচ্ছে।  কত কি সুন্দর একটা মাল।  মনে হচ্ছে বাগানে রাখা লাল গোলাপ।
– সবি ঠিক আছে, যদি ওই রাজ কোন ঝামেলা করে!
– রাজ ঝামেলা করবে তো কিভাবে করবে?
– রাজ তো হসপাটালে।  রাজের বাবাকে যেমন কথার বাবা তোমার বুদ্ধি মতো গাড়ি ধাক্কা দিয়ে মেরেছে তেমনি!  তোমার ছেলে এই আকাশও রাজকে পরপারে পাঠানোর ব্যবস্থা করেছে। রাজের ভাঙা ভালো মেয়ে নিয়ে এখনো,  কবরে যায়নি।  কাল সন্ধ্যায় রাইসাকে নিয়ে কথার বাড়ি যাওয়ার সময় গাড়িকে আমার ভাড়া  ট্রাক ধাক্কা দেয়।  এতে করে ড্রাইভার মারা গেলেই ঘটনাস্থলে রাজ আর ছোট বাচ্চাটা বেঁচে যায়।  তবে অবস্থা মরার মতোই।  আর না মরলে হসপিটালেই মরার ব্যবস্থা করব।
– কথা এসব শুনে আর ঠিক থাকতে পারছে না।  রাজের কিছু হয়ে গেলে সে কি করবে?চোখ দিয়ে অনবরত পানি বের হচ্ছে। মন চাচ্ছে ‘শয়তানটাকে নিজের হাতে খুন করি ‘।
– হঠাৎ,  সাথির ম্যাসেজ আপু রাজ ভাইয়া শেখ মুজিব হসপিটালে আছে ”’
চলবে”’
