রক্তের বন্ধন
Part_29
সাথি হঠাৎ অজ্ঞান হয়ে মাটিতে পড়ে গেল।
সাথিকে নিয়ে হসপিটালে গেলাম।
– কিছুক্ষণ পর ডাক্তার সাহেব এসে বলল ‘ আপনারা মিষ্টি খাওয়ান আপনাদের ঘরে মেহমান আসতেছে। কথাটা শুনে কথার দুনিয়াটা এলোমেলো হয়ে গেল।  তাহলে দাড়োয়ানের কথাই কি সত্যি যে সাথি আর রাজের মাঝে শারীরীক সম্পর্ক চলত।  নাহ্ আমার রাজ কখনো খারাপ কাজ করতে পারো না। কথা এসব ভাবতে ভাবতে  কেমন যেন জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে আমার দিকে তাকালো!
– আমি নিশ্চুপ হয়ে হসপিটালের বেঞ্চে বসে বসে ভাবছি,সাথিতো কোনদিন মা হবে না। তাহলে এসব কীভাবে হলো আমার মাথায় কিছু ঢুকছে না।
– এদিকে কথা আস্তে আস্তে সাথির কেবিনে গিয়ে বসল!
– সাথি এখনো ঘুমিয়ে আছে। সাথির মুখখানা আজ কথার কাছে কেমন যেন মায়াবি মায়াবি লাগছে।
– কথা নিজের অজান্তেই সাথির কপালে হাত রাখতেই সাথি ঘুম থেকে জেগে ওঠল!
-ম্যাডাম আপনি?
– হুম আমি?
– ম্যাডাম ডক্টর কি বলল? আমার বড় কোন অসুখ হয়েছে?
– কথা কোন কথা বলছে না।  একজন কুমারী মেয়েকে সে কিভাবে বলবে যে তুমি মা হদে যাচ্ছ।  কথা চুপ করে আছে!
– কি হলো ম্যাডামম আমার কি এমন অসুখ হয়েছে  যে আমাকে বলা যাবে না?  আমার কি ক্যান্সার বা অন্য কিছু হয়েছে। প্লিজ বলেন!
– এমন সময় নার্স এসে বলল’ কি অলক্ষণে কথা বলছেন আপনি মা হতে যাচ্ছেন।  কথাটা বলে নার্স চলে গেল।
– নার্সের মুখে কথাটা শুনে সাথির মাথায় আকাশ ভেঙে পড়ল।  সাথি দু’হাতে মুখ লুকিয়ে কাঁদতে লাগল।
– কথা কিছু বুঝতে পারছে না।  সাথিকে কি বলব সে।  এমন সময় সাথি কথার দু’পা ঝাপটে ধরে বলল’ আপু আমাকে বাঁচান।  আমি যদি আপনার ছোটবোন হতাম তাহলে আমাকে বাঁচাতেন না।  আমি তো জানতাম আমি কোনদিন মা হতে পারব না।  এটা রাজও জানত।  আর এ কথা ভেবেই রাজ প্রতিরাতে আমার সাথে!
-কথাটা বলেই সাথি কান্না করে দিল।
– প্লিজ সাথি চুপ কর। তোমার লজ্জা করে না। রাজের নামে মিথ্যা অপবাদ দিতে?  তোমার বিপদের দিনে যে মানুষটা আশ্রয় দিয়েছে তার সম্পর্কে এমন বলতে।
– আপু জানতাম তুমি বিশ্বাস করবে না।  আচ্ছা আমি একটা অবিবাহিত মেয়ে যদি কোন ছেলের সাথে থাকে,  আর মেয়েটা যদি ছেলেটাকে ভালবাসে তাহলে এমন কিছু ঘটবে না।
– আমি বিশ্বাস করি না।  আমার রাজ কখনো এমন করতে পারে না।
– হুম জানতাম তুমিও বিশ্বাস করবে না।  কিন্তু এটাই সত্যি।  আমার গর্ভের সন্তানের পিতা হচ্ছে তোমার স্বামী রাজ।  বিশ্বাস না হলে পরীক্ষা করে দেখতে পারো।
– কথা আমাকে কিছু না জানিয়ে সাথির গর্ভের সন্তানের পরীক্ষা করল।  ডাক্তার রিপোর্ট দেখে বলল ‘বাচ্চার ডিএন এ এর সাথে রাজের ডিএন এ ম্যাচ করছে।
– কথা আর কিছু ভাবতে পারছে না।  সবকিছু ভুলে যে রাজকে নিজের জীবন করে রেখেছিল আজ সে রাজই কি না।  ছিঃ আজ বাসায় দাঁড়োয়ানের কথাই সত্যি হলো।
কি হলো আপা আমি বলছিলাম না আমার গর্ভের সন্তান রাজের। আমার গর্ভের সন্তানের কসম রাজ ছাড়া আমাকে দ্বিতীয় কোন পুরুষ স্পর্শ করেনি।  এখন আমি তোমার ছোট বোন হয়ে বলছি আমার ছেলটার জন্ম পরিচয়টুকু তোমার কাছে চাই। একমাএ তুমিই পারো আপু।
তা না হলে আমার সুসাইড করা ছাড়া কোন উপায় নেই।
– কথা নিজেকে শক্ত করে বলল’ রাজ যেহেতু এমন কাজ করেছে।  সেই এর দায়ভায় নিবে। তুমি চিন্তা করো না।  চলো বাসায় চলো।  পরেরদিন সাথিকে নিয়ে কথা বাসায় এসেই ব্যাগ  গুছাতে শুরু করল।
– কি হলো কোথাও যাচ্ছ নাকি?
– কথা কোন কথা বলছে না ।
বলো না কোথায় যাচ্ছ।
– আমাদের বাসায় যেখানে গেলে এসব দেখতে হবে না ।
– মানে?
– কিসের মানে মানে করছ? কিছুই জানো না ।  নিরহ একটা মেয়ের এতোবড় ক্ষতি করলে তুমি! একটাবার ভেবেও দেখলে না আমার কথা? রাইসার কথা। কেমনে পারলে!
– কথা প্লিজ চুপ করো।  তুমিও আমায় ভুল বুঝতেছো।  তোমার গা ছুঁয়ে প্রমিজ করছি আমি এসব কিছু করিনি।
– খবরদার ওই পাপ হাতে আমার গা স্পর্শ করো না।  তুমি একটা বন্ড-প্রতারক।
– সাথি তুমি সত্যিটা বলে দাও!
– হ্যাঁ তুমি যা যা করছ সব বলে দিয়েছি আপুকে। তুমি তো বলছ মা হতে পারব না।  সো জন্মনিয়ন্ত্রণ  পিল নিতে হবে না।   কিন্তু আল্লাহ্ একি করল!
– ঠাস! তোর লজ্জা করে না।  কিভাবে মিথ্যা বলস। আবারো যখন সাথিকে চড় মারতে যাবো এমন সময় কথা হাতটা ধরে ফেলল!
– রাজ জানো কাউকে থাপ্পর দিয়ে, সত্যকে চাপাঁ রাখা যায় না।  সত্য প্রকাশ পাবেই।
– প্লিজ কথা স্টপ আর বলো না। পৃথিবীতে কেউ  আমাকে বিশ্বাস না করলেও আমি ভেবেছিলাম তুমি আমাকে বিশ্বাস করবে। কিন্তু তুমিও আজ অবিশ্বাস করছ।
– জানো রাজ তোমাকে বড্ড বেশি ভালবাসি তাই হয়ত আমার চোখ দু’টি অন্ধ ছিল। কিন্তু সাথির মেডিকেল রির্পোট এ স্পর্ষ্ট করে লেখা আছে সাথির গর্ভের সন্তানের বাবা তুমি।
-হঠাৎ কথা তার রুম থেকে কিছু ছবি এনে কথার হাতে দিল।  কথা কোন কথা না বলে ছবিগুলো আমার হাতে ধরিয়ে দিয়ে চলে যাচ্ছে।
ছবিগুলোতে আমি আর সাথি অন্তরঙ্গ  ভাবে আছি। ছবিগুলো দেখে আমার মাথা কেমন যেন ঘুরছে। চোখদুটি জলে ঝাপসা হয়ে আসছে। সাথি কেমন করে পারল এমন টা করতে।
– হঠাৎ রাইসা গিয়ে কথার সাড়ি টেনে ধরে বলল’ যেয়ো না বাবাইকে ছেড়ে।  বাবাই কাঁদবে।
– কথা হাটুগেড়ে বসে রাইসাকে কুলে নিয়ে বলল’ মামনি তোমার বাবাই পচা। তুমি আমার সাথে থাকবে আজ থেকে চলো।
– তুমি চুপ করবে। আমার বাবাই পচা না।  আমার বাবাই অনেক ভালো ।
– তোমার বাবাইকে বলো তোমার বাবাই কেমন!
– কথার মুখে এমন কথা শুনে চমকে উঠলাম।  এতটুকু একটা মেয়েকে কি বুঝাতে চাচ্ছে কথা।
এসব ভাবতে ভাবতেই রাইসা বলে উঠল ‘বাবাই মম বলল তুমি নাকি পচা! সত্যি বাবাই তুমি কি পচা?
– রাইসার মুখে এমন কথা শুনে হুহু করে কেঁদে দিলাম।
– বাবাই তুমি কাঁদছ কেন।  তুমি কেদোনা মম শুনে নাও আমার বাবা পৃথিবীর সবচেয়ে ভালো বাবা।  তুমি কাঁদবে না বাবাই।
– রাইসা মা আমার, আমার সাথে যাবে না?
– মম তুমি যেয়ো না।  তুমি চলে গেলে বাবাই রাতে কাঁদবে। তুমি যেয়ো না মম।  যেয়ো না। আর তুমি চলে গেলেও বাবাইকে রেখে আমি কোথাও যাবো না।
– কথার ভেতরটা পুড়ে যাচ্ছে। কিন্তু কিছু করার নেই বাস্তবতাকে যে মেনে নিতেই হবে।  পিছু ফিরে তাকালে চলবে না।  কথা চোখের পানি মুছে বাসায় এসে পড়ল।
– এদিকে সাথির দিকে তাকিয়ে দেখলাম সাথি করুণ দৃষ্টিতে আমার দিকে তাকিয়ে আছে।
– কি এমন করে তাকিয়ে আছেন কেন? আর কি চান আপনি?
– আপনাকে!
– ঠাস লজ্জা করে না ওই পাপ মুখে এমন কথা বলতে। আমি তোর মুখ দেখতে চাই না।  এই মূর্হুতে আমার বাসা থেকে চলে যাবি। যদি না যাস তাহলে আমার মরা মুখ দেখবি।
-চুপ! এমন কথা বলো না।    হুম তুমি যখন বলছ চলেই যাবো।  তবে যাওয়ার আগে তোমার পা টা একটু ছুঁয়ে যেতে চাই।  সাথি যখনি আমার  পা ছুঁয়ে সালাম করবে তখনি পা টা সরিয়ে নিলাম। স্পর্ষ্ট দেখতে পেলাম সাথির চোখে পানি।  কিন্তু আজ কালনাগিনীটার চোখে পানি দেখে কোন অনুশোচনা হচ্ছে না ।
সাথি চলে গেল।
রাইসাকে বুকে নিয়ে কাঁদছি।  আমার সবকিছু নতুন করে গড়ে ওঠার আগেই কালবৈশাখী ঝড়ে সব ভেঙে গেল!
– এদিকে কথার বাসায় আসার খবর শুনে আকাশ কথার কাছে দৌড়ে যায়।  আকাশ কথার বাসায় এসে দেখে কথা বেলকণিতে দাঁড়িয়ে কাঁদছে।
– আকাশ কথার কাছে সবটা শুনে বলল’ জানিস কথা হয়ত তোর কোথাও ভুল হচ্ছে!
-কথা হাতে থাকা ছবি আর রির্পোট আকাশকে দেখিয়ে কেদেঁ দিল।
– কথার সাথে সাথে আকাশ ও কাঁদছে। এই কথা প্লিজ কাঁদিস না।  আমি তোর চোখে জল দেখতে পারব না।
আমি যে তোকে ভালবাসি।  তোর মুখে হাসি ফুটানোর জন্য নিজের জীবনটাও দিয়ে দিতে পারি।  প্লিজ তুই কান্না করিস না।
আকাশ নিজের রুমালটা বের করে কথার চোখের জল মুছে দিল।
– কথা আজ তোকে একটা কথা বলি?
– হুম বল।
– জানিস তো, তোর বাবা আর আমার বাবা বন্ধু ছিলেন।  আমার বাবা মরে যাওয়ার আগেও বলেছিল তোকে বিয়ে করতে কিন্তু তুই তো রাজকে বিয়ে করে নিলি।
– আমি চাই তোকে বিয়ে করতে। প্রমিজ তোকে কখনো কষ্ট দিবো না। তোর ভালবাসতে হবে না।  আর তোর কষ্ট আমি দেখতে পারব না।  তোর কষ্ট দেখলে আমার খুব কষ্ট হয় খুব।
– ঠাস! করে কথা আকাশের গালে চড় বসিয়ে দেয়।  তোর কি মনে হয়,  তুই ভালোবাসলেই তোকে বিয়ে করতে হবে? আমার তো বিয়ে হয়ে গেছে।
– জানিনা তবে তোর কষ্ট আমি সহ্য করতে পারব না। তাই তোকে বিয়ে করে সুখে রাখতে চাই। তোকে ছাড়া আমি বাঁচব না।
– এমন সময়,  কথার বাসায় ড্রাইভার এসে বলল’ ম্যাডাম সামনে শুক্রবার রাজ ভাইয়ার বিয়ে আপনাকে যেতে বলেছে!
– কথাটা শুনে কথার বুকটা কেঁপে ওঠে!
– সামনে বসে থাকা আকাশকে বলে আমি তোমায় বিয়ে করব সামনে শুক্রবারেই।
চলবে””””

