রক্তের বন্ধন Part_26

0
622

রক্তের বন্ধন Part_26

আর তুমি চিন্তা করো না, রাজ ভাইয়ার পা ধরে ক্ষমা চেয়ে নিবো। কারণ আমি জানি তুমি রাজকে ছাড়া বাঁচবে না। তোমায় কথা দিচ্ছি নিজের জীবন দিয়ে হলেও তোমার আর রাজের মিলন করিয়ে দিবো। এ আমার ভালবাসার কসম।
– আকাশ গাড়ি নিয়ে বের হল। পিছন পিছন কথা।
– এদিকে আমি বাসায় এসে দেখি সাথি রাইসাকে নিয়ে শুয়ে আছে। সাথির কাপড়টা ঠিক জায়গায় নেই। একবার তাকিয়েও চোখটা সরিয়ে নিলাম। হঠাৎ করে কারেন্ট চলে যায়। ঘরে মোমবাতি ছিল গ্যাসলাইট খুঁজে যখনই মোমবাতি জ্বালাতে যাবো, তখনি কারেন্ট চলে আসি। এমন সময় রাইসা কি যেন মনে করে বাবাই বলে চিৎকার দিয়ে উঠে। আমি এক দৌড়ে রাইসার কাছে যায়। সাথীর বুকেই রাইসা। এদিকে সাথি মিটমিট করে হাসছে
। সাথির অসভ্যতামী দেখে খুব রাগ হয়। কষে সাথির গালে চড় বসিয়ে দেয়।
– এই তুমি মেয়ে না অন্য কিছু যে নিজের কাপড় ঠিক রাখতে পারে না। আরে স্বামী- স্ত্রী মতো একি রুমে ইচ্ছাকৃতভাবে নিজের পরণের কাপড় ঠিক না রাখা এটা কিরকমের কাজ। অন্যদিকে চেয়ে।
– সাথি কাপড়টা ঠিক করতে করতে বলল’ আমি আপনাকে স্বামী হিসেবেই মানি। আমি আপনার কষ্ট সহ্য করতে পারি না। আজ যখন আপনি রুমে আসেন তখনো আপনি চোখের পানি মুছতে মুছতে রুমে এসেছেন।
আমি আপনাকে আমার এ বুকে রাখতে চাই। কখনো কষ্ট দিবো না। আপনি যা দিবেন তাই খাবো। শুধু রাতে একটু বুকে নিয়ে ঘুমাবেন। আমি আর পারছি না। মা যেদিন মারা যাওয়ার আগে আপনার হাতে তুলে দিয়ে যায় সেদিন থেকেই আমার মন-প্রাণ দেহ সব কিছু আপনার তরে কুরবাণি দিয়েছি। আপনি একটিবারের মতো আমাকে আপন করে নেননি যা আমাকে আপনার প্রতি আরো বেশি পাগল করেছে। সত্যি বলতে আমি যা করি, আপনাকে স্বামী মনে করেই করি। আর রাইসা আমার মেয়ে, সারাজীবন রাজকন্যার মতো রাইসাকে বুকে আগলে রাখতে চাই। এই অনুরোধ টাই আপনার কাছে করি। এই কথা বলে সাথি আমাকে পিছন থেকে জড়িয়ে ধরে ‘ আমি সাথির দিকে তাকিয়ে দেখি, সাথি কেমন যেন কাঁপছে।
– জানি এখন কিছু ঘটতে যাচ্ছে। সাথি আমাকে আরো কাছে টেনে নিচ্ছে। আমি আর সহ্য করতে পারলাম না সাথিকে এক ধাক্কায় ফ্লরে ফেলে দিলাম। সাথি ছলছল চোখ জোড়া নিয়ে করুণ দৃষ্টিতে তাকালো আমার দিকে।
এদিকে রাইসা
, রাইসা বলে উঠল’ বাবাই মমকে নিয়ে আসনি বাবাই মম কোথায়। আমি মমকে দেখব। আমি কিছু বলতে পারছি না। দু’চোখ বেয়ে পানি পড়ছে। বাবাই তুমি কাঁদছ কেন? মম তোমায় নিশ্চয়ই বকা দিয়েছে তাই না? তুমি কেঁদো না, তুমি কাঁদলে যে আমার কষ্ট হয়। আমার মম লাগবে না। তুমিই আমার মম তুমিই আমার বাবাই। এদিকে আকাশ গর্জন করে বজ্য পড়ছে। সাথির দিকে তাকিয়ে দিকে তাকিয়ে দেখি সাথির কপাল ফেটে গেছে মেঝেতে পড়ে ।চোখ থেকে টপটপ করে জল গড়িয়ে পড়ছে। আমি জানি না সাথিকে কি বলে সান্ত্বনা দিব। আমি যে নিঃস্ব। এ হৃদয়ে কথা ছাড়া অন্য কাউকে কিভাবে ঠাঁয় দিব। শত কথা বললেও যে এখনো চোখ বন্ধ করলে আমার হৃদয়ের আয়নার কথার ছবিটাই ভেসে ওঠে। কিন্তু আজ কেন জানি সাথির প্রতিও বড্ড বেশি মায়া হচ্ছে। পকেট থেকে রুমালটা বের করে সাথির যে জায়গায় কপাল ফেটে গেছে ধরতেই, অসহায় ভাবে তাকিয়ে বলল’ আমায় তুমি দূরে সরিয়ে দিয়ো না। আমি কোথায় যাবো বলতো আমার যে কোথাও যাওয়ার জায়গা নাই। ছোটবেলায় বাবাকে হারিয়েছি। কিছুদিন হলো শেষ আশ্রয় মাকেও হারিয়ে ফেলছি। আমি এতটাই হতভাগী জীবনে কোনদিন মা পর্যন্ত হতে পারব না। সে জন্য রাইসাকে মেয়ের আদরে বড় করতে চেয়েছি সে সুযোগটাও তুমি কেড়ে নিচ্ছ। কেন আল্লাহ এমন করে। আমি ইয়াতিম বলে কি আল্লাহ আমায় কষ্ট দেয়। জানো রাইসাটা পর্যন্ত এখন আমায় মম ডাকে না। মম ডাকতে বললে বলে’ আমার মম আছে! রাজ বল আমি কিভাবে বাঁচব তোমাকে আর রাইসাকে ছাড়া। যদি বুকটা চিঁড়ে তোমাকে দেখাতে পারতাম। তাহলে বুঝতে কতটা ভালবাসি তোমায়। আমার হৃদয়ে তোমায় একটা ছবি আঁকা দেখতে পারতে। রাজ এই মাঝরাতে এই ইয়াতিম মেয়েটা তোমার পায়ের নিচে একটু জায়গা চাই দিবে? এই কথা বলে সাথি আমার তার বুকের সাথে চেঁপে ধরে।আমি বিস্মিত হয়ে যায়। সাথির হাতটা সরিয়ে নিতেই দরজায় কে যেন ঠক ঠক আওয়াজ করছে। মাঝরাতে আবার কে এলো এসব ভাবতে ভাবতে দরজা খুলেই দেখি, আকাশ সাহেব দাঁড়িয়ে আছে।
– স্যার আপনি, এতো রাতে গরীবের বাড়ি?
– ভাইয়া আমাকে স্যার ডেকো না। প্লিজ। মনে করো তোমার ছোট ভাই।
– কি বলছেন এসব স্যার?
– আমি যদি আপনার ছোট ভাই হতাম তাহলে কি আমাকে স্যার ডাকতেন? ভাইয়া আমি অনেক অপরাধী।
– কি বলছেন এসব আপনি? আপনি কেন অপরাধ করবেন। বাদ দেন ওসব গরীবের ঘরে আসেন।
– ভাইয়া আমি যে অপরাধী। আজ আপনাকে যে বলতেই হবে। কারণ অপরাধবোধটা জেগে ওঠেছে আজ। নিজেকে আর ক্ষমা করতে পারছি না। জানেন ভাইয়া আমি কথাকে সেই ছোটবেলা থেকেই ভালবাসি। ধরতে পারেন প্রাইমারি জীবন থেকেই। খুব করে চাইতাম কথা আমার হোক। কিন্তু ভাগ্যের কি নির্মম পরিহাস বাবা ‘ লেখাপড়ার জন্য বিদেশে পাঠিয়ে দেয়! বিদেশে ১২ বছর থেকে দেশে এসে দেখি কথার ডির্ভোস হয়েছে। সবকিছু জেনে মাথায় উপর দিয়ে যায় আমার। চোখের জল ধরে রাখতে পারিনি।
জানেন ভাইয়া কথাকে বড্ড বেশি ভালবাসতাম। আমি কখনোই চাইতাম না কথা অন্য কারো হোক। যখন জানতে পারলাম কথার বিয়ে হয়েছিল আপনার সাথে। আর আপনি কথারই অফিসে চাকরি করেন। তখন কথা আমাকে বলে, কি করলে আপনি কথাকে ভালবাসবেন। আমি সুযোগটা কাজে লাগিয়ে সেদিন অফিসের সবার সামনে আপনাকে অপমান করি লাথি মারি। ভাইয়া এখন দেখি কথা আমার কাছে নয় কথা আপনার কাছে সুখে থাকবে। কথার হৃদয়জুড়ে শুধু আপনার বিচরণ। ভাইয়া আমি আপনার পায়ে পড়ি। কথাকে আর কষ্ট দিয়েন না কথার কষ্ট যে আমি সহ্য করতে পারি না।
– কি হলো, আশ্চর্য তুমি পায়ে পড়ছ কেন।
– ভাইয়া যতক্ষণ না আপনি আমাকে ক্ষমা না করবেন ততক্ষণ পর্যন্ত আপনার পা ছাড়ব না।
– আরে উঠোতো যখনি ভাইয়া ডেকেছ তখনি তোমার ক্ষমা করে দিয়েছি!
– এদিকে কথা আকাশের পিছন পিছন এসেছে। কথা জানালা দিয়ে এসব দেখছে আর চোখের জল ফেলছে।
– আকাশ কি হলো বুকে আস। ভাইয়ের স্থান পায়ে নয় বুকে।
– হঠাৎ আকাশের ফোনটা ক্রিং ক্রিং করে বেজে উঠল!
– ফোন ধরে কি যেন বলে বলল’ ভাইয়া আমার বাসায় যেতে হবে আমি অন্যদিন আসব।
– আচ্ছা ঠিক আছে।
– আকাশ চলে গেলে ‘ সাথি আস্তে আস্তে আমার হাত দুটি ধরে বলল ‘ তুমি আমায় খুন করে ফেল! তবুও আমাকে ছেড়ে যেয়ো না তোমাকে ছাড়া আমি বাঁচবো না। তুমি আমার শিরায় -উপশিরায় মিশে গেছ। তুমি আমার হার্ট প্লিজ তুমি আমায় ছেড়ে যেয়ো না। রাজ আমায় একটু বুকে নিবে।
– কথা দরজার ওপাশ থেকে সাথির কথাগুলো শুনছে। মনে হচ্ছে কথার কলিজার উপর কেউ ছুরি চালিয়ে দিচ্ছে। এত কষ্ট হচ্ছে কেন।
– কি হলো রাজ নিবে না আমায় বুকে? আমি যে আর পারছি না। সাথি এ কথা বলে আমাকে যখনি বুকে জড়িয়ে নেওয়ার জন্য আসল ‘ ঠিক তখনি দরজার কে যেন নর্ক করল। দরজা খুলতেই চমকে গেলাম’ কারণ দরজা খুলার সাথে সাথেই কথা আমাকে জড়িয়ে ধরে। ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখি রাত দু’টা বাজে। কথার চোখের পানিতে আমার বুকটা ভেজে যাচ্ছে। আজ কেন জানি কথাকে সরিয়ে দিতে পারছি না। বুকের ভেতরটা অজানা কোন প্রশান্তিতে ভরে যাচ্ছে। হঠাৎ কথার ওসব কথা মনে পড়তেই ‘ কথাকে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দিলাম। কথা আমার বুক থেকে সরাসরি পায়ে পড়ে গিয়ে বলতে লাগল’ রাজ আমি তোমাকে ছাড়া বাঁচব না। রাজ তুমি আমাকে তাড়িয়ে দিয়ো না তোমার বুকটাই যে আমার শেষ ঠিকানা। জানো আমি চোখ বন্ধও করতে পারি না। তোমার বুকে অন্য কারো জায়গা হওয়ার আগেই যেন এই অভাগী কথার মৃত্যু হয়। কথা কাঁদতে কাঁদতে কথাগুলো বলল।
– এদিকে সাথির দিকে তাকিয়ে দেখি সাথি কাঁদছে। জানি না এখন আমি কি করবো?
– কেন আল্লাহ আমাকে এমন পরিস্থিতে ফেলল!
– বুকের কষ্টটা চাপা দিয়ে কথাকে বললাম” যে মোয়ের হাত অন্য পুরুষ ধরে তাকে আমি কেমনে গ্রহণ করব? যে মেয়ে তার স্বামীকে কুকুরের চেয়েও নির্দয় ভাবে আমাকে অপমান করে তাকে কিভাবে বুকে নিব? যে মেয়ের বাবার জন্য আমি পায়নি মায়ের আদর বাবার স্নেহ। তাকে কীভাবে ক্ষমা করব?
– আমি পারব না আমি তোমাকে নয়। সাথিকে ভালবাসি।
– রাজ প্লিজ আর বলো না আমি ধমঃবন্ধ হয়ে মারা যাবো। তোমার মুখে অন্য কারো নাম শুনতে পারি না। কেন বল এসব আমায়। একটাবার আমার চোখের দিকে তাকিয়ে বলোতো তুমি আমাকে নয় ওকে ভালবাসো?
– প্লিজ আমি এসব কিছু শুনতে চাই না। তুমি বের হয়ে যাও আমি তোমাকে দেখতে চাই না ।
কথা কাঁদছে মন চাচ্ছে কথার কান্না মাখা মুখটা বুকের সাথে জড়িয়ে নেয়।
– কথাকে রুম থেকে বের করে দিয়ে সাথি আমি তোমাকে ”’

চলবে????

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here