#রক্তের বন্ধন
Part_24
. ডাক্তার মন রাইসাকে জড়িয়ে ধরে বলল’ সত্যিই তোমার ফ্রিসটাই আমার ডাক্তারি জীবনটাকে সার্থক করল।আচ্ছা এখন যাও বাবাইকে ডাক দাও তোমার বাবাই তোমার কথা শুনবে তোমার সাথে কথা বলবে।
– রাইসার তার বাবার বুকে মাথা রেখে বাবাই বাবাই করে ডাকছে। এমন সময় রাজ বুঝল যে কেউ তাকে ডাকছে। মিটিমিটি করে চোখ খুলেই দেখে তার রাজকন্যা তার বুকে শুয়ে বাবাই বাবাই বলে ডাকছে।
– রাজ রাইসাকে বুকের সাথে জড়িয়ে নিয়ে বলল’ এই তো মা তোর বাবাই তোর ডাক শুনে আর ঘুমিয়ে থাকতে পারল না!
– না তোমার সাথে কথা বলব না।
– কেন মা! তুমি কথা না বললে কে কথা বলবে আমার সাথে?
– তুমি কেন আমায় কষ্টে দাও বাবাই। তুমি আমাকে ছুঁয়ে প্রমিজ কর। আমাকে আর কোনদিন কোথাও যাবে না। জানো আমার না খুব কষ্ট হয় বলে রাইসা শক্ত করে জড়িয়ে ধরল।
– আচ্ছা আমি প্রমিজ করছি আমি আর আমার মামনিকে রেখে কোথাও যাব না।
– এইতো আমার সুইট বাবাই।
-হুমম আমার কিউট রাজকন্যা।
-রাইসাকে যখন বুকের সাথে জড়িয়ে নিয়েছি। আমি আমার অপারেশনের সব কষ্ট ভুলে গিয়েছি। ডাক্তাররা অবাক হয়ে মা মেয়ের ভালবাসা দেখছে।
– হঠাৎ কথার দিকে চোখ পড়তেই অবাক হয়ে যায়। কথার দিকে তাকানো যাচ্ছে না। চোখের নিচে কালো দাগ পড়ে গেছে। শুকিয়ে একদম পাট খড়ি হয়ে গেছে।
– বুকের ভেতরটা কেমন যেন করছে। মন চাচ্ছে কথাকে বুকের সাথে জড়িয়ে নিতে। কিন্তু না সে অধিকার যে আমি অনেক আগেই হারিয়ে ফেলেছি। ডাক্তার নার্সকে কি যেন বলে চলে গেল!
– নার্স কথাকে রেখে রুমের বাহিরে গেল। আমি বুঝতে পারছি না, সবাই একে একে রুম থেকে কেন চলে যাচ্ছে!
– এমন সময় কথা, আমার কাছে এসে দাঁড়াল।
– আমার সামনে মাথা নিচু করে আছে। মনে হচ্ছে কিছু বলবে। আমি কথাকে জিজ্ঞেস করলাম ‘ কিছু বলবেন আপনি?’
– হ্যাঁ বলব!
– তাহলে বলেন।
– রাজ আমাকে ক্ষমা করা যায় না?
– ক্ষমা তো আপনাকে কবেই করে দিয়েছি!
– রাজ আমি তোমার পায়ের নিচে একটু আশ্রয় চাই। আমি রাইসার মা হয়েই থাকতে চাই। দিবে কি সে সুযোগ আমায়?
– এসব নতুন করে বলার কি আছে? আমি তো বলে দিয়েছি আপনাকে আমার পক্ষে মেনে নেওয়া সম্ভব নয়।
– কেন সম্ভব নয়?
– আমি কেমনে আমার বাবা-মায়ের খুনির মেয়েকে নিয়ে থাকব।
– রাজ আমার বাবার পাপের শাস্তি কি তুমি আমায় দিবে?
– না আমি তোমায় কোন শাস্তি দিচ্ছি না।
– তো কি করছ? আমি যে তোমায় ছাড়া বাঁচব না। জানো আমি এখন ঘুমাতে পারি না পারি না খেতে। সত্যি তোমাকে অনেক ভালবাসি। এ বুকটা যতি ছিড়ে দেখাতে পারতাম তাহলে হয়ত দেখতে পারত। আমার বুকটাতে শুধু তোমার নামই লেখা।
-প্লিজ এসব বলো না। তোমাকে মেনে নেওয়া কোন ভাবেই সম্ভব না। কারণ আমার এখনো সেদিন অফিসে আকাশ সাহেবের অপমানের কথা গুলো মনে পড়ে। আপনার সামনে আপনার স্বামীকে অন্য একটা ছেলে সকলের সামনে লাথি মেরে শরীরে চরিএহীনের তকমা লাগিয়ে বের করে দেয়। আর আপনি তাকিয়ে হাসেন? জানেন সেদিন আমার হৃদয়টা কাঁচের টুকরোর মতো টুকরো টুকরে হয়ে গিয়েছিল। আপনি ছিলেন আমার কলিজার টুকরা। আর সেদিন আপনি ঠিক কলিজাতেই আঘাত করেছিলেন। সেদিন আপনার হাত ধরায় গালে যে থাপ্পর দিয়েছিলেন সেটা যদি দেখাতে পারতাম তাহলে দেখতেন। থাপ্পরটা ঠিক কলিজায় লেগেছে। আপনার প্রতি যে ভালবাসা ছিল তা ঘৃনায় পর্যবর্সিত হয়েছে। ভালবাসার বিনিময়ে পেয়েছি আমি অপমান-লাঞ্ছনা।
সত্যি কি আপনি আমায় ভালবাসেন না আপনাে বাবার মতোই আমাকে মারার কোন প্ল্যান করছেন?
– কথা কি বলবে বুঝতে পারছে না! রাজকে পাওয়ার জন্য এতোকিছু করল। আজ রাজই সব ভুল বুঝছে। সেদিন অফিসে রাজের সাথে, ভুল বশত যা করছে তা করলে কেউ ক্ষমা করত না। কথার চোখ দিয়ে অনবরত পানি পড়তে লাগল।
– বাবাই দেখ মম কাঁদছে। তুমি মমকে বকা দাও কেন?
– নারে মা আমায় তোমার বাবাই বকা দেয় না।
– তুমি চুপ কর তো মম। রাইসা আমার কুল থেকে নেমে কথার চোখের জল মুছে দিচ্ছে।
– নিজের অজান্তেই বুকটা কেমন করে ওঠল। রক্তের একটা বন্ধন আছে রাইসার ব্যবহারে বুঝা যাচ্ছে। রাইসার কপালে চুমু দিয়ে বুকের সাথে জড়িয়ে নিয়ে ফুপিয়ে কান্না করে দিল।
– মম তুমি কাঁদো কেন?
– বাবাই দেখ না মম কাদছে!
– জানি না আমি কি বলব বা এমন সময় কি করব।
– এমন সময় কথা দু’টো পা ঝাঁপটে ধরল! একি কি করছেন এসব?
– রাজ যতক্ষণ পর্যন্ত আমায় ক্ষমা না করবে। যতক্ষণ না তোমার বুকে আমাকে জড়িয়ে ধরে না নিবে। যতক্ষণ না তোমার পায়ের নিচে আমাকে ঠায় দিবে? তার আগে আমি তোমার পা ছাঁড়ব না।
– কথা কি করছ? রাইসা দেখছে।
– তো কি হয়েছে! আমি আমার স্বামীর পা ধরেছি ।
-কথার মুখে স্বামী ডাকটা মর্মে আঘাত করল। মনের মাঝে এক অজানা ঝড় বইয়ে দিল!
কথাকে পা থেকে তুলে ঠাস করে গালে চড় বসিয়ে দিলাম!
– বাবাই তুমি মমকে মারলে? তুমি না আমার বাবাই। তুমি না ভালো!
– রাইসার কথা শুনে চোখে পানি এসে গেল।
– কথা আমার হাতটা তার গালের সাথে চেঁপে ধরে বলল’ ধাও আরো থাপ্পর দাও তবু আমাকে ছেড়ে যেয়ো না। আমি যে তোমায় ছাড়া বাঁচব নি।
– প্লিজ আপনার জন্য আকাশ রয়েছে। আর আপনিইবলছেন আকাশ আপনার স্বামী!
– রাজ তোমার দু’টি পায়ে পড়ি আর বল না। তোমাকে কিভাবে বুঝাবো তোমাকে পাওয়ার জন্যই এসব পাগলামি করেছি। সত্যি করে বলবে তো এখনো আমাকে ভালবাসো?
– না ভালবাসি না।
– সত্যি তো?
– হ্যাঁ সত্যি।
– রাইসার কসম দিয়ে বলতো আমায় ভালবাসো না?
– রাইসার কসম কেন দিচ্ছো?
– সত্যিটা জানার জন্য।
– আমি কি বলব এখন। এখনো যে আমার মন -প্রাণ জুড়ে কথার বিচরণ। কথা যে আমার প্রতিটা নিঃশ্বাসে। কথার ছবিটা যে এখনো প্রতিরাতে বুকে নিয়ে ঘুমায়। কিভাবে ভুলব কথাকে। কথা যে আমার প্রথম ও শেষ ভালবাসা।
– কি হলো চুপ করে আছো কেন?
– আমি জানি তুমি আমায় ভালবাসো। কেন শুধু শুধু নিজেকে কষ্ট দিচ্ছো? প্লিজ একবার শুধু একবার বুকে টেনে নাও।দেখবে সব কিছু আগের মতো হয়ে যাবে। ওই রাজ আমাকে একটু বুকে নাও না। আমার না খুব কষ্ট হচ্ছে।
কথা যখন আমাকে জড়িয়ে ধরতে আসল তখনই কথার গালে ঠাস করে চড় বসিয়ে দিলাম।
– চড়টা খুব জুরে লেগেছে! ঠোঁট কেটে রক্ত পড়ছে। থাপ্পর খেয়ে মুচকি হেসে বলল’ জীবন তুমি হাতে ব্যথা পেয়েছ?
– আমি আর সহ্য করতে পারছি না। কথাকে টান দিয়ে বুকের সাথে জড়িয়ে নিলাম।
– কিছুক্ষণ বুকের সাথে জড়িয়ে রেখে,ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দিলাম। মনে মনে স্থির করলাম কথাকে সারপ্রাইজ দিব। তাই ধাক্কা দিয়ে বুক থেকে সরিয়ে দিয়ে বললাম। প্লিজ আপনি চলে যান।
– কথা মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে আছে।
– আমার মন চাচ্ছে কথাকে আবারো বুকের সাথে জড়িয়ে নিতে।
-হঠাৎ একটা নার্স এসে বলল’ আপনার স্ত্রী আপনার জ্ঞান না ফিরাতে কাল সারা রাত কাঁদছে। শুধু মোনাজাতে বলছে আল্লাহ যেন রাজকে সুস্থ করে দেয়। আজ যখন আপনার জ্ঞান ফিরেছে সে কথা বলতে গিয়ে দেখি তিনি সেন্সলেন্স হয়ে গেছে। জানেন আপনি অনেক ভাগ্যবতী। এমন একটা স্ত্রী পেয়েছেন। যে আপনাকে নিজের থেকেই বেশি ভালবাসে। নার্সকে বলতে চেয়েও কেন যেন বলতে পারলাম না সাথি আমার স্ত্রী নয়। নার্সের কথাগুলো শুনে বাকরুদ্ধ হয়ে গেলাম। বুঝতে আর বাকি রইল না সেটা সাথি।
– নার্সকে সাথিকে কাছে নিয়ে যেতে বললে ‘ নার্স আমাকে হুইল চেয়ারে করে সাথির বেডে নিয়ে যায়। সাথিকে বিছানায় শুইয়ে রেখেছে। শরীরে স্যালাইন যাচ্ছে। আমি সাথির মাথার কাছে গিয়ে ‘ কপালে হাত রাখলাম। কতক্ষণ সাথির মাথায় হাত বুলিয়ে দিতেই সাথি মিটিমিটি করে চোখ খুলল!
সাথি চোখ খুলেই আমার হাতটা তার গালের সাথে চেপে ধরে বলল’ আমায় ছেড়ে যাবে নাতো কখনো? জানো আমি তোমায় ছাড়া বাঁচব না রাজ। আমি তোমায় ভালবেসে ফেলছি।
– এদিকে কথার দিকে তাকিয়ে দেখি কথা আমার দিকে ফ্যাল-ফ্যাল করে তাকিয়ে আছে। চোখ দুটি জলে টই-টুম্বুর মেঘলা আকাশের মতো।
-জানি না সাথিকে কি বলব। কিছু বলার ভাষা নেই। শুধু বললাম সারাজীবন বন্ধু হয়ে পাশে থাকব। এর বেশি কিছু না। এমন সময় দেখি কথা স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলছে।
– কয়েকদিন পর মোটামুটি সুস্থ অনুভব করলাম।
– হসপিটাল থেকে ছুটি নিয়ে বাসায় গিয়ে দেখি, কথা বাসার সামনে ব্যাগ নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। আমি সাথিকে বাসার চাবি দিয়ে বললাম। যাও দরজা খোল! সাথি দরজাখুলে কথাকে বলল ‘ আপু ভেতরে আসেন।
– কথা ঠাস করে সাথির গালে চড় বসিয়ে দেয়। সাথি ফ্লরে পড়ে যায়।
– আপনি কি চান? আমার স্বামীকে কেড়ে নিতে? আপনি জানেন না রাজ আমার স্বামী। আমাদের একটা মেয়েও আছে। লজ্জা করে না অন্য একটা পুরুষের সাথে রাএিযাপন করতে। শারীরীক চাহিদা কি খুব বেশি? অনেক সহ্য করছি আর না। আমি আর রাজকে ছেড়ে কোথাও যাচ্ছি না। যদি যায় তাহলে আমার লাশ যাবে।
– সাথিকে ফ্লরে থেকে তুলে, চোখের পানি মুছে দিয়ে ঠাস করে কথার গালে চড় বসিয়ে দিলাম। ছিঃ আপনার লজ্জা করা উচিত আমাকে স্বামী বলে দাবি করার আগে। আর আমি এ সপ্তাহে সাথিকে বিয়ে করব। আপনি কেন তার গায়ে হাত তুললেন?
– সাথি দাঁড়িয়ে কাঁদছে।
– কেন মারলাস জানো? যদি জানতে চাও তাহলে আমার জায়গায় দাড়াও। তুমি কি জানো মেয়েরা সব দিতে পারলেও স্বামীর ভাগ দিতে পারে না। প্রয়োজন হলে জীবন দিয়ে দিতে পারে। কথা ফলকাটা ছুরি এনে আমার হাতে দিয়ে বলল’ আজ আমাকে মেনে নিবে তা না হলে এ ছুরি দিয়ে আমাকে হত্যা করবে। এভাবে কষ্ট পাওয়ার চেয়ে একবারে শেষ করে দাও। তোমার পা দু’টি ধরে বলি, আমাকে হয় তোমার পায়ের নিচেই স্থান দাও নয়ত, মেরে ফেল। তোমার পাশে কাউকে দেখলে আমার কলিজাটা ফেটে যায়। কথা পা দু’টি ঝাপটে ধরে কাঁদছে!
– কথাকে পায়ের নিচ থেকে তুলে বললাম’ আপনাকে মেনে নেওয়া সম্ভব না। আপনি যদি এখন থেকে চলে না যান তাহলে আমার মরা মুখ দেখবেন। কথা আমার কথাটা শুনে বলল’ তোমার মরা মমুখ দেখার আগে আমার যেন মরণ হয়। কথা আর এক মুহূর্ত দাড়াঁয়নি কাঁদতে কাঁদতে বাসা থেকে বের হয়ে যায়।
– বাবাই তুমি আর মমকে কষ্ট দিয়ো না। মমকে কেন মারলে। ক্ষমা করে তাও না। আমি না তোমার মা তুমি বলছ। মায়ের কথা রাখতে হয়।
– মনে মনে ভাবলাম অনেক হয়েছে। কথাকে ছাড়া যে আমিও বাঁচব না। সাথিকে সবকিছু বলার পর চোখের পানি ছেড়ে দিয়ে হ্যাঁ সূচক জবাব দিল।
– আমি রাতেই কথাকে নিয়ে আসতে তাদের বাড়িতে যাই। বাসায় ঢুকতেই, আমি দেখি আকাশ কথার বাসায় যাচ্ছে। আকাশকে কথার বাসায় ঢুকতে দেখে বুকের ভিতরটা কেমন করে ওঠলো। কথার বাসার দিকে যতই যাচ্ছি ততই বুকের ভেতর অজানা কষ্ট এসে বাসা বাঁধছে। এদিকে কথার বাসায় ঢুকে যা দেখলাম তা আর সহ্য করতে পারলাম না। আকাশ কথার ””
চলবে??