রক্তের বন্ধন
Part_23
 চোখের পানি ছেড়ে দিয়ে বলল’ আপু আমার স্বামী ভাগ্যবান না।  সে সব,সময় কষ্টই পেয়েছে। সেই মায়ের কুল থেকে।  বরং আমিই ভাগ্যবান ওর মত কাউকে পেয়েছি।  আর রাজকে শুধু আমি ভালোই বাসিনা রাজ আমার জীবন-মরণ।
– রাজের জ্ঞান না ফিরা দেখে কথা ডাক্তারের রুমে গিয়ে বলল ‘ আপু আমার স্বামী কেমন আছে?
– মিস কথা রিলেক্স! স্যালাইন দেওয়া হয়েছে। আর যদি ২৪ ঘন্টার মাঝে রাজের জ্ঞান না ফিরে তাহলে আর হয়ত কোনদিন জ্ঞান ফিরবে না।
– কথা ভাবতে পারছে না রাজ তাকে ছেড়ে চলে গেলে সে কি নিয়ে বাঁচবে।
– এমন সময় নার্স দৌড়ে  বলল ‘ ম্যাডাম বিশেষ অভজারভেশনে রাখা ‘ মিঃ রাজ এর অক্সিজেন নেওয়া অফ হয়ে গিয়েছে।
-কী! বলছেন এসব।  ডাক্তার মন দৌড়ে রাজের বেডে গিয়ে দেখি। অক্সিজেন নেওয়া অফ হয়ে গেছে!
– কী বলছ এসব? এমনটা হওয়ার কথা না। ডাক্তার মন দৌড়ে রাজের বেডে গিয়ে দেখে। অক্সিজেন নেওয়া সত্যিই অফ হয়ে গেছে। তাড়াতাড়ি মাক্স খুলে বুকে পান্স করে কয়েকবার।  তারপর আবার অক্সিজেন মাক্স লাগিয়ে দিল!  এখন অনেকটা স্বাভাবিক ভাবে অক্সিজেন নিচ্ছে।
ডাক্তার মন নার্সকে সব বুঝিয়ে দিয়ে রুম থেকে বের হয়ে আসল।
– ম্যাডাম রাজের অবস্থা কেমন?( কথা)
– ডাক্তার মন কোন কথা না বলে,  কথাকে ইশারা করে  মনের কেবিনে আসতে বলল!
– ডাক্তার মনের পিছনে পিছনে কথা তার রুমে  প্রবেশ করল।
– ডাক্তার মন, তার এসি রুমে বসেও ঘামছে। সে জানে না কিভাবে বলবে কথাকে, কথাগুলো।
– কথা মনের সামনে বসে আছে।  মুখে দুশ্চিন্তার ছাপ!
– ম্যাডাম কি হয়েছে রাজের।  কি হলো আপনি কিছু বলছেন না কেন?
– আপনাকে কি ভাবে যে বলি।  আচ্ছা মিসেস কথা,  জীবন -মৃত্যুর মালিককে?
– আল্লাহ।
– হুমম! মানুষ আল্লাহর দেওয়া বিধানকে খন্ডন করতে পারে না।  জন্ম নিলে মৃত্যুর স্বাদ ভোগ করতেই হবে।  তবে কারোটা অকালে যা আমাদের পুড়ায়।  যাই হোক রাজের অবস্থা বেশি ভালো না। যে কোন সময় কোন কিছু ঘটে যেতে পারে।    তাই বলছি কান্না-কাটি না করে,  আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করেন।  তিনি চাইলে সবি সম্ভব। আর আমাদের সাধ্যমতে চেষ্টা করছি।  এখনো রাজের জ্ঞান ফিরছে না।
– ধন্যবাদ ম্যাডাম।আমি এখন আসি।
– ডাক্তারের রুম থেকে বের হয়ে দেখি,  রাজের কেবিনের সামনে সাথি দাড়িয়ে আছে।  সাথে রাইসা।
– আমাকে দেখেই রাইসা দৌড়ে এসে বলল ‘ মম দেখো কেউ আমার বাবাইকে দেখতে যেতে দিচ্ছে না।  বল না মম,  আমি বাবার এর কাছে যাবো।  পচা নার্সকে বল না, আমারর বাবাই এর কাছে যেতে দিতে।
– আমি রাইসাকে বুকে নিয়ে, বললাম মারে কাঁদিস না তোর বাবাই এর কাছে আমি নিয়ে যাবো।
– সত্যি আমার মম অনেক ভালো।
– রাইসাকে সাথির কাছে রেখে,  বাসায় চলে আসলাম।
– বাসায় এসে নামাযে দাঁড়িয়ে গেলাম।  নামায শেষ করে,  কুরআন তেলাওয়াত করে কতক্ষণ বুকের সাথে জড়িয়ে রাখলাম।
– এদিকে তাকিয়ে দেখি প্রায় সন্ধ্যা লেগে গেছে।  এমন সময় মসজিদের মাইকে  বলা হল কে যেন মারা গেছে!
– খবরটা শুনে বুকের ভেতরটা কেঁপে ওঠল।  জানি না রাজের অবস্থা কেমন।
– আল্লাহ ছাড়া রাজকে আর কেউ বাঁচাতে পারবে না।
-তাই কুরআন টা সাইডে রেখে,  মোনাজাত ধরে বললাম’ হে আল্লাহ্,  তোমার অধম বান্দী তোমার দরবারে দুটি হাত তুলে ধরেছি।  জানি না কিভাবে ডাকলে তুমি সাড়া দিবে,  সে নাম আমাে জানা নেই।  আমি জানি তুমি’ রহমানির রাহিম। তুমি দয়ার সাগর।  ও আমার আল্লাহ্ ফকিরের ভেসে তোমার দরবারে দু’খানা হাত তুলে ধরেছি।  আল্লাহ আমার স্বামী অসুস্থ।  মৃত্যু পথযাএী।  ও আমার আল্লাহ তুমি আমার স্বামীকে সুস্থতা দান কর। তুমি তো জানো কতটা ভালবাসি তাকে।  আমার শেষ নিঃশ্বাস যেন তার বুকে ত্যাগ করতে পারি।  তুমি আমার স্বামীকে ভালো করে দাও।  হে আল্লাহ তুমি আমার চোখের পানি দেখ না? তুমি না বলেছ বান্দার চোখের পানি তার নাকের ডগার কাছে আসার আগেই তুমি তোমার বান্দার দোয়া কবুল করে নাও।  তুমি কি আমার দোয়া কবুল করবে না?  তুমি কবুল না করলে কার কাছে ফরিয়াদ জানাবো গো আল্লাহ্!  ও আমার আল্লাহ আমার জীবনের বিনিময়ে হলেও,  আমার স্বামীকে সুস্থতা দান কর। আমি যে তাকে ছাড়া কিছু ভাবতে পারি না।  জীবনের মায়ের আদর পায়নি।  বাবাটাও টাকার পিছনে ছুটেছে।  এখন যদি আমার স্বামীটাকেও কেড়ে নাও আমি কি নিয়ে বাঁচব।  তার চেয়ে তুমি আমাকে নিয়ে নাও গো আল্লাহ্ তবুও আমার স্বামীকে সুস্থ করে দাও।  আমার মেয়েটার মুখের দিকে তাকিয়ে হলেও আমার স্বামীকে শেফা দান কর।
– মোনাজাত শেষ করে,  আবার হসপিটালে চলে গেলাম।
– রাইসা ডাক্তার মনের কুলে বসে আছে।  এইটা ওইটা প্রশ্ন করছে।  ডাক্তার মন,  লাগাতার ছোট্ট মেয়েটার প্রশ্নের উওর দিয়ে যাচ্ছে।
হঠাৎ রাইসা বলে ওঠল, ডাক্তার আন্টি আমার বাবাই মরে গেলে,  আমিও যেন মরে যায় এমন কোন ওষুধ আছে তোমার কাছে? জানো আমি না আমার বাবাইকে ছাড়া বাঁচতে পারব না।
– ডাক্তার মন রাইসার মুখে এমন কথা শুনে চমকে গেল।  মামনি এমন কথা বলে না আল্লাহ পাপ দিবে!
– ডাক্তার মন রাইসার মুখে এমন কথা শুনে চমকে গেল।  মামনি এমন কথা বলে না আল্লাহ পাপ দিবে!
– কেন পাপ দিবে?  আল্লাহ জানে না আমি বাবাইকে ছাড়া বাঁচবো না।
– রাইসার প্রতিটা কথা হৃদয়ে রক্তক্ষরনের ধারা বইয়ে দিচ্ছে।
– ডাক্তার মন চোখের পানি আকটাতে পারছে না।  বাবার প্রতি মেয়ের ভালবাসা দেখে।  চোখের পানি মুছে বলল’ মামনি তোমার বাবার কিছুই হবে না।
– সত্যি তো?
– হ্যাঁ সত্যি।
– ডাক্তার আন্টি আপনাকে একটা কথা বলব রাখবেন?
– হ্যাঁ বলো কি বলবে!
– বল রাখবে কিনা?
– বললাম তো রাখব।  তুমি বল।
– তাহলে প্রমিজ কর।
– আচ্ছা প্রমিজ।
– ডাক্তার আন্টি,  তোমার ওই নার্স  কি যেন নাম?  ওহ্ ‘আফরোজা ‘ আমার বাবাইকে দেখতে যেতে দেয় না।  আমি মমকে নিয়ে বাবাইকে দেখতে যাবো।  আমার বাবাইয়ের কাছে যেতে দিবে?
– ডাক্তার মন কিছু ক্ষণ ভেবে বলল ‘ আচ্ছা তবে বাবাই এর কাছে কাঁদতে পারবে না।
– আচ্ছা।
– এদিকে রাইসা আমাকে দেখে,  বলে ওঠল মম তুমি কোথায় গিয়েছিলে? জানো মম আমার না খুব কষ্ট হয় বাবাইকে ছাড়া তোমাকে ছাড়া।  সাথি মম আমাকে রেখে কোথায় যেন গিয়েছে। চল মম আমরা বাবাই এর কাছে যাব।
.
রাইসাকে কুলে নিয়ে রাজের বেডে গেলাম। রাইসা আমার কুল থেকে নেমে রাজের কাছে চলে গেল।
– আমি রাজের মায়াবী মুখটার দিকে তাকিয়ে আছি।  নিরবে অশ্রু ফেলছি।  রাইসা তার বাবার কাছে গিয়ে, আস্তে আস্তে বাবাই বলে ডাক দিচ্ছে ‘বাবাই ও বাবাই তুমি আর কত ঘুমাবে।  তুমি আমাকে বুকে নিয়ে ঘুমাও।  ও বাবাই দেখ না তোমার রাজকন্যা কাঁদছে।  তোমার রাজকন্যাকে বুকে নিবে না।  তোমার রাজকন্যার সাথে কি তুমি আড়ি দিয়েছ।  জান বাবাই মম তোমার জন্য কাঁদে মম বলছে আর তোমাকে বকবে না।
– বাবাই চোখ খুল বাবাই কথা বল।  বাবাই তুমি কথা না বললে আমিও চিরদিনের জন্য কথা বলা বন্ধ করে দিব। মম দেখ তো বাবাই কথা বলছে না।  বল না মম বাবাইকে কথা বলতে।
– আমি জানি না কি বলব রাইসাকে।  আমার নিঃশ্বাস বন্ধ হয়ে  আসছে।  চোখ দুটি ঝাপসা হয়ে গেছে।
রাইসাকে বললাম মামনি কান্না করে না মা আমার।  আল্লাহকে বল তিনি তোমার বাবাইকে কথা বলতে বললেই তোমার বাবা কথা বলবে।
– সত্যি তো?
– হুমম মামনি সত্যি!
– মম আল্লাহ কোথায় থাকে?
– আল্লাহ আরশে থাকে, ।  আবার সব জায়গায় থাকে!
– আরশ কোথায়?
– এইযে যে আকাশটা দেখ না?  এর সাত আসমান এর উপরে আরশে আজিম।  আল্লাহ সেখানে থাকেন।
– ওহ্ আমি ডাকলে আল্লাহ্ শুনবে তো?
– হুম মামনি শুনবে।
– মম আমি যে ছোট আমার কথা শুনবে আল্লাহ্!
– হুম শুনবে।
– আচ্ছা আমি তাহলে আল্লাহকে বলি আমার বাবাইকে যেন ভালো করে দেয়।  রাইসা উপরের দিকে তাকিয়ে বলতেছে,  হে আল্লাহ তুমি আমাকে দেখতে পারছ?. জানো আল্লাহ তোমার কাছে একটা প্রার্থনা করব।  তুমি রাখবে তো? নাকি ছোট বলে আমার কথা শুনবে না।  তুমি জানো আল্লাহ আমি না আমার বাবাইকে অনেক ভালবাসি।  জানো বাবাই আমার সাথে কথা বলছে না।  আমার না খুব কষ্ট হয় বাবাইকে বল না বাবাই আমার সাথে যেন কথা বলে। ও আল্লাহ দেখ না আমি কাঁদছি।  তুমি বল না বাবাইকে আমার চোখের পানি মুছে দিতে।
– মম আল্লাহকে ও আল্লাহ তুমি বল না বাবাইকে কথা বলতে।  রাইসা তার বাবার মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছে।  আর বলছে বাবাই একটু কথা বল।
– রাইসাকে তার বাবার কাছ থেকে সরানোর ক্ষমতা আমার নেই।
– হঠাৎ রাজের হাতটা নড়ে ওঠল! নার্স দৌড়ে ডাক্তার মনের কাছে গিয়ে বলল ‘ রাজের জ্ঞান ফিরেছে!
– ডাক্তার মন নার্সের কথা শুনে রুমে এসে দেখল সত্যিই রাজের জ্ঞান ফিরেছে।
– ডাক্তার আমার বাবা ভালো হবে তো?
– রাইসার কথা শুনে মন কিছুটা হাসল কিছু বলল না।
– কি হলো, আন্টি আমার বাবাই আমার সাথে কথা বলবে তো। বাবাইকে বল আমি আর বায়না ধরব না। আমি আর আইসক্রিম খেতে চাইব না।  আমার বাবাই কতদিন থেকে কথা বলে না।  বাবাইকে বল আমার না খুব কষ্ট হয়।
– হুমম তোমার বাবাইকে সব বলব তার আগে আমার ফ্রি দিতে হবে যে!
– তো-তোমার আবার কিসের ফ্রি!
– কেন তোমার বাবাইকে সুস্থ করতে হবে যে।  সেজন্য ফ্রি লাগবে না!
– ওহ্! আচ্ছা। তাহলে নিয়ে যাও।
– ডাক্তার মন রাইসার কাছে আসলে রাইসা মনকে বলে’ তুমি তো উঁচু ফ্রিশ নিতে হলে আমার সমান হতে হবে। তা না হলে ফ্রিশ পাবে না।
– সত্যি তাহলে তো তোমার সমান হতে হয়।
মন হাঁটুগেড়ে রাইসার সামনে বসে পড়ে। রাইসা মনের দু’গালে পাপ্পি দিয়ে বলে এর চেয়ে দামি গিফট আমার কাছে নেই।  ডাক্তার মন রাইসাকে জড়িয়ে ধরে বলল’ সত্যিই তোমার ফ্রিসটাই আমার ডাক্তারি জীবনটাকে সার্থক করল।আচ্ছা এখন যাও বাবাইকে ডাক দাও তোমার বাবাই তোমার কথা শুনবে তোমার সাথে কথা বলবে।
– রাইসার তার বাবার বুকে মাথা রেখে বাবাই বাবাই করে ডাকছে।  এমন সময় রাজ বুঝল যে কেউ তাকে ডাকছে।  মিটিমিটি করে চোখ খুলেই দেখে তার রাজকন্যা তার বুকে শুয়ে বাবাই বাবাই বলে ডাকছে।
– রাজ রাইসাকে বুকের সাথে জড়িয়ে নিয়ে বলল’ এই তো মা তোর বাবাই তোর ডাক শুনে আর ঘুমিয়ে থাকতে পারল না!
বিঃদ্রঃ পরবর্তী পর্ব থেকে কেমেস্টি শুরু হবে। সেই অপেক্ষায় থাকেন।

