রক্তের বন্ধন
Part_22
কথাটা শুনে বুকের ভেতর রক্ত ক্ষরণ হতে লাগল!
– এদিকে ডাক্তার মন তার রুমে বসে একা একাই ভাবছে। মনে হচ্ছে কোথাও কিছু ভুল হচ্ছে! কারণ মানুষের চোখের পানি কখনো মিথ্যা বলে না। হঠাৎ মনে হল হসপিটালে তো সিসি ক্যামেরা আছে।
– ডাক্তার আশিককে ফোন করে বলল’ আমার হসিটালের সিসি ক্যামেরার ফুটেজ লাগবে।
– ডাক্তার আশিক ঘন্টাখানেক এর মাঝেই সিসিটিভির ফুটেজ এনে ল্যাপটপে ওপেন করতেই যা দেখল তাতে একদম পরিষ্কার হয়ে গেল রাজকে মারতে কথা নয় অন্য একজন গিয়েছিল।
– ভিডিওটা দেখে কিছু বুঝা যাচ্ছে না। তাই ভিডিওটা জুম করে দেখা যাচ্ছে মুখে মুখোশ প জিন্স- পেন্ট পড়া একটা ছেলের মতো। কথা রুমে ঢুকে পড়ার পর ছেলেটা বের হয়ে গেল! তারমানে সে আগে থেকেই রুমে ছিল। তাহলে কে সে? ডাক্তার মন কিছু ভাবতে পারছে না। ডাক্তার মন ভিডিওটা ১৫ মিনিট পিছিয়ে দিয়ে দেখল যে নার্স ফোন কানে নিয়ে যখন রুম থেকে বের হল। তখন মুখোশ পড়া লোকটা কোথায় থেকে এসে রুমে ঢুকল! এর পর আবার যখন নার্স রুমে আসবে তখন কথার সাথে নার্সের দেখা হয়ে যায়। নার্সের সাথে কথা কিছুক্ষণ কথা বলে রুমে প্রবেশ করে। এমন সময় নার্স কাউন্টারে যায়।
– ডাক্তার মন নার্সকে ডেকে নিয়ে বলল’ কথা আসার আগে আপনি রুম ছেড়ে বের হয়ে কোথায় গিয়েছিলেন?
– ম্যাডাম আমি কোথাও যায় নি।
– প্লিজ সত্যিটা বলেন।
– সত্যি বলছি ম্যাম আমি কোথাও যায় নি।
– এখন কিন্তু আপনার উপর সন্দেহ হচ্ছে। আপনি কি প্রেশেন্টকে মারতে সহযোগিতা করতে চেয়েছেন।
– ম্যাম কি বলছেন কথা ম্যাডাম আসার আগে আমি একবারের জন্য রুমের বাহিরে যায় নি।
– আচ্ছা ধরলাম আপনার কথা সত্য। তবে এই ভিডিওতে যে আপনার মত একটা মেয়ে ফোনে কথা বলতে বলতে কাউন্টারের দিকে গেল। সেটা কি আপনার জমজ বোন?
– ম্যামমমম”’
– মন জারি দিয়ে বলল। তুতলামি না করে সত্যটা বলেন। তা না হলে পুলিশকে জানাতে বাধ্য হব।
– ম্যাম পুলিশকে জানাবেন না। আমি সেদিন মিথ্যা বলেছিলাম! আমায় ক্ষমা করবেন। যখন আমি পেশেন্টের নিকট বসেছিলাম তখন একটা আননোন নাম্বার থেকে আমার ফোনে ফোন আসে।
– দুু’ বার রিং হওয়ার পর তিনবারের সময় ফোনটা ধরি। ফোন ধরতেই ওপাশ থেকে মেয়েলি কন্ঠে, কে যেন বলে ‘ আপনার মেয়েকে কিডনাপ করা হয়েছে।
– আপনার মেয়েকে যদি ফিরে পেতে চান তাহলে, হসপিটালের কাউন্টারের কাছেই ঝুড়িতে নীল একটা খাম আছে। সে খামের ঠিকানা অনুযায়ী দু’লাখ টাকা নিয়ে আসবেন।
– আমি কথাটা শুনে বাকরুদ্ধ হয়ে যায়। মুখ দিয়ে কোন কথা আসছে না।
– কি হলো কিছু বলছেন না যে? শুনেন আজ রাত নয়টার মাঝে যদি মেয়েকে নিতে না আসেন তাহলে লাশটা নিয়ে যায়েন। টাকা দু’লাখ বেঁচে যাবে। আর হ্যাঁ যদি, পুলিশকে জানান তাহলে মেয়ের লাশটাও পাবেন না।
– আমি শুধু তাদের বলেছি, আমি টাকা নিয়ে আসব। তোমরা কিছু করো না রিচির! তারা ফোনটা কেটে দিল।
– আমি ফোনে কথা বলতে বলতে হসপিটালের কাউন্টারের কাছে রাখা ঝুড়িতে কোন নীল খাম না পেয়ে। বাসায় ফোন দেয়। বাসায় ফোন দিয়ে শুনি রিচি তার বাবার সাথে খেলছে।
– আমি অনেকটা অবাক হয়ে যায়। বুঝতে বাকি রইল না কলটা ফলস ছিল! আমি পরে ও নাম্বারে কল করলে নাম্বার অবৈধ দেখায়।
– ফোন রেখে যখন পেশেন্টের রুমে ঢুকব তখনি কথা ম্যাডামের সাথে দেখা হয়।
-আচ্ছা আপনি যান।
– নার্স চলে গেলে, মন ভাবতে থাকে তাহলে এসবের পিছনে কে জড়িত। আর রাজের শত্রু বলতে তেমন কেউ নেই যতটা সাথীর কাছে শুনেছি। কেন জানি লোকটার সম্পর্কে জানার আগ্রহ বেড়ে যাচ্ছে।
– ডাক্তার মন বসে বসর এসব ভাবছে! হঠাৎ নার্স এসে বলল’ ম্যাম এখনো তো পেশেন্টের জ্ঞান ফিরছে না। স্যালাইন শেষ। অক্সিজেন নেওয়াতেও প্রবলেম হচ্ছে।
– আচ্ছা তুমি যাও। নার্স চলে গেলে মন রাজের কেবিনে গিয়ে চমকে গেল। রাজের অবস্থা ক্রিটিক্যাল। হার্টবির্ট অফ হয়ে যাচ্ছে।
-রাজকে একটা স্যালাইন দিয়ে, সাথে একটা ইনজেকশন দিয়ে। নার্সকে সর্বক্ষণ পাশে থাকার কথা বলে রুম থেকে বের হতেই দেখে! কথা ছলছল দৃষ্টি নিয়ে দরজার সামনে দাঁড়িয়ে আছে।
– আপনি এখানে?
– ম্যাম, আমার স্বামী কেমন আছে?
– হুম বেশি ভালো না। আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করেন। আল্লাহ যদি আপনার ডাক শুনে। আর হ্যাঁ সেদিন আপনাকে ভুল বুঝে ওসব বলার জন্য সরি।
– এমন সময় রাইসা এসে বলল’ এই তুমি আমার বাবাকে আবারো মারতে আসছ?
– মম দেখ, পঁচা মহিলাটা আমার বাবাইকে আবারো মারতে আসছে। তুমি তাকে তাড়িয়ে দেও!
– সাথি কথাকে দেখেই অগ্নিবর্ণ হয়ে গেল। রাইসাকে টান দিয়ে কুলে নিয়ে বলল’ মিস কথা আপনার লজ্জা করে না? এতোকিছুর পরও কিসের জন্য আসছেন? যে কাজটা সেদিন সম্পূর্ণ করতে পারেননি সেটা কি সম্পূর্ণ করতে এসেছেন?
– প্লিজ আপু, এভাবে বল না। আমি রাজের মুখটা দেখেই চলে যাবো। আমি যে আর সইতে পারছি না।
– ছিঃ লজ্জা করে না এসব বলতে। যে নিজের স্বামীকে মারতে এসব করে। তার মুখে এসব শোভা পায় না। মামনি তুমি পঁচা আন্টিকে তাড়িয়ে দাও।
-রাইসা মা আমার, আমার কুলে কি আসবি একটু?
– নাহ্ তুমি পঁচা তোমারকুলে যাবো না। তুমি বাবাইকে মারতে চেয়েছিলে। তুমি চলে যাও।
– কি হলো, ছোট মেয়ের প্রতিও তো একটু দয়া হতে পারে। কেন আসেন আমাদের একটু ভালো থাকতে দেন আজ আপনার জন্য রাজ মরতে বসেছে।
– প্লিজ বিশ্বাস করো আপু, আমি আমার স্বামীকে মারিনি।
– আমি তো ওকে নিজের থেকেও বেশি ভালবাসি!
– আপনি যদি আরেকবার বলেন রাজকে ভালবাসেন তাহলে আপনাকে কি করব আমি জানি না – কথাটা বলে যখনি থাপ্পর দিতে যাবে তখনি, ডাক্তার মন সাথির হাতটা ধরে ফেলে!
– অনেক হয়েছে আর না প্লিজ স্টপ! অনেকক্ষণ ধরে একটা নিরাপরাধ মেয়েকে কটু কথা বলছেন। নিজের মেয়ে পর্যন্ত মাকে বাজে কথা বলছে।
-কি বলছেন আপনি?রাজকে যে খুন করতে চেয়েছিল তাকেই আপনি বাহবা দিচ্ছেন।
– না কথা রাজকে মারতে যায়নি।
– তাহলে কে?
– সিসি টিভির ফুটেজ এ ধরা পড়েছে যে, রাজকে মারতে মুখেশ পড়ে কেউ এসেছিল।বিষয়টা আমি পুলিশকে ইনফর্ম করেছি।
আর হ্যাঁ প্লিজ ঝগড়া না করে, রাজের জন্য দোয়া করেন।
– আর মামনি তোমার মম তোমার বাবাইকে মারতে চাইনি। তোমার মম তোমার বাবাইকে অনেক ভালবাসে।
– তোমার মমকে সরি বলে নিয়ে।
– ডাক্তার মন চলে গেলে, রাইসা সাথির কুল থেকে নেমে কথার কাছে গিয়ে দু’কান ধরে বলে মম তুমি আমায় ক্ষমা করে দাও। আমি তোমায় অনেক কষ্ট দিয়েছি। রাইসার চোখে পানি। মনে হচ্ছে মুক্তার দানা! কথা রাইসাকে বুকে জড়িয়ে নিয়ে বলে, মারে তুই কেন ক্ষমা চাচ্ছিস। তুই আমার বুকে থাকলে আমি সব ভুলে যায়। কথার বুকটা প্রশান্তিতে ভরে উঠছে! কথা রাইসার গালে মুখে বারবার চুমু দিচ্ছে। সাথি, রাইসা আর কথার ভালবাসা দেখে নিজের অজান্তেই কেঁদে দিল!
– ম্যাডাম একটা কথা বলি ( ভয়ে ভয়ে সাথি বলল)
– জ্বি বল!
– ম্যাডাম আমাকে ক্ষমা করে দেন। না জেনে আপনাকে কষ্ট দিয়েছি। আমাকে ক্ষমা করে দেন। সাথি কথার কাছে কড়জোরে ক্ষমা চাই!
– আরর কি আশ্চর্য তুমি ক্ষমা কেন চাচ্ছ। তোমার তো কোন দোষ নেই যা হয়েছে সব ভুল-বুঝাবুঝি। আমি তোমায় ক্ষমা করে দিয়েছি।
– হঠাৎ কথার রাজের কথা মনে পড়তেই মনটা কেন জানি বিষন্ন হয়ে উঠল!
– কথা রাজের কেবিনে নার্সকে বলে প্রবেশ করে। রাজের দিকে তাকাতেই বুকের ভিতরটা কেমন জানি হুহু করে কেঁদে ওঠে। রাজ কেন এখনো চোখ মিলে তাকাচ্ছে না। খুব করে মন চাচ্ছে রাজকে বুকের সাথে জড়িয়ে নিতে। রাজের বুকটায় যে একমাএ নীড়!
– রাজের মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছে কথা। এমন সময় পাশ থেকে নার্স বলল ‘ খুব ভালবাসেন স্যারকে?এতটা লাঞ্ছনা সহ্য করেও আবার এসেছেন। সত্যিকার ভালবাসা হয়ত এটাই।আসলেই আপনার স্বামীটা অনেক ভাগ্যবান
– কথা নার্সের মুখে’ ভাগ্যবান’ কথাটা শুনে কেঁদে ফেলল। চোখের পানি ছেড়ে দিয়ে বলল’ আপু আমার স্বামী ভাগ্যবান না। সে সবসময় কষ্টই পেয়েছে। সেই মায়ের কুল থেকে। বরং আমিই ভাগ্যবান ওর মত কাউকে পেয়েছি। আর রাজকে শুধু আমি ভালোই বাসিনা রাজ আমার জীবন-মরণ।
– রাজের জ্ঞান না ফিরা দেখে কথা ডাক্তারের রুমে গিয়ে বলল ‘ আপু আমার স্বামী কেমন আছে?
– মিস কথা রিলেক্স! স্যালাইন দেওয়া হয়েছে। আর যদি ২৪ ঘন্টার মাঝে রাজের জ্ঞান না ফিরে তাহলে আর হয়ত কোনদিন জ্ঞান ফিরবে না।
– কথা ভাবতে পারছে না রাজ তাকে ছেড়ে চলে গেলে সে কি নিয়ে বাঁচবে।
– এমন সময় নার্স দৌড়ে এসে বলল ‘ ম্যাডাম বিশেষ অভজারভেশনে রাখা পেশেন্ট মিঃ রাজ
পরবর্তী পর্বের অপেক্ষায় থাকেন।