রক্তের বন্ধন
Part_16
ঘন্টা ৩ পর রাইসাকে কেবিনে ট্রান্সফার করা হলে আমি আর সাথি রাইসাকে দেখতে যায়।
.
অন্যদিকে কথা রক্ত দেওয়ার পর বেডে কিছুক্ষণ শুয়ে থাকাতেই ঘুমের রাজ্যে হারিয়ে যায়।
.
হঠাৎ কথা দেখতে পায়, রাজ সাথিকে বিয়ে করছে। সাথি যখনি কবুল বলবে এমন সময় কথা চিৎকার দিয়ে উঠে, না এ বিয়ে হবে না। রাজ শুধু আমার। এ টুকু দেখতেই কথার ঘুম ভেঙে যায়। কথা ঘুম দেখে উঠে এক দৌঁড়ে রাইসার কেবিনে গিয়ে যা দেখে কথা তা দেখার জন্য মোটেও প্রস্তুত ছিল না! সাথি রাজের হাতটা শক্ত করে ধরে রেখেছে। মনে হচ্ছে সাথি ভয় পাচ্ছে। রাজকে হারানোর ভয়! কথার খুব করে কান্না পাচ্ছে। রাজকে কি সে সত্যি হারিয়ে ফেলল। সে রাজকে হারালে যে বাঁচবে না। যেমন করে হোক রাজকে তার করে নিতেই হবে।
.
কথা রুমের বাহিরে দাঁড়িয়ে কাঁদছে। গাল থেকে টুপ-টাপ করে পানি পড়ছে। হঠাৎ আমি রুম থেকে বের হতেই দেখি কথা দরজার সাথে দেয়ালে হেলান দিয়ে কাঁদছে। নিজের অজান্তেই মনটা কেমন করে ওঠল! আমার দিকে চোখ পড়তেই কথা মাথাটা নিচু করে বলল, আমায় ক্ষমা করা যায় না। আমি জানি আমি অনেক বড় অপরাধী তারপরো বলছি, আমাকে একটি সুযোগ দাও!
– ম্যাডাম আপনি কাঁদছেন কেন? আপনার চোখের কাজলের মূল্যও আমার মতো রাজের চেয়ে দামি। আপনি কাঁদবেন না।
.
রাজ আর ওমন করে বলো না তুমি যে আমার কলিজা! তোমাকে ছাড়া সত্যি মরে যাবো। তুমি আমাকে মেরে ফেলো নয়ত বুকে টেনে নাও। আমি আর সহ্য করতে পারছি না। প্রতিনিয়ত অনুশোচনার অনলে পুড়ছি আমি। তুমি যা করতে বলবে, যেভাবে চলতে বলবে ওভাবেই চলব। প্রয়োজনে তোমার বাড়ির দাসি হয়ে থাকব। তবুও আমাকে ক্ষমা করে কাছে টেনে নাও।
.ম্যাডাম আর কি চান আপনি? আর কত কষ্ট দিবেন? আমি আপনাকে চাই না। আর রাইসার মা হিসেবে সাথিই পারফেক্ট! আর আপনি যদি আমায় সামান্য পরিমাণো ভালবেসে থাকেন সে ভালবাসার কসম’ আপনি চলে যান।’
.
কথা কান্না করতে করতে হসপিটাল থেকে বের হয়ে গেল। আমি কথার চলে যাওয়ার দিকে পলকহীনভাবে তাকিয়ে আছি। মনের মাঝে অজস্র স্মৃতি এসে নাড়া দিচ্ছে। আমি যে আজও কথাকে ভুলতে পারিনি। এখনো প্রতিরাতে তার ছবিটা বুকে নিয়েই যে ঘুমায়। কিভাবে ভুলব তাকে। কিন্তু, আমি চাই না কথাকে আর বিশ্বাস করতে। চাই না তার নতুন সংসার নষ্ট করতে। কারণ একটা সংসার নষ্ট হলে কতটা কষ্ট লাগে তা আমি বুঝি। তাই কথাকে কাছে পেয়েও দূরে সরিয়ে দিলাম। হঠাৎ কারো হাতের স্পর্শ পেলাম কাঁধে। তাকিয়ে দেখি সাথি।
.
খাবে না রাজ?
তুমি তো কিছুই খাওনি।এই তুমি কাঁদছো কেন? কি হয়েছে? বলো না প্লিজ। ভালো নাহয় নাই বাসলে, কষ্টের ভাগটাতো দিতে পারো? কথা আপু এসেছিল?
-না!
-হ্যাঁ আমায় বলতে হবে। কথা আপু আবারো তোমায় কষ্ট দিতে আসছিল। বাদ দাও, চল খাবে!
– সাথি বারান্দায় নিয়ে গিয়ে চেয়ারে বসাল আমায়।
– হাতটা ধুয়ে দিয়ে, বলল খাও!
– কিন্তু আমার খেতে মন চাচ্ছে না!
– এই খাচ্ছো না কেন? আচ্ছা আমি খাইয়ে দেয়। ভয় পেত হবে না ভালবাসা চাইব না। তোমার পাশে রেখ তাতেই চলবে। খাবো না, তা সত্ত্বেও সাথি খাবার মুখে তুলে দিচ্ছে। কিন্তু আমার এমন মনে হচ্ছে কেন? বুকের ভেতরটা কেমন যেন চিনচিনে ব্যথা করছে। সাথি এক লোকমা শেষ করে আবার যখন মুখে খাবার তুলে দিবে, তখন দেখলাম হসপিটালের একটা রুমের কোণা থেকে দুটি চোখ ছলছল দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে আমার দিকে। না খেয়েই ওঠে পড়লাম। আমার খাওয়া শেষ না করে ওঠে পড়া দেখে সাথি পিছন থেকে হাতটা ধরে ফেলল।
– plz don’t touch me.
-সাথি হাতটা ছেড়ে দিয়ে ঠাঁয় দাঁড়িয়ে রইল!
– আমি কথার কাছে গিয়ে ঠাস করে চড় বসিয়ে দিলাম! ছিঃ লজ্জা করে না, নিজের স্বামী রেখে অন্যকে জ্বালাতে। আর আপনাকে না বলছি বাসায় চলে যেতে। জান আপনার স্বামী মিঃ আকাশ হয়ত আপনাকে মিস করছে।
– আকাশ আমার স্বামী নয়!
– বাহ্! ভালোই, তাহলে কে আপনার স্বামী?
– আমার স্বামী তুমি। তুমি আমার জীবন, আমার ভালবাসা, আমার হার্ট!
– প্লিজ স্টপ! বন্ধ করেন এসব ড্রামা!
– রাজ সত্যি বলছি, আমার স্বামী তুমি আর কেউ নয়। আমার মন – প্রান, দেহ -যৌবন সব তোমার।
– এ কথাটা শুনে নিজেকে আর ঠিক রাখতে পারলাম না। যে মেয়ে তার কুলের শিশুকে রেখে অন্য ছেলেকে বিয়ে করে সে কিনা বলে তার কোন স্বামী নেই। তাই কষে গালে থাপ্পর বসাতেই আমার বুকে এসেই পড়ল!
– এই যে মিঃ রাজ কি করছেন? এই ম্যাডাম আপনার মেয়েকে রাতে রক্ত দিল। আর ম্যাডাম যদি রক্ত না দিত, তাহলে আপনার মেয়েকে হয়তো বাঁচানো যেত না! আর আপনি কি না তাকেই মারছেন? আর এই যে ম্যাডাম আপনাকে না বললাম বাসায় গিয়ে রেস্ট নিতে। এক পাউন্ডের জায়গায় দু- প্রাউন্ড রক্ত দিলেন! আপনার শরীর তো এমনিতেই দুর্বল। ( ডাক্তার)
– ডাক্তারের কথা শুনে, বুকে অভিমানের পাহাড় মনে হলো গলতে শুরু করছে। কথাকে বুক থেকে সরিয়ে দাঁড়া করিয়ে বললাম’ ম্যাডাম এসসব কেন করছেন আপনি?’
– আমার মেয়ের জীবন বাঁচাতে যদি, আমার জীবনও চলে যেত তবুও আমার মেয়েকে বাঁচাতাম।
– এমন সময় পিছন থেকে সুইর্টহার্ট ডাক শুনে আমি আর কথা পিছনে তাকালাম।
পিছনে তাকিয়ে দেখি, আকাশ সাহেব। কথার বর। মনের ভেতরটা মুচড় দিয়ে উঠল!
– কথা আকাশকে কি যেন বলতে গিয়েও থেমে গেল! শুধু বলল’ তুমি চলে যাও, আমার একটু কাজ আছে আমি পরে আসব!
– কেন আপনার বরের সাথে যান।
– রাজ তুমি যা ভাবছ তা ভুল ভাবছ।
– এমন সময় সাথি এসে আমায় জড়িয়ে ধরল! সাথির এমন কমকান্ডে রাগ হচ্ছে। মন চাচ্ছে কষে থাপ্পর দেয়। তার স্পর্শগুলো আমাকে বুঝায়’ যা হচ্ছে তা ভালো হচ্ছে না।
– রাজ আমি অনেক খুশি আমার মেয়ের জ্ঞান ফিরেছে। আমার মেয়ে আমায় মামনি বলে ডেকেছে। তুমি চলো আমাদের রাইসা মামনিরর জ্ঞান ফিরেছে। ( সাথি)
.
সাথির কথায় সব ভুলে গেলাম। দৌঁড়ে রাইসার সামনে!
– মিটিমিটি তারার মতো চোখের পলক ফেলছে কলিজার টুকরা টা। আর আমায় বলছে বাবাই তুমি কোথায় গিয়েছিলে?
‘ জানো না তোমাকে এক মুহূর্ত না দেখতে পেলে আমার কতটা কষ্ট হয়। বাবাই আমি সুস্থ হবো তো? তোমার সাথে আবার লুকোচুরি খেলতে পারবো তো। বলো বাবাই?
.
হ্যাঁ মা অবশ্যই পারবি।
– বাবাই তুমি আর মামনি কিন্তু একদম অভিমান করবে না। তুমি মামনিকে ভালবাসো না। মামনি তোমায় কত্তো ভালোবাসে। তুমি মামনিকে জড়িয়ে ধরো না। সিনেমাতে দেখি, বাবাই, মম একসাথে থাকে। তোমরা থাকো না? আমার কষ্ট হয় না তোমাদের কষ্ট দেখে।
– পিছনে দাঁড়িয়ে কথা রাইসার কথাগুলো শুনছে। কথা কিভাবে বুঝাবে, রাইসার মম কথা সাথি নয়। মনে মনে আল্লাহকে ডাকছে ‘ হে আল্লাহ আমার কলিজা যে ফেটে যাচ্ছে। আমি কিভাবে বুঝাবো, রাইসাকে তার অভাগী মা আমি। আমার মেয়েকে যে আমি কষ্ট দিয়েছি।
– এই বাবাই পঁচা আন্টি এখানে কেন? জানো বাবাই আমি স্বপ্নেও দেখি এ আন্টি তোমাকে বকা দেয়। তোমায় মারে, আমি বকা দিয়েছিলাস বলে আমার মুখ রক্তাক্ত করেছিল। বাবাই চলে যেত বলো ওকে!
– কি হলো? আপনি এখানে কেন? দেখছেন না আমার মেয়ে আপনাকে সহ্য করতে পারছে না। আপনি চলে যান। আর আপনি না বলেছেন পতিতায় মেয়ে একটা রাইসা। আপনি কেন তাহলে এ পতিতার মেয়ে দেখতে আসছেন?( সাথি)
– সাথির কোন কথার জবাব, কথা দিতে পারবে না। নিরবে চোখের জল ফেলা ছাড়া যে আর কিছু করার নেই তার।
– এদিকে রাইসার মুখের দিকে তাকাতেই সে কাটা দাগটা ভেসে উঠল। ভেসে উঠল রাইসার রক্তাক্ত মুখ। কথার প্রতি যতটা ভালোবাসা তার চেয়ে বেশি ঘৃণা জমে গেছে।
– কি হলো, আপনি যাবেন না? ( সাথি)
– কথা দাঁড়িয়ে কাঁদছে। আমি কোন উপায় না পেয়ে বললাম কি হলো ‘ আপনি যাবেন না? আমার মেয়েটাকে আর কত কষ্ট দিবেন? জন্ম নেওয়ার আগেই যাকে মেরে ফেলতে চেয়েছিলেন। জন্ম নেওয়ার পর যাকে রক্তাক্ত করেছিলেন। পতিতার মেয়ে নামে যার সার্টিফিকেট দিয়েছিলেন। আর কি চান? প্লিজ আপনি চলে যান।
– কথা রুম থেকে বের হয়ে গেল! সাথি আমার হাতটা শক্ত করে চেঁপে ধরল!
– কথা দরজায় দাঁড়িয়ে করুণ দৃষ্টিতে ফিরে তাকালো। কথার ছলছল দৃষ্টির চাহনী হৃদয়ে রক্তক্ষরণ বইয়ে দিল!
– হঠাৎ পকেটে থাকা ফোনটা ভেসে ওঠল! ফোনের ওয়েলপেপারে ‘মা’ লিখা টা ভেসে উঠতেই ফোনটা রিসিভ করলাম। ওপাশ থেকে মেয়েলি কন্ঠে কে যেন বলল’ রাজ ভাইয়া আপনার মা ””
#পরবর্তী পর্বের অপেক্ষায় থাকেন।
#বিঃদ্রঃ ভুলক্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন।