#রক্তের বন্ধন
Part_15
– হ্যাঁ আমি অপরাধী! কিন্তু তুমি যখন সাথিকে নিয়ে একই বাসায় থাকো তখন আমার কষ্ট হয়। আমি তোমাকে বলেছি শুনোনি তুমি।
.
প্লিজ রিমোশনাল ড্রামা বন্ধ করেন।
.
রাজ আমি ড্রামা করছি না।
.
প্লিজ আপনাকে কড়জোরে মিনতি করছি, আপনি চলে যান আমার মেয়েটা এমনেতেই অনেক অসুস্থ!
– রাজ, রাইসাকে একটিবার বুকে নিতে দিবে? আমার হৃদয়রের রক্তক্ষরণটা বন্ধ করতাম।
.
ছিঃ আপনার লজ্জা করে না, পতিতার মেয়েকে আপনার মেয়ে বলছেন।
– হঠাৎ সাথি, কথার গালে ঠাস করে চড় বসিয়ে দিল!
.
আমি কথার দিকে তাকিয়ে আছি। কথা কিছু বলছে না।
.
হঠাৎ কথা পা দুটি ঝাপটে ধরে বলল’ রাজ আমি জানি আমি অনেক অপরাধি। আমাকে তুমি ক্ষমা করে দাও। আমি তোমাকে ছাড়া বাঁচব না। তোমার পায়ের নিচে একটু জায়গা দাও! আমি ঘুমাতে পারি না। ঘুমালেই তোমার মুখ খানা ভেসে ওঠে! প্লিজ আমাকে ক্ষমা করে দিয়ে তোমার বুকে টেনে নাও।
.
কথাকে ওঠানোর মতো ক্ষমতা নেই যে আমার। বুকের ভেতরটা ধুমড়ে মুচড়ে যাচ্ছে!
– বুকের ভেতরে কষ্টটাকে চাঁপা দিয়ে বললাম’ ম্যাডাম একি করছেন! লোকে দেখলে আপনাকে কি বলবে। মালিক হয়ে কর্মচারীর পা ধরেছেন। ম্যাডাম প্লিজ আপনি চলে যান। আর কতবার বলব আপনাকে আমি ক্ষমা করে দিয়েছি।
– রাজ সত্যি আমি তোমাকে ছাড়া বাঁচব না। প্লিজ আমাকে ছেড়ে যেয়ো না।
.
এমন সময় রাইসা ঘুম থেকে জেগে যায়। ঘুম থেকে জেগেই কথাকে দেখে রাইসা চমকে যায়!
বাবাই এ পঁচা আন্টি কেন। তোমাকে আবার মারতে এসেছে। কথা আমার পা ছেড়ে রাইসাকে কুলে তুলে নিতে গেলেই!
এই তুমি আমাকে ছুঁবে না! তুমি পঁচা! তুমি চলে যাও। বাবাই উনাকে যেতে বলো।
.
রাইসা মামনি আমার, আমার কুলে এসে, আমি তোমার মম। তোমার মম এর বুকে আসবা না।
– ছিঃ তুমি আমার মম হতে পারো না। আমার মম হচ্ছে, উনি। ( সাথিকে দেখিয়ে দিয়ে)।
– রাইসা দৌড়ে সাথির কুলে গিয়ে বলল’ মম পঁচা আন্টিকে যেতে বলো ‘।
.
কি হলো আপনি যাচ্ছেন না কেনো? আপনাকে রাজ বলল না চলে যেতে। আপনার না স্বামী আছে। মিঃ আকাশকে রেখে আপনি কেন আমাদের মাঝে আসেন। চরিএ রাজের নয় আপনার খারাপ। মেয়ে রেখে স্বামী রেখে অন্য ছেলেকে বিয়ে করে এখন ওই ছেলেকে রেখে, রাজের কাছে আসছেন। আবার যখন রাজকে ভালো লাগবে না তখন শরীরের চাহিদা মেটাতে অন্য কারো কাছে চলে যাবেন। আপনাদের মতো মেয়ের চেয়ে পতিতারাও ভালো। টাকার জন্য নিজেকে বিক্রি করে।
.
প্লিজ চুপ করেন। আমি চরিএহীন নয়।
.
প্লিজ আমি কিছু শুনতে চাইনি। আমি চাই আপনি চলে যান।
– কথা কান্না করতে করতে রুম থেকে বের হয়ে গেল!
.
কথা চলে গেলে, আমার চোখ দিয়ে অশ্রু বইতে লাগল। সাথি আমার পাশে বসলেই, সাথিকে বললাম ‘ প্লিজ আমাকে একা থাকতে দেন।
.
রাজ তোমায় একটা কথা বলি?
-হুম বলো।
.
জানো রাজ, আমি নিজের অজান্তেই তোমাকে বড্ড বেশি ভালোবেসে ফেলেছি। তোমাকে ছাড়া আমি কেমন যেন ছন্নছাড়া। তুমি চোখের আড়াল হলে আমার ধম বন্ধ হয়ে আসে। জানো রাজ ‘ আমি তোমার কাছে স্বামীর অধিকার চায় না। আমি চাই, তুমি আমাকে রাইসার মা হয়ে থাকার অধিকার দাও! আমি জানি রাজ ‘ তুমার মনে শুধু কথার বিচরণ। তবে কি জানো পৃথিবীতে খুব কমই মানুষ তোমার মতো কাউকে পায়। কথা আপু হীরাকে কাঁচ ভেবে তোমাকে ছুড়ে ফেলেছে। যে মেয়ে তোমাকে ঠকিয়ে অন্য কাউকে বিয়ে করতে পারে । সে মেয়ে আবার তোমাকে ঠকাবে না তার কোন নিশ্চয়তা নেই।
.
প্লিজ সাথী আমি ওসব কিছু শুনতে চায় না। কাল রাইসার অপারেশন। তাই আজ রাতটা হাসপাতালেই কাটিয়ে দিতে চাই!
.
রাতে রাইসার বেডে বসে আছি, নার্স না করলেও ডাক্তারকে বলে মেয়ের কাছে বসে আছি। রাইসা ঘুমিয়ে আছে। আমি রাইসার মাথায় হাত ভুলিয়ে দিচ্ছি! চাদের আলো জানালা ভেদ করে রাইসার মুখে পড়ছে। মুখটা কতো সুন্দর দেখাচ্ছে। মনে হয় না, আমার মেয়েটা কত কষ্ট তার বুকে চাপিয়ে রেখেছে। মাথায় হাত ভুলাতে ভুলাতে কখন যে ঘুমিয়ে যায় তার খেয়াল নেই! হঠাৎ, রাইসা বাবাই বলে চিৎকার দিয়ে ওঠল!
‘ বাবাই আমার খুব কষ্ট হচ্ছে, বাবাই স্বপ্নে দেখলাম, পঁচা আন্টিটা আমার কুলা নিয়ে আছে। আমার গালে মুখে চুমু দিচ্ছে! জানো বাবাই আমার না খুব ভালো লাগছিল। বাবাই আমার কুমড়ের বাম সাইডে খুব ব্যাথা করছে। বাবাই আমি মরে গেলে আমায় ভুলে যাবে?
.
চুপ, মরার কথা বলবি না। তোর কিছুই হবে না। তুই যে আমার কলিজার টুকরা।
.
বাবাই তোমার বুকে আমায় শক্ত করে জড়িয়ে নাও! আমার যে খুব কষ্ট হচ্ছে। আমি রাইসাকে বুকের সাথে জড়িয়ে নিয়ে ডাক্তার ডাক্তার বলে ডাকতে লাগলাম। ডাক্তার এসে রাইসাকে ঘুমের ইনজেকশন দিয়ে দিল!
.
রাইসা ঘুমিয়ে পড়লো কিছু ক্ষণের মাঝেই!
– ডাক্তার আমার মেয়ের কিছু হবে না তো?
– মিঃ রাজ অপারেশন করতে পারলে আমি মনে করি সব ঠিক-ঠাক হয়ে যাবে। আপনি কোন চিন্তা করবেন না। বরং আল্লাহর কাছে, প্রার্থনা করেন।
পরের দিন সন্ধ্যায় রাইসাকে যখন অপারেশন থিয়েটারে নিয়ে যাবে। তখন রাইসা কান্না করে দিয়ে বলল’ বাবা আমি তোমায় ছেড়ে যাবো না। ডাক্তার আঙ্কেল রা আমায় কোথায় নিয়ে যাচ্ছে। আমার খুব ভয় হচ্ছে। বাবাই চলো তুমি আমার সাথে। এদিকে রাইসাকে নিয়ে অপারেশন থিয়েটারে ঢোকার সময়ও রাইসা আমার হাতটি ধরে আছে।
এক পর্যায়ে রাইসাকে নিয়ে অপারেশন থিয়েটারে প্রবেশ করল। রাইসার অপারেশন হচ্ছে আমি অপারেশন থিয়েটারের বাইরে পায়চারি করছি। মনে মনে আল্লাহ তায়ালাকে ডাকছি। হঠাৎ কাঁধে কারো হাতের স্পর্শ পেলাম। চেয়েই দেখি জুথি ম্যাডাম।
– ম্যাডাম আপনি এখানে?
– হ্যাঁ! আমি, আর ভাইয়া কি তার বোনকে ম্যাডাম বলে ডাকে?
– না তা না কিন্তু!
– কোন কিন্তু না , তুমি আমার নাম ধরে ডাকবে।
– আচ্ছা!
– ভাইয়া তুমি কাঁদছ কেন?
-সত্যি আল্লাহ তায়ালা মহান। তিনি যদি ফেরেশতা রুপে তোমায় না পাঠাতো তাহলে আমার মেয়ের যে কি হতো।
– ভাইয়া ওভাবে বল না। তুমিও তো আমার কাছে ফেরেশতা রুপে এসেছে। আমার স্বামী যে আমার সব। ওকে ছাড়া আমার নিঃশ্বাস নিতেও কষ্ট হয়।
.
বোন আল্লাহ রহমতের ভান্ডার। তার রহমত থেকে কেউ নিরাশ হয়ো না।
.
ভাইয়া আসি। পরে আসবো আবার।
জুথি চলে গেলে, আমি অপারেশন থিয়েটারের বাইরে বসে আছি।
.
প্রায় ঘন্টা দু’ই পর ডাক্তার অপারেশন থিয়েটার হতে বের হতেই। ডাক্তারের কাছে গিয়ে বললাম’ ডাক্তার আমার মেয়ের খবর কী?’
.
মিঃ রাজ অপারেশন সাকসেলফুল বাট, প্রচুর রক্ত ক্ষরণ হয়েছে। আর হসপিটালে রাইসার গ্রুপের রক্ত পাওয়া যাচ্ছে না। যদি রাতের মাঝে রক্ত না পাওয়া যায় তাহলে যেকোন দুর্ঘটনা ঘটে যেতে পারে। আপনি চিন্তা করবেন না। আমরা অন্যান্য হসপিটালে খুঁজ রাখছি।
.
ডাক্তার চলে গেলে। আমি ফোন দিয়ে বন্ধু মহলে খোঁজ নিলাম। কারো রক্তের গ্রুপের সাথে মিলছে না।
.
অন্যদিকে কথা হসপিটালে এসে ডাক্তারকে বলল’ ডাক্তার রাইসার কি অবস্থা? ‘
.
অপারেশন সাকসেস ফুল বাট অপারেশনে প্রচুর রক্তক্ষরণ হয়েছে। এখন যদি রাতের মাঝেই রক্ত ম্যানেজ করা না যায় তাহলে। যে কোন সময় অঘটন ঘটে যেতে পারে।
.
এমন সময় নার্স এসে বলল’ স্যার ব্লাড ব্যাংকে ০+ গ্রুপের রক্ত নেই!
.
ডাক্তার সাহেব রক্ত আমি দিবো।
তবে একটা শর্ত আছে, আমি যে রক্ত দিবো রোগীর কোন রিলেটিভ জেনো না জানে।
.
হুম ঠিকআছে চলেন। কথা তার নিজের শরীর থেকে জীবনের প্রথম রক্ত দিচ্ছে। রক্তের বন্ধনটা আরো দৃঢ় করছে।
কথার রক্ত দেওয়া শেষ হলে বেডে কিছুক্ষণ শুয়ে থাকে।
.
এদিকে ডাক্তার আমাকে এসে বলে। মিঃ রাজ রাইসার জন্য রক্ত পাওয়া গেছে। আল্লাহর কাছে শুকরিয়া আদায় করেন।
.
জ্বি আলহামদুলিল্লাহ্!
.
ডাক্তার সাহেব রাইসাকে দেখতে যেতে পারি?
.
হুম পারবেন। একটু পর কেবিনে ট্রান্সফার করা হবে রাইসাকে। সো একটু অপেক্ষা করুন।
.
ডাক্তার চলে গেলে’ মহান আল্লাহ্ তায়ালার কাছে শিকরিয়া জানাচ্ছি। আমার কলিজার টুকরাকে হেফাজতে রেখেছে।
.
ঘন্টা ৩ পর রাইসাকে কেবিনে ট্রান্সফার করা হলে আমি আর সাথি রাইসাকে দেখতে যায়।
.
অন্যদিকে কথা রক্ত দেওয়ার পর বেডে কিছুক্ষণ শুয়ে থাকাতেই ঘুমের রাজ্যে হারিয়ে যায়।
.
হঠাৎ কথা দেখতে পায়, রাজ সাথিকে বিয়ে করছে। সাথি যখনি কবুল বলবে এমন সময় কথা চিৎকার দিয়ে উঠে, না এ বিয়ে হবে না। রাজ শুধু আমার। এ টুকু দেখতেই কথার ঘুম ভেঙে যায়। কথা ঘুম দেখে উঠে এক দৌঁড়ে রাইসার কেবিনে গিয়ে যা দেখে কথা তা দেখার জন্য মোটেও প্রস্তুত ছিল না! সাথি রাজের
পরর্বতী পর্বের অপেক্ষায় থাকেন।
#বিঃদ্রঃ ভুলক্রুটি ক্ষমা দৃষ্টিতে দেখবেন।