রক্তের বন্ধন
art_28
– হিহি আমি আনরোমান্টিক।
– কথা আমার নাক টেনে দিয়ে বলল ‘ ওরে আমার গুমরোমুখো রে ! তাই বুঝি তুমি আনরোমান্টিক হলে, রোমান্টিকতা কী?
– কমু ক্যা”
– আচ্ছা! বলতে হবে না। রাইসা একা ঘুমাচ্ছে। চলো রাইসার কাছে।
– কথা আর আমি রাইসাকে মাঝখানে রেখে শুয়ে পড়লাম। দু’জনের বুকে দুজনের ভালবাসা আগলে রেখেছি।
– সকাল বেলা রাইসার ঘুম ভাঙতেই ঘুম ঘুম চোখে বলে ওঠে বাবাই তুমি লিপিস্টিক দিয়েছ?
রাইসার কথা শুনে ভ্যাবাচ্যাকা হয়ে গেলাম। রাইসা মুখ ধরে হাসছে। কেন হাসছে বুঝতেছি না। হঠাৎ কথার ঘুম ভেঙে যায়। কথা দেখে রাইসা মাঝখান থেকে মুখ ধরে হাসছে। হাসিটা অনেক অনেক সুন্দর লাগছে।
– কথা রাইসার কপালে চুমু দিয়ে বুকে নিয়ে বলল ‘ মামনি তুমি হাসছ কেন ওভাবে?
– রাইসা কথাকে দেখেই মম তুমি কখন আসছ বলেই কথাকে জড়িয়ে ধরল। সত্যিই রক্তে -রক্তের টান বুঝতে পারে। রাইসাকে দেখে মনে হচ্ছে কথার বুকের সাথে মিশে যাচ্ছে।
– আমি খেয়াল করে দেখলাম কথার চোখের কোণ দিয়ে পানি ঝরছে। এই পানি আজ কোন কষ্টের নয়। পূণতার জন্য অশ্রুজল হাস্যজ্জ্বল হয়ে বেরিয়ে আসছে।
– মম তুমি আমায় অার ছেড়ে যাবে না তো? জানো আমার না খুব কষ্ট হয় তোমাকে ছাড়া । কিন্তু বাবাইকে বলি না বাবাই যদি কষ্ট পায়। আচ্ছা মম তুমি এভাবে প্রতিদিন বুকে নিয়ে ঘুম পাড়িয়ে দিবে? কি হলো কাঁদছ কেন? আমি কি তোমায় কষ্ট দিয়েছি মম?
– নারে মা কষ্ট দিবি কেন? তুই যে আমার কলিজার টুকরা । বল তোকে রেখে কোথায় যাবো? তোকে আর তোর বাবাইকে রেখে কোথাও যাবো না।
– সত্যি তো?
– হুম সত্যি সত্যি সত্যি! তিন সত্যি।
– তাহলে প্রমিজ কর আমার মাথা ছুঁয়ে কোথাও যাবে না আমাকে ছেড়ে?
– হুম প্রমিজ আমার মামনি আর তার বাবাইকে রেখে কোথাও যাবো না।
– উম্মমাহ্ এটা তোমার!
– আমার মামনিটা মমকে পেয়ে কি তার বাবাই কো ভুলে গেল?
– রাইসা কথাকে ছেড়ে দিয়ে বলল’ তুমি আরেকবার এমন কথা বললে আমি কিন্তু কাঁদব। তুমি জানো না তুমি আমার কে?
তুমি আমার বাবাই আমি সবচেয়ে বেশি তোমায় ভালবাসি। তবে মমকেও ভালবাসি। তোমার মতই।
– মম তুমি ওমন করে তাকিয়ে আছো কেন?
মম তুমি লিপিস্টিক দিতে পারো?
– হুম পারি তো। আমার রাজকন্যাটা কি লিপিস্টিক দিবে?
– না মম আমি দিবো না, তুমি বাবাইকে দিয়ে দিবে। দেখ না বাবাই এর কপালে লিপিস্টিক। গালে লিপিস্টিক। এভাবে কেউ দেয়। পঁচা দেখায় না বলো।
– এদিকে রাইসার কথা শুনে কথা মাথা নিচু করে ফেলল। আমার মন চাচ্ছে আমি পৃথিবীতে নয় অন্য কোন গ্রহে আছি।
– কি হলো মম বলো দিয়ে দিবে?
– আচ্ছা দিয়ে দিব। তোমার না স্কুল আছে। চলো রেডি হতে হবে।
– মা -মেয়ে চলে গেলে আমি আয়নার সামনে গিয়ে যা দেখলাম তাতে অবাক না হয়ে পারলাম না। বুঝতে আর বাকি থাকল না এসব কথার কাজ রাতে পাগলীটা শুধ নিয়েছে।
– আমি ফ্রেশ হয়ে দেখি রাইসা টিভি দেখছে। রাইসাকে তার মমের কথা বললে,রাইসা বলল মম রান্না করছে।
আমি কিচেনের দিকে উঁকি দিয়ে দেখি, কথা রান্না করছে। এটাই শুধ নেওয়ার উপযুক্ত সময়।
– কথার পিছন দিয়ে গিয়ে জড়িয়ে ধরলাম! এই কি করছ হু?
– কেন রাতে কি করছ তোমার মনে নাই?
– যাহ্ করছি ভালোই করছি আমার বরকে করছি।
-গুড পয়েন্ট! তাই আমিও যা করছি আমার বউকে করছি।
-এই ভালো হবে না কিন্তু এ কথা বলে কথা যখনি ঘুরতে যাবে তখনি গরম তেল ছিটে আসে!
– আহ্! ঝলে গেল।( গরম তেল শরীলে না পড়তেই এক্সটা একটা ভাব দিলাম।
– এই কোথায় লেগেছে বলো? খুব কষ্ট হচ্ছে তোমার?
– হুম হচ্ছে তো। কথার চোখে পানি দেখলাম। চোখের পানি মুছে দিয়ে কথার পিছনে একহাত দিয়ে দেওয়ালের সাথে চেপে ধরলাম। কথা একবিন্দু নড়ার চেষ্টা করলো না। আমি আস্তে আস্তে কথার কাছে যাচ্ছি। হঠাৎ কথার হরিণীর মতো চোখজোড়া বন্ধ হয়ে গেল।
– আমার ঠোঁটজোড়া কথার ঠোঁঠের সাথে মিশিয়ে দিলাম। মনে হচ্ছে অজানা কোন এক! জায়গায় হারিয়ে গিয়েছি দু’জন। এমন সময় ঠাস করে কিছু ভাঙার শব্দে কথাকে ছেড়ে দিলাম।
– কথা ঠাঁয় দাঁড়িয়ে আছে। সেখান থেকে নড়ছে না। কথার মুখটা লালটুকটুকে হয়ে গেছে। ফ্লরে একটা গ্লাস পড়ে টুকরো টুকরো হয়ে গেছে। বিড়াল দৌড়ে রুম থেকে বেরিয়ে গেল। বিড়ালের দিকে তাকাতেই চোখ পড়ল জানালার দিকে একজোড়া করুণ দৃষ্টি নিয়ে তাকানো মেয়ের প্রতি। সে যে আর কেউ নয় সে হচ্ছে সাথি। সাথি আমার দিকে এখনো তাকিয়ে আছে। তার পলকজোড়া চোখ দু’টি কি যেন বলছে।
– কথাকে রান্না ঘরে রেখে যখনি রুম থেকে বের হবো ঠিক তখনি সাথি হ্যাচকা টান দিয়ে পাশের রুমে নিয়ে দরজা আকটে দেয়।
– এই সাথি কি করছ এসব?
– সাথি কিছু না বলেই দৌঁড়ে এসে আমাকে জড়িয়ে ধরে ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কাঁদতে লাগল। এই সাথি ছাড়ো বলছি। এসব ঠিক না। প্লিজ ছাড়ো বলছি। সাথি ছাড়ছে না আরো শক্ত করো জড়িয়ে ধরছে আমায়।
– সাথিকে অনেক কষ্টে ছাড়িয়ে ঠাস! ঠাস করে দু’গালে চড় বসিয়ে দিলাম।
– আমার সামনে মাথা নিচু করে কাঁদছে।
– কি হলো কাঁদছ কেন?
– আমাকে আরো মারো মারতে মারতে শেষ করে দাও। তবুও বলব তুমি তোমার বুকে অন্য কাউকে নিয়ো না। আমি তোমায় ছাড়া বাচব না রাজ। জান কাল রাত থেকে আমার মনে হচ্ছে আমার দেহে প্রাণ নেই। তাই সারারাত নামায পড়ে আল্লাহর দরবারে তোমাকে চেয়েছি। শেষ রাতে কখন যে জায়নামাজেই ঘুমিয়ে গিয়েছি খেয়াল নেই। ঘুম থেকে উঠে দেখি আটটা বাজে তাই তোমার জন্য ব্রেকফাস্ট রেডি করতে এসে দেখি তুমি অন্য জনের বুকে লেপ্টে আছো। পারিনি সহ্য করতে মনে হচ্ছিল কে যেন আমার বুকে পাথর চাপিয়ে দিচ্ছে তাই পাথরের ঠুকরো দিয়ে গ্লাসে ঢিল ছুড়ি গ্লাস ভাঙার শব্দে তুমি কথাকে ছেড়ে দাও। ঠিক তখনি কোথায় থেকে যেন বিড়াল বের হয়ে আসে।
জানো ছোটবেলা থেকেই কষ্ট ভোগ করে এসেছি। পায়নি বাবা নামক বটবৃক্ষের ছাঁয়া, পায়নি কারো ভালবাসা। বিয়ের পিড়িতে মা হতে পারব না জেনে বর পক্ষরা বিয়ে ভেঙে দেয়। মায়ের আদরে কষ্টটা ভুলে থাকলেও জনম দুঃখী মা টাও আমাকে তোমার হাতে দিয়ে তার দায়িত্ব শেষ করে। সেদিন থেকেই তোমাকে ভালবেসে ফেলি। নিজের স্বামী হিসেবে তোমাকে মনে জায়গা দেয়। এখন যদি আমাকে ছেড়ে যাও তাহলে সুসাইড করা ছাড়া আমার কোন উপায় থাকবে না।
– প্লিজ সাথি আর বলো না। আমি আর শুনতে পাচ্ছি না। জানো সাথি একমনে দু’জনকে জায়গা দেওয়া যায় না। আর সবচেয়ে বড় কথা আমি বিবাহিত। আমার ভালবাসার প্রকৃত হকদার আমার কলিজার টুকরা আমার নিঃশ্বাস। আমার ভালবাসা কথা।আমি পারব না তার আমানতের খেয়ানত করতে। আমাকে যদি তুমি সত্যিই ভালবাসো তাহলে সে ভালবাসার কসম, তুমি নিজের ক্ষতি করো না।
– আর আমি শুধু তুমি নও পৃথিবীর কারো বুকেই সুখী হবো না কথার বুক ছাড়া।
কথা আমার হৃদস্পদন।
– এদিকে রাইসা বাবাই বাবাই করে ডাকছে।
– আমি সাথির রুম থেকে বের হয়ে রুমে আসতেই দেখি কথা খাবার নিয়ে বসে আছে।
-আমাকে দেখেই কথা টেবিলে বসিয়ে হাত ধুইয়ে খাবার দিল। আমি খাবার মুখে দেওয়ার আগেই বলল’ আমি তোমাকে খাইয়ে দেয়?
– কান্নাভেজা কন্ঠে!
– মাথা নাড়িয়ে হ্যাঁ সূচক জবাব দিলাম।
– কথা আমাকে আর রাইসাকে খাইয়ে দিচ্ছে।আমিও কথা আর রাইসাকে খাইয়ে দিচ্ছি। খাওয়া শেষ হলে কথা তার আচল দিয়ে মুখটা মুছে দিল।
– কথা খাওয়া শেষ করতেই বলল’ সাথি না তোমার সাথে থাকে সে আসলো না? এই কথা বলে কথা সাথির রুমে গিয়ে দেখে, সাথি বিছানায় শুয়ে আছে।
– কথা সাথিকে ডাক দিলো ‘ বোন খাবে না তুমি?আমার খেয়াল ছিল না বোন তোমাকে রেখেই খেয়ে ফেলছি আসো তুমি খাবে।
– সাথি চোখের পানি মুছে কথার পিছন পিছন যাচ্ছে।
– কথা খাবার বেড়ে দিয়ে বলল’ বোন খাও তুমি!
– সাথির কাছে আজ কেন যেন কথাকে নিজের বোন বোন মনে হচ্ছে।সাথি খেতে পাচ্ছে না। কথা বিষয়টা খেয়াল করে বলল’ বোন আমি তোমাকে খাইয়ে দিচ্ছি!
– কথা সাথিকে খাইয়ে দিচ্ছে। কেন জানি সাথির নিজের অজান্তেই চোখ দিয়ে অশ্রুর ফোরায়া নেমে আসছে।
– খাওয়া দাওয়া শেষ হলে সবাই মিলে ঘুরতে বের হয়।
– দিনগুলো ভালোই কাটতেছিল।
একদিন রাত্রে শুয়ে আছি কথা আমার মাথাটা তার বুকে নিয়ে চুলের বিলি কেটে দিচ্ছে। চোখজোড়া ঘুমে বিভোর হঠাৎ করে মুখের উপর পানি পড়তেই ঘুম ঘুম ভাব চলে যায়। কথার দিকে চেয়ে দেখি, কলিজার টুকরা টা কাদছে।
– এই রাজকুমারী তুমি কাঁদছ কেন?
– কই কাঁদছি না তো?
– ওই কাঁদছ কেন বলো।
-আমি যে তোমায় অনেক কষ্ট দিয়েছি। সে কথা মনে পড়ছিল।
– আরে পাগলী আমিও তো তোমায় কষ্ট দিয়েছি। আচ্ছা আদর করো তাহলে কষ্ট কমে যাবে।
– আদর সেটা আবার কি করে?
– কেন বুঝনা?
– না তো?
– কেন আজ সকালে রাইসা বলছে না তার একটা ভাইয়া লাগবে। দু’জনে খেলবে।
– ওই এখন দুষ্টমি না।
– তো কি?
– কিছু না ঘুমাও।
– তবে রে, এই কথা বলে কথাকে আপন করে নিলাম।
– পরের দিন সকালে নাজমুল সাহেব খবর দিল সাথিকে একটা ছেলে পছন্দ করেছে! আমাদের যদি পছন্দ হয় তাহলে পাকাপাকি কথা বলে যাবে। আমি নাজমুল সাহেবকে তাদের আসতে বলে কথাকে বললাম ‘ তুমি সাথিকে রেডি করবা ওকে দেখতে আসবে।
– বিকেল বেলা সাথিকে সাজিয়ে পাএ পক্ষের সামনে নিয়ে আসা হলো। পাএ পক্ষদের দেখে মনে হল সাথিকে পছন্দ হয়েছে। হঠাৎ কথা সাথির হাতে চা দিয়ে সবাইকে দিতে বলল’ সাথি কয়েকজনকে চা দিয়েই ট্রী টা টেবিলে রেখে জানলা দিয়ে গিয়ে বমি করে দিল। সাথির অবস্থা দেখে কথা দৌড়ে গেল। সাথি হঠাৎ অজ্ঞান হয়ে মাটিতে পড়ে গেল।
সাথিকে নিয়ে হসপিটালে গেলাম।
– কিছুক্ষণ পর ডাক্তার সাহেব এসে বলল ‘ আপনারা মিষ্টি খাওয়ান আপনাদের ঘরে মেহমান আসতেছে। কথাটা শুনে কথার দুনিয়াটা এলোমেলো হয়ে গেল। তাহলে দাড়োয়ানের কথাই কি সত্যি যে সাথি আর রাজের মাঝে শারীরীক সম্পর্ক চলত। নাহ্ আমার রাজ কখনো খারাপ কাজ করতে পারো না। কথা এসব ভাবতে ভাবতে কেমন যেন জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে আমার দিকে তাকালো!
চলবে””