#গল্প– রক্তের বন্ধন
পর্ব– 01+02
#জিসান আহমেদ রাজ
___বিয়ে বাড়ির গেটে ছোট শিশু কাঁদছে। হতভাগা বাবা হয়ে মেয়েকে , তার-ই মায়ের বিয়ে দেখাতে নিয়ে আসছি! পৃথিবীতে এমন বেদনাদায়ক দৃশ্য আর দু’টি হতে পারে না। মেয়েটা তার মায়ের দিকে, এক নয়নে চেয়ে আছে। মুখ দেখে মনে হচ্ছে আকুতি জানাচ্ছে তার মাকে এমন করে ” মা মা তুমি আমাকে ছেড়ে যেয়ো না। ”
না ছোট বাচ্চার হাজারো আকুতি আজ কথার কর্ণপাত হবে না ।( আমার বউয়ের নাম ছিল কথা)। সে তো নতুন করে জীবন গোঁছাতে ব্যস্ত।
মেয়েটাকে কুলে নিয়ে দাঁড়িয়ে আছি বিয়ে বাড়ির সামনে। চোখ দিয়ে টুপ-টাপ করে পানি পড়ছে। জানি না কতটা কষ্ট পেলে ছেলে মানুষগুলো কাঁদে। কুলে সাতমাসের বাচ্চাটাকে বুকের সাথে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে আছি। শেষ বারের মতো মেয়েটা যেন তাঁর মা টাকে দেখছে । কিছুক্ষণ পর পর কান্না করে দিচ্ছে। জানি না কান্নার আওয়াজ তার মায়ের কান পর্যন্ত পৌঁছিতে পারছে কি না!
আজকে রাইসার মা’টাকে খুব সুন্দর করে সাজানো হয়েছে। লাল শাড়িতে কথাকে মনে হচ্ছে সাক্ষাত পরী। দূর থেকে তাকিয়ে ভালবাসার মানুষটাকে দেখছি। যেমনি দেখেছিলাম কলেজের নবীন বরণ অনুষ্ঠানে। নীল শাড়িতে। যে এসেছিল নীল শাড়ি পরে, আজ সে সমস্ত বন্ধন ছিন্ন করে চলে যাচ্ছে লাল শাড়ি পরে।
যার সাথে একি ছাঁদের নিচে একবছর ছিলাম। পরে ডির্ভোসটা সেই দেয়। কারণ আমি ছিলাম গরীব। প্রথমে ভালবেসে বিয়ে করলেও পরে আর সে ভালবাসা ছিল না। সময়ের সাথে সাথে সব হারিয়ে যায়। বাস্তবতার কাছে ভালবাসা বিয়ের আগের ভালবাসা গুলো বিয়ের পর সস্তা আবেগে পরিণত হয়।
.
এই যে রাজ ভাইয়া, আপনি আর কি চান? কথার জীবনটাতো নষ্ট করে দিয়েছেন। এখন কেন দাঁড়িয়ে আছেন এখানে? লজ্জা করে না। আপনার চড় খাওয়ার পরও স্বাদ মেটেনি? কথা আপনাকে ঘাড় ধাক্কা দিয়ে বের করে দিতে বলছে। আপনি যাবেন? ( নুসরাত)
.
নুসরাতের দিকে চেয়ে দেখি, তার চোখে পানি টলমল করছে। নুসরাত শোন, কথাকে বলিস, ঘাড় ধাক্কা দিয়ে বের করে দিতে হবে না। আমি নিজেই চলে যাচ্ছি। শেষ বারের মতো,কলিজার টুকরাটাকে দেখে নিলাম ।
.
এখন ট্রেনে বসে আছি। রাত প্রায় একটা। মেয়েটা ঘুমাচ্ছে বুকে। বুকের ভেতরটা চিন-চিনে ব্যথা করছে। হঠাৎ রাইসা ঘুম থেকে উঠে কান্না করতে লাগল। ব্যাগে থাকা ফিডারের বোতলটা রাইসার মুখে ধরলাম! খাচ্ছে না, আরো বেশি করে কান্না করছে।
.
পাশের সিটে বসে থাকা আঠারো কিংবা ঊনিশ বছরের একটা মেয়ে বলে উঠলো” আপনি তো মেয়েটা চুরি করে আনেননি? ”
.
মেয়েটার কথা শুনে, ট্রেনের ওই বগিতে থাকা অন্য যাএীরা আমার দিকে কেমন করে যেন তাকালো।
পাশ থেকে এক বয়স্ক মহিলা বলে উঠলো – সত্যিই মনে হয় ছেলেটা, বাচ্চাটাকে ছেলেটা চুরি করে এনেছে মুক্তিপণ আদায়ের জন্য! মার ও খেয়েছে। গালে এখনো কারো হাতের পাঁচ আঙুলের ছাপ বসে আছে।
সামনে স্টেশন আছে। পুলিশকে জানানো দরকার। পুলিশের ডান্ডা শরীরে পড়লেই সব বলে দিবে।
.
আপনারা কি বলছেন? আমার কলিজার টুকরাকে কেন চুরি করবো। কোন বাবা তার মেয়েকে চুরি করে?
.
পাশে বসে থাকা মেয়েটা বললো- তাহলে বাচ্চার মা কোথায়? এতটুকু বাচ্চার মা সাথে আসবে না এমন তো কোন কথা নয়। বলেন বাচ্চার মা কোথায়। আর সত্যি বলবেন, তা না হলে পুলিশকে সব বলে দিবো। ইশ বাচ্চাটা তার মায়ের জন্য কীভাবে কান্না করছে!
পাশ থেকে একটা বয়স্ক লোক বলে উঠল মেয়েটাকে” মামনি বাচ্চাটাকে তুমি কুলে নাও তো, সামনে স্টেশনে দেখছি, কি করা যায়”!
.
-এদিকে রাইসা আমার কুলে কান্না করেই যাচ্ছে।
– পাশে থাকা মেয়েটা, আমার কুল থেকে যখনি রাইসাকে নিয়ে নিলো। আমার মনে হচ্ছে কলিজাটা কেউ ছিড়ে নিয়ে নিল।
.
-আপু প্লিজ বিশ্বাস করেন। এটা আমার মেয়ে।
-বুঝলাম আপনার মেয়ে, তাহলে বাচ্চার মা কোথায়। বাচ্চাকে কোথায় নিয়ে যাচ্ছেন?
.
–
শুনবেন?তাহলে রাইসাকে আমার কুলে দেন। তা নাহলে আরো বেশি কাঁদবে। মেয়েটার কুলে রাইসা আরো বেশি কাঁদছে।
রাইসাকে মেয়েটার কুল থেকে নিয়ে গালি মুখে চুমু দিতেই কান্না থামিয়ে দিল। রাইসাকে বুকে জড়িয়ে নিয়ে বললাম- বাচ্চার মা এখন তার বাসর ঘরে।
.
আমার কথা শুনে সবাই বিস্ময়ের দৃষ্টিতে তাকালো। রাইসা এখন কান্না থামিয়ে সবার দিকে চেয়ে আছে।
যাকে নিজের থেকেও বেশি ভালবাসলাম, সে মানুষটা আজ অন্যের বাসর ঘরে।আর গালে যে পাঁচ আঙ্গুলের দাগ দেখতে পাচ্ছেন!
সেটা আমার ভালবাসার পুরস্কার। পুরস্কারটা আমারি ভালবাসার মানুষ দিয়েছেে।
তাহলে শুনেন! বাকিটা,
আজ থেকে দু’বছর আগে।
মেসে শুয়ে আছি। রুমমেট একটা ছেলে বললো” রাজ ভাইয়া কথা আপু এসেছে।” আচ্ছা তুই আসতে বল কথাকে। কথা রুমে এসেই আমাকে জড়িয়ে ধরে। এমন ঘটনায় আমি অনেকটা হতভম্ভ হয়ে যায়। এই কথা কাঁদছো কেন? এই পাগলী কি হয়েছে বলবে তো?
.
রাজ বাবা বাসা থেকে বিয়ে ঠিক করেছে। আমি তোমাকে ছাড়া বাঁচবো না। তুমি আমাকে বিয়ে করো।
.
কথা এখন কিভাবে সম্ভব? তুমি জানোই তো আমার টিউশনি করে পড়ালেখা চলে। তুমি বরং তোমার বাবার পছন্দ করা ছেলেকে বিয়ে করে নাও! বুকের ভেতর কষ্টকে চাঁপা রেখে কথাটা বললাম।
-রাজ আমি পালিয়ে এসেছি। তুমি যদি বিয়ে না করো তবে আমার লাশ বাড়িতে যাবে। আমি নুসরাত আর কণাকে সব বলেছি ওরা কাজি অফিসে থাকবে। বলো আমায় বিয়ে করবে তো?
-আমি মাথা নাড়িঁয়ে হ্যাঁ সূচক জবাব দিলাম। কথা আমাকে বাহির থেকে একপাতা টিপ নিয়ে যেতে বলেছিল। টাকার অভাবে সেটিও নিতে পারিনি।বন্ধুদের সহায়তায় বিয়েটা হয়ে যায়।
বাসর রাতে, কথা আমাকে তাঁর মাথা ছুঁয়ে প্রমিজ করায়। জীবনে তাকে ছাড়া অন্য কাউকে যেন ভালো না বাসি। আমি যেন তাকে কষ্ট না দেই। আমি তাই করেছিলাম। বাসর রাতে দুজন -দুজনের পাশে সারাজীবন থাকার ও ওয়াদা করেছিলাম।
.
– দিনগুলি ভালোই কাটতেছিল। কিছুদিন পর কথা অসুস্থ হয়ে পড়লো। ডাক্তারের কাছে গিয়ে জানতে পারি কথা মা হতে চলছে আর আমি বাবা। ভালবাসায় ঘরটা যেন ভরে উঠলো।
কিন্তু হঠাৎ কালবৈশাখী ঝড়ে সব কিছু এলোমেলো হয়ে গেল। কথা কিসের জন্য জানি আমাকে ভুল বুঝলো। শুনলাম সেদিন সকালে তার বাবাও এসেছিল। তার বাবার সাথেই সে চলে যাবে। আমি তাকে ঠকিয়েছি। তার বাবার সাথে যাওয়ার আগে সে একটা চিরকুট লিখে বাড়িওয়ালাকে দিয়ে গিয়েছিল।
.
অফিস থেকে এসে দেখি দরজায় তালা দেওয়া। বাড়ি ওয়ালা একটা চিঠি ধরিয়ে দিয়ে বললো “কথা আপু এটা আপনি আসলে এটা দিতে বলেছে “!
.
চিরকুটটা খুলতেই চোখ কোণের অশ্রু ভীড় করতে লাগল! চিঠির শেষ কথা ছিলো,যদি কখনো ভালোবেসো তাহলে আমাকে খুঁজতে এসো না! আমি বাবার কাছে চলে গেলাম।
ইতি,
কথা।
.
তার পর আর যায়নি। কিন্তু যখন জানতে পারলাম কথার বাবা,আমার সন্তানকে মেরে ফেলবে তখন আর থাকতে পারিনি। রাইসা জন্ম নেওয়ার সাথে নাথেই, নার্সকে বলে রাইসাকে চুরি করি। আজ কথার বিয়ে, তাই শেষ বারের মতো, মেয়েটাকে তার মাকে দেখিয়ে নিয়ে আসলাস। আর আমাকে দেখেই, গালে ভালোবাসার প্রতিদান দিয়েছে।
.
সামনে সিটে বসে থাকা মেয়েটা কাঁদছে। রাইসাকে আমার কুল থেকে নিয়ে কপালে চুমু এঁকে দিল।
ট্রেনের ওই বগিতে থাকা সবাই কাঁদছে। সামনে স্টেশনে সবাইকে বলে যখন নেমে পড়ি, তখন মেয়েটা এসে গলা থেকে একটা স্বর্ণের চেইন খুলে রাইসার গলায় পড়িয়ে দিয়ে চলে গেল। আমি অজানা গন্তব্যে হাঁটছি। চোখ থেকে গড়িয়ে পানি পড়ছে।
.
প্রায় দু’বছর পর। এখন রাইসা হাঁটতে পারে! কথা বলতে পারে। এদিকে আমি মোটামুটি ভালো বেতনের চাকরি করি। একটা বেসরকারি চাকরির আবেদন করেছিলাম। বেতনও অনেক বেশি। ইনশা-আল্লাহ্ সেখান এ প্রাথমিক পরীক্ষায় এলাও হওয়ার পর ভাইবার জন্য ডাকে।
.
ভাইবা পরীক্ষার জন্য বসে আছি। হঠাৎ আমার ডাক পড়ল।
.
আমি দরজায় গিয়ে বললাম’ ভেতরে আসতে পারি?
.
-আসেন মিস্টার রাজ।
কণ্ঠটা খুব পরিচিত লাগছে। মনে হচ্ছে খুব চেনা। মাথাটা তুলে তাকাতেই শরীরটা অবশ হয়ে আসলো। এতো বছর পর কথাকে এভাবে দেখতে পাবো ভাবতে পারিনি।
#রক্তের_বন্ধন
পর্বঃ০২
-ভাইবা পরীক্ষার জন্য বসে আছি। হঠাৎ আমার ডাক পড়ল। আমি দরজায় গিয়ে বললাম’ ভেতরে আসতে পারি?
.
-আসেন মিস্টার রাজ।
কণ্ঠটা খুব পরিচিত লাগছে! মনে হচ্ছে খুব চেনা। মাথাটা তুলে তাকাতেই শরীরটা অবশ হয়ে আসলো। এতো বছর পর কথাকে এভাবে দেখতে পাবো ভাবতে পারিনি। চেহারাটা সেই আগের মতোই আছে। মায়াবী মায়াবী চেহারাটা এখন আমার কলিজাটা ফোঁড় করে দিচ্ছে। নিজেকে সামলে নিয়ে বললাম” বসতে পারি?
– জ্বি বসেন।
-অনেক গুলো প্রশ্ন করলো। সব গুলো প্রশ্নের জবাবই সঠিক দিলাম। পরিশেষে বললো ” ভালবাসা কী? ”
– মৃদু হেসে বললাম – ভালবাসা হচ্ছে তীব্র মরুর বুকে একটু গাছের ছায়া! ভালবাসা হচ্ছে তীব্র শীতের মাঝে নিজের গায়ের চাদরটা আপন কারো গায়ে জড়িয়ে দেওয়া। শুকনো মাটির বুকে লাঙল চাষ করে যে ফসল কৃষক উৎপন্ন করে তার শীষে উঁকি দেয় ভালবাসা। কেউ দূরে সরিয়ে দিলেো তাঁর স্মৃতিটুকুকে বুকে আগলে রেখে বেঁচে থাকার নামই ভালবাসা।
– থাক যথেষ্ট হয়েছে। আপনার সমস্ত ডিটেলস দেখেছি! খুব ভালো আমাদের কোম্পানির জন্য আপনার মতো লোক দরকার। আপনি এর আগে, কতটাকা বেতন পেতেন?
.
– ২০ হাজার টাকা পেতাম !
.
– আপনাকে ৫০ হাজার টাকা দিবো। আর আপনার প্রয়োজনে,অগ্রিম টাকাও নিতে পারবেন । তবে শর্ত হলো, ২ বছর কন্টাক থাকবে, এর মাঝে অন্য কোন জায়গায় যেতে পারবেন না। আর আমি যা বলবো তাই করতে হবে। যদি পিয়নের কাজ করতে হয় তাই করতে হবে! চোখমুখ লাল করে।
-ম্যাডামের শর্ত শুনে বুঝতে বাকি রইলো না, আমাকে অপমানিত করার জন্যই এই অফার। বিয়ের পর ডির্ভোস দিয়েও তার মনের জেদ মেটেনি।
– কি হলো কি ভাবছেন?
– নাহ্ ম্যাডাম। আমার দ্বারা আপনার অফার গ্রহণ করা সম্ভব নয়! টেবিল থেকে ফাইলটা নিয়ে চলে আসলাম। রাস্তা দিয়ে হাঁটছি আর কথার কথা মনে মনে ভাবছি। মানুষটা আর পরির্বতন হয়নি।
রাইসা তার জন্য আইসক্রিম নিতে বলছে, তাই আইসক্রিম নিয়ে বাসায় গিয়ে ডাক দিলাম। আমার রাইসা মামনি কোথায়। কোন সাড়া আসছে না। রুমের দরজাটাও খোলা। রুম যেতেই দেখি রাইসা ফ্লরে পড়ে আছে। হাত থেকে আইসক্রিমটা পড়ে গেল। দৌড়ে রাইসাকে বুকে জড়িয়ে নিলাম। কোন কথা বলছে না। তাড়াতাড়ি হসপিটালে নিয়ে এডমিট করলাম। রাইসার বেডের সামনে বসে আছি, রাইসা মিটিমিটি করে চোখ খুললো।
.
-আসসালামু আলাইকুম বাবাই।
– ওলাইকুম সালাম আমার কলিজার টুকরা।
– ছিঃ বাবা সালাম দিলে কাঁততে হয়? আত বাবা আমি এখানে কেন?
– মা তুমি এখন হসপিটালে।
– জানো বাবাই আমাত না, আনেত কষ্ট হচ্ছিল যখন তাব্য আমাতে বললো” তোত মা নেই, তোত সাথে বন্ধুত্ব করবো না”। আর্তা বাবাই সবাল মা আতে আমাত মা নেই কেন? বাবা মা কোতায় এতটা মা আমাত জন্য কিনে নিয়ে আতবা। বলো বাবা আতবে তো? জানো সবাল মা সবাইকে কত্তো আদত করে, তাব্যকে ওর মা কতো আদত করে। বাবাই মা কি আমাত সাতে রাত করেছে। মা কি আমার সাথে রাগ করেছে? বাবা আমি কি পঁতা সবাই মা আতে আমার মা নেই। তুমি যতি মা’কে নিয়ে না আসো, আমি আল্লাহর কাছে চলে যাবো।
– রাইসার কথা শুনে চোখ বেয়ে টপটপ করে পানি পড়ছে। ছোট মেয়ে শুদ্ধভাবে কথা বলতে পারে না। অথচ মা যে কতটা অভাব সে বুঝতে পারছে। আগে জানতাম,মেয়েদের মায়া বেশি। কিন্তু এতটুকু একটা বাচ্চাকে যে মা ভুলে থাকতে পারে।
– বাবাত তুতি কাঁদতো কেত। তুতি কাঁদতে আমাত না খুত কস্ত হয়! তুতি আর কাঁততে না। আমি তুতাকে আর মার কতা বলবো না। তুতি যদি আবার কাঁতো আমি আল্লাহর কাতে চলে যাত।
– টান দিয়ে বুকে টেনে নিয়ে নিলাম। চুপ আর কোনদিন আল্লাহর কাছে যেতে চাইবি না।
– তাতলে তুতি কাঁতো কেন?
– মেয়েটাকে বুকে নিয়ে কাঁদছি। কখন যে রাইসা ঘুমিয়ে গেছে খেয়াল নেই!
.
-স্যার ডাক্তার সাহেব আপনাকে ডাকছে।
-নার্সকে বললাম আচ্ছা!
– স্যার আসতে পারি।
– জি! আসেন রাজ সাহেব।
– ডাক্তার রির্পোট হাতে নিয়ে বললো” মিঃ রাজ পৃথিবীতে যেমন আল্লাহ্ তায়ালা নানান রোগ দিয়েছে। তেমনি তা ভালো করার উপায় ও দিয়েছে। আপনি ভেঙে পড়বেন না। আপনার মেয়েটার একটা কির্ডনি ড্যামেজ হয়ে গেছে! আরেকটা হওয়ার পথে। ”
– ডাক্তারের কথাটা শুনা মাএই পায়ের তলার মাটি সরে গেল। চিৎকার দিয়ে বলতে ইচ্ছে করছে হে আল্লাহ্ কি এমন অপরাধ করেছি, শেষ অবলম্বন টাকে কেড়ে নিতে চাচ্ছো?
– মিঃ রাজ আপনি কাঁদছেন কেন? ঠিকমতো চিকিৎসা করলে, ৯০ ভাগ সুস্থ হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
– ডাক্তার চিকিৎসা করতে কতটাকা লাগবে?
– প্রায় ১০ লাখ তো লাগবেই!
– এতো টাকা কোথায় পাবো! না রাইসার কিছু হলে আমি বাঁচবো না যে ভাবেই হোক রাইসাকে বাঁচাতেই হবে!
– ডাক্তার রাইসাকে রিলিজ দিয়ে দিল। কয়েকদিন পর পর, ট্রিটমেন্ট করতে নিয়ে আসতে হবে।
– রাইসাকে নিয়ে বাসায় আসার পরেই, টাকার চিন্তাটা মাথায় ঘুরপাক খাচ্ছে। তখনি কথার, কথাটা মনে হলো।পরের দিন অফিসে গিয়ে যোগাযোগ করলাম।
.
– আমাকে আমার কাজ বুঝিয়ে দেওয়ার আগে একটা স্টাম্প এ সাইন করিয়ে নিলো। চুক্তি নামাটা আর পড়িনি। না দেখেই সাইন করে দিলাম।
– কথা তাঁকে ম্যাডাম বলে ডাকতে বললো। আর বললো’ সব সময় আমাকে আপনি করে বলবেন। আগের কিছু আমি মনে রাখতে চায়নি, আর চাইও না। অফিসের কেউ যেন আমাদের সে সম্পর্ক না জানে” জানলে আপনাকে চাকরি থেকে বরখাস্ত করা হবে, এবং জরিমানা দিতে হবে”।
– আপনার সব শর্তে রাজি, আমাকে অগ্রিম ২ লাখ টাকা দিতে হবে!
– হুম জানতাম, টাকার জন্যই আবার আসছেন। আপনার মতো ছোটলোক কিসের জন্য আবার আসতে পারে তা আমার বেশ জানা আছে। টাকা কালকের মাঝে পেয়ে যাবেন। আপনার ডিউটি হচ্ছে, আমার সাথে সবসময় থাকবেন। আর টুক-টাক অফিসের কাজ করবেন।
– আচ্ছা!
– মিস সাথি জিসান সাহেবকে তার ডেস্কে নিয়ে কাজ বুঝিয়ে দেন।
.
– সাথি দরজায় এসে বললো ” ম্যাম আসতে পারি?
– জ্বি আসুন।
– সাথি রুমে ঢুকতেই চমকে গেলাম! এই সেই মেয়ে যাকে দু’বছর আগে ট্রেনে দেখেছিলাম। মেয়েটার নাম জানা হয়নি।
– সাথি আমাকে দেখে স্তব্দ হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। কথা একের পর এক কথা বলেই যাচ্ছে। সাথীর অন্য কোন দিকে খেয়াল নেই।
– আপনার মেয়েটা কেমন আছে?
– কী বলছেন, সাথি আপনি? মেয়ে মানে?
– ম্যাডামের কথায় সাথির হুশ ফিরলো। সাথী চমকে উঠে বললো” সরি ম্যাম”। চলেন মিষ্টার রাজ।
– সাথির সাথে টুক-টাক কথা হলো।
-সপ্তাহ খানেক পর, অফিসে বসে কাজ করছি! হঠাৎ পিয়ন এসে বললো- স্যার আপনাকে ম্যাম যেতে বললো”।
– আমি কথার রুমে গিয়ে দরজা ধাক্কা দিতেই দরজাটা খুলে গেল!
– রুমে যেতেই এক গাধা বকা! কি কাজ করছি? এখন যদি বিলটা ক্যান্সেল হয়ে যায়!
– আমি চুপ করে আছি, কারণ ম্যাডামেই বলেছিল ওইরকম করতে। এখন তিনিই দোষ দিচ্ছেন।
– কি হলো মাথা নিচু না করে বসে না থেকে, আমার সামনে থেকে দূর হোন। যত্তোসব।
– আমি রুম থেকে বের হতেই সাথি এসে বললো- ম্যাডাম কি কিছু বলেছে? আপনার মন খারাপ লাগছে?
– ঠোঁটের কোণে হাসির রেখা রেখে বললাম না তো!
– আচ্ছা দুপুরে আমার সাথে খাবেন কেমন?
– সরি মিস সাথি, আমি মেয়েকে ছাড়া কখনো খায় না। এই জন্যই অফিসের কাছেই বাসা নিয়েছি।
– বিয়ে করেন নি এখনো?
– মনে কাউকে জায়গা দিতে পারিনি। তাই বিয়েটাও করিনি। আর রাইসাই আমার সব।
– সত্যি, আপনার স্ত্রীটা অনেক ভাগ্যবতী ছিল। যাই হোক যদি কেউ রাইসার মম হতে চায়। রাইসাকে যদি নিজের মেয়ে করে রাখতে চায় বানাবেন?
– না, রাইসার মা-বাবা দু’টোই আমি। আর কোন স্বপ্ন দেখতে চায় না। স্মৃতিটা নিয়েই শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করতে চাই।
– আচ্ছা কালকে অফিসে রাইসাকে নিয়ে আসেন কেমন? খুব দেখতে ইচ্ছে করছে।
– আচ্ছা!
– পরের দিন রাইসাকে নিয়ে অফিসে আসতে অনেকটা লেট হলো। রাইসাকে নিয়ে ডেস্কে আসার সাথে সাথেই সাথী এসে রাইসাকে কুলে নিল।
– আসসালামু আলাইকুম। তুতি কে আমাত কুল নিলে?
– রাইসার তুতলামি কথাগুলো বেশ ভালো লাগলো।
– ওলাইকুম সালাম দিয়ে। সাথি রাইসার দু’গালে চুমু দিয়ে বললো” বলো তো আমি কে? ”
– তুতি আমাত মা।বাবাই বলেতিল আমাত মার কাতে নিয়ে যাবে।
– সাথী আমার দিকে, লজ্জামাখা মুখ নিয়ে কেমন করে যেন তাকিয়ে বললো রাইসাকে ” হুম আমি তোমার মা আজ থেকে কেমন”।
– সতি তুতি আমাত মা, আমাতে ছেতে যাবে নাতো?তুতি আমাত চলতেট কিনে দিবে তো?
– হুমম,অনেক চলকেট দিবো?
– তাতলে,তুতি আমাত মা।
– আমি রাইসার কথা শুনে হাসছি। তখনি পিয়ন এসে ম্যাডামের রুমে যেতে বললো।
-ম্যাডামের রুমে যাওয়ার সাথে সাথেই বললো” দেখেন তো কয়টা বাজে? ”
– ঘড়ির দিকে তাকিয়ে বললাম ১১ টা ১৫ বাজে!
– তা তো দেখতেই পাচ্ছি? আর হ্যাঁ অফিসটা আপনার বাবার নয়। যে আপনার মর্জি মতো আসবেন। আর এটা পার্ক নয়। যে অাপনার কলিং নিয়ে প্রেমালাপ করবেন। চরিএটা এখনো শুধরাননি!
-ম্যাডাম, সরি। আর হ্যাঁ আপনি যা ভাবছেন তা ভুল ভাবছেন।
– ঠাস! এই ছোটলোক চরিএহীন, আজকেই তুই আমার অফিস থেকে বেরিয়ে যাবি! তুই মিস সাথীর সাথে হেসে হেসে কি বললি?
– ম্যাডাম ক্ষমা করে দেন। তবুও অফিস থেকে ডির্সচাজ করবেন না!
– আমি কোন অযুহাত শুনতে চায় না। এই মুহূর্তে বের হয়ে যাবেন।
– চোখের পানি আর লুকাতে পারলাম না। যাকে এতোটা ভালবাসলাম। তার কাছে আজ চরিএহীন। এদিকে কখন যে রাইসা পিছনে এসে আমাকে চড়ো মারতে দেখে ফেলেছে তা খেয়াল করিনি।
– রাইসা কথার শাড়ি ধরে টান দিয়ে বলতে লাগলো!
“ছিঃ তুতি এতো পঁতা কেন আমাত বাবাই কে মেরেছ। তুতি দেত না বাবাই কাঁততে। তুতি জানো বাবাই কাঁততে আমাত খুত কস্ত হয়। আল্লাত তোমার পাঁত দিবে! সরি বতো বাবাই কে!, তুতাকে কোতায় যেন দেখিছি!হ্যাঁ মনে পড়ছে! জানো তুতার ছবি বাবাই বুকে নিয়ে কাঁতে। প্রতিরাতে কাঁতে!
-রাইসার মুখে এমন কথা শুনবে কথা কখনো ভাবেনি। কথা করুণ দৃষ্টিতে আমার দিকে তাঁকালো।
– এই রাইসা মা আমার কি সব বলছিস। ওকে কেন বকা দিচ্ছে তুমি?
-মামনি,বাবাই আরো কি কি করে বলো তো?
– মনে মনে বলছি আজ আমার কপালে কি যে আছে আল্লাই জানে। কারণ রাইসা তো সব দেখে কথার ছবিটাকে বুকে নিয়ে কি সব বলি!
#চলবে?