রক্তের বন্ধন পর্বঃ 05+06

0
1123

#গল্প:- রক্তের বন্ধন
পর্বঃ 05+06

– বাড়িতে আসতেই কেন জানি বারবার রাইসার রক্তমাথা মুখটা ভেসে উঠতে লাগল। নাহ্! কাজটা একদম ঠিক করিনি! আচ্ছা রাজ যে বললো, রাইসা আমার মেয়ে! এমনই কিছু একটা বলেছে। হঠাৎ কথার মনে হলো যখন কথা গর্ভবতী রাজ কথার মাথাটা বুকে নিয়ে বললো ” জানো কথা, আমাদের মেয়ে হলে নাম রাখবো, রাইসা!

– কথাটা মনে পড়তেই কথা চমকে উঠলো! তাহলে কি রাইসা আমার মেয়ে। সত্যিই যদি রাইসা তার মেয়ে হয়। মা হয়ে কীভাবে তার নিজের মেয়েকে মারলো। নাহ্ আমার মেয়ে তো জন্ম নেওয়ার সময় মারা গিয়েছে। এসব ভাবতে ভাবতে কখন যে ঘুমিয়ে গেল খেয়াল নেই।

-এদিকে ডাক্তার রাইসাকে দেখে বললো ‘ পেশেন্টের অপারেশনটা আগামী মাসের মাঝে করতে হবে। নইলে যেকোন সময় যেকোন অঘটন ঘটে যেতে পারে।

-ঠিক আছে স্যার। আমি এ মাসের মাঝেই রাইসার অপারেশন করিয়ে নিবো। রাইসাকে কি এখন নিয়ে যেতে পারবো?

– হুমম। নতুন করে কিছু মেডিসিন লিখে দিচ্ছি। সেগুলো পাশের দোকান থেকে কিনে নিবেন।

– আচ্ছা! ডাক্তার চলে গেলে। আমার পিছনে তাকিয়ে দেখি সাথি দাঁড়িয়ে আছে। আপনি?

– হ্যাঁ,আমি।

– কেন এসেছেন?

– আমার খুব আপনজন হসপিটালে আছে। তাই এসেছি।

– আপন মানে?

– আমার মেয়েকে দেখতে এসেছি।

-আপনার মেয়ে মানে?
– রাইসা আমার মেয়ে। এখন সরেন। আমি আমার মেয়ের কাছে যাবো।
– সাথি আমাকে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে। রাইসার কাছে চলে গেল।

– সাথি রাইসার মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছে। হঠাৎ রাইসা ঘুম থেকে জেগে উঠলো। সাথিকে মাথায় হাত বুলিয়ে দেওয়া দেখে। রাইসা সাথিকে জড়িয়ে ধরে বললো’ মম আমাকে ছেড়ে যাবে না তো?’ দেখো মম ওই আন্টি বাবাইকে বকা দিয়েছে। তাই আমিও বকা দিয়েছি। জানো বাবাকে যখন বকা দিয়েছি। তখন না আমার খুব কষ্ট হয়েছে। দেখ আমার ঠোঁট কেটে গিয়েছে।

– রাইসার মুখে এমন কথা শুনে সাথি নিজের অজান্তেই কেঁদে ফেলল! হুমম, আমি আমার রাইসাকে ছেড়ে কোথাও যাবো না।

– সত্যি বলছো মম?
– হুমম! সত্যি সত্যি সত্যি। তিন সত্যি।

– বাহির থেকে ওষধ নিয়ে এসে সাথিকে দেখি রাইসার সাথে কথা বলছে।

– মামনি চলো বাসায় চলে যাবো!

– হুমম বাবাই। জানো আমার না এখানে দমঃবন্ধ হয়ে আসে। চলো বাসায় চলে যাবো।

– রাইসাকে নিয়ে বাসায় চলে আসলাম। রাতে রাইসা ঘুমিয়ে গেলে। বিছানায় নিচে থেকে কথার ছবিটা বের করে দেখছি। ছবিটাতে কথাকে একদম নিঃশ্বাপ মনে হচ্ছে। এই মানুষটাই যে তার মেয়েকে নিষ্ঠুর ভাবে মেরেছে, বিশ্বাসই হচ্ছে না। বাকা চোখ গুলো না বলা কথা বলে যাচ্ছে। মনের কোণে কত শত স্মৃতি ভেসে উঠছে।
– বাবাই তুমি কাঁদতেছে কেন?
– হঠাৎ রাইসার কথা শুনে চমকে গেলাম। চোখের পানি মুছে বললাম’ কইরে মা কাঁদছি না তো?’

– বাবাই জানো না, যারা মিথ্যা বলে। তাদের আল্লাহ্ তায়ালা পাপ দেয়। তুমি মিথ্যা বলো না। বাবাই ওই আন্টিটা মেরেছে আমায়। আমি কিছু মনে করিনি। জানো বাবাই, ওই আন্টি যখন তোমাকে মেরেছে আমার না খুব কষ্ট হয়েছে। আমি ওইটাকে কোনদিন আর মম ডাকবো না। তুমি কেঁদো না বাবাই। আচ্ছা বাবাই ‘ তোমাকে আন্টি মাইর দেওয়ার পরও কেন তুমি আন্টিকে ছবি বুকে নিয়ে কাঁদো?

– রাইসার কথাতে আমি বাকরুদ্ধ হয়ে গেছি। রাইসাকে বুকে নিয়ে শুধু কাঁদছি। কাঁদা ছাড়া যে আমার আর কোন উপায় নেই। আমি কিভাবে বলি রাইসাকে কথায় তার জন্মদাএী মা! কিছুক্ষণ পর মেয়েটা আমার বুকে চুপটে করে ঘুমিয়ে গেল। কাঁচের জানালা ভেদ করে। চাঁদের জ্যোৎস্না মেয়েটার মুখে এসে পড়ছে। আমি রাইসার মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছি!

– পরের দিন সকাল সকাল অফিসে চলে গেলাম। অফিসে যাওয়ার পর পিয়ন এসে বললো,’স্যার আপনাকে ম্যাডাম তাঁর ডেস্কে যেতে বলেছেন ‘।

– আমি ফাইলের কাজটা শেষ করে ম্যাডামের কাছে নিয়ে গেলাম।
– ম্যাডাম ফাইলটা দেখে বললো ‘ রাজ সাহেব বসেন?’

– ধন্যবাদ ম্যাডাম।

– ধন্যবাদ দিতে হবে না। আর আমার কালকের ব্যবহারের জন্য সরি। রাইসা এখন কেমন আছে?

– জ্বী। আলহামদুলিল্লাহ্ ভালো।

– রাইসাকে নিয়ে আসতেন?

– ম্যাডাম বড় লোকের রক্তের সাথে মিশে যেন না যায়। সে ভয়ে নিয়ে আসিনি।

– কি বলছেন আপনি?

– সরি ম্যাডাম। আমি আসি এখন।

– আচ্ছা যান।

– ডেস্কে বসে আছি। ফোনের ওয়েলপেপারে সেভ করা রাইসার ছবিটা দেখছি।

– টুকি!

– মানে?

– মনোযোগ নষ্ট করলাম। আচ্ছা বাদ দেন। আমার মোয়ে কেমন আছে?
– আপনার মেয়ে মানে?
– কেন জন্ম না দিয়ে কি মা হওয়া যায় না?
– জন্ম দিয়েই কেউ মা হতে পারে না। আর আপনি তো,! আমার কথাতে সাথির চোখে পানি দেখতে পেলাম। চোখের পানি মুছে দেওয়ার জন্য হাতটা বাড়িয়েও। ফিরিয়ে নিয়ে আসলাম।

– দুপুরে খাবার সময় ম্যাডাম ঘোষণা দিলেন আমরা অফিসের সবাই কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতে যাবো।
– প্রথমে না করেও, পরে রাজি হয়ে যায়। বিকেল অফিস শেষ করে বাসায় এসে দেখি, রাইসা বসে বসে টম এন্ড জেরি দেখছে।

– আমাকে দেখে দৌড়ে এসে কুলে চড়ে বসল। বাবাই তুমি একা কেন? মম আসেনি। মম বলেছেনা তোমার সাথে আমাদের বাসায় আসবে।

– হুমম আসবে তো। মম আসবে। এখন আইসক্রিম খেয়ে নাও। রাইসা আইসক্রিম খাচ্ছে এমন সময়ফোনটা ক্রিং ক্রিং করে বাজছে। ফোনটা রিসিভ করতেই।

– ওপাশ থেকে সাথি কাঁদছে।

– হ্যালো, কাঁদছেন কেন?
– রাজ মা না কেমন যেন করছে! তুমি প্লিজ বাসায় আসো। ( সাথী)

-রাইসাকে নিয়ে সাথীদের বাসায় গিয়ে দেখি সাথি তার মাকে ধরে কাঁদছে।

– পিছন থেকে গিয়ে সাথির মাথায় হাতটা রাখতেই। সাথি আমাকে জড়িয়ে ধরে কান্না করে দিল। সাথিকে ছাড়িয়ে বললাম কান্না করো না। কিছুই হবে না আন্টির। আমি আন্টির পাশে বসতেই। আন্টি বললো” বাবা রাজ, তোমাকে কিছু বলার ছিল!

-জ্বি আন্টি বলেন কি বলবেন?
– বাবা রাজ, আমি তোমার সম্পর্কে সব জানি। জানো বাবা আমার মেয়েটা ছোটবেলায় তার বাবাকে হারায়। দু’বছর আগে তার বিয়ের কথা চললেও, কোন ভাবে সাথি জানতে পারে সে আর কোন দিন মা হতে পারবে না। বরপক্ষের লোকদের সত্যটা বললে। তারা বিয়ে ভেঙ্গে দেয়। বাবা আমার মেয়েটা তোমাকে বড্ড বেশি ভালবাসে। আমি মা হয়ে সবকিছুই বুঝি। আমার মেয়ে তো কোনদিন মা হতে পারবে না। রাইসাকে সারাজীবন মাতৃত্বের বন্ধনে বেঁধে রাখবে। বাবা আমি হয়তো আর বাঁচবো না। তুমি আমাকে কথা দাও আমার মেয়ের দায়িত্বটা তুমি নিবে? আমার মেয়েটাকে একা এখানে কিভাবে রেখে যায়।

– আমি কি বলবো, সে ভাষা জানা নেই। আজও যে আমার মন-প্রাণ জুরে কথার বসবাস। আমার হৃদয়ে কথা ছাড়া আে কারো জায়গা নেই! পাশে তাকিয়ে দেখি সাথি কাঁদছে। হঠাৎ সাথি তার মা’কে জড়িয়ে মা বলে চিৎকার মারল। আন্টির মুখটা চাদরে ডেকে দিলাম। সাথি অনেক কান্না করছে। যথা-রীতি আন্টিকে দাফন করে, সাথিকে আমাদের বাসায় নিয়ে আসলাম। সেদিন আর অফিসে যায়নি। পরের দিন ঘুম থেকে উঠে দেখি। সাথি চা করে টেবিলে রেখে গেছে। চা টা শেষ করে কিচেনের দিকে তাকিয়ে দেখি সাথি রান্না করছে। সাথে রাইসাও আছে। সাথি আর রাইসা রান্না করে টেবিলে খাবার সাজিয়ে দিল। আমি খাবার বসলে সাথে সাথিকেও বসতে বলি। সাথি যখন রাইসার মুখে খাবার তুলে দিচ্ছে তখন দরজার দিকে তাকিয়ে দেখি কথা ম্যাডাম দাঁড়িয়ে আছ

পর্বঃ 06

পাশে তাকিয়ে দেখি সাথি কাঁদছে। হঠাৎ সাথি তার মা’কে জড়িয়ে মা বলে চিৎকার মারল। আন্টির মুখটা চাদরে ডেকে দিলাম। সাথি অনেক কান্না করছে। যথা-রীতি আন্টিকে দাফন করে, সাথিকে আমাদের বাসায় নিয়ে আসলাম। সেদিন আর অফিসে যায়নি। পরের দিন ঘুম থেকে উঠে দেখি। সাথি চা করে টেবিলে রেখে গেছে। চা টা শেষ করে কিচেনের দিকে তাকিয়ে দেখি সাথি রান্না করছে। সাথে রাইসাও আছে। সাথি আর রাইসা রান্না করে টেবিলে খাবার সাজিয়ে দিল। আমি খাবার বসলে সাথে সাথিকেও বসতে বলি। সাথি যখন রাইসার মুখে খাবার তুলে দিচ্ছে তখন দরজার দিকে তাকিয়ে দেখি কথা ম্যাডাম দাঁড়িয়ে আছে। বুকের ভেতরটা ছ্যাঁত করে উঠল। কথার চোখে স্পষ্ট পানি দেখতে পেলাম।

– ‘আসসালামু আলাইকুম’
‘আন্টি বাহিরে না দাঁড়িয়ে থেকে ভেতরে আসেন। ‘
– কথা রাইসার মুখে এমন কথা শুনে হতভম্ভ হয়ে গেল! যে মেয়েটাকে কথা থাপ্পর দিয়ে ঠোঁট কেটে ফেলল। সে মেয়েটাই তাকে সালাম দিয়ে ঘরের ভেতর আসতে বলছে।
– কি হলে, আসেন। নাকি রাগ করেছেন। রাগ করবেন না। ঘরে মেহমান আসলে তাকে সালাম দিয়ে সম্মান জানাতে হয়। বাবাই আমাকে শিখিয়েছে।
– কথা মিটিমিটি পায়ে ঘরে প্রবেশ করলো। সাথি অনেকটা বিচলিত! যদি কথা ম্যাডাম সাথিকে কিছু বলে!
– কিন্তু না কথাকে রুমে ঢুকেই রাইসাকে কুলে তুলে নিল। কথার বুকটা যেন শীতল হয়ে গেল। অজানা স্পর্শে। কথার সমস্ত অহংকার আজ যেন ছোট্ট শিশুটির শিষ্টাচারের কাছে ধূলোয় মিশে গেল।
– ম্যাডাম কি মনে করে?
– মিঃ রাজ রাইসার সাথে সেদিন, খারাপ ব্যবহার করার জন্য ক্ষমা চাইতে এসেছি আপনার কাছে। আরে ম্যাডাম আমার মেয়ে বা আমি কিছু মনে করিনি। কর্মচারী ভুল করলে মালিক বকা দিতেই পারে।

– রাইসা কথার কুলে থেকে বলল’ আচ্ছা! তোমাকে একটা কথা বলি?”
– হুম বলো?
– রাখবে তো আমার কথা?
– হুম মামনি, তুমি কি চকলেট খাবে? তোমার জন্য চকলেট নিয়ে আসবো।
– না আমার চকলেট চায় না। তুমি না আমার বাবাইকে কখনো বকা দিবে না। আমার বাবাইকে মারবে না। জানো না আমার বাবাই ছাড়া কেউ নেই। তুমি জানো বাবাইকে যখন বকা দিয়েছো। তখন আমার খুব কষ্ট হয়েছে। বাবাইকে মারলে আমি খুব কষ্ট পায়। আমার বাবাইকে যেদিন মেরেছিলে, সেদিন বাবাই রাতে খুব কান্না করেছে। তোমার সাথে আরি দিতে চেয়েছিলাম। কিন্তু বাবাই বলেছে, কারো সাথে আড়ি দিয়ে কথা না বলা ভালো না।
– কথা নিঃস্তব্দ হয়ে গেছে,রাইসার কথা শুনে।
– মনে মনে বলল’ রাজ চরিএহীন হলেও, তার মেয়েটা পুণ্যবর্তী। যাকে বলা হয় গোবরে পদ্মফুল।

-ম্যাডাম আসেন একসাথে, ব্রেকফাস্ট করি।

– নাহ্ আমি সকালে খেয়ে বের হয়েছি। মিস সাথী আপনাকে একটা প্রশ্ন করি?
– যে ম্যাম বলেন কি বলবেন?
– তুমি হঠাৎ রাজের বাড়িতে কেন?
– এ্যাঁ মা! তুমি জানো না। সাথি আমার মম। আর মম তো বাবাই এর সাথেই থাকবে।
-রাইসার কথাটা, কথার বুকে তীরের মতো এসে বিঁধলো। এমন কথা শুনার জন্য সে সম্পূর্ণ অপ্রস্তুত ছিল। কেন জানি চিৎকার দিয়ে কান্না করতে ইচ্ছে করছে। আবার মনে মনে কলছে, যে নিজের স্ত্রী রেখে অশ্লীল কাজ করতে পারে। তার কাছে এসব কিছু তুচ্ছ বিষয়।

– রাইসা মামনি তুমি কথা বলো না। ম্যাডাম কাল সাথির মা মারা যায়। আপন বলতে আর কেউ নেই তাই সাথিকে আমার বাসায় নিয়ে এসেছি।
– আপনার স্ত্রী কিছু মনে করবে না? আপনারা অবিশ্বাস করবে না। রাইসার মম কি ভাববে!
-আমি যখনি বলবো, রাইসার মা-বাবা দু’টাই আমি। ঠিক তখনি রাইসা বলে উঠলো” আন্টি আমার মম অনেক ভালো রাগ করবে কেন। বাবাকে কতো ভালবাসে। ”
– কথা আর কিছু বলতে পারলো না। কথার মুখটা বিষন্নতাই ছেয়ে গেছে। মনে হচ্ছে আষাড়ের আকাশটা কালো মেঘের আড়ালে ঢাকা পড়েছে।

– “আচ্ছা! তোমাদের বিরক্ত করার জন্য আবারো সরি। কাল কিন্তু অফিস থেকে কক্সবাজার যাবে। তোমরা রেডি হয়ে সকাল সকাল চলে যেয়ো। “কথাগুলো বলে, কথা যখন চলে যাচ্ছে। তখন রাইসা পিছন থেকে কথার শাড়ি টেনে ধরল।

– কথা তার শাড়িতে টান অনুভব করতে পেয়ে। নিচের দিকে তাকিয়ে দেখে, রাইসা তাকে ধরে রয়েছে।
– কি হলো মামনি, তুমি আমার শাড়ি ধরে রয়েছো কেন?
– আপনি আমাদের সাথে খাবেন। মম আর বাবাই বলছে না আপনাকে খেয়ে যেতো। আপনাকে খেতে হবে, বল্লুম আমি। রাইসা কথাকে টেনে নিয়ে খাবার টেবিলে বসালো।

– সবাই খেতে বসেছে। রাইসাকে আমি মুখে খাবার তুলে দিচ্ছি। কথা অপলক দৃষ্টিতে আমার দিকে চেয়ে আছে। সাথি অনেকটা আঁচ করতে পেয়ে বলল’ ম্যাডাম খাবেন না?’
– হুম খাচ্ছি তো!
– বাবাই তুমি আমাকেই শুধু খাইয়ে দিবে মমকে খাইয়ে দিবে না?
– তোমার মম বড় মানুষ একাই খেতে পারবে মামনি!
– না! না! না! তুমি খাইয়ে দিবে। মম তুমি হা করো।

-আমি খাবার হাতে নিয়ে সাথির মুখে তুলে দেবার সময় হাতটা কাঁপছে। কারণ আজও যে আমার পুরোটা জুড়ে কথার বিচরন!

– কথার দিকে চেয়ে দেখলাম কথা কাঁদছে। কথার মায়াবী মুখটা কেমন ফ্যাকাশে হয়ে গেছে।

-কথার খুব কষ্ট হচ্ছে। রাজকে তো ভালোবাসে না। তাকে ডির্ভোস দিয়েছে। তবে কেন অন্য মেয়ের সাথে সে রাজ মানতে পারছে না। কথার হঠাৎ মনে পরে গেল প্রায় চারবছর আগের স্মৃতি। রাজ কথাকে সবসময় খাবার তুলে দিতো মুখে। কারণ কথার বাচ্চা বাচ্চা স্বভাব ছিল।
– কি মজা! বাবাই মমকে কত্তো ভালবাসে। মমকে খাবার তুলে দিচ্ছে!
– কথা আর বসে থাকতে পারছে না! টেবিল থেকে একগ্লাস পানি, ঢগঢগ করে গিলে। খাবার টেবিল থেকে উঠে হনহনিয়ে চলে গেল!
– সাথি কথার এমন আচরণ দেখে ক্ষানিকটা অবাক হলো।

– পরের দিন, সকালে ঘুম থেকে উঠতেই একটা নীলপরী দেখতে পেলাম! সাথি নীল শাড়ি পড়েছে।

– কি হয়েছে আপনার, ওমন করে চেয়ে আছেন কেন?
– নাহ্! চেয়ে থাকি নিতো!
– হইছে বলতে হবে না। ঘুম থেকে উঠে ফ্রেশ হোন তাড়াতাড়ি। আজ ট্যুরে যাওয়ার প্রোগাম না অফিস থেকে! আমি রাইসাকে রেডি করে দেখি যেন আপনি ও রেডি।

– অাচ্ছা! রাইসাকে রেডি করো। এদিকে আমি রেডি হয়ে। যথারীতি অফিস থেকে ফিক্সড করা গাড়িতে উঠে বসলাম। ম্যাডামের সিটটা আমাদের পাসেই পড়েছে। দীর্ঘ ২২ ঘন্টা পর আমরা কক্সবাজার হোটেল রুমে পৌঁছিলাম।
– ম্যাডাম আমাদের রুমে গিয়ে সরাসরি আমাকে বললো” মিঃ রাজ আপনাকে বলেছিলাম। রাইসার মাকে নিয়ে আসতে। আপনি তাকে নিয়ে আসলেন না কেন? ”

– কথার, কথার জবাব যে আমি কি বলে দিব ভাবতে পারছি না!
– কি হলো চুপ করে আছেন কেন?
– রাইসার মা-বাবা দুজনই আমি। এ পর্যন্তই বলতে পারবো।
– মানে? আর তোমার চরিএটা এখনো ঠিক করবে না? সাথি মেয়েটাকে নষ্ট করার জন্য তোমার বাসাতে নিয়েছো!
– মাইন্ড ইউ লিংগুয়েজ মিস কথা! আমার চিল্লানীর শব্দে সাথি এসে কখন যে আমার পাশে এসে দাঁড়িয়েছে খেয়াল নেই!
– উচিত কথা বললেই ভালো না। আমি আবারো বলছি মেয়েটার জীবন নষ্ট করো না।
– চুপ করেন, আপনার মতো সবাইকে ভাববেন না! নিজের স্বামী গরীব বলে বড়লোকের ছেলেকে বিয়ে করেন। পিয়নকে বলেছিলাম, পিয়ন বলেছে আপনার হাজবেন্ড নাকি বিদেশ থাকে!

– রাজ আমি তোমার মতো ছোটলোক না!
– হ্যাঁ ম্যাডাম আমি ছোটলোক তবে চরিএহীন নয়।
-ঠাস! লজ্জা করে না! মিথ্যা বলতে।

– মিস কথা চৌধুরি, আপনিই সে নষ্টা মেয়ে। যার জন্য রাজ ভাইয়া এখনো বিয়ে করেনি। যাকে আপনি বিয়ের রাতে কুকুরের মতো মারতে মারতে বের করে দিয়েছেন। সাত মাসের মেয়েকে নিয়ে যে বাবা পথে পথে ঘুড়ে বেরিয়েছে। সে রাজ ভাইয়া । আপনি সে মা যে মেয়েকে ফুলের মতো নিষ্পাপ মেয়েকে থাপ্পর মেয়ে ঠোঁট কেটে ফেলেন! আপনার দিলে আল্লাহর রহম নেই।
– সাথি চুপ করবে কি বলছো এসব!

– রাজ ভাইয়া আপনি চুপ করেন। বলতে দেন আমায়। যে মেয়ে বড়লোক স্বামী পাবার আশায় নিজের সন্তানকে গর্ভপাত করে। নার্সকে যে টাকা দেয়, অনাগত সন্তান হওয়ার সাথে সাথেই গলাটেপে মারতে। সে মেয়ে পৃথিবীর সকল মেয়ে জাতির কলঙ্ক!
– সাথির মুখে, রাইসা তার মেয়ে কথাটা শুনে কথা ডাস! করে ফ্লরে বসে পড়লো। কথার চোখ দিয়ে অনবরত পানি আসতে লাগল!

চলবে”””””””

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here