যেদিন তুমি এসেছিলে পর্ব ৪

0
645

#যেদিন_তুমি_এসেছিলে
#পর্ব_৪
#মুন্নি_আক্তার_প্রিয়া
_______________
‘আপনি কি মানুষ? মানুষ হয়ে কোনো মানুষকে কেউ এমনভাবে অত্যাচার করতে পারে?’ আহনাফ রেগে কথাগুলো বলল কুসুমের উদ্দশ্যে।

কুসুম এতক্ষণ কেয়ার সাথে ধস্তাধস্তি করছিল। আহনাফের কথা শুনে সে তেলে-বেগুনে জ্বলে উঠে বলল,’আপনি কে? আপনার সাহস হয় কীভাবে আমার বাসায় এসে আমাকে কথা শোনানোর?’

‘আমার সাহস সম্পর্কে আপনার কোনো ধারণাই নেই। আমি যে আর কী কী করতে পারি আর পারব সেটাও আপনি কল্পনা করতে পারবেন না।’

‘হুমকি দিচ্ছেন?’

‘হ্যাঁ, দিচ্ছি।’

কেয়া এবার আহনাফের কাছে এসে বলে,’প্লিজ! এখানে অযথা তর্ক করে সময় নষ্ট করবেন না। ও’কে ডাক্তারের কাছে নিয়ে চলুন।’

আহনাফও তাই করল। অর্ষাকে পাঁজাকোলা করে গাড়ির কাছে যায়। কেয়া যাওয়ার পূর্বেই কুসুম ওর হাত খপ করে ধরে ফেলে বলে,’এই অসভ্য ছেলেটা কে? ওর সাথে তোর কীসের সম্পর্ক?’

কেয়া বিরক্ত হয়ে বলল,’না জেনে কোনো কথা বলো না তো আপু। তার সাথে আমার কোনো সম্পর্ক নেই। হাত ছাড়ো।’

কুসুম হাত ছাড়ে না। চোখ রাঙিয়ে বলে,’তুই এক পা-ও বাড়ির বাইরে যাবি না। চুপচাপ ঘরে যা।’

‘তোমার মধ্যে মনুষ্যত্ব না-ই থাকতে পারে আপু। কিন্তু আমার মধ্যে আছে।’ বলে জোর করে হাত ছাড়িয়ে নিয়ে কেয়াও গিয়ে গাড়িতে উঠে বসে।

এমনিতে কোনো ফার্মেসিতে না নিয়ে অর্ষাকে হাসপাতালে নিয়ে যায় আহনাফ। এখানে ওর পরিচিত ডাক্তার রয়েছে। অর্ষাকে বেডে শুইয়ে দিয়ে সে নার্সকে বলে,’ওর গায়ের জামা-কাপড় ভেজা। জামা-কাপড়গুলো পাল্টে হাসপাতালের পোশাক পরিয়ে দিন।’

‘জি, আচ্ছা।’ বলল নার্স।

আহনাফ গেল ডাক্তারের কাছে আর কেয়া বাইরে বসে অপেক্ষা করতে লাগল। কিছুক্ষণ পর ডাক্তার এসে অর্ষাকে দেখে যায়। গায়ে প্রচণ্ড জ্বর। আহনাফকে সে জানিয়েছে,’সমস্যা না থাকলে, আজ রাতটা যেন অর্ষাকে হাসপাতালেই রাখে। রাতে জ্বর আবার বাড়তে পারে।’
আহনাফ কেয়ার সাথে কথা বলে রাজি হয়েছে।
.
অর্ষার চোখের দৃষ্টি ঝাপসা, এলোমেলো। তার মনে হচ্ছে এখনো ভাবি তাকে প্রহার করছে। ঠিক কী কী হয়েছিল সমস্ত ঘটনা সে জ্বরের ঘোরে পূণরায় স্মরণ করে।

রেডি হয়ে আহিলের সঙ্গে বের হয়েছিল অর্ষা। আহিলের মন তখনো খারাপ। সে অর্ষাকে রেস্টুরেন্টে নিয়ে যায়। আহিলকে এভাবে চুপচাপ দেখে অর্ষা হেসে বলে,’ব্রেকাপ হলেও তো কেউ এমন করে না রে!’

আহিল এক পলক অর্ষার দিকে তাকিয়ে বলে,’তুই আমার কষ্ট বুঝবি না। আপুকে ছাড়া বাড়িটা খুব ফাঁকা ফাঁকা লাগে।’

‘তাহলে আপুর কাছে যা। কয়েকদিন বেড়িয়ে আয়।’

‘পরীক্ষার পর যাব। আর শোন, স্যরি দোস্ত।’

অর্ষা অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করে,’স্যরি কেন?’

‘কালকে কথা দিয়েও তোকে বাড়িতে পৌঁছে দিয়ে আসতে পারিনি।’

‘ধুর! প্যারা নিস না।’

‘তুই ঠিকমতো বাড়িতে যেতে পেরেছিলি তো?’

‘বেঠিকভাবে গেলে কি এখন তোর সামনে বসে থাকতে পারতাম?’

আহিল হেসে ফেলে। জিজ্ঞেস করে,’এখন কী খাবি বল?’

‘কিছু খাব না।’

‘বললেই হলো? চোখমুখ শুকিয়ে কাঠ হয়ে গেছে। খাবার অর্ডার দিচ্ছি চুপচাপ খাবি।’

খাবার অর্ডার দিয়ে আহিল বলে,’তুই আজ সকালে আমায় ডাকতে যাসনি কেন?’

‘গেছিলাম। তুই ঘুমিয়েছিলি তাই আর ডাকিনি।’

‘তাহলে কি তুইও কলেজে যাসনি?’

‘গেছিলাম তো!’

‘টাকা পেলি কোথায়?’

‘তোর ভাইয়া দিয়ে এসেছে।’

আহিল অবাক হয়ে বলে,’সত্যিই? বিশ্বাসই হচ্ছে না।’

‘কেন? উনি মানুষটা ভালো।’

আহিল ভাব নিয়ে বলে,’ভাইটা কার দেখতে হবে তো!’

‘ঢং।’

দুজনে খেতে খেতে আরো অনেক গল্প করে। গতকাল রাত থেকে আহিলের যেই পরিমাণ মন খারাপ, কষ্টটা ছিল তা এখন ভ্যানিশ হয়ে গেছে। অর্ষার সাথে থাকলে তার প্রতিটা মুহূর্ত ভালো কাটে। নিজেকে সুখী সুখী মনে হয়। ভাগ্যিস অর্ষাকে সে বন্ধু হিসেবে পেয়েছিল! খাওয়া-দাওয়া শেষ করে অর্ষাকে বাড়ির সামনে নামিয়ে দিয়ে আহিল নিজের বাসায় চলে যায়। অর্ষার আগেই কুসুম বাড়িতে চলে এসেছে। অর্ষা ভেবেছিল ভাবির ফিরতে বোধ হয় রাত হবে। কিন্তু সন্ধ্যার আগেই ভাবি ফিরে এসেছে।

বাইরে তখন ভীষণ মেঘ। তারচেয়েও অন্ধকার দেখাচ্ছিল ভাবির মুখ। সে শীতলকণ্ঠে জিজ্ঞেস করে,’কোথায় গিয়েছিলি?’

অর্ষা ভয়ে ভয়ে বলে,’একটু বাইরে গেছিলাম।’

ভাবি বসা থেকে উঠে আসে। চোখের পলকে চড় বসায় অর্ষার গালে। হিরহির করে টানতে টানতে উঠানে নিয়ে আসে। বৃষ্টির মধ্যে দাঁড় করিয়ে লাঠি দিয়ে এলোপাথাড়ি মারতে শুরু করে। দু’বছরের তিয়াস কাঁদতে কাঁদতে ঘর থেকে বেরিয়ে এসেছিল। মায়ের আঁচল ধরে কাঁদতে কাঁদতে বলেছিল,’ফুপিতে মেলো না মা! ফুপি ব্যতা পাবে। ফুপি কষ্ত পাত্তে।’

তিয়াসের কথাও যেন কুসুমের কর্ণকুহর অব্দি পৌঁছাল না। তিয়াসকে তার নজরে এলো তখন, যখন ছোট্ট তিয়াসও বৃষ্টির মধ্যে উঠানে নেমে অর্ষার পা জড়িয়ে ধরে কাঁদছিল। কুসুমের রাগ বেড়ে যায়। তিয়াসকে কোলে নিয়ে ঘরে আটকে রেখে আবারও এসে অর্ষাকে মারতে শুরু করে আর বলে,’তোকে বলেছিলাম রান্না করতে। তুই রান্না না করে বাইরে বাইরে ঘুরে বেড়াস। এখন আমি খাব কী বল? আর কত জ্বালাবি তুই আমায়?’

ভাবির কথা অর্ষার কানে যাচ্ছিল না। তার কানে বৃষ্টির ঝুমঝুম শব্দের সঙ্গে তিয়াসের চিৎকার করা কান্নার শব্দ ভেসে আসছিল। সে অনুনয় বিনয় করে ভাবিকে বলেছিল,’তিয়াসকে আগে থামাও ভাবি! ও একা ঘরে ভয় পাচ্ছে।’

কুসুমের নির্যাতন কমে না। সে কাঠ কাঠ গলায় বলে,’আমার ছেলেকে নিয়ে তোর এত ভাবতে হবে না অলক্ষী কোথাকার!’

তিয়াসের কান্নার শব্দ ফের শুনেই অর্ষার চেতনা ফিরে আসে। সে চিৎকার করে ওঠে। মাথা ব্যথায় যন্ত্রণা হচ্ছে খুব। নার্স ওর মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে বলল,’উঠবেন না। শুয়ে থাকুন।’
ধীরে ধীরে অর্ষা পূণরায় ঘুমে তলিয়ে যায়।
______
হাসপাতালের বিল মিটিয়ে দিয়ে আহনাফ কেয়ার পাশে এসে দূরত্ব বজায় রেখে বসে। কেয়া তখন কপালের ওপর হাত রেখে চোখ বন্ধ করে ছিল। আহনাফ কেঁশে গলা পরিষ্কার করে বলল,’শুনছেন?’

কেয়া চমকে তাকায়। তার চোখের দৃষ্টি ঘোলাটে। চোখদুটো লাল হয়ে আছে। জড়ানো গলায় বলল,’হ্যাঁ, বলুন।’

‘আপনাকে ভীষণ ক্লান্ত দেখাচ্ছে। ঘুম পেয়েছে?’

‘না। চোখ লেগে এসেছিল একটু।’

‘কফি খাবেন?’

‘খাওয়া যায়।’

আহনাফ আর কেয়া কেন্টিনে যায়। দুজনে কফি নিয়ে বসে। কফিতে চুমুক দিয়ে আহনাফ জিজ্ঞেস করে,’অর্ষা আপনার কী হয়?’

‘সম্পর্কে আমরা বেয়াইন হই। মানে আপুর ননোদ অর্ষা।’

‘মেয়েটা কি পাগল? মাথায় কোনো সমস্যা আছে?’ সে অর্ষাকে যেমন ভাবে তেমনটাই বলল কেয়াকে। লুকোচুরি স্বভাব তার পছন্দ নয়। তাছাড়া মেয়েটাকে নিয়ে অজান্তেই মনে অনেক কৌতুহলের দানা তৈরি হয়েছে।

কেয়া একটু অবাক হয়। বিস্মিতকণ্ঠে জিজ্ঞেস করে,’এ কথা বলছেন কেন?’

‘সুস্থ মস্তিষ্কের মানুষ হলে তো এভাবে এত কঠিন মাইর হজম করার কথা না। এক জায়গায় ঠায় দাঁড়িয়ে মার খাচ্ছিল। ও তো চাইলে সরে যেতে পারত। প্রতিবাদ করতে পারত। তা না করে চুপচাপ মার খাচ্ছিল! এত বোকা কেন এই মেয়ে?’

কেয়া হতাশ দীর্ঘশ্বাস নিয়ে বলে,’অর্ষা পাগল নয়। সুস্থ-ই। তবে অনেকটা সহজ-সরল। মার না খেয়ে কোথায় যাবে বলেন? দিনশেষে তো বাড়িতেই ফিরতে হবে। আপু ছেড়ে দেবে তখন ও’কে? ওর মা মারা যাওয়ার পর থেকে বকা, মাইর খাবারের মতোই ডেইলি রুটিন হয়ে গেছে ওর। কখনো তো তিনবেলা খাওয়া’ও ঠিকমতো হয় না; তবে নিয়ম করে প্রতিদিন বকা, মাইর খেতেই হয়। এই তিক্ত সত্য আর রুটিন যখন থেকে বুঝতে শিখেছে তখন থেকে চুপচাপই মার খায় আর নিরবে কাঁদে।’

আহনাফের ভীষণ কষ্ট হচ্ছে। বাবা-মা যে সন্তানের জন্য কতটা গুরুত্বপূর্ণ সেটা সে উপলব্ধি করতে পারছে। যার বাবা-মা নেই সে-ই বোঝে বাস্তবতার আড়ালে চাপা পড়ে কীভাবে পিষ্ট হতে হয় প্রতিনিয়ত! অর্ষার জায়গায় আফরিনের কথা ভাবতেই বুকের ভেতরটা মোচর দিয়ে ওঠে তার। অসহনীয় যন্ত্রণা হয়। অর্ষার প্রতি থাকা তার ভুল মনোভাবও বদলায়।

নিজেকে স্বাভাবিক করে জিজ্ঞেস করে,’ওর ভাই কিছু বলে না?’

কেয়া তাচ্ছিল্য করে হাসে। শ্লেষেরসুরে বলে,’কী বলবে? দুলাভাই নিজেও তো মারধোর করে। বউয়ের কথায় চলে।’

‘কিছু মনে করবেন না একটা কথা বলি। ওরা আপন ভাই-বোন তো?’

‘হ্যাঁ।’

আহনাফ এবার অবাক না হয়ে পারল না। আপন ভাই হয়েও এমন আচরণ? এত পরিবর্তন বাবা-মা না থাকায়?

দুজনের কথার মাঝে কেয়ার ফোনটা বেজে ওঠে। ব্যাগ থেকে ফোন বের করে দেখে কুসুম ফোন করেছে। তাই সে ফোন রিসিভ করে না।

আহনাফ অনধিকার চর্চার বশে জিজ্ঞেস করেই বসল,’কে ফোন করেছে?’

‘আপু।’

‘রিসিভ করুন।’

‘রিসিভ করলেই বাড়িতে যেতে বলবে।’

‘তবুও দেখুন কী বলে।’

প্রথম কল কেটে যাওয়ার পর দ্বিতীয় কল রিসিভ করে কেয়া। কুসুম বলে,’তোর কোনো কথা শুনতে চাই না। তুই এখনই বাসায় আসবি।’

‘পরে আসব।’

‘আমি এখনই আসতে বলেছি কেয়া।’

কেয়া রাগে ফোন কেটে দিলো। আহনাফ বলল,’আপনি বরং বাড়ি চলে যান।’

‘অসম্ভব। অর্ষাকে রেখে আমি যাব না।’

‘আপনার চোখ দেখে মনে হচ্ছে আপনি ক্লান্ত। চোখে অজস্র ঘুম। আপনার বিশ্রাম নেওয়া প্রয়োজন। অর্ষার জন্য নার্স আছে। আর প্রয়োজনে আমি থাকব। আপনি বাসায় যান।’

কেয়া প্রথম প্রথম বারণ করলেও পরবর্তীতে আহনাফের জোড়াজুড়ির কাছে হার মানে। সত্যি বলতে সে আসলেই অনেক ক্লান্ত। ঘুমের জন্য চোখ মেলে তাকিয়ে থাকতেও সমস্যা আর কষ্ট হচ্ছিল।

আহনাফ বলল,’বাড়িতে পৌঁছে দিয়ে আসব?’

‘না। বৃষ্টি তো নেই। একাই যেতে পারব। আপনি কিন্তু প্লিজ রাতে হাসপাতালেই থাকবেন। আর কোনো সমস্যা হলে অবশ্যই আমায় ফোন করবেন।’

‘অবশ্যই। আপনি চিন্তা করবেন না।’

অর্ষাকে একবার দেখে কেয়া বাড়িতে ফিরে আসে গম্ভীরমুখে। বোনের দিকে ফিরেও তাকায় না। এতে অবশ্য কুসুমের কিছুই যায় আসে না। সে কেয়াকে শাসিয়ে বলল,’তোর দুলাভাই বাসায় আসলে ও’কে কিছু বলবি না। অর্ষার কথা জিজ্ঞেস করলে বলবি, খেয়ে ঘুমিয়ে পড়েছে।’

কেয়া ঘৃণার দৃষ্টিতে তাকায়। কুসুম সেই দৃষ্টি উপেক্ষা করে কঠোর হয়ে বলে,’যা বললাম তা যেন মনে থাকে।’
_____
কেয়া চলে যাওয়ার পর আহনাফ ভাবে কী করবে। কেবিনে যাবে নাকি বাইরে বসে থাকবে। তার আগে পরনের ভেজা জামা-কাপড়গুলো বদলানো দরকার। গাড়িতে এক্সট্রা টি-শার্ট আর ট্রাউজার থাকার কথা। থাকলে তো ভালোই। নতুবা সারা রাত এই ভেজা কাপড়েই থাকতে হবে। সে গাড়িতে খুঁজে টি-শার্ট আর ট্রাউজার পেয়ে যায়। ভাগ্য ভালো ছিল বলা যায়। গাড়িতে বসেই জামা-কাপড় পাল্টে আবার ফিরে আসে। ওয়েটিংরুমে বসে ফেসবুকে নিউজফিড স্ক্রল করে চুপচাপ।

বেশ কিছুক্ষণ ওয়েটিং রুমে বসে থেকে এবার সে কেবিনে যায়। অর্ষা ঘুমিয়ে রয়েছে। নার্স নেই এখন। সে একা একা কী করবে বুঝতে পারছে না। পরক্ষণে মনে হলো ছোটো থেকে বই পড়ুয়া হওয়ার সুবাদে গাড়িতেও সে বই রাখে। আজ রাতটা না হয় বই পড়েই কাটিয়ে দেবে। সে বাইরে যায় বই আনতে। তখন আমেনা বেগমের ফোন আসে। সে গাড়ি থেকে বই নিয়ে ফেরার পথে মাকে কলব্যাক করে।

আমেনা বেগম অস্থির হয়ে বলেন,’কত রাত হয়ে গেছে বাবু। তুই বাড়ি ফিরবি কখন?’

আজ অস্বস্তি ফিল করার বদলে হাসল আহনাফ। বলল,’আজ বাড়িতে ফিরব না মা।’

‘কেন? কোথায় আছিস তুই?’

সে মাকে সত্যিটা বলল না। হাসপাতালে আছে বললে হাজারটা প্রশ্ন করবে। তাই বলল,’এক বন্ধুর বাসায়।’

‘হঠাৎ তোর বন্ধুর বাসায় কী? আগে তো বলিসনি।’

‘আগে ভাবিনি যে রাতে থাকব।’

‘এটা কেমন কথা? তুই বললি আফরিনের জন্য কসমেটিক্স কিনতে যাবি। এখন বলছিস বন্ধুর বাসায়। ঘটনা কী? বাবু সত্যি করে বল না, তুই লুকিয়ে প্রেম করছিস?’

আহনাফ শব্দ করে হেসে বলে,’তুমি পাগল হয়ে গেছ মা। তোমাকে না বললাম, এখন আর আমার প্রেম করার বয়স নেই। কাল সকালে আফরিনকে কসমেটিক্সগুলো দিয়ে তারপর বাড়িতে ফিরব। তুমি খেয়ে নিও। রাখছি এখন আমি।’

কেবিনের সামনে এসে কল কাটে আহনাফ। ভেতরে এসে দেখে অর্ষা ঘুমের ঘোরে কাঁদছে আর আবোল-তাবোল কিছু বলছে। সে ফোন পকেটে রেখে ব্যস্ত হয়ে এগিয়ে যায়। অর্ষার মুখের কাছে কান নিয়ে শোনার চেষ্টা করে কী বলছে। তবে কথাগুলো জড়ানো এবং অস্পষ্ট হওয়ায় সে কিছুই বুঝতে পারে না। কপালে হাত দিয়ে দেখে জ্বর আরো বেড়েছে। ডাক্তারকে খবর দিয়ে আনে তখন। ডাক্তার নার্সকে বলে ঘুম থেকে উঠিয়ে কিছু খাইয়ে ওষুধ খাইয়ে দিতে। আহনাফ এক কিনারে চুপচাপ বসে থাকে। নার্স জোর করে অল্প একটু খাবার খাইয়ে ওষুধ খাইয়ে দেয়। এরপর অর্ষা আবার ঘুমিয়ে পড়ে। নার্স চলে যাওয়ার পর চেয়ার নিয়ে অর্ষার মাথার কাছে বসে আহনাফ। কিছুক্ষণ মুখের দিকে তাকিয়ে থেকে বই পড়ায় মন দেয়।

অর্ষার হাত কাঁপছিল। সে আড়চোখে খেয়াল করে শুধু হাত নয়, শরীরও কাঁপছে। সে অর্ষার বাম হাতটা আলতো করে ধরতেই অর্ষা হাত চেপে ধরে শক্ত করে। আহনাফ নার্সকে ডেকে বলে আরো কম্বল আনিয়ে ওর গায়ে দিয়ে দিতে। নার্স এসে কম্বল দিয়ে যায়। অর্ষার হাতের মুঠোয় তখনো আহনাফের হাত। অর্ষা জ্বরের ঘোরে কাঁদতে কাঁদতে ‘বাবা, মা’ বলে কাঁদছে।
আহনাফের বুকচিরে দীর্ঘশ্বাস বেরিয়ে আসে। মেয়েটার জন্য তার মনে মায়ার সঞ্চার হতে শুরু করে ধীরে ধীরে।

চলবে…
[কার্টেসী ছাড়া কপি করা নিষেধ।]

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here