যখন_তুমি_এলে পর্ব : ৪৭।

0
877

#যখন_তুমি_এলে
লেখা: জাহান লিমু
পর্ব : ৪৭।

বেশ কিছুদিন পর।
বিকালে শুটিং শুরু করে, শেষ হতে হতে সন্ধ্যা হয়ে যায়। যেটুকু অংশ বাকী ছিলো,সেটা একেবারেই করে ফেলেছে। আর শেষ অংশটুকু আরাদের বাড়ির সামনের ফাঁকা অংশটাতেই করার প্ল্যান ছিলো। আর শুটিং সময়টাও ঠিক করা ছিলো, সূর্য ডোবার মুহুর্তে। কারন শর্টফিল্মটাতে শেষ একটা সংলাপ ছিলো এমন,

প্রতিদিন সূর্য ডুবে, আবার নতুন করে উঠার প্রত্যয়ে। আর আমরাই বোকার মতো নিজেদের ভুলগুলো,আর অতীত আঁকড়ে পড়ে থাকি। অথচ চাইলেই আমরা সবকিছু নতুন করে শুরু করতে পারি। যেখানে জীবনটায় ক্ষণস্থায়ী,সেখানে জীবনের খারাপ সময়গুলো দীর্ঘ হবে কি করে?
জীবনে কারো দেয়া আঘাতে কখনো ভেঙে পড়তে নেই,বরং সেই আঘাতকে পুজি করে,জীবনে এগিয়ে যাওয়ার স্তম্ভ তৈরি করা উচিত।

সাচীর শর্টফিল্মটার মূল কাহিনী ছিলো,একটা টিনেজ মেয়ে আর তার হোম টিউটরকে নিয়ে। যে ওদের বাসায় থেকে, মেয়েটাকে পড়াতো। আরাদ ছিলো টিউটর,আর সোহানী স্টুডেন্ট। সেখানে একদিন মেয়েটা সুইসাইড করতে যায়,তার বয়ফ্রেন্ড ব্রেকআপ করার কারনে। সেখান থেকে টিউটর থাকে বাঁচায়। এবং সব শুনে সামনে এগিয়ে গিয়ে, ঐ ছেলেকে দেখিয়ে দিতে সাহস যুগায়। যে সেই ছেলে ওকে ডিজার্ভ করে না। কেউ তোমাকে ছেড়ে চলে গেলে,কখনোই ভেঙে পড়বেনা। বরং দাঁত কামড়ে সব সহ্য করে,তাকে চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিবে,তার ছেড়ে যাওয়াতে তোমার পৃথিবী থমকে যায় নি। আবেগে দুনিয়া চলে না,তাহলে তুমি কেন চলবে?
আর সেখানে অনেক বছর পর টিউটরের সাথে ছাত্রীর দেখা হবে। যেখানে ছাত্রী বিশ্ব অলিম্পিকে বাংলাদেশ থেকে শ্যুটিং-এ চ্যাম্পিয়ন হবে। তখন স্যারকে এসে বলবে,

‘ স্যার যখন ম্যাডেলটা হাতে নিই,যখন আমার নামের পর আমার দেশের নামটা উচ্চারণ করে,যেটা সারা বিশ্বের মানুষ দেখছে,তখন আমার কেবল একটা কথায় মনে হয়েছিলো।
এই প্রাপ্তির কাছে,ঐসব কষ্ট, ধূলির মতো উড়ে যাবে। জীবনে প্রেম-ভালোবাসাটায় সব না। নিজের জন্য কিছু করা,পরিবারের জন্য কিছু করা,দেশের জন্য কিছু করাটা অনেক অনেক জরুরী। জীবনতো একটাই।’

সোহানী শুটিং শেষ করেই বাসায় চলে যায়। রিতি চৌধুরী আজকাল ভয়ংকর কান্ড কারখানা করে বসেন। ব্রেইন স্টোক করার পর থেকে, মাথায় সমস্যা হয়ে গেছে মূলত। অনেককে ঠিকমত চিনতে পারেন না। একা একা বাসা থেকে বের হয়ে চলে যেতে চান। যদিও দুজন লোক রাখা উনার জন্য। কি ছিলেন,আর কি হয়ে গেলেন!
মানুষ অযথাই দম্ভ করে। অথচ জীবন আমাদের এক ঝঁটকায় কোথায় নিয়ে দাঁড় করিয়ে দেয়,আমরা ঘুণাক্ষরেও সেটা কল্পনা করতে পারিনা।

রিতিকে দেখে আজ যে কারোই মায়া হবে। সারাক্ষণ শরীরে যে একটা আভিজাত্য বিরাজ করতো,তার ছিটে ফুটাও এখন নেই। সামর্থ চলে গেছে যে,তা নয়। শুধু দাম্ভিকতাটা কেড়ে নিয়েছেন বিধাতা। কয়দিন আগে রাতে বাসার গেইট খোলা পেয়ে,ঘুম থেকে উঠে একা রাস্তায় পাগলের মতো হাঁটছিলেন। সেখানে সোহানীর এক ফ্রেন্ড ওর মাকে দেখতে পায়। তখন সোহানীকে ফোন করে। এছাড়াও আরো ভয়ানক কান্ড ঘটিয়ে ফেলছেন তিনি। দিনদিন অবস্থা খারাপের দিকে যাচ্ছে। এভাবে চললে হয়তো, একসময় মানসিক চিকিৎসা কেন্দ্রে পাঠাতে হবে। সোহানীর বাবা ভীষণ ভেঙে পড়েছেন। শতকিছুর পরেও কেন যেন এই রমণীকে উনি ভীষণ ভালোবাসেন। কেন, তার উত্তর জানা নেই। আমরা যাকে ভালোবাসি,তার সবটাই ভালোবাসি। কারন খুঁজে ভালোবাসিনা। এটা আমাদের দুর্বলতা,কিংবা ভালোবাসা এমনি।

রোহানীকে দেখেও চিনতে পারেননি উনি। শুধু ঢ্যাব ঢ্যাব করে তাকিয়ে ছিলেন। মাকে এমন অবস্থায় দেখতে হবে, রোহানী কোনদিনও ভাবেনি। এখন যেন তার সেই রুক্ষ মাকেই খুঁজে ফিরছে। সময়ের স্রোতে মানুষ কি থেকে কি হয়ে যায়।

রোহানী আড়ালে চোখের জল ফেলে কেবল। ভেবেছিলো মায়ের সাথে দেখা করে মাফ চাইবে,ওমন করার জন্য। কারন তখন ওর এছাড়া কোন উপায় ছিলো না। আর এখন হাজারবার মাফ চাইলেও,মা শুনবেই না। আর শুনলেই কি,কিছুই তো বুঝবেনা। জীবনের সমীকরণটা এতো জটিল কেন!
যখন আমরা ভাবি সব ঠিক করে নিবো,তখনি সময় আমাদের থমকে দেয়। সময় বুঝিয়ে দেয়,আমাদের হাতে কোনকিছু ঠিক করার ক্ষমতা নেই আসলে।

আরফা খান বাসায় ছিলেন না। উনার কোন এক বান্ধবীর বাসায় গিয়েছেন। এসে পড়বেন অবশ্য। সেজন্যই সাচী অপেক্ষা করতে লাগলো। একবার উনার সাথে দেখা করতে মন চাইছে ওর। উনার আগের বেশ কয়েকটা নাটক সাচী দেখেছে। চমৎকার অভিনয় করতেন। একদম ন্যাচারাল একটিং। সেই মানুষটাকে সরাসরি দেখতে পাবে,কথা বলতে পারবে, সে লোভটা সামলাতে পারলোনা সাচী।
কিন্তু সন্ধ্যার পর থেকেই আকাশ কালো মেঘে ছেয়ে যাচ্ছে। সাচীর উদ্বিগ্নতা বাড়ছে তাতে। আরাদের মায়েরও আসার নাম গন্ধ নেই। এদিকে আরাদ সাচীর সাথে প্রয়োজন ছাড়া কোন কথা বলছেনা। যেটা সাচীর বিরক্তিকর লাগছে। সেটা বুঝতে পেরে,আরাদ ওর মাকে ফোন দিলো। কিন্তু উনি যেখানে আছেন,সেখানে নাকি ভারী বৃষ্টি হচ্ছে। রাস্তায় বের হওয়ার উপায় নেই। আর তারাও নাকি এরকম আবহাওয়াতে ছাড়তে চাইছে না। অগত্যা আরাদ ফোন রেখে দিলো। সাচী যে বসে আছে,সেটা জানায়নি।

সাচীকে এটা বলার পর,সে চলে যেতে চাইলো। বেশি এক্সাইটেড ছিলো,তাই দেখাটায় হলো না। সাচী মুড অফ করে বের হয়ে গেলো। আরাদও পেছন পেছন গেলো। কিন্তু বাসার প্রধান দরজা থেকে বাইরে পা টা ফেলবে কেবল,তখন অদ্ভুত একটা শব্দ কানে ভেসে এলো। সাচী অবশ্য সেটা বুঝতে পারলনা। সে আরাদকে পেছনে ফেলে, রাস্তার দিকে যেতে লাগলো। কিন্তু মুহুর্তেই দানবাকৃতির বৃষ্টির ফোটা পড়ে ওর শরীর ভিজিয়ে দিলো।
ওর সাথে ব্যাগে ক্যামেরা,ল্যাপটপ। সাচী কি করবে বুঝতে পারছেনা। দ্রুত পাশের দোকানটায় গিয়ে দাঁড়ালো। কিন্তু সেখানে বেশ কয়েকটা মধ্যবয়স্ক লোক দাঁড়িয়ে আছে। আর ওদের চাহনি সাচীর সুবিধার ঠেকছে না। কিন্তু রাস্তায় কোন গাড়িও দেখতে পাচ্ছে না সে। কারন এটা গলির রাস্তা,প্রধান রাস্তা নয়। সাচীর মাথা কাজ করছেনা এ মুহুর্তে।

একবার ভাবলো তুহিনকে ফোন দিবে। কিন্তু পরক্ষণে মনে হলো, এতে বরং তুহিন আরো রিয়েক্ট করতে পারে। ঝামেলা বাড়িয়ে লাভ নেই। সামনে বিয়ে।
সাচীর টপস ভিজে শরীরের সাথে লেগে গেছে। জিন্সের প্যান্ট পরাতে,পা ততটা ভিজেনি। আর ভিজলেও, অসুবিধা নেই। বুঝা যাবেনা কিছু। ব্যাগটা বুকের সামনে নিয়ে দাঁড়িয়ে রইলো সে। যখন ভাবছিলো, সায়াহ্নকে কল দিবে,তখন সামনে ছাতা হাতে কাউকে দেখে কলটা আর করলোনা।
আরাদ যেটা ভেবেছিলো,সেটাই হলো। সাচী আঁটকা পড়েছে বৃষ্টিতে। তারপরও মেয়েটা একটা ফোন পর্যন্ত দেয় নি। এত্তো ইগো!
যদিও সাচীকে এই অবস্থায় দেখে আরাদের মনে ক্ষোভের উদয় হলো,কিন্তু সেটা প্রকাশ করার কোন অধিকার তার নেই। সে তো আর প্রেমিক নয়।

কোনরকম ভণিতা না করেই,আরাদ সাচীকে ওর সাথে বাসায় যেতে বলে। আরাদের কন্ঠে যেন কি ছিলো। যেটা সাচীকে বাধ্য মেয়ের মতো ওর সাথে যেতে বাধ্য করে। কেউ কোন কথা বললোনা বাসায় যেতে যেতে।
একদম বাসার ভেতরে গিয়ে কথা বললো দুজন। তখনো বৃষ্টি থামার কোন নাম নেই। বরং আরো বেড়ে চলেছে। এ বছর যেভাবে বৃষ্টি হচ্ছে, বন্যা হওয়ার সম্ভাবনা প্রবল। ইতিমধ্যে নদীর পানি বাড়তে শুরু করেছে।
সাচী ঠান্ডায় কাঁপতে লাগলো। এমনিতেই ওর টনসিলের প্রবলেম আছে। এভাবে থাকলে,অবস্থা খারাপ হবে আরো।
সেটা বুঝতে পেরে,আরাদ ওর মায়ের রুমে গেলো।

ফিরে এলো একটা শাড়ি হাতে নিয়ে। সাথে পেটিকোট,ব্লাউজ। সাচী চোখ পিটপিট করে তাকালো সেদিকে। তবে সে যে গুছিয়ে শাড়ি পরতে পারেনা, তা তো আরাদ জানেনা। আর সেটা বলাও যাবেনা। তাই চুপচাপ শাড়ি হাতে নিয়ে, সাচী আরাদের মায়ের রুমে ঢুকলো।
প্রায় চল্লিশ মিনিটের প্রচেষ্টার পর,সে শাড়িটাকে আয়ত্তে আনতে পারলো। তাতেও তার সন্দেহ লাগছিলো। তাই জামদানি শাড়ি হওয়া স্বত্বেও, সে পুরো শাড়ি পিনআপ করে পড়লো।এমুহুর্তে বিরু ভাবী সাচীকে দেখলে হয়তো হেসে খুন হতো। সাচীকে শাড়ি পরা শেখাতে চায় বিরুনিকা,সাচীই শিখেনা। ওর ধারণা বিয়ের পরও সে জিন্সই পরবে,তাই শাড়ি পরা শিখতে পারবেনা।
কিন্তু আজ বুঝতে পারলো,জীবনে সবকিছু শেখারই প্রয়োজন আছে। কখন কাজে লাগে,কে জানে।

যদিও আরফার ব্লাইজ সাচীর বেশ ঢিলা হলো। তবে থ্রি কোয়ার্টার হওয়াতে,অতটাও খারাপ লাগছেনা। প্রায় একঘন্টা পর সাচী রুম থেকে বেরুলো। দরজা খোলার শব্দ শুনে,সাচীকে না দেখেই আরাদ হাসলো। বুঝতে পারলো সাচী শাড়ি পরতে পারেনা। হয়তো একঘন্টা যুদ্ধ করেছে শাড়ির সাথে। আর সেটা সাচীর দিকে তাকিয়ে, আরাদ আরো শিউর হলো। পুরো শাড়িতে সেফটিপিন এর বাহার। শাড়ি পরেছে,না সেফটিফিন পরেছে, আরাদ কনফিউজড!

তবে লাল জামদানিতে সাচীকে পুরো নতুন বউ বউ লাগছে। বউ কথাটা ভাবতেই আরাদের বুকটা চিনচিন করে উঠলো।
কোন মানে হয়!
অন্যের বউয়ের জন্য, বুক পুড়ে!
তোর ক্যারেক্টার ঢিলা হয়ে গেল নাকি রাদ? নিজেই নিজেকে মনে মনে প্রশ্ন করছে।

হ্যাঁ,সাচী কিছুদিন পরেই হয়তো এভাবে লাল টুকটুকে বউ সাজবে। তবে সেটা অন্য কারো জন্য। আরাদের জন্য নয়!
এটাই বাস্তব!
আরাদ সেই দৃশ্য দেখার জন্য থাকবেনা অবশ্য।

তাই এখনও অন্য কারো বউকে এভাবে খুঁটিয়ে দেখার, কোন অধিকার আরাদের নেই। এটা ভেবেই আরাদ চোখ সরিয়ে নিলো মুহুর্তেই। যদিও মনের চোখ বেহায়ার মতো ঐ মানবীকেই দেখছিলো তখনো। বাহিরের চোখ তো নিজের কথা শুনে,মনের চোখ যে কেবল মনের কথায় শুনে। আর আরাদের মনের চোখ তখন সেই রক্তিম আভা ছড়ানো, ঘনকালো চোখের পাপড়ি পিটপিট করা, মানবীকে দেখতে চাইছিলো,যেখানে আরাদের নিষেধ করার কোন সুযোগ নেই।
মনের কাছে যে ব্যক্তি ভীষণ অসহায়।

সাচী সোফায় গুটিশুটি হয়ে বসে রইলো। একসময় আরাদ জিজ্ঞেস করলো চা,কফি কিছু খাবে কিনা?

সাচী বললো কফি খাবে।

তখন আরাদ অদ্ভুত ভাবে তাকিয়ে প্রশ্ন করলো,

‘আপনার কফি পছন্দ?’

‘জবাবে সাচী মাথা নাড়ালো কেবল।’

তখন আরাদ চোখেমুখে বিস্ময় নিয়ে বললো,
‘কিন্তু আমিতো আপনাকে সবসময় চা খেতে দেখেছি?’

সেটা শুনে সাচী স্বাভাবিকভাবেই বললো,
‘কারন তুহিন চা পছন্দ করে।’

সাচীর জবাবটা শুনে,আরাদের বুকের ভেতর কি যেন একটা হলো। তবে সেটা বজ্রপাত,নাকি তুষারপাত,তা আরাদের জানা নেই। আর এ কথার পর আরাদের আর কোন প্রশ্ন করা চলে না। তবুও সে বললো,

‘তাহলে এখন কফি খেতে চাইছেন কেন?’

বিশেষ কোন কারন নেই। এমনি, খেতে ইচ্ছে করছে। অনেকদিন খাই না। তবে আপনার যেটা ভালো লাগে,সেটাই আনতে পারেন। আরাদ কফি বানাতেই চলে গেলো। যদিও ওরও চা-ই পছন্দ।

কফি খেতে খেতে বৃষ্টি থেমে গেলো অনেকটা। হালকা গুঁড়ি গুঁড়ি পড়ছে। রাত তখন এগারোটা বাজে।
আরাদ সাচীকে থাকার কথা বলতেই পারতো,যদি ওর মা বাসায় থাকতো। কিন্তু এখন যত রাতই হোক,সাচীকে বাসায় পৌঁছে দিতে হবে। যদিও এতো রাতে একজন মেয়েকে সাথে নিয়ে যাওয়াটা ভীষণ রিস্কি। পুলিশের সামনে পড়লেই ঝামেলা। এরা রাস্তাঘাটে ছেলেমেয়ে একসাথে দেখলেই,সন্দেহ করে বসে। অবশ্য ওদেরই আর দোষ দিয়ে কি লাভ?
পোলাপান যেভাবে চারদিকে পালিয়ে যাচ্ছে। আন্ডা থেকে ফোটার আগে,নিজেরা আন্ডা তৈরির প্ল্যান শুরু করে দেয়। আর সেখানে মাঝরাতে কোন ছেলেমেয়েকে দেখলে তো কোন কথায় নেই। যদিও ওরা দুজন অ্যাডাল্ট। কিন্তু অবস্থা এমন যে,আরাদকে এখন এই কাজটায় করতে হবে। যা হওয়ার হবে।

আরাদ ওর বাইকটা বের করলো। তখন আকাশ মোটামুটি পরিষ্কার হয়ে গেছে। ভাদ্র মাসের চাঁদনী আকাশে। মেঘের কারনে ঢেকে গিয়েছিলো। কথায় আছে,ভাদ্র মাসের চাঁদনীতে নাকি,নদীর তলা দেখা যায়।

সাচী আরাদকে না ধরে,গাড়ির পেছনের দিকের লোহার অংশটাতে ধরে রাখলো। আরাদও কিছু বললোনা। তবে সে ধীর গতিতে গাড়ি চালাতে লাগলো। যদিও জানে,এতে সময় লাগবে বেশ। কিন্তু জোরে চালালে, না সাচী শাড়ি সামলাতে পারবে,না নিজেকে।

নীরব রাস্তা দিয়ে ছুটে চলেছে একটা গাড়ি,আর তার উপর একজোড়া মানুষ। যদিও তারা জোড় নয়। দুজন, দুজন ভিন্ন মানুষের জোড়া। যদিও আরাদ একা থাকার পণ নিয়ে বসে আছে। কিন্তু সামনে কি হবে,তা কি আমরা কেউ জানি?
জানি না।
বৃষ্টি হওয়ার কারনে,আর মোটামুটি রাত হয়ে যাওয়াতে,মানুষের আনাগোনা অনেক কম। মাঝে মাঝে দুয়েকটা ট্রাক,পিকআপ ভ্যান যাচ্ছে কেবল।

চাঁদের আলো রাস্তায় পড়ে,রাস্তায় জমে থাকা পানিগুলো ঝলমল করছে। গাছের পাতায় জমে থাকা পানিগুলো চিকচিক করছে। পিচঢালা ফাঁকা রাস্তাটা ভীষণ ভালো লাগছে। ঝিঁঝি পোকার ডাক ভেসে আসছে কানে। রাস্তার পাশে জোনাকির মেলা বসেছে যেন। অদ্ভুত সুন্দর একটা প্রকৃতি। অথচ দুজন মানুষের একজনও কোনও কথা বলছেনা। যেন কেউ কাউকে চিনেনা। আরাদ কথা বলছেনা ভয়ে। কখন ভুলে কি বলে ফেলে।

তবে সাচী কেন কথা বলছেনা,সেটা আরাদ জানে না। হয়তো এতো রাত হয়ে গেছে,তাই টেনশন হচ্ছে। ইতিমধ্যে ওর বাবা দুই-তিন বার ফোন দিয়ে ফেলেছে। সাচী মিথ্যে বলেছে। বলেছে ওর বান্ধবীর বাসায় আঁটকে গেছে। আর বান্ধবীর বাসা ওদের বাসা থেকে কাছেই। তাই বৃষ্টি কমলেই এসে পড়বে। শফিকুর অবশ্য মেয়েকে আসতে বারণ করতে চাইছিলেন। কিন্তু তার আগেই ফোনটা কেটে গেলো। অবশ্য তিনি এটা জানেন না,ফোনটা সাচী কেটে দিয়েছে। কারন বেশিক্ষণ মিথ্যে বলতে পারছিলোনা সে। সত্য বললে কোন সমস্যা ছিলো না। তবুও কেন যেন বলতে ইচ্ছে হয় নি। হয়তো অজানা কোন চিন্তায়৷
ফোন কেটে একেবারে বন্ধ করে ফেললো সে। যেন আর কল না দেয় কেউ। কিন্তু কল ঠিকই দিয়েছিলো আরো কেউ। আর বন্ধ পেয়েছিলো। মিসড কল এলার্ট চালু থাকার কারনে সাচী বাসায় গিয়ে দেখতে পায় সেটা। তবে অনেক রাত হয়ে যাওয়াতে আর কল দেয় নি সে।

এদিকে আরাদ যেটা নিয়ে ভয় পাচ্ছিলো,সেটাই হলো। প্রধান রাস্তায় উঠে কতটুকু পথ যেতেই, ব্রিজের পাশেই পুলিশ দাঁড়িয়ে ছিলো। ওদের গাড়িটাকে দেখে দাঁড় করালো।
যদিও দুজনের মাথায়ই হ্যালমেট আছে। কিন্তু সাথে গাড়ির কাগজপত্র নেই। তাড়াহুড়ো করতে গিয়ে ভুলে গিয়েছে। কিন্তু এখন!
এরমধ্যে দুজন ছেলেমেয়েকে একসাথে দেখলে, এমনিই সাপের মত পেঁচিয়ে ধরে এরা।

সেদিন কোনক্রমে সত্য-মিথ্যা বলে আরাদ পুলিশের হাত থেকে বেঁচে ছিলো। তবে মিথ্যে বলার সময়, গাড়ির পেছনে সাচীর অবস্থাটা বুঝতে একটুও কষ্ট হয় নি আরাদের। কিন্তু ওর কিছু করার ছিলো না,মিথ্যা বলা ছাড়া। এতো মিথ্যে আরাদ কখনো বলিনি,যতটা সাচীর জন্য বলেছে। কি অদ্ভুত না? আমরা কাছের মানুষদের বাঁচাতে,খুব সহজেই মিথ্যা বলতে পারি। কিন্তু সাচী কি আরাদের কাছের কেউ?
না তো!
তবে…!
এসব ভাবতে গিয়ে,আরাদ কখন বেখেয়ালি হয়ে গেছে বলতেই পারে না। হঠাৎ সামনে থেকে একটা লাইট এসে একেবারে আরাদের চোখে পড়লো,যার কারনে সে কিছুই দেখতে পেলো না। আকস্মাৎ সাচী চিৎকার করে বলে উঠলো,আরাদ…!

#চলবে…

সবার মতামত আশা করছি।?

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here