#যখন_তুমি_এলে
লেখা: জাহান লিমু
পর্ব : ৪৫
———-
আমি আসছি তোমাকে নিতে। আজ রাতের ফ্লাইটেই। অনেক হয়েছে অভিমান,আর না। না আসতে চাইলে,উঠিয়ে নিয়ে আসবো। এই বয়সে হিরো সাজতে হবে আবার তোমার জন্য। অবশ্য আমিতো হিরোই, অন্তত তোমার কাছে। জানিনা এখনো আছি কিনা। সব ভুলে আসছি আমি। তবুও যদি নায়িকার অভিমানের পালা চুকাতে পারি!
ফিল্টার বক্সের এই মেসেজটা কম করে হলেও,হাজারবার দেখেছে আরফা খান। নিজের চোখকে বিশ্বাস করতে পারছেন না। যতবারই মেসেজটা দেখছেন,চোখদুটো ঝাপসা হয়ে আসছে। ফিরে যাচ্ছেন,দুজনের সেই মিষ্টি সময়গুলোতে। ভালোবাসারতো কোন কমতি ছিলো না দুজনের,তবে কেন সেখানে ফাটল দেখা দিলো?
তবে কি তাদের ভালোবাসায় তৈরি ইমারতে খাঁদ ছিলো!
নাকি নিয়তি তাদের বিচ্ছেদ লিখে রেখেছিলো?
কিছুই জানেন না তিনি। শুধু জানেন আরাফ উনাকে অনেক বড় আঘাত দিয়েছেন,অনেক বড়। তা না হলে,এতো বছরের সংসার এভাবে ঠেলে ফেলে চলে আসতে পারতেন না। যেখানে ছেলে যথেষ্ট বড় ছিলো,আর সব হয়তো বুঝতে পেরেছিলো। আর ঠিক সে কারনেই আরফা লজ্জায় মারা যেতেন। নিজের ছেলের কাছে,নিজেকে ভীষণ ছোট লাগতো। তাই অনেকদিন কথা পর্যন্ত বলতে পারেন নি দ্বিধায়। হীনমন্যতায় ভুগতেন। একসময় ডিপ্রেশনেও চলে গিয়েছিলেন। অনেকদিন এভাবে কেটেছে উনার। ডিপ্রেশনে থাকাকালীন প্রায় প্রায়ই স্বপ্ন দেখতেন,আরাফ তার কাছে ক্ষমা চাইছে। তাকে ভুল বুঝার জন্য ভীষণ অনুতপ্ত সে। তাকে ফিরিয়ে নিতে মরিয়া হয়ে উঠেছে আরাফ।
কিন্তু ঘুম ভাঙলেই দেখতেন,সেসব স্বপ্ন। সব মরীচিকা। আরাফ তাকে একটা টেক্সটও করতোনা। অনেকদিন তিনি নাম্বার পাল্টাননি,যদি আরাফ হঠাৎ ফোন করে বসে। সেই আশায়। কিন্তু উনার আশাটা একসময় নিরাশায় পরিণত হলো। ধীরে ধীরে তিনি পাল্টে গেলেন। সেই সাথে পুরোনো সিমটাও একসময় পাল্টে ফেললেন,যেটা ছিলো আরাফেরই দেয়া। আরাফের জন্য নিজের ভেতর আর কোন ভালোবাসার অস্তিত্ব টের পেলেন না। তবে কি মানুষ চাইলে সব পারে?
যাকে নিজের অস্তিত্ব ভাবতেন,কখনো কি ভেবেছিলেন এভাবে তাকে ভুলে দিব্যি জীবন কাঁটাবেন?
অবশ্য ভুলে গেছেন বললে,ভুল হবে। কারন মানুষ কাছের মানুষদের সাথে রাগ করতে পারে,অভিমান করতে পারে,কিন্তু তাকে ভুলতে পারেনা। শুধু ভুলে থাকার অভিনয়টুকু করতে পারে। সে অভিনয়ে কেউ কাঁচা,কেউবা ভীষণ পাঁকা। আর আরফা একজন পাঁকা অভিনেত্রী, অনস্ক্রিন-অফস্ক্রিন দুটোতেই।
গত ছয়মাস যাবত লাগাতার ক্ষমা চেয়ে যাচ্ছে আরাফ খান। কিন্তু আরফা কোন জবাব দিচ্ছেন না। শুধু মেসেজগুলো দেখেন প্রতিদিন রাতে ঘুমানোর আগে। আর চোখের জল মুছেন। তাচ্ছিল্যের হাসি হেসে একা একাই কথা বলেন। একসময় এই মেসেজটার জন্য কত অপেক্ষা করেছেন। অথচ তখন কত অদ্ভুতভাবে আরাফ তাকে ভুলে দিব্যি থেকেছেন। একবারের জন্যও মনে করেন নি। আর আজ যখন আরফার মনে কোন আবেগ,অনুভূতি আর অবশিষ্ট নেই,তখন এসেছে তার হিরোগিরি দেখাতে। এই বয়সে এসেও,তার ভাব কমলোনা। অথচ নিজেদের রাগ,অভিমানে ছেলের সুন্দর জীবনটা নষ্ট করে দিলেন। এখন ছেলে কারো সাথেই ঠিকমত কথা বলে না। বাবার সাথে তো নয়ই। মায়ের ফোন ইচ্ছে হলে তুলে,না হলে নাই। ছেলেটাও হয়েছে ভীষণ জেদি।
সেদিন টিভিতে বিমান ক্রেশের নিউজটা দেখেই,আরফার হাত-পা ঠান্ডা হয়ে আসতে লাগলো। অজানা আতঙ্কে গলাটা শুকিয়ে আসছিলো। সাথে সাথেই অযু করে জায়নামাযে বসে গেলেন। যেন যে ভয়টা পাচ্ছেন,তেমন কিছু না হয়। কিন্তু কিছু কিছু বিষয় আমাদের হাতে থাকেনা। উপরে যিনি আছেন,তিনি যেভাবে কলকাঠি নাড়ানোর, সেভাবেই নাড়ান। সেখানে কারো ভাগ্যে হাসি ফুটে,কারো ভাগ্যে কান্না।
কিংবা কারো কারো কান্নার পরও,আবার কান্নায় জুটে।
আসন্ন বিপদের পূর্বাভাস কাছের মানুষকে অস্থির করে তোলে। আরফা জায়নামাযে বসেই ফোনটা হাতে নিয়ে মেসেজটা কখন পাঠানো হয়েছে,সময়টা চেক করলেন।
এরপর নেটে চেক করলেন নেপাল থেকে ইন্ডিয়াগামী আজকের ফ্লাইট কয়টায়। আজকে রাতে একটা ফ্লাইটই ছিলো। আর সেটা সাড়ে এগারটার দিকে মুম্বাই এয়ারপোর্টে ল্যান্ড করার কথা। সময়টা দেখেই, আরফা ঝরঝর করে কেঁদে দিলেন। সবকিছু মিলিয়ে কেন যেন মনে হচ্ছে, আরাফ এই ফ্লাইটেই এসেছে। আর সেটা ভেবেই উনার শরীর হিম হয়ে আসছিলো। একসময় সেন্সলেসও হয়ে গেলেন।
তখন উনি যার বাসায় থাকেন,তিনি এসে দেখলেন। আরফা মুম্বাই আছে একজন ইন্ডিয়ান টিভি অভিনেত্রীর বাসায়। সেই অভিনেত্রী বাংলাদেশে গিয়েছিলেন,একটা টেলিফিল্মে কাজ করতে। সেখানে দুজন একসাথে কাজ করতে যেয়ে,বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক গড়ে উঠে। ওর নাম রিদিমা। মূলত কলকাতার মেয়ে।একজন সিংগেল মাদার। পনের বছরের একটা মেয়ে আছে। যখন আরফা দিশেহারা হয়ে বাড়ি ছাড়তে যান,তখন রিদিমাকে সব বলেন। রিদিমা কিছুদিনের জন্য ওর এখানে চলে আসার কথা বলে। কিন্তু আরফা স্থায়ীভাবে থাকার ব্যবস্থা করেই চলে যান। কোনদিনও আর ফিরতে চান নি। অবশ্য নিজেই চাকুরী করেন,অভিনয়টা ছেড়ে দিয়েছেন আরো আগেই। রিদিমা অবশ্য বলতো অভিনয় কনটিনিউ করার জন্য। কিন্তু মন সায় দিতো না উনার। যে অভিনয় জগত তার সংসার কেড়ে নিলো,সে অভিনয়ের জগতে আর পা মাড়াতে চান না। অনেকক্ষণ মাথায় পানি ঢালার পর উনার হুঁশ আসে। হুঁশ আসতেই উনি প্রলাপ বকতে লাগলেন। একসময় রিদিমাকে সবটা বললেন। তখন রিদিমা নিজের মতো করে খোঁজ নেয়ার চেষ্টা করলেন। কিন্তু এভাবে কাউকে খুঁজে পাওয়া কষ্টসাধ্য। তাই আরফাকে বললেন,ওর হাসব্যান্ড যেখানে থাকতো,সেখানের কারো নাম্বার আছে কিনা। কিন্তু ওর কাছে নেই। যতটুকু জানে,সম্ভবত কোন বন্ধুর সাথেই থাকতো। কিন্তু তার সাথে তো আরফার কোন যোগাযোগ নেই। যখন কোন উপায় খুঁজে পাচ্ছিলেন না,অন্যদিকে খবরে বলছিলো অধিকাংশ যাত্রী বাঁচার সম্ভাবনা নেই। তখন আরফা পাথরের ন্যায় ফ্লোরে বসে রইলেন। রিদিমাও কিছু বুঝতে পারছিলোনা। এভাবে অনেকক্ষণ যাওয়ার পর,সহসা আরফার ফোনে একটা কল আসে। মেসেঞ্জারে অডিও কল। ওয়াইফাই আছে,তাই ডাটা অনই থাকে। প্রথমে প্রচন্ড বিরক্ত হলেন,কারন এমনিতেই আছেন প্রেসারে। তার মধ্যে এসব অপরিচিত কল,বিরক্ত লাগা স্বাভাবিক।
কিন্তু রিদিমা কি যেন ভেবে কলটা রিসিভ করে। তখন ওপাশ থেকে প্রশ্ন আসে,
‘আপনি কি মিসেস আরফা খান,উয়াইফ অফ আরাফ খান?’
রিদিমা কি বলবে বুঝতে পারলোনা। তবে আরফার কাছে দিতেও মনটা কেমন খচখচ করছে। কোন দুঃসংবাদ দিতে তো কেউ কল করেনি!
রিদিমা নিজেই বলে ফেললো, জ্বি বলুন।
তখন যেটা ভয় করছিলো,সেটাই হলো। রিদিমা স্থির বসে রইলেন। আরফা তখনো নীরব। কিন্তু রিদিমাকে ফোন রেখে দিতে দেখে,আরফা বিচলিত বোধ করলেন। জিজ্ঞেস করলেন,’কে ফোন করেছে।’
কিন্তু রিদিমা কিছু না বলে,আরফাকে বলে যে ওদের বের হতে হবে। কিন্তু কোথায় যাবে,সেটা কিছু বলেনি। এতোরাতে কি দরকার রিদিমার?
সারা রাস্তা জুরে আরফা একই প্রশ্ন করে গেলো,কিন্তু কোন উত্তর নেই। তখন রাত দুটো বাজে।
রিদিমা এয়ারপোর্টের কাছে গিয়ে গাড়ি থামালো। আরফা তখন চতুর্দিকে মানুষের গিজগিজ দেখতে পেলো। চারদিকে আহাজারি,আর্তনাদ। কারন বিমানটাতে বেশিরভাগ ছিলো ইন্ডিয়ার বাসিন্দারা। আরফার এবার কিছু বুঝতে বাকী রইলোনা। তার মানে ফোনের ওপাশের ব্যক্তির কথা শুনেই রিদিমা এখানে এসেছে। আর কিছু ভাবতে পারছেনা সে। চিৎকার করেই সেখানে বসে পড়লো। রিদিমা ওকে টেনে তোলার চেষ্টা করলো। কিন্তু পারলোনা। তখন রিদিমা ওকে সেখানে রেখেই, আশেপাশের লোকজনদের জিজ্ঞেস করলো, জীবিত কতজনকে উদ্ধার করা হয়েছে?
কিন্তু উত্তর খুবই হতাশাজনক। কারন অধিকাংশ মৃত,আর যে কয়জনকে হাসপাতালে নেয়া হয়েছে,তাদের অধিকাংশের বাঁচার সম্ভাবনা ত্রিশ-চল্লিশ পার্সেন্ট। রিদিমা এবার হাল ছেড়ে দিলো। এখন কি করে জানবে,আরফার হাসব্যান্ড বেঁচে আছে,না মারা গেছে।
একটা ভরসা নিয়ে হাসপাতালের দিকে গেলো ওরা। আরফা তখন জীবিত লাশে পরিণত হয়েছে। কোন কথা বলছেনা। হাসপাতালে গিয়ে অনেকক্ষণ বসে রইলো ওরা। সমানে ডেডবডি আসছে। আরফা ফ্যালফ্যাল করে সেদিকে তাকিয়ে রইলো। একসময় কার্যরত ডাক্তারদের কাছে জানতে পারলো এ পর্যন্ত আনা, তেরোজন রোগীর অবস্থা একটু ভালো। আর এগারো জনের অবস্থা আশংকাজনক, কিছু বলা যাচ্ছে না এই মুহুর্তে। রিদিমা মনেপ্রাণে দোয়া করতে লাগলো যেন,এই এগারো জনের মধ্যে আরফার স্বামী না থাকে। কিন্তু নিয়তি বোধহয় সেটা চায়নি। আরাফের দেখা ঐ আশংকাজনক এগারো জনের মধ্যেই পাওয়া গেলো। এবং সেটাও মারা যাওয়ার পর। শেষ কথাটুকুও আর বলা হলো না দুজনের। কেমন গভীর অভিমান নিয়ে ঘুমিয়ে ছিলো,আরফার আরাফ কুমার। যেন আরফার অভিমানের বদলা নিলো সে। আর কিছু বলার সুযোগ দিলো না। অথচ কতশত অভিমানী কথা জমে ছিলো মনের কুঠুরে।
উত্তম কুমারের মত দেখতে অনেকটা,তাই আরাফকে আরাফ কুমার ডাকতো আরফা। অথচ নিজেকে সুচিত্রা সেন বললে,রেগে যেতো। কারন আরফা ছিলো কৃষ্ণকলি। সুচিত্রা সেনের মতো সুন্দরী নয়। তবুও আরাফ সুচিত্রাই ডাকতো।
এতো বেশি ভালোবাসাতে বুঝি কুচক্রী মানুষের নজর লেগেই যায়?
সব শেষ,সব!
আরফা সেখানেই আরাফের মুখটা একপলক দেখেই সেন্সলেস হয়ে গেলো। মুখে তেমন সিরিয়াস আঘাত ছিলো না,তাই চিনতে কষ্ট হয় নি। রিদিমা কি করবে,বুঝতে পারলনা। আরফাকে ঐ হাসপাতালেই ভর্তি করলো। ভোরের দিকে জ্ঞান ফিরলো আরফার। কিন্তু কোন কথা বলছেনা। রিদিমা আরফার পাশেই ঘুমিয়ে পড়েছিলো। একসময় আরফা রিদিমার কাছে ওর ফোনটা চাইলো। তখন আরাদকে ফোন দিয়ে দুই মা ছেলে কান্নায় ভেঙে পড়লো। যদিও অনেকগুলো কল দেয়ার পর, আরাদ ফোন রিসিভ করলো।
ফোনের দুপাশে দুজন মানুষের আহাজারিতে ভারী হয়ে উঠছিলো আকাশ-বাতাস।
প্রায় একসপ্তাহ পর সকল প্রকার ঝামেলা মিটিয়ে আরাদের বাবার লাশ নিয়ে দেশে ফিরলো আরফা আর আরাদ। আরফা খুব করে দেশে ফিরতে চাইতেন,কিন্তু এভাবে ফিরতে হবে জানলে কোনদিনও ফেরার ইচ্ছে পোষণ করতেন না। ভীষণ অসহায় লাগছে নিজেকে। অপরাধী লাগছে। কি হতো যদি উনি ছয়মাস আগেই ক্ষমা করে,দেশে ফিরে আসতেন। তাহলে কি আজ এ জায়গায় থাকতে হতো!
অনেক সময় আমরা বিভিন্ন দুর্ঘটনায় নিজেদের দায়ী করি। কিন্তু সেটা আসলে ঠিক নয়। যা হওয়ার তা হবেই। আমাদের হাতে কিছুই করার থাকেনা সেখানে। আর এটা মেনে নেওয়াই ম্যাচিউরিটি। যদিও সবসময় মনকে বুঝানো সহজ হয়ে ওঠে না।
পাসপোর্ট আর ভিসা করতে পাঁচ-ছয়দিন লেগে গেলো আরাদের। তারপর ইন্ডিয়া গিয়ে নিয়ে আসলো। আরাদের দাদী কান্নায় ভেঙে পড়লেন মৃত ছেলের মুখটা দেখে।
ছেলের শোকে উনি নিজেও আবার অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। আরফার প্রতি চরম ক্ষোভ দেখাতে লাগলেন। যদিও উনি জানেন,এখানে আরফার কোন দোষ নেই। কিন্তু মায়ের সামনে সন্তানের মৃত্যুতে,কোন মায়েরই হুঁশ থাকেনা। তাই আরফা কোন কথা বলছেন না। তবে প্রাণপনে নিজের কষ্টটা চেপে যাচ্ছেন। কারন অনেক সময় পরিস্থিতি এমন হয় যে,কষ্ট দেখালেও মানুষ ভাবে,সেটা মেকি কষ্ট। লোক দেখানো। যেহেতু উনাদের আটবছর কোন যোগাযোগ ছিলো না। অথচ কেউ সেটার ভেতরের কাহিনী জানতে চায় না,বা জানেনা। বাইরে থেকে যেটা দেখে,সেটা নিয়েই হইচই করে। এটা মানুষের অদ্ভুত স্বভাব।
আরাদের বাবা মারা গেছে,প্রায় একমাস। বাবাহীন জীবন যদিও গত আটটা বছর ধরে সে কাটাচ্ছে,কিন্তু তবুও তো বাবার ছায়াটা ছিলো। এখনতো সেটাও নেই। এটা ভেবেই আরাদের বুকের ভেতরটা দুমড়ে-মুচড়ে যাচ্ছে। কেন একবারের জন্য হলেও,বাবার সাথে কথা বলেনি?
নিজেকে খুব অপরাধী লাগছে।
এই ছোট্ট জীবনে কি লাভ, এতো মান-অভিমান করে?
কাকে কখন চলে যেতে হয়,কেউ জানেনা।
আরাদ রাতে একা কাঁদে। অনুশোচনায় ভুগে। বাবা,মা যেমনই হোক,তবুও সন্তানের জন্য তারা জীবনের শ্রেষ্ঠ সম্পদ। কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য,হারিয়ে সেটা বুঝতে পারে সবাই।
যদিও প্রত্যক্ষভাবে দেখলে মনে হবে,আরাদের কোন দোষ নেই। কিন্তু আসলে আছে। সে কি পারতোনা মা,বাবাকে এক করার চেষ্টা করতে?
কিন্তু সে এটা করেনি। আসলে যেখানে বাবার সাথে কথায় বলতোনা, সেখানে এসব ভাবার সুযোগ কোথায়?
সবকিছু যেন প্রতিকূলে ছিলো।
আরাদ মনেপ্রাণে বিশ্বাস করতো,ওর মা চরিত্রহীনা নয়। কিন্তু বাবা কেন মাকে ভুল বুঝলো?
সেই জিদেই আরাদ বাবার সাথে কথা বলতোনা।
কিন্তু বাবা বোধহয় নিজের ভুলটা বুঝতে পেরেছিলেন। কিন্তু তখন সব শেষ!
জীবনটা এমন জটিল কেন?
যখন আমরা নিজেদের ভুল বুঝতে পারি,তখন জীবন আমাদের অন্য কোন মোড়েই এনে দাঁড় করিয়ে দেয়। হয়তো এটাও আমাদের জন্য কোন শিক্ষা।
আমরা চাই জীবন আমাদের মনমতো চলুক,কিন্তু উপরে যিনি আছেন, তিনি হয়তো হাসেন আমাদের ভাবনা দেখে। কেননা উত্তম পরিকল্পনাকারী যে তিনিই। যদি দুঃখও দেন,সেটারও হয়তো কোন উদ্দেশ্য আছে।
#চলবে.