#যখন_তুমি_এলে
লেখা: জাহান লিমু।
পর্ব: ৩৮।
__________
” সন্তানের নিরাপদ ভবিষ্যৎ চাওয়াটা কি বাবা,মায়ের অন্যায়?”
বিরুনিকার বাবা মারা গেছে আরো আটবছর আগে। তিনটা ছেলেমেয়েকে আমি একা হাতে টেনে নিয়ে চলেছি। নিজের দিকে তাকানোর সময়টুকু নেই। আমরা মধ্যবিত্তদের সম্পদ বলতে তো কিছুই নেই। সেখানে মেয়েদেরকে যদি একটা ভালো জায়গায় বিয়ে না দেই,তবে যে নিজেও স্বস্তিতে থাকতে পারবনা। নিজেরও তো বয়স হচ্ছে। আরো এক মেয়ে রয়েছে। ছেলেটা এখনো ছোট। তবুও মেয়েকে আমি স্নাতক শেষ করিয়েছি। জোর করে কোন সিদ্ধান্ত চাপিয়ে দেই নি। আজও দিবোনা। কিন্তু আমার কথাগুলো কি ভুল? আমি কি আমার মেয়ের ভালো থাকাটা চাইতে পারিনা?
খুব বেশি পয়সাওয়ালা ছেলে তো চাই নি। কেবল একটা কর্মঠ ছেলে চেয়েছি। যার মধ্যে কাজ করার স্পৃহা আছে। আর আমি তোমার মধ্যে সেটা দেখতে পেয়েছিলাম। তুমি বিয়ে না করতে চাইলে,না করবে। তোমাকে জোর করার সাহস বা অধিকার কোনটায় আমার নেই।
কোমলের কথা শুনে পুরো রুম জুরে নিস্তব্ধতা। শুধু উপরে ফ্যানটা কটকট করে ঘুরছে। এখানে উপস্থিত দুজন একে অন্যের মুখের দিকে তাকাচ্ছে। কারন উনার কথাগুলো ভুল নয়। রুম জুরে বেশ কিছুক্ষণ পিনপতন নীরবতা। একসময় নীরবতা ভেঙে আরাদই কথা বললো।
” আপনার চাওয়াগুলো একবিন্দুও ভুল নয় আন্টি। আর আমি আপনাকে মায়ের মতই রেসপেক্ট করি। সাহস দেখানোর কথা বলে, আমাকে লজ্জায় ফেলে দিলেন। আর বিরুনিকাকে আমি স্মরণিকার মতোই বোনের চোখে দেখে এসেছি। তাই বিয়ে করার কথা কখনো ভাবিওনি। সাচী যখন বললো,আমি সরাসরি না করেছিলাম। কিন্তু বিশেষ একটা কারনে, আপনাকে মিথ্যে বলেছিলাম। তবে আপনি এতোটা সিরিয়াস,সেটা আমি বুঝতে পারিনি। তাহলে আরো আগেই আমি আপনার সাথে এ বিষয়ে কথা বলতাম। তার জন্য সরি।
আরাদ কিছুক্ষণ থামল। সাচীর দিকে একপলক তাকালো। সাচী চোখের ইশারায় স্বাভাবিক থাকতে বললো। আরাদ আবার বলতে লাগলো,
” তবে সবকিছুর আগে কিন্তু আপনার মেয়ের ভালো থাকাটা। সে কাকে চায়,কার সাথে ভালো থাকবে। আমরা বাইরে থেকে একটা মানুষকে জাজ করতে পারিনা। আর সব মানুষ অবশ্যই একরকম নয়। একেকজনের চিন্তাভাবনা একেকরকম,ইচ্ছে একেকরকম। সবার লক্ষ্য এক নয়। তবে যে যেটা পছন্দ করে,তার সেটাই করা উচিত। একসময় না একসময় সে সফল হবেই। হয়তো সময়ের হেরফের হবে। আর কোন পেশাকেই ছোট করা উচিত না। নিজের কষ্টে উপার্জিত অর্থের মূল্য, সবার কাছেই এক। কেউ কায়িক পরিশ্রম করে উপার্জন করে,কেউবা মেধার মননে। আর মেধা বলতে কেবল প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা লব্দ সার্টিফিকেট নয়।”
” তুমি ঠিক কি বলতে চাইছো,সরাসরি ঝেঁড়ে কেশে ফেলো। তোমাকে তো আমি জোর করছিনা। তোমরা দুজন এভাবে একসাথে এসেছো,তার মানে কথা তো বিশেষ কিছু আছেই। ভণিতা না করে, সেটাই বলে ফেলো এবার।”
কোমলের এমন কথায় সাচী একটু নার্ভাস হয়ে গেলো। তবে আরাদ স্বাভাবিক। সাচীর নার্ভাস হওয়ার কারন, সে জানে কোমল একটু রুক্ষ প্রকৃতির। এমনিতে ভালোই। হয়তো একা সংসার সামলে এমন রুক্ষ হয়ে গিয়েছেন। কিংবা সন্তানের কথা আসলে,মায়েদের এমনই শক্ত হতে হয়। কোমলের কথার সরাসরি কোন জবাব না দিয়ে,আরাদ কোমলকে ছাদে যাওয়ার জন্য বললো। যদিও কোমল কিছু ভেবে পাচ্ছিলো না। এদিকে বিরুকেও বাসায় দেখছেন না, অফিস থেকে এসে। ফ্রেশ হয়ে সোফায় বসেছিলেন কেবল,তখনি এরা দুজন উপস্থিত। মনে হচ্ছিলো, উনার আসার জন্যই অপেক্ষা করছিলো। সবকিছু কেমন ঘোলাটে লাগছে উনার। এসব ভাবতে ভাবতে ছাদে গেলেন।
দরজা খোলার পর মায়ের পেছনে আরাদ আর সাচীকে দেখে বিরুনিকা একটু স্বস্তি পেলো। তবে মায়ের চোখের দিকে তাকানোর সাহসটুকু পাচ্ছে না। সায়াহ্নর পেছনে দাঁড়িয়ে আছে। সেটা দেখে সায়াহ্ন হাসলো মনে মনে।
ছাদে বসার জায়গা ছিলো। তবে কোমল রুক্ষ কন্ঠে সবাইকে নিচে যেতে বললো। সাচীকে বললো,ওর বাবাকে আসতে বলার জন্য। বিরুনিকা সাচীর পাশে বসে,সাচীর হাত শক্ত করে ধরে রাখলো। সাচীর পাশেই সায়াহ্ন। অপরপাশের সোফায় আরাদ কোমলের পাশে বসেছে। শফিকুর একটু নিচে গিয়েছেন,এসে পড়বেন এখনি।
বিরুনিকা তখনো ভয়ে মাথা নিচু করে আছে। ঠিক তখনি মায়ের শান্ত স্বরটা শুনতে পেলো। যেটা ওর আত্না কাঁপিয়ে দিলো। যদিও সে জানে,ওর মা কেমন। একদম সোজাসুজি কথা বলতে পছন্দ করেন সবসময়। কোমল মেয়ের দিকে তাকিয়ে শান্ত স্বরে বললেন,
” তুমি কি নিশ্চিত, এই ছেলেকেই জীবন সঙ্গী হিসেবে চাও? এখনও সময় আছে,ভেবে দেখ। জীবনে চলতে গেলে ভালোবাসার চেয়েও বেশি জরুরী,আর্থিক স্থিতি। এখন ভাবছো,ভালোবাসায় সব। কিন্তু কয়েক বছর যেতেই নিজেই বুঝতে পারবে সব। তখন ভালোবাসা ফিকে না হয়ে যায়! তাই এখনো ভাবো। সায়াহ্ন চুপচাপ কথাগুলো শুনছিলো। যখন কোমল থামলেন,তখন সে কথা শুরু করলো।
অবশ্য এর আগে একটা কাগজ উনার সামনে রাখলেন। কোমল ভ্রু কুঁচকে তাকালেন। সায়াহ্ন সেটা পড়ে দেখার জন্য ইশারা করলো। কোমল হাতে নিলেন কাগজটা। চশমাটা ঠিক করে নিলেন। বিরুনিকা ফ্যানের নিচে বসেও, ঘামছে। সাচী বিরুনিকার হাতটা শক্ত করেই ধরে রাখলো। যেন ভরসা দিচ্ছে সে। আরাদ সেটা দেখে ঠোঁট প্রসারিত করলো। বুঝতে পারলো দুজনের বন্ডিং বেশ ভালো। তাহলে তো তুহিনের বিষয়টা বিরুনিকা নিশ্চয়ই জানে৷ আরাদের ভাবনায় ব্যাঘাত ঘটলো,কোমলের ভারী কন্ঠে। তিনি সায়াহ্ন কে বলছেন,
” তুমি কাগজটা দেখিয়ে কি বুঝাতে চাইছো? টাকা দেখাচ্ছো আমাকে?”
কোমলের কথায় সবাই হতবাক হয়ে গেলো। তবে সায়াহ্ন অবাক হলো না। কারন সে এরচেয়েও তিক্ত কথার সম্মুখীন হয়েছে উনার কাছে। তাই সে স্বাভাবিক ভাবেই বললো,
আপনি যদি মনে করেন,তবে সেটাই। আমার কথাটাকে আবার বেয়াদবি ভেবে নিবেন না। আপনি স্পষ্ট কথা বলতে ভালোবাসেন,তাই আমিও স্পষ্ট করেই বললাম।
সায়াহ্নর কথায় কোমলের চোখেমুখে ক্ষোভ স্পষ্ট।
সায়াহ্ন তখনো বলে চলেছে,
তবে আমার কাছে এই কাগজটা আমার আত্নপরিচয়। আমার সম্মান। দু’দিন আগেও যারা তুচ্ছতাচ্ছিল্য করতো,এটা তাদের জন্য জবাব। আমি কাজে সফল হওয়ার আগ পর্যন্ত,কখনো লাফায় না। আর এটা আমার সফলতার প্রথম স্তম্ভ কেবল। আরো অনেক দূর যেতে হবে। অনেক পরিশ্রম করতে হবে। এটাতো কেবল যাত্রার শুরু। এটাই আমার প্যাশন। আর আমার প্যাশনটাকেই, আমি প্রফেশান হিসেবে নিতে চাই। এজন্যই আমি কোন জব বা বিজন্যাসের ট্রাই করিনি। হ্যাঁ,আমাদের দেশের প্রেক্ষাপটে প্যাশনটাকে প্রফেশান হিসেবে নিতে চাওয়া,একপ্রকার বিলাসিতাই বটে। তবুও আমি আমার লক্ষ্যে অটল ছিলাম। এজন্য কোনদিন কোন সম্পর্কে জড়ায়নি। কারন আমি কোন মেয়েকে কষ্ট দিতে চাই নি। বেকারত্নের অযুহাতে হাজার হাজার ভালোবাসা, মাঝপথে বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। আমি সেটা করতে চায় নি।
তবে একটা মেয়ের কাছে আমি হেরে গিয়েছিলাম একসময়।
কথাটা শুনে বিরুনিকা মাথা তুলে তাকালো এবার। সায়াহ্ন বিরুনিকার দিকে না তাকিয়েও, সেটা বেশ বুঝতে পারলো।
সে নিজের মত বলে চললো,
মেয়েটা আহামরি রুপসী নয়। খুবই সাদামাটা। একটু স্টুপিড,ইডিয়ট প্রকৃতির। এবার বিরুনিকা সবাইকে উপেক্ষা করে চোখ বড় বড় করে সায়াহ্নর দিকে তাকালো। সবার সামনে বলে বসলো,
” কিহ,আমি স্টুপিড? ইডিয়ট? ”
” তা নয়তো কি?”
আরাদ,সাচী মুখ টিপে হাসতে লাগলো ওদের কথা শুনে।
তখন কোমল কাশি দিলেন। সাথে সাথে বিরুনিকা চুপ!
তার মা যে এখানে আছে,সেটা বোধহয় কিছুক্ষণের জন্য সে ভুলে গিয়েছিলো। মাটি ফাঁক করে ঢুকে যেতে মন চাইছিলো এ মুহুর্তে।
আমি টের পেলাম, সে মেয়েটাকে আমি না চাইতেও ভালোবেসে ফেলেছি। না চাইতেও বলার কারনটা নিশ্চয়ই আপনি জানেন? কোমলের দিকে তাকিয়ে প্রশ্নটা ছুড়ে দিলো সায়াহ্ন। কোমল থতমত খেয়ে গেলেন। বিরুনিকাও অবাক চোখে তাকালো মায়ের দিকে। সায়াহ্নর কথাটার মানে যে সে বুঝতে পারছেনা কিছুই।
সায়াহ্ন পরিস্থিতি পাল্টানোর জন্য বললো,
তাই ভালোবাসাটা আমি চেপে গেলাম। সেই মেয়েটাকে কখনো টের পেতেই দিই নি যে,আমিও তাকে চায়। ঠিক তার মতই। সবার সামনে এভাবে কথাগুলো সায়াহ্ন বলে চলেছে, সেটা দেখে বিরুনিকা লজ্জায় লাল হয়ে যাচ্ছিলো। একদম মাথা নিচু করে বসে রইলো সে।
মনে মনে স্থির করে নিয়েছিলাম,যদি নিজের লক্ষ্যে পৌঁছাতে পারি, কেবল তখনই তাকে ভালোবাসার কথা জানাবো। অন্যথায় নয়। আর আমার সৌভাগ্যক্রমে হোক,আর অন্য কারো দুর্ভাগ্য , আজকে সে দিনটা এসেই গেলো। আর আমিও আমার অসমাপ্ত কাজটা,সমাপ্ত করে দিলাম।
সেই স্টুপিড মেয়েটাকে সত্যটা জানিয়েই দিলাম। যদিও সে তার উত্তর জানায়নি। তবে আমি তার উত্তর জানি।
বিরুনিকা অদ্ভুত দৃষ্টি নিয়ে সায়াহ্নর দিকে তাকালো, সব লাজলজ্জা ভুলে। খুশিতে কাঁদতে মন চাইছে ওর।
এতোদিনের জমানো যত রাগ ছিলো কুনোব্যাঙের প্রতি,আজ সব কর্পূরের মত উবে যাচ্ছে। আরো বেশি ভালোবাসতে ইচ্ছে হচ্ছে কুনোব্যাঙকে। এ যেন অন্য কোন কুনোব্যাঙকেই দেখতে পাচ্ছে সে আজ। এতো সাহসিকতার সাথে নিজের অনুভূতির কথা বলে চলেছে। অথচ বিরুনিকার সামনে কেমনে বোকা বোকা, হাবাগোবা সেজে থাকতো। আর সেই হাবাগোবা ছেলেটা কিনা ওর মায়ের সামনে বসেই,ওকে ভালোবাসার কথা জানাচ্ছে!
আজকের পর থেকে তো আর কুনোব্যাঙ ডাকা যাবে না! নতুন কোন নাম ভাবতে হবে।
বিরুনিকা যখন ভাবনায় ডুবে গিয়েছিলো,তখন কোমল মেয়েকে পর্যবেক্ষণ করছিলেন একদৃষ্টিতে। সেটা আর কেউ খেয়াল না করলেও,আরাদ করেছে। তাই কোমলের কাছে মাথা নিচু করে ধীর স্বরে বললো,
আপনার মেয়ের মুখের খুশির লহর টা দেখেছেন? মানুষ যখন ভেতর থেকে সুখ অনুভব করে,তখন তার চেহারায় এক অদ্ভুত দীপ্তি ফুটে উঠে। আর আপনার মেয়ের চেহারায় সেটা স্পষ্ট। কোমল কোন কথা বললেন না।
ঠিক তখন শফিকুর আসলেন। এসেই সরাসরি বলে বসলেন,
” আমি কি আমার মেয়েকে নিয়ে যেতে পারি?”
আরাদ বোকার মতন বলে বসলো,
আপনার মেয়েকে আঁটকে রেখেছে কে?
শফিকুর আরাদের পাশে বসে আরাদের পিঠ চাপড়ে বললেন,
” আই কিউ এত ‘ল’ কেন ইয়াংম্যান?”
শফিকুরের কথায় আরাদ পুরো ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে গেলো। আরাদের মুখটা দেখে সাচী ফিক করে হেসে দিলো। সেটা দেখে আরাদ সাচীর দিকে তাকাতেই,সাচী মুহুর্তেই চোখ সরিয়ে নিলো।
আমি আমার আরেক মেয়েকে নিয়ে যাওয়ার কথা বলছি ইয়াংম্যান। শফিকুরের কথা শুনে কোমল কিঞ্চিত ভ্রু কুঁচকে তাকালেন। সেটা দেখে শফিকুর বললেন,
” আমার গাধা ছেলেটা আপনার মেয়েকে পছন্দ করে জানলে,আরো আগে বিয়ের প্রস্তাব দিতাম। বিরু মাকে আমার আগে থেকেই পছন্দ ছিলো। কিন্তু আমার ছেলেটা তেমন কিছু করেনা দেখে,বলার সাহস পাই নি। কারন আমি দেখেছি আপনি কি করে ছেলেমেয়েদের মানুষ করেছেন। সেখানে আপনার চাওয়াটা সবার আগে। তবে আমার মনে হয় না, আপনার মেয়ে খুব বেশি অ-সুখে থাকবে। আমরা উচ্চবিত্ত নয়,তবে মনের দিক দিয়ে বড়। আর আমার কাছে আমার ছেলেমেয়ের চাওয়াটা সবার আগে। তারা এখন ছোট নয়। যথেষ্ট ম্যাচিউর,বুঝতে শিখেছে। তাই তাদের সিদ্ধান্ত নেওয়ার সুযোগ দেয়া উচিত। হ্যাঁ,কোন ভুল করলে সেটা শোধরে অবশ্যই দিবো। তবে তাদেরকেও নিজের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়ার মত মানসিক ভাবে গড়ে তোলা উচিত। বাবা মা তো আর সবসময় পাশে থাকবেনা।
সন্তানের যেমন বাবা,মায়ের কথার দাম দেওয়া উচিত,তেমনি মা,বাবারও তাদের কথা ভাবা উচিত।
কোমল সব শুনে চুপ করে রইলেন। মেয়ের দিকে তাকিয়ে শেষ বারের মতন মেয়ের মত জানতে চাইলেন। বিরুনিকা ভয়ে কাঁপছে। কিন্তু সে জানে এখন ভয় পেলে চলবেনা। সুযোগ একবারই আসে। আর সেটা লুফে নিতে হয়। লজ্জাশরম ভুলে বিরুনিকা সায়াহ্নকেই চায়,সেটা সবার সামনেই বলে দিলো।
কোমল আর একটা প্রশ্নও বিরুনিকাকে করলেন না। চুপচাপ সেখান থেকে উঠে চলে গেলেন। উপস্থিত সবাই কিছুই বুঝতে পারছেনা। বিরুনিকাও বেশ ভয় পাচ্ছে, মায়ের এমন অদ্ভুত আচরণে।
সবার মুখে থমথমে অবস্থা বিরাজ করছে। তবে সায়াহ্ন বিরুনিকাকে চোখের ইশারায় শান্ত থাকতে বললো। এখন সব সরাসরি বলে দিয়েছে। যা হবার হবে। পজেটিভ হলে ভালো,নেগেটিভ হলেও আর কোন আক্ষেপ থাকবেনা। দুজন দুজনকে ভালোবাসে,এটাতো অন্তত জানাতে পেরেছে। সেটাই বা কজন পারে। সায়াহ্ন একটা দীর্ঘশ্বাস ছাড়লো।
.
নদীর পাড়ে বসে আছে সাচী আর তুহিন। দুজনই চুপচাপ।অনেকদিন পর দুজনের দেখা হলো। সাচী নিজের কাজ,ভাইয়ের বিয়ের প্রস্তুতি নিয়ে বিজি ছিলো। আগামী মাসে বিয়ে। কোমল সেদিন মেয়ের ইচ্ছেটাকেই গুরুত্ব দিয়েছিলেন অবশেষে। তুহিন উদাস চোখে বললো,
” তুমি কেমন জানি বদলে গেছো!”
সাচী চকিত দৃষ্টিতে তুহিনের দিকে তাকিয়ে পাল্টা প্রশ্ন করলো,
” মানে?”
” আমি তোমার চোখে আগের অনুভূতিটা খুঁজে পাই না। সব কেমন যেন বাঁধা ধরা,মেকি লাগে!”
তুহিনের অভিযোগ শুনে সাচী চুপ করে গেলো। নিজের মনের মধ্যেও এটা নিয়ে প্রতিনিয়ত যে তার দ্বন্দ চলছে। কারো কাছে প্রকাশ করতে পারছেনা। তবে কি অস্বাভাবিক দূরত্ব ভালোবাসার বহিঃপ্রকাশ কমিয়ে দেয়? সাচী ভাবছে সে তুহিনের অপেক্ষায় ছিলো। কিন্তু সময়ের স্রোতে কি সেটা হালকা হয়ে গিয়েছে?
না!
সেটা হলে তো, তবে ভালোবাসাটাই মিথ্যা হয়ে যাবে। সাচী ভাবতে পারছেনা আর।
ঠিক তখনি সেখানে তৃতীয় একজন ব্যাক্তির উপস্থিতি ওদের দুজনকেই আশ্চর্যকর অবস্থায় ফেলে দিলো। তুহিন কেমন অদ্ভুত দৃষ্টি নিয়ে সাচীর দিকে তাকিয়ে আছে। যেটা সাচীকে আরো বিব্রত করছে। মনে মনে মহা বিরক্ত হয়ে বললো,
এই মালটা এখানে মরতে এসেছে কেন!
” তোমাদের দুজনের কাহিনীটা কি বলো তো? তুমি এখানে আরেক ছেলের সাথে। ঐদিকে তোমার লাভারকে ঐদিন পার্কে আরেক মেয়ের সাথে দেখলাম। আমার মাথায় তো কিছুই ঢুকছেনা। কে কার বয়ফ্রেন্ড, কে কার গার্লফ্রেন্ড সব আমার মাথার উপর দিয়ে যাচ্ছে। দয়া করে আমাকে সত্যটা বলো তো এবার?”
বাদলের কথার আগামাথা তুহিন কিছুই বুঝতে পারছেনা। আর এই লোকটায় বা কে, সেটাও তুহিন ভেবে পাচ্ছে না। তবে লোকটা যে সাচীর পরিচিত,সেটা কথাতেই বুঝা যাচ্ছে। একেবারে তুমি করে বলছে। কিন্তু তোমাদের দুজন বলতে,সে কাদেরকে বুঝাতে চাইছে? তুহিন জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে সাচীর দিকে তাকিয়ে রইলো।
বাদলের কথা শুনে তুহিনের সামনে সাচীর মাথা কাঁটা যাচ্ছে। এই লোকটা সবসময় বেজাল লাগাতে আসে। সাচীর মন চাইছে এই, মালটাকে নদীতে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দিতে!
আবার মনে মনে ভাবতে লাগলো,আরাদ আবার কোন মেয়েকে নিয়ে পার্কে গেলো?
#চলবে…