#যখন_তুমি_এলে
লেখা: জাহান লিমু।
পর্ব: ৩৬।
” উইল ইউ ম্যারি মি?”
সকাল থেকে হাজারবার এ কথাটা আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে বলে চলেছে সায়াহ্ন। কিন্তু সে ভীষণ নার্ভাস ফিল করছে। স্ক্রিপ্টে কত সহজে সব লিখে ফেলা যায়। কিন্তু বাস্তবে সেটা বলা যে কত কঠিন,তা এখন হাড়ে হাড়ে টের পাচ্ছে সে। তবে এতোদিন যে কারনে সে এ কথাটা বলতে পারছিলোনা,আজ সে এটা বলেই দিবে। বলতেই হবে। কারন এ দিনটার অপেক্ষায় প্রহর গুনছিলো সে। তীব্র জেদ মনে নিয়ে দাঁত কামড়ে অপেক্ষা করছিলো সে। কারো সামনে নিজেকে যোগ্য প্রমান করার অপেক্ষা। সেদিনটা এখনো স্পষ্ট মনে আছে সায়াহ্নর। তিনবছর আগে যেদিন বিরুনিকা ওর কাছে পড়তে আসে। একই বাসায় যেহেতু একই বিভাগের সিনিয়র ছাত্র আছে,তাই বিরুনিকা সায়াহ্নর কাছে পড়তে এসেছিলো। সায়াহ্ন বিকালে একঘন্টা করে পড়াতো বিরুনিকাকে। বিরুনিকা মোটামুটি সবই পারতো। তবুও প্রাইভেট কেন পড়তে চাইলো,সেটা সায়াহ্ন বুঝতনা। মেয়েটা চুপচাপ স্বভাবের। তবে মাঝে মাঝে উল্টাপাল্টা প্রশ্ন করতো। এই যেমন,
” আচ্ছা স্যার, প্রজাপতি কি ঘুমায় না?
যদি ঘুমায়, তাহলে ওরা থাকে কোথায়?
ওদের বাসা আপনি দেখেছেন? নাকি ওদের কোন থাকার জায়গা নেই?
এসব উদ্ভট প্রশ্ন শুনে আমি ভীমড়ি খেতাম। শুধু এসব নয়,আরো আছে।
স্যার,হিন্দুরা প্রজাপতিকে বিয়ের দেবতা কেন বলে?
প্রজাপতির অনেক রং সেজন্য? মানে, বিয়ে মানেই তো রং।
কিন্তু কিছু প্রজাপতি তো সাদাও হয়। আমি দেখেছি।
আচমকা এসব উদ্ভট প্রশ্ন করে আমাকে হতবুদ্ধিকর করে ফেলতো মেয়েটা। এসব উদ্ভট কথাবার্তা শুনতে শুনতে কখন যেন আমি ডুবে গেলাম। কিন্তু আমারতো ডুবলে চলবেনা। সেটাতো আমি জানতাম। যেদিন থেকে পড়াবো,সেদিন থেকেই জানতাম। বিরুনিকার মা আমাকে স্পষ্টভাষায় কথাগুলো বলেছিলেন। আমারও তা এখনো স্পষ্ট মনে আছে।
দেখ,তোমার কাছে মেয়ে পড়তে চেয়েছে,তাই পড়তে দিচ্ছি। যেহেতু দূরে কোথাও যেতে হবে না। আর তোমাকেও যথেষ্ট ভদ্র ছেলে হিসেবে জানি। তাই আশা করি নিজের ভদ্রতা বজায় রাখবে। কোনরকম ফায়দা লুটার চেষ্টা করো না। সেদিন আমার ভীষণরকম আত্নসম্মানে আঘাত লেগেছিলো। মেয়েলি বিষয়ে আমার কোনকালেই আগ্রহ ছিলো না। সেটা যারা আমাকে চিনে,তারা সবাই জানে। আন্টিও জানেন,আমি কেমন। তা স্বত্বেও এভাবে আমাকে সরাসরি কথাগুলো বললেন। তখন ইচ্ছে হয়েছিলো,বিরু কে না পড়াই। কিন্তু এতে আমার সম্পর্কে উনি আরো নেগেটিভ ভাবতেন। সেজন্যই অবশেষে পড়ালাম। কিন্তু তখন আমার স্বভাবের বাইরে গিয়ে, আমি কেমন করে যেন প্রেমে পড়ে গেলাম। হ্যাঁ,আমি বিরুপাখি কে ভালোবেসে ফেলেছিলাম। এখনও বাসি,বাসবো সারাজীবন।
তবে সমস্যাটা হয়েছিলো সেদিন,যেদিন বিরুনিকাকে নিয়ে বাইরে খেতে গিয়েছিলাম। ঐদিন বাসায় ফেরার সময় আমাদের দুজনকে একসাথে দেখে ফেলেন কোমল আন্টি।আমরা কেউ উনাকে দেখতে পাই নি। তবে পরেরদিন সকালে যখন উনি আমার রুমে আসেন,তখন আমি বেশ ঘাবড়ে যায়। মনে মনে যে ভয়টা পাচ্ছিলাম,সেটাই হলো অবশেষে। আমি চুপচাপ সেদিন উনার অপমান মুখ বুজে সহ্য করছিলাম। কারন উনি যা বলেছিলেন,সব ঠিক ছিলো।
আমি ছিলাম ছন্নছাড়া,উদাসীন। না ছিলো চাকুরীর পেছনে ছুটার চেষ্টা,না ছিলো কোন বিজনেস করার ধান্দা। এরকম অকর্মণ্য ছেলের কাছে যে কোন বাবা,মা তার মেয়েকে পাত্রস্থ করতে চাইবেনা। সেটাই স্বাভাবিক। আমিও সেটা মেনে নিয়েছিলাম। আর ঠিক সে কারনেই আমি বিরুনিকার চোখের ভাষা বুঝেও, না বুঝার ভান করতাম। আমি মেয়েটার ব্যাকুলতা সব বুঝতে পারতাম। আমার কষ্টও হতো। তবু ইচ্ছে করেই,ওর সাথে আমিও উদ্ভট আচরণ করতাম। যেন ওকে এড়িয়ে চলতে সুবিধা হয়। আমার ভেতরটা যেন সে না পড়তে পারে। আমি ওকে একচুলও বুঝার সুযোগ দিতে চাই নি যে,আমি ওকে ভালোবাসি। আর সেটা ওর ভালোর জন্যই। আমি চাইনি, সে বুঝতে পেরে কষ্ট পাক। কারন আজকের পজিশনে, আমি নাও আসতে পারতাম। এরচেয়ে এই কষ্টটা ভালো যে,সে জানেই না আমিও তাকে ভালোবাসি। ভালোবাসা জেনে না পাওয়াতে যে কষ্ট,না জেনে সেটা অন্তত কম হবে। তখন শুধু এটা ভেবে কষ্ট পেতো যে,আমি ভালোবাসিনি। সেটা একসময় ঠিকই ভুলে যেতো। হয়তো আমার ভুলতে কষ্ট হতো। কারন আমি জানতাম সে আমাকে ভালোবাসে। আর আমিও তাকে ততটাই চাই,ঠিক যতটা সে আমাকে চায়।
আর তাই আজকে আমি বলবো। আর একমুহুর্তও দেরি করতে চাই না। অনেক কষ্ট দিয়েছি,এবার শুধু ভালোবাসার বৃষ্টি হবে সায়ানিকার আকাশে। সায়াহ্ন + বিরুনিকা = সায়ানিকা। সায়াহ্ন মনে মনে বললো,আমাদের মেয়ের নাম সায়ানিকা রাখলে মন্দ হয় না। পরক্ষণেই ভাবলো,মেয়ের নামের চিন্তা না করে,আগে মেয়ের মাকে পটানোর কাজে লেগে পড় ব্যাটা সায়াহ্ন। ইটস অলরেডি টু লেইট…!
.
” এবার আপনি মা কে মানা করে দিন সরাসরি। আপনার ট্রিকস কোন কাজে আসছেনা। আমি জানি ঐ কুনোব্যাঙের শরীরে কোন জেলাসি নেই। পরে সত্যি সত্যিই বিয়ে হয়ে যাবে। কিন্তু আমি আরো অপেক্ষা করতে চাই। আমার সর্বোচ্চ চেষ্টা আমি করবো। এরপর যদি না পাই,তবে মেনে নিবো তার অর্ধাঙ্গীনি হওয়ার সৌভাগ্য নিয়ে আমি জন্মায়নি। আপনি কোনক্রমে বিয়ে ভাঙুন প্লিজ। বিরুনিকার কথা শুনে আরাদ পানি খেতে নিয়ে, বিষম খেয়ে ফেললো। বিরুনিকা আরাদের মাথায় হাত রাখলো হালকা করে।
আরাদ একটু স্বাভাবিক হয়ে বললো,
” ও হ্যালো সিস্টার,আমারও না কোন শখ নেই আপনাকে বিয়ে করার। ইনফ্যাক্ট আমি তো বিয়েই করবোনা। আজীবন ব্যাচেলর থাকবো। তাই আপনার চেয়ে আমার চিন্তা বেশি। আর আপনি আপনার দেবদাসের জন্য অপেক্ষা করতে করতে দেবদাসীনি হয়ে যান। তাতে আমার কোন অসুবিধা নেই। তবে একটা জিনিস আমি ভেবে পাই না,যার বোন এতো ভালোবাসতে জানে,তার ভাই এতো কাঠখোট্টা কি করে?
বিরুনিকা সরু চোখে তাকালো আরাদের দিকে। তারপর প্রশ্ন করলো,
” সাচী ভালোবাসতে জানে, সেটা আপনাকে কে বললো?”
আরাদ এবার থমকে গেলো। এখন কি জবাব দিবে সে?
বিরুনিকা কি সাচীর বিষয়ে কিছু জানেনা?
না জানলে তো এখন কিছু বলা ঠিক হবে না তাহলে। আরাদকে চিন্তিত দেখে আবার একই প্রশ্ন করলো বিরুনিকা। আরাদ এবার কথা ঘুরানোর উদ্দেশ্যে বললো,
” আমি মানুষের সাথে কয়েকদিন মিশলেই তার সম্পর্কে বলে দিতে পারি। কথাটা বলে বাদাম খাওয়ায় মনোযোগ দিলো আরাদ। বিরুনিকা তখনো আরাদের দিকে সূক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। আরাদ সেটা বেশ বুঝতে পারছে। তবে সে এমন ভাব করছে যেন ভীষণ মনোযোগ দিয়ে বাদাম খাওয়াটা জরুরী এইমুহুর্তে।”
কিছুক্ষণ চুপ থেকে বিরুনিকা বললো,
” তাহলে এটা বলুনতো সায়াহ্ন অন্য কাউকে ভালোবাসে কিনা?”
কথাটা শুনে আরাদ বাদামের খোসা ছাড়াতে নিয়েও থেমে গেলো। কারন তার সাথে সায়াহ্নর কথায় হয়েছে মাত্র একবার। জাস্ট হাই, হ্যালো টাইপ কথাবার্তা। যেহেতু সাচীর সাথে কাজ করছিলো সে। আর এছাড়া সায়াহ্নকে রুম থেকে বের হতে দেখিনি আরাদ। ছেলে হয়ে কিভাবে মেয়েদের মত সারাক্ষণ ঘরবন্দি থাকে কে জানে। এর প্রেমে পড়বে আবার কোন বলদি!
আরাদের বিরুনিকাকে বলতে ইচ্ছে করছিলো,এরকম একটা কুয়োর ব্যাঙকে কেন ভালোবাসতে গেছিলো?
কিন্তু সেটা বললে সামনে উপস্থিত বালিকা চটে যেতে পারে। তাই পেটের কথা পেটেই রাখলো সে। কোন বালিকা যাকে ভালোবাসে, তারই বদনাম সে বালিকার সামনে কেউ করলো সেখানে রক্তপাত না হলেও ক্ষোভে বজ্রপাত হওয়ার সম্ভাবনা প্রবল। আর সে বজ্রপাতে ভস্ম হতে চায় না আরাদ।
তবে বিরুনিকাকে আশ্বস্ত করলো,সে বিয়ে ভেঙে দিবে। কিন্তু কিভাবে যে বলবে কোমল আন্টিকে,সেটাই বুঝে উঠতে পারছেনা সে। নিজের ছেলের মত আদর করেন একদম। হয়তো কষ্ট পাবেন। কিন্তু উনার মেয়ের খুশির জন্য বলতেই হবে। আর আমারও বিয়ে করার এতো শখ নেই। কেবল সাচী বলেছিলো দেখে,এতদিন একটিং টা চালিয়ে গিয়েছিলাম। কিন্তু লাভের লাভ কিছুই হলো না। গোল্লা!
জীবনটাই অভিনয় করতে করতে কেটে যাচ্ছে আমার। কখনো নাটকে,তো কখনো বাস্তবে। একটা তাচ্ছিল্যের হাসি হাসলো আরাদ। ফোনটা পকেট থেকে বের করে একটা ছবি দেখতে লাগলো একমনে। কতদিন মুখটা দেখেনা কাছ থেকে। খুব বেশি জরুরী ছিলো কি এতোবেশি অভিমান করা?
তোমাদের ইগো,অভিমানে আমার জীবনটা নষ্ট হয়ে গেলো। আমার কাউকে সহ্য হয়না,কাউকে ভালোবাসতে ইচ্ছে হয় না। এমন জীবন যেন কারো না হয়। আরাদের চোখদুটো লাল হয়ে গেছে পুরো। শরীরটা কাঁপছে। ঠিক তখনি ওর কাঁধে কারো হাতের স্পর্শ পেলো। চমকে তাকালো পেছনে। তবে পেছনের ব্যাক্তিটাকে দেখে আরো ঘাবড়ে গেলো সে।
.
আজ শুক্রবার হওয়াতে তানিম বাসায় আছে। সকালের নাস্তা খেয়েই রোহানীকে বললো, আজকে সবাইকে নিয়ে ঘুরতে যাবে। সারপ্রাইজ আছে। রোহানী সহসা বলে উঠলো,
” বাবাকে কি করে নিয়ে যাবে?”
কথাটা বলে পরমুহুর্তেই নিজেই চুপ হয়ে গেলো। তানিম রাগ করে কিনা সে চিন্তায়। তবে রোহানীকে অবাক করে দিয়ে,তানিম কিছুই বললোনা। কেবল ঠোঁট প্রসারিত করলো। সকাল থেকেই তানিমকে অন্যরকম লাগছে রোহানীর। বেশ প্রফুল্ল মনে হচ্ছে। তবে ঠিক কি কারনে খুশি,সেটা রোহানী জানেনা।
তানিম দুপুরের মধ্যে সবাইকে তৈরি হওয়ার তাড়া দিলো। আজকে দুপুরের খাবার বাইরে খাবে। তানিমের বাবা ভীষণ খুশি। দূর্ঘটনার পর থেকে আর বাইরের খোলা হওয়ায় ঘুরা হয়নি উনার। আজ কতদিন পর বাইরে বের হবেন। উনার মনে ইদের খুশি বিরাজ করছে। ছোট বাচ্চাদের মতন আচরণ করছেন। কোন পাঞ্জাবিটা পরবেন,ভেবে পাচ্ছেন না। কিন্তু তানিম এসে ওর বাবাকে স্যুট পরিয়ে দিলো। কতদিন এভাবে দেখেনা বাবাকে। সারাক্ষণ বিছানায় শুয়ে থাকে,নয়তো হুইলচেয়ারে বসে থাকে। মায়ের চোখে জলের উপস্থিতি টের পেলো তানিম।
কাঁদুক!
কখনো কখনো কিছু কান্না ভালোলাগারও হয়। তানিম এই দিনটার জন্য বিগত বছরগুলোতে টাকা জমিয়ে আসছে। একটা পয়সাও বাড়তি খরচ করেনি সে। ফলস্বরূপ আজকের দিনটা দ্রুতই চলে আসলো।
রোহানী শাড়ি পরতে নিলে,তানিম এসে বাঁধা দেয়। রোহানী ভ্রু কুঁচকে তাকায়। তানিম দাঁত বের করে হাসে। তারপর আয়নার সামনে দাঁড় করায় রোহানীকে। নিজে শাড়ি পরিয়ে দেয়। যদিও সে ঠিকঠাক পরাতে পারেনি। রোহানী পিনআপ করে নিলো ঠিক করে। তানিম মাথা চুলকে হাসলো। রোহানী আয়নার দিকে তাকিয়ে কুঁচি ঠিক করতে করতে বললে,
” হইছে,এতো সিরিয়ালের হিরো সাজতে হবে না। আমি ন্যাকা নায়িকা নয়,শাড়ি পরতে জানি। হুহ! এটা বলে ভেংচি কাটলো রোহানী। তানিম আচমকা রোহানীকে পেছন থেকে জড়িয়ে ধরে কাঁধে থুতনি রেখে বললো,
” বউকে শাড়ি পরিয়ে দিলেই বুঝি সিরিয়ালের নায়ক হয়ে যায়?”
” হু,হয়তো। রোহানী সোজাসাপ্টা উত্তর দিলো।”
” এটা শুনে তানিম রোহানীর বাহুতে চিমটি কাটলো। কানের কাছে মুখ নিয়ে ফিসফিস করে বললো,
” আর বর যে ভালোবেসে পরাতে চায়,সেটার কোন মূল্য নেই? কজনের বর নিজের স্ত্রীকে এভাবে ভালোবেসে শাড়ি পরিয়ে দিতে চায় শুনি? তোমারতো গর্ব করা উচিত আমাকে নিয়ে।”
” রোহানী তানিমের পেটে কনুই দিয়ে গুতা দিলো। তানিম আহ… করে উঠলো। তানিমের থেকে নিজেকে ছাড়িয়ে নিয়ে বললো,
” হ্যাঁ,আপনার জন্য আমি একেবারে গর্বে গর্ভবতী হয়ে যাচ্ছি। কথাটা বলেই সাথে সাথে রোহানী জিভ কাটলো। তানিম ততক্ষণে হেসে খুন। রোহানীর মন চাইছিলো মাটি ফেটে ঢুকে যেতে। মুখ ফঁসকে কি বলে ফেললো সে। এখন তানিম সারাক্ষণ ওকে ক্ষেপাবে। এমনিতেই তো আরাদের দেওয়া নামগুলো বলে ভেঙায় সারাক্ষণ। যদিও এখন সে যথেষ্ট ফিট আছে, তবুও।
যত নষ্টের গুড়ি ঐ আরাদ। সব বলে দিয়েছে তানিমকে। এখন রোহানীর চেয়ে তানিমের সাথে বেশি বন্ধুত্ব হয়ে গেছে ব্যাটার। একবার ক্ষেপে রোহানী এটা বলায়,আরাদ বলে উঠলো,
” শোন,টেনশন করিস না। আমি এক টিমে বেশিদিন সাপোর্ট ধরে রাখতে পারিনা। এরপর তোদের জুনিয়রের পার্টনার হবো আমি। বছর ঘুরার আগেই,জুনিয়র নিয়ে আসতো জলদি। তখন তোর মার সামনে জুনিয়রকে নিয়ে যাবো। তখন নাতীই নানীকে সাইজ করে ফেলবে। যদি ছেলে হয় তাহলে তো তোর মা দেখেই ফিদা হয়ে যাবে। আর মেয়ে হলে আঙুলের ইশারায় নাচাবে একদম। আরাদের কথা শুনে সবাই হাসলেও,রোহানী গম্ভীর হয়ে ছিলো। কারন মায়ের জন্য বড্ড চিন্তা হয় আজকাল। কেমন জানি হয়ে গেছে। কথায় বলতে চায় না কারো সাথে। একা একা সারাদিন কি যেন ভাবে।
রোহানী ভাবছে যা হয় হোক,কিন্তু মায়ের সাথে দেখা করতে যাবে সে। মা যেমনই হোক,সে মা। জন্মদাত্রী। মায়ের পা ধরে হলেও মাফ চাইবে সে।
বাসা থেকে বের হয়ে রাস্তায় এসে, চমকে তানিমের দিকে তাকালো রোহানী। বাসার সামনে নতুন একটা প্রাইভেট কার। এজন্যই তানিম আজ এতো খুশি ছিলো। রোহানীকে বিস্মিত হতে দেখে তানিম বললো,
” ম্যাম কি যাবেন? ফি দিতে হবে না। আমি আবার দয়াশীল ড্রাইভার। অবলাদের থেকে টাকা নেয় না। তবে ফি অন্যভাবে পরিশোধ করতে চাইলে,মানাও করবোনা। তানিমের চোখেমুখে দুষ্টুমির ছাপ স্পষ্ট। তানিম এটা বলার সাথে সাথে রোহানী এট্যাক করে বসলো। তবে রাস্তার মাঝে হওয়াতে তানিম বেঁচে গেলো। চোখ রাঙিয়ে তানিমকে শাসালো রোহানী। তানিমও ভয় পাওয়ার ভান করে এগিয়ে গাড়ির দরজা খুলে দিলো। মা,বাবাকে এনে বসালো। আজ পুরো শহর ঘুরবে ওরা। রাতে বাসায় ফিরবে। গাড়ি ছাড়ার পর, রোহানী তানিমের হাতের উপর একহাত রাখলো। জবাবে তানিম মৃদু হাসলো কেবল। এভাবেই যেন সারাটাজীবন কেটে যায়।
রাত দশটায় বাসায় ফিরলো ওরা। ঠিক তখনি রোহানীর ফোন বেজে উঠে। রোহানী তখন ওয়াশরুমে। তানিম ফোনের স্ক্রিনে সোহানীর নামটা দেখে, ফোন উঠালো। কিছুক্ষণ পর রোহানী বেরিয়ে আসে। এসে চুল মুছতে মুছতে জিজ্ঞেস করে,
” কে ফোন করেছিলো?”
কিন্তু তানিম কেমন যেন থম মেরে বসে আছে। রোহানী তানিমের পাশে গিয়ে বসলো। আবার জিজ্ঞাস করলো,কি হয়েছে? কিন্তু তানিম সাড়াশব্দ দিচ্ছে না। এবার রোহানীর চিন্তা হতে লাগলো। কে ফোন দিয়েছিলো?
সে তানিমের থেকে ফোনটা নিয়ে, নিজে নাম্বারটা চেক করলো। সোহানী ফোন দিয়েছিলো। কিন্তু কেন?
রোহানী তানিমকে ধাক্কা দিলো এবার বিরক্ত হয়ে। তানিম রোহানীকে কিছু না বলে,আবার রেডি হওয়ার জন্য বললো। রোহানী বিস্মিত হয়ে বললো,
” মানে? আবার কোথায় যাবো? রোহানীর চোখেমুখে উৎকন্ঠা!”
” হাসপাতালে!”
রোহানী বিস্ফোরিত চোখে তানিমের দিকে তাকালো!
#চলবে…
সায়াহ্ন রহস্য খুললো অবশেষে। সবার মতামত জানান।?