#যখন_তুমি_এলে
#পর্ব- ০৩।
লেখা – জাহান লিমু।
একটা রেডিও স্টেশন থেকে লাইভে যাওয়ার জন্য আমন্ত্রণ পেয়েছে সাচী। সেটাই তার এতো পাগলামো করার কারন। হ্যাঁ,এতে হয়তো এতো লাফানোর মত কিছু হয় নি। তবে কথা অন্য জায়গায়। কারন আরজে তুহিন যে রেডিও স্টেশনে, আমন্ত্রণ টা সেখান থেকেই এসেছে। এবং তারচেয়েও বড় বিষয় হলো,সে তুহিনের ‘শো’টাতেই যাওয়ার সুযোগ পেয়েছে। আগামী শুক্রবার সকাল নয়টার মধ্যে সেখানে থাকতে হবে। আজকে মাত্র সোমবার। আগামী তিনদিন সাচীর কি করে কাঁটবে, সে ভেবে পাচ্ছে না। প্রথমবারের মত সরাসরি দেখতে পাবে,তাও একেবারে সামনা-সামনি বসে। সামনে বসে সেই জাদুকরী কন্ঠের অধিকারীর কন্ঠ শুনতে পাবে! সেটা ভাবতেই সাচীর শরীরে কেমন অদ্ভুত অনুভূতির লহর বয়ে যাচ্ছে। সারা শরীর জুরে চাপা খুশি উথলে পড়ছে।
সাচী তার সামনে কথা বলতে পারলেই হয়। হুঁশ না হারালেই হলো। সেজন্য নিজেই বারবার আয়নার সামনে বসে,নিজেকে বোঝাচ্ছে। লিসেন সাচী,ইউ হ্যাভ টু বি কনফিডেন্ট। নিজেকে তার সামনে অতিরঞ্জিত করার কিছু নেই। তুই যেমন আছিস,তেমনি থাকবি। সেভাবেই কথা বলবি। একদম তাকে বুঝতে দিবি না কিছু। একদম গায়ে পড়া চলবেনা। সর্বোপরি,তুই নিজেকে স্মুথলি উপস্থাপন করবি। যে অর্জনের জন্য, তোকে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে,সেটার একটা মূল্য আছে। নিজের কান্ড জ্ঞানহীনতার জন্য, সেটাতে কোন প্রভাব পড়তে দিস না। আসলে সাচীর শর্টফিল্মটা দেশীয় শর্টফিল্ম প্রতিযোগিতায় নমিনেশন পেয়েছে। এত অল্প বয়সে,এটা নিশ্চয়ই বিরাট কিছু। আর সে সুবাদেই হয়তো রেডিও স্টেশন চাইছে, সাচীকে নিয়ে একটা প্রোগ্রাম করতে। আর এতে তাদের চ্যানেলেরও বেনিফিট রয়েছে। আর সেজন্যই হয়তো তাদের সবচেয়ে জনপ্রিয় আরজের ‘শো’ তেই আমন্ত্রণ জানিয়েছে। সাচী এখনো বাসার কাউকে জানায়নি বিষয়টা। সেই সকাল থেকে নিজের সাথে নিজে কথা বলে যাচ্ছে।
তার বাবা যে তাকে দুই-তিনবার দেখে গেছে,সেটা অবশ্য সে খেয়াল করেনি। শফিকুর নিজের রুমে বসে চিন্তায় পড়ে গেলেন। ভাবছেন,মেয়েটাকে মানসিক চিকিৎসকের কাছে নিয়ে যাবেন কিনা। হুঁট করে কি হলো?
এইতো গতকালও দিব্যি ভালো ছিল।
তাহলে?
শফিকুর আর কিছু ভাবতে পারছেন না। একটা মাত্র মেয়ে তার,তার কিনা মাথা খারাপ হয়ে গেছে?
পড়াশোনার জন্য কোন চাপ পর্যন্ত দেননি কোনদিন ছেলেমেয়েদের। নিজের পছন্দমত বিষয় নিয়ে পড়াশোনা করেছে। কোনপ্রকার চাপ প্রয়োগ করেন নি তিনি। বরং ছেলেমেয়েদের কোনটাতে কৌতূহল সেটা সবসময় নজরে রাখতেন। তাই ভার্সিটি ভর্তির সময়,অনেক ভালো বিষয় পেলেও,যেটা ওদের পছন্দ হয়েছে,সেটাই নিয়েছে।
হঠাৎ করে শফিকুরের ঐদিনের বালিশের নিচের ছেলের ছবিটার কথা মনে পড়ে গেল। ছেলেটাকে কেমন চেনা চেনা লাগে। কোথাও যেন দেখেছে,তবে মনে করতে পারছেনা।
আর ছেলেটা যথেষ্ট বয়স হয়েছে মনে হয়। কমপক্ষে ত্রিশ তো হবেই,বেশিও হতে পারে। দেখতে সুদর্শন,উচ্চতা মনে হয় ছয়ফিট প্লাস। যেকোন মেয়ে দেখেই ফিট খাবে।
তবে কি শফিকুর রহমানের মেয়ে এই ছেলের জন্য পাগল হয়ে গেছে?
ছেলেটা কি তার মেয়েকে পাত্তা দেয়না!
এজন্য মেয়েটা এমন অস্বাভাবিক আচরণ করছে?
যদি এমন কিছু হয়,তবে সে পৃথিবীর যে প্রান্তেই থাকুক না কেন। তাকে খুঁজে বের করবোই আমি। আমার মেয়ে কি কোন অংশে কম নাকি। শুধু লম্বাটা একটু ম্যাচ করবেনা, এই যা। এটা কোন সমস্যাই না আজকাল।
শফিকুর মনস্থির করে ফেললেন,মেয়ের সাথে এবার খোলাখুলি করে কথা বলবেন। একটা কিছু তো করতে হবে। প্রেম যুদ্ধে নামার আগেই তার মেয়ে হেরে বসে থাকবে নাকি। তাহলে যে উনার নাক কাঁটা যাবে। সাচীর মাকে কি আর এতো সহজে পটিয়ে ছিল। সে কত কাঠ খড় পোঁড়াতে হয়েছে। যুদ্ধের চেয়েও ভয়ানক,প্রেমে রাজি করানোর যুদ্ধ।
সবাই সেটা পারেনা। ঠিক এ কারনে, কত ভালোবাসার কাহিনী শুরু হওয়ার আগে,অঙ্কুরেই বিনষ্ট হয়ে যায়।
উনার মেয়ে হয়ে সাচী কিনা যুদ্ধে অংশগ্রহণ না করে,মানসিক রোগী সেজে বসে আছে।
ইমপসিবল!
এটা হতেই পারেনা। এখনি তিনি মেয়ের কাছে যাবেন,এইমুহুর্তে। বলার সাথে সাথেই তিনি উঠে দাঁড়ালেন। কিন্তু ঠিক তখনি সাচী ঘরে প্রবেশ করলো। মেয়েকেও আসতে দেখে শফিকুর একটু ভড়কে গেলেন। সাচীও বাবাকে যেতে দেখে প্রশ্ন করলো,
” কোথাও যাচ্ছিলে বাবা? আমি কি পরে আসবো?”
” শফিকুর আমতা আমতা করে বললেন,না কোথাও যাচ্ছি না। আয়,বস এখানে। মেয়ের কাছেই যে যাচ্ছিলেন,সেটা আর বললেন না। কারন আগে বুঝতে চাইছেন,মেয়ে কেন এসেছে। মনে হচ্ছে বিশেষ কোন কথা আছে। সাচী বাবাকে ভাবনায় ডুবে থাকতে দেখে, একটু অবাক হলো। পরক্ষনেই আমন্ত্রণ পত্রটা বাবার সামনে খুললো। তারপর পুরোটা পড়ে শোনালো।
লিখাটা শোনার চাইতে,শফিকুর মেয়ের মুখের উচ্ছ্বাস টা বেশি দেখছিলেন। হ্যাঁ,বিষয়টা খুশি হওয়ার মতোই। তবে কেন জানি মনে হচ্ছে, তার মেয়ে অন্য কারনে এতোটা খুশি। তবে সেটা ঠিক কি,তা তিনি এ মুহুর্তে ঠাহর করে উঠতে পারছেন না। আবার মেয়েকে সরাসরি কোন প্রশ্নও করতে পারছেন না। ভীষণ দোটানায় পড়লেন তিনি। তবে কোনকিছু বলে,মেয়ের উচ্ছ্বাস টাতে জল ঢেলে দিতেও, মন সায় দিচ্ছে না। তাই আপাতত তিনি আর কিছু বললেন না। মেয়ের মাথায় হাত বুলিয়ে দোয়া করে দিলেন। সাচীও বাবাকে জড়িয়ে ধরলো। ভীষণ ভালো লাগছে ওর। পৃথিবীটা আজকে বড্ড রঙিন লাগছে। জীবনে রঙের ছোঁয়া লেগেছে,তাই হয়তো।
তবে বেশি রঙ লাগাও আবার খুব একটা ভালো না।
জীবনের ক্যানভাস এলোমেলো হয়ে যায়।
ভার্সিটি থেকে আরাদ সরাসরি হাসপাতালে গেল। রোহানীর নাকি এক্সসিডেন্ট হয়েছে। ওর ছোট বোন ফোন দিয়ে জানিয়েছে।এজন্যই বোধহয় আজকে ভার্সিটি আসেনি,আর আরাদের ফোনও ধরেনি। ওদের দুজনের বাসা ভার্সিটি থেকে বিপরীতমুখী । তাই একসাথে আসা হয় না।
হাসপাতালের কেবিনে গিয়ে দেখে, রোহানী ব্যাডে শুয়ে আছে। পায়ে ব্যাথা পেয়েছে মনে হচ্ছে। পাশেই সোহানী বসে আছে। রোহানীর ছোট বোন। ইন্টারমিডিয়েটে পড়ে রাজউকে।
সোহানী অবশ্য এতো মোটা নয়। রোহানীর আসলে জীনগত সমস্যা আছে। তাই একদম না খেলেও,মোটা হতেই থাকে। আর সবাই বকে রেগুলার শরীরচর্চা করার জন্য। সে অবশ্য পাত্তা দেয় না। সোহানীর পাশে আরেকজন লোক বসে আছে। তাকে ঠিক চিনতে পারলনা আরাদ। তখন সোহানী সবটা খুলে বললো। এই লোকের বাইকের সাথে ধাক্কা লেগেই রাস্তায় পড়ে যায় রোহানী। ফলস্বরূপ পায়ের চামড়া ছিলে গেছে,আর সেই সাথে পা মচকে গেছে। তবে ভাগ্যিস, পা ভাঙেনি। বা অন্যকোন গাড়ি তখন আসেনি। আরাদ ভাবলো হয়তো লোকটায় ভদ্রতা দেখিয়ে রোহানীকে নিয়ে এসেছে। কিন্তু না,সে বোধহয় ভুল। লোকটার ফোন আসায়, বাইরে চলে যায়। তখনি সোহানী ঘটনা সবটা বললো। রোহানী ঐ লোককে জোর করে ধরে নিয়ে এসেছে। লোকটা তাড়াহুড়ো দেখিয়ে চলে যেতে চেয়েছিল,গাড়ি ডেকে দিয়ে। রোহানী মোটামুটি ব্ল্যাকমেইল করে লোকটাকে নিয়ে এসেছে। ঐ লোকের বাইক ঐখানেই একটা দোকানে ফেলে এসেছে। সব শুনে আরাদ রোহানীর দিকে তাকালো। রোহানীর যেন তাতে কোন ভ্রুক্ষেপই নেই। সে যেটা করেছে,ঠিক করেছে। গাড়ি চালাতে জানেনা,এদের লাইসেন্স কে দেয়?
কিছুক্ষণ পর লোকটা ফেরত আসলো। আরাদের সাথে কুশল বিনিময় করলো। লোকটার নাম তানিম,ব্যাংকে জব করে।তানিম রোহানীর দিকে তাকিয়ে বললো,
আপনার আঘাত গুরুতর কিছু নয়। আপনি চাইলে একটু পরেই বাসায় যেতে পারেন। আমাকে এবার যেতে হচ্ছে। বুঝেনই তো,প্রাইভেট ব্যাংকে চাকুরি। রোহানী কিছুই বললোনা।আরাদ তানিমকে ধন্যবাদ জানালো। আর কেবিনের বাইরে ছেড়ে আসলো। তানিমকে বললো,আপনাকে ঝামেলায় ফেলার জন্য দুঃখিত আসলে। আমার বন্ধুটা একটু এমনই।
তানিম বললো,আরে না। আমারি নিয়ে আসা উচিত ছিলো,স্বার্থপরের মত চলে যেতে চাইছিলাম। ভালো করেছেন, উনি জোর করে নিয়ে এসেছেন। আসলে প্রাইভেট জব করে করে,রোবটিক হয়ে গেছি। যায় হোক,আসি আজ। আবার দেখা হবে। আপনার নাম্বারটা দেয়া যাবে, আপনার বন্ধুর খোঁজ নেয়ার জন্য। আরাদ কোনকিছু না ভেবে ওর নাম্বার দিলো। দুজনি হাসি বিনিময় করলো।
আজকে সকাল ছয়টা থেকে উঠে বসে আছে সাচী। বুক কেমন জানি কাঁপছে মনে হচ্ছে। ভয় পাওয়ার কিছু নেই, সে জানে। তবে প্রথমবার কোন লাইভ প্রোগ্রামে যাচ্ছে। হোউক,সেটা রেডিওতে। তার উপর তুহিন সামনে থাকবে। সাচী সব গুলিয়ে না ফেললেই হয়। কাপড়-চোপড় বিছানায় ছড়িয়ে ছিটিয়ে রেখে বসে আছে সে। ঠিক তখনি বিরুনিকা সাচীর রুমে আসলো। তখন প্রায় সাতটা বেজে গেছে। বিরুনিকা এসে দেখে,সাচী দুইগালে হাত দিয়ে বসে আছে। এখনো তৈরি হয়নি। বিরুনিকা এসে সাচীর পাশে বসলো। তারপর বললো,
” খুব বেশি নার্ভাস?”
” সাচী একবার সোজা মাথা নাড়ালো,আরেকবার ডানে-বামে। যেটার মানে হ্যা,না দুটোই। বিরুনিকা হাসলো। তারপর বললো,
” তাহলে বুঝো,কেন তোমার ভাইয়ের সামনে গেলে আমার সব আত্মবিশ্বাস ফুঁস হয়ে যায়। বিরুনিকা জানে, সাচী তুহিনের প্রতি প্রচন্ড আসক্ত। হয়তো এটা ভুল। কারন যাকে এখনো দেখেইনি সরাসরি,কথায় হয়নি,তার প্রতি এতো অনুরাগ। হয়তো মনে মনে ভালোই বেসে ফেলেছে। সাচী একদম ছোটও নয়,সামনের অক্টোবরে কুড়িতে পা দিবে। আর যথেষ্ট ম্যাচিউর সে। মাঝে মাঝে পাগলামি করে,তবে সেটা সবক্ষেত্রে নয়। এমনিতে ভীষণ ট্যালেন্টেড একটা মেয়ে।
সাচী ওড়নার কোনা কামড়াতে লাগলো। তখন বিরুনিকা বললো,সব চিন্তা,ভয় বাদ দিয়ে একটা ঝাক্কাস সাজ দিয়ে দাও তো। কে জানে, আরজে সাহেব কুপোকাত হলে হতেও পারে। আচ্ছা, তার প্রিয় রং কি জানো?
“সাচী ওড়নার কোনা কামড়াতে কামড়াতেই বললো,স্কাই ব্লু। কিন্তু কেন?”
“তোমার শাড়ি আছে ঐ রংয়ের?”
” আমার কোন রংয়ের শাড়িই নেই। জীবনে শাড়ি পরছি কোনদিন?” বিরুনিকা সাচীর কথার জবাব না দিয়ে,দ্রুতগতিতে রুম ত্যাগ করলো। সাচী তার মতই ওড়না কামড়াতে লাগলো। যেন এই মুহুর্তে ওড়না কামড়ালেই তার বুক ধড়ফড় করা কমবে।
বিরুনিকা আবার ঝড়ের গতিতে রুমে প্রবেশ করলো। হাতে কিসের একটা ব্যাগ। ব্যাগ থেকে একটা শাড়ি বের করলো।
সাচী বোকার মত জিজ্ঞেস করলো,
” তুমি কি এখন শাড়ি পরে ভাইয়াকে সারপ্রাইজ দিবে?”
বিরুনিকার নিজের কপাল চাপড়াতে মন চাইলো। এই মেয়ে কখনো কখনো এতো চালাক,আবার কখনো একেবারে নির্বোধ। আমি নাকি শাড়ি পরবো এখন,তাও আবার তার ভাইয়াকে সারপ্রাইজ দিতে। আর যেই না ভাই উনার,দশটার আগে ঘুম ভাঙলে তো! এতো রাত জেগে কি করে,কে জানে। লোকটা খুব শীঘ্রই উন্মাদ হয়ে যাবে,বিরুনিকা নিশ্চিত।
নিজের ভাবনা বাদ দিয়ে বিরুনিকা সাচীকে তাড়া দিলো বাথরুমে যেয়ে শাড়ি পরার প্রাথমিক ধাপ সম্পন্ন করার জন্য। সাচীকে কোনকিছু বলার সুযোগ না দিয়ে,বাথরুমে ঠেলে পাঠালো। না হয়,এই মেয়ে আরো হাজারটা প্রশ্ন করবে।
আকাশী রংয়ের শাড়ি,সাদা ফুলহাতা ব্লাউজে সাচীকে একটুকরো নীল সাদা আকাশই মনে হচ্ছিল দেখতে। যেন নীল আকাশে সাদা মেঘের ভেলা। কানে বড় হালকা ব্লু এয়ারিং পরলো। চুলগুলো ছাড়াই রাখলো,তবে একপাশে এনে রাখলো। গলায় গাঢ় নীল রংয়ের ক্রিস্টাল পাথরের নেকলেস।হাতভর্তি সাদা,আকাশী চুড়ি। চোখে হালকা কাজল,কারন সাচীর চোখ বড় বড়। গাঢ় কাজলে মানাবে না। লিপস্টিক লাগাতে চাইছিলোনা সাচী,কিন্তু আজ বিরুনিকার সাথে কথায় পারছেনা সে। তাই চুপচাপ সব মেনে নিচ্ছে। ঠোঁটে মেরুন লিপস্টিক দিলো, তবে হালকা করে। সাজ শেষে আয়নার দিকে তাকিয়ে বিরুনিকা বললো,
” যাও,দোয়া করে দিচ্ছি। ঐ আরজে সাহেবের যেন একশো দশ ডিগ্রী জ্বর উঠে যায় আজকে। এতোদিন ধরে আমার পুঁচকি বোনটাকে জ্বরে পুড়িয়ে মারছে,একটু তো তারও সেই জ্বরের তাপে পুড়া উচিত। সাচী লজ্জায় লাল হয়ে গেল একদম। আয়নায় নিজের দিকে তাকাতে,নিজেই লজ্জা পাচ্ছে।
অনেক কষ্টে মাথা তুলে তাকালো। আয়নার দিকে তাকাতেই,বিরুনিকা হাসলো। আর হাতে অল দ্যা বেস্ট দেখালো। প্রায় আটটা বেজে গেছে। যেতে চল্লিশ মিনিটের মত লাগবে। এখনি রওনা দিতে হবে। আজকে আর স্কুটি নিয়ে যাওয়া যাবেনা। এমনিতেই শাড়ি একটা বিপদজনক বস্ত্র। অবশ্য যারা সাচীর মত পরতে, সামলাতে জানেনা। বিরুনিকা সম্পূর্ণ পিনআপ করে দিয়েছে অবশ্য, কোন রিস্ক নেই।
তাই উবার ডেকে নিলো সাচী। বের হওয়ার সময় বিরুনিকা বললো,আজকের শো তে আমি ফোন দিব নিশ্চিত। আর অনুরোধ করবো যেন কুমার শানুর ঐ গানটা প্লে করে,
প্রেমের জ্বরে মরছি কেঁপে,
দাও গো মুখে থার্মোমিটার,
দেখো আমার জ্বরটা মেপে,
উঠে যে গেছে সাড়ে তিন চার।
কোন ডাক্তার এ রোগ সাড়াবে!
উফফ…ডাক্তার নয়, ঐখানে আরজে হবে। সাচী কোনরকমে শাড়ি সামলে বের হয়ে গেল। আজকে বিরুপু ওকে পেয়ে বসেছে একেবারে। সুযোগ সাচীরও আসবে।
বিরুনিকা গেইটে দাঁড়িয়ে ছিলো। তখন সেখানে সায়াহ্নর আগমন ঘটলো। পিছন থেকে আচমকা বলে উঠলো,
“ঐ গানটা কুমার শানুর সাথে, ফিমেল সিংগার জানি কে ছিল?”
হঠাৎ কন্ঠ টা শুনতে পেয়ে বিরুনিকা ভয় পেয়ে গেল। পরক্ষনেই পিছনে তাকিয়ে সায়াহ্ন কে দেখে বোকার মত দাঁড়িয়ে রইলো। এমনিতে সহজে কোন কথাই বলেনা বিরুনিকার সাথে। যখন কয়দিন প্রাইভেট পড়েছিল,তখনো পড়ার বাইরে বাড়তি একটা আলাপও করেনি। আর আজ এতদিন পর কথা বলছে,তাও কি জন্যে?
” জিজ্ঞেস করছে,এই গানের ফিমেল সিংগার কে ছিল?”
বিরুনিকার তখনি মন চাইছিলো গেইটের বাইরে গিয়ে গাড়ির নিচে ঝাঁপ দিতে। এই লোকটা এমন কেন?
কিছুই কি বুঝতে পারেনা!
এতো রোমান্টিক কাহিনী কি করে লিখে তাহলে?
নিজের জীবনে রোমান্সের বালাই নাই,সে আবার রোমান্টিক ফিল্মের স্ক্রিপ্ট লিখে। এই আমি বলছি,জীবনেও ঐ স্ক্রিপ্ট কোথাও গ্রহণ করবেনা,হুহ!
বিরুনিকা মনে মনে এসব বললেও,মুখে কিছু না বলে, গটগট করে হেঁটে সেখান থেকে চলে গেল। সায়াহ্নর যেন তাতেও কোন ভ্রক্ষেপ নেই। সে নিজেই মনে করার চেষ্ট করতে লাগলো,ফিমেল সিংগারটা জানি কে ছিলো?
আজকাল সহজ সহজ বিষয় ভুলে যাচ্ছে সে,এটা একদম ভালো লক্ষণ নয়।
#চলবে…