#যখন_তুমি_এলে
#পর্ব- ০১।
লেখা- জাহান লিমু।
বরাবরের মত আজকেও ভার্সিটিতে একজোড়া কাপলের ব্রেকআপ হয়েছে। বর্তমান সময়ে অবশ্য এটা বেশ সাধারণ ব্যাপার। সপ্তম সেমিষ্টারের শামীম ভাই,আর পঞ্চম সেমিষ্টারের স্বর্ণা। তাদের নাকি দুইবছরের সম্পর্ক ছিল। শামীম ভাইকে অন্য একটা মেয়ের সাথে আপত্তিকর অবস্থায় দেখতে পেয়ে,তৎক্ষণাৎ ব্রেকআপ করে ফেলে স্বর্ণা। সাথে কষিয়ে দুইটা থাপ্পড় বসিয়ে আসে। দূর থেকে সেই দৃশ্য দেখে কেউ একজন বিদ্রুপের হাসি হাসছিল। আর বিড়বিড় করে বলছিল,
আমার নীতিবাক্যটা মানলে, আজ এদের এ অবস্থা হতো না।
এই নাকি তারা ভার্সিটির আদর্শ কাপল ছিল। এক চুটকিতেই আদর্শ গর্তে লুকালো। এটা বলে শার্টের হাতাটা ফোল্ড করতে করতে সামনে এগুতে লাগলো সে। মেয়েটাকে যে স্বান্তনা দিতে হবে। যে ব্রেকআপ করে,সে তাকেই গিয়ে স্বান্তনা দেয়। ছেলে ব্রেকআপ করলে ছেলেকে,মেয়ে করলে মেয়েকে। আর এমনভাবে বুঝিয়ে আসে, মনে হবে পৃথিবীতে সত্যি ভালোবাসার কোন অস্তিত্ব নেই। ব্রেকআপ করেছে, বেশ করেছে। ভালোবাসা শব্দটাই যে তার কাছে ঘৃণার। আর সে সেটা সবাইকে দায়িত্ব সহকারে বুঝিয়ে আসে।
তার ধারণা এ পৃথিবীতে যারাই ভালোবেসেছে অন্তরের অন্তঃস্থল থেকে,তারাই ঠকেছে। সত্যি কারের ভালোবাসাগুলো হেরে যায়, মিথ্যে ভালোবাসার কাছে। অথবা ভালোবাসা শব্দটাই একটা বড় মিথ্যা।
ক্যাম্পাস ক্যান্টিনে বসে ছিল রোহানী। অনেকক্ষণ ধরে বাঁদড়টার জন্য অপেক্ষা করছে। কে জানে আজকে আবার কোন কাপলের উপর তার শনির দৃষ্টি পড়েছে। ছেলেটা যে কেন এমন করে, সেটা ভেবে পায় না রোহানী। কিছু জিজ্ঞেস করলে বলে,” দেখ আমি তাদেরটাই ভেঙে দেয়,যাদের দেখে আমার মনে হয় ওরা একে অপরকে সত্যি কারের ভালোবাসেনা।”
রোহানী ক্ষুব্ধ কন্ঠে বলে,” তুই কি জ্যোতিষি? তুই জানিস কি করে যে ওরা একে অপরকে সত্যি কারের ভালো বাসেনা?”
” সেটা জানার জন্য জ্যোতিষি হতে হয় না রে রুই মাছ। রুই মাছের মতই তোর মাথাটা মোটা। অবশ্য রুই মাছের মাথা খেতে অনেক স্বাদ,আর তোর মাথা…ইয়াক! পুরোটা গোবরে ভরা।”
” রোহানী বুঝলো,এর সাথে তর্ক করে লাভ নেই। শুধু শুধু ওকে পঁচাবে সারাক্ষণ। সারাক্ষণ উদ্ভট উদ্ভট নাম বলে ওকে খোঁচানোই এর প্রধান কাজ। কখনো রুই মাছ,কখনো বাচ্চা হাতি,কখনো পোল্ট্রি মুরগি। তাই রোহানী সিদ্ধান্ত নিলো এরপর থেকে আর কখনো ওর সাথে তর্কে জড়াবে না।
একসাথে স্কুল কলেজ সব পার করেছে দুজন। এখন একই ভার্সিটিতে পড়ছে। রোহানীর অবশ্য অন্য জায়গায় চান্স হয়েছিল,কিন্তু সে ভর্তি হতে দেয় নি। রোহানীকে ছাড়াও তার চলবেনা। তার সব কুকর্মের একমাত্র চাক্ষুষ সাক্ষী যে এই রোহানী। ক্যান্টিনে বসে থেকে থেকে বিরক্ত হয়ে,রোহানী বাঁদড়টাকে একটা ফোন দিলো। কোনরকম হাই-হ্যালো না বলেই সরাসরি বললো,
” শাহজাদা কি রাজকার্যে ব্যস্ত আছেন?”
” তুই জানিস না আমি কত ব্যাস্ত মানুষ। যখন তখন ফোন করে আমাকে একদম বিরক্ত করবিনা। একটা কাজে ছিলাম,শেষ করতে পারলাম না তোর জন্য। মেয়েটা এখনো কাঁদছে। আরেকটু সময় বুঝালে,সব স্বাভাবিক হয়ে যেত। তোর জন্য পারলাম না। ফোন রিসিভ না করলে তো আবার,আমাকে হুমকি দেয়া শুরু করবি। তোকে তো আমাকে ভয় পেয়ে চলতে হয়। আমি শাহজাদা হলে,তুইতো সম্রাজ্ঞী। সম্রাজ্ঞীর কথা খেলাপ করলে যে,আমার গর্দান কাটা যাবে। রাজ্য থেকে বিতাড়িত করা হবে আমাকে।”
” ড্রামাবাজের ড্রামা দেখতে দেখতে রোহানী অতিষ্ঠ। যেটা ভেবেছিল তাই,আজকেও তিনি তার মহৎ কার্য সম্পাদন করে ফেলেছেন। কোনদিন যে ছেলেটা নিজে ফাঁসবে,সাথে আমাকেও ফাঁসাবে। নিজেকে জেলখানার ভেতর কল্পনা করতেই,রোহানীর মাথা চক্কর দিয়ে উঠলো। আচ্ছা জেলখানায় কি বার্গার খেতে দেয়?
বার্গার ছাড়া তো আমি চোখে কিছু দেখিনা। আমার দিন শুরু হয় বার্গারে কামড় দিয়ে,শেষও হয় বার্গারে। সেই বার্গার ছেড়ে ঐ বাঁদড়ের জন্য আমাকে জেলে থাকতে হবে!
” না…….!”
রোহানীর চিৎকার শুনে ফোনের ওপাশের ব্যক্তি বেশ ভড়কে গেল। তারপর ধমক দিয়ে বললো,
” এই বাচ্চা হাতি,হাতির মত এমন সুর করছিস কেন?”
” আমি জেলে যেতে চাই না। আমার বার্গার,আমি তার সাথে ব্রেকআপ করতে পারবনা। একদিনের জন্যও না।
” নেহি……..কাভি নেহি…..!”
” তোর মাথায় গোবরের মধ্যে এখন মনে হয় পোকা জন্মেছে। তাই এমন আবোল-তাবোল কথা বলতে শুরু করেছিস। তোর ভবিষ্যৎ বরটার জন্য আমার ভীষণ মায়া হয় রে। বেচারা পাবে একপিস! যার বরের চেয়েও, বার্গারের সাথে প্রেম বেশি।”
” তুই প্রেমের কি বুঝিস রে? সারাক্ষণ সবাইকে প্রেম-ভালোবাসা থেকে দূরে থাকার এন্টিডোট দিয়ে বেড়াস,সে নাকি আবার প্রেমের আলাপ করে। তোর মুখে এসব মানায় না। আমি কি চাই জানিস?
” জানিতো, বার্গার। চিন্তা করিস না,তোকে ডিসকভারি চ্যানেলে যে বার্গার কোম্পানিগুলো দেখায়,তার মালিকের সাথে বিয়ে দিব। তুই বার্গার খেয়ে খেয়ে,বাচ্চা হাতি থেকে মটকা হাতি হবি। মানুষের কষ্ট করে চিড়িয়াখানায় যেতে হবে না, এই একটা প্রাণী দেখার জন্য। পথেঘাটেই দেখা মিলবে। রোহানী ওর কথায় পাত্তা না দিয়ে নিজের মত বলতে লাগলো,
তুই এতোটা পরিমাণ কারো প্রেমে ডুবে মরিস,যেন সেই গভীরতা থেকে তুই আর বের হয়ে আসতে না পারিস। তোর প্রতিটা শিরায় শিরায় যেন প্রেমের পোকা কিলবিল করে। তোর রন্ধ্রে রন্ধ্রে যেন ভালোবাসার প্রজাপতিরা অহর্নিশ ছুটোছুটি করে। তোর মন,মস্তিষ্ক, শরীর সবটা জুরে যেন তার নাম উচ্চারিত হয় বারবার। আমি সেই দিনটার অপেক্ষায় আছি। খুব খুব খুব অপেক্ষায় আছি। কেউ তো আসুক,তোর অহংকার, তোর ভুল ধারণা ভেঙে চুরমার করে দিতে। ভালোবাসার জ্বরে তোকে পুড়িয়ে মারুক। কোন ঔষধে কাজ না করুক। শুধু তুমি নামক সেই মানবী ছাড়া।
ভালোবাসার জন্য তুই ছটফট কর প্রতিনিয়ত। তোর সব লুট করে নিয়ে যাক সে। তোকে নিঃস্ব করে দিয়ে যাক। তুই একবিন্দু ভালোবাসার জন্য কাঙালের মত তার সামনে নিজেকে সোপর্দ করবি।
” জোকস অফ দ্যা ইয়ার। বাট নাইস জোক্স,নেক্সট প্লিজ…
” এতোগুলো কথা বলার পরও কোন বিশেষ লাভ হলো না রোহানীর। অবশ্য সে জানে,লাভ হবেও না। তবুও বলেছে। রোহানীর মাঝে মাঝে ওকে নিয়ে কিঞ্চিৎ ভয়ও করে। কারন যারা যারা এই ভালোবাসা নামক শব্দটা থেকে লক্ষ মাইল দূরে থাকতে চেয়েছে,তারাই তত দ্রুত আলোকবর্ষ আগে সেই গভীর ভালোবাসায় জড়িয়ে গেছে। আর এতোটা নিখাঁদ ভাবেই জড়ায়,যে সেখান থেকে বেরিয়ে আসার কোন পথ থাকেনা আর। তবে রোহানী চাই,ওর বন্ধু সেই গভীরতম প্রনয়ে আবদ্ধ হোক। ওর ভুল ধারণাটা ভাঙুক। এই পৃথিবী ভালোবাসার জোরেই টিকে আছে। ভালোবাসা আছে বলেই,পৃথিবী এতো সুন্দর। মানুষ প্রতিনিয়ত স্বপ্ন সাজায়,নিজের ভালোবাসার মানুষদের ঘিরে। এটাইতো জীবন,এক টুকরো ভালোবাস নিয়ে।
ক্যানন ক্যামেরা গলায় ঝুঁলিয়ে ভার্সিটি গেইটে ঢুকছে সাচী। লেডিস প্যান্ট,সবুজ আর সাদা প্রিন্টের কুর্তি,গলায় সাদা স্কার্ফ প্যাঁচানো। ফটোগ্রাফি আর শর্টফিল্ম বানানো তার নেশা। তৃতীয় সেমিস্টারের ছাত্রী, জার্নালিজম বিভাগের। তার বানানো সর্বশেষ শর্টফিল্মটা বেশ সাড়া ফেলেছে। পথশিশুদের নিয়ে। যার নাম ‘ রোড সাইড স্টার’। যেখানে একজন পথশিশুর জীবনী,দশমিনিটের মধ্যে বন্দি করা হয়েছে। একটু সহযোগিতা পেলে যে, এরাও বড় কিছু করতে পারে,সেটাই তুলে ধরেছে। একজন মধ্যবিত্ত ব্যবসায়ীর সহযোগিতায় একটা পথশিশু বড় ক্রিকেটার হয়ে উঠে। রাস্তায় ছেলেটাকে খেলতে দেখে,সে লোক বিকেএসপিতে ভর্তি করে দেয়। সে হয়তো ছেলেটার ট্যালেন্ট বুঝতে পেরেছিল। একটা টেলিভিশন ইন্টারভিউ তে সেই লোক,আর ছেলেকে আনা হয়। তারাই কাহিনীটা বর্ণনা করে। ছেলেটা লোকটাকে বাবা ডাকে এখন। লোকটাও বেশ গর্ববোধ করে তাকে নিজের ছেলের পরিচয় দিতে। যেখানে তার নিজের ছেলে নেশায় আসক্ত হয়ে,পুনর্বাসন কেন্দ্রে আছে। আর সেই শর্টফিল্মে অভিনয় করেছে সাচীর বাবা,আর এক কাজিন। সাচীর বাবা একজন মঞ্চ অভিনেতা। বাবার সাথে সম্পর্কটা বন্ধুত্বের চেয়ে কোন অংশে কম না। বরং একটু বেশিই। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে হইচই ফেলে দিয়েছে সেই শর্টফিল্মটি। সেই সুবাদে সাচী নামটাও ভার্সিটিতে বেশ পরিচিত হয়ে উঠেছে। ইতিমধ্যে বেশ কজন ছেলে তার প্রেমে সিরিয়াসলি হাবুডুবু খাচ্ছে।
তবে সে তো দিওয়ানা আরেকজনের জন্য । তার ক্রাশ,রেডিও জকি আরজে তুহিন। বর্তমান সময়ের মেয়েদের অন্যতম প্রধান ক্রাশ,এই আরজে তুহিন। প্রায় ছয়ফুট প্লাস লম্বা বিশাল দেহের এই ছেলেটি,দেখতে অনেকটা পাকিস্তানি ছেলেদের মত। নাক একদম লম্বা,খাঁড়া। মুখভর্তি চাপ দাঁড়ি। চোখ দুটোর গড়ন মাঝারি,সিলকি চুল সারাক্ষণ স্পাইক করা থাকে। আর সবচেয়ে বড় বিষয়,তার কন্ঠ। যেটা মেয়েদের নেশাগ্রস্ত করে দেয়। যখন সে অন-এয়ারে এসে ‘হ্যালো লিসেনারস’ বলে,তখন মনে হয় হাজার হাজার মেয়ে দীর্ঘশ্বাস ফেলে। সাচী ঘুম থেকে আগে আগে উঠে শুধু আরজে তুহিনের ‘শো’ শোনার জন্য। সকালটা সুন্দর হয় না,তার নেশা ধরানো কন্ঠটা না শুনলে। গত একবছর ধরে এই অভ্যাসটা গড়ে উঠেছে। প্রথম যেদিন তুহিনের কন্ঠটা শুনেছিল,এক মুহুর্তের জন্য হার্টবিট মিস করেছিল সে। এতো ঘোর লাগানো কারো কন্ঠ হয়? তারপর থেকে এটা প্রতিদিনের অভ্যাস হয়ে যায়। এখনো সামনা-সামনি দেখার সৌভাগ্য হয়ে উঠেনি। ফেসবকু,ইন্সটাগ্রামে ফলো দিয়ে রেখেছে। নতুন ছবি দেয়ার সাথে সাথে ঝাঁপিয়ে পড়ে লাভ রিয়েক্ট। আর সেখানে আরো হাজার হাজার মেয়ের লাভ রিয়েক্ট দেখে সাচীর মন চায়,সবগুলোকে ঢিশক্যাও করে দিতে। মাঝে মাঝে ইচ্ছে হয়,জুকার কাকুকে বলতে যেন লাভ রিয়েক্ট তুলে দেয়। তাহলে তো আর অন্য মেয়েরা দিতে পারবেনা।
পরে আবার ভাবে,তাহলে তো সে নিজেও দিতে পারবেনা।
তখন নিজের কুঁকড়া চুলগুলো রাগে আরো এলোমেলো করে দেয়। ওর চুল কোমড়ের উপর অবধি,আর পুরোপুরি কুঁকড়া। কিছুটা বলিউড অভিনেত্রী কঙ্গোনা রণৌত এর মত। তবে সাচী তার চুল সবসময় পাতলা শিফনের কাপড়ের টুকরো দিয়ে বেঁধে রাখে। অনেকটা নাইনটিজ এর হিরোইনদের মত।মেয়েটা ভীষণ ফিল্মি। তার স্বপ্ন একদিন নামকরা ডিরেক্টর হবে।একেকদিন,ড্রেসের সাথে ম্যাচিং করে একেক রঙ এর ফিতা দিয়ে চুল বাঁধে। আজকে সাদা ফিতা দিয়ে বেঁধে রেখেছে। ছোট ছোট চুলগুলো কপালে ছড়িয়ে থাকে। সেদিকে তার ভ্রুক্ষেপ নেই। সে কাঁধে ব্যাগ ঝুঁলিয়ে,আর সামনে ক্যামেরা নিয়ে হন্তদন্ত হয়ে ছুটে চলেছে। মুহুর্তেই এক ছেলে আচমকা ওর সামনে হাঁটুঘেরে বসে পড়লো। হাতে একগুচ্ছ সাদা গোলাপ। সাদা গোলাপ সাচীর একদম পছন্দ নয়। দেখলেই মনে হয় কোন নিরশ মানুষই সাদা গোলাপ পছন্দ করে কেবল। আরে প্রেম নিবেদন করা মানেই হলো লাল গোলাপ। লাল হলো ভালোবাসা রং। রোমান্টিকতার রং।
সাচী কতক্ষণ চুপচাপ দাঁড়িয়ে ছেলেটার কথাগুলো শুনলো। বলা শেষ হওয়ার পর ফুলগুলো ছেলেটার হাত থেকে নিয়ে,পাশে ছুঁড়ে ফেলে দিল। আর ইংরেজিতে বলে গেল,
” এট ফার্স্ট লার্ন,হাউ টু প্রপোজ এ গার্ল। ইফ ইউ ক্যানট,দ্যান সার্চ ইনটু গুগল মামা। ওকে,বাই মামা। এটা বলে সামনে থেকে চুলগুলো পেছনে সরিয়ে দিয়ে, কাকে যেন হাই বলতে বলতে চলে গেল। আর ছেলেটা ব্যবলার মত তাকিয়ে রইলো,শেষ পর্যন্ত মামা!
রোহানী হেসে কুটিকুটি হতে লাগলো। বলতে লাগলো,
” রাদ,বস। মেয়েটা কি ফুলগুলো দিয়ে তোকে প্রপোজ করলো নাকি? এটা বলেই রোহানী হাসিতে ফেটে পড়লো,যেন বেশ মজার কিছু বলে ফেলেছে।”
” ফুলগুলো সুন্দর করে সবগুলো একসাথে করলো সে। ফুলগুলোর দিকে তাকিয়ে মৃদু হাসলো। সেটা দেখে রোহানীর চোখ কপালে উঠে গেল। তবে কি ওর দোয়া কবুল হয়ে গেল?
ঠিক তখনি সে ফুলগুলো ছিঁড়তে ছিঁড়তে সেগুলোর পোস্টমর্টেম করে দিল প্রায়। রোহানী হতাশার সুরে বললো,এতো ক্ষেপে গেলি কেন?”
” এসব ফিল্মি,ড্রামাবাজ মেয়েদের আমি নিতে পারিনা জাস্ট। সারাদিন খালি ফিল্মি স্টাইল চিন্তাভাবনা। ছেলেটাকে পছন্দ না, সেটা বললেই পারে। ফুল কি দোষ করলো? ভালোবাসলে ফুলের রঙ কোন বিষয় না। তখন সাদা গোলাপকেও,লাল গোলাপ মনে হবে। এ টাইপের ছেলেমেয়েরাই সামান্য কারণেও ব্রেকআপ করে ফেলে বুঝলি। রোহানী দুই হাত গালে দিয়ে অবাক হওয়ার ভান করলো। মুখ হা করে বললো,এ যে ভূতের মুখে রাম নাম! তোর শরীর ঠিক আছে তো বস? দেখি দেখি,জ্বর-টর করলো নাকি। রোহানী এগুতে নিলে,রাদ পিছিয়ে যায়। ধমকে বলে,আমি ঠিক আছি বাচ্চা হাতি। কখন আবার আমার উপর পড়ে যাবি,আমি ভর্তা হয়ে যাবো। ওজন তো মাত্র সেন্সুরি হলো! আমাদের মুশফিক ভাই সেন্সুরি করতে পারেনা,নার্ভাস নাইনটিনে আঁটকে যায় অধিকাংশ সময়ে,আর তুই এভাবে সেন্সুরি করে বসে আছিস। রোহানী রাদের বাহুতে একটা ঘুষি দিলো ক্ষেপে গিয়ে। রাদ,আহহ করতে লাগলো ব্যাথায়।
তারপর উদাসীনভাবে আকাশের দিকে তাকিয়ে রোহানী কে উদ্দেশ্য করে বললো,
” আমি ভালোবাসার বিপক্ষে নয় রোহানী। তবে ভালোবাসা নামের মন্দবাসার বিপক্ষে। যারা ভালোবাসা শব্দটাকে সেই মন্দ দিয়ে কলুষিত করে, তাদের বিপক্ষে। যে ভালোবাসে,সে কখনো ছেড়ে যায় না। ভালোবাসা মানে হলো কাছে থাকা,পাশে থাকা,দূরে যাওয়া নয়। রোহানী বিস্ময়ের চূড়ান্ত সীমায় পৌঁছে ভাবতে লাগলো,
” এ কোন রাদকে দেখছে সে? সবকিছু কেমন গুলিয়ে যাচ্ছে রোহানীর। হিসাবে গড়মিল দেখা দিচ্ছে। চোখ মনে হয় ভুল মানুষকে দেখছে,কান মনে হয় ভুল কিছু শুনছে। সত্যিই কি মানুষ বাইরে দেখতে একরকম,আর ভেতরে আরেক?
যে ভেতরটা কেবল একান্তই নিজের!”
#চলবে…..