#যখন_তুমি_এলে।
#পর্ব- ১৬।
#লেখা- জাহান লিমু।
তুহিন অস্ট্রেলিয়া আছে। আর সাচী সবচেয়ে অবাক হলো,আরাদের মাথায় যে বিষয়টা এসেছে,সেটা কেন ওর মাথায় এলো না। বা অন্য কারো মাথায় কেন এলো না?
তুহিন যেদিন দেশ ছেড়েছে আরাদ এয়ারপোর্টে গিয়ে সেদিনের যাত্রীদের লিস্ট চেক করেছে। তুহিন নামে কেউ দেশ ছেড়েছে কিনা। আর কোথায় গেছে। যদিও এটা কঠিন। আর এয়ারপোর্টের লোকেরা তো আরাদের দুলাভাই লাগেনা,যে বললেই সাথে সাথে বের করে দিবে তথ্য। তবে তানিমের এক ফ্রেন্ড সেখানে জব করে। তানিমের সাথে কথার একফাঁকে সেটা জানতে পেরেছিলো। কারন আরাদের এয়ারপোর্টের বিষয়টা মাথায় এলে,সেটা নিয়ে সে তানিমের সাথে কথা বলে। যে ও কোনভাবে হেল্প করতে পারবে কিনা। তখন দেখে যে তানিমের বেস্টফ্রেন্ডই সেখানে কাজ করে। তার সূত্র ধরেই আরাদ তুহিনের খোঁজ বের করতে পেরেছে। তবে এরজন্য অবশ্য তাকে বেশ পরিশ্রম করতে হয়েছে। তুহিনের বাসার ঠিকানা সংগ্রহ, ওর বোনের সাথে দেখা করা। দেখা করে পুরো বিষয়টা খুলে বলা। যদিও আরাদের কথা শুনে তুরীন বড্ড ক্ষেপে গিয়েছিলো। সেটাই স্বাভাবিক। তবে আরাদ নিজের ভুল স্বীকার করলো। আর এটাও বললো যে, এখানে সাচী বা তুহিন কারোই কোন দোষ নেই। আর আরাদ যে এখানে এসে সব বলে দিয়েছে, সেটা যেন সাচী না জানতে পারে। প্রথমে আরাদকে তুরীনের কাছে বিরক্তিকর মনে হলেও,পরে রাজী হলো অবশ্য। ভাইয়ের খোঁজ পাওয়াটা তার কাছে জরুরী এমুহুর্তে। তবে কাকতালীয় ভাবে এর পরেরদিনই তুহিন ফোনটা করেছে।
আরাদের কাছ থেকে তুহিনের খোঁজ জানতে পেরে সাচী তুরীন আপুর সাথে আবার দেখা করতে গিয়েছিলো। সেখানে গিয়ে সে আরো বড় শক খেলো। কারন তুহিন নাকি ফোন করেছিলো। সাচী কৌতূহলী হয়ে জানতে চাইলো তুহিন ওর ব্যাপারে কিছু বলেছে কিনা। কিন্তু তুহিন সাচীর ব্যাপারে কোন কথায় নাকি বলেনি। শুধু নিজের অবস্থান জানানোর জন্য এতোদিন পর ফোন দিয়েছে। এবং কথা বলা শেষ করেই সাথে সাথে ফোন অফ করে দিয়েছে। তুরীন আপুকে কিছু বলার সুযোগও দেয় নি। সাচী বেশ আশাহত হলো। বড্ড অভিমানও হলো বটে। তবে সেটা প্রকাশ করলোনা। এবার সাচীর ভীষণ জেদ চেপে গেলো মনে। সে ভাবতে লাগলো,তুহিন যদি জানে যে সে কোনকিছু করেনি,তাহলে এভাবে রিয়েক্ট করার কি মানে? হ্যাঁ, আমার এভাবে কারো ফাঁদে পড়া ঠিক হয়নি। কিন্তু আমি কি করে বুঝবো যে কেউ ইচ্ছাকৃত আমার সাথে এমনটা করেছে?
কিন্তু তুহিনতো জানতো, সবটা মিথ্যে?
সে নির্দোষ।
তবে সে কেন আমার ভুল না ভাঙ্গিয়ে, এভাবে চলে গেলো?
ভালোবাসায় ভুল বুঝাবুঝি হয় সবারই। আবার ঠিকও হয়। কেউই ভুলের উর্ধ্বে নয়।
সে যদি আমাকে ক্লেরিফিকেশন দিতো,তারপরও আমি না বুঝতাম,তখন এমন করতে পারতো। তাহলে অন্তত নিজেকে বুঝ দিতে পারতাম।
কিন্তু সে কি করলো?
আমি যদি ভুল করে থাকি, তাহলে তুহিন যেটা করেছে সেটাও ভুল। আর এই ভুলের পরিণতিতে আজ দুজন দু’জায়গায়।
এর শেষ কি, তাও জানা নেই আমার!
.
একজন নামকরা ডিরেক্টরের অফিসে স্ক্রিপ্ট হাতে নিয়ে বসে আছে সায়াহ্ন। ডিরেক্টর বিজি অন্য কাজে। তাই সায়াহ্ন অপেক্ষা করছে। কিছুক্ষণ পর তিনি আসেন। সায়াহ্ন স্ক্রিপ্টটা সামনে এগিয়ে দেয়। মূল থিমটা সায়াহ্ন আগে ইমেইলে পাঠিয়েছিলো। সেটা পছন্দ হওয়াতে, পুরো স্ক্রিপ্ট নিয়ে আসতে বলে। স্ক্রিপ্ট জমা রেখে দেয়। সায়াহ্নকে পরে দেখা করতে বলে। সায়াহ্ন মনে আশা নিয়ে সেখান থেকে ফিরে আসে। অনেকবার রিজেক্ট হয়েছে সে। এ পর্যন্ত আসাটা এবারই প্রথম। মনটা বড্ড ভালো লাগছে আজ সায়াহ্নর।
বাসায় আসার সময় বিরুনিকার সাথে সিঁড়িতে দেখা হয়। সায়াহ্ন কে খুশি খুশি দেখে বিরুনিকা বেশ অবাক হয়।
সায়াহ্ন ফুরফুরা মুডে বিরুনিকাকে কেমন আছে জিজ্ঞেস করে। সেটা দেখে বিরুনিকা আরো অবাক হয়।
হলোটা কি মিস্টার কুনোব্যাঙ এর!
সায়াহ্ন হুঁট করেই বিরুনিকাকে কোথাও খেতে যাওয়ার অফার করলো। সাথে এটাও বলে যে, সাচীকেও ওদের সাথে নেয়ার জন্য। সেটা শুনে বিরুনিকা চুপসে গেলো অবশ্য। ভেবেছিলো একা যাবে!
যাই হোক, বিরুনিকা সাচীর নিকট গেলো। সায়াহ্ন আধাঘন্টার মধ্যে তৈরি হয়ে আসার কথা বলেছে। যে ঠিকঠাক কথাই বলেনা,সে নিজ থেকে বাইরে যাওয়ার কথা বলেছে। নিশ্চয়ই কুনোব্যাঙ এর মনটা আজকে অনেক ভালো। এসব ভাবতে ভাবতে সাচীর রুমে গেল বিরুনিকা। সাচী কি যেন লিখছিলো ল্যাপটপে। বিরুনিকাকে দেখে বসতে বললো। লিখাটা শেষ করে কথা বলবে। কিন্তু বিরুনিকা যখন বললো,সায়াহ্ন ওদেরকে বাইরে নিয়ে খাওয়ানোর কথা বলেছে,তখন সাচী বেশ অবাক হলো। সাচী অবশ্য জানে সায়াহ্ন যে বর্তমানের তরুণ জনপ্রিয় ডিরেক্টর, রাজবীর এর অফিসে গিয়েছিলো। স্ক্রিপ্ট জমা দিতে। হয়তো পজেটিভ কোন ইশারা পেয়েছে,তাই ট্রিট দিতে চাইছে। কিন্তু সাচী যাবেনা। তার জন্য তো একটা বাহানা বানাতে হবে। কি বলা যায়?
সাচী বিরুনিকাকে বললো,ভাইয়ুকে গিয়ে বলো আমার মাথা ধরেছে। এখন আমি একটু চোখ বন্ধ করে থাকবো। বিরুনিকা সাচীর মিথ্যে ঠিকই ধরতে পারলো,তবে কিছু বললোনা। কারন দুজনই জানে এবং বুঝতে পেরেছে কেন যাবেনা। তাই বিরুনিকা কথা না বাড়িয়ে নিজের রুমে গিয়ে দ্রুত তৈরি হয়ে নিলো। একটা হালকা গোলাপি জামদানি শাড়ি পরলো বিরুনিকা। অল্পসময়েই সে দারুণ করে শাড়ি পরে ফেলতে পারে। যেটা দেখে সাচী সবসময় বেশ অবাক হয়।
তবে এই অবেলায় বাসায় কি বলে বের হবে, সেটা ভেবে পাচ্ছে না বিরুনিকা। শাড়ি অবশ্য সে প্রায় প্রায়ই পরে। সেটা বিষয় না। একটা মিথ্যে বলতে হবে মায়ের কাছে। কিছু করার নেই।
বান্ধবীর বাসায় যাওয়ার কথা বলে বাসা থেকে কোনক্রমে বের হলো সে। সায়াহ্ন বাইরে দাঁড়িয়ে ছিলো। বিরুনিকাকে দেখে কিছুক্ষণ পলকহীন তাকিয়ে রইলো সে। কিন্তু বিরুনিকা কাছে আসার সাথে সাথেই তৎক্ষনাৎ চোখ সরিয়ে নিলো। যেটা দেখে বিরুনিকার বলতে ইচ্ছে করছিলো,চোখ সরালেই কি আর মন থেকে সরে যাবেন মিস্টার কুনোব্যাঙ!
আমি যে আপনার মিসেস কুনোব্যাঙ হতে চাই,কেন সেটা বুঝেন না? আজকে যে আপনাকে বুঝতেই হবে। আপনার মনে কি চলে সেটা আমি জেনেই ছাড়বো আজকে। এটা বলে বিরুনিকা রিকশায় উঠলো। সায়াহ্ন পারলে রিকশায় দুজনের মাঝখানে তিনফুট দূরত্ব রেখে বসতো!
কিন্তু আফসোস,রিকশার পুরো সিটটাই তিনফুট হবে কিনা সন্দেহ। সায়াহ্ন পুরো রোবটের মতো বসে আছে। হাত, পাও নাড়াচ্ছেনা একদম। কারন নাড়ালে যদি বিরুনিকার শরীরে লেগে যায়। সাচীর মাথা ব্যাথা করছে বলায়,সায়াহ্ন সাচীর রুমের দরজায় উঁকি দিয়ে দেখেছিলো। সত্যি সাচী শুয়ে ছিলো। তাই আর ভেতরে ঢুকলো না। কিন্তু বিরুনিকা কে যেহেতু বলেছে নিয়ে যাবে,না নিয়ে গেলে কেমন দেখায়। তাই এখন একরকম বাধ্য হয়েই যেতে হচ্ছে। তবে সায়াহ্ন যে ভীষণ অসস্থিতে পড়েছে,সেটা বিরুনিকা ঠিকই টের পেলো।
বিরুনিকার খুব ইচ্ছে করছিলো সায়াহ্নর হাতটা ধরতে। কিন্তু সে তো পারলে নিজের শরীরটাকে প্যাকেটিং করে ফেলে এমনভাবে বসেছে। ছেলেরাও এমন হয়?
নাকি পৃথিবীতে এই ওয়ান পিসই আছে এমন!
বিরুনিকার সায়াহ্ন কে বলতে ইচ্ছে করছিলো যে ওর শরীরে কোন ছোঁয়াছে রোগ নেই। তাই লাগলে, তার শরীর পঁচে যাবেনা। একরাশ বিরক্তি নিয়ে বিরুনিকা রিকশায় বসে রইলো। শরীরের সাথে না লাগুক,অন্তত নিজেতো ঠিক হয়ে বসে থাকুক।
বিরুনিকা কল্পনায় নিজের কপাল চাপড়ালো। এটা বলে যে, মুখপুড়ী আর ছেলে খুঁজে পেলিনা। শেষমেশ, এই কুনোব্যাঙ এর জন্য পাগল হলি?
কিন্তু বিপত্তি ঘটলো বাসায় আসার পথে!
#চলবে…