যখন_তুমি_এলে। #পর্ব- ১৩।

0
771

#যখন_তুমি_এলে।
#পর্ব- ১৩।
লেখা- জাহান লিমু।

রোহানীর দৃষ্টিকে অনুসরণ করে আরাদ যেই পেছনে তাকালো,সাথে সাথে ওর গালে কোন একটা হাত পড়লো। তবে সেটা আদুরে হাত নয়,মারার হাত। গালে খুব বেশি ব্যাথা না পেলেও,ডান হাতটা গালে চেপে ধরে রাখলো সে। ঘটনার আকস্মিকতায় রোহানী বাকরুদ্ধ!
ও কোনকিছু বলার বা বুঝে ওঠার আগেই ঘটনাটা ঘটে গেছে।
রোহানী ঘামতে লাগলো মারাত্মকভাবে। ওর গলা শুকিয়ে আসছে টেনশনে। সবকিছু কেমন এলোমেলো লাগছে। পরিস্থিতি ভীষণ ভয়াবহ মনে হচ্ছে। সবকিছু হাতের বাইরে চলে গেছে হয়তো। তবে মেয়েটা কি সব কথা শুনে ফেলেছে? তাহলে সাড়ে সর্বনাশ!
রোহানী একটা ঢোক গিললো। আমতা আমতা করে কিছু বলতে যাবে,তার আগেই সাচী আরাদকে কলার ধরে টানতে টানতে ছাদে নিয়ে গেল। ক্যান্টিন রুমটা মূল ভবন থেকে আলাদা,আর একতলা ছাদ করা। আরাদ চোখমুখ কুঁচকে সাচীর দিকে তাকিয়ে রইলো। মেয়েটার চোখে কেমন যেন আগুন জ্বলছে মনে হচ্ছে। মেয়েটাকেও আরাদের এক কুন্ডলী আগুন মনে হচ্ছে। ঠিক কি করতে চাইছে,কিছুই ঠাহর করতে পারছেনা। রোহানী সাচীর কাজে পুরো হতভম্ব। ও কি ওদের পেছনে যাবে,নাকি এখানেই দাঁড়িয়ে থাকবে, কিছুই বুঝতে পারছেনা। তবে এখানে বোকার মত দাঁড়িয়ে থাকতেও সে পারবেনা। তাই সেও ধীর পায়ে পিছু নিলো। হয়তো যাওয়াটা ঠিক হবে না,কিন্তু এখানে দাঁড়িয়ে থেকে রোহানী শান্তি পাবে না। তাই যা হওয়ার হোক,বন্ধু কে তো বিপদ থেকে উদ্ধার করতে হবে। রোহানী মনে মনে হাজার কোটি বকা দিতে দিতে ছাদের দিকে যাচ্ছিলো। একতলা সিঁড়িটা বেয়ে উঠতেও যেন রোহানীর বেশ কষ্ট হচ্ছে। যদিও সে অনেকটা শুকিয়েছে আগের তুলনায়।

সাচী আরাদের অন্য গালেও ঠাস করে আরেকটা থাপ্পড় বসালো। আরাদের যেন কি হলো!
সে চুপ করেই মাইর খেয়ে যাচ্ছে। কোন কথা বলছেনা,কোন রিয়েক্ট করছেনা, কেমন অদ্ভুত ভাবে শুধু সাচীর দিকে তাকিয়ে আছে। সাচী দ্বিতীয় থাপ্পড় টা দিয়ে নিজের মাথায় হাত দিয়ে চিৎকার করে ধপ করে বসে পড়লো,যেখানে দাঁড়িয়ে ছিলো সেখানেই। আরাদ বেশ অবাক হলো সেটা দেখে। সে দুই গালে দুইটা থাপ্পড় খেয়েও টু শব্দটাও করছেনা।
সাচী কাঁদছে।
সেই কান্না আরাদকে কেন জানি আঘাত করছে।
কিন্তু কেন?
এর আগেও অনেক মেয়েকে কান্নারত অবস্থায় দেখেছে আরাদ। অনেককেই সে স্বান্তনা দিয়েছে। তবে আজকের পরিস্থিতি সম্পূর্ণ ভিন্ন। সাচীর বড় বড় গোল গোল চোখ দুটিকে মনে হচ্ছে জলের ফোয়ারা। যেন সেখানে অজস্র জলের আঁধার। পৃথিবী ভাসিয়ে দিবে সেই জলের ধারায়।
হঠাৎ করেই আরাদের বুকটা মোচড় দিয়ে উঠলো কেন জানি। মনে হচ্ছে এবার হয়তো কোন ভুল হয়ে গেছে। আর সেটাই আরাদকে ভীষণ ভাবনায় ফেলছে।

তুহিনের ব্যাপারে তেমন কোন স্ক্যান্ডাল খুঁজে পাচ্ছিলো না আরাদ। ভেবেছিল এতো বড় আরজে,নিশ্চয়ই কোন কেলেঙ্কারির রেকর্ড থাকবে। অন্তত সেটা থাকাই স্বাভাবিক। কিন্তু অস্বাভাবিক ঘটনাটাই ঘটলো। অনেক ঘাটাঘাটির পরেও তেমন কোন বলার মত কাহিনী পেলো না সে। একটা পেয়েছিলো অবশ্য। কোথাও কলেজ প্রোগ্রামে স্টেজে একটা মেয়ে আচমকা তুহিনকে কিস করে। সেই ছবি, ভিডিও বেশ ভাইরাল হয়ে গিয়েছিল তখন। সেটা অবশ্য তিনবছর আগের কথা। তখন সে এতোটা জনপ্রিয় ছিলো না অবশ্য। তবে এটাতে তুহিনের কোন দোষ নেই। তাই এতটুকুতে কোন লাভ হবে না, সেটা বুঝতে পারলো আরাদ। এমন কিছু করা চায়,যেন মুহুর্তেই তাসের ঘরের মত তুহিন সাচীর ভালোবাসা ভেঙে যায় এবং কেউ কিছু বুঝতেও না পারে। তাই একটা ভয়াবহ প্ল্যান করেছিলো সে।
আর সেই কাজটার জন্য এখন সে অনুতপ্ত। কিন্তু এখন কি কিছু করার আছে!

তুহিন যে রেডিওতে কাজ করে, সেখানে একটা ফিমেল আরজে আছে। আরজে টিপ। সেও বেশ জনপ্রিয়। আর সে তুহিনকে পছন্দ করে। কিন্তু তুহিন কেন জানি পাত্তা দেয় না। আর সেই ছিলো আরাদের টার্গেট। যদিও আরাদের এটা বের করতে বেশ কষ্টই করতে হয়েছে।
কেননা রেডিও স্টেশনে বেশ ক’জন ফিমেল আরজে ছিলো। তাই তাদের সবার সাথে কথা বলা সম্ভব ছিলো না। তবে রেডিওর ফেসবুক ফেইজ ঘাটতে গিয়ে একটা ছবি খুঁজে পেয়েছিলো আরাদ। যে ছবিটাতে রেডিওর সব কর্মী আছে প্রায়। যেখানে সবাই সামনের দিকে তাকিয়ে আছে,সেখানে টিপের দৃষ্টি অন্য কারো দিকেই নিবদ্ধ। তুহিনের পাশেই সে দাঁড়ানো ছিলো। তুহিনের দৃষ্টি ক্যামেরার দিকে,আর টিপের দৃষ্টি তুহিনে। টিপের তাকানোটাতে কি যেন ছিলো। স্বাভাবিক ভাবে তাকালে সেটা বুঝাই যেত। কিন্তু টিপের তাকানোতে কেমন যেন আঁকুতি ছিলো,টান ছিলো। আকর্ষণ ছিলো। যেটা আরাদকে একটু ভাবায়। ভাবনাটা কতটুকু সত্য সেটা প্রমাণ করার জন্য সে উপায় খুঁজতে লাগলো। একসময় উপায় খুঁজে পেয়েও গেলো। যদিও টিপের সাথে যোগাযোগ করা সহজ ছিলো না। কিন্তু একটু খোঁজ নিয়ে জানতো পারলো আরজে টিপ ওর কাজিন তরীর বেস্টফ্রেন্ড। তরীর টাইমলাইনে টিপের সাথে একটা ছবি দেখেছিলো আরাদ। তরী আরাদের এক বছরের সিনিয়র। তরী আর টিপ একই কলেজ আর একই ভার্সিটিতে পড়েছে। তবে তরী এমবিএ করতে বাইরে চলে গেছে। তাই টিপের নাম্বার সংগ্রহ করতে আরাদকে বেশি বেগ পেতে হলো না। তবে নাম্বার সংগ্রহ করতে গিয়ে বোনের টিটকারি হজম করতে হয়েছে বেশ। তরী বলছিলো,

” শেষ পর্যন্ত এক বছরের সিনিয়র কাউকে তোর চোখে লাগলো?
অবশ্য এখন এটাই ট্রেন্ড হতে চলেছে। ছেলেরা জুনিয়র রেখে আজকাল সিনিয়র দের উপরে ক্রাশ খেতে শুরু করেছে। আর একবছরের সিনিয়র কোন ব্যাপার না। আরাদ কি বলবে ভেবে পেলো না। সবসময় ওর পেছনে লেগে থাকে এই মেয়েটা। তাই আরাদ কোনরকমে সেসব পাশ কাটিয়ে টিপের ফোন নাম্বারটা সংগ্রহ করেছিল। বাকী কাজটা করতে তাকে বেশি বেগ পেতে হয়নি। কারন টিপ ডেস্পারেটলি তুহিনকে চাইতো। অনেকটা তুহিনের প্রেমে অন্ধই বলা যায়। আর সেটাই আরাদের কাজটা সহজ করে দিলো। প্রথমে যদিও সহজে টিপ কিছু স্বীকার করতে চায় নি। তবে আরাদ যখন বললো ওর কথা অনুযায়ী কাজ করলে টিপেরই লাভ হবে,তখন টিপ কিছুটা দুর্বল হলো। কারন সে তুহিনকে যে কোন কিছুর মূল্যে পেতে চায়। শুধু তুহিনকে কাছ থেকে দেখতে পারার জন্য সে এমবিএর স্টুডেন্ট হওয়া স্বত্তেও রেডিও জকি হিসেবে জয়েন করলো। গত একবছর ধরে সে এখানে আছে। অনেকভাবে তুহিনকে ইঙ্গিত করেছে। কিন্তু বিশেষ কোন লাভ হয় নি। লাস্ট যখন ভেবেছিলো তুহিনকে সরাসরি প্রপোজ করবে,তার আগেই সাচীর আগমন ঘটে যায় তুহিনের জীবনে। আর সেটাই সে একদম মানতে পারছিলো না। তাই আরাদের কথায় সে খুব সহজেই রাজি হয়ে যায়।
টিপ এমন একটা ছবি সাচীকে ইমেইল করে,যেটা দেখে সাচী থমকে যায়। বিশ্বাস করতে চায় নি সে। কিন্তু মনের মধ্যে একটা কিন্তু থেকেই যায় এ কারনে। আর সে কিন্তু টা দূর করতেই সাচী তুহিনকে প্রশ্নের মুখোমুখি করেছিল। কিন্তু তুহিনের ব্যবহার দেখে সেদিন সাচী স্তম্ভিত হয়ে গিয়েছিল। যেন অচেনা কোন তুহিনকে সে সেদিন দেখেছিলো। এ তুহিনকে সাচী চেনে না। ভীষণভাবে আঘাতপ্রাপ্ত হয়েছিল সে। কিন্তু আজ সাচী যখন দেখলো তুহিন নিরপরাধ,কেউ ওকে ইচ্ছাকৃত দোষী প্রমাণ করতে চেয়েছিল,তখন সে নিরুপায়। কারন তুহিন নাগালের বাইরে। কোথায় আছে,কেউ জানেনা। সাচীর আজ নিজেকে ভীষণ অসহায় লাগছে। নিজের প্রতি নিজের ঘৃণা লাগছে। তুহিন সাচীকে সবসময় বলতো,
” ভালো কম বাসো সমস্যা নেই। আমি বেশি ভালোবেসে সেটা পুষিয়ে নিবো। কিন্তু বিশ্বাস টা দুজনকেই সমানভাবে করতে হবে। সম্পর্কে বিশ্বাসটা হলো দাঁড়িপাল্লার মতো। একদিকে কম হলেই ব্যালেন্স হারায়। আজ সাচী বুঝতে পারছে সে তুহিনকে সন্দেহ করে,কত বড় ভুল করেছে।
তবে শুধু ছবিটা দেখে সাচী সন্দেহ করতো না। টিপ সরাসরি সাচীর ফোন নাম্বার সংগ্রহ করে দেখা করে। যেখানে টিপ বলে যে,তুহিনের সাথে ওর ছয়মাসের সম্পর্ক ছিলো। এখন সাচীকে দেখে তুহিন টিপের সাথে ব্রেকআপ করে দিয়েছে। তাও কোন লজিক্যাল কারন দেখানো ছাড়াই। সাচী একটু সহজেই মানুষকে বিশ্বাস করে ফেলে। তাই সেদিনে টিপের কথা শুনে তুহিনের সাথে রাগারাগি করে। আর তুহিন সাচীর সাথেও একই রকমভাবে কোন কারন ছাড়াই ব্রেকআপ করেছে। সাচীকে কোন ব্যাখ্যা দেয় নি। নিজের মতো করে ব্রেকআপ করে এখন নিখোঁজ হয়ে গেছে। আর ঠিক এ কারনেই সাচীর টিপের বলা কথাগুলো আরো বেশি সত্য মনে হচ্ছিল। হয়তো তুহিনও অন্য আর পাঁচটা সেলিব্রিটির মতই। সাচীই হয়তো চিনতে ভুল করেছিলো।
কিন্তু এখন সাচী কি করবে?
এখনতো মনে হচ্ছে ও ঠিকই তুহিনকে চিনেছিল,কিন্তু অন্যের কথায় নিজের ভালোবাসার উপর সন্দেহ করে বসলো। যার ফলাফল দুজন দুপ্রান্তে।
মস্তবড় ভুল করে ফেলেছে সাচী,মস্তবড়!
এ ভুল শোধরানোর কোন সুযোগ কি সে পাবেনা?

আরাদ একদৃষ্টিতে সাচীর দিকে তাকিয়ে আছে। যেন দৃষ্টি সরিয়ে নিলেই অপরাধ বেড়ে যাবে। সাচী কাঁদছে। বৃষ্টির ফোটার ন্যায় সেই জল ফ্লোরে জমছে এক এক করে। আরাদ সেদিকে তাকিয়ে আনমনে ভাবলো,

তোমার ঐ অশ্রুর কারণ যদি আমি হই,
কথা দিলাম, তা মুছে দিবোই।

অনেকক্ষণ ফুপিয়ে কাঁদার পর সাচী উঠে দাঁড়ালো। আরাদ তখনো নিস্তব্ধ দাঁড়িয়ে। মেয়েরা ছিঁচকাদুনে সেটা আরাদ জানে। তবে ভালোবাসার মানুষের জন্যই মেয়েরা কাঁদে, আরাদ সেটাও জানে। সে ভালোবাসেনা, বা বাসতে জানেনা তা নয়। সে ভালোবাসতে চায় না।
সাচী উঠে দাঁড়িয়ে আরেকটা থাপ্পড় বসালো আরাদের গালে। আরাদ মনে মনে ভাবলো মেয়েটার হাতে জোর আছে বলতে হবে। নাকি ভালোবাসার মানুষের কথা ভাবলেই শরীরে জোর এসে যায়? আরাদের কি হলো আজ কে জানে। কেমন যেন বোকার মত আচরণ করছে। রোহানী দরজার আড়াল থেকে সব দেখছে। এই আরাদকে সে চিনেনা,একদম না।

সাচী হাতের উল্টোপিঠ দিয়ে চোখের জল মুছে নিলো। লম্বা করে নিঃশ্বাস নিয়ে বলতে লাগলো,
” তোকে প্রথম যেদিন দেখেছিলাম না,সেদিনই মনে হয়েছিল তুই একটা বেজাল পাবলিক। মানুষ বলে মেয়েদের পেটে জিলাপির প্যাঁচ থাকে,কিন্তু তুই তো মেয়েদের থেকে একহাত উপরে রে। আমি কি তোর কোন ক্ষতি করেছিলাম? তুই কি আমার এক্স?
যে প্রতিশোধ নেয়ার জন্য ফেরত এসে আমার নতুন সম্পর্ক ভেঙে দিলি?
আমিতো তোর নামটাও জানিনা, তাহলে তোর সাথে আমার কোন জন্মের শত্রুতারে?
আরাদের হঠাৎ করে কেন জানি হাসি পাচ্ছে। যদিও এমুহুর্তে হাসাটা বেশ বিপদজনক হবে। কারন অপরাধ করে অপরাধী কখনো বিচারকের সামনে আর যায় হোক,দাঁত খেলিয়ে হাসতে পারেনা। তবে সাচীর কথাগুলোর ধরন,আর তুই বলাটা দেখে আরাদের হাসিটা পাচ্ছে। তিনটা থাপ্পড় খাওয়ার পরও আরাদের হাসি আসছে,সেটা নিয়ে সে নিজেও বেশ কনফিউজড হয়ে গেছে। কি ঘটছে,না ঘটছে তার কিছুই বুঝতে পারছেনা। আরাদকে চুপ থাকতে দেখে,সাচী আরো ক্ষেপে গেলো।
আরাদের বুকে একটা ধাক্কা দিলো জোরে। আরাদ পেছনে পড়তে গিয়েও নিজেকে সামলে নিলো। সাচী আরেকটু সামনে এগিয়ে গেল।
আমার সাথে তোর সমস্যাটা কি তুই সেটা বলবি আজকে। আমি কি তোর ভারা ভাতে ছাই ফেলেছিলাম?
তোর সমস্যাটা কি আমাকে নিয়ে?
তুই কোন কথা কেন বলছিস না?
আরাদ এবারও চুপ। ও কি বলবে কিছু বুঝতে পারছেনা। সাচীর কথার সামনে ওর কথারা হাওয়া হয়ে গেছে।

কাউকে ভালোবাসলে সেদিন যদি তাকে হারাস,তখন বুঝতে পারবি কেন আমি এভাবে পাগলের মত চিৎকার করছি। সেদিন তুই হয়তো এভাবে চিৎকার করে বলার সুযোগটুকুও পাবিনা।
আরো একটা থাপ্পড় বসিয়ে সাচী সেখান থেকে প্রস্থান করলো। এর পেছনে সময় নষ্ট করে লাভ নেই। তার এখন প্রথম কাজ হবে তুহিনের খোঁজ করা। এখনো খুব বেশি দেরী হয়ে যায় নি নিশ্চয়ই। তুহিনের যত বন্ধু বান্ধব আছে,সবার সাথে যোগাযোগ করে দেখতে হবে। কেউ না কেউ তো তুহিনের খবর জানে। সাচী দরজার কাছে এসে রোহানীকে দেখেও না দেখার ভান করে চলে গেলো। রোহানী ভয়ে আগে থেকেই গালে হাত দিয়ে রেখেছিলো। যে মেয়ে ওর বন্ধুকে এভাবে পরপর একহালি থাপ্পড় বসিয়েছে,সেই মেয়েকে ভরসা নেই। দেখা যাবে আমি আরাদের বন্ধু, সেই হিসেবে হয়তো আমাকে একটা ফ্রিতে মেরে চলে যাবে। সেটা ভেবেই রোহানী আগে থেকে গালে হাত ধরে রাখলো। সাচী চলে যেতেই রোহানী ছুঁটে আরাদের কাছে গেল। কিন্তু আরাদ তখন ভাবলেষহীনভাবে তাকিয়ে আকাশ দেখছে। ঘন কালো মেঘে ঢাকা আকাশ। বিদ্যুৎ চমকাচ্ছে। যেকোন সময় বৃষ্টি নামবে। এবং বলতে বলতেই বৃষ্টি শুরু হয়ে গেল। সাথে ঝড়ো বাতাস। তোলপাড় করা বৃষ্টি শুরু হলো। রোহানী আরাদকে টানছে নিচে যাওয়ার জন্য। কিন্তু রোহানীর কথা আরাদের কানে ঢুকলে তো। অগত্যা রোহানী আরাদকে রেখেই চলে গেল। মেয়ে মানুষ ভিজলে কেলেঙ্কারি হয়ে যাবে। এমনিতেই ভার্সিটিতে ওদের দুজনকে নিয়ে গসিপের শেষ নেই।
আরাদ ভিজছে মনের সুখে। বৃষ্টির একটা বিশেষত্ব হলো,আমরা কান্না করলে কেউ সেটা টের পায় না। যদিও এখানে আরাদকে দেখার মত কেউ নেই। তবুও মনখুলে কাঁদার জন্য বৃষ্টির চেয়ে উত্তম কিছু হতেই পারেনা। তাই বৃষ্টি আমাদের মনখারাপের সঙ্গী।

#চলবে…

#ভুলত্রুটি_মার্জনীয়।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here