যখন এসেছিলে অন্ধকারে ৭

0
350

যখন এসেছিলে অন্ধকারে

পরশকে দুই বছরের রেখে ওর বাবা এনায়েত শিকদার মিশর গিয়েছিলেন জীবিকার সন্ধানে। ফিরে এসেছিলেন পরশের আট বছর বয়সে। শৈশবে বাবাকে কাছে না পেয়ে, পরে বাবার সাথে বন্ধনটা দৃঢ় হয়নি কখনোই। তারপর অনির জন্ম হলে, ও একটা জ্যান্ত পুতুল পেয়ে গেল খেলার জন্য। খেলতে খেলতেই অনি আর অলি হয়ে উঠল সবচেয়ে প্রিয়।
তারপর হুট করে যেদিন এনায়েত শিকদার চলে গেলেন, সেদিন থেকে দুইবোনের সব দায়িত্ব নিজে থেকেই পরশ নিয়ে নিলো।
এতদিন সেই দায়িত্ব পালন করার সুযোগ হয়নি, বয়স কম বলে পরশের মতামতের গুরুত্বও দেওয়া হয়নি, এমনকি অনির বিয়েতে একেবারেই রাজি ছিলো না পরশ, তবুও বিয়েটা হলো আর অনিকে এক লাঞ্চনার জীবন পেতে হলো।

পরশ এবার মুঠো শক্ত করেছে, প্রতিজ্ঞাও কঠিন। মার্কেট আর খামার থেকে আসা টাকা বসে বসে খেলে রাজার ভান্ডারও যে খালি হবে সেটাও পরশ সহজেই বুঝে নিয়েছে। পড়াশোনা বন্ধ ছিলো এইচএসসির পরেই, মার্কেট দেখাশোনার কাজে লেগে গিয়েছিল। ওই পড়াশুনা দিয়ে চাকরি জুটবে না জেনে, স্টেশনারি আইটেমের দোকান দিয়েছে। পাইকারি মার্কেট থেকে মাল কিনে এনে খুচরা বিক্রি করে। আজ শুক্রবার, মার্কেটে মিলাদ ছিলো। তেহেরির প্যাকেট দিয়ে গেছে তবারক হিসেবে। দেখেই মনে হলো, অনেকদিন বাসায় বিরিয়ানি খাওয়া হয় না। ঢাকার রেস্টুরেন্টের বিরিয়ানি ওদের মা খুব পছন্দ করে। অনি, অলিরও প্রিয়। দোকানের কর্মচারিকে তেহেরি খেতে দিয়ে, ও হোটেল থেকে চার প্যাকেট কাচ্চি বিরিয়ানি, মুরগির রোস্ট, জালি কাবাব আর বোরহানি নিয়ে বাসায় এসেছে, সবাই একসাথে খাবে বলে। বাসায় এসে অনিকে দেখতে পেল না। মাকে ডেকে জানতে চাইল ‘অনি কই গেছে?’

‘কইলো তো, কোন বান্ধবীর জন্মদিন।’

‘কোন বান্ধবী? তুমি যেতে দিলা কেন?’

‘জানি না আমি এইসব। আমার কাছ থেকে অনুমতি নেওয়ার অপেক্ষায় থাকে নাকি কেউ? এইরকম তো প্রায়ই যায়।’

‘প্রায়ই যায়! আমি তো জানি না! আমাকে তো বলো না কিছুই!’

‘সারাদিন শেষে বাসায় তো আসিস মাঝরাতে। তখন কিছু বলতে ইচ্ছে করে না। আমি তো চলি মহারাণীর মর্জিমাফিক। শুধু সেজেগুজে গেল দেখলাম, যাওয়ার সময় বলে গেল যাচ্ছি।’

‘তুমি আমারে ফোন দিতা! আশ্চর্য!’

‘কী দামি স্কুলে দিছো, হাজার হাজার টাকা খরচ করো। ওসব স্কুলে নাকি সব দামি মানুষ। ওদের কীসব পার্টি হয়, ওখানে নাকি যেতেই হয়!’

পরশ চিৎকার করে অলিকে ডাকল এবার। ‘অলি? অনি কই গেছে?’

‘ওর ক্লাসের একটা মেয়ের জন্মদিন ভাইয়া।’ অলি হাঁফাতে হাঁফাতে এসে বলল।

‘বলে যাবে না?’

‘ও জানি কেমন হয়ে গেছে। কেমন কেমন সব কথা বলে।’

‘কেমন কথা?’

‘বলে, সবসময় তো সবার কথা শুনে চলছি, যে যা বলছে তাই করছি। লাভ কী হইছে? ভালো মেয়েদের কোনো লাভ থাকে না। খারাপ মেয়ে হইতে হয়। ও নাকি এখন খারাপ মেয়ে হবে।’

পরশ ধপ করে বিছানায় বসে পড়ল। অনির ভবিষ্যৎ গড়ার প্রচেষ্টায় জেদ চেপে আছে পরশের মনে। অনির মনে কী চলছে, ও কীভাবে ঘটনাটা নিচ্ছে, ইমরান যা করেছে ওর সাথে ওর মনে কী প্রতিক্রিয়া হয়েছে ভেবে দেখেনি কিছুই।

‘এইরকম তো প্রায়ই যায় ও। এফডিসিতে যায় নাকি। নায়িকা হবে।’

পরশ আর কথা বলে না, ভাবতেও পারে না আর। ঠিক কতটুকু বেপরোয়া হয়ে উঠেছে অনি, সেটাই আগে বুঝতে হবে। রাতারাতি জীবন পালটে ফেলার জুয়াখেলায় নামেনি তো?

*****

কলিংবেল টিপে দাঁড়িয়ে আছে অনি। দরজা খোলে পরশ।

‘অনি? আয়।’

‘ভাইয়া? এত তাড়াতাড়ি বাসায় তুমি?’

অনির মুখ দেখে বোঝা যাচ্ছে, ও পরশকে আশা করেনি দরজায়। পরশ হেসে ফেলে। অনির কঠিন, ভয়ার্ত মুখ সহজ হয়।

‘কই গেছিলি?’

‘ভাইয়া?’

‘হুম।’

‘বলবো তোকে। রাতে। ফ্রেশ হয়ে আসি।’

বেশ সুন্দর একটা গাউন পরা অনি। সাইডপার্শিয়াল সিঁথিতে চুলগুলো ছেড়ে দেওয়া। নিচের দিকে হালকা ঢেউ খেলানো। এমন কি আগে ছিলো? নাকি নতুন করে চুল কোঁকড়া করিয়েছে মনে করতে পারে না পরশ। গলার মালাটাকে কী বলে? একেবারে গলা এঁটে আছে। মুরগির ডিমের সাইজের বড় একটা আর্টিফিশিয়াল পাথর ঝুলছে সেখানে।
অনির চলা, কথা বলা সবকিছু পালটে গেছে। আগের অনি আর এই অনি যেন দুটো মানুষ। কিন্তু ভারী সুন্দর দেখায়। একটা সুন্দর প্রজাপতি, যার উড়ান শুরু হওয়ার আগেই ডানাদুটো কেটে পড়ে গেছে!

একটু মন খারাপ করে পরশের।

অনেকদিন পরে আজ সন্ধ্যাটা বাসায় ও। সুমনা ফুলকপির চপ ভেজেছেন। পরশ আর অনি দুজনেরই খুব পছন্দের। অলি খায় না। অলির জন্য আলাদা করে বেগুন কেটে বেগুনি করেছেন।
ফ্রেশ হয়ে অনি এসে যোগ দেয় ওদের সাথে। একটু কাঁচুমাচু ভাব অনির, চোরা চাহনি। বোলভরা চপের ভেতর থেকে নিজের জন্য চারপিস সরিয়ে নিয়ে একটু বেশিভাজাগুলো পরশকে এগিয়ে দিলো ‘এই নে ভাইয়া, এইগুলো বেশি মুচমুচে।’ ভাজাপোড়াতে মুচমুচে, কুড়মুড়েগুলো বেশি পছন্দ পরশের। অনি যে সেসব খেয়াল করে ভেবে ভালো লাগল ওর।

‘সস নাই রে অনি? সেইদিন যে আনলাম।’

‘আছে তো। অলি? আছে নাকি খালি খালি চেটেই শেষ করে দিয়েছিস?’

অলি দৌঁড় দিয়ে সসের বোতল নিয়ে আসে। ‘খালি খালি খাবো ক্যান? তোরা তো কেউ থাকিস না বাসায়। আম্মু বিকালে কোনো নাস্তা বানায় না। আমি দুইটা ডালপুরি কিনে সস দিয়ে খাই!’

‘তুই তো বিস্কিটও সস দিয়ে খাস। হিহিহি।’ অলির দিকে চোখ কটমট করে তাকিয়ে নকল হাসি দিয়ে প্রসঙ্গ পালটালো অনি। সন্ধ্যায় ওর না থাকাটা পরশের সামনে ফ্ল্যাশ করে দিয়েছে অলি।
এমনিতেই আজ ও ফেরার আগেই পরশ ফিরেছে, এখনো কোনো প্রশ্ন করেনি। উপরন্তু প্রায়ই সন্ধ্যের আগে বাড়ি না ফেরাটা আরও অনেক প্রশ্নের সম্মুখীন করে দেবে ওকে।
যদিও ও কাউকে কেয়ার করে না আর। ওর এইটুকু জীবনে যতটুকু বিড়ম্বনা জুটেছে তাতে পুরোটা দায় ও অভিভাবকদের মাথায় চাপিয়ে দিয়ে রেখেছে। একবারও ভেবে দেখে না, এরা কেউই ওর খারাপ চায়নি। অনিকে বিয়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত, খারাপ ছিলো নিঃসন্দেহে, কিন্তু কারোরই নিয়্যত খারাপ ছিলো না।
একেবারেই বোঝে না অনি, তা নয়। কিন্তু ওদের জন্যই যে অনিকে ভুগতে হচ্ছে এটাও তো মিথ্যা নয়!
এখন যদি আরও ভোগান্তি থাকে জীবনে তো নিজের দোষেই ভুগবে ও। নিজে অন্যায় করবে, ভুল করবে তারপর ও একাই পস্তাবে, শাস্তি নেবে।

‘অনি, চা করবি? একটু লং আর আদা দিয়ে?’ বলেই পরশ মত পাল্টালো। ‘বাদ দে। আমি চা করি আজকে।’

অলি চিৎকার করে উঠল ‘রং চা খাব না, ভাইয়া!’

‘আরে খেয়ে দেখ! আমাদের মার্কেটের পাশে এক দোকানে খুব সুন্দর করে চা করে। গরম পানি দিয়ে চামচ, কাপ ধুয়ে নেয়, তাতে চা গরম থাকে অনেকক্ষণ। তারপর কাপের ভেতর কুঁচোনো আদা আর মাল্টার টুকরো দেয়। তারপর গরম চা ঢেলে দেয়। টেস্টফেস্ট বাদ দে, যে একটা ঘ্রাণ আসে, মাল্টা-আদা মিলেমিশে, বুঝছিস, একেবারে এনার্জি ঠেসে দিয়ে দেয়।’

‘আমিও রঙ চা খাব না, ভাইয়া!’ অনি বলতেই পরশ ভেঙালো ‘রং চা খাব না, ভাইয়া। ভালো জিনিস খাইছিস কোনোদিন? শিখছিস? যা পড়তে বস দুইটাই। আমি চা নিয়ে আসতেছি!’

দুইবোন তাড়াতাড়ি পড়ার টেবিলে চলে গেল।

অনি নামেমাত্র বই খুলে রেখেছে চোখের সামনে। পড়ায় মনোযোগ নেই কোনো। শুধুমাত্র দেখানোর জন্যই পড়ার টেবিলে।

পরশ চায়ের কাপটা অনির টেবিলে রাখল। নিজে আরেক কাপ নিয়ে বিছানার উপর বসল। ঘরে মাল্টাকমলা নেই। পরশ আদা আর লেবু দিয়ে চা করেছে। চায়ের উপর লেবুর টুকরো ভাসছে। টাটকা লেবুর সুঘ্রাণ ছড়িয়ে গেছে।

অলিও অংকখাতা নিয়ে বসেছে টেবিলে। দুইবোনের একটাই পড়ার টেবিল। পরশ অলিকে ইশারায় মায়ের কাছে পাঠালো ‘দেখতো অলি, আম্মু আজকে রাতে কী রান্না করছে? দেখে আয়?’

অলিকে বলতে দেরি হলো, ও ছুটতে দেরি করল না। এখন এখানে সিরিয়াস ধরনের কথা হবে ও বুঝে গেছে। আর সব সিরিয়াস কথাবার্তা শেষ হওয়ার পরে অনির জন্য বরাদ্দ বকাগুলোর ছিঁটেফোঁটা ওর গায়ে এসেও লাগে। তাই ও নিরাপদে সরে যাওয়ার পায়তারা করল।

‘অনি?’

‘হু?’

‘পড়ছিস?’

‘হু।’

‘কী পড়িস?’

‘বাংলা।’

‘ওইটা সাধারণ বিজ্ঞান বই, অনি।’

অনি বইটা বন্ধ করে না। বইয়ের দিক থেকে চোখও ওঠায় না।

‘অনি?’

এবারে ও সাড়াও দেয় না। পরশ একটু চুপ থাকে। তারপর চোখ বন্ধ করে বলে ‘অনি। আমরা চাই আমাদের জীবন সুন্দর হোক, মসৃণ হোক, সরলপথে চলুক। আমরা সবাই চাই। কিন্তু সোজাসরল জীবন কি পাই? পাই না। কেউ পায় না। হঠাৎ করে জীবনের রাস্তাটা থেমে যায়, থমকে যায়। সেই থেমে যাওয়া জায়গা থেকে অদ্ভুত বাঁক নেয়, আঁকাবাঁকা চলে। আমরা টেনেটুনে সেটাকে আবার সোজাপথে আনতে চাই। শুনছিস?’

জেদি মেয়ের মতো জোরে জোরে মাথাটা উপরনিচ করে অনি।

পরশ আবার শুরু করে ‘আমাদের আম্মুর জীবনটা দেখ। নানাবাড়িতে একবেলা খেয়ে, দুবেলা উপোস করে বড় হলো। বাবার সাথে বিয়ে হয়ে সেই জীবন একেবারে সহজ হয়ে গেল। তেমনই তো থাকতে পারত, তাই না? কিন্তু কী হলো, হুট করে বাবা চলে গেল। মায়ের জীবনে একেবারে এবড়োখেবড়ো হয়ে গেল। তোর জীবনের পথটাও বেঁকে গেছে। জোর, কসরৎ করে তো তাকে সোজা করা যাবে না। বল, যাবে?’

অনি কোনো উত্তর না করলে পরশ নিজেই নিজের প্রশ্নের উত্তর দিলো ‘না, যাবে না। এর জন্য সময় চাই, পরিশ্রম চাই, আগ্রহ চাই। রাতারাতি তো হবে না। হঠাৎ করে খুব বড় কিছু হওয়া যায় না, অনি। খুব বড় কিছু করে ফেলাও যায় না। জেদ থাকা ভালো, ভালো কিছুর জন্য জেদি হওয়াই যায়, কিন্তু নিজের পারিপার্শ্বিক অবস্থা, যোগ্যতা, ক্ষমতা ভুললে তো চলবে না।’

‘আমি কী করেছি ভাইয়া, যে তুই এত কথা বলছিস?’ খুব মলিন শোনায় অনির গলা। পরশের আবেগে খুব নাড়া লাগে।

‘তুই কিছু করিসনি। তোর জীবনে বড় একটা পরিবর্তন হয়ে গেছে। সেই ঢেউয়ে তুই ভেসে না যাস, এই ভয় করে আমার।’

‘আমি তো ভেসেই গেছি ভাইয়া!’ মনে মনে বলে অনি।

উত্তর না পেয়ে পরশ উঠে এসে বোনের মাথায় হাত রাখে ‘আমরা নিজেদের বাড়ি ছেড়ে এখানে কেন পড়ে আছি, অনি? আমি নিজের পরিচয় বানাব, তোর নামে মানুষ প্রশংসা করবে, অলিকে মানুষ একডাকে চিনবে। তুই পড়াশোনা কেন করিস না?’

‘করি তো!’

‘ঠিক তো? এবারে আর ফেল করবি না তো?’ প্রশ্রয়ের হাসিতে মুখ উজ্জ্বল হয় পরশের।

‘আমার পড়তে ভালো লাগে না, ভাইয়া। পড়াশোনা ভালো লাগে না। আমার মাথায় ঢোকে না। আমার পড়াশোনা হবে না।’

এবারে পরশ রেগে যায়। ‘তা কী হবে, কী করবি? ইমরানের মতো কারো সাথে আবার বিয়ে দিয়ে দেবো তোকে?’

অনির চোখদুটো ভরে আসে। ওর মাও ইমরানের নাম নিয়ে খোঁটা দেয়। অলক্ষি বলে৷ আজ পরশও দিলো।
পরশ তাড়াতাড়ি ভুল শুধরে নিতে চায় ‘অনি, আমরা আর কোনো ইমরান চাই না। অনি নিজের যোগ্যতায় ওরকম কত ইমরানকে চাকর রাখবে!’

‘আমি একটা বিজ্ঞাপনে কাজ করেছি ভাইয়া।’

‘কী? কীসে কাজ করেছিস?’ চমকে ওঠে পরশ।

‘বিজ্ঞাপনের মডেল। ছোটো একটা প্রডাকশন। তেমন ভালো না। ন্যাশনাল টিভিতে আসবে না। লোকাল ক্যাবল চ্যানেলগুলোতে দেখাবে।’

‘কীসের বিজ্ঞাপন?’ পরশকে হতভম্ব দেখায়। কতকিছু হয়ে চলেছে অনির জীবনে, ওদের জীবনে, ও কিছু জানে না। সন্ধ্যায় অনির বাড়ি না ফেরা নিয়ে ওকে বুঝাতে এসেছিল, পেছন দিয়ে হাতি চলে গেছে!

‘এন্টিওয়েভ কিট। মোবাইলের রেডিয়েশেন থেকে প্রটেকশন দেয়।’

‘সেখানে তুই কী করেছিস?’ পরশের বিস্ময়বোধ কমছেই না।

‘আমি মডেল ভাইয়া। বিজ্ঞাপন দেখিস না টিভিতে? প্রডাক্ট প্রমোশন করে। ওইরকম।’

‘তোকে কেন নিলো? কীভাবে চিনলি তুই ওদের?’

‘স্কুল প্রোগ্রাম করতে একটা চ্যানেল এসেছিল। ওদের ডিরেক্টর আমার হাইট দেখে খুব পছন্দ করে কার্ড দিয়েছিল। আমি পরে ফোন করেছিলাম।’

‘আমাদেরকে বললি না একবার?’

‘বললে কী হতো? করতে দিতি?’

পরশের মাথায় কিছু ঢোকে না। ‘করেছিস ভালো। আর না। এসব মডেলিং খুব খারাপ জায়গা। বুঝেছিস? একবার করেছিস। শখ মিটেছে। আর যাবি না। বাদ! ঠিক আছে?’

অনি মাথা উপরনিচ করে।

অনির সাথে পরে আরও ভালোভাবে কথা বলতে হবে। আগে নিজে বুঝতে হবে ব্যাপারটা। পরশ কিছুই বোঝেনি অনির কথার। আপাতত সন্তুষ্ট হয়ে ও ঘর থেকে বেরোতেই অনি ডাকল।

‘ভাইয়া, আমার কিছু টাকা লাগবে?’

‘কত?’

‘ত্রিশ হাজার।’

‘ত্রিশ হাজার?’ আবারও বিস্মিত পরশ। ‘কী করবি এত টাকা দিয়ে?’

‘পোর্টফোলিও ফটোগ্রাফি করাবো।’

‘কী?’

‘ফ্যাশন ফটোগ্রাফি।’

‘কী হবে তাতে?’

‘মডেলিং, একটিং এর জন্য সিভি তৈরি হবে। কাস্টিং ডিরেক্টর, প্রডিউসার, ডিরেক্টরদের কাছে পাঠাব।’

‘মানে? তুই এসব চালিয়ে যাবিই?’

‘আমার পড়াশোনা হবে না ভাইয়া।’ মরিয়া হয় অনি। ‘আমার হাইট মডেলিং এর জন্য পারফেক্ট, আমার ফিটনেস আছে।’

পরশ বুঝতে পারে না ওর কী বলা উচিত, কী করা উচিত? জীবনের শুরুতেই যে হোঁচট খেয়েছে অনি, মনটা চূর্ণবিচূর্ণ হয়ে আছে। ঠকে যাওয়া জীবনটার কোনো দাম কি আছে ওর কাছে?

চলবে…

Afsana Asha

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here