যখন এসেছিলে অন্ধকারে ৩.

0
394

যখন এসেছিলে অন্ধকারে
৩.

‘আই ওয়ান্ট আ ডিভোর্স!’ এতোটা অতর্কিতে বলেছিল ইমরান যে অনি হঠাৎ করে ‘ডিভোর্স’ শব্দটার অর্থ বুঝে উঠতে পারেনি। লোকটা চাইছে, সেটা কী জিনিস, খায় নাকি মাথায় দিয়ে ঘুমায় বুঝতে বেশ কষ্ট হচ্ছিল ওর।

গ্রামের দিকে মেয়েদের বিয়ে আগে আগেই হয়। প্রচলিত আইনে অনুমতি নেই। বাল্যবিবাহ নিরোধ আইন দুইহাজার সতেরো অনুযায়ী মেয়েদের বিয়ের ন্যুনতম বয়স আঠারো, তবে বিশেষ পরিস্থিতিতে অভিভাবকদের উপস্থিতিতে ষোলো বছর হতে পারে। এর কম হলে বিবাহসংশ্লিষ্ট প্রত্যেকেরই অর্থদণ্ড ও কারাদণ্ড বা উভয়দণ্ডের বিধান আছে।

যতই আইনি বিধিনিষেধ থাকুক, বয়স লুকিয়ে, আইন ফাঁকি দিয়ে ঠিকই চৌদ্দ থেকে সতেরো বছরের মেয়েগুলোকে বিয়ে দিয়ে পার করে নিশ্চিত হয় বাপ-মা। এই বাচ্চামেয়েগুলো না সংসার বোঝে না বিয়ে। কিন্তু বাপ-মার তো আর দায় নেই। মেয়ের বিয়ে দেওয়াটাই তাদের একমাত্র কর্তব্য। স্বপ্ন-সংসার, চাওয়া-পাওয়া, কর্তব্য আর দায়িত্বের চাপে এই মেয়েগুলো কেমন পিষ্ট হয়, তা আর ভাববার দরকার পড়ে না একেবারেই।

ফাঁকেফোঁকরে দুএকজন হয়তো পড়াশোনায় একটু তাক লাগিয়ে দেয়, তাদের বিয়েটা একটু পিছিয়ে যায়।

অনি প্রথম দলের। পড়ালেখার চাইতে দুরন্তপনায় বেশি মনোযোগ।
আর একের পর এক সমবয়সীদের বিয়ে হয়ে যাওয়ায় নিজের বিয়ে নিয়েও ফ্যান্টাসি তৈরি হয়েছিল। ইমরানের সাথে বিয়ের প্রস্তাব কানে আসার পর থেকেই নানারকম ফিল্মি খেয়ালের আকাশে ডানা মেলতে শুরু করেছিল।

বিয়ের রাতেই ইমরানের বাসর রাতের সাথে বেমানান কথা শুনে হতভম্ব হয়ে গিয়েছিল অনি।

‘কেন’ বলতে চেয়েছিল ও, কিন্তু মাথাটা এতখানিই ফাঁকা ফাঁকা মনে হচ্ছিল যে গলার আওয়াজ কোথায় লুকালো ও খুঁজেই পেল না। বিয়ের নামে পুতুপুতু স্বপ্নগুলো নিমিষেই গুলিয়ে গেল।

‘দেখ পিচ্চি, আমার বাবা, মা জোর করে বিয়ে দিয়েছে আমাকে। এমন না যে বিয়েটা আটকাতে পারতাম না। কিন্তু এব্রোড যাওয়ার আগে আমি কোনো ঝামেলায় জড়াতে চাইছিলাম না। স্পেশিয়ালি, বাবা মার সাথে একেবারেই না। তাই জেনেশুনেই বিষ খেয়ে নিয়েছি আমি।’

অনির কাজল আঁকা বড় বড় চোখ ছাপিয়ে উঠতে শুরু করেছিল ইমরানের কথা শুনে তখন ইমরান আরও বলে চলেছে, ‘হ্যাঁ বিষই তো। আমার জন্য তুই বিষের চাইতে কোনো অংশে কম না। রূপবতী হলেই কি আমার সহধর্মিণী হওয়া যায়? একে হাঁটুর বয়সী তায় পড়াশোনায় ক অক্ষর গোমাংস। আমার বউ একটা গেঁয়ো, খ্যাত, আর ক্লাস নাইন ফেল – এ আমি স্বপ্নেও মেনে নিতে পারব না। শুধু সুন্দরী হলেই হয়?’ বাবা মায়ের উপর যত রাগ ছিলো তার সবটুকুই অনির উপর ঢেলেছিল ইমরান।

‘শোন, আমার কোনো সখ নাই রূপবতী বউ দেখিয়ে নিয়ে বেড়ানোর। যে আমার মন, আমার মনের চাহিদা বোঝার মতো হবে না, বুদ্ধি, শিক্ষা, ম্যাচুরিটি থাকবে না, আমাকে বুঝবে না, আমার স্বপ্ন বুঝবে না, আমার সাথে তাল মিলিয়ে চলার যোগ্যতা যার নেই তাকে বউ হিসেবে মেনে নেওয়া আমার পক্ষে অসম্ভব। তাই আমার ডিভোর্স চাই। আর এটা শুধু তোর আর আমার ভিতর থাকবে। কালকে আমার সাথে যাবি, সকালেই। সকালেই তালাকনামায় সইসাবুদ যা করার করে আসবি, বুঝতে পেরেছিস?’

অনি কিছুই বোঝেনি তবু্ও মাথাটা বাধ্য ছাত্রীর মতো উপর-নিচে নাড়িয়েছিল শুধু। একবারও জিজ্ঞেস করেনি এই পুতুলখেলা কেন তবে?
ওর মনেই আসেনি।
যখন খুব ছোটো তখন থেকেই ও জানে, পলাশডাঙার মানুষ জানে, ইমরান খুব পড়াশোনা জানা ছেলে। খুব জ্ঞানী। পরীক্ষায় ফার্স্ট ছাড়া সেকেন্ড হয় না৷
এই ইমরান যখন ডাক্তার হলো না, মেডিকেল পড়ল না, তখন সবাই খুব অবাক হয়েছিল, ওদের কাছে বিদ্বান মানেই ডাক্তার, ভালো ছাত্র মানেই সায়েন্স নিয়ে পড়ে।

তারপর যখন বিদেশে পড়তে যাবে শুনল, তখন আগের ধারণাটাই আবার জেগে উঠল।
ঠিক, বিদ্বান বটে ইমরান।
এহেনও বিদ্বান ছেলে, জ্ঞানী ছেলে যা বলবে তাই বিনা সংকোচে সবার মেনে নেওয়া উচিত, কোনো প্রশ্ন না করেই।
অনির তখন মনের ভিতর তাই চলছিল।
ইমরান যখন বলছে তালাক হবে তখন তালাকই ঠিক। অন্য কিছু নয়। নিজের মতো করেই বুঝে নিয়েছিল অনি। তবুও কান্না পাচ্ছিল।
বিয়ের স্বপ্নটা তো মাত্রই দেখতে শুরু করেছিল। আর ইমরান তো সেই স্বপ্নের নায়ক।
নায়করা কি এইভাবে, এতো কঠিন কঠিন কথা বলে নাকি? এইভাবে কি বকে?
কই, ওর বন্ধুদের যাদের বিয়ে হয়েছে, তাদের বরেরা তো কত ভালোবাসে! উঠে আসা কান্না আটকাতে গিয়ে উলটো ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কেঁদে ওঠে ও।

‘খবরদার অনি। সিনক্রিয়েট করবি না। সিনক্রিয়েট বুঝিস? এমন কিছু করবি না, যেন তোকে অনেক কঠিন কথা শোনাতে হয়। আমি আমাদের বাপ-ছেলের ভেতর তোকে আনতে চাই না, তোকে অপমান করতে চাই না বলেই কাল সকালেই ডিভোর্সের কথা বলছি। কান্নাকাটি করে সব নষ্ট করিস না অনি। কোনো লাভও নেই। আমি আমার সিদ্ধান্ত থেকে নড়ব না। এটাই ভালো হবে, আমরা আলাদা হয়ে যাই।’

ভাঙা ভাঙা গলায় কাঁদোকাঁদো হয়ে অনি শুধু এইটুকুই বলতে পেরেছিল ‘আমার কী দোষ? আপনে সত্যিই আমারে ছাইড়ে দেবেন?’

ইমরান একটু দ্বিধায় পড়েছিল। তারপর ভেবে নিয়ে বলল ‘অনি, তুই ভেবে দেখ, আমার সাথে তোর জুটি যায়? আই মিন, মানায় কোনোভাবে? নিজেকে আমার যোগ্য তোর মনে হয় কোনোভাবে? ভালো করে দেখ। শিক্ষা নেই, বুদ্ধি নেই। চলাফেরা জানিস না, শুদ্ধ উচ্চারণে বাংলাটাই বলতে পারিস না, গেঁয়ো টান এসে যায়, দুটো কথা ইংরেজিতে বলতে পারবি না। জামাকাপড় কীভাবে পরিস? আমার সাথে তাল মিলিয়ে, মানানসই পোশাকেও চলতে পারবি না। মা বলবে, শিখিয়ে নিতে, কিন্তু আমি তো স্কুল খুলে বসিনি। আজ মায়ের জোরাজুরিতে বিয়ে করেছি, কাল তুই বলবি বাচ্চা! আমার সেই ছাপোষা মানুষ হয়েই কাটাতে হবে জীবনটা। চাকরি করো, বাচ্চা পালো, রিটায়ার হয়ে নাতি পালো। তোর শুনতে অনেক খারাপ লাগছে, আমি সরি চেয়ে নিচ্ছি তার জন্য, তবুও যেটা সত্যি, সেটা ভালোভাবে কানে ঢুকিয়ে নে, আমার সাথে তুই কোনোভাবেই যাস না, আমরা একসাথে থাকতে পারি না। তোর সাথে থাকার কথা আমি ভাবতেই পারি না, আমার রুচিই হচ্ছে না।’

বিয়ের রাতে, ফুলে ফুলে সাজানো বাসরে অতো ভয়ংকর কথাটা বলার পরেও যখন অনি সারাদিনের ক্লান্তিতে হাই তুলে ঘুমিয়ে গেল, ইমরানের নিজের নেওয়া সিদ্ধান্তের উপর আরেকবার শ্রদ্ধাবোধ জেগেছিল।
এই বাচ্চা মেয়েটা কোনোদিক থেকেই ইমরানের বউ হওয়ার উপযুক্ত না!

*****

‘ইমরানের মা, কি, প্ল্যান কাজে লাগল? ছেলেকে আটকাতে পারবে? দুনিয়ার সব মা, তার ছেলেটা বউয়ের গোলাম হয়ে গেলো বলে সুর তুলে কাঁদে। তুমি প্রথম মা যে চাইছে ছেলে তার বউয়ের আঁচলে আটকে থাকুক। হ্যাটস অফ টু ইউ।’ হাসতে হাসতেই আব্দুল মজিদ সাহেব টিটকারি করলেন নিজের বউকে, ইমরানের মাকে।

টিটকারিটা গায়ে মাখলেন না সাইদা।
কয়েকদিন ধরে বিষন্নতা পেয়ে বসেছে তাকে। কারণে অকারণে চোখদুটো ভিজে আসছে।
ঢিলেঢালা ম্যাক্সি পরেন ঘরে, বড় বাটিক ওড়না জড়িয়ে। ওড়নার কোনা দিয়ে চোখ মুছলেন।
বাঁধুক না অনি ইমরানকে।
বড় ছেলে তার। প্রথম সন্তান।
ইকরাম আর ইমা এসে শুধু ঘর ভরিয়েছে, বুকের কাছাকাছি জায়গাটা শুধু ইমরানের জন্যই, সারাজীবন।
মায়ের কোল ছাড়া ঘুমাতোই না। ইকরাম ছোটো তাও ওকে রেখে বড়জনকেই কোলে নিয়ে ঘুম পাড়াতে হতো। কোল থেকে নামালেই ঘুম ভেঙে কান্নাকাটি। শীতের দিনে ফ্ল্যানেলের কাপড় দিয়ে বড় হাতার ব্লাউজ বানাতে হয়েছিল নিজের জন্য, কারণ হাত তো লেপের বাইরে থাকে, হাতের উপর মাথা না রাখলে ইমরানের ঘুমই হয় না। তার সেই ইমরান একটু একটু করে দূরে সরতে লাগল।
সব ছেলেদের মা বলে ‘আরেকটু পড়’ সেখানে সাইদা বলতেন ‘আজকে আর পড়তে হবে না, ঘুমা আজকে।’ অন্য বাচ্চাদের চেপে ধরে পড়ানো যায় না, ইমরানকে টেনে ওঠানো যেত না বই থেকে।
কত কত প্রশংসা চারিদিকে, কত ভালো ভালো কথা। ভালোই লাগত তখন।
ঝামেলা শুরু হলো ট্যালেন্টপুলে বৃত্তি পাওয়ার পরেও ছেলে যখন ব্যবসায় শিক্ষা নিয়ে পড়তে চাইল।
কি নাকি মার্কেটিং নিয়ে পড়বে, মার্কেটিং বস হবে, ফিলিপ কোটলার, সেদ গোডিন নামগুলো পারলে পুজো করে।
এটা কোনো কথা? বাবা মা কিভাবে মেনে নেয়? মার্কেটিং মানেই তো, ওই যে শার্ট, প্যান্ট, টাই পরে একটা কালো ব্রিফকেস হাতে দোকানে দোকানে ঘোরে। ডাক্তার না, ইঞ্জিনিয়ার না, সরকারি চাকরিও না, এতো ব্রিলিয়ান্ট ছাত্র কিনা হবে সেলসম্যান, বাংলায় ফেরিওয়ালা!
কোন বাপ মা মেনে নেবে?

সেই শুরু হয়েছিল যুদ্ধ। ছেলের সাথে বাপ-মায়ের ঠান্ডা যুদ্ধ। আর ছেলেটা প্রতিদিন নিজের ভেতর একটু একটু করে গুটিয়ে যেতে থাকল। এখন মনে হচ্ছে সাইদার, হোক যা ইচ্ছে তাই, মুচি হোক বা হরিজন, তবুও মায়ের কাছে থাক, মায়ের চোখের সামনে থাক।
চোখের পানি মুছে আবার হুহু করে কাঁদতে থাকেন তিনি।

*****

স্যুপের বাটিতে অকারণ নাড়াচাড়া করছে অনি।
ইমরান নিজের খাওয়া বাদ দিয়ে ওর হাতের দিকে তাকিয়ে আছে।
হাতে মেহেদীর রঙ খুলেছে।
মুখের চেয়ে হাতটা একটু বেশিই উজ্জ্বল অনির।
কনুই পর্যন্ত মেহেদী আঁকানো। দুটো আংটি হাতে। একটা সোনার আর একটা হীরের। পাঁচ পাথরের হীরের আংটি।
এটা ইমরান পরিয়েছে ওকে। ইমরানকে দিয়ে পরানো হয়েছে।
সেদিকে তাকিয়ে ইমরান ভাবতে লাগল, একটা কাগজ, একটা আংটি দিয়ে কত সহজে একটা মানুষকে অধিকার করা যায়। ওই গয়নাগুলো হয়ে যায় অধিকারবোধের প্রতীক। শুধু দামে নয় সম্পর্কের মানেও ওই অলংকারগুলো ভীষণ দামি হয়ে ওঠে। বিয়ের আংটি বা নাকের গয়না কারো কারো কাছে প্রাণের চেয়ে দামী হয়ে যায়।
শরীরে প্রাণ থাকতে ওই গয়নার অধিকার ছাড়তে চায়না কেউ।
আর মাঝের থেকে অধিকারবোধ ছেড়ে দিলে? গয়নাগুলোও কি ফেলনা হয়ে যায়?
হয়তো অনি ফিরিয়ে দেবে গয়নাগুলো, নইলে নিজের কাছে গোপনে রেখে দেবে এমনভাবে যেন চোখে পড়ে না কখনো। ফেলনা গয়নায় চোখ পড়ে ইমরানকে যেন মনে পড়ে না কখনো।
নিজেকে সেই ফেলে দেওয়া আংটির মতো মনে হতে লাগল ইমরানের।
বাবা-মার সাথে একটা জেদাজেদির খেলা চলছিল এইকদিন।
জোর করে বিয়ে দেবে? দাও। বাধ্য করবে বিয়ে করতে? করো। বেশ! দেখো আমি কী করি? আমিও দিলাম ছেড়ে। এবার? বাবা মায়ের সাথে জীবনের দরকষাকষির এই খেলার নিজেকে বিজয়ী করে নিলো গোপনেই।
আর জিতে গিয়েই পরাজিত হওয়ার অনুভূতি আষ্টেপৃষ্ঠে গিলে নিলো ওকে।

‘অনি?’
‘হুম’
‘কী করবে, এখন।’
‘এখন?’ চিন্তিত দেখায় অনিকে। একটু ভেবে বলল ‘আপনাদের বাসায় তো যাবো। তাই না? নাকি আর কুনো কাম আছে?’
‘সেটা বলিনি। জানতে চেয়েছি, আমি চলে যাওয়ার পর কী করবে?’
‘ওহ! আমি? জানিনে তো। বাড়ি চলে যাব। কিন্তু আপনের মা কি যাইতে দেবে? আপনে একটু বলে দিয়েন?’

সহজ আর স্বাভাবিক উত্তর অনির।
কিন্তু ইমরানের রাগ হতে থাকে।
এতো সহজে কেন মেনে নেবে অনি সব? ঝগড়া করবে না? দাবি করবে না?
ইমরানের কথায় নিজের অধিকার সব এত সহজে ছেড়ে দেবে?
হয়তো ছোটোমানুষ, তাই। বুঝতে পারছে না কিছু, কী হচ্ছে ওর সাথে? একটু বড় হলে নিশ্চয়ই বুঝবে।

তখন হয়তো জবাবদিহি করতে ইমরানকে দরকার পড়বে ওর। হিড়হিড় করে টেনে আনবে ওকে সুদূর থেকে, উত্তরের প্রত্যাশায়।
সেই জবাবদিহির মঞ্চে অনির আসামীর কাঠগড়ায় নিজেকে দেখতে রোমাঞ্চকর লাগে ইমরানের।

বয়স তো ইমরানেরও বেশি না। বই আর স্বপ্নের মাঝখানে নারীঘটিত চিন্তা কখনো বাধ সাধেনি।
সেদিক দিয়ে অনিই ওর জীবনের প্রথম নারী।

অনির দিকে তাকিয়ে নতুন প্রেমে পড়া যুবকের মতো আনন্দ হতে লাগল ওর।
ও ভুলে গেল এই একটু আগেই এই মেয়েটার সাথে সবরকম সম্পর্ক নিজের হাতে ছিন্ন করেছে ও।
কতকটা নির্বুদ্ধিতায়, কতকটা অকারণে!

সেসব ভুলে অপলক তাকিয়ে থাকল ও ষোড়শী অনির দিকে, সকালের যে সেন্টারসিঁথি দেখে মনে মনে ব্যাঙ্গ করছিল, এখন সেখানেই মন আটকে আছে যেন। কপালের ঠিক মাঝখান দিয়ে, ফসলের ক্ষেতের সরু আলপথের মতো, যত্নবিবর্জিত ইষৎ কটা চুলগুলোকে দুপাশে বিভাজিত করে সরলরেখার মতো চলে গেছে, টানটান করে বাঁধা খোপা অবধি।

একবেলা আগে যা ভিষণ অসহ্য লাগছিল, মনের দ্রুততম পরিবর্তনে সেই সিঁথিপথে ওর মন আনাগোনা করতে লাগল।
অনভ্যস্ততায় ঘোমটাখানি হয়তো পড়ে কাঁধের উপর এলিয়ে এসেছিল। অনি আস্তে করে মাথাঢাকা ঘোমটায় সুন্দর কপালখানা ঢেকে নিলে ইমরান যারপরনাই বিরক্ত হলো।

কিন্তু ওর হয়তো ভালো লাগার সময় চলছে, ভালো লাগার অসুখে পড়েছে, অসুখ তো আর বলেকয়ে, সময়-জ্ঞান মাপামাপি করে আসে না!
গাঁয়ের বধূর মতো ঘোমটাটানা, গেঁয়ো অনিকেও ওর এখন খুব ভালো লাগছে। কেমন জানি বউ বউ মনে হলো!

চলবে…

Afsana Asha

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here