যখন এসেছিলে অন্ধকারে
২।
সাইদার খুব ব্যস্ত দিন আজ। ইমরান দেশে আছে আর তিনটে দিন। ওর পছন্দের রান্না হবে সব।
ছেলেটা নিজেই জানে না ও কী কী পছন্দ করে। মাছের পেটিটা খায় নাকি লেজের অংশটা। কচকচে হাড়ওয়ালা গোশ নাকি হলদেটে চর্বিওয়ালা তুলতুলে মাংস? তেঁতুলের টক দেওয়া ডাল নাকি জিরেফোঁড়ন নেওয়া পাতলা ডাল? সাইদা জানে। ছেলে মায়ের আবেগের প্রতি যতটা উদাসীন, মায়ের আকর্ষণ যেন ততটাই বেশি।
খাওয়া নিয়ে কোনো ঝামেলা করে না ইমরান, যাই দেওয়া হয় সামনে খেয়ে নেয়।
মাঝে মাঝে তো সাইদার মনে হতো, ইমরানের স্বাদগ্রন্থিই নেই, লাউ-কুমড়োর ফারাকই ধরতে পারে না।
উচ্ছে দিয়ে ভাত থেয়ে সহজেই পটলের তেতো হওয়ার দুর্নাম করে দেয়। তবে ভালো খেতে ভালোওবাসে।
বড়ির তরকারি, কচুর লতি, নারকেল দুধে কলার মোচা বাটা, গরুর বটভাজা এইসব হাবিজাবি নিজের মহামূল্যবান সময় থেকে একটু বেশি সময় নিয়েই খায় ও।
কোনো কোনোদিন একচামচ ভাত বেশিও চেয়ে বসে।
ভাবতে ভাবতেই চোখ লাল হয়ে এলো সাইদার। প্রথম সন্তান – ইমরান, কোন সুদূর বিদেশ বিভূঁইয়ে পাড়ি দেবে।
সেখানে নিজে রান্না করে খেতে হবে – হোটেল ফোটেলে তো হারাম-হালালের বাছবিচার নেই।
কবে পেটপুরে খেতে পারবে, আবার? তবে এই ছেলে সব পারে।
পাউরুটি আর কলা দিয়েও মাস কাবার করে দিতে পারবে। খালি ভাত কপকপিয়ে খেয়ে নেবে-লবনও চাই না ওর।
কুমড়োর বড়িগুলো লাললাল করে ভেজে, গরম পানিতে দমে বসিয়ে ডাইনিংএ এসে বসলেন সাইদা। রান্না-আতিথেয়তা সবই একসাথে করতে হচ্ছে।
বিয়ের পরে ছেলে যাবে শ্বশুরবাড়ি বউ নিয়ে, এমনটাই নিয়ম।
কিন্তু ইমরান চলে যাবে তাই সাইদা শশুড়বাড়িই উঠিয়ে এনেছে এখানে।
অনির মা, মামি, চাচা, চাচি, ভাই-বোনে বাড়ি ভরা।
একটু ধকল যাচ্ছে শরীরের উপর দিয়ে, তবে মনে জোর পাচ্ছেন।
অনিকে দেখেই এই জোর পেয়েছেন তিনি। কী যেন আছে ওই মেয়ের চোখেমুখে, মুখপানে চাইলে মুখ ফিরিয়ে নেওয়া যায় না চট করে। বেঁধে ফেলে সবাইকে। ইমরানকেও বাঁধবে- তাই তো তড়িঘড়ি করে, ওইটুকু মেয়েকে ঘরে এনেছেন তিনি।
সাইদার বাপের বাড়ির দেশের মেয়ে সুমনা। বেশ ভালো পরিবার। স্বামি মরেছে বছর পাঁচ। পরশ, অনি আর অলি তিন ছেলেমেয়ে নিয়ে থাকে। ভাশুর, দেবর, ননদ সবার সাথেই বেশ ভালো সম্পর্ক। এই পরিবারটাকে বেশ লাগে সাইদার, আর ওই অনি – অনির ছোটোবেলা থেকেই দেখছেন ওকে। যতবার বাপের বাড়ি গেছেন অনি তার আঁচলে আঁচলে ঘুরেছে, এইটুকু থেকে পুরোটা চেনেন সাইদা ওকে।
একটু দুরন্ত, একটু বেশিই ছুটোছুটি করে, ঘরকন্যায় হয়তো কোনো কাজেই লাগবে না, তবুও অনিন্দ্য সুন্দর মুখশ্রী দিয়ে ইমরান বশ মানলেই তার হবে। হয়তো বশ মেনেছেও। সকাল সকালই বউকে নিয়ে ঘুরতে বেরিয়েছে।
পলাশডাঙার মেয়েদের প্রশংসা করলেন তিনি মনে মনে। তিনি নিজেও ওই পলাশডাঙারই মেয়ে।
ছেলেরা অল্পবয়সী বউয়ের আঁচলে তাড়াতাড়িই বাঁধা পড়ে। বাঁধুক না ওকে অনি, ভালো করে বজ্রগেরোয় আটুক, যেন বিদেশ গিয়ে আর মন না বসে বাছাধনের, ফিরে আসে বছর না ঘুরতেই।
বউয়ের টানেই নাহয় মায়ের কোলে ফিরে আসুক!
সুমনা, অনির চাচিরাও কাজে সাহায্য করছেন। শুধু ইমরানের জন্য রান্না হচ্ছে তা তো না, বড় বড় হাড়িতে মেহমান নওয়াজিও চলছে। সবাই সাহায্য করছে কম, বেশি – ধুমধাম করে বিয়েটা না হলেও, হাসি-ঠাট্টা-মজায় সবাই পুষিয়ে নিচ্ছে।
শুধু পরশের চোয়াল শক্ত। ছেলেটা বিয়েতে তো রাজি হয়ইনি, ইমরান আর অনির বয়সের তফাত তো আছেই, বিয়ের চারদিনের মাথায় বর দেশের বাইরে অনির্দিষ্টকালের জন্য চলে যাবে এটাও মানতেই পারছে না ও।
অনি, অলি দুটোবোনই ওর খুব আদরের। বোনেদের ভবিষ্যৎ জীবনের সামান্য কালো মেঘের ছায়াও ওকে ক্ষিপ্ত করে তোলে।
বয়স কম হলেও গায়ে-পায়ে বড় হয়ে যাওয়াতে এমনিতেই অনিকে নিয়ে দুশ্চিন্তার মুকুল দানা বাঁধতে শুরু করেছিল।
গ্রামের ছেলেছোকরাদের আনাগোনাও চলে বাড়িঘিরে। কিন্তু নিজেকে এতোটাও ঠুনো মনে হয়না পরশের যে সাততাড়াতাড়ি এইরকম অদ্ভুত বিয়ে দিতে হবে।
ওর মনোভাব বুঝতে পেরেই সুমনাও ওকে বিয়ের কথাটা লুকিয়ে গিয়েছিলেন।
পরশ জানত, শুধু আংটি পরানো হবে, বিয়ের কথাটাই পাকা হয়ে থাকবে। বছর দুই পরে ইমরান ফিরলে তখন বিয়ে হবে অনি আর ইমরানের।
কিন্তু এখানে এসে দেখল, সব উলটো। একেবারে কাজি ডেকে বিয়ের বন্দোবস্ত করা হয়েছে।
অনি আন্ডারএইজ হওয়ায় কমিশনার অফিস থেকে অনুমতিপত্রও আনা হয়েছে।
সব একেবারে গোছানো।
আজীবন পাওয়া ভদ্রতার শিক্ষা ওর কন্ঠরোধ করে রেখেছে। তার চেয়ে বড় কথা, অনির চোখেমুখে খুশির ঝিলিক দেখেছে পরশ। ইমরানের নামোল্লেখে সেই খুশিমুখে রক্ত ছলকে ওঠে তাও খেয়াল করেছে ও। আর তাই ওর প্রতিবাদ আর প্রতিরোধ নিরস্ত্র আর নিশ্চুপ হয়ে আছে।
কিন্তু ইমরানের অনিচ্ছাও তো চোখ এড়ায়নি ওর।
তাই অশনী সংকেত বেজেই চলেছে মনের ভেতর আর ছটফট করছে ভেতর ভেতর।
সুমনা, অনির বড়চাচি, ছোটচাচি সবাই হাত লাগাচ্ছে সাইদাকে সাহায্য করতে। বেশ পারিবারিক আবহ। সাইদার আত্মতুষ্টি হয় সেদিকে তাকিয়ে। সবার ভিতরেই সহযোগী মনোভাব।
খারাপ কিছু করেননি সাইদা এই পরিবারের সাথে আত্মীয়তার সম্পর্কে জড়িয়ে, নিশ্চিন্ত লাগে তার।
দুপুরের খাবার একটু দেরিতেই হয় এই বাড়িতে। আড়াইটা-তিনটে বেজে যায়। আজকে আরেকটু দেরি হচ্ছে। অনি আর ইমরানের জন্য অপেক্ষা করছিল সবাই। একটু আগে ইমরান ফোন করে জানিয়েছে, ওরা বাইরেই খাবে আজকে।
রান্না করে সাজিয়ে রাখা ইমরানের সব প্রিয় খাবারগুলোর তাকিয়ে সাইদার একটু মন খারাপ হলো কিন্তু নিজেকে সামলে নিলেন, একটু খুশিও হলেন মনে মনে, হয়তো বুনো বাঘ পোষ মানছে।
ছেলের অসম্মতিতে তাকে বিয়ে দেওয়ার অপরাধবোধ লঘু হয়ে এলো অনেকটাই।
একটু অন্তরঙ্গ সময় যদি হৃদ্যতা বাড়িয়ে দেয় একটু হলেও তবে বিরহ সেই সম্পর্ককে আরও অনেকখানি দৃঢ় করে দেবে। মনে মনে আশ্বস্তই হলেন তিনি বেশ খানিকটা !
*****
ছোট একটা খাবারের রেস্টুরেন্ট। বেশ ছিমছাম। হোগলাপাতার বেড়া, বাঁশের চাটাই দিয়ে ডেকরেশন করা। পাটের দড়ি দিয়ে বানানো ল্যাম্পশেড থেকে মৃদু অথচ রঙিন আলোয় চারপাশ মোহনীয় হয়ে আছে। অনি অবাক চোখে তাকাচ্ছে চারিদিকে।
একটু আগে তালাকের কাগজে সইসাবুদ করে এসেছে, নামসই করতে গিয়ে হাপুস করে কেঁদেছে, নাকের পানি চোখের পানিতে ভেসেছে, এমন কোনো চিহ্নই নেই যেন ওর চোখেমুখে।
বিয়ে বোঝার আগেই যে তালাক হলো ওর, এর ভয়াবহতা বোঝার মতো মানসিক পরিপক্কতাও ওর নেই, ভেবে একটু দুঃখিত হলো ইমরান।
এতো ছোটো একটা মেয়ের জীবনে ইমরান নামটা একটা কালো অধ্যায় হয়ে থেকে যাবে চিরদিনের জন্য। অথচ ইমরান তো এমনটা চায়নি।
কাউকে কষ্ট দেওয়ার কথা তো ও ভাবেই না।
মেনুকার্ড প্রায় বানান করে করে পড়ছে অনি। রিডিং স্কিল ভালো না। এই মেয়েকে বেছে এনেছে মা ওর বউ করার জন্য, হেসে ফেলল ইমরান!
ভালো করে দেখল অনিকে।
বয়সে খাটো হলেও উচ্চতা সাড়ে পাঁচে ফিটেরও বেশি। পাঁচ সাত হবে হয়তো। তাই অতটা ছোটোও দেখায় না।
কাটাকাটা নাক-চোখ, কপালটা বেশ সুন্দর। মেয়েটাকে দেখতে ভালো লাগে।
শুধু ভালো না, বেশ ভালো। নজরকাড়া সুন্দরী বলা যায়। এই যে এখানে বসে আছে, আশপাশটা আলো হয়ে আছে।
পাশের টেবিলে বসা জোড়ার ছেলেটা ঘাড় ঘুরিয়ে দুএকবার দেখার চেষ্টা করেছে অনিকে, তাতে নিজের সঙ্গিনীর তিরস্কারও জুটেছে।
ইমরান পাঁচ এগারো। ওর সাথে অনি বেমানান না। হয়তো পাশাপাশি দেখতে গেলে ইমরানকেই মানায় না অনির পাশে। তবুও ইমরানের বয়স, শিক্ষা, ওর মানসিকতা, ওর ব্যাক্তিত্ব কোনোকিছুর সাথেই অনির মতো অল্পবয়সী মেয়ে যায় না। শুধু বয়স না, স্বামী-স্ত্রীর যোগ্যতার এতোখানি ফারাকও মেনে নেওয়া কষ্টকর ভার্সিটির গোল্ড মেডেলিস্ট ইমরানের জন্য।
স্বামী-স্ত্রী কথাটা ভুল, এমনিতেও নাবালক অনির সাথে বিয়েটা সিদ্ধ ছিলো না ইমরানের দৃষ্টিতে, একটু আগে কাগজে কলমেও সেটা নিপাতনে অসিদ্ধ করে নিলো।
সেই অসিদ্ধ বিয়ের এইমাত্র সিদ্ধ তালাক হওয়া স্ত্রীর দিকে মুগ্ধ হয়ে তাকানোতে নিজের উপরেই খানিক বিরক্ত হলো ও।
মায়ের পাতা ফাঁদেই পা দিয়ে দিতো, তালাকটা না হলে। ভাগ্যিস এই বুদ্ধিটা এসেছিল। নইলে অনিতে আটকে নিজের স্বপ্ন অধরাই রেখে দিতে হতো।
নিজের বুদ্ধিমত্তার উপর এমনিতেই ওর অগাধ বিশ্বাস ছিলো, সেটা আরও এক লেভেল বেড়ে গেল।
অনিতে এই মুগ্ধতা বিপদজনক নয় কিছুতেই, নিজেকেই নিজে বোঝানোর চেষ্টা করল।
ফুটে থাকা গোলাপ বা সুনীল আকাশ, জারুল বাগান বা নদীর ঢেউ, পদ্মপাতা বা পাহাড়ের উচ্চতা – সবকিছুই তো মানুষকে মুগ্ধ করে।
অনির সৌন্দর্যও সেরকম মাতাল করে হয়তো, তাতে এমন তো না সব সৌন্দর্যকে প্রেয়সী বানিয়ে নিতে হবে৷ আর অনিকে তো সেই ছোটবেলা থেকেই চেনা। একেবারে এতোটুকু একটা পিচ্চি থাকতে। একদম পুতুলের মতো দেখাতো। সেই পিচ্চিটাকেই নতুন করে দেখতে গতকালও মন সায় দেয়নি।
অথচ একটা বেলার ভেতর অন্য চোখেই ইমরান অনুভব করতে লাগল অনিকে। মাথার ওড়নাটা আরেকটু টেনে দিয়ে গভীর মনোযোগী ছাত্রীর মতো খাবারের নাম পড়ে যাচ্ছে ও। ভাসা ভাসা চোখের উপরে বাঁকানো ভুরু। গভীর কালো চোখের পাঁপড়ি। প্লাক না করা ভুরুর ভাঁজে ভাঁজে বুনোভাব, একটু আগে কান্নাকাটি করায় চোখের কাজল একটুখানি ম্লান হয়ে ছড়িয়ে গেছে, নাকের কাছে একটু কাজল লেগেও আছে। হাতের আঙ্গুল ছুঁইয়ে মুছে দিতে ইচ্ছে করে ইমরানের, নাকি ছুঁয়ে দিতে ইচ্ছে করে অনিকেই? কেঁদে সর্দিলাগা নাক কুঁচকে ধরে একটু পরপরই নাক টানছে অনি।
হঠাৎ যেন মাতাল লাগে ইমরানের।
সে কি অনির মনোযোগ হারিয়েছে বলে? নাকি করায়ত্ত অধিকার ফসকে গেল বলে!
এই এতোখানি জংলি সারল্যমাখা সৌন্দর্য অন্য কারো অধিকারে যাবে ভেবে, একটু আগে নিজের আগ্রহে ছেড়ে দেওয়া অধিকারবোধ যেন হুট করেই মাটি ফুড়ে চারাগাছের মতো বেরিয়ে এসে নিজের অবাধ্য পাতাদুটো বেহায়ার মতো নাড়তে শুরু করল।
অনি গেছো, অনি জংলি, অনি অবুঝ হলেও অবাধ্য নয়। আর কিশোরির বিয়ের জল্পনা কল্পনার ফ্যান্টাসি ভেঙে গিয়ে একটা বেলার ব্যবধানে অনি স্তম্ভিত হয়ে গেছে।
নিজের বিস্ময় গোপন করতে নিজেকে খাবারের আইটেমের নাম আর দামের হিসাবে ব্যস্ত করে ফেলেছে।
জোরে জোরে ইংরেজিতে লেখা লিস্ট পড়ে নিজেকে যোগ্য প্রমাণ করতেও উঠেপড়ে লেগেছে।
একসময় সাতচল্লিশটা আইটেম চারবার করে পড়া শেষ করে, আর কাজ খুঁজে না পেয়ে, সোজা হয়ে বসে হাতের তালুতে নাক ঘষে ইমরানকে জিজ্ঞাসা করে বসল ‘আমি কি আজকেই বলে দেবো সবাইকে?
একটু হকচকিয়ে উঠল ইমরান, অনির হঠাৎ জিজ্ঞাসায়। অপ্রস্তুত হয়ে জানতে চাইল, ‘কী? কী বলে দেবে?’
আবারও নাক টানল অনি। ‘এই যে তালাক দিলেন আমাকে? আজকেই বলে দেবো নাকি আপনি চলে গেলে বলব?’
ইমরানের সব ফাঁকা লাগল। একটুবা নিজের উপরেই রাগ হলো। রাগটা অনির উপরেই ঝাড়ল। ‘এইটুকু বোঝো না? আজকেই যদি বলবে তো গোপনে করলাম কেন? এতো তাড়া কিসের তোমার?’
অনি বুঝে গেছে ইমরান শুধু অকারণ বকতেই জানে। আগে এমন ছিলো না।
ওদের গ্রামে যখন যেত, আরও আগে, সে সাত আটবছর আগে, তখনো ফ্রক পরে অনি আর হাফপ্যান্ট। তরতরিয়ে গাছে উঠে যেত, পেয়ারাগাছের আঁকাবাঁকা ডাল বেয়ে।
সফেদাগাছে কাঠের তক্তা বেঁধে ও গাছঘর বানিয়েছিল।
জামগাছের মাথায় উঠে যেতো পলকে।
কোচরভরে বরই আনত হয়তো ইমরানের জন্য। দুটো বরই উঠিয়ে নিয়ে আস্তে করে একটু হাসত ইমরান আর সুন্দর করে বলত ‘থ্যাঙ্কিউ পিচ্চি!’
গত সাত আট বছর ধরে আর যায়নি। অনেক অনেক পড়া নাকি!
এই সাত আট বছরে অনেকখানি গম্ভীর হয়েছে আর শয়তান হয়েছে একটা।
কোনো কারণ ছাড়াই বকে। কাল রাতেও বকেছিল। সবাই যখন ঠেলেঠুলে ইমরানের ঘরে পাঠিয়ে দিলো ওকে, ও ভয় আর লজ্জায় কাচুমাচু হয়ে বিছানার কিনার ঘেঁষে বসেছিল।
তখন ইমরান এসে হিসহিস করে বলেছিল ‘এতো ছোটো মেয়েকে কেউ বিয়ে দেয়? কেন রাজি হলে তোমরা? তুমি মানা করতে পারোনি?’
এমন দাঁত কিটকিট করেছিল যে অনি অসম্ভব ভয় পেয়ে গিয়েছিলো। এত ভয় পেয়েছিল যে প্রায় দাঁতকপাটি লেগে গিয়েছিল।
এখনও অনেক আস্তে বলল ইমরান কিন্তু এমনভাবে বলল যে ও কেঁপে উঠল। তারপর চুপ করে গেল। আসলেই তো, অনিরই ভুল। লোকটা চলে গেলেই বলবে সবাইকে। আর নিজে চলে যাবে পলাশডাঙায়।
আঁধার ঘনিয়ে আসা মুখটা দেখে ইমরানের ভেতরে তোলপাড় হতে লাগল। খুব ইচ্ছে করল বলতে ‘কাউকে কিচ্ছু বলো না, মেয়ে। আমার বড্ড ভুল হয়ে গেছে!’
কিন্তু ইমরান তো পুরুষমানুষ। মানুষের মস্তিষ্কে কাজ করা সব আবেগের ভিতর অন্যতম জটিল আবেগটার নাম অহংবোধ বা ইগো। এই অহংবোধ নাকি তীব্রতর হয় পুরুষে। মেয়েদের মতো অতোখানি দুর্বলতা কি ইমরানের সাজে?
চলবে…
Afsana Asha