মেঘ বৃষ্টি রোদ, পর্ব:১৯

0
783

❤#মেঘ_বৃষ্টি_রোদ
#ঊনবিংশ_পর্ব❤
সৌমিক আর পর্ণা বেরিয়ে যাওয়ার পরে প্রায় মিনিট দশ-পনেরো কেটে গেছে। তৃণা সৌমাভর মুখোমুখি বসে আছে সোফায় হেলান দিয়ে। ওর দু’চোখে এখনো ক্লান্তির ছাপ মুছে যায়নি পুরোপুরি। সৌমাভ নিজেও একটা চাপা দুশ্চিন্তার মধ্যে রয়েছে এই মুহূর্তে। একটা না, বরং দুটো দুশ্চিন্তা বলা যায়। তৃণার এরকম হঠাৎ করে অসুস্থ হয়ে যাওয়া এবং আরেক দিকে মৌলির মানসিক অত্যাচার- এই দুই চাপের ভেতরে পরে গিয়ে,সৌমাভ বুঝে উঠতে পারল না , সে কীভাবে এই সমস্যা গুলোর মোকাবিলা করবে। মিনিটের পর মিনিট এভাবে কাটার পরে, এত নীরবতা আর ওর সহ্য হলোনা। সৌমাভ তৃণার দিকে তাকিয়ে খুব নীচু স্বরে ওর হাতটা ধরে বলে উঠল,

-” তৃণা বলো কিছু। তুমি যা জানতে চাও আমি বলব,সব বলব। একটুও রাগ করবনা, বলো”

-” আমি কি তোমার আর মৌলির মাঝখানে চলে এসেছি? যদি তাই হয়, তাহলে আমি এখনই তোমার জীবন থেকে সরে যাব। এই একটা কথাই আমি জানতে চাই শুধু”

মেঝের দিকে নিষ্প্রাণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে কথাটা বলল তৃণা। ওর কথাটা শুনে উত্তর দেওয়ার আগে খানিকটা নিজেকে গুছিয়ে নিল সৌমাভ। ছোটোবেলা থেকে আজ পর্যন্ত এরকম দিন তার জীবনে সত্যি কখনো এর আগে আসেনি। ক্লাসের পড়ানো ছাড়া,কাউকে নিজের মনের কথা, দুঃখ, ব্যথা, কষ্ট, এসব প্রকাশ করার কথা কখনো মাথাতেই আসেনি ওর। মা মারা যাওয়ার পর থেকেই একা একা থাকার অভ্যেসটা বড্ড বেশি করে চেপে ধরেছিল সৌমাভকে। বন্ধুবান্ধব, হই হুল্লোড়, আড্ডা এসব থেকে নিজেকে সরিয়ে সারাক্ষণ পড়ার বই, গান এসব নিয়েই ব্যস্ত থেকেছে সে। কখনো রাগ- অভিমান হলে সেগুলোকে মনের মধ্যেই যতটা পেরেছে দমিয়ে রেখেছে। সেই কারণেই হয়তো আজ তৃণার সামনে বসে, ওকে এত সহজ একটা বিষয় বোঝাতে গিয়েও ঘাম ছুটে যাচ্ছে। ছোটো থেকে এত চুপচাপ ছেলেটা, তার এত রাগী, গম্ভীর স্বভাবের পর্দা ছেড়ে বেরোতে একটু তো সময় নেবেই…….

তৃণাকে কিছু বুঝে ওঠার সময় না দিয়েই, হঠাৎ হ্যাঁচকা একটা টানে ওকে নিজের দিকে টেনে নিল সৌমাভ। আকস্মিক এই টানে নিজেকে সামলাতে পারলনা তৃণা, সোফার পাশ থেকে একটু সরে গিয়ে ও সরাসরি সৌমাভর বুকের কাছটায় এসে পড়ল। এত কাছাকাছি এসে পড়ল ওরা যে, একে অপরের উষ্ণ নিঃশ্বাসটুকু অনুভব করতেও আর কোনো বাধা রইলনা। তৃণা তো কোনোকিছু ভালো করে বুঝতেই পারল না প্রথমে যে, ঠিক কী করতে চাইছে সৌমাভ। এত কাছে এসে এভাবে বসে থেকে, তৃণার মনে প্রচন্ড রকমের অস্বস্তি শুরু হয়ে গেল। সৌমাভ অবশ্য সেসবের দিকে অতটা পাত্তা দিলনা। ও তৃণাকে পেছন থেকে সামান্য জড়িয়ে ধরে, ওর কানের ভীষণ কাছে মুখটা এনে, মৃদুস্বরে বলে উঠল,

-” প্রথমেই বলে দিই, আমি যাই উত্তর দিইনা কেন, তার একটাই সমাধান আছে। আর সেটা হল, আমি তোমাকেই ভালোবাসি। মৌলি কী বলেছে তোমাকে আমি জানিনা, বা যেগুলো ফোনে পাঠিয়েছে সেগুলো সবই সত্যি, কিন্তু কেবলমাত্র প্রমাণ হিসেবে। এর মধ্যে বাস্তব সত্যি এতটুকু নেই। মৌলিকে আমি ভালোবাসিনা। ওকে ফোনে আমি কথাটা বলেছিলাম অন্যভাবে। তুমি পুরোটা শোনোনি, তাই বুঝতে পারোনি। ভুল বুঝেছো। এবার প্লিজ ব্যাপারটা বোঝো, আমি এতটা মন থেকে তোমাকে বোঝাচ্ছি…”

-” সৌমাভ!!”

সৌমাভর এত কাছের অবস্থানের অস্বস্তিটা আর চেপে রাখতে পারলনা তৃণা। এই অস্বস্তি টা ভালোলাগার, ভালোবাসার, কোনো বিরক্তির নয়। কিন্তু প্রথমবার একইরকম একটা পরিস্থিতিতে দাঁড়িয়ে আর নিজেকে সামলে রাখতে পারছেনা তৃণা। অস্পষ্ট একটা স্বরে সৌমাভর নামটা ফিসফিস করে বলে উঠল সে। আর সেটা বলার সাথে সাথেই ভীষণ আরো একটা লজ্জা,সংকোচ ওকে চেপে ধরল। এই প্রথমবার বোধহয় সৌমাভকে তৃণা একদম শুধু নাম ধরে ডাকল! ভাবতেও ভারী অবাক লাগছে ওর,যে কয়েকদিন আগে যে মানুষটাকে সে এত্ত ভয় পেত, ঝগড়া-ঝামেলা করত, আজ সেই মানুষটা তার এত কাছে বসে আছে, এতটা গভীর ভাবে জড়িয়ে রেখেছে তাকে। তৃণা এইবার কিছুটা হলেও,নিজের ভুলটুকু বুঝতে পারল। সৌমাভর জীবনে মৌলির অবস্থানটা সে বুঝতে পারছে, এইরকম একটা পরিস্থিতিতে সৌমাভ কতটা খারাপ সময় কাটাচ্ছে সেটাও বোঝা খুব একটা শক্ত ব্যাপার না তার পক্ষে। কিন্তু তবুও কোথাও গিয়ে একটা হারিয়ে ফেলার ভয়, অধিকার হস্তান্তরের ভয় কুড়ে কুড়ে খাচ্ছে তৃণাকে। নিজের ভালোবাসার মানুষটাকে অন্য কারোর সাথে এতটুকু ভাগ করে নেওয়া যে কতটা কষ্টের….. তা এবার বেশ টের পাওয়া যাচ্ছে। তৃণা নিজেও বুঝে উঠতে পারেনা যে, তার মত সারক্ষণ ইয়ার্কি-ঠাট্টা করা, বেহিসেবী, বেপরোয়া, ছটফটে মেয়েটাও কীভাবে হঠাৎ করেই এত বা ভালোবাসার স্রোতে গা ভাসিয়ে দিতে পারে। এ তো স্বপ্নেরও অতীত তার কাছে……

সৌমাভ তৃণার ডাকে সাড়া দিয়ে ওর হাতটা শক্ত করে চেপে ধরে বলল,

-“হুমম, বলো। আমি শুনছি ”

-” আমি তোমাকে ভালোবাসি সৌমাভ। তোমার অতীত কী ছিল তা নিয়ে আমার সত্যি আমার অল্প খারাপলাগা থাকলেও, সেই নিয়ে বর্তমানে এতটুকু মাথাব্যথা নেই। তুমি আমাকে ভালোবাসো এটাই আমার কাছে সবথেকে বড়ো সত্যি। আর সেই জন্যই আমার পক্ষে মৌলিদির সাথে বর্তমানে কোনো যোগাযোগই পছন্দ না, এমনকি বন্ধুত্বটুকুও। কারণ তুমি বন্ধুত্বের সংজ্ঞা বুঝলেও, মৌলিদি বোধহয় বোঝেনা। আমার সবসময় ভয় হয়, আমার সারাক্ষণ মনে হয়, যে আমি তোমার যোগ্য নই। আমি তোমার মত ম্যাচিওর নই। তাই হয়তো তুমি একদিন- আমাকে সত্যিই ছেড়ে দেবে, সত্যিই দেখব…”

-” চুপ, একদম চুপ। এই বাক্যটা আর কখনো সম্পূর্ণ করবেনা তুমি। – তৃণার কথার মাঝেই ওকে থামিয়ে কথা বলতে শুরু করে দিল সৌমাভ,

“আমি জানি তোমার কষ্ট হয়েছে, আর সেজন্য আবার আবারও সরি। তবে একটা কথা কী জানো তো তৃণা, এক্ষুণি তোমার বলা একটা কথা কিন্তু পুরোপুরি ভুল ছিল। সেটা কী বলো তো?”

-” কী??”

-” ঐ যে বললে, তুমি নাকি আমার মত ম্যাচিওরিটি নও। এটাই ভুল কথা। আমার তো মনে হয়ে মাঝে মাঝে কিছু ক্ষেত্রে, বিশেষ করে এই সম্পর্কে তুমি আমার থেকে অনেক বেশি পরিণত। অনেক বেশি করে তুমি আমাকে বোঝো, যেটা আমি পারিনা। তবে পারার চেষ্টা করব এবার থেকে। সত্যি করব, তুমি আমাকে সেটুকু সুযোগ দেবে তো?”

-” হুমম দেব। সবসময় তোমার জন্য আমি সব দোষ-ভুল গুলো মানিয়ে দেব, যদি সেগুলো ক্ষমাযোগ্য হয় তো। আমি একটু অবুঝ হয়ে যাই, মাঝে মাঝে। তবে একটু সময় পেলেই নিজেকে গুছিয়ে নিতে আমার খুব একটা অসুবিধা হবেনা। বলো সেই সময়টা আমাকে দেবে তো?”

-” হ্যাঁ, আমার জীবনে সব সময়ের,সবটুকু তোমার জন্য রাখব। ছোটমা, ভাই, বাবা ছাড়া আর কেউ নেই আমার। না কোনো তেমন বন্ধু, না কোনো কেউ।”

-” আচ্ছা, আর কোনো ঝগড়া করব না আমরা ঠিক আছে? এখন থেকে তুমিও ভালোভাবে কথা বলবে আমার সাথে, আর আমিও। মনে থাকবে?

-” হুমম থাকবে।”

বৃষ্টিশেষে রোদ ঝলমলে আকাশের মতো ওরা দুজনে নির্মল হাসিতে মেতে উঠল। একটু আগের সেই অস্বস্তিটা আর নেই তৃণার মধ্যে। ও ভীষণ সহজভাবেই এবার সৌমাভর বুকের মাথা হেলান দিয়ে বলল,

-” সৌমিক আর পর্ণার সম্পর্কটায় তুমি খুশি নও?”

-” খুশি কেন হবো না? কিন্তু খুশি হওয়ার সময় পেলাম কোথায়? এতটাই অবাক হয়ে গিয়েছিলাম, যে আর কী করব ভেবে পাইনি। আর তারপর তো যা হল, সেটা তুমি অলরেডি জানোই”

-” হুমম। জানি। তবে আমার একটা কথা ছিল। সৌমিকের জন্মদিন তো সামনে আসছে, ওখানে ওদের ব্যাপারটা নিয়ে তোমার ছোটমাকে তো বলতে পারো, বা ওদের সাথে একদিন বেরোলে হয়না? চারজন মিলে খুব মজা হবে। বলো???

-” হ্যাঁ এটা তো ভীষণ ভালো আইডিয়া। একদিন করলেই হয়। এমনিতেও আমাদের ঝামেলার জন্য ওরা এভাবে চলে গেল, আমারই খারাপ লাগছে।

-” ওকে, আমি তাহলে ওদের বলে রাখব। কেমন? তবে একটা কথা, মৌলিদিকে কোনো শেষ কথা তোমার বলার আছে কি? যাতে এর পরবর্তী কালে ও আর কোনো অসুবিধার সৃষ্টি করতে না পারে?”

মৌলির প্রসঙ্গে কথা বলতেই, গলার স্বর সামান্য পরিবর্তন হয়ে গেল তৃণার। ওর মনখারাপটা বুঝতে পেরে সৌমাভ তাড়াতাড়ি করে কথার মাঝখানেই বলল,

-” তুমি বলো, তুমি কী চাও? যা চাইবে, তাই করব”

-” আমি চাই, সৌমিকের জন্মদিনে ওকে ডেকে তুমি পরিস্কার করে সবটা বুঝিয়ে দাও, বলে দাও, দেখিয়ে দাও যে আমরা একে অপরের কতটা সুখী আছি, ভালো আছি। এটা ভালো ভাবে ওকে বলে দিতে হবে, যেন পরবর্তীকালে এরকম কাজ করার আগে ও দুবার ভেবে নেয়। ”

-” বেশ , তাই বলব আমি। এবার খুশি তো?”

সৌমাভর প্রশ্নের সরাসরি কোনো উত্তর না দিয়ে তৃণা ওর আরেকটা হাত চেপে ধরে নিজের হাতের উপরে রাখল। চোখেমুখের স্নিগ্ধ একটা হাসি দিয়ে ও যেন সম্মতি জানাল নিঃশব্দে। জানলার বাইরে তখন বিকল শেষে সন্ধ্যা নামতে শুরু করেছে । গাঢ় অন্ধকারের চাদর ধীরে ধীরে ছড়িয়ে যাচ্ছে শহরের বুকে। আর সেই অন্ধকারের বুক চিরে ক্রমশ জ্বলে উঠছে একটা দুটো করে রাস্তার, বাড়িঘর, দোকানের আলো।

সৌমাভর তৃণাকে জড়িয়ে থাকা অবস্থাতেই হঠাৎ আরো একটা দুঃসাহসিক কাজ করে বসল। সৌমাভ তৃণার ঘাড়ের কাছটা আলতো হাতে ধরে, নিজের দিকে এগিয়ে আনতেই তৃণা আবারও চমকে গেল আগেরবারের মত। ও কিছু বুঝতে পারার আগেই কপালের কাছে একটা উষ্ণ স্পর্শ অনুভব করল। চোখে না দেখেই এবারে তৃণা স্পষ্ট বুঝতে পারল কী হচ্ছে এই মুহূর্তে। সৌমাভর ঠোঁট ওর কপাল ছোঁয়া মাত্রই আবেশে চোখ বুজে এল তৃণার। সৌমাভর জামার হাতার কাছটা আঁকড়ে ধরে নিজেকে ওর দিকে আরো এগিয়ে দিল তৃণা। আজ এই মুহূর্তে আর কোনো রাগ-অভিমানের বাধা রইলনা ওদের মাঝাখানে। কপালে প্রেমিকের ঠোঁটের চুম্বন যেন এক আলাদাই ভরসা, ভালোবাসা প্রকাশ করে। তৃণা মা -বাবার পরে একমাত্র এই মানুষটার কাছেই বড্ড নিরাপদ অনুভব করতে লাগল। সৌমাভর বুকের কাছে শার্টের কলারে, পারফিউম আর হালকা ঘামের গন্ধ মিশে এক অদ্ভুত আকর্ষণীয় সুগন্ধি সৃষ্টি করেছে। তৃণা আর একটাও কথা না বলে, সৌমাভর বুকের কাছে মাথা গুঁজে সেই সুগন্ধ যতটা পারে নিজের মনের মধ্যে যেন মেখে নিতে লাগল। এই সুন্দর নীরবতাটুকু কথা বলে নষ্ট করার কোনো মানেই হয়না…….

*************
আজ শনিবারে প্রায় দু’সপ্তাহ পরে বাড়ি এসেছে সৌমাভ। সর্বাণীদেবী তাই ভীষণভাবে ব্যস্ত হয়ে পড়েছেন সেই সকাল থেকে। তার এই ছেলেটা বড্ড মুখচোরা, কিছু বলতে চায়না নিজে থেকে। সেই কারণে আরো বেশি করে ওর দিকে লক্ষ্য রাখেন তিনি। যাতে কখনো ও নিজের মায়ের অভাবটুকু বুঝতে না পারে। তবে এবারে আসা অবধি সর্বাণী দেবী দেখছেন, বারবারই কেমন যেন অন্যমনস্ক হয়ে রয়েছে সৌমাভ। আগে ল্যাপটপ নিয়ে বসে থাকত সারাক্ষণ, আর এখন ল্যাপটপের সাথে নতুন করে যোগ হয়েছে ফোনের নেশা। কার সাথে যে মাঝে মাঝে ফোনে কথা বলছে ছেলেটা, তা বোঝা গেলনা। তবে অভিজ্ঞ চোখে সর্বাণী দেবী কিছুটা হলেও বুঝতে পারলেন যেন ব্যাপারটা।
কৌতূহলী মনে দুপুরের দিকে তিনি সৌমাভর ঘরের ভেতরে এসে ওকে ডেকে বললেন,

-“সমু, এদিকে শোন। আয় আমার কাছে। তোর সাথে কয়েকটা কথা আছে আমার”

সৌমাভ তখন একমনে ফোনের দিকে তাকিয়ে কিছু একটা করছিল। ছোটমার কথায় চমকে উঠে সে তাকিয়ে বলল,

-” ছোটমা তুমি? হ্যাঁ বলো, কী বলছিলে?”

-” তুই ফোনটা রেখে এদিকে আয় আগে। না খেয়ে খেয়ে কী হাল করেছিস দেখ শরীরের? সারাক্ষণ ল্যাপটপ র ফোন নিয়ে কী যে করিস, এত কীসের কাজ আমি বুঝিনা বাবা ”

-” আচ্ছা আসছি দাঁড়াও”

ফোনটা বিছানার পাশে রেখে সর্বাণীদেবীর কাছে এগিয়ে এল সৌমাভ। বাচ্চা ছেলের মত ওনার কোলে শুয়ে সে নরম কথায় বলল,

-” এবার বলো ছোটোমা”

-” মেয়েটা কে রে সমু?”

-” কোন মেয়ে?”

সর্বাণীদেবীর কথায় আবারও চমকে গেল সৌমাভ। কোল থেকে মাথা সরিয়ে সে অবাক চোখে তাকিয়ে রইল। ওর ছোটমা অবশ্য এই অবাক হয়ে তাকানোর ব্যাপারে অত বেশি গুরুত্ব দিলেন না। তিনি আগের মতই সহজ গলায় বললেন,

-” যাকে তুই ভালোবাসিস, সেই মেয়েটার নাম কী?”

-” তুমি-তুমি কী করে জানলে? ভাই বলেছে?”

-” তার মানে কেউ যে আছে নিশ্চিত হয়ে গেলাম। না কেউ বলেনি, আমিই বুঝতে পেরে বললাম। বল এবার, নামটা কী?”

-” তৃণা। তুমি দেখেছো এর আগে ওকে।”

-” তৃণা? দাঁড়া দাঁড়া, ঐ যে মেয়েটা সৌমিকের বান্ধবী? সেদিন এসেছিল? ও তোর কলেজে পড়ে বলেছিলি না?”

-” হুমমম।”

-” বাপরে, ছাত্রী থেকে প্রেমিকা? বাহ! যাই হোক, মেয়েটা কিন্তু বেশ মিষ্টি। আমার সেদিনই ওকে খুব ভালো লেগেছিল। আমি তো প্রথমে ভেবেছিলাম সৌমিকের প্রেমিকা বুঝি ওটা।”

-“না না। ওরা ভালো বন্ধু। তবে সৌমিকের ব্যাপারেও একটা কথা তুমি জানোনা বুঝলে তো?”

-” কী কথা?”

-” তোমার ছেলেও ডুবে ডুবে জল খাচ্ছে, আর সেটা তুমি জানোই না।”

-” সেকি! তোরা দুই ভাই মিলে কী শুরু করেছিস বলতো? কোথাকার মেয়ে? কে, নাম কী?”

সর্বাণী দেবী প্রচন্ড অবাক হয়ে গেলেন সৌমাভর কথাটা শুনে। একটা খবর জানতে এসে এভাবে আরো ভেতরের খবর বেরিয়ে আসবে তা তো তিনি বুঝতেই পারেননি। সৌমাভ এবার বেশ মজা পেয়েছে মনে হলো। সে কৌতুকের সুরে বলল,

-” মেয়েটাকে চেনোনা। তবে মেয়েটা তৃণার বন্ধু, পর্ণা। সৌমিকের জন্মদিনে ওকে আসতে বলব। তখনই দেখে নিও কথা বলে নিও। কেমন?”

‘-হুমম। তাই করব। দুটো ছেলেই যে কখন এত বড়ো হয়ে গেল, তা বুঝতেই পারলামনা। যাই হোক, চিন্তা করিসনা, সব ঠিক হয়ে যাবে। বুঝলি? ”

সৌমাভর মাথায় পরম মমতায় হাত বোলাতে বোলাতে স্মৃতিমেদুর হয়ে পড়লেন সর্বাণীদেবী। ওনার মনে পড়ে গেল, এ বাড়ির বড়োজা মানে সৌমাভর মায়ের কথা। দিদি বড়ো তাড়াতাড়ি চলে গেলেন সবাইকে ছেড়ে। আজ তিনি বেঁচে থাকলে কতই না খুশি হতেন। নিজের ছেলেটাকে ছেড়ে, এ বাড়ির প্রতিটা মানুষকে ছেড়ে, এত দূরে গিয়ে কী যে সুখে আছেন দিদি, তা ভগবানই জানেন। সময় কত তাড়াতাড়ি বদলায় ! সেদিনের সেই ছোট্ট ছোট্ট দুটো ছেলে, দুই ভাই, আজ নিজেরাই নিজেদের নতুন জীবনের সূচনার পথে এগিয়ে যেতে চলেছে ক্রমশ……
( ক্রমশ)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here