মেঘ বসন্তের মায়া?পর্ব:১৬

0
461

#মেঘ_বসন্তের_মায়া?
#লেখিকা:#তানজিল_মীম?
— পর্বঃ১৬

সূর্যের ফুড়ফুড়ে আলোতে ঘুম ভাঙলো তিথির। চোখ খুলতেই নিজেকে আকাশের খুব কাছাকাছি দেখে চমকে উঠলো সে সাথে সাথে ছিটকে দু’কদম পিছনে চলে গেল তিথি। তার বিশ্বাস হচ্ছে না সে আকাশের পাশেই ঘুমিয়ে ছিল কিছুক্ষন চোখ বন্ধ করে কাল রাতের কথা ভাবতে লাগলো তিথি কাল রাতে,,

আকাশ তিথি দুজনেই নানা কথা বার্তা বলতে বলতে গল্প করছিল আকাশও কথা বলছিল আকাশের কথার মাঝখানেই তিথি আকাশের পাশ দিয়েই কখন ঘুমিয়ে পড়েছে বুঝতে পারে নি। কিছুক্ষন অভাবে যাওয়ার পর আকাশ তিথির দিকে তাকাতেই সে বুঝলো তিথি ঘুমিয়ে পড়েছে। আকাশ কিছুক্ষন তাকিয়ে রইলো তিথির মুখের দিকে। টিস্যু দিয়ে অনেক আগেই মুখের কেক মুছে ফেলেছে আকাশ তিথি তারপরও গালের পাশ দিয়ে হাল্কা সামান্য কেক লেগেছিল তিথির। আকাশ তিথির দিকে ঘুরে তাকিয়ে রইলো কিছুক্ষন তারপর মুচকি হেঁসে হাত দিয়ে তিথির গালের কেক মুছে দিলো। কেন যেন তিথিকে ভীষণ ভালো লাগে তাঁর। আকাশের হাতের স্পর্শ পেতেই হাল্কা নড়েচড়ে উঠলো তিথি। তিথিকে নড়তে দেখে আকাশ নিশ্চুপে তাকিয়ে রইলো তিথির মুখের দিকে। আর তিথি ঘুমের ঘোরে আকাশকে জড়িয়ে ধরে ঘুমিয়ে পড়লো। আকাশ ভেবেছিল তিথি এমন কিছুই করবে। আকাশের ইচ্ছে করছে তিথির কপালে ছোট্ট একটা চুমু দিতে পরক্ষণেই কিসব আবোল তাবোল ভাবছে সে ভেবেই সোজা হয়ে আকাশের দিকে তাকালো সে। আর ভাবলো,

‘ এসব কি ভাবছি আমি,তুই কি ভুলে গেলি আকাশ তুই মেয়েদের পছন্দ করিস না।’

কিছুক্ষন ওভাবে কাটিয়ে আকাশ আস্তে আস্তে শোয়া থেকে উঠে বসলো তারপর তিথিকে কোলে তুলে নিলো। তারপর কোলে করেই তিথিকে নিজের রুমে নিয়ে এসে বিছানায় শুয়িয়ে দেয় আকাশেরও চোখে খুব ঘুম থাকায় সেও বেশি কিছু না ভেবে ঘুমিয়ে পড়লো তিথির পাশ দিয়ে।

কাল রাতের কথাগুলো ভেবেই নড়েচড়ে উঠলো তিথি। তারপর বেশি কিছু না ভেবে এক প্রকার দৌড়েই ওয়াশরুমে চলে যায় সে।’

_____

সকাল_১০ঃ০০টা….

হসপিটালে নিজেদের সব জিনিসপত্র গুছাতে ব্যস্ত সাথী। প্রায় সবকিছুই গোছানো শেষ আর কিছুক্ষনের মধ্যেই বাড়ির উদ্দেশ্যে পা বাড়াবে তাঁরা। সাথীর মা তো চরম খুশি আজ প্রায় ১০ দিন পর বাড়ি ফিরবে সে। এমন সময় ওদের রুমে ঢুকলো তিথি, আকাশ আর গ্র্যান্ডমা। ওদের দেখেই চরম খুশি হয় সাথীর মা। সাথীর মা কিছু বলার আগেই গ্র্যান্ডমা এগিয়ে এসে মুচকি হেঁসে বললো,

‘ কেমন আছো তুমি?’

‘ জ্বী আলহামদুলিল্লাহ ভালো আপনি?’

‘ হুম ভালো আরো আগেই তোমাকে দেখতে আসার ইচ্ছে ছিল কিন্তু হুট করে করে অসুস্থ হয়ে যাওয়ার কারনে আর আসতে পারি নি।’

‘ হুম জানি আমি সাথী বলেছিল আপনি অসুস্থ হয়ে গিয়েছিলেন তা এখন কেমন আছেন?’

‘ হুম ভালো।’

এমন সময় ওদের রুমে ঢুকলো হৃদ। সবাইকে একসাথে দেখে বললো হৃদ,

‘ তোমরাও চলে এসেছো?’

‘ হুম তা আজ পেসেন্টকে ছেড়ে দিবে তো হৃদ?’

গ্র্যান্ডমার কথা শুনে হৃদও বলে উঠল,

‘ হুম।’

উওরে মুচকি হাসলো সবাই। তারপর হৃদ এগিয়ে যায় সাথীর মায়ের দিকে তারপর তাকে কিছুক্ষন দেখে পেসার মেপে সেপে বললো,

‘ এখন সবকিছুই নরমাল আছে ভালো মতো খাওয়া দাওয়া করবেন সাথে যে ঔষধগুলো লিখে দিয়েছি ওগুলোও সময় মতো খাবেন।’

উওরে মুচকি হেঁসে বললো সাথীর মা,

‘ ঠিক আছে বাবা।’

অবশেষে হসপিটালকে বিদায় জানিয়ে চললো সাথী, সাথীর মা সাথে আকাশ, তিথি, গ্র্যান্ডমাও। গাড়ির সামনে দাঁড়িয়ে আছে আকাশ তিথি গ্র্যান্ডমা সাথে হৃদ। পাশেই অন্য আরেকটা গাড়িতে বসে আছে সাথী আর সাথীর মা। ওদের বাড়িতেই আছে সাথীর মামা মামি। তিথিও যেতো সাথীদের সাথে কিন্তু এখন অন্য আরেকটা জায়গায় যাবে তাঁরা এই কারনে যাওয়া হবে না তিথির। তিথি তার মাকে একবার জড়িয়ে ধরে বললো,

‘ মা সাবধানে থেকো। আমার কিছু কাজ আছে তাই তোমাদের সাথে যেতে পারলাম না তবে চিন্তা করো না কিছুদিন পর আমি যাবো।’

উওরে হাল্কা হেঁসে বললো তিথির মা,

‘ ঠিক আছে মা, তোর গ্র্যান্ডমার খেয়াল রাখিস।’

‘ হুম মা।’

অন্যদিকে সাথী তাকিয়ে আছে হৃদের দিকে। আকাশের সাথে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে কথা বলছে হৃদ হয়তো গ্র্যান্ডমাকে নিয়ে। সাথী জানে আকাশের গ্র্যান্ডমার কি হয়েছে? এটাও তিথি তাকে বলেছিল বিয়ের দিন। ছোট্ট দীর্ঘ শ্বাস ফেললো সাথী।

কিছুক্ষন যাওয়ার পর হৃদকে বিদায় জানিয়ে দুই গাড়ি দু’দিকে চলে গেল। আর হৃদও বেশি কিছু না ভেবে ছোট্ট শ্বাস ফেলে চললো হসপিটালের ভিতর।’

____

আঁকাবাঁকা পথ পেরিয়ে এগিয়ে চলছে আকাশ তিথি আর গ্র্যান্ডমা। হঠাৎই গ্র্যান্ডমা বলে উঠল,

‘ আমরা কোথায় যাচ্ছি আকাশ?’

‘ হুম গেলেই দেখতে পাবে গ্র্যান্ডমা।’

‘ আবার কোনো সারপ্রাইজ দিবে আমায় তাই না।’

গ্র্যান্ডমার কথা শুনে আকাশ কিছুটা অবাক হয়ে বললো,

‘ ধরো তেমন কিছুই।’

উওরে গ্র্যান্ডমা আর কিছু বললো না। জানালার বাহিরে তাকালো সে। অন্যদিকে তিথিও বসে আছে গ্র্যান্ডমার পাশ দিয়ে। বাহির থেকে জানালা বেয়ে বয়ে আসছে বাতাস। তিথি আনমনেই তাকিয়ে আছে বাহিরে। সময়টা যেন খুব দ্রুতই চলছে তাদের। দেখতে দেখতে ওদের বিয়ের প্রায় পনেরা দিন হয়ে গেছে এভাবেই তো করতে করতে একদিন একবছর পূর্ণ হয়ে যাবে তাদের, সাথে তিথিকে চলে যেতে হবে আকাশকে। অল্প কয়েকদিনেই তিথির মায়া পড়ে গেছে এই এগ্রিমেন্টের সম্পর্কের ওপর। দীর্ঘ শ্বাস ফেললো তিথি সে ভেবে পায় না তার সাথে আকাশের ডির্ভোস হয়ে গেলে মাকে কি বলবে সে। আর বেশি ভাবলো না তিথি। নিমিষেই চোখ বন্ধ করে নিলো সে।’

____

গাড়িতে চড়ে বাড়ি যাচ্ছে সাথী কিছুটা ভালো লাগা সাথে অনেকটা খারাপ লাগা নিয়েই এগোচ্ছে সে। কিছু একটার শুন্যতা ফিল হচ্ছে সাথীর কিন্তু সে বুঝতে পারছে না কিসের শুন্যতা হচ্ছে তাঁর। শুধু কাল রাতে হৃদের সাথে কাটানোর মুহূর্তের কথাই মনে পড়ছে সাথীর। নিমিষেই চোখ বন্ধ করে ফেললো সাথী কিছুটা অস্থিরতা ফিল হচ্ছে তাঁর। চোখ বন্ধ করলেও হৃদের ফেসটা ভেসে আসছে সাথীর সাথে সাথে চোখ খুলে ফেললো সাথী। কিছুটা বিষন্নতা নিয়েই আনমনে বলে উঠল সে,

‘ এসব কি হচ্ছে আমার সাথে।’

হুট করে সাথীর মুখে কিছু অস্পষ্ট শব্দ কানে আসতেই বলে উঠল সাথীর মা,

‘ কি হয়েছে?’

মাকে কথা শুনে কিছুটা আমতা আমতা করে বললো সাথী,

‘ হুম হ্যাঁ কিছু না মা।’

‘ ওহ।’

‘ হুম।’

বলেই মেবাইলটা হাতে নিলো সাথী। এমন সময় হঠাৎই মেবাইলের টুং করে একটা মেসেজ আসলো সাথীর। মেসেজটা দেখেই ঠোঁটে আপনাআপনি হাসি ফুটে উঠলো সাথীর। সাথে এক অদ্ভুত ভালো লাগার শিহরণ বয়ে গেল সাথীর মাঝদিয়ে আর সেই ভালো লাগা নিয়েই এগিয়ে চলছে সাথী নিজের গন্তব্যের দিকে।’

____

শহরের রাস্তা ছেড়ে গ্রামীন পথ পেরিয়ে এগিয়ে চলছে আকাশ তিথি আর গ্র্যান্ডমা। হঠাৎই একটা ভ্যানের ওপর ডাব দেখে গাড়ি থামিয়ে দিলো আকাশ। তারপর কাউকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়েই গাড়ির সিট বেল খুলে এগিয়ে গেল সে ডাব বিক্রেতার দিকে।’

হুট করে আকাশের এমন কাজে গ্র্যান্ডমা তিথি দুজনেই বেশ চমকে উঠলো। তারপর আকাশের যাওয়ার পানে তাকিয়ে থেকে তাদের আর বুঝতে বাকি রইলো না আকাশ আসলে কি করতে চাইছে?’

কিছুক্ষনের মধ্যেই আকাশ হাতে দু’টো ডাব নিয়ে এগিয়ে এলো গাড়ির কাছে। তারপর একটা গ্র্যান্ডমার দিকে আর একটা তিথির দিকে এগিয়ে দিয়ে বললো,

‘ খাও?’

উওরে দু’জনেই মুচকি হাসলো। কারন গ্র্যান্ডমা তিথি দুজনেই ডাব ভিষন ফেবারিট। তিথি ডাবের ভিতর পাইপ লাগিয়ে এক চুমুক ডাবের পানি খেয়ে বলল,

‘ তুমি খাবে না?’

আকাশ ড্রাইভিং সিটে বসে সিটবেল লাগাতে লাগাতে বললো,

‘ না।’

উওরে আর কিছু বললো না তিথি। আবারো ড্রাইভিং করতে শুরু করলো আকাশ।…

বেশকিছুক্ষন পর আকাশদের গাড়ি এসে থামলো একটা বড় গ্রামীন আলিশান বাড়ির সামনে। গ্র্যান্ডমা তো চরম অবাক হয়েছে এই বাড়িটার কাছে এসে। এই বাড়িটা হলো আকাশের ছোট বেলা কাটানোর একটা স্মৃতির বাড়ি। আকাশের তখন বয়স ছিল আট কি নয় যখন তাঁরা এই বাড়িটা ছেড়ে শহরে পা রেখেছিল আজ প্রায় ষোলো সতেরো বছর পর আবার এই বাড়িটার কাছে আসলো আকাশ আর তার গ্র্যান্ডমা। এই বাড়িটা জুড়ে জড়িয়ে আছে আকাশের গ্র্যান্ডমার অনেক স্মৃতি। এখান থেকেই শুরু হয়েছিল তার সংসার জীবন সাথে তার ছেলে বউমা নাতির সাথে কাটানোর স্মৃতি। সেইসব মুহূর্তগুলোর কথা ভেবেই চোখে পানি চলে আসলো আকাশের গ্র্যান্ডমার। সে ভাবতেই পারে নি আকাশ তাকে এখানে নিয়ে আসবে। গ্র্যান্ডমাকে চুপচাপ দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে বলে উঠল আকাশ,

‘ কি হলো গ্র্যান্ডমা এখানেই দাঁড়িয়ে থাকবে নাকি ভিতরে যাবে না?’

উওরে ছলছল চোখে তাকালো আকাশের গ্র্যান্ডমা আকাশের দিকে। আকাশ তার গ্র্যান্ডমার হাত ধরে বললো,

‘ চলো যাই গ্র্যান্ডমা।’

এতটুকু বলে একপলক তাকালো আকাশ তিথির দিকে। তিথিও বেশি কিছু না ভেবে ধরলো গ্র্যান্ডমার হাত তারপর বললো,

‘ চল গ্র্যান্ডমা।’

দুজনের কান্ডেই মুচকি হাসলো গ্র্যান্ডমা। তারপর তিনজন একসাথেই তাকিয়ে রইলো বাড়িটার দিকে এরই মধ্যে আকাশ আবার বলে উঠল,

‘ চল গ্র্যান্ডমা আবার নতুন কিছু স্মৃতি জমাই।’….
!
!
!
!
!
!
!
#চলবে…..

[ভুল-ত্রুটি ক্ষমার সাপেক্ষ!’আর গল্প কেমন লাগছে সবাই কমেন্ট করে জানাবে]

#TanjiL_Mim♥️

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here