মেঘ বসন্তের মায়া?পর্ব:১৫

0
438

#মেঘ_বসন্তের_মায়া?
#লেখিকা:#তানজিল_মীম?
— পর্বঃ১৫

একটা সুন্দর কফি হাউজে বসে আছে হৃদ আর সাথী। দুজনের চোখই দুজনের দিকে কিছুক্ষন আগেই তারা এসেছে এখানে। সাথী তার চোখ সরিয়ে চারদিকে একবার চোখ বুলালো তারপর বললো,

‘ অনেক সুন্দর তো।’

সাথীর কথা শুনে হৃদ মুচকি হেঁসে বললো,

‘ হুম,আচ্ছা তুমি কি করো আইমিন চাকরি নাকি পড়াশোনা?’

‘ হুম পড়াশোনা করি তবে আপাতত পার্ট টাইম একটা জব করার ইচ্ছে আছে।’

‘ ওহ।’

‘ হুম।’

‘ তা কাল তো তোমার মাকে নিয়ে চলে যাবে তাই না?’

‘ হুম।’

এরই মধ্যে দু’কাপ কফি হাতে ওদের সামনে চলে আসলো ওয়েটার। ওয়েটারকে দেখে দুজনেই কথা বলা বন্ধ করে দেয়। ওয়েটার কফি সার্ভ করে যেতেই বলে উঠল হৃদ,

‘ তারপর তোমার বয়ফ্রেন্ড কেমন আছে?’

সবেমাত্র মুখে কফিটা খেতে নিয়েছিল সাথী পরক্ষণেই হৃদের কথা শুনে সেটাকে নিচে সরিয়ে রেখে বললো সে,

‘ কি?’

‘ তোমায় বয়ফ্রেন্ড কেমন আছে?’

‘ আমার কোনো বয়ফ্রেন্ড নেই ডক্টর।’

‘ হুম মিথ্যে বলছো তাই না। ইট’স ওকে না বলতে চাইলে আমি জোর করবো না।’

‘ আরে সত্যি বলছি আমার কোনো বয়ফ্রেন্ড নেই।’

‘ রিয়েলি?’

‘ হুম।’

‘ ওহ,,

‘ তা আপনার গার্লফ্রেন্ড আছে?’

‘ হুম আছে তো যেমন ধরো তুমি।’

হৃদের কথা শুনে অবাক হয়ে বললো সাথী,

‘ কি?’

বলেই বসা থেকে উঠে দাঁড়াতে নিলো সাথী। সাথীকে উঠতে দেখে বললো হৃদ,

‘ কোথায় যাচ্ছো?’

‘ না মানে?

‘ বুঝতে পেরেছি আরে তুমি আমার কথাটা বোঝার চেষ্টা করো গার্ল অর্থ কি?’

‘ মেয়ে

‘ আর ফ্রেন্ড?’

‘ বন্ধু

‘ তাহলে আমার মেয়েবন্ধু আছে তো এখন আবার এটা বলো না তুমি আমার ফ্রেন্ড না এমনিতেও এই কয়দিনে আমরা বন্ধু হয়েছি কিন্তু?’

‘ ওহ এমন কিছু..

বলেই আবার নিজের জায়গায় বসে পড়লো সাথী। সাথী বসতেই হৃদ বলে উঠল,

‘ হুম এমন কিছুই এখন তাড়াতাড়ি কফিটা শেষ করো।’

বলেই নিজের কফির কাপে চুমুক দিলো হৃদ। আর সাথীও বেশি কিছু না ভেবে নিজের কফিতে চুমুক দিলো সাথে চোখ নিক্ষেপ করলো হৃদের মুখের দিকে এমনটা নয় সাথী হৃদকে পছন্দ করে না। ছোট বেলা থেকেই ডাক্তার ছেলেদের খুব ভালো লাগে সাথীর আর হৃদকে তো একটু বেশি ভালো লাগে কিন্তু হুট করে হৃদের কথা শুনে কেমন একটু লাগলো সাথীর।

‘ আচ্ছা সত্যি সত্যি যদি আমি ওনার গার্লফ্রেন্ড হতাম?’

ভেবেই আনমনেই মুচকি হাসলো সাথী।’

রাত প্রায় সাড়ে এগারোটা বাজে। এত রাতে কোনো ছেলের সাথে এই ভাবে কফি হাউজে কফি খাবে এটা কোনোদিন ভাবে নি সাথী। এক অদ্ভুত ভালো লাগা কাজ করছে সাথীর ভিতর। সাথীকে এভাবে তাকিয়ে থাকতে দেখে বলে উঠল হৃদ,

‘ কি ভাবছো বলো তো?’

হৃদের কথা শুনে চমকে উঠলো সাথী তাড়াতাড়ি নিজের ভাবনা থেকে বেরিয়ে এসে বললো সে,

‘ না তেমন কিছু নয়।’

‘ ওহ।’

উওরে কিছু বললো না সাথী হাল্কা মুচকি হাসলো সে।’

____

একে একে পুরো ছাঁদে এলোমেলো ভাবে থাকা জিনিসপত্রগুলো গুছাতে ব্যস্ত আকাশ আর তিথি। তিথি তো কিছুক্ষন পর পর শুধু তাকাচ্ছে আকাশের দিকে কারন আকাশ কিছুটা মন মরা হয়েই কাজ করছে। হঠাৎই তিথির চোখ যায় টেবিলের উপর থাকা কেকের দিকে প্রায় চার পাউন্ডের চকলেট কেক এনেছিল আকাশ ধরতে গেলে পুরো কেকটাই রয়েছে। তেমন একটা খাইনি কেউ তিথি কিছু একটা তার আঙুলে কিছুটা কেক লাগিয়ে নিলো তারপর শয়তানি মার্কা হাসি দিয়ে এগিয়ে গেল সে আকাশের দিকে তারপর কিছু না ভেবেই আকাশের দু গালে কেক লাগিয়ে দিয়ে বললো,

‘ সারপ্রাইজ জামাই।’

বলেই দু’কদম পিছনে চলে গেল তিথি। হুট করে তিথির এমন কাজে পুরোই চমকে উঠলো আকাশ পুরো জিনিসটা বুঝতে তার দু সেকেন্ড সময় লাগলো আকাশ গালে হাত দিলো তৎক্ষনাৎ পরক্ষণেই কেক দেখে কিছুটা রাগী লুক নিয়ে বললো সে,

‘ এটা কি ধরনের ফাজলামি তিথি?’

আকাশের কথা শুনে তিথি দাঁত কেলিয়ে বললো,

‘ কিছুই না জামাই।’

তিথির কথা শুনে আকাশ রাগী কন্ঠে বলে উঠল,

‘ আমি এগুলো একদম পছন্দ করি না তিথি।’

আকাশের কথা বলার ধরন শুনে ঘাবড়ে গেল তিথি। সে ভাবে নি তার কাজে আকাশ রেগে যাবে কিছুটা মিন মিন কন্ঠ নিয়ে বললো সে,

‘ আই এম সরি।’

‘ সব কিছুতে শুধু সরি বলতে শিখেছো তাই না।’

‘ না মানে।’

‘ রাখো তোমার না মানে।’

বলেই রাগে হনহন করে এগিয়ে গেল আকাশ তিথির দিকে। আকাশের কাজে আরো ভয় পায় তিথি হয়তো একটু বেশি বাড়াবাড়ি করে ফেলেছে সে। আকাশকে এগোতে দেখে কয়েক কদম পিছনে চলে যায় তিথি। তিথিকে পিছনে যেতে দেখে রাগী কন্ঠে বললো আকাশ,

‘ একদম পিছনে এগোবে না তিথি আমি কিন্তু চরম ভাবে রেগে গেছি।’

আকাশের কথা শোনার সাথে সাথে দাঁড়িয়ে পড়লো তিথি। তারপর মাথা নিচু করে বললো সে,

‘ আমি সত্যি বুঝতে পারি নি আপনি এতটা রেগে যাবেন আমি সত্যি সরি স্যার।’

‘ কোনো সরিতে কাজ হবে আর কতক্ষণ জামাই কতক্ষণ স্যার এটা কোনো ধরনের কথা বলার ধরন যা বলবে যেকোনো একটা বলবে।’

উওরে মাথা নাড়িয়ে বললো তিথি,

‘ ওকে স্যার।’

তিথিকে অনেকটাই মন খারাপ করে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে আকাশ পিছন থেকে টেবিলের উপরে থাকা কেক নিয়ে তিথির দু’গালে লাগিয়ে দিয়ে বললো,

‘ সারপ্রাইজ বউ।’

হুট করে আকাশের এমন কান্ড আর কথা শুনে চরম অবাক তিথি। পরক্ষণেই পুরোটা বুঝতে পেরে বললো সে,

‘ তোমায় তো আমি..

বলেই তেরে আসতে নিলো তিথি। তিথিকে এগোতে দেখে দৌড় লাগালো আকাশ তারপর বললো,

‘ কেমন দিলাম?’

‘ হুম আমিও দেখাচ্ছি কেমন দিলাম ।’

বলে দু’ হাত ভর্তি কেক নিয়ে তেরে আসলো তিথি আকাশের দিকে। তিথির কান্ড দেখে আকাশ বলে উঠল,

‘ এই এটা কিন্তু ঠিক হচ্ছে না।’

‘ আমি দেখাচ্ছে জামাই কোনটা ঠিক আর কোনটা ভুল..

‘ তিথি এবার কিন্তু বাড়াবাড়ি হচ্ছে।’

উওরে কিছু না বলে তেড়ে আসছে নিলো সে আকাশের দিকে। আর তিথিকে নিজের দিকে আসতে দেখে আকাশও ছুটতে লাগলো পিছনে।

পুরো ছাঁদ জুড়ে ছোটাছুটি করছে আকাশ আর তিথি। আকাশ দৌড়াচ্ছে আর তার পিছনে তিথি। হঠাৎই দৌড়াতে দৌড়াতে আকাশ তিথির দু’ হাত ধরে দেয়ালের সাথে চেপে ধরলো তারপর বললো,

‘ এবার কিন্তু বাড়াবাড়ির হচ্ছে তিথি।’

‘ কিসের বাড়াবাড়ি শুনি তোমায় আমি একটু খানি কেক লাগিয়ে দিয়ে ছিলাম আর তুমি আমায় পুরো ভুত বানিয়ে দিয়েছো।’

‘ বেশ করেছি।’

‘ বেশ করেছো তাই না,,

বলেই নিজের হাত ছাড়াতে ব্যস্ত হয়ে পড়লো তিথি। তিথিকে নড়াচড়া করতে দেখে আকাশ আর একটু শক্ত করে চেপে ধরে বললো,

‘ তুমি কিন্তু ভুলে যাচ্ছো আমি তোমার স্বামী আর আমার ওপর এইভাবে টর্চার করতে পারো না তুমি?’

‘ আমি টর্চার করছি…

হঠাৎই কি হলে আকাশের সে তাকিয়ে রইলো তিথির মুখের দিকে আকাশকে এইভাবে তাকিয়ে থাকতে দেখে হুস আসলো তিথির আসলে তারা ঠিক কিভাবে দাঁড়িয়ে আছে। অনেকটাই কাছাকাছি দাঁড়িয়ে আছে আকাশ তিথি। খোলা আকাশের আলোকিত ছাঁদের দেয়াল ঘেঁসে দাঁড়িয়ে আছে আকাশ তিথি। দুজনেরই চোখ দুজনের চোখের দিকে। যেন দুজনেই এক অন্যরকম মায়ায় আঁটকে পড়েছে খুব। হঠাৎই আকাশের বিদ্যুৎ চমকে উঠলো সাথে সাথে আকাশ তিথি দুজনেরই হুস আসলো। আকাশ চটজলদি ছেড়ে দিলো তিথিকে। চলে আসলো দুজনের মধ্যে কিছুক্ষনের নীরবতা। আকাশ বুঝতে পারে নি হুট করে এমন কিছু হবে তার সাথে। আর তিথি সেও ভাবে নি হুট এত কাছাকাছি চলে যাবে তারা। এই মুহূর্ত টাকেই কাজে লাগিয়ে তিথি আকাশের কাছে গিয়ে ওর দু’ গালে লাগিয়ে দিলো কেক। পুরো কেক দিয়ে ভূত বানিয়ে ফেলেছে সে আকাশকে। তিথির কান্ডে অবাকের চরম সীমানায় পৌঁছে গেছে আকাশ পরক্ষণেই সব ভুলে এগিয়ে গেল তিথির দিকে আর বললো,

‘ তোমায় তো আমি,

আবারো শুরু হয়ে যায় দুজনের মধ্যে ছোটাছুটি। আকাশে মেঘ ডাকছে খুব হয়তো বৃষ্টি হবে। তবে সেসব দিকে আপাতত নজর নেই আকাশ তিথির তারা তো ব্যস্ত তাদের ছোটাছুটিতে।’

___

‘ রাত বারোটা বেজে দু’মিনিট।’

হসপিটালের বাহিরে দাঁড়িয়ে আছে সাথী আর হৃদ কিছুক্ষন আগেই তারা কফি হাউজ থেকে বেরিয়ে চলে এসেছে হসপিটালে। হঠাৎই সাথী বলে উঠল,

‘ থ্যাংক ইউ সো মাচ।’

উওরে মুচকি হাসলো হৃদ। তারপর বললো,

‘ বাই আবার কাল দেখা হবে।’

‘ ওকে বাই।’

বলেই ঢুকে যায় সে হসপিটালের ভিতর। আর হৃদ কিছুক্ষন সাথীর যাওয়ার পানে তাকিয়ে থেকে সেও চলে গেল তাঁর বাড়ির উদ্দেশ্যে…

___

ছাঁদের নিচে পাশাপাশি শুয়ে আছে আকাশ তিথি। দুজনের চোখে মুখেই ক্লান্তির ছাপ কিছুক্ষন আগেই নিজেদের ছোটাছুটি বন্ধ করে নিচে শুয়ে পড়ে আকাশ – তিথি। এখান থেকে উপরের আকাশটাকে পুরোই পরিষ্কার আর সুন্দর লাগছে আকাশ তিথির কাছে। দুজনেরই চোখ ওই উপরে থাকা আকাশটার দিকে পুরো আকাশ জুড়েই তাড়াতাড়ি ঝলঝল করছে। এই মুহূর্তটা দেখে কেউ বলবে না কিছুক্ষন আগেও এই আকাশে মেঘেরা ভড় করেছিল। ওঁরা তো ভেবেই নিয়েছিল আজ রাতে বৃষ্টি হবে কিন্তু হলো না বসন্তের এই দিনে যেন অন্যরকমভাবে মায়ায় আটকাচ্ছে আকাশ তিথি। এক অন্যরকম রাত…

খোলা আকাশের নিচে পাশাপাশি শুয়ে মস্ত বড় আকাশের এই ছলমল করা তাঁরারা, সাথে প্রকৃতি জুড়ে ঘিরে থাকা ঠান্ডা বাতাস যেন মন মাতাল করা এক অন্যরকম সুবাস।’

এই সব মুহূর্ত একদমই নতুন আকাশ তিথি কাছে। দুজনের মধ্যেই রয়েছে এক অজানা ভালো লাগা সাথে মায়ায় জড়ানোর এক অদ্ভুত অনুভূতি। আজ রাতটাই যেন মায়ায় জড়ানো…
!
!
!
!
!
!
!
#চলবে…..

[ভুল-ত্রুটি ক্ষমার সাপেক্ষ!’আর গল্প কেমন লাগছে সবাই কমেন্ট করে জানাবে এন্ড সরি ফর লেট??]

#TanjiL_Mim♥️

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here