মেঘ বসন্তের মায়া?পর্ব:১৪

0
413

#মেঘ_বসন্তের_মায়া?
#লেখিকা:#তানজিল_মীম?
— পর্বঃ১৪

চোখ বড় বড় করে তাকিয়ে আছে আকাশ তিথি একে অপরের দিকে। কি করবে কিছুই যেন বুঝছে না তাঁরা। ওদের এভাবে তাকিয়ে থাকতে দেখে বলে উঠল গ্র্যান্ডমা,

‘ কি হলো আকাশ তিথিকে খাইয়ে দেও?’

গ্র্যান্ডমার কথা শুনে আকাশ কিছুটা বিস্মিত কন্ঠে বললো,

‘ হুম এই তো দিচ্ছি গ্র্যান্ডমা।’

এই বলে চামচে কিছু খাবার তুলে নিলো আকাশ তারপর তাকালো সে তিথির দিকে। অন্যদিকে তিথিরও সেইম ফিলিংস হচ্ছে সে ভাবতে পারে নি গ্র্যান্ডমা এমন কিছু বলবে তাদের। ওদের আবারো চুপ করে বসে থাকতে দেখে বলে উঠল গ্র্যান্ডমা,

‘ কি হলো আকাশ কি ভাবছো?’

‘ হুম না কিছু না।’

এই বলে আকাশ বিস্ময় ভরা চেহারা নিয়েই চামচ হাতে খাবার এগিয়ে দিল তিথির দিকে। তিথিও বেশি কিছু না ভেবে আস্তে আস্তে খেয়ে নিলো আকাশের হাতের খাবার। খাবার খাওয়ানো শেষ হতেই যেন সস্থির নিশ্বাস ফেললো আকাশ। অন্যদিকে তিথি এখন পড়েছে বিপদে এখন কি করবে সে। তিথিকে খাওয়ানো শেষ হতেই বলে উঠল গ্র্যান্ডমা,

‘ তিথি,এখন তুমি খাইয়ে দেও আকাশকে?’

গ্র্যান্ডমার কথা শুনে তিথিও চমকে উঠে বললো,

‘ হুম এই তো দিচ্ছি গ্র্যান্ডমা।’

বলেই এক চামচ খাবার এগিয়ে দিল সে আকাশের দিকে আকাশও বেশি কিছু না ভেবে খেয়ে নিলো। চোখে মুখে দুজনেরই বিস্ময়ের ছাপ।’

আর অন্যদিকে ওদের কাজ দেখে মুচকি হাসলেন গ্র্যান্ডমা।’

______

রাত_৯ঃ০০টা…

বিছানায় শুয়ে আছেন গ্র্যান্ডমা। এমন সময় তার রুমে ঢুকলো তিথি গ্র্যান্ডমার দিকে এগিয়ে আসতে আসতে বললো সে,

‘ গ্র্যান্ডমা।’

আচমকা তিথির কন্ঠ কানে আসতেই তিথির দিকে তাকিয়ে মুচকি হেঁসে শোয়া থেকে উঠে বসলেন গ্র্যান্ডমা। তারপর বললেন,

‘ হুম বলো।’

‘ কি একা একা শুয়ে আছো বলো তো চলো আমার সাথে?’

তিথির কথা শুনে কিছুটা অবাক হয়ে বললো গ্র্যান্ডমা,

‘ কোথায় যাবো?’

‘ ছাঁদে।’

বলেই গ্র্যান্ডমার হাত ধরে গ্র্যান্ডমাকে আর কিছু বলার সুযোগ না চললো সে ছাঁদে।

সিড়ি বেয়ে উপরে উঠতেই আলোকিত রাতের লাইটিং করা ছাঁদ থেকে আরো অবাক হয় গ্র্যান্ডমা। অবাক হয়েই বললেন উনি,

‘ এগুলো কি তিথি?’

এমন সময় হাতে একটা কেক নিয়ে গ্র্যান্ডমার দিকে এগিয়ে আসতে আসতে বললো আকাশ,

‘ হেপি বার্থডে গ্র্যান্ডমা।’

আকাশের কথা শুনে যেন অবাকের চরম সীমানায় পৌঁছে গেছে গ্র্যান্ডমা। প্রচন্ড খুশি হয়ে বললেন উনি,

‘ তোমরা।’

উওরে মুচকি হাসলো আকাশ তিথি। তিথি এগিয়ে এসে বললো গ্র্যান্ডমাকে,

‘ হেপি বার্থডে গ্র্যান্ডমা।’

‘ থ্যাংক ইউ।’

প্রচন্ড খুশি হয়ে গেছে গ্র্যান্ডমা। খুশিতে তার চোখ যেন পানিতে ভরে আসছে। এমনটা নয় আকাশ এর আগে তার বার্থডে সেলিব্রিট করে নি কিন্তু এবারেরটা যেন একটু স্পেশাল। গ্র্যান্ডমাকে চুপচাপ দাঁড়িয়ে থাকতে থেকে বললো আকাশ,

‘ কি হলো গ্র্যান্ডমা তুমি কিছু বলছো না কেন?’ তোমার ভালো লাগে নি?’

আকাশের কথা শুনে গ্র্যান্ডমা আকাশের দু’গাল চেপে ধরে বললো,

‘ খুব ভালো লেগেছে থ্যাংক ইউ মাই গ্র্যান্ডসন।’

উওরে মুচকি হাসলো গ্র্যান্ডমা। গ্র্যান্ডমাকে হাসতে দেখে বললো তিথি,

‘ এবার তবে কেক কাটা যাক গ্র্যান্ডমা?’

তিথির কথা শুনে গ্র্যান্ডমা তিথির হাত ধরে বললো,

‘ হুম।’

পুরো ছাঁদের চারিদিকে ঘিরে আছে আলোকিত লাইটিং সাথে সাদা পর্দার চাদরে মুড়ানো। ছাঁদের মাঝখানেই রয়েছে একটা বড় টেবিল সাথে তিনটে চেয়ার। টেবিলের চারিদিকেও লাইটিং করা টেবিলের উপরেই আলোকিত সাদা ক্যান্ডেল দিয়ে ঘেরা। তার মাঝখানেই বিভিন্ন পদের খাবার সাথে বড় কেকটা এই মাত্র রাখলো আকাশ।

আকাশ তিথি গ্র্যান্ডমার হাত ধরে দাঁড়ালো কেকের কাছ দিয়ে তারপর তিনজনেই একসাথে গ্র্যান্ডমার হাত ধরে কেক কাটতে শুরু করলো । গ্র্যান্ডমার কেক কাটা শেষ হতেই আকাশ তিথি একসাথে বলে উঠল,

‘ Happy birthday to you,happy birthday to you, Happy birthday to you Grandma,Happy birthday to you!’

ওদের কথা শুনে হাসলেন গ্র্যান্ডমা সাথে আকাশ তিথিকে কেক খাইয়ে দিলেন সাথে আকাশ তিথিও খাইয়ে দিলো গ্র্যান্ডমাকে। এরপর শুরু হলো আরেক মজা। কারন গান নাচ করবে আকাশ তিথি। পুরো লাউডে মিউজিক বাজিয়ে হাসি ঠাট্টা আর অনেক মজা করতে লাগলো আকাশ তিথি। হাতে মাইক নিয়ে আবোল তাবোল গান গাইছে তিথি। আর তিথির গান শুনে আকাশ বলে উঠল,

‘ তোমার মতো বেসুরো আমি দু’টো দেখি নি।’

বলেই আরেকটা মাইক নিয়ে গান গাইতে লাগলো আকাশ। আকাশের কাজ দেখে তিথিও রাগ নিয়ে হাতে মাইক নিয়ে বললো,

‘ কি বললে আমি বেসুরো।’

বলে সেও চেঁচিয়ে গান গাইতে লাগলো। এরপর শুরু হলো দুজনের মধ্যে গানের যুদ্ধ সাথে অনেক হাসাহাসি।’

আর ওদের কাছ থেকে কিছুটা দূরে চেয়ারে বসে সবকিছু দেখতে লাগলেন গ্র্যান্ডমা। প্রচন্ড খুশি সে আকাশ তিথির পাগলামি দেখে। অনেকদিন পর যেন আকাশকে অনেক খুশি দেখছেন গ্র্যান্ডমা আর আকাশকে খুশি দেখলে গ্র্যান্ডমাও খুব খুশি হোন। তিথি মেয়েটা আসলেই খুব ভালো। আনমনেই মুচকি হাসলো গ্র্যান্ডমা।

রাতের জোৎসা ভরা আলোরা যেন আজ সব আকাশদের বাড়ির ছাঁদেই উঁকি মারছে। মুক্ত আকাশের নিচে বসেই হাসাহাসি করছে আকাশ তিথি। পুরো আকাশ জুড়ে ছড়িয়ে রয়েছে অগণিত তাঁরারা। সবাই যেন ওদের খুশিতে ভাগ দিচ্ছে আনমনে। যেন এক অন্যরকম মায়ায় ঘেরা রাত।’

____

হসপিটালের বেডে ঘুমিয়ে সাথীর মা। আর ওনার কেভিনের বাইরেই করিডোরে পায়চারি করছে সাথী। ঘুম আসছে না তাঁর। আজ সারাদিনে তিথি হসপিটালের আসে নি তবে ফোন অনেকবারই করেছে সাথীকে। আপাতত তিথির ব্যাপার নিয়ে ভাবছে না সে, সে তো ভাবছে অন্য কিছু কাল সকালেই হসপিটাল থেকে মাকে নিয়ে চলে যাবে সাথী আর এখান থেকে বেরিয়েই তাকে কাজ খুজতে হবে অবশ্য খোঁজার খুব একটা দরকার নেই। তিথি যেখানে কাজ করতো তাদের সাথে যোগাযোগ করেছিল সাথী আর তাঁরা বলেছে তিথির পোস্টেই তাকে কাজ দিবে। কাল না হলেও পরশু থেকে কাজে যাবে সাথী। এইরকম হাজারো চিন্তা ভাবনা নিয়ে পায়চারি করছে সাথী। এমন সময় সেখান থেকে যাচ্ছিল হৃদ সাথীকে এইভাবে পায়চারি করতে দেখে বলে উঠল হৃদ,

‘ কি হলো সাথী এইভাবে পায়চারি করছো কেন, এভরিথিং ইস অলরাইট?’

হঠাৎই হৃদের কন্ঠ কানে আসতেই পিছন ঘুরে তাকালো সাথী তারপর বললো সে,

‘ হুম সব ঠিক আছে।’

সাথীর কথা শুনে হৃদ আসলো সাথীর দিকে তারপর বললো,

‘ তাহলে এইভাবে পায়চারি করছো কেন?’

‘ ওহ কিছু নয় ডক্টর। আসলে ঘুম আসছিল না তাই আর কি।

‘ ওহ।’

‘ হুম তা আপনি এখানে?’

‘ আমি তো একটু রাউন্ডে বেরিয়ে ছিলাম।’

‘ ওহ।’

‘ হুম।’

উওরে সাথী আর কিছু না বলে আবারো নিজের মতো পায়চারি করতে লাগলো। হৃদ কিছুক্ষন সাথীর দিকে তাকিয়ে থেকে নিজের হাতের ঘড়ির দিকে তাকালো রাত প্রায় এগারোটার কাঁটায় ছুঁই ছুঁই। হৃদ কিছু একটা ভেবে বলে উঠল সাথীকে,

‘ কফি খাবে সাথী?’

_____

গ্র্যান্ডমাকে বিছানায় শুয়ে দিয়ে গায়ে কাঁথা জড়িয়ে দিল তিথি। কিছুক্ষন আগেই তাঁরা একসাথে ডিনার সেরে নিয়েছে। হঠাৎই গ্র্যান্ডমা বলে উঠল তিথিকে,

‘ সব সময় আমার নাতির সাথে এইভাবেই সুখী থেকো তিথি।’

গ্র্যান্ডমা কথা শুনে অনেকটাই খারাপ লাগলো তিথির পরক্ষনেই দীর্ঘ শ্বাস ফেলে মাথা নাড়ায় সে। তারপর বলে,

‘ এখন তবে তুমি ঘুমাও গ্র্যান্ডমা।’

‘ হুম গুড নাইট।’

‘ গুড নাইট গ্র্যান্ডমা।’

বলেই রুমে লাইট অফ করে বেরিয়ে যায় তিথি। গ্র্যান্ডমার কথাটা যেন বার বার তার কানে বাজছে কিন্তু গ্র্যান্ডমাকে আর কে বুঝাবে তার নাতির সাথে তিথি শুধু একবছরের জন্যই আছে। আবারো দীর্ঘ শ্বাস ফেললো তিথি। তারপর এগিয়ে গেল সে ছাঁদের উদ্দেশ্যে কারন আকাশ এখনো আছে উপরে।’

চেয়ারে বসে আলোকিত ক্যান্ডেলের দিকে তাকিয়ে আছে আকাশ। যতই সে গ্র্যান্ডমার সামনে খুশি থাকার চেষ্টা করুক না কেন ভিতরে ভিতরে প্রচন্ড কষ্ট হচ্ছে তাঁর। শুধু এতটুকুই বেশি ভাবে আকাশ গ্র্যান্ডমা চলে গেলে কে থাকবে তার সাথে। বড্ড যে একা হয়ে যাবে। সেই ছোট্ট বেলা থেকেই বাবা মাকে ছাড়া বড় হয়েছে সে। মা বাবার আদর কেমন হয় এটাও জানা নেই আকাশের। গ্র্যান্ডমাই ছিল যে তাকে ছোট বেলা থেকে প্রচন্ড ভালোবাসা দিয়ে বড় করেছে আজ সেই গ্র্যান্ডমাই ভাবতেই প্রচন্ড কষ্ট হচ্ছে আকাশের। চোখে পানি টলমল করছে আকাশের। এমন সময় আকাশের কাঁধে হাত রাখলো তিথি। তিথির উপস্থিতি বুঝতে পেরেই চোখ মুখ ঠিক করে নিলো আকাশ। তিথি বেশি কিছু না ভেবে বসলো আকাশের পাশে থাকা চেয়ারটায়। তারপর বললো,

‘ মন খারাপ হচ্ছে স্যার?’

‘ না তেমন কিছু নয়।’

‘ একটা কথা বলবো স্যার কখনো নিজের কষ্টকে নিজের মধ্যে লুকিয়ে রাখবেন না। আপনার কষ্ট হলে বা কান্না পেলে সেটাকে নিজের ভিতরে লুকিয়ে না রেখে বাহিরে বের করে দিবেন। এতে কষ্ট একটু কম হবে স্যার।’

তিথির কথা শুনে বিস্ময় ভরা কন্ঠ নিয়েই বললো আকাশ,

‘ মানে?’

‘ মানে আমরা আমাদের আনন্দকে যেমন হাসির মাধ্যমে বাহিরে বের করি তেমন কান্নার মাধ্যমে কষ্টকে বাহিরে বের করতে হয় স্যার। আপনার কষ্ট হচ্ছে সেটা বাহিরে বের করুন দেখবেন নিজেকে হাল্কা লাগবে?’

তিথির কথা শুনে ছলছল চোখে তাকায় আকাশ তিথির দিকে। তিথির আকাশের চাহনি দেখে আকাশের হাত ধরে বললো,

‘ বেশি কিছু ভাববেন না স্যার। যা হওয়ার সেটা হবেই তাই মন খারাপ করবেন না বেশি।’

তিথির কথা শুনে আকাশ বলে উঠল,

‘ আজ রাতে ঘুমাবে না তিথি।’

আকাশের কথা শুনে তিথি বুঝতে পেরেছে এই টপিকটা এড়িয়ে যেতে চাইছে আকাশ। তিথিও কথা না বারিয়ে বললো,

‘ হুম ঘুমাবো তো এইসব গুছিয়ে আপনি নিচে যান আমি আসছি।’

আকাশ কিছু একটা ভেবে বললো,

‘ আমিও হেল্প করি তোমায়?’

আকাশের কথা শুনে তিথিও বেশি কিছু না ভেবে বললো,

‘ ওকে।’

____

কিছুটা অবাক চোখে তাকিয়ে রইলো সাথী হৃদের দিকে। সাথীকে এভাবে তাকিয়ে থাকতে দেখে বললো হৃদ,

‘ আমি এমন কিছু বলে নি যার কারনে তুমি এইভাবে তাকিয়ে থাকবে আমার দিকে।’

‘ না মানে..

‘ ইট’স ওকে তোমায় যেতে হবে না।’

বলেই চলে যেতে নেয় হৃদ। হৃদকে চলে যেতে দেখে বলে উঠল সাথী,

‘ আমি কি বলেছি কফি খেতে যাবো না।’

সাথীর কথা শুনে উল্টো দিক ফিরে হাল্কা হাসলো হৃদ তারপর বললো,

‘ তুমি যাবে এটাও তো বলো নি।’

‘ না মানে ভিতরে মা একা আছে তো।’
!
!
!
!
!
!
!
#চলবে…..

[ভুল-ত্রুটি ক্ষমার সাপেক্ষ!’আর গল্প কেমন লাগছে সবাই কমেন্ট করে জানাবে এন্ড সরি ফর লেট??]

#TanjiL_Mim♥️

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here