মেঘের_বন্ধু_বৃষ্টি ৫

0
621

#মেঘের_বন্ধু_বৃষ্টি (৫)

বিশিষ্ট শিল্পপতি মুহতাদি আনসার এর কনিষ্ঠ সন্তান মধুপ্রিয়া।বিষয় টা পুরো ভারসিটি তে আলোড়ন ফেলে দিয়েছে। দেওয়ার কথা। মাস খানেক আগেই বর্ষ সেরা শিল্পপতি অ্যাওয়ার্ড পেয়েছেন। সেই হিসেবে নাম ডাক খ্যাতি বেড়েছে বেশ কয়েক গুন। মধুর চালচলন দেখে বোঝার মাধ্যম নেই কোটি টাকার উত্তরসূরি। ক্যাম্পাসের চার পাশে মেয়েটির নামে মৃদু গুঞ্জন শোনা যায় এখন। এই মাতামাতির হেতু খুঁজে পাচ্ছে না সানিন। তিক্ত হলে ও সত্য আওয়ানের সাথে মধু কে মেনে নেওয়া ওর জন্য কেন যেন বেশ কষ্টসাধ্য।
সকলের উপনীত হওয়ার অপেক্ষা করছিলো। তবে দ্বিতীয় বর্ষের এক ছেলের চাহনি দেখে অদ্ভুত ঠেকলো! কেমন করে যেন দেখছে ওকে। মুখ দিয়ে বিরক্তিকর শব্দ তুলে পথ বাড়ালো সে।

ডিপার্টমেন্ট এর কাছাকাছি এসেই পেছন ঘুরে রাগি সুরে শুধালো সানিন
” এই ছেলে আমার পিছু নিচ্ছো কেন? ”

” আমি তো আপনার পিছু নেই নি। ”

” মিথ্যে বলছো কেন। এই ডিপার্টমেন্টের কাছে কি দরকার? ”

” আপনাকে কেন বলবো? ”

” আশ্চর্য! মুখে মুখে তর্ক করছো আবার। যাও এখান থেকে। ”

” আপনি বললেই যাবো? ”

” আলবাত যাবে। এক বার নয় হাজার বার যাবে। ”

খিটমিট করে হাসতে লাগলো ছেলেটি। সানিন এর কপালের ভাঁজ বলে দিচ্ছে ঠিক কতো টা বিরক্ত সে। তবু ও ছেলেটার হাসি থামার নাম গন্ধ নেই মাত্র। এক রাশ বিরক্তি নিয়ে নিজ ডিপার্টমেন্ট এর পথে অগ্রসর হতেই পেছন থেকে ছেলেটি বলল
” আপনার লাল চোখের দৃষ্টি যে আমার ঘুম কেড়ে নিয়েছে সেই দায় দিবে কে? ”

ঈষৎ রক্তিম মুখ নিয়ে আওয়ানের পাশে বসলো সানিন। ম্যাথ স্যার ক্লাসে আসায় কোনো প্রশ্ন করার সুযোগ হলো না। তবে কিছু একটা গন্ডগোল ঠেকলো যা ঠিক করে অনুমান হচ্ছে না।

আবারো ভারসিটি আসছে না তিয়া। এই নিয়ে ফোনে কলহ চললো কিছুক্ষন। তবে তিয়াশার মন কে গলাতে পারলো না কোনো ক্রমেই। এমন অদ্ভুত ভাবে পরিবর্তন হওয়া যেন অনায়াসে কয়েক প্রহরের মাথা ব্যাথা। প্রেম নাকি বিরহের স্বাদ দেয়। তবে বন্ধুত্ব যে এভাবে কলহ বিরহ ঘুরিয়ে আনে তা জানা ছিলো না কোনো কালেই। মেয়ে মানুষ হলো যন্ত্রনা। এদের ছাড়া চলে ও না আবার থাকলে ও ভালো লাগে না। জিমাম কে কল করলো আওয়ান। এতো আর্জেন্ট কল শুনে ছুটে এলো সে। হাত পা কাঁপা শুরু করেছে। আট তলা থেকে সিঁড়ি বেয়ে নেমেছে। লিফ্ট এ উঠার সময় কোথায়?
” দোস্ত তোর কি হয়েছে। এমন ব্যস্ত কন্ঠ ক্যান? ”

” বাইকের চাবি দে। ”

পকেট থেকে চাবি বের করে দিলো জিমাম। আওয়ান শুধু বললো বিকেলে কথা হবে। পরমুহূর্তেই ধোঁয়া উঠিয়ে বাইক নিয়ে মিলিয়ে গেল দৃষ্টির থেকে বহুদূর।

হাটু তে চিবুক ঠেকিয়ে বসেছে আওয়ান। গালের এক পাশ উঠা নামা করছে রাগে। তিয়াশার বাসায় বড় করে তালা ঝুলানো। এদিকে দারোয়ান কে ও দেখা যাচ্ছে না। সিঁড়ি তে বসে থেকে কোমরে ব্যথা হয়ে গেল। অথচ দারোয়ান লাপাত্তা!

” সাহেব। এই যে সাহেব। ”

হাটু থেকে মাথা তুলে তাকালো আওয়ান। চোখে ঘুমের ক্লান্তি। দুই চোখে হাত বুলিয়ে বলল
” কোথায় ছিলেন চাচা? সেই এক টা থেকে বসে আছি। ”

” আমি তো ভাত খাইতে গেছিলাম। তবে আপনি জানেন না তিয়া মামুনিরা বাসায় নেই? ”

” কি বলেন সকালেই তো কথা হয়েছে। আমাকে তো কিছু বলে নি। ”

” কি জানি। হয়তো মনে নাই। ”

আনমনা হয়ে চলে এলো আওয়ান। তিয়া যে ইচ্ছাকৃত এমন টা করেছে তা বলার বাকি থাকে না। ভেতরে ভেতরে জ্বলন হচ্ছে খুব। শুধু শুধু এই মেয়ের জন্য চিন্তা করছিলো। অথচ সব ঠিক ঠাক!

ইদানিং মধুপ্রিয়ার সাথে সময় কাটানো হয় না। সকাল বিকেল মিলিয়ে দুই একটা ম্যাসেজ এর লাইন। বিষয় টা হয়তো সম্পর্ক টায় খাদ নামাতে পারে। সেই আশংকায় কেঁপে উঠলো আওয়ান। মনে মনে ঠিক করলো গিফ্ট নিয়ে যাবে মধুর জন্য। এতে হয়তো মেয়েটির সাথে সম্পর্ক গাঢ় হবে।
চশমার ফাঁক দিয়ে নিজের ভাই কে দেখে চলেছে আরুশি। লোকে বলে সদ্য পা দেওয়া কিশোরী মন আর নব যৌবনের আগের সময় টা মানুষ একটু বেশিই উপলব্ধি ক্ষমতা পায়। যা মাঝে এসে হারিয়ে যায়। নবযৌবনে পা দেওয়া আরুশির অবচেতন মন একটু বেশিই উপলব্ধি করতে পারলো। ভাইয়ের যে মনের রোগ হয়েছে তা যে কেউ বলে দিতে পারে।

” আরুশি এক টা কাজ করে দিবি বোন? ”

ফট করেই এমন প্রশ্ন করায় আঁতকে উঠলো আরুশি। বুকে থু থু দিয়ে কয়েক বার চাপর দিলো ভয় কাটার উদ্দেশ্যে। তারপর হাতের বই টা রেখে বলল
” কি? ”

” তুই তো বাংলায় খুব ভালো। একটু গুছিয়ে উইস লেটার লিখে দিবি? নর্মাল উইস, হয়না বন্ধুর জন্য। একটু আবেগ নরম মোলায়েম প্রাঞ্জল ভাবে অনুভূতি প্রকাশ। ”

*

রাস্তায় জারিন এর সাথে দেখা হওয়ার পর রওনাকের মন ভালো নেই। মেয়েটার সাথে জীবনের সব থেকে গুরুত্বপূর্ণ বন্ধন সৃষ্টি করতে যাচ্ছিলো। যদি ও এর পেছনে লুকিয়ে ছিলো অসৎ উদ্দেশ্য। তবে মন আজ অন্য কথা বলছে। যা কিছু তেই সরাতে পারছে না। হয়তো এতো কাছ থেকে কাউ কে অনুভব করা হয় নি সেই কারনে। মাঠ বরাবর আসতেই মাথায় ফুটবলের আঘাত এলো। মৃদু শব্দ করে উঠলো সে। কপালে হাত বুলিয়ে সামনে তাকাতেই লাল হয়ে গেল নেত্র। সর্বশক্তি দিয়ে বলের গাঁয়ে আঘাত করে বলল
” তুই আমার গাঁয়ে বল লাগিয়েছিস। ”

” দেখ রওনাক প্রথমত আমি ইচ্ছে করে লাগাই নি। দ্বিতীয়ত ভুল যেহেতু আমার হয়েই গেছে সেহেতু আমি ক্ষমা চাইছি। ”

” ক্ষমা তেই সব মাফ? ”

” তো কি করার আর। এখন কি মা’রবি আমায়। ”

মাথা গরম ছিলো ওর। এখন নিজের রাগ কে ধরে রাখতে পারছে না। তীব্র আক্রোশ নিয়ে দাঁত কিড়মিড় করতে লাগলো। আশ পাশেই ছিলো বাঁশের ফালি। সেগুলো বেশ আকর্ষন করছে ওকে।
কোনো কিছু বোঝার আগেই একটা বাঁশ উঠিয়ে প্রজ্জোল এর গাঁয়ে আঘাত করলো। আচমকা আক্রমনের প্রতিরোধ করতে পারছে না প্রজ্জোল। লাগাতার মা’র খেয়ে মুখ থুবড়ে পরে রইলো মাঠের পাশে।

শপিং করেছে তিয়া। বন্ধুদের জন্য টাকা খরচ করতে ভালো লাগে তাঁর। যদি ও মিতব্যয়ী সে। তবু ও বন্ধুদের ক্ষেত্রে এই অঘোষিত কার্পণ্য তাকে স্শর্প করতে পারে না। মৃদু শব্দে গান চলছে। দুই এক টা লাইনে ঠোঁট ও মেলাচ্ছে। চোখ বন্ধ করে অনুভব করছিলো শব্দ গুলো। তবে ফোনের অদ্ভুত রিং টোন বজ্রাঘাত ঘটালো পর পর কয়েক বার। চার টে মিস কল উঠে রয়েছে। শাম্মি কখনোই এমন টা করে না। বিষয় টা নিশ্চয়ই গুরুতর। সেই আশংকায় কল ব্যাক করলো। ওপাশ থেকে হাউমাউ করে কাঁদছে শাম্মি। কেন কাঁদছে জানা নেই। তবে ভয়ে বুক ধুকপুক করে উঠলো।

সুমিতা আর সানিন সান্ত্বনা দিয়ে যাচ্ছে। তবে শাম্মির আর্তনাদ কমছে না কোনো ভাবেই। ইতো মধ্যেই প্রজ্জোল এর বাবা মা কে খবর দেওয়া হয়েছে। তারা গ্রামের বাসা থেকে রওনা দিয়ে দিয়েছেন। একের পর এক কল করে র’ক্তের সন্ধান করছে আওয়ান। তবে কোথাও পাওয়া গেল না। শাম্মির মুখের দিকে তাকাতেই হা হা কার লেপন করছে অন্তকর্ন।
” আমার ভাই টা বাঁচবে না রে। বল তোরা ও বাঁচবে না তাই না। ”

” বাজে কথা না শাম্মি। কিছু হবে না ওর।”

” জানি না কোন হারা’মির বাচ্চায় এমন ভাবে মেরেছে ওকে। বিশ্বাস কর মাটি তে পুঁতে ফেলতে ইচ্ছে করছে। ”

সানিন এর এমন মতবাদে ক্ষনিকের জন্য অবাক হলো সুমিতা। তবু ও ভাবুক হলো না। এখন সেই সময় নেই। প্রজ্জোল কে বাঁচাতে হবে। ডাক্তার বলেছেন সিরিয়াস কন্ডিশন। বাঁচার চান্স ৪০%।

হসপিটালের করিডোর গুলো তে ছুটোছুটি করছে তিয়াশা। সে জানে এই হসপিটালে আনা হয়েছে প্রজ্জোল কে। তবে সঠিক ফ্লোর টা জানে না। ছুটতে ছুটতে পাঁচ নাম্বার ফ্লোরের একটা কেবিনের পাশে দেখতে পেল আওয়ানের পেছনের দিক। কপালে হাত ঠেকিয়ে আছে। গাঁয়ে এলো মেলো পোশাক। বোঝা যাচ্ছে খবর টা শুনে বাসার জামা পরেই চলে এসেছে। পদশব্দ শুনে তিয়াশা কে বলল
” ভালো নেই রে। ”

” ডাক্তার কি বলেছেন? ”

” ৪০% বাঁচার সম্ভাবনা। ”

মুখে হাত দিয়ে পিছিয়ে গেল তিয়া। চোখ দুটো ছলছল করছে। গত চার বছরের স্মৃতি একটু একটু করে আন্দোলন সৃষ্টি করছে। হালকা সমীরনে কাঁপছে ওষ্ঠাধর। তবে কি হারিয়ে যাবে এই বন্ধুটি?

#ফাতেমা_তুজ
#চলবে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here