#মিসআন্ডারস্ট্যান্ডিং
#লুৎফুন্নাহার_আজমীন(#কন্ঠ)
#পার্ট৭
(অনুমতি ব্যতীত কপি করা নিষেধ)
মেঘ এখন বিবাহ যোগ্য কন্যা।প্রায় অনেক গুলোই সম্বন্ধ এসেছে মেঘের।কিন্তু সবগুলোই সে কোনো না কোনো কারণে ভেস্তে দিয়েছে।মেয়ের এমন কাজে মিসেস মিতুর মাথায় হাত।আর কত যে পাড়া-প্রতিবেশীদের, আত্মীয়দের কাছ থেকে কথা শুনতে হবে আল্লাহই জানেন।এমনেতেই বাংলাদেশে মেয়েরা কুড়িতে বুড়ি।তারওপর মেঘের গুণে গুনে পঁচিশ বছর হয়ে গেছে।প্রায়ই পাড়াপড়শি আত্মীয়রা মেঘের বিয়ে নিয়ে মেঘের বাবা-মাকে কথা শুনান।যদিও আকরাম সাহেব এসব একদম কানে তোলেন না।সে মেয়েকে বিয়ে দিতে এখনো মন থেকে রাজি নন।কিন্তু তাও স্ত্রীর জন্য মেয়েকে বারবার পাত্রস্থ করতে করতে হচ্ছে।মেঘের এই বিয়ে ভেঙে দেওয়ার কারণ আর কেউ না জানলেও শান্ত জানে।ইতিমধ্যে সে শুভ্রের ব্যাপারে খোঁজ খবর নিয়েছে।শুভ্রও মেঘের মতো কোনো এক অজানা কারণে বিয়ে করেনি।সে শুভ্রের সাথে যোগাযোগ করে শুভ্রকে সবটা জানায়।সবটা শুনে শুভ্র বুশরার ওপর প্রচণ্ড ভাবে ক্ষেপে যায়।এখনই বোধহয় গিয়ে বুশরার গলা টিপে ধরবে শুভ্র।শান্ত শুভ্রকে বুঝায়।অতীত অতীতই।যা হওয়ার হয়ে গেছে।এখন বর্তমানকে আকড়ে ধরে ভবিষ্যৎকে সুন্দর করার সময়।
অনিচ্ছা থাকা সত্ত্বেও অনেকটা শান্তর জোরজবরদস্তিতেই পাত্রস্থ হয় মেঘ।শুনেছে পাত্রের নাম নাকি শুভ্র।থাকতেই পারে।এক নামে পৃথিবীতে একাধিক মানুষ আছে তা অস্বাভাবিক কিছু নয়।একহাত লম্বা ঘোমটা টেনে বসেছে সে পাত্রপক্ষের সামনে।পাত্রপক্ষ জানায় মেয়ে তাদের পছন্দ হয়েছে।যথারীতি পাত্র-পাত্রীকে আলাদা ঘরে পাঠানো হয় কথা বলার জন্য।মেঘ এই সুযোগটারই অপেক্ষা করছিলো।
ঘরে গিয়ে উঁচু করে তাকাতেই চমকে যায় মেঘ।এই সেই শুভ্র না তো?যাকে মেঘ এখনো ভালোবাসে।সেই ধুসর চোখ।উচ্চতাও একই।শুধু এই শুভ্র মাস্ক পরে না।কিন্তু ওই শুভ্র মাস্ক পরতো। না না,এ হতেই পারে না।শুভ্র আসবে কোথা থেকে।ও তো বুশরাকে বিয়ে করে বাচ্চা কাচ্চা নিয়ে সুখে সংসার করছে।
মেঘ দীর্ঘশ্বাস নেয়।তারপর বলে,,,
-দেখেন!আমি একজনকে ভালোবাসতাম।ইভেন এখনো তাকে আমি ভালোবাসি।তাকে ছাড়া অন্য কাওকে আমি লাইফ পার্টনার হিসাবে মানতে পারবো না।
-এতই যদি ভালোবাসেন তো অন্য মানুষের কথায় তাকে ভুল বুঝলেন কেন?
শুভ্রের কথা শুনে চমকে যায় মেঘ।শুকনো গলায় বলে,,,,
-মানে?
-মানে এই শুভ্র আর তোর ওই শুভ্র একই ব্যক্তি।
কথাটা বলতে বলতে ঘরে ঢোকে শান্ত।মেঘ চমকে যায়।
-তুই লুকিয়ে লুকিয়ে সব শুনছিলি?
-না শুনার কি আছে?
শান্ত বলে।এইসব কিছুর আকষ্মিকতায় মেঘ অনেকটাই ঘাবড়ে গিয়েছিলো।সে নিজেকে সামলে বলে,,,
-একটু আগে যে লোকটা বললো আমি মানুষের কথায় তাকে ভুল বুঝেছি।সেও তো কম না।দিব্যি মনে মনে কাহিনী বানিয়ে আমায় আর তোকে অপরাধী করেছে।
মেঘের কথা শুনে শুভ্র মেঘের সামনে হাঁটু গেড়ে বসে।কান ধরে বলে,,,
-সরি ফর দ্যাট পিচ্চি।
মেঘ অভিমানে মুখ ঘুরিয়ে নেয়।শান্ত হেসে বলে,,,
-তোরা কেউ কারও থেকে কম না।যে কোনো সম্পর্ক। হোক সেটা বন্ধুত্ব,কিংবা প্রেম ভালোবাসা।সম্পর্কের মুল ভিত্তি হলোই বিশ্বাস। বিশ্বাস কেটে গেলে সেই সম্পর্কেরও বিলুপ্তি ঘটে।আমি না থাকলে তো দুইটায় দেবদাস হয়ে থাকতি।বুশরা না হয় কলকাঠি মেরেছে কিন্তু আমি তো কিছুই করি নি।হ্যাঁ মেঘকে আমি সেই ছোটবেলা থেকে ভালোবেসেছি।কিন্তু ওটাকে আমি আবেগ ধরে উড়িয়ে দিয়েছি।
-মিসআন্ডাস্ট্যান্ডিং হয়ে গেছে ভাই।
হাসার চেষ্টা করে বলে শুভ্র।মেঘ শান্তকে বলে,,
-আমাদের না হয় ব্যবস্থা করে দিলি কিন্তু তুই?
শান্ত পকেট থেকে কিছু কাগজপত্র বের করে বলে,,,
-স্কলার শীপ পেয়েছি।সামনে মাসে ইউএসএ যাবো।যাওয়ার আগে ভাবলাম দুটোকে মিলিয়ে দিয়ে যাই।আমি বিদেশে গিয়ে পড়াশোনা করতে লাগি।ততদিনে তোরাও তোদের ভাবি খুঁজে নে।
কথাটা বলেই হাসতে হাসতে শান্ত বেরিয়ে যায়।শান্ত বেরিয়ে যেতেই মেঘ শুভ্রকে জড়িয়ে ধরে।কান্নায় পাঞ্জাবি ভিজিয়ে দেয় মেঘ।শুভ্র মেঘকে থামাতে যেয়েও থেমে যায়।কাঁদুক মেয়েটা।খুশীর কান্না কাঁদতে কোনো বাঁধা নেই।তাছাড়া এই প্রথম মেঘ শুভ্রকে জড়িয়ে ধরেছে।তার শক্ত করে।তাই শুভ্রও মেঘকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে।মেঘ কাঁদতে কাঁদতে বলে,,,
-শান্ত ভাইয়া ঠিকই বলেছে।ও না থাকলে আমরা দুইজনই দেবদাস হয়ে থাকতাম।আমাদের মিসআন্ডাস্ট্যান্ডিং কখনো কাটতো না।
-সত্যিই বলেছ মেঘ।কিন্তু আমারই দোষ বেশি।মনে মনে কত কাহিনি ই না সাজিয়েছিলাম।শান্ত আমায় চিরদিনের জন্য ঋণী করে দিলো।
সমাপ্ত