মিসআন্ডারস্ট্যান্ডিং পর্ব ৪

0
980

#মিসআন্ডারস্ট্যান্ডিং
#লুৎফুন্নাহার_আজমীন(#কন্ঠ)
#পার্ট৪

(অনুমতি ব্যতীত কপি করা নিষেধ)

-বিয়েতে কোনো চাঁদা বাজি চলবে না।গার্লস সাইড প্লিজ।আমরা ভাবিকে নিতে এসেছি।
-হেয় মিস্টার!অনুপু আপনার ভাবি হওয়ার আগে আমার বোন বুঝলেন?তাই আমার বোনকে নিতে হলে আমাদের শর্ত মানতে হবে।

কারও চাঞ্চল্য কন্ঠে কথাটা শুনে এদিক ওদিক তাকায় শুভ্র।শুভ্রকে এদিক ওদিক তাকাতে দেখে মেঘ আবার বলে,,,

-এদিক ওদিক কি তাকাচ্ছেন মিস্টার তালগাছ!আমি আপনার সামনেই তো আছি।

কথাটা শুনে শুভ্র সামনে তাকিয়ে একটা ছোট পুতুলের মতো মেয়েকে দেখতে পায়।হেমন্তের শুরু হিমেল হাওয়ায় মেয়েটার শ্যাম্পু করা ঝড়ঝড়ে চুল গুলো এলোমেলো ভাবে উড়ছে।হাতে বরণের ডালা নিয়ে অবাধ্য চুল গুলোকে সামলানো মেয়েটার পক্ষে যে খুব কষ্ট সাধ্য হয়ে পড়েছে তা মেয়েটার চেহারা দেখলেই বোঝা যাচ্ছে।শুভ্র মেয়েটার দিকে তাকিয়ে বলে,,,

-তুমি?
-কনের চাচাতো বোন।
-এই বাচ্চা মানুষ গেট ধরে না।যাও বাবু খেলো গিয়ে।
-বাবু চলো কাকে চাচ্চু?আমি ক্লাস টাইনে পড়ি বুঝলে?

কোমরে হাত দিয়ে বলে মেঘ।এ তো দেখছি ছোটা প্যাকেট বাড়া ধামাকা!পিচ্চি মেয়ের তেজ দেখেছো?শুভ্রে মতো সদ্য বিশে পা দেওয়া তরুণকে চাচ্চু বলে আখ্যায়িত করছে!

-হাজার দশেকের মধ্যে ব্যাপারটা মিটমাট করে নিলে হয় না?

বর মানে শুভ্রের ফুফাতো ভাই বুখারী বলে।কিন্ত ওই মেঘ!সে তার সিদ্ধান্তে অনড়। বিশ হাজার টাকা না দেওয়া পর্যন্ত বর ঢুকতে পারবে না।অবশেষে দড় কষাকষিতে কনে পক্ষই জিতে।
কনে পক্ষ জিতে যাওয়ার বর পক্ষের মানুষজন উঠে পড়ে লাগে কনে পক্ষকে শায়েস্তা করার জন্য।শুভ্র খুব ভালো ছবি তুলতে পারে।সেই জন্য বুখারীর বিয়েতে ফটোগ্রাফারের দায়িত্বটা শুভ্রই পায়।মেঘ খুব হাল্কা সাজে বিয়েবাড়িতে এসেছে।চোখে মোটা করে কাজল,কপালে টিপ,ঠোঁটে হাল্কা রঙের লিপস্টিক, হাতে রূপালি চুড়ি আর হাল্কা রঙ্গের শাড়িতে মেঘকে রূপকথার রাজকন্যার মতো লাগছে।ভারি মেকাপ করা শত মেয়ের ভীড়ে শুভ্রের নজর বারবার ওই মেঘের ওপরই গিয়ে পড়ছে।শুভ্রও সুযোগ বুঝে মেয়েটাকে ফ্রেমবন্দী করছে।হঠাৎ করেই শুভ্রর মাথায় একটা দুষ্টু বুদ্ধি চাপে।সে একটা টমেটো আনে।তারপর মেঘের কাছে যায়,,,

-হ্যালো মিস।

হঠাৎ করে শুভ্রের ভুতের মতো এসে হাজির হওয়ায় মেঘ ভড়কে যায়।একটা কৃত্রিম হাসি দিয়ে বলে,,

-হাই!
-ইফ ইউ ডোন্ট মাইন্ড!আমি কি আপনার ছবি তুলতে পারি?

মেঘ যেন এই সুযোগেরই অপেক্ষায় ছিলো।মেঘ ছবি তুলতে বড্ড ভালোবাসে।এলার্জির কারণে যদিও অত ভালোভাবে সাজা হয় নি।ব্রণের দাগ ঢাকতে শুধু একটু কনসিলার দিয়েছিলো মুখে তাতেই এলার্জি উঠে যা তা অবস্থা।শেষে বাধ্য হয়ে ওই একেবারে সাধারণ হাল্কা সাজই দিতে হলো মেঘকে।মেঘ সব সময় চিকন করে কাজল দেয়।কিন্তু এইবার কোনো কারণে বেশ মোটা করে কাজল দিয়েছে সে।কিন্তু এখন কোন কারণে এই মোটা করে কাজল দেওয়ার কারণে সে শঙ্কায় আছে।কাজল লেপ্টে গেলে তো মেঘকে পুরো পেত্নীর মতো লাগে।অনুপুর কাছে শুনেছে সে বিয়েবাড়িতেই নাকি বুখারীর সাথে অনুর পরিচয় এবং সেখান থেকেই ওদের প্রেম।মেঘের দুরন্ত কিশোরী মনও এই আশায় ছিলো যে বিয়েবাড়িতে সেও কারও নজরে পড়ে তার প্রিয়পাত্র হয়ে যাবে।কিন্তু তাতে সেগুরে বালি।ইতিমধ্যে মেঘ আন্দাজ করতে পেরেছে তার কাজল লেপ্টে যাচ্ছে।খুব তাড়াতাড়িই তাকে ভুতের মতো দেখা যাবে।ছবি তোলার কথা শুনে মেঘ ফোনের স্ক্রিনে নিজেকে দেখে।নাহ,কাজল লেপ্টে যায় নি।কাঁধের সামনে কিছু চুল এনে হাতের সরু আঙুল দিয়ে আঁচড়ে মেঘ শুভ্রকে বলে,,,

-চলুন।ছবি তুলে দিবেন!

বেশ কয়েকটা ছবি তোলার পর শুভ্র মেঘকে চেয়ারে বসতে বলে।মেঘ বসার আগে শুভ্র চেয়ারটায় টমেটো রেখে দিয়েছিলো।মেঘ বসতেই টমেটোটা ফেটে মেঘের শাড়িতে লেগে যা তা অবস্থা।শাড়িতে টমেটো লেগেছে বুঝতে পেরে মেঘের চেহারা বাংলার পাঁচের মতো হয়ে যায়।নাক শিটকিয়ে কিছু সময় সে চেয়ারে বসে থাকে।শুভ্রও ঝট করে তা ক্যামেরাবন্দী করে ফেলে।ভরা অনুষ্ঠানে মেঘ এমন অপমান সইতে পারে না।চাপা কান্না নিয়ে মেঘ সে স্থান ত্যাগ করে।মেঘের এমন আচরণ শুভ্রের মনে দাগ কাটে।বেশি করে ফেলেনি তো শুভ্র?

ঘরে গিয়ে মেঘের সে কি কান্না!অনুষ্ঠান বাড়িতে এভাবে মেয়েকে কাঁদতে দেখে মেজাজ বিগড়ে যায় মিসেস মিতুর।উনি গিয়ে মেয়েকে আরও বকাঝকা করতে লাগেন।মায়ের বকা খেয়ে মেঘের কান্নার মাত্রা আরও বেড়ে যায়।শেষে অনুর মা এসে মেঘকে বুঝিয়ে শুনিয়ে পরিষ্কার করে আবার অনুষ্ঠানে পাঠান।ছাদের এক পাশে ছোট করে স্টেজ সাজানো হয়েছে সেখানে বরের সাথে বসে আছে ধুসর বর্ণের চোখের সেই বজ্জাত ছেলেটা।মেঘ গিয়ে সেখানে বসে।মেঘকে দেখেই শুভ্র বলে উঠে,,,

-সামান্য বিষয় নিয়ে কেঁদে এভাবে চোখ মুখ ফুলায় কেউ?

মেঘ কথার উত্তর দেয় না।উঠে চলে যায়।বিয়ে পড়ানো হয়ে গেলে বর কনে একসাথে খাওয়ার প্রস্তুতি নেয়।মেঘ ইতিমধ্যে অনুকে নিয়ে এসেছে।বুখারী উঠতে যাবে ঠিক তখনই দেখে বুখারী আর শুভ্রের জুতো জোড়া মিসিং।নিশ্চয়ই এইগুলো কনে পক্ষের মেয়েদের কাজ।শুভ্রের সন্দেহ হয় মেঘের ওপর।কারণ বোনে অন্যান্য বোনরা নিজেদের নিয়ে ব্যস্ত।আর মেঘ বেশ কয়েকবার এসে পাশে বসেছে।এবং কোনো কথা না বলেই উঠে গিয়েছে।শুভ্র চিৎকার দিয়ে বলে,,,

-জুতো কই?
-আওয়াজ নিচে মিস্টার, আওয়াজ নিচে।এইটা আমার এরিয়া আপনার না।সো এইখানে আমার দাদাগিরি চলবে।

মেঘ বলে।

-পিচ্চি তুমি কিন্তু বেশি করতেছো!
-আমার শাড়ি নষ্ট করলেন ওইটা বেশি হয় নাই?ঠান্ডায় শাড়ি তো আমারই পরিষ্কার করা লাগলো।কিছুক্ষণ ঠান্ডায় থাকেন খালি পায়।শরীরের চর্বি জমে যাবে।
-মেঘ এমন করছিস কেন?দিয়ে দে না জুতো!

অনু বলে।মেঘ অনুর কথার জবাবে বলে,,

-তুই বিয়ের কনে তুই চুপ করে লজ্জা পেয়ে বসে থাকবি। তুই কথা বলতে আসিস কেন?আর তোর বর দেবরকে বলে দে দশ হাজার টাকা না দিলে জুতা দেবো না।
-ভাইয়া তুই বিয়ে করতে আসছিস না চাঁদা দিতে আসছিস আমি বুঝতে পারছি না।

বুখারীকে শুভ্র বলে।মেঘ আবার শুভ্রের কথার প্রতিউত্তর দেয়।লেগে যায় দুইজনের মধ্যে তুমুল ঝগড়া।অবশেষে ছয় হাজার টাকা দিয়ে বুখারী আর শুভ্র নিজেদের জুতা পায়।লম্বা মানুষের হাত পা বেশ বড় থাকে।মেঘ যখন শুভ্রকে জুতা জোড়া দিচ্ছিলো তখন ভরা বিয়ে বাড়িতে শুভ্রকে মেঘ হেয় করে বলে,,,,

-পা তো নয় যেন বড় সাইজের থালা!
-সবাই তো আর আপনার মতো লিলিপুট সাইজের হয় না পিচ্চি!

বিদায় বেলায় অনুর সাথে মেঘকে পাঠানো হয় অনুর শ্বশুর বাড়ি।সেখানে গিয়ে শুরু হয় আরেক দফায় ঝগড়া।বরপক্ষের ছেলেপেলে অনু আর মেঘের জুতো লুকোয়।ঠান্ডায় কনক্রিটের মেঝেতে মেঘের হাঁটতে কষ্ট হয়।অনু না হয় নতুন বউ তাই ওর অত হাঁটাহাঁটি করার প্রয়োজন হচ্ছে না।আর মেঘ তো ঘর ওই ঘর করতে শুধু।বিয়ে বাড়িতে বর কনেই শুধু রিলাক্সে থাকে।বাকিদের তো ব্যস্ততার শেষ থাকে না।বুখারী শুভ্র সহ বাকি কাজিনদের কাছে বউ আর শ্যালিকার জুতা পাওয়ার জন্য কোড়জোর করছে।

-বিশ হাজার না দিলে জুতা পাবি না ভাইয়া।
-আরেহ পাগল নাকি।দেড়শো টাকা স্যান্ডেলের জন্য আমি তোদের বিশ হাজার টাকা দেবো?
-শ্বশুর বাড়ির লোককে যে গুণে গুণে তিরিশ হাজার টাকা দিলে?আর আমরা বিশ হাজার চাইলেই দোষ?ওই পিচ্চি মেয়েকেই তো দিলে দশ হাজার!
-দুলাভাই এগেইন!আমায় এই লম্বুস ইনসাল্ট করলো!

বুখারী মেঘকে থামিয়ে শুভ্রকে বলে,,

-পাঁচশো দিচ্ছি জুতা দিয়ে দে ভাই!
-বিশ দিবা বিশ।
-পাঁচশো।
-নাহ বিশ!তার মধ্যে আবার তোমার বাসর ঘর সাজিয়েছি।আমরা চল্লিশ ডিজার্ভ করি।বিশ তো কম হয়েছে!
-চল্লিশ হাজারে আমি আবার আরেকটা বিয়ে করে ছোটখাটো অনুষ্ঠান করতে পারবো।
-তো যাও করো গিয়ে বিয়ে।

মুখ টিপে হেসে বলে শুভ্র।শুভ্রের কথা শুনে বাকিরাও হেসে দেয়।মেঘও হাসি ধরে রাখতে পারে না।পাশে খাটে বসে থাকা অনুকে বলে,,,

-দেখ আপু তোর জামাই আবার বিয়ে করবে বলছে!
-করলে তোমার বোনকেই করবো।মরুভূমিতে যেমন পানি নাই,ঠিক তেমন তোমার বোন ছাড়া আমার হৃদয়ে কোনো নাই
-বাব্বাহ!লয়ালিটি

ভেংচি কেটে বলে মেঘ।

চলবে,,,ইনশাআল্লাহ

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here