মিশে আছো মুগ্ধতায় -7

0
1109

#মিশে_আছো_মুগ্ধতায়
#লেখিকাঃতানিশা_আহিয়াদ_তিশা
#পর্বঃ7

সন্ধ‍্যা 07:00

ড্রইংরুমের সোফায় বসে মনোযোগ দিয়ে বই পড়ছিলো মায়া আর দিশা। হঠাৎ বাসার কলিংবেল বেজে উঠায় দিশা বই টা রেখে দিয়ে বসা থেকে উঠে দরজাটা খুলে দিলো। দরজা খুলতেই দেখলো ওর সামনে মিড়া রহমান দাড়িয়ে আছে। মিড়া রহমানকে দেখে দিশা ভিষন অবাক হলো। কারন এই বাসায় আসার পর থেকে মিড়া রহমান কখনো ওদের সাথে ঠিক ভাবে কথাও বলেনি। অথচ আজকে একদম দরজার সামনে হাজির হয়েছে ব‍্যাপারটা দিশার কেনো যেনো হজম হচ্ছে না। দিশা সব ভাবনা সাইডে রেখে হালকা একটা হাসি দিয়ে মৃদ‍্যু স্বরে বললো

“আসসালামু অলাইকুম আন্টি। কেমন আছেন?”

মায়া এতোক্ষন মনোযোগ দিয়ে বই পড়ছিলো। দিশার মুখে আন্টি ডাক শুনে ‘ও’ মাথা উঠিয়ে সামনে তাকালো। তাকাতেই মায়ার চোখ মিড়া রহমানের উপর দৃষ্টি পড়তেই ওর চোখে মুখে স্পস্ট রাগের ছাপ ফুটে উঠলো। মিড়া রহমান খানিকটা গম্ভীর স্বরেই দিশার দিকে তাকিয়ে বললেন

“অলাইকুমুস সালাম। আলহামদুলিল্লাহ্ ভালো আছি।”

এইটুকু বলে মিড়া রহমান ঘাড় খানিকটা কাৎ করে মায়ার দিকে তাকালো। তারপর আবারো দিশাকে উদ্দ‍্যেশ‍্য করে বললো

“সবাই তো নিচে আছে। তাহলে তোমরা দুজন নিচে যাওনি কেনো?”

দিশা খানিকটা আমতা আমতা করে বললো

“আসলে আন্টি পার্টি,হৈ হুল্লোর এসব মায়া তেমন একটা পছন্দ করে না। সব সময় একা থাকতেই ওর বেশি ভালো লাগে। তাই ‘ও’ সহযে কোথাও যেতে চায় না। আর ওকে একা ফেলে রেখে আমারও যাওয়া হয় না।”

মিড়া রহমান কিছুটা নরম কন্ঠে বললো

“ওখানে তেমন ভাবে কোনো পার্টি,টার্টি হচ্ছে না। আসলে আমার ছোট মেয়ে আর তার বন্ধুরা এসেছে ইউরোপ থেকে। তাই আরকি ওরা নিচে বসে আড্ডা দিচ্ছে। সাথে অন‍্যান‍্য ফ্লাটের ইয়াং ছেলে মেয়েরাও আছে। তোমরাও চাইলে জয়েন হতে পারো।”

মিড়া রহমানের মুখে ছোট মেয়ে কথাটা শুনে মায়ার কলিজাটা ছ‍্যাৎ করে উঠলো। হুট করেই ওর চোখটা ছলছল করে উঠলো। এই ডাকটা তো শুধুমাত্র ওর জন‍্যে ছিলো। ওর মায়ের সব ভালোবাসা তো শুধু ওর পাওয়ার কথা ছিলো। অথচ ভাগ‍্যের এক অদ্ভুত খেলায় ওর ভাগের ভালোবাসাটা অন‍্য কেউ পাচ্ছে। দিশা ঠোটের কোনে একটা বাকা হাসি ঝুলিয়ে বললো

“ওহ আচ্ছা!আপনার ঠোট মেয়ে ব‍্যাক করেছে? তাহলে তো তার সাথে মিট করার জন‍্যে হলেও একবার আমাদের নিচে যেতেই হবে।”

“আচ্ছা ঠিকাছে,আমি গেলাম তোমরা আস্তে আস্তে আসো।”

কথাটা বলে মিড়া রহমান লিফটের দিকে এগিয়ে গেলেন। তারপর কিছু একটা মনে করে আবার এসে দিশার সামনে দাড়িয়ে একটু ইতস্তত করতে করতে বললেন

“তোমাদের নতুন বাসা খোজার কোনো দরকার নেই। যতোদিন ইচ্ছে এখানে থাকতে পারো। কেউ তোমাদের বাসা ছেড়ে দেওয়ার জন‍্যে বলবে না।”

কথাটা বলে মিড়া রহমান আর এক মুহূর্তও ওখানে দাড়ালেন না। লিফটের জন‍্যে অপেক্ষা না করে সিড়ি দিয়েই নিচে নেমে চলে গেলেন। উনি চলে যেতেই দিশা দরজাটা বন্ধ করে দিয়ে মায়ার দিকে তাকিয়ে শয়তানি একটা হাসি দিয়ে বললো

“মায়া বেপি চলো আমরা একটু আসল মেঘকে দেখে আসি। আমার তো অনেক দিনের ইচ্ছে ম‍্যাডামকে দু চোখ ভড়ে দেখে চোখ জোড়া সার্থক করবো।”

মায়া বসা থেকে দাড়িয়ে রুমের দিকে যেতে যেতে বললো

“আমার এসবে কোনো ইন্টারেস্ট নেই। তোর ইচ্ছে হলে তুই গিয়ে দেখে আয়।”

দিশা দ্রুত এসে মায়ার এক হাত টেনে ধরে ওকে থামিয়ে দিয়ে বললো

“ইন্টারেস্ট নেই বললে তো হবে না মায়া। একবার যখন এখানে এসেই পড়েছিস তখন এভাবে সবাইকে ছেড়ে দিয়েই চলে যাবি? নিজের অধিকারটা আদায় করে নিবিনা? ভুলে যাসনা এই সব কিছুর উপরে একমাএ তোর অধিকার।”

মায়া ব‍্যাজ্ঞাত‍‍্যেক একটা হাসি দিয়ে বললো

“কিসের আধিকার? এদের কারো উপর আমার কোনো অধিকার নেই। এরা আমার কেউ না। এতোগুলো বছর আমি যেভাবে এদের ছাড়া থেকেছি,ভবিষ‍্যতেও এদের ছাড়াই ঠিক এভাবে থাকবো। আমার লাইফে এদের কারোর কোনো জায়গা নেই। তবে হ‍্যা অন‍্যে কেউ এখানে মেঘ সেজে থাকবে সেটাও আমি কখনো হতে দিবো না।”
______________________

মায়া আর দিশা নিচে এসে সুমিংপুল এড়িয়াতে আসতেই ওদের চোখ গেলো এক কর্নারে। যেখানে চেয়ারের উপর মিহির মাথা নিচু করে চুপচাপ বসে আছে। ওর এক পাশে আহান ল‍্যাপটপ নিয়ে বসে বসে কাজ করছে। অন‍্যপাশে হিয়ান আর আলিশা বসে টুকিটাকি কথা বলছে। মায়া আর দিশা আরেকটু এগিয়ে যেতেই দেখলো এখানে এই বাসার প্রায় সব ফ্লাটের ছেলে মেয়েরাই উপস্থিত আছে। সবাই নিজেদের মতো কথা বলায় ব‍্যাস্ত। কিছুটা দূরে স্পিকারে সফট মিউজিক বাজছে। বিভিন্ন রঙের লাইটের আলোতে সুমিংপুলের পানিটা একেক সময় একেক রং ধারন করছে। আপাততো জায়গাটা দেখে মনে হচ্ছে এটা কোনো পুল সাইটের রেস্টুরেন্ট।

চারপাশ থেকে হালকা বাতাস এসে মায়ার শরীর ছুয়ে যেতেই,ওর মনটা নিমিষেই ভালো হয়ে গেলো। ওরা আরেকটু ভিতরের দিকে যেতেই আলিশার হাত উঠিয়ে ইশারা দিয়ে ওদের ডাকলো। আলিশা ডাকতেই মায়া আর দিশা ধীর পায়ে ওদের দিকে এগিয়ে গেলো। আলিশা একটা ভুবন ভোলানো হাসি দিয়ে বললো

“যাক মহা রানীদের সবেমাএ আসার সময় হলো তাহলে? আমি,সাড়িকা,সাঈফা এতোক্ষন তোমাদের আসারই অপেক্ষা করছিলাম।”

আলিশার কথা শুনে আহান ল‍্যাপটপ থেকে মুখ উঠিয়ে এক পলক মায়ার দিকে তাকালো। তারপর আবার মাথা নিচু করে টাইপ করতে করতে পিঞ্চ করে বললো

“আমার মনে হচ্ছে ওনারা এতোক্ষন স্পেশাল ইনভিটিশনের জন‍্যে ওয়েট করছিলেন। আসলে স্পেশাল গেস্ট তো তাই সবার সাথে এখানে আসতে বোধহয় লজ্জা পাচ্ছিলেন। তাই মামনি গিয়ে ইনভাইট করার পর ওনারা এখানে আসলেন।আমি ঠিক বলছি না মিস মায়া?”

আহানের কথা শুনে মায়া চোখ ছোট ছোট করে আহানের দিকে তাকালো। ‘ও’ এটাই বুঝতে পারে না এই ছেলের আসলে প্রভলেম টা কি? যখন তখন কোনো কারন ছাড়াই কেনো ওর পিছনে লাগতে চলে আসে? মায়ার হুট করেই মনে পড়ে গেলো কয়েকদিন আগে ছাদে বসে আহানের মারা চড়টার কথা। চড়টার কথা মনে পড়তেই মায়ার মেজাজ বিগড়ে গেলো। ‘ও’ রাগি দৃস্টিতে আহানের দিকে তাকিয়ে রইলো। দিশা গিয়ে আহানের পাশের চেয়ারটায় ধপ করে বসে পড়ে বললো

“ওকে কি জিজ্ঞেস করছেন ভাইয়া? আমি বলছি, আমরা দুজন এতোক্ষন কেনো এখানে আসিনি। আসলে আমরা ভেবেছিলাম আপনি নিজে গিয়ে আমাদের এখানে নিয়ে আসবেন। তাই তো এতোক্ষন আপনার জন‍্যে আমরা ওয়েট করছিলাম। কিন্তু আপনি তো আমাদের ভুলে গিয়ে এখানে বসে দিব্বি সবার সাথে আড্ডা দিয়ে যাচ্ছেন।”

আহান হালকা হেসে বললো

“ওহ হো! তাহলে তো ভুলটা আমারই হয়েছে। আমার গিয়েই তোমাদের স্পেশাললি ইনভাইট করে নিয়ে আসা উচিৎ ছিলো। ওকে আই অ‍্যাম সরি! এরকম আর কখনো হবে না। এরপর থেকে আমি নিজে সাথে করে হেলিকপ্টার নিয়ে গিয়ে তোমাদের নিয়ে আসবো। এইবার ঠিকাছে?”

দিশা বাচ্চাদের মতো হেসে কুটিকুটি হয়ে বললো

“হ‍্যা একদম ঠিকাছে।”

মায়া আহান আর দিশার কথা শুনে মুখ বাকিয়ে মনে মনে বললো:- ‘এ‍্যাহ কথা শুনে তো মনে হচ্ছে এরা একে অপরকে কতো বছর ধরে যেনো চিনে। যএসব ঢং দেখলে আর বাচিনা।’ মায়ার ভাবনার মাঝেই আহান হাতে থাকা ল‍্যাপটপটা বন্ধ করে সাইডে রেখে মায়াকে উদ্দ‍্যেশ‍্য করে বললো

“কি হলো ম‍্যাম এবার কি বসার জন‍্যেও আপনাকে আলাদা করে ইনভিটিশন লেটার পাঠাতে হবে?”

আহানের কথা শুনে মায়া একটা ভেংচি কেটে আলিশার পাশের চেয়ারটায় বসে পড়লো। মায়া বসতেই কোথা থেকে আহির এসে ওর পাশের চেয়ারটায় ঠাস করে বসে পড়ে রাগি কন্ঠে বললো

“ইয়ার মিহির আমার আর এসব ভালো লাগছে না। এসব ন‍্যাকামো দেখার ইচ্ছে বা সময় কোনোটাই আমার কাছে নেই। রাগে আমার দম বন্ধ হয়ে আসছে।প্লিজ চল তো এখান থেকে।”

মিহির এতোক্ষন মাথা নিচু করে নিচের দিকে তাকিয়ে ছিলো। আহিরের কথা শুনে মিহির ঘাড় বাকিয়ে ওর দিকে তাকিয়ে দাতে দাত চেপে বললো

“তোর কি মনে হচ্ছে এখান থেকে যেতে পারলে আমি এখনো এখানে চুপচাপ বসে এসব ম‍্যালোড্রামা দেখতাম? আমার সবকিছু অসহ‍্যে লাগছে ইচ্ছে করছে সবকিছু ভেঙে গুড়িয়ে দিতে। আর ওই মেয়েটাকেও জানে মেরে ফেলতে ইচ্ছে করছে।”

মিহির আর আহিরের কথা শুনে হিয়ান একটা ধমক দিয়ে বললো

“কি সব বলছিস তোরা? মাথাটা কি পুরোটা খারাপ হয়ে গেছে? তোরা কি ভুলে যাচ্ছিস ওই মেয়েটা তোদের বোন হয়?”

মিহির বললো

“ভুল কথা বললে ভাইয়া। ওই মেয়েটা আমাদের বোন হয় না। ওটা শুধুমাত্র আম্মুর ছোট মেয়ে দ‍্যাটস ইট। ‘ও’ আমার আর আহিরের কিছুই হয় না।”

মিহিরের কথা শেষ হতেই পিছন থেকে কেউ কাদো কাদো কন্ঠে বলে উঠলো

“দেখেছো মম ভাইয়ারা আমার সাথে কেমন বিহেব করছে? বলছে আমি নাকি ওদের বোন না। ওরা দুজন সব সময় আমার সাথে এরকম করে। আমাকে ওরা একটুও ভালোবাসে না।”

মেয়েলি স্বরে কথা গুলো শুনে মায়া,দিশাসহ সবাই ঘাড় ঘুড়িয়ে পিছনে তাকালো। পিছনে তাকাতেই দেখতে পেলো মিড়া রহমান রাগি দৃস্টিতে মিহিরের দিকে তাকিয়ে আছে। আর ওনার পাশে ওয়েস্টার্ন ড্রেস পড়া একটা মেয়ে কাদো কাদো ফেইস করে দাড়িয়ে আছে। মেয়েটাকে দেখে মায়া আর দিশার চিনতে এক সেকেন্ডও সময় লাগলো না। তবে মেয়েটাকে বেশ ভালো করে চেনার পরেও ওরা কিছুই বললো না। চুপচাপ তামাশা দেখতে লাগলো।

মিড়া রহমান রেগে মিহিরকে কিছু বলতে যাবে তার আগেই মিহির বসা থেকে দাড়িয়ে মেয়েটার সামনে গিয়ে বললো

“খবরদার একদম আমাকে ভাইয়া বলে ডাকবে না। আমি তোমার ভাই না বুঝতে পেরেছো? আর ভালোবাসা মাই ফুট! যেখানে তোমাকে দেখলেই আমার মেজাজ খারাপ হয়ে যায় সেখানে ভালোবাসা তো অনেক দূরের ব‍্যাপার।”

মিহিরের কথা শেষ হতেই মিড়া রহমান রাগি কন্ঠে বললেন

“মিহির মুখ সামলে কথা বলো। তোমার সাহস কিভাবে হয় আমার মেয়ের সাথে এভাবে কথা বলার? ভুলে যেওনা আমি তোমাকে যতোটা ভালোবাসি,ওকেও কিন্তু ততোটাই ভালোবাসি। তাই পরের বার থেকে আমার মেয়েকে কিছু বলার আগে একশো বার ভেবে বলবে। নাহলে তোমার গায়ে হাত তুলার আগে আমি দ্বীতিয়বার ভাববো না।”

“ওহ গ্রেট!তাহলে তুমি তোমার মেয়েকে নিয়েই থাকো। মনে হয়না আমাকে তো তোমার কোনো দরকার আছে।”

কথাটা বলে মিহির হনহন করে ওখান থেকে বাসার ভিতরে চলে গেলো। ওর পিছনে পিছনে আহিরও ভিতরে চলে গেলো। ওরা যেতেই মেয়েটা মিড়া রহমানের এক হাত জড়িয়ে ধরে খানিকটা ন‍্যাকা কান্না করতে করতে বললো

“দেখেছো মম ভাইয়া আমাকে কতোটা হেট করে। আসলে ‘ও’ চায়না আমি এখানে এসে তোমার সাথে দেখা করি। তাই সব সময় এরকম করে। ‘ও’ আমাকে সহ‍্যেই করতে পারে না। তাই তো আমি এখানে যতোবার আসি ততোবারই ‘ও’ আর আহির ভাইয়া আমাকে অপমান করে।”

মিড়া রহমান এক হাত মেয়েটার গালে রেখে আদুরে কন্ঠে বললো

“কাদে না মামনি। মিহির তোমাকে মোটেও হেট করে করে না। আসলে ছোট বেলার রাগটা হয়তো ওর এখনো তোমার উপরে রয়ে গেছে। তাই ওরা দুজন এরকম করে। তুমি ওদের কথায় কস্ট পেও না মামনী। দেখবে আস্তে আস্তে সব ঠিক হয়ে যাবে।এখন যাও উপরে গিয়ে রেস্ট নাও।”

মেয়েটা মিড়া রহমানকে ছেড়ে দিয়ে বললো

“না মম আমি আরো কিছুক্ষন এখানে থাকবো। তুমি যাও উপরে গিয়ে রেস্ট করো।”

মেয়েটার কথা শুনে মিড়া রহমান মৃদ‍্যু হেসে “ঠিক আছে” বলে বাসার ভিতরে চলে গেলেন।উনি চলে যেতেই মেয়েটা গিয়ে মিহিরের চেয়ারটায় বসে আহানের দিকে হাত বাড়িয়ে বললো

“হ‍্যালো আহান!কেমন আছো?”

আহান গম্ভীর কন্ঠে বললো

“আমার যতোদূর মনে হয় আমি আপনার থেকে বয়সে অনেকটাই বড় মিস হোয়াট এভার। তাই আমার নাম ধরে না ডেকে আমাকে ভাইয়া বলে ডাকলে বেশী খুশী হবো। আশা করি কথাটা মনে রাখবেন?”

কথাটা বলে আহান মেয়েটার সাথে হ‍্যান্ডশেক না করেই হনহন করে ওখান থেকে চলে গেলো। মেয়েটা নিজের হাতটাকে চেয়ারের সাথে হালকা পাঞ্চ করে বিরবির করে বললো

“তোমাদের সবাইকে আমি দেখে নিবো।”

কথাটা বলে মেয়েটা রাগে ফুসতে ফুসতে ওর ফ্রেন্ডদের কাছে চলে গেলো। মেয়েটা যেতেই হিয়ান বললো

“ভাবতেই কস্ট হচ্ছে যে এটা সত‍্যিই আমাদের মেঘ। মেয়েটার পোশাক,হাটা চলা,কথা বার্তার ধরন সব কিছু কেমন উশৃঙ্খল টাইপ। ব‍্যাবহারের মধ‍্যে কোনো ভদ্রতা নেই। সব কিছুতেই কেমন একটা উগ্র উগ‍্র ভাব। একটা মানুষ বড় হওয়ার পর কি এতোটা চেইঞ্জ হয়ে যেতে পারে?”

আলিশা একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বললো

“হয়তো মাকে ছাড়া বড় হয়েছে। তাই এরকম বেপরোয়া টাইপ হয়ে গেছে।”

হিয়ান শান্ত কন্ঠে বললো

“সত‍্যিই কি তাই আলিশা? তাহলে তো মায়ারও ওর মতো উগ্র হওয়া উচিৎ ছিলো। ‘ও’ তো মা ছাড়াই বড় হয়েছে।”

হিয়ানের কথার প্রতি উওরে আলিশা বলার মতো কিছুই খুজে পেলো না। সত‍্যিই তো মায়ার মধ‍্যে তো ‘ও’ কখনো উগ্র কোনো স্বভাব দেখেনি। কিভাবেই বা দেখবে মেয়েটা সত‍্যিই অনেকটা মিস্টি স্বভাবের। এক বার কথা বললে যে কেউ অনায়াসেই মেয়েটার মায়ায় পড়ে যাবে। আলিশার ভাবনার মধ‍্যেই বেশ লম্বা আর উজ্জল শ‍্যামলা গায়ের রংয়ের একটা ছেলে এসে হিয়ানের দিকে হাত বাড়িয়ে দিয়ে বললো

“হাই! আমি অভি রহমান। মেঘের মেজ চাচ্চুর ছেলে।”

অভি নামটা শুনেই মায়ার ঠোটের কোনে হাসি ফুটে উঠলো। দিশা চোখ বড় বড় করে অভির দিকে তাকিয়ে বিরবির করে বললো

“এই ল‍্যাংরা বাদরটা এখানে কি করে?”

হিয়ান বসা থেকে দাড়িয়ে অভির সাথে হ‍্যান্ডশেক করে বললো

“হ‍্যা তোমার কথা অনেক শুনেছি। কিন্তু কখনো তোমার সাথে দেখা হয়নি। নাইস টু মিট ইউ। আমি হিয়ান মিহিরের বড় মামুর ছেলে। ”

ছেলেটা হালকা হেসে বললো

“হ‍্যা আমাদের দেখা হয়নি ঠিকই। বাট আমি তোমাদের সবাইকে চিনি। ”

হিয়ান প্রশ্নবোধক দৃষ্টিতে অভির দিকে তাকিয়ে বললো

“কিভাবে?”

অভি ঘাড় বাকা করে মায়ার দিকে এক পলক তাকিয়ে বললো

“মেঘ আমাকে তোমাদের সবার ব‍্যাপারে সবটা বলেছে।”

অভি আরো কিছুক্ষন দাড়িয়ে দাড়িয়ে হিয়ান আর আলিশার সাথে কথা বললো। তারপর যেভাবে এসেছিলো সেভাবেই আবার মেঘদের কাছে চলে গেলো। ( বিঃদ্রঃ যতোদিন পর্যন্ত না নিউ মেঘের কোনো পরিচয় বের হচ্ছে ততোদিন পযর্ন্ত ওকে মেঘ বলেই ডাকা হবে)

অভি ওর বাবা মায়ের একমাএ ছেলে। অভির জন্মের পর ওর মায়ের কিছু সমস‍্যার কারনে উনি আর কোনো দিন বাচ্চা নিতে পারেননি। অভি পেশায় একজন ডাক্তার। আপাততো ‘ও’ ইউরোপের একটা হসপিটালে ডাক্তারি প্রাকটিস করছে।
________________________

রাত 12:00

ছাদের একপাশে দাড়িয়ে স্মোক করছে মিহির। হঠাৎ কেউ এসে ওর পিছন থেকে ভাউ করে চেচিয়ে উঠলো। আচৎমকা এমনটা হওয়ায় মিহির কিছুটা লাফিয়ে উঠলো। তারপর ঘাড় ঘুড়িয়ে পিছনে তাকিয়ে দেখলো সাঈফা হাসি হাসি মুখ করে ওর পিছনে দাড়িয়ে আছে। মিহির মুখ থেকে বিরক্তিকর একটা চ শব্দ উচ্চারন করে সামনের দিকে তাকিয়ে বললো

“তুই এতো রাতে এখানে কি করছিস?”

সাঈফা এগিয়ে এসে এক লাফ দিয়ে রেলিংয়ের উপরে উঠে বসে বললো

“তোমার খুজতে খুজতে চলে এলাম। কিন্তু এসে দেখছি তুমি সিগারেট গিলছো। এখন যদি আমি গিয়ে তোমার মাকে বলে দেই যে তুমি চুপিচুপি স্মোক করো। তাহলে তোমার কি অবস্থা হবে বলোতো?”

মিহির স্বাভাবিক ভাবেই বললো

“আর তার আগেই আমি যদি তোকে ধাক্কা দিয়ে এখান থেকে নিচে ফেলে দেই তাহলে তোর কি অবস্থা হবে বলতো?”

সাঈফা ভেংচি কেটে বললো

“কি আবার হবে? আমি এখান থেকে পড়ে পটল তুলবো। আর তুমি আমাকে খুন করার দায়ে ফাশিতে ঝুলবে।”

মিহির বিরক্তির স্বরে বললো

“সর তো যা এখান থেকে। বকবক করে আমার মাথা গরম করিস না।”

সাঈফা মুখ বাকিয়ে বললো

“ছাদটা কি তোমার একার নাকি যে তুমি বললেই আমি এখান থেকে চলে যাবো?”

মিহির দাতে দাতে চেপে বললো

“দেখ অযথা তর্ক করিস না। তাহলে কিন্তু সত‍্যি সত‍্যি তোকে আমি এখান থেকে ফেলে দিবো।”

“এই শোনো তোমার এসব কচু মার্কা হুমকি তুমি তোমার পকেটে ঢুকিয়ে রাখো। কি ভেবেছো আমাকে এভাবে হুমকি দিলেই আমি ভয় পেয়ে এখান থেকে পালিয়ে যাবো? কখনো না! আমি এখান থেকে কোথাও যাবো না।”

সাঈফার কথা শুনে মিহির কিছুক্ষন ওর দিকে রাগি দৃস্টিতে তাকিয়ে থেকে হাতে থাকা সিগারেট টা ছুড়ে নিচে ফেলে দিলো। তারপর সাঈফার দিকে এগিয়ে এসে ওকে একটা ধাক্কা দিয়ে আবার ওর এক হাত টেনে ধরলো। আকস্মিক ঘটনায় সাঈফা মৃদ‍্যু চেচিয়ে উঠলো। ‘ও’ ভিতু চোখে একবার পিছনে তাকাচ্ছে আরেক বার মিহিরের দিকে তাকাচ্ছে।কারন মিহির একবার হাতটা ছেড়ে দিলেই ‘ও’ সোজা নিচে গিয়ে পড়বে। সাঈফা মিহিরের হাত শক্ত করে খামচে ধরে তোতলাতে তোতলাতে বললো

“ভ-ভাইয়া ক-কি করছো এ-এটা? আমাকে নিচে ন-নামাও আ-আমি এখান থ-থেকে পড়ে যাবো তো।”

মিহির স্বাভাবিক ভাবেই বললো

“আমিও তো এটাই চাই যে তুই এখান থেকে পড়ে যাস।আর আমি সারাজিবনের মতো বেচে যাই।”

“কে বলেছে আমি পড়ে গিয়ে মরে গেলে তুমি বেচে যাবে?আমি মারা যাওয়ার পর পেত্নী হয়ে তোমার ঘাড়ে চাপবো। তাই বলছি আমাকে ফেলে দিও না প্লিজ।”

মিহির বললো

“তাই নাকি? তাহলে তো আমিও দেখতে চাই তুই মরার পর কিভাবে আমার ঘাড়ে চাপিস।”

কথাটা বলে মিহির সাঈফাকে আবার হালকা করে পিছনের দিকে একটা ধাক্কা দিলো। এতে সাঈফা আরো ভয় পেয়ে গিয়ে নিজের চোখ বন্ধ করে ভিতু কন্ঠে বললো

“ভাইয়া প্লিজ প্লিজ আমাকে এখান থেকে ফেলে দিও না। আমি আর কখনো তোমাকে জ্বালাবো না। মরার পর তো দূরের কথা বেচে থাকতে কোনোদিন তোমার আশেপাশে আসবো না। প্লিজ নামাও আমাকে ।”

সাঈফার কথা শুনে মিহিরের হাসি চলে আসলো। কিন্তু ‘ও’ ওর হাসি চেপে রেখে গম্ভীর কন্ঠে বললো

“সত‍্যি তো? পরে আবার এগুলো ভুলে যাবি না তো?”

সাঈফা দ্রুত বললো

“হ‍্যা সত‍্যি সত‍্যি। পরে কেনো মরার আগ পযর্ন্ত আমি কিছু ভুলবো না। সব আমার মনে থাকবে।”

“ওকে তাহলে এই বারের মতো বাচিয়ে নিচ্ছি।পরের বার থেকে যেনো কখনো এমন ভুল না হয়।”

কথাটা বলে মিহির সাঈফার হাত ধরে টান দিয়ে ওকে রেলিং থেকে নিচে নামিয়ে দিলো। সাঈফা নিচে নেমে বুকে হাত দিয়ে লম্বা কয়েকটা শ্বাস নিয়ে মিহিরের দিকে রাগি চোখে তাকালো। মিহির মুখ বাকিয়ে বললো

“হুহ এই সাহস নিয়ে আমার সাথে লাগতে আসিস?এই টুকুতেই বাঘিনি থেকে সোজা ভেজা বিড়াল হয়ে গেলি? এই তোর সাহসের নমুনা?”

মিহিরের কথা শেষ হতেই সাঈফা ওর গায়ে থু থু মারলো। তারপর বামে ডানে কোনোদিন না তাকিয়ে দিলো এক ভো দৌড়। সাঈফা কি করেছে সেটা মিহিরের মাথায় ঢুকতেই ‘ও’ জোড়ে চিল্লিয়ে বললো

“ইয়াক ছিহ!সাঈফার বাচ্চা এটা কি করলি তুই?ওহ গড!আমি তোকে খুন করে ফেলবো বেয়াদব মেয়ে।”

চলবে

বিঃদ্রঃ এতো দিন অনেক অসুস্থ ছিলাম। তাই গল্প লেখার কোনো মন মানষিকাতাই ছিলো না। তাছাড়া লেখাপড়ার চাপ তো আছেই।তারপরেও এতো লেইট করে গল্প দেওয়ার জন‍্যে আমি সত‍্যিই খুব দুঃখিত।আশা করি সবাই আমার প্রভলেমটা বুঝবেন।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here