#মিশে_আছো_মুগ্ধতায়
#লেখনীঃতানিশা_আহিয়াদ_তিশা
#পর্বঃ27
সকাল সকাল রেডি হয়ে তাড়াহুড়ো করে নিচে নামতেই মিড়া রহমান এসে মেঘের সামনে দাড়ালো। মিড়া রহমানকে গম্ভীর মুখে নিজের দিকে তাকাতে দেখে মেঘ ভ্রু কুচকে ওনার দিকে তাকালো। উনি কিছুটা রাগি স্বরে মেঘকে উদ্দ্যেশ্য করে বললেন
“একটু সময়ের জন্যে বাড়িতে ছিলাম না। সেই সুযোগে তিন ভাই-বোন লাফাতে লাফাতে বাইরের খাবার খেতে চলে গেছো? বাইরের উল্টাপাল্টা খাবার খেয়ে যদি তোমাদের পেট খারাপ হতো, তখন কী হতো?”
মিড়া রহমানের কথা শুনে মেঘ ঠোট ফুলিয়ে বললো
“উফফো মাম্মাম, আমরা কেউই বাচ্চা নই যে বাইরের খাবার খেলে আমাদের পেট খারাপ হবে। অযথা আমাদের নিয়ে টেনশন করাটা বন্ধ করো তো।”
মিড়া রহমান চোখ ছোট ছোট করে বললেন
“তোমরা বাচ্চাদের থেকেও ভয়ংকর মা। তোমাদের থেকে যদি দুই বছরের তিনটা বাচ্চাকেও আমাকে সামলাতে দেওয়া হতো তাহলেও আমার এতোটা চিন্তা হতো না। যতোটা চিন্তা তোমাদের নিয়ে হয়।”
মেঘ দুস্টু হেসে বললো
“রিয়েলি মাম্মাম? তাহলে একটা কাজ করো। বাবাইয়ের সাথে মিলে নতুন করে আবার ফ্যামিলি প্লানিং শুরু করো। তারপর দেখা যাবে তোমাকে আমরা বেশি জ্বালাই, নাকি পিচ্চিরা বেশি জ্বালায়।”
মেঘের কথা শুনে মিড়া রহমান ওকে ধমক দিয়ে বললো
“একটা থাপ্পর দিয়ে তোর সব দাত আমি ফেলে দিবো বজ্জাত মেয়ে। মুখে যখন যা আসে তখন তাই বলিস। যা টেবিলে গিয়ে খেতে বস।”
“নো ওয়ে মাম্মাম! আমার এখন খেতে বসার জন্যে একদমই টাইম নেই। আমাকে এক্ষুনি অফিসে যেতে হবে। আজকে বাহিরের একটা কম্পানির সাথে আমাদের জরুরী একটা মিটিং আছে।”
কথাটা বলে মিড়া রহমানকে সাইড কাটিয়ে মেঘ দ্রুত পায়ে বাইরে চলে গেলো। মেঘ যেতেই মিড়া রহমান রাগি কন্ঠে বলে উঠলেন
“বাহ! ইনিও না খেয়ে চলে গেলেন। না খেয়ে এনারা তিনজন যে কোনো মহা রাজ্য উদ্ধার করতে যান একমাএ উপর ওয়ালাই জানে। আমার হয়েছে আরেক জ্বালা। এতো কস্ট করে এতোগুলো রান্না করলাম অথচ এরা তিনজন কাজের ব্যাস্ততা দেখিয়ে অফিসে চলে গেলো। এইবার আমি এই খাবার গুলোকে আমি কি করবো?”
আজম রহমান রেডি হয়ে নিচে এসে দেখলেন মিড়া রহমান একা একাই দাড়িয়ে দাড়িয়ে বিরবির করে কাউকে বকা দিচ্ছেন। তাই উনি এগিয়ে এসে মিড়া রহমানের সামনে দাড়িয়ে ভ্রু কুচকে বললেন
“এখানে দাড়িয়ে দাড়িয়ে একা একা কার সাথে কথা বলছো?”
আজম রহমানের প্রশ্ন শুনে মিড়া রহমান ঝাঝালো কন্ঠে বললেন
“আমার কপালের সাথে!”
আজম রহমান নিজের হাতের উল্টোপিঠ মিড়া রহমানের কপালে ছুইয়ে ঠোট চেপে হেসে বললেন
“তোমার কপাল আবার কথা বলা শুরু করলো কবে থেকে? কই আমাকে আগে বলো নি তো?”
আজম রহমানের কথা শুনে মিড়া রহমান তৈলে বেগুনে জ্বলে উঠলেন। উনি আজম রহমানের হাত ঝাড়া মেরে কপাল থেকে সরিয়ে দিয়ে রাগি কন্ঠে বললেন
“সিরিয়াস টাইমে ফাজলামি করবে না তো একদম। বিরক্ত লাগে!”
“যাহ বাবা, আমি কি করলাম? তুমি অযথা আমার উপরে রাগ দেখাচ্ছো কেনো?”
“তুমি কি করলে মানে? তুমিই তো সব করেছো!এই সবকিছুর নষ্টের গোরা একমাএ তুমি।”
মিড়া রহমানের কথা শুনে আজম রহমান অবাক কন্ঠে বললেন
“ওহ এখন যতো দোষ নন্দ ঘোষ? সকাল সকাল কাউকে না পেয়ে তুমি এখন আমার উপরে নিজের সব রাগ ঝাড়ছো মিড়া?”
মিড়া রহমান বললেন
“তোমার উপর রাগ ঝাড়বো না তো কার উপরে ঝাড়বো? অফিসে এতো এতো স্টাফ থাকার পরেও তুমি আমার ছেলে-মেয়ে তিনটাকে দিয়ে গাধার মতো কাজ করাও। কাজের চাপে তিনটার একটাও টাইমলি খাওয়া দাওয়া করার সময় পায় না। সারাক্ষন শুধু অনিয়ম করে।”
আজম রহমান মুখ বাকিয়ে বললেন
“তোমার ছেলে মেয়েদের দিয়ে আমি কাজ করাবো? আমার ঘাড়ে কটা মাথা? ওরা আমার কথা শুনে নাকি কখনো? অফিসটাকে পুরোপুরি নিজেদের দখলে নিয়ে নিয়েছে। এখন ওরা যা বলে ওখানে সেটাই হয়। আমি নামেই ওখানের চেয়ারম্যান মাএ। আমাকে তো ওরা শপীজ বানিয়ে রেখেছে। অফিসের সময় হলে আমাকে নিয়ে গিয়ে চেয়ারের উপর বসিয়ে দেয়। আবার অফিসের সময় শেষ হলে চেয়ার থেকে উঠিয়ে গাড়িতে বসিয়ে বাসায় পাঠিয়ে দেয়। এছাড়া আমার আর ওখানে কোনো কাজ নেই। বুঝেছো?”
আজম রহমানের কথা শেষ হতেই মিড়া রহমান বিরক্তির দৃস্টিতে ওনার দিকে কিছুক্ষন তাকিয়ে থেকে কিচেনের দিকে চলে গেলেন। কারন উনি জানেন ছেলে-মেয়েদের ব্যাপারে আজম রহমানকে কিছু বলে কখনোই কোনো লাভ হবে না। মেঘ, আহির, মিহির, যাই করুক না কেনো আজম রহমান সব সময়ই ওদের সাপোর্ট করবেন। সেটা ভুল হোক কিংবা সঠিক! ওদের ইচ্ছেটাকেই আজম রহমান সব সময় সবার আগে প্রায়োরিটি দেন।
_________________________
সকাল 10:30
পেজেন্টেশন রুমে বসে বারবার নিজের হাত ঘড়ির দিকে তাকাচ্ছে মেঘ। বিরক্তিতে ওর কপালে ভাজ পড়েছে। মেঘের পাশের চেয়ার গুলোতে বসে আছে আহির,মিহির সহ ওদের টিমের অন্যান্য মেম্বারেরা। কিন্তু ওদের অপজিট পাশের চেয়ার গুলো সব খালি পড়ে আছে। আজকে A.k. গ্রুপ অফ ইন্ডাস্ট্রিজের M.d. এর সাথে আজম রহমানের কম্পানির একটা বিজনেস ডিল নিয়ে মিটিং ছিলো। কিন্তু মেঘরা এখানে টাইমলি পৌছে গেলেও A.k. গ্রুপ অফ ইন্ডাস্ট্রিজের কেউই এখনো এখানে এসে পৌছায় নি। এই অফিসটা মূলত A.k. গ্রুপের ছোট একটা ব্রাঞ্চের অফিস। এই কম্পানির মেইন অফিসটা আসলে ইটালিতে আছে। সেখানে থেকেই এই কম্পানির এম.ডি. অন্যান্য ব্রাঞ্চ গুলো কন্ট্রোল করে।
এতোক্ষন ধরে বসে থাকতে থাকতে মেঘের রাগ উঠে গেলো। ‘ও’ বসা থেকে দাড়িয়ে আহির আর মিহিরকে উদ্দ্যেশ্য করে বললো
“হচ্ছেটা কি এখানে? 10:00 টার সময় মিটিং হওয়ার কথা ছিলো। আমরা 9:45 এর সময় এখানে এসে পৌছে গেছি। অথচ এখন সাড়ে দশটার উপরে বেজে গেছে আর ওনাদের কোনো খবরই নেই? এই রকম কেয়ারলেসির মানে কি? ওনারা যদি মিটিং টা করতে ইচ্ছুকই না থাকে তাহলে শুধু শুধু আমাদের ডেকে এনে বসিয়ে রাখার মানে টা কি?”
মেঘের কথা শুনে মিহির শান্ত কন্ঠে মেঘকে উদ্দ্যেশ্য করে বললো
“এতো হাইপার হওয়ার কিছু নেই মেঘ। হয়তো ওনারা রাস্তায় জ্যামে আটকে গেছে। বা হয়তো অন্য কোনো কাজের জন্যে আমাদের সাথে ফিক্সড হওয়া মিটিংয়ের ডেট টার কথা ভুলে গেছে।”
মেঘ দাতে দাত চেপে বললো
“লাইক সিরিয়াসলি ভাই? ওনারা নিজেরা ফোন করে আমাদের সাথে মিটিং ফিক্সড করলো, আর নিজেরাই ভুলে গেলো? এটা কি এখানে ফাজলামি করা হচ্ছে? নাকি আমাদের সময়ের কোনো মূল্য নেই ওনাদের কাছে?
মেঘের কথা শুনে আহির কপাল চাপরে বললো
“ওরে আমার রাগিনি রে, কথায় কথায় এতো রেগে যাস কেনো? মিহির শুধু কথার কথা বলেছে। অন্য কোনো কারনও তো হতে পারে যার জন্যে ওনারা এখানে এসে টাইমলি পৌছাতে পারেন নি। আগে থেকে উল্টাপাল্টা চিন্তা করে ব্যাপারটা নেগেটিভ দিকে কেনো নিচ্ছিস? একটু ধৈর্য্য ধরে বস ওনারা হয়তো এক্ষুনি চলে আসবেন।”
“ধৈর্য মাই ফুট! আমার পক্ষে আর এখানে এক মিনিটও বসে থাকা সম্ভব না। আমি বাইরে গিয়ে দেখছি ওনারা কোথায় আছেন।”
কথাটা বলে মেঘ আর এক সেকেন্ডও ওখানে দাড়ালো না। হনহন করে পেজেন্টেশন রুম থেকে বের হয়ে বাইরে চলে আসলো। বাইরে এসে একজন স্টাফকে A.k. এর কথা জিজ্ঞেস করতেই স্টাফটা জানালো ‘A.k. নাকি অনেকক্ষন আগেই অফিসে চলে এসেছে। আপাততো নাকি ওনি নিজের ক্যাবিনে বসে আছেন।’ এটা শুনে রাগে মেঘের মাথা ফেটে যেতে লাগলো। ‘ও’ রাগে ফুশতে ফুশতে সোজা A.k. এর কেবিনের দিকে চলে গেলো। তারপর নক না করেই ধাক্কা দিয়ে দরজা খুলে কেবিনের ভিতরে ঢুকে পড়লো। ভিতরে ঢুকেই মেঘের চোখ পড়লো মাস্ক পড়া একটা ছেলের উপর। ছেলেটা চেয়ারে বসে ল্যাপটপের স্কিনের দিকে তাকিয়ে মনোযোগ সহকরে কিছু একটা দেখছে। গায়ে তার ব্লাক এন্ড হোয়াইট কম্বিনেশনের ফরমাল ড্রেস, বাম হাতে সিলভার কালারের ব্রেসলেট আর সামনের চুল গুলো এলোমেলো হয়ে কপালে পড়ে আছে। একে তো মুখে মাস্ক পড়া, তার উপরে লম্বা চুল গুলো কপালে পড়ে কপালটা একদম ঢেকে আছে। চুলের জন্যে ছেলেটার ফেইসের মধ্যে চোখ জোড়া ছাড়া মেঘ ভালো করে আর কিছুই দেখতে পেলো না। আর দেখার চেষ্টাও করলো না। কারন যার কেয়ারলেস বিহেইবিয়ারের উপর ‘ও’ এতোটা রেগে আছে তাকে খুটিয়ে খুটিয়ে পর্যবেক্ষণ করার শখ বা ইচ্ছে কোনোটাই ওর নেই।
সামনে কারো অনুপস্থিতি টেড় পেয়ে ছেলেটা ল্যাপটপের স্কিন থেকে চোখ সরিয়ে মাথা তুলে সামনের দিকে তাকালো। তারপর মেঘের দিকে তীর্যক দৃস্টি নিক্ষেপ করে চেয়ারের সাথে হেলান দিয়ে বসলো। মেঘ ব্রু কুচকে তাকিয়ে ছেলেটার কার্যকলাপ দেখছে। ছেলেটা টেবিল থেকে একটা পেন হাতে নিয়ে আঙুলে ঘোরাতে ঘোরাতে মেঘকে উদ্দ্যেশ্য করে বললো
“মিস তাসনুবা সায়াজ মেঘনা, কারো কেবিনে ঢোকার আগে তার থেকে পারমিশন নিয়ে তারপর ভিতরে ঢুকতে হয়। এইটুকু ভদ্রতা তো আপনার থেকে আশা করতেই পারি তাইনা? আফটার অল একজন বিজনেস ওমেন বলে কথা!”
ছেলেটার কথা শুনে মেঘ ঠাস করে শব্দ করে দরজাটা লাগিয়ে হনহন করে সামনের দিকে এগিয়ে এলো। তারপর টেবিলের উপর দু-হাতে রেখে তাতে ভর দিয়ে ছেলেটার দিকে কিছুটা ঝুকে দাতে দাত চেপে বললো
“ভদ্রতা নিয়ে অন্তত আপনার মুখে কোনো কথা সাজে না মিঃ এম.কে.। কারন আপনি অত্যন্ত অভদ্র পার্সনালিটির একজন মানুষ। নাহলে কেউ 10 টার সময় মিটিং ফিক্সড করে 10:40 পযর্ন্ত কাউকে বসিয়ে রাখে?আপনার কি মনে হয় আমাদের সময়ের কোনো দাম নেই? আমরা কি এখানে আপনার চেহারা দেখার জন্যে এসেছি?”
“ওটা চাইলেও আপনার দেখার সাধ্য নেই মিস মেঘনা। কারন A.k. না চাইলে তার ফেইস দেখার অধিকার কারো নেই। আর বাকি রইলো আপনাদের বসিয়ে রাখার কথা। সেটাও আপনাদের সাথে হওয়া মিটিংয়েরই একটা অংশ ছিলো। আমি এতোক্ষন আপনাদের ধৈর্য্যর টেস্ট নিচ্ছিলাম। যেটাতে আপনার ভাইয়েরা পাশ করলেও, আপনি টোট্যালি ফেইল করেছেন।”
কথাটা বলতে বলতে A.k. চেয়ার থেকে উঠে এগিয়ে এসে মেঘের সামনে দাড়ালো। মেঘ শক্ত কন্ঠে বললো
“তাই নাকি? তো এই স্টুপিড মার্কা টেস্ট নেওয়ার কারনটা জানতে পারি?”
কথাটা বলে মেঘ সোজা হয়ে A.k. এর মুখোমুখি দাড়ালো। A.k. মেঘের দিকে একটু এগিয়ে এসে স্বাভাবিক কন্ঠে বললো
“কারন’টা খুবই সিম্পল! যাদেরকে এতো বড় একটা প্রজেক্ট হ্যান্ডওভার করবো, তাদের সহ্য শক্তি কতোটা সেটা চেক করে নিবো না? আমাকেও তো জানতে হবে আপনার টিম আদৌ আমার সাথে কাজ করার যোগ্য কিনা!”
মেঘ কাঠ কাঠ কন্ঠে বললো
“অনেক জেনেছেন আপনি। আপনাকে আর কিচ্ছু জানতে হবে না। কারন আমার কম্পানি আপনার কম্পানির সাথে কোনো রকম ডিল করবে না। যাদের মধ্যে মানুষকে রেসপেক্ট করার মতো মিনিম্যাম সহবত টুকু নেই তাদেরকে বিজনেস পার্টনার বানানোর কোনো প্রশ্নই উঠে না।”
কথাটা বলে মেঘ চলে যাওয়ার জন্যে পা বাড়াতেই A.k. এগিয়ে এসে মেঘের দু-পাশ থেকে টেবিলের উপর হাত রেখে ওকে আটকে ফেললো। A.k. এতোটা কাছাকাছি চলে আসায় মেঘ একদম পিছনে গিয়ে টেবিলের সাথে মিশে দাড়িয়ে পড়লো। মেঘের এমন কান্ডে A.k. ঠোট কামড়ে মুচকি হাসলো। মাস্কের উপর থেকেও যেটা মেঘ বেশ ভালো করেই বুঝতে পারলো। A.k. মেঘের দিকে কিছুটা ঝুকে লো ভয়েসে বললো
“সেটা তো আর হবার নয় মিস মেঘনা। কারন আপনাদের টিম’টাকে আমার ভিষন পছন্দ হয়েছে। বিশেষ করে টিমের এই অ্যাংড়ি, স্ট্রিট ফরওয়ার্ড, সুইট গার্লটাকে সবচেয়ে বেশী ভালো লেগেছে। তাই আপনাদের তো এই ডিলটায় সাইন করতেই হবে।”
A.k. কথাটা বলার সাথে সাথে মেঘ ওকে জোড়ে ধাক্কা দিলো। অচমকা এতো জোড়ে ধাক্কা দেওয়ায় A.k. খানিকটা পিছিয়ে গেলো। মেঘ হাতের আঙুল উঠিয়ে A.k. এর দিকে পয়েন্ট করে ওকে শাশানোর স্বরে বললো
“স্ট্রে অ্যাওয়ে ফ্রম মি, মিঃ এ.কে.। নাহলে আপনাকে এই অ্যাংড়ি, স্ট্রিট ফরওয়ার্ড, সুইট মেয়েটার আসল চেহারা দেখাতে বাধ্য হবো। যেটা আপনার জন্যে একদমই ভালো হবে না। আর আপনার কম্পানির সাথে আমরা কোনো ডিলে সাইন করবো না। তাই আমাদের সাথে পার্টনারশীপ করার স্বপ্নটা এক্ষুনি নিজের মাথা থেকে ঝেড়ে ফেলুন। গুড বাই, ফরএভার।”
কথাটা বলে মেঘ A.k. কে কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে কেবিন থেকে বাইরে বের হয়ে গেলো।
________________________
মেঘ পেজেন্টেশন রুমে এসে নিজের ফাইলগুলো গোছাতে গোছাতে মিহিরকে উদ্দ্যেশ্য করে বললো
“ভাইয়া চল এখান থেকে। আমরা এই কম্পানির সাথে কোনো রকম পার্টনার শিপ করবো না।”
মিহির নিজের চেয়ারে বসে ফোন টিপছিলো। মেঘের কথা শুনে ‘ও’ ঘাড় ঘুড়িয়ে মেঘের দিকে তাকালো। তারপর অবাক কন্ঠে বললো
“কেনো? কি হয়েছে?”
মিহিরের প্রশ্নের প্রতিউওরে মেঘ কিছু বলতে যাবে তার আগেই A.k. দরজা ঠেলে ভিতরে ঢুকতে ঢুকতে বললো
“তেমন কিছুই হয়নি মিঃ মিহির। শুধু আপনার বোন একটু হাইপার হয়ে গেছে। তাই রাগের মাথায় উল্টাপাল্টা কথা বলছে। ওনাকে বাইরে নিয়ে গিয়ে একটু খানি ঠান্ডা খাইয়ে নিয়ে আসুন।”
A.k. এর কথা শুনে মেঘ ওর হাতে থাকা ফাইল গুলোকে টেবিলের উপর ছুড়ে মারলো। তারপর A.k. এর দিকে তাকিয়ে চেচিয়ে বললো
“বিহেব ইউর সেলফ! আপনার সাহস হয় কিভাবে আমার আর আমার ভাইয়ের কথার মাঝে ঢুকে কথা বলার? কি মনে করেন আপনি নিজেকে?”
মেঘের কথা বলার ধরন দেখে আহির আর মিহির দুজনেই চারশো চল্লিশ বোল্টের শকড খেলো। ওরা চোখ বড় বড় করে একবার মেঘের দিকে তাকাচ্ছে তো আরেকবার A.k. এর দিকে তাকাচ্ছে। A.k. মিহিরের দিকে এগিয়ে এসে নরম স্বরে বললো
“মিঃ মিহির দেখছেন তো আপনার বোন কিভাবে আমার সাথে রুড বিহেব করছে। উনি এরকম করতে থাকলে আমরা মিটিং টা করবো কিভাবে বলুন তো?”
A.k. এর এমন ভদ্র সাজার নাটক দেখে মেঘ আর নিজের রাগটাকে কন্ট্রোল করতে পারলো না। ‘ও’ টেবিল থেকে একটা ফাইল হাতে নিয়ে A.k. এর দিকে ছুড়ে মেরে বললো
“মিটিং মাই ফুট! তোর এই ফালতু কম্পানির সাথে আমরা কোনো মিটিং,টিটিং করবো না। তুই একটা ফালতু, তোর কম্পানিটা ফালতু, তোর স্টাফরাও ফালতু, তোর চৌদ্দ গুষ্ঠি ফালতু, তোর……”
মেঘ পুরো কথাটা শেষ করতে পারলো না। তার আগেই আহির এসে শক্ত করে ওর মুখ চেপে ধরলো। তারপর A.k. এর দিকে তাকিয়ে জোড় পূর্বক একটা হাসি দিয়ে বললো
“অতিরিক্ত গরমে মনে হয় আমার বোনের মাথাটা একটু বেশিই গরম হয়ে গেছে। তাই যা মুখে আসছে তাই বলছে। আপনারা কথা বলুন আমি ওকে বাইরে থেকে ঠান্ডা খাইয়ে নিয়ে আসছি।”
কথাটা বলে আহির কোনো রকম মেঘকে টেনে টুনে ওখান থেকে বাইরে নিয়ে গেলো। বলা যায় আহির ওকে এক প্রকার কোলে তুলেই নিয়ে গেছে।
আহির মেঘকে নিয়ে চলে যেতেই মিহির A.k. এর দিকে তাকালো। তাকাতেই ওর ব্রু’টা কিংঞ্চিৎ কুচকে গেলো। কারন মুখ দেখা না গেলেও A.k. এর চোখের এক্সপ্রেশন দেখে মিহির স্পষ্ট বুঝতে পারছে যে লোকটা হাসছে। মিহির A.k. এর ব্যাপারে যতোটুকু শুনেছে তাতে লোকটা যথেষ্ঠ আত্মমর্যাদা সম্পন্ন একদম মানুষ। উনি আর যাই সহ্য করুক না কেনো নিজের অপমান কখনো সহ্যে করতে পারে না। অথচ মেঘ এতোক্ষন ওনার সাথে রুড বিহেব করার পরেও উনি মেঘকে তো কিছু বললোই না, উল্টে এখানে দাড়িয়ে দাড়িয়ে হাসছে। যেটা মিহিরের একদমই হজম হচ্ছে না। তবে আপাততো ‘ও’ এই বিষয়টা নিয়ে বেশি মাথা ঘামালো না। কারন মেঘের বিহেই-বিয়ারের জন্যে ওকে এখন A.k. এর কাছে ক্ষমা চাইতে হবে। তাই মিহির কিছুটা ইতস্তত করে A.k. কে উদ্দ্যেশ্য করে বললো
“মেঘের হয়ে আমি আপনার কাছে ক্ষমা চাইছি মিঃ A.k. । আসলে ‘ও’ এখনো ছোট তো তাই না বুঝে আপনার সাথে মিস বিহেব করে ফেলেছে। প্লিজ ওর কথায় কিছু মনে করবেন না।”
A.k. নিজের হাসি চেপে রেখে স্বাভাবিক কন্ঠে বললো
“ইটস ওকে মিঃ মিহির, আমি কিছু মনে করিনি। তবে পরের বার থেকে ওনাকে একটু সামলে রাখবেন। নাহলে ওনার ইমম্যাচুরিটি স্বভাবটা আমাদের পার্টনারশিপের উপরে এফেক্ট ফেলতে পারে।যাই হোক, তাহলে মিটিং টা শুরু করা যাক। অলরেডি অনেকটা টাইম ওয়েস্ট হয়ে গেছে।”
মিহির মৃদ্যু হেসে বললো
“ইয়াহ, সিওর।”
#চলবে