মিশে আছো মুগ্ধতায়-24

0
888

#মিশে_আছো_মুগ্ধতায়
#লেখনীঃতানিশা_আহিয়াদ_তিশা
#পর্বঃ24

হঠাৎ করে দরজার কলিংবেল বাজার শব্দে মেঘ আর দিশা দুজনেই চমকে উঠে দাড়িয়ে পড়লো। বাকিরাও সবাই ভ্রু কুচকে দরজার দিকে তাকালো। তাকিয়ে ভাবতে লাগলো এই সময়ে তো কারোরই বাড়ির ভেতরে আসার কথা না। কারন আজম রহমান আগেই ওনার গার্ডদের বারন করে দিয়েছেন, যাতে ওনার অনুমতি ছাড়া বাইরের কাউকে ভিতরে ঢুকতে না দেওয়া হয়। তাহলে এই সময়ে কে আসলো? ওরা সেটাই বুঝতে পারছে না। সবার ভাবনার মধ‍্যেই অভি এগিয়ে গিয়ে দরজা খুলে দিলো। দরজা খুলতেই মেঘ সহ ড্রইং রুমে উপস্থিত সবাই চমকে গেলো। কারন দরজার সামনে আহান দাড়িয়ে আছে। আর ওর গার্ডেরা আজম রহমানের গার্ডদের মাথায় রিভলবার পয়েন্ট করে দাড়িয়ে আছে। আহানকে আজকে অন‍্য দিনের থেকে একদম আলাদা লাগছে। ওর চোখে মুখে হিংস্র ভাব ফুটে উঠেছে। ওর মাথার চুল গুলো উসকো খুসকো হয়ে কপালে পড়ে আছে। মেঘ এক পলক আহানের দিকে তাকিয়ে দ্রুত নিজের মাথাটা নিচু করে ফেললো। আহান কাউকে তোয়াক্কা না করে একপা-দুপা করে এগিয়ে এসে মেঘের মুখোমুখি দাড়ালো। আহানকে এতো কাছাকাছি এসে দাড়াতে দেখে মেঘ কাচুমাচু হয়ে কিছুটা পিছিয়ে গেলো। আহান স্থির দৃস্টিতে মেঘের মুখের দিকে তাকিয়ে আছে।

আহানকে দেখে আজম রহমান অবাক হওয়ার সাথে সাথে ভীষন রেগেও গেলেন। রাগে গজগজ করতে করতে উনি বসা থেকে দাড়িয়ে আহানের দিকে এগিয়ে আসতে আসতে বললেন

“তোমার সাহস তো কম না, তুমি আবার আমার বাড়িতে ঢুকেছো? আজকে তোমাকে এমন শিক্ষা দিবো যে তুমি সারা জিবন সেটা মনে রাখবে।”

আজম রহমান কথাটা শেষ করার সাথে সাথে আহান নিজের জায়গায় দাড়িয়েই ওর হাতে থাকা রিভলবার’টা আজম রহমানের দিকে পয়েন্ট করলো। তারপর আজম রহমানকে উদ্দ‍্যেশ‍্য করে শক্ত কন্ঠে বললো

“Not today mr. Rahaman. অন্তত আজকের দিনে আপনি আমার আর আমার ভালোবাসার মধ‍্যে আসার চেস্টা করবেন না প্লিজ। কারন আপনি যদি আমার থেকে আমার ভালোবাসার মানুষটাকে কেড়ে নেওয়ার চেস্টা করেন। তাহলে আমিও আমার ভালোবাসার মানুষটাকে ফিরে পাওয়ার জন‍্যে তাকে এতিম করতে দ্বীতিয় বার ভাববো না।”

আহানের কথা শুনে মেঘ কিছুটা উচু স্বরে বলে উঠলো

“আহান কি বলছেন এসব? মাথা ঠিক আছে আপনার? মুখ সামলে কথা বলুন।”

আহান অগ্নি দৃস্টিতে মেঘের দিকে তাকিয়ে ধমকের স্বরে বললো

“যাস্ট শাটআপ, ওকে? এখানে একদম চুপচাপ দাড়িয়ে থাকো। ভুলেও যদি মুখ থেকে একটা সিজ্ঞেল ওয়ার্ডও বের করেছো তাহলে তোমার কপালে আজকে দুঃখ আছে মেঘ।”

আহান কথাটা শেষ করতে না করতেই আজম রহমান এসে ওর শার্টের কলার চেপে ধরলো। তারপর দাতে দাত চেপে বললো

“স্টুপিডের বা*চ্চা তুই আমার সামনে দাড়িয়ে আমার মেয়েকে হুমকি দিস? যাহ বের হ আমার বাড়ি থেকে। নাহলে তোকে আজকে টু*ক*রো টু*ক*রো করে মাটিতে পু*তে ফেলবো।”

কথাটা বলে আজম রহমান আহানের কলার ধরে টেনে ওকে নিয়ে যাওয়ার চেস্টা করতে লাগলেন। কিন্তু আহানকে নিজের জায়গা থেকে বিন্দু পরিমানও নড়াতে পারলেন না। আহান ওর হাতে থাকা রিভলবার’টাকে নিজের কাপালে ঠেকিয়ে হালকা স্লাইড করে বিরবির করতে করতে বললো

“কিছু মানুষ কখনো সুধরোয় না। ভালো ভাবে এদের সাথে কথা বললে সেই কথা কখনোই এদের কান অবদি পৌছায় না। এরা তো শুধু ত‍্যাড়ামির ভাষা বোঝে।”

কথাটা বলে আহান ওর গার্ডদের দিকে তাকিয়ে চোখ দিয়ে ইশারা করলো। ‘ও’ ইশারা করার সাথে সাথে দুজন গার্ড ঘরের মধ‍্যে ঢুকে আজম রহমানকে আহানের থেকে ছাড়িয়ে নিলো। তারপর দুজন ওনার দু-পাশের হাত শক্ত করে চেপে ধরে ওনাকে নিয়ে গিয়ে এক পাশে দাড় করালো। আজম রহমান ওদের থেকে নিজেকে ছাড়ানোর চেস্টা করলো ঠিকই, কিন্তু ব‍্যার্থ হলো। উনি ছটফট করতে করতে অভির দিকে তাকিয়ে ব‍্যাস্ত স্বরে বললো

“অভি হা করে ওখানে দাড়িয়ে আছো কেনো? দেখছো না ওরা আমাকে আটকে রেখেছে। এদেরকে সরাও আমার কাছ থেকে।”

অভি প‍্যান্টের পকেটে দু-হাত গুজে সোজা হয়ে দাড়িয়ে নির্বিকার ভঙ্গিতে বললো

“সরি চাচ্চু, আমার এখানে কিছুই করার নেই। আই অ‍্যাম হেল্পলেস।”

অভির এমন গা ছাড়া ভাব দেখে আজম রহমান হতবাক হয়ে ওর দিকে তাকিয়ে রইলো। আজম রহমানকে ছটফট করতে দেখে মেঘ আহানের দিকে রাগি চোখে কিছুক্ষন তাকিয়ে থেকে দ্রুত পায়ে আজম রহমানের দিকে এগিয়ে যেতে লাগলো। কিন্তু দু-কদম এগিয়ে যেতেই আহান এসে চট করে ওর হাত ধরে ফেললো। তারপর ওকে নিজের দিকে ঘুড়িয়ে ভ্রু কুচকে বললো

“তুমি ওইদিকে কোথায় যাচ্ছো টিয়া পাখি? তোমার ওইদিকে কোনো কাজ নেই।”

মেঘ আহানের দিকে তাকিয়ে রাগি কন্ঠে বললো

“আপনার লোকদের বলুন আমার বাবাইকে ছেড়ে দিতে নাহলে কিন্তু খুব খারাপ হয়ে যাবে আহান।”

আহান বললো

“ছেড়ে তো দিবেই। তার আগে ছোট একটা কাজ বাকি আছে। আগে সেই কাজটা কম্পিলিট করে নেই। তারপর তোমাকে বাবাকে ছেড়ে তো দিবোই সাথে ওনাকে পাশে বসিয়ে মিস্টিও খাওয়াবো।”

মেঘ ভ্রু কুচকে বললো

“কি কাজ?”

আহান মেঘের হাত ধরে টেনে ওকে সোফার দিকে নিয়ে যেতে যেতে বললো

“আমাদের বিয়ের কাজ!”

কথাটা বলে আহান মেঘকে নিয়ে গিয়ে সোফায় বসিয়ে দিয়ে নিজেও ওর পাশে বসে পড়লো। মেঘ আহানকে উদ্দ‍্যেশ‍্য করে অবাক কন্ঠে বললো

“আমাদের বিয়ে মানে?”

“মানে আজকে এই মুহূর্তে ধর্মীয় ভাবে এবং আইনত ভাবে তোমার আর আমার বিয়ে হবে।”

কথাটা বলে আহান ওর হাতের উল্টো পিঠে তাকিয়ে ঘড়িতে একবার সময় দেখে নিলো। তারপর কাজির দিকে তাকিয়ে ব‍্যাস্ত স্বরে বললো

“কাজি সাহেব পাএের কাগজপত্র গুলো আবাল নতুন করে রেডি করুন। কারন মেঘের সাথে আবীরের না আমার বিয়ে হবে।”

আহানের কথা শুনে কাজি ড‍্যাবড‍্যাব করে বোকার মতো কিছুক্ষন আহানের দিকে তাকিয়ে থেকে নিজের কাজে মনোযোগ দিলো। কাজির সাথে কথা বলে আহান পকেট থেকে ফোন বের করে ওর ল-ইয়ার কে এখানে আসতে বললো। মেঘ হতবম্ভ হয়ে আহানের কান্ড দেখছে। দিশা খুশীতে গদগদ হয়ে অভির হাত আকড়ে ধরে দাড়িয়ে আছে। আবীরের মা আর আবীর রাগে ফুশছে। কারন ওনাদের এতো দিনের প্লানে আহান এসে এক বালতি পানি ঢেলে দিয়েছে। কিন্তু আপাততো ওনাদের এসব দেখা ছাড়া কিছুই করার নেই।
___________________

আহান এক হাত দিয়ে মেঘের হাত শক্ত করে আকড়ে ধরে বসে ছিলো। আর অন‍্য হাত দিয়ে মনোযোগ দিয়ে ফোন স্ক্রল করছিলো। তখনই আজম রহমান আহানকে উদ্দ‍্যেশ‍্য করে কঠিন গলায় বলে উঠলো

“মানুষ শান্তিতে থাকলে সেটা তোমার সহ‍্যে হয় না, তাইনা? একবার তোমার জন‍্যে আমার সংসার ভেঙে গেছে। আমার ছেলেটা আমার থেকে আলাদা হয়ে গেছে। আমার মেয়েটা নিজের মায়ের থেকে আলাদা হয়ে গেছে। তারপরেও তোমার কলিজাটা ঠান্ডা হয়নি? এখন তুমি আবার এসেছো আমার মেয়েটাকে আমার থেকে কেড়ে নিতে?”

আজম রহমানের কথা শেষ হতেই আহান মেঘের হাতটা ছেড়ে দিলো। তারপর বসা থেকে দাড়িয়ে এগিয়ে এসে আজম রহমানের সামনে দাড়িয়ে তাচ্ছিল‍্য হেসে বললো

“আপনার মেয়েকে যদি আপনার থেকে কেড়েই নিতে চাইতাম,তাহলে অনেক আগেই নিয়ে নিতাম মিঃ রহমান। আমাকে আটকে রাখার ক্ষমতা অন্তত আপনার ছিলো না। আর বাকি রইলো আপনার সংসার ভাঙার কথা। সেটা আপনি নিজেই ভেঙেছেন। অযথা নিজের দোষটা আমার ঘাড়ে চাপাতে আসবেন না।”

আজম রহমান রাগি কন্ঠে বললেন

“আমি নিজেই ভেঙেছি মানে? কি বলতে চাইছো তুমি?”

“আমি কিছুই বলতে চাইছি না।আর বলবোও না। আপনাকে যা বলার ‘ভালো আন্টি’ (অভির মা) বলবে।”

কথাটা বলে আহান অভির মায়ের দিকে তাকালো। বাকিরাও সবাই প্রশ্ন সূচক দৃস্টিতে ওনার দিকে তাকালো। উনি (অভির মা) এগিয়ে এসে আজম রহমানের সামনে দাড়িয়ে একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বলে উঠলেন

“তুমি যাদেরকে চোখ বন্ধ করে বিশ্বাস করতে, তারাই তো তোমার সুখের সংসারটা ভেঙেছে আজম। আর তুমি এতো গুলো বছর বোকার মতো শুধু দুটো বাচ্চা ছেলেকে দোষারোপ করে গেছো।”

[অভির মায়ের কথা শুনে আজম রহমান ওনার দিকে প্রশ্ন বোধক চাহনিতে তাকালেন। অভির মা বললেন

“আহান আর আহিরের তোমাদের বাসায় থাকাটা জেড়িনের মা আর আবীরের মা একদমই মেনে নিতে পারছিলেন না। কারন ওনাদের ধারনা ছিলো ভবিষ্যতে তুমি তোমার সম্পওির ভাগ আহান আর আহিরকেও দিতে পারো। তাই ওনাদের ছেলে মেয়েরা তোমার সম্পওি থেকে যাতে বঞ্চিত না হয়, সেজন‍্য ওনারা সব সময় মিড়ার নামে তোমার কাছে বানিয়ে বানিয়ে মিথ‍্যা কথা বলতো। ওরা বলতো মিড়া নাকি একদমই মেঘের খেয়াল রাখে না, ওর যত্ন নেয় না, ওকে ঠিকভাবে খাবারও খেতে দেয় না। সব সময় আহির, আহানকে নিয়ে পড়ে থাকে, ওদের দেখা শোনায় দিন রাত পাড় করে দেয়। এসব মন গড়া কথা বলে ওরা তোমার মনটা মিড়ার বিরুদ্ধে বিষিয়ে দিতো। আর তুমিও ওদের কথা বিশ্বাস করে মিড়াকে প্রায়ই মার ধোর করতে। অথচ এর একটা কথাও সত‍্যি না। মিড়া সব সময় আহান, আহির, মিহির, মেঘ ওদের সমান ভাবে খেয়াল রাখতো। বরং মেঘ সবার থেকে ছোট ছিলো বলে সবাই ওর বেশী খেয়াল রাখতো।”

অভির মায়ের কথা শুনে মেঘ বসা থেকে উঠে এসে আজম রহমানের সামনে দাড়ালো। তারপর তীক্ষ্ম দৃস্টিতে আজম রহমানের দিকে তাকিয়ে বললো

“তুমি মাম্মামের গায়ে হাত তুলতে বাবাই?”

মেঘের প্রশ্ন শুনে আজম রহমান মাথা নিচু করে ফেললেন। ভয়ে,লজ্জায় ওনার হাত পা ঠান্ডা হয়ে যেতে লাগলো। উনি ভেবে পারছেন না যে মেঘ যদি এসব জানতে পারে তাহলে উনি কোথায় গিয়ে ওনার মুখ লুকাবেন। আর কিভাবেই বা মেঘকে সবটা বুঝিয়ে বলবেন? আজম রহমানকে চুপ করে দাড়িয়ে থাকতে দেখে মেঘ আবারও বললো

“চুপ করে আছো কেনো বাবাই? আমার প্রশ্নের অ‍্যান্সার দেও।”

আহান এসে মেঘের পাশে দাড়িয়ে মেঘকে উদ্দ‍্যেশ‍্য করে বললো

“ওনার কাছে কোনো প্রশ্ন করে লাভ নেই মেঘ। কারন তোমাকে সত‍্যিটা বলার মুখ ওনার নেই। সত‍্যিটা কি আমি তোমাকে বলছি।”

মেঘ ভ্রু কুচকে আহানের দিকে তাকালো। আহান কঠিন গলায় বললো

“এতো গুলো বছর ধরে উনি তোমাকে শুধুমাত্র এটা বলেছে যে তোমার মা নিজের বোনের ছেলেদের খেয়াল রাখার জন‍্যে তোমাকে ছেড়ে চলে গেছে। কিন্তু এটা একদমই মিথ‍্যা কথা। আসল সত‍্যি হলো তোমার বাবা নিজেই তোমার মাকে তোমাকে ছেড়ে আসার জন‍্যে বাধ‍্য করেছে। উনি আর ওনার পরিবারের কয়েক জন সদষ‍্যরা মিলে মামনীকে এমন ভাবে মানষিক অত‍্যাচার করেছিলো যে মামনী একদম দিশেহারা হয়ে গিয়েছিলো।”

আহানের চোখের কোনে পানি চিকচিক করছে। আজম রহমানের চোখেও পানি জমেছে। মিড়া রহমানের প্রতি ওনার করা অন‍্যায় গুলো একে একে ওনার মাথা চারা দিয়ে উঠছে। আহান হাতের উল্টোপিঠ দিয়ে নিজের চোখের কোনে জমে থাকা পানিটুকু মুছে বললো

“জানো মেঘ, আমরা যেদিন তোমাদের বাড়ি থেকে চলে এসে ছিলাম সেদিন মামনীর সারা শরীরে মারের দাগ ছিলো। আহির আর মিহিরের সাথে দুস্টুমি করতে গিয়ে হোচট খেয়ে নিচে পড়ে তোমার হাটুর কাছ থেকে একটু খানি কেটে গিয়েছিলো। তাই এই লোকটা কারোর কোনো কথা না শুনে সেদিন মামনীকে জানোয়ারের মতো মেরে ছিলো। আর তোমার পরিবারের লোকেরা মামনীর চিৎকারে শব্দ শুনেও কেউ মামনীকে বাচাতে আসেনি।”

মেঘ অশ্রুসিক্ত চোখে আহানের দিকে তাকিয়ে আছে। ‘ও’ তো এসব ব‍্যাপারে কখনোই কিছু জানতো না। ওকে এই বিষয়ে আজম রহমান কখনোই কিছু বলেনি। আহান একটা লম্বা নিশ্বাস নিয়ে বললো

“সেদিনই মামনি আমাদের নিয়ে ওখান থেকে চলে আসার সিদ্ধান্ত নেন। কারন ওখানে থাকলে উনি একদিন না একদিন বেঘোরে নিজের প্রানটা হারাতেন। তবে আসার আগে উনি তোমাকেও আমাদের সাথে নিয়ে আসার জন‍্যে অনেক চেস্টা করেছিলেন। কিন্তু তোমার বাবা জোড় করে তোমাকে নিজের কাছে রেখে দিয়েছিলেন। আর মামনিকে হুমকি দিয়েছিলেন, বলেছিলেন যদি মামনি তোমাকে নিয়ে যাওয়ার চেস্টা করেন, তাহলে উনি মিহিরকেও মামনির কাছ থেকে কেড়ে নিবেন। এবং তোমাদের দুজনকে নিয়ে অনেক দূরে চলে যাবেন। মিহিরকে হারানোর ভয়ে মামনি তোমাকে রেখেই ঢাকায় চলে এসেছিলেন।”

মেঘের চোখ থেকে অনবরত পানি পড়ে যাচ্ছে। আহান মেঘের কাছাকাছি এসে ওর চোখের পানি মুছে দিতে দিতে বললো

“তোমার মা একদমই সার্থপর মা নয় মেঘ। উনিও তোমাকে ভিষন ভালোবাসে। তুমি ওনাকে ছাড়া যতোটা কস্টে ছিলে। উনিও তোমাকে ছাড়া ঠিক ততোটাই কস্টের মধ‍্যে ছিলেন। তোমাকে ছেড়ে আসার পর উনার মনটা একদম পাথরের মতো শক্ত হয়ে গিয়েছিলো। উনি ঠিকভাবে কারো সাথে কথা বলতেন না। কারো সাথে তেমন মিশতেন না। মানুষের প্রতি ওনার বিশ্বাস ভালোবাসা সব যেনো হারিয়ে গিয়েছিলো। তাই তো তোমার সাথে উনি এতোটা খারাপ ব‍্যাবহার করেছেন। নাহলে জেড়িন যখন মেঘ সেজে ছিলো তখন ওর প্রতি মামনীর ভালোবাসা টা তো দেখেইছো। তখন যদি জানতো যে তুমিই আসল মেঘ তাহলে তোমাকে মাথায় করে রাখতো।”

মেঘ আহানের কথা গুলো চুপচাপ শুনে ওকে সাইড কাটিয়ে আজম রহমানের সামনে গিয়ে দাড়ালো। তারপর কান্নাভেজা কন্ঠে বললো

“সমস্ত সত‍্যি কথা গুলো আমার কাছ থেকে লুকিয়ে আমার মাকে আমার কাছে কেনো অপরাধী বানিয়ে দিয়েছো বাবাই? এতোগুলো বছর আমার মনে আমার মায়ের প্রতি ঘৃনা ছাড়া আর কিচ্ছু ছিলো না। আমি সব সময় ভেবে এসেছি যে মাম্মাম আমাকে তো ছেড়ে গেছেই সাথে তোমাকেও ঠকিয়েছে। তোমার ভালোবাসার মূল‍্য দেয় নি। অথচ আসল কাহিনি তো একদম উল্টো। আমার মাম্মাম ঠকায় নি, তুমিই আমার মাম্মামকে ঠকিয়েছো। তুমি আমার মাম্মামের ভালোবাসার মূল‍্য দিতে পারোনি। কস্ট দিয়েছো তুমি আমার মাম্মামকে। আমাকে আমার মায়ের থেকে আমার ভাইয়ার থেকে আলাদা করে দিয়েছো। আমাকে একদম একা করে দিয়েছো তুমি বাবাই।”

কথা গুলো বলতে বলতে মেঘ শব্দ করে কেদে দিলো। আজম রহমান অসহায় কন্ঠে বললো

“আই অ‍্যাম সরি মেঘ। আমি জানি আমার ভুল হয়েছে। মিড়ার সাথে আমি যা যা করেছি, সব অন‍্যায় করেছি। এইজন‍্যেই আমি শেষ বারের মতো ওর সাথে দেখা করে ওকে সরি বলতে চেয়েছিলাম। ওর কাছে হাত জোড় করে আমার করা ভুলের জন‍্যে ক্ষমা চাইতে চেয়ে ছিলাম। আমার ডায়রিতে তো সবই লেখা ছিলো। তুমি তো সবটা পড়েই এখানে এসেছিলে।”

মেঘ কাদতে কাদতে বললো

“আমি তো শুধুমাত্র তোমার শেষ ইচ্ছে পূরন করতে এখানে এসেছিলাম। ভেবে ছিলাম মাম্মামকে কোনো ভাবে রাজি করিয়ে তোমার সাথে দেখা করাতে নিয়ে যাবো। কিন্তু তখন তো আর জানতাম না যে আমার অগোচরে এতো কিছু হয়ে গেছে। আর আমি এতো বছরে এসব কিছু জানতেই পারিনি। না জেনে, না বুঝেই সবকিছুর জন‍্যে নিজের মাকে দোষারোপ করে গেছি।”

#চলবে…..

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here