#মিশে_আছো_মুগ্ধতায়
#লেখনীঃতানিশা_আহিয়াদ_তিশা
#পর্বঃ22
মেঘ চোখ ভর্তি পানি নিয়ে বেডের উপরে পা ঝুলিয়ে বসে আছে। ওর সামনে একটা চেয়ারের উপর বসে আহান বিরিয়ানির প্যাকেট হাতে নিয়ে মেঘের দিকে এক দৃস্টিতে তাকিয়ে আছে। পুরো রুমটার মধ্যে একদম পিন ড্রপ সাইলেন্স। আহান বা মেঘ কারো মুখেই কোনো কথা নেই। নীরবতা কাটিয়ে আহান শান্ত স্বরে মেঘকে উদ্দ্যেশ্য করে বলে উঠলো
“মেঘ আমি বুঝতে পারছি যে তুমি পাপার উপর ভিষন অভিমান করে আছো। কিন্তু তাই বলে না খেয়ে থাকাটা তো এটার কোনো সলিউশন হতে পারেনা তাইনা?”
আহানের কথার প্রতিউওরে মেঘ কিছুই বললো না। শুধু ওর চোখ জোড়া থেকে টুপ করে দু-ফোটা পানি গড়িয়ে পড়লো। সেটা দেখে আহান একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে ওর বাম হাতটা আলতো করে মেঘের গালে রাখলো। তারপর হাতের আঙুল দিয়ে মেঘের গালে গড়িয়ে পড়া পানিটুকু মুছে দিতে দিতে বললো
“কাদছো কেনো মেঘ পরী? দেখো, পাপা তোমাকে ইচ্ছে করে ধমক দেয়নি। আবীর এমন ভাবে ওনার ব্রেনওয়াশ করেছে যে উনি রাগের মাথায় তোমাকে ওই ভাবে বলে ফেলেছে।”
মেঘ কান্নারতো স্বরে নাক টানতে টানতে বললো
“তাই বলে ওই বাজে ছেলেটার জন্যে বাবাই আমাকে ধমক দিতে পারলো?”
আহান ম্লানো হেসে বললো
“তোমার কাছে বা আমার কাছে আবীর বাজে ছেলে হলেও ‘ও’ কিন্তু তোমার বাবাইয়ের বড় ভাইয়ের ছেলে। আর ভাইয়ের ছেলে তো নিজের ছেলের মতোই হয় তাইনা? এইজন্যে ওনার আবীরের প্রতি টান’টা হয়তো একটু বেশীই।”
মেঘ হাতের উল্টোপিঠ দিয়ে নিজের চোখের পানি মুছতে মুছতে আহানকে উদ্দ্যেশ্য করে বললো
“তাহলে বাবাই আপনাকে এতোটা অপছন্দ করে কেনো? আহাদ আংকেল আর বাবাই তো বেস্ট ফ্রেন্ড ছিলো। আর উনি যেহেতু এখন বেচে নেই, তাই আপানাকে বাবাইয়ের সবথেকে বেশী ভালোবাসা উচিৎ। কিন্তু তা না করে বাবাই আপনার নাম শুনলেই এতোটা রেগে যায় কেনো?”
মেঘের প্রশ্ন শুনে আহানের চোখটাও এবার ছলছল করে উঠলো। ‘ও’ এদিক ওদিক তাকিয়ে মেঘের থেকে নিজের চোখের পানিটা আড়াল করতে চাইলো। কিন্তু মেঘ আহানের চোখ ভর্তি পানিটা ঠিকই দেখতে পেলো। আহান কিছুক্ষন চুপ থেকে ঠোটের কোনে মিথ্যা হাসি ঝুলিয়ে বললো
“তোমার বাবার মতে ওনার আর মামনির সংসার ভাঙার একমাএ কারন হচ্ছে আমি আর আহির। উনি ভাবেন আমাদের জন্যেই তোমরা সবাই আলাদা হয়ে গেছো। তাই উনি আমাকে আর আহিরকে একদমই সহ্যে করতে পারেন না। আসলে কি বলো তো, যাদের মা-বাবা থাকে না, তাদের থেকে অসহায় মানুষ এই পৃথিবীতে কেউ হয় না। যখন মা-বাবা মরে যায় তখন কাছের মানুষ গুলোর কাছেও বোঝা হয়ে যেতে হয়। এটাই পৃথিবীর নিয়ম।”
কথাটা বলে আহান ছোট্ট করে একটা নিঃশ্বাস ফেললো। মেঘ অবাক হয়ে আহানের দিকে তাকিয়ে আছে। এই মানুষটার মনেও যে এতোটা কস্ট লুকিয়ে আছে সেটা আজকে আহানের কথা না শুনলে মেঘ জানতেই পারতো না। মেঘ নিজেও তো এতোদিন আহানদের ঘৃনা করতো। কারন ওর মনে হতো আহান আর আহির ওর মাকে ওর থেকে কেড়ে নিয়েছে, ওদের জন্যেই ওর ভাই ওর থেকে আলাদা হয়ে গেছে, ‘ও’ সবার ভালোবাসা থেকে বঞ্চিত হয়েছে। কিন্তু আজকে মেঘের মনে হচ্ছে, আহান আর আহির এতোগুলো বছর ওর থেকেও বেশী কস্ট পেয়েছে। কারন ওর মা-বাবা একসাথে থাকে না তো কি হয়েছে? অন্তত এখনো ওনারা পৃথিবীতে বেচে তো আছেন। কিন্তু আহান আর আহিরের তো মা-বাবা বেচেও নেই। ওরা তো অনাথ।
মেঘকে অন্যমনষ্ক হয়ে কিছু একটা ভাবতে দেখে আহার ওর সামনে তুড়ি বাজালো। তারপর আস্তে করে মেঘের নাক টেনে দিয়ে দুস্টুমির ছলে বললো
“এইযে ম্যাডাম কবিদের মতো এভাবে ভাবা-ভাবি বাদ দিয়ে খাবারটা খেয়ে নিন। নাহলে আপনার পেটের মধ্যে থাকা ইদুর গুলো আপনাকে অভিশাপ দিবে। আর সাথে আমার পেটের ছুচো গুলোও আমাকে অভিশাপ দিবে। কারন আপনি খান নি শুনে, সারাদিনে আমার পেটেও কিছু পড়েনি। প্লিজ মেহেরবানি করে খাবার গুলো খেয়ে নিন।”
কথাটা বলে আহান এক লোকমা খাবার উঠিয়ে মেঘের মুখের সামনে ধরলো। মেঘ আলতো হেসে খাবারটা নেওয়ার জন্যে হা করতেই কেউ এসে ওর দরজায় জোড়ে নক করলো। এতো জোড়ে দরজায় নক করায় মেঘ আর আহান দুজনেই চমকে উঠলো। মেঘ ভীতু দৃস্টিতে আহানের দিকে একবার তাকিয়ে দরজার ওপাশে থাকা ব্যাক্তিটিকে উদ্দ্যেশ্য করে কাপাকাপা কন্ঠে বললো
“ক-কে?”
মেঘের প্রশ্ন শুনেও ওপাশ থেকে কেউ কোনো অ্যান্সার করলো না। শুধু জোড়ে জোড়ে দরজা ধাক্কাতে থাকলো। আহান তাকিয়ে দেখলো মেঘের চোখে মুখে স্পষ্ট আতঙ্কের ছাপ ফুটে উঠেছে। ‘ও’ দ্রুত চেয়ার থেকে উঠে দাড়িয়ে নিচু স্বরে মেঘকে উদ্দ্যেশ্য করে বললো
“ভয় পেও না একদম। আমি ওয়াশরুমে গিয়ে লুকিয়ে পড়ছি। তুমি গিয়ে দরজাটা খুলে দেও।”
কথাটা বলে আহান খাবারের প্যাকেট টা হাতে নিয়েই দ্রুত ওয়াশরুমে ঢুকে গেলো। মেঘ শুকনো একটা ঢোক গিলে ধীর পায়ে হেটে গিয়ে দরজাটা খুলে দিলো। কিন্তু দরজা খুলতেই ওর মেজাজ তুঙ্গে উঠে গেলো। কারন ওর সামনে আবীর দাড়িয়ে আছে। মেঘ দাতে দাত চেপে আবীরকে উদ্দ্যেশ্য করে বললো
“আপনি আমার রুমের সামনে কি করছেন? আপনার সাহস হলো কিভাবে এখানে আসার?”
মেঘের কথা শুনে আবীর একটা টেডি স্মাইল দিয়ে বললো
“এখান থেকেই যাচ্ছিলাম। ভাবলাম তোমার সাথে একটু দেখা করে যাই। আর সাথে তোমাকে একটা গুড নিউজও দিয়ে যাই।”
মেঘ ভ্রু কুচকে বললো
“কিসের গুড নিউজ?”
“সেটা বলতে হলে তো আমাকে রুমের ভিতরে আসতে হবে।”
কথাটা বলেই আবীর মেঘকে সাইড কাটিয়ে ওর রুমের মধ্যে ঢুকে গেলো। তারপর মেঘ কিছু বুঝে ওঠার আগেই ‘ও’ এক টানে মেঘকে দরজার কাছ থেকে সরিয়ে এনে দরজাটা লক করে দিলো। আচৎমকা আবীরের এমন কান্ডে মেঘ হকচকিয়ে উঠলো।
এতোক্ষন আহান ওয়াশরুম থেকে মেঘ আর আবীরের কথা গুলো স্পষ্ট শুনছিলো। দরজা লক করার শব্দ শুনে এবার ‘ও’ ওয়াশরুমের দরজা কিছুটা খুলে বাইরে উকি মারলো। দেখলো আবীর মেঘের এক হাত চেপে ধরে রেখেছে। এটা দেখে মুহূর্তের মধ্যে আহানের শান্ত চোখ জোড়া রক্তিম বর্ন ধারন করলো। ‘ও’ দাতে দাত চেপে নিজের রাগটাকে কন্ট্রোল করার চেস্টা করলো। কারন ‘ও’ এখন আবীরকে কিছু করতে গেলে ওর সাজানো প্লানটা একদম গরবর হয়ে যাবে। যেটা ‘ও’ একদমই চায় না। মেঘ ঝাড়া মেরে আবীরের থেকে নিজের হাত ছাড়িয়ে নিলো। তারপর রাগি দৃস্টিতে আবীরের দিকে তাকিয়ে বললো
“আপনি আমার রুমের মধ্যে ঢুকেছেন কেনো? এক্ষুনি বের হন এখান থেকে? নাহলে কিন্তু বাবাইকে সবটা জানাতে বাধ্য হবো।”
মেঘের কথা শুনে আবীর হো হো করে হেসে দিলো। তারপর মেঘের দিকে কিছুটা এগিয়ে এসে হাসতে হাসতে বললো
“কি জানাবে তুমি তোমার বাবাইকে? তোমার বাবাই-ই তো আমাকে এখানে পাঠালো। তোমাকে একটা গুড নিউজ দেওয়ার জন্যে।”
মেঘ অবাক কন্ঠে বললো
“হোয়াট? বাবাই আপনাকে এখানে পাঠিয়েছে? কিন্তু কেনো? কিসের গুড নিউজ দেওয়ার জন্যে?”
আবীর একটা বাকা হাসি দিয়ে মেঘের দিকে কিছুটা ঝুকে ওর কানের কাছে গিয়ে ধীর কন্ঠে বললো
“একটু আগে তোমার বাবাই আমার বাবা-মায়ের সাথে কথা বলে সামনের সপ্তাহে আমাদের বিয়ের তারিখ ফাইনাল করেছে। তাই তোমাকে কনগ্রাচুলেট করতে এলাম। কনগ্রাচুলেশন মিস মেঘ। খুব তাড়াতাড়ি তুমি আমার হাতে যাচ্ছো।”
কথাটা শুনে মেঘ দু-কদম পিছিয়ে গেলো। ‘ও’ হতবাক হয়ে আবীরের দিকে তাকিয়ে আছে। মেঘ নিজের কানকেই বিশ্বাস করতে পারছে না। শেষ পযর্ন্ত কিনা ওর বাবা এই অসভ্য ছেলেটার সাথে ওর বিয়ে ঠিক করলো? এতো বড় বোকামিটা কি করে করতে পারলো ওর বাবাই সেটাই মেঘ ভেবে পাচ্ছে না।মেঘের ভাবনার মধ্যে আবীর এসে হুট করেই ওর কোমড়ে এক হাত রেখে ওকে টান দিয়ে নিজের সাথে মিশিয়ে নিলো। তারপর ওর চোখে চোখ রেখে ভ্রু নাচিয়ে বললো
“এতো হ্যান্ডসাম, ড্যাশিং একটা ছেলের সাথে আপনার বিয়ে ঠিক হয়েছে। এটা শুনে তো আপনার খুশী হওয়ার কথা মিস মেঘ। কিন্তু হ্যাপি রিয়্যাকশনের জায়গায় আপনি এমন শকড রিয়্যাকশন কেনো দিচ্ছেন?”
আহান এতোক্ষন দাতে দাত চেপে সবটা সহ্যে করে যাচ্ছিলো। কিন্তু আবীর মেঘকে স্পর্শ করায় ওর সমস্ত সহ্যে শক্তির বাধ ভেঙে গেলো। ‘ও’ রাগে ফুশতে ফুশতে ওয়াশরুম থেকে বের হয়ে আবীরের চুল ধরে টেনে ওকে মেঘের থেকে আলাদা করে দিলো। তারপর ওর চুল ধরে টানতে টানতে ওকে দেয়ালের কাছে নিয়ে গিয়ে ওর মুখের দিকটাকে পরপর তিনবার জোড়ে দেয়ালের সাথে আ*ঘা*ত করলো। মুহূর্তের মধ্যে আবীরের কপাল ফেটে আর নাকের মধ্যে থেকে গলগল করে ব্লিডিং হতে লাগলো। আবীর কিছু বুঝে ওঠার আগেই আহান ওর কলার চেপে ধরে ওকে টানতে টানতে দরজার কাছে নিয়ে গেলো। তারপর দরজা খুলে আবীরকে মারতে মারতে সিড়ির কাছে নিয়ে গেলো। আবীর আহানকে যে কাউন্টার অ্যাটাক করবে সেই সময় টুকোও আহান ওকে দিলো না।
ড্রইংরুমের সোফার উপর বসে দিশা, অভি আর আজম রহমান কথা বলছিলো। এরমধ্যেই ওরা আবীরের চিৎকার শুনে ঘাড় ঘুড়িয়ে সিড়ির দিকে তাকালো। দেখলো আহান আবীরকে মারতে মারতে সিড়ি দিয়ে নিচে নামাচ্ছে। এটা দেখে আজম রহমান দ্রুত পায়ে এগিয়ে এসে সিড়ির সামনে দাড়ালেন। তারপর রাগি কন্ঠে চিল্লিয়ে আহানকে উদ্দ্যেশ্য করে বললেন
“ইউ রাসকেল, তোমার সাহস হয় কিভাবে আমার ভাইয়ের ছেলের গায়ে হাত দেওয়ার? তুমি আমার বাড়িতে ঢুকলে কিভাবে?”
আজম রহমান কথাটা বলার সাথে সাথে আহান আবীরের পিছনে জোড়ে একটা লাথি মারলো। আর লাথিটা খেয়ে আবীর সিড়ি দিয়ে ফুটবলের মতো ডিগবাজি খেয়ে খেতে আজম রহমানের পায়ের সামনে এসে উপুর হয়ে পড়লো। আজম রহমান আবীরকে ধরে উঠিয়ে দাড় করালেন। দেখলেন ওর নাক, মুখ, কপাল থেকে রক্ত গড়িয়ে পড়ছে। ‘ও’ ভালোভাবে চোখ খুলে তাকাতে অবদি পাচ্ছে নাহ। আহান সিড়ি বেয়ে নিচে নেমে আজম রহমানের সামনে দাড়িয়ে হুংকার দিয়ে বললো
“এই বাস্টার্ড টার সাহস হলো কিভাবে আমার মেঘকে টাচ করার? ওকে তো আজকে আমি জানে মেরে ফেলবো।”
কথাটা বলে আহান আবীরের দিকে এগিয়ে যেতে নিলেই আবীর গিয়ে আজম রহমানের পিছনে লুকিয়ে পড়লো। আজম রহমান রেগে আহানের দিকে এগিয়ে এসে ওকে চড় মারার জন্যে হাত উঠালেন। কিন্তু চড়টা মারার আগেই আহান ওনার হাতটা শক্ত করে ধরে ফেললো। তারপর দাতে দাত চেপে বললো
“সেদিন যেই ভুলটা করেছিলেন, আজকে অন্তত সেই ভুলটা করবেন না মিঃ রহমান। কারন আমাকে হার্ট করার অধিকার আমি কাউকে দেইনি।”
কথাটা বলে আহান ঝাড়া মেরে আজম রহমানের হাতটা ছেড়ে দিলো। আজম রহমান রেগে চিল্লিয়ে বললেন
“ইউ স্কাউন্ডেল, তুমি আমার বাড়িতে এসেছো কোন সাহসে? তুমি জানো, এই মুহূর্তে আমি তোমার কি অবস্থা করতে পারি?”
আহান মুখ বাকিয়ে হেসে বললো
“আমার সাহস সম্পর্কে আপনার বিন্দুমাত্রও ধারনা নেই মিঃ রহমান। আমি ঠিক কি কি করতে পারি সেটা আপনি কল্পনাও করতে পারবেন না। আর আপনিও আমার কিচ্ছু করতে পারবেন না। কারন আহান খানের সাথে লাগতে আসা মৃত্যুকে আহ্বান করা সমান কথা।”
“যাস্ট শাটআপ! তোমার এসব ফালতু কথা শোনার কোনো ইচ্ছেই আমার নেই। এক্ষুনি বের হয়ে যাও আমার বাড়ি থেকে। গেট লস্ট।”
আজম রহমানের কথা শেষ হতেই আহান ওনার চোখে চোখ রেখে তীক্ষ্ণ কন্ঠে বললো
“চলে তো যাবোই মিঃ রহমান। আপনার বাসায় আমি থাকতে আসিনি। শুধু যাওয়ার আগে একটা কথা বলে যাচ্ছি, যেটা ভালো করে মাথায় ঢুকিয়ে নিন। আপনি ভুলেও যদি এই বাস্টার্ড টার সাথে (আবীরকে ঈশারা করে)আমার মেঘ পরীর বিয়ে দেওয়ার চেস্টা করেন, তাহলে আপনার এই বাড়ি আমি কবরস্থান বানিয়ে দিবো বলেদিলাম। ”
আজম রহমান গর্জে উঠে বললেন
“কাকে হুমকি দিচ্ছো তুমি? তোমাকে আমি ভয় পাই নাকি? আমার মেয়েকে কার সাথে বিয়ে দিবো আর কার সাথে দিবো না, সেটা একান্তই আমার ব্যাক্তিগত ব্যাপার। এই বিষয়ে আমি তোমার থেকে কোনো রকম ফালতু কথা শোনার প্রয়োজন মনে করছি না।”
আহান বিদ্রুপের হাসি হেসে বললো
“ওকে, প্রয়োজন মনে না করলে শোনার দরকার নেই। আপনি যা ভালো মনে করবেন, তাই করুন। আর আমারও যা ভালো মনে হবে,আমিও সেটাই করবো। পারলে আপনি আপনার মেয়ের বিয়ে অন্য কোথাও দিয়ে দেখান। যদি দিতে পারেন তাহলে কোনোদিন আমি আপনাকে আমার মুখ দেখাবো না।”
আহানের কথা শুনে আজম রহমান রাগে ফুশতে ফুশতে অন্যদিকে নিজের মুখ ঘুড়িয়ে ফেললেন। মেঘ এতোক্ষন সিড়ির উপরে দাড়িয়ে দাড়িয়ে নিচে ঘটে যাওয়া দৃশ্য গুলো দেখছিলো। এরমধ্যেই আহান উচু স্বরে মেঘকে উদ্দ্যেশ্য করে ডেকে বললো
“মেঘ, এভাবে খালি গায়ে তো আর বাড়িতে ফিরতে পারবো না। তোমার রুম থেকে আমার হুডিটা নিয়ে আসো।”
কথাটা মেঘের কানে পৌছানোর সাথে সাথে ‘ও’ এক দৌড়ে নিজের রুমের দিকে চলে গেলো। আর আজম রহমান চমকে আহানের দিয়ে চোখ বড় বড় করে তাকালেন। এতোক্ষনে উনি খেয়াল করলেন যে আহান খালি গায়ে ওনার সামনে দাড়িয়ে আছে। আজম রহমানকে এতোটা চমকাতে দেখে একটু বাকা হেসে বললো
“আরে মিঃ রহমান এতোটা চমকে উঠলেন কেনো? এখানে চমকানোর মতো কিছুই হয়নি। পাইপ বেয়ে উপরে উঠতে উঠতে প্রচন্ড গরম লাগছিলো। তাই হুডিটা খুলে মেঘের রুমে রেখে ওকে খাবার খাওয়াতে বসেছিলাম। তাছাড়া আপনার মেয়ের সাথে আর উল্টাপাল্টা কিছুই করিনি। কারন আপনার ভাইয়ের ছেলের মতো মেয়েদের সাথে অসভ্যতা করার স্বভাবটা আমার মধ্যে নেই।”
আহানের কথা শেষ হওয়ার সাথে সাথে মেঘ দৌড়াতে দৌড়াতে আহানের হুডিটা নিয়ে ওর সামনে এসে দাড়ালো। আহান মুচকি হেসে মেঘের হাতে থেকে হুডিটা নিয়ে গায়ে পড়ে নিলো। তারপর আজম রহমানের দিকে তাকিয়ে বললো
“আসছি মিঃ রহমান। আশা করছি খুব শিগ্রই আপনার সাথে আবার আমার দেখা হবে।”
কথাটা বলে আহান সামনে এগোতে নিলেই মেঘ এসে ওর হাত আকড়ে ধরে ওর দিকে কাতর দৃস্টিতে তাকালো। আহান বেশ ভালো করেই বুঝতে পারছে যে আবীরের বাজে বিহেইবিয়ারে মেঘ আজকে ভিষন ভয় পেয়েছে। তাই ‘ও’ মেঘের গালে আলতো করে হাত ছুইয়ে দিয়ে মুচকি হেসে বললো
“ভয় পেও না মেঘ পরী। ওই ছাগলটা তোমার কিচ্ছু করতে পারবে না। আমি তোমার থেকে যতো দূরেই থাকি না কেনো, তোমার আশেপাশে আমি অন্য কাউকে আসতে দিবো না। বিকজ তোমাকে স্পর্শ করার অধিকার আমি ছাড়া আর কারোর নেই।”
আহানের কথা শেষ হতেই আজম রহমান এসে মেঘের হাত ধরে টেনে ওকে আহানের থেকে দূরে সরিয়ে নিয়ে আসলো। আহান এগিয়ে এসে আবীরের সামনে দাড়িয়ে চোয়াল শক্ত করে বললো
“আজকের পর থেকে আমি যদি শুনেছি যে তুই আমার মেঘ পরীর আশেপাশেও গিয়েছিস। তাহলে তোকে আমি এমন জায়গায় মারবো যে তুই জীবনে আর বাবা হতে পারবি না। সারা জিবনের মতো তোর ভবিষ্যৎ অন্ধকার হয়ে যাবে।”
কথাটা বলে আহান আর এক মুহূর্তও ওখানে দাড়ালো না। হনহন করে বাসা থেকে বের হয়ে বাইরে চলে গেলো। আর আহানের যাওয়ার দিকে তাকিয়ে থাকতে থাকতে মেঘের গাল গড়িয়ে পানি পড়তে লাগলো।
#চলবে…….