#মিশে_আছো_মুগ্ধতায়
#লেখিকাঃতানিশা_আহিয়াদ_তিশা
#পর্বঃ1 (সূচনা)
তাড়াহুড়ো করে দ্রুত পায়ে ভার্ষিটির গেট দিয়ে ভিতরে ঢুকছে একটা মেয়ে।গেট দিয়ে ভিতরে ঢোকার পর কিছুটা দূর যেতেই দুটো ছেলে এসে মেয়েটার সামনে দাড়ায়।আচৎমকা এভাবে ছেলে দুটোকে সামনে দাড়াতে দেড়ে মেয়েটা ভয় পেয়ে কিছুটা পিছিয়ে যায়।মেয়েটার এমন ভিতু ফেইজ দেখে ছেলে দুটো বাকা হাসে।তারপর ওদের মধ্যে থেকে একটা ছেলে মেয়েটাকে উদ্দ্যেশ্য করে জিঙ্গেস করে
“কি নাম তোমার?”
মেয়েটা কিছুক্ষন চুপ থেকে তারপর স্বাভাবিক ভাবেই বললো
“মায়া।”
ছেলেটা মুখ বাকিয়ে বললো
“শুধু মায়া?আগে পরে কিছু নেই?”
মায়া সোজাসাপ্টা ভাবে বললো
“হ্যা আছে তো,কিন্তু আপনাদের বলার প্রয়োজন মনে করছি না।”
অন্য ছেলেটা খানিকটা রাগি কন্ঠে বললো
“দেখে তো নিউ স্টুডেন্ট মনে হচ্ছে।এর আগে তো কখনো ভার্সিটিতে দেখিনি।আর প্রথম দিন এসেই সিনিয়রদের সাথে বেয়াদবি করা শুরু করে দিয়েছো?”
মায়া ভ্রু কুচকে বললো
“কখন বেয়াদবি করলাম?আমি তো কোনো বেয়াদবি করিনি।শুধুমাএ আমার পুরো নামটা আপনাদের বলার প্রয়োজন মনে করছি না,এটা বলেছি।এখানে বেয়াদবির কি দেখলেন?আর আপনারা হুট করে এসে এভাবে একটা মেয়ের পথ আটকে দাড়িয়েছেন এটা কোন ধরনের ভদ্রতা একটু বলবেন প্লিজ?”
প্রথম ছেলেটা বললো
“এই মেয়ে তুমি আবার আমাদের মুখে মুখে তর্ক করছো?তোমার সাহস তো কম না?ভেবেছিলাম বাচ্চা মেয়ে নতুন এসেছো হালকা করে একটু র্যাগ দিয়ে ছেড়ে দিবো।কিন্তু তোমার এই বেয়াদবির জন্যে তো তোমাকে শাস্তি পেতেই হবে।তুমি জানোনা তুমি কাদের সাথে লাগতে এসেছো।”
মায়া শক্ত কন্ঠে বললো
“আমার জানার দরকারও নেই আপনারা কারা।আর খবরদার যদি ভুলেও আমাকে র্যাগ দেওয়ার কথা ভেবেছেন তাহলে আমি সোজা গিয়ে প্রিন্সিপালের কাছে কম্পেলেইন করে আসবো।এখন সরুন সামনে থেকে আমার দেরি হয়ে যাচ্ছে।”
কথাটা বলে মায়া ছেলে দুটোকে সাইড কাটিয়ে হনহন করে ভিতরের দিকে চলে গেলো।ছেলে দুটো কয়েকবার পিছন থেকে ডেকে মায়াকে দাড়াতে বললো।কিন্তু মায়া ওদের কোনো কথাই কানে তুললো না।
________________________
দুটো ক্লাস করার পর অফ পিড়িয়ডে ভার্ষিটির ক্যান্টিনে চলে আসলো মায়া।এই মুহূর্তে ওর পেটের মধ্যে থাকা সুচো গুলো চিল্লিয়ে চিল্লিয়ে বলছে,মায়ার বাচ্চা এখনি কিছু খেতে দে।নাহলে তোর পেটের নাড়ি-ভুড়ি খেয়ে তোর পেট খালি করে ফেলবো।
মায়া ক্যান্টিনে এসে এক প্লেট নুডুলস অর্ডার দিয়ে এক কর্নারের টেবিলে গিয়ে বসে পড়লো।তারপর ব্যাগ থেকে ফোন বেড় করে চুপচাপ ফোন স্ক্রল করতে লাগলো।কিছুক্ষন ফোন স্ক্রল করার পর মায়া খেয়াল করলো হঠাৎ করেই চারপাশটা কেমন নিস্তব্ধ হয়ে গেছে। ‘ও’ ফোন থেকে চোখ সরিয়ে সামনে তাকাতেই দেখলো ক্যান্টিনে উপস্থিত অন্যান্য ছেলে মেয়েরা সব একদম চুপ হয়ে গেছে।আচৎমকা এরকম হওয়ার কারন খুজতে মায়া সবার দৃষ্টি অনুসরন করে দরজার দিকে তাকালো।তাকিয়েই দেখলো তখনকার সেই ছেলে দুটো আর সাথে আরো কিছু ছেলে-মেয়ে ক্যান্টিনের দরজা দিয়ে ভিতরে প্রবেশ করছে।
ছেলেগুলো ভিতরে এসে সোজা মায়ার টেবিলের সামনে এসে দাড়িয়ে পড়লো।মায়া তীক্ষ্ম দৃষ্টিতে ছেলে-মেয়ে গুলোর দিকে তাকালো। ‘ও’ এটা বুঝতে পারছে না এরা এখানে কেনো এসেছে। তাই ‘ও’ ভ্রু কুঞ্চিত করে বললো
“এখানে এসে এভাবে দাড়িয়ে আছেন কেনো?কিছু বলার হলে বলুন নাহলে যান এখান থেকে।”
মায়ার কথা শেষ হতেই ওই ছেলে-মেয়ে গুলোর পিছন থেকে কেউ বলে উঠলো
“কিছু তো অবশ্যই বলার আছে।বলবো দেখেই তো এতোদূর আসলাম।”
কথাটা বলতে বলতে একটা ছেলে এসে মায়ার সামনের চেয়ারটায় বসে পড়লো।মায়া অপলক দৃষ্টিতে ছেলেটার দিকে তাকিয়ে রইলো।পিছন থেকে একটা ছেলে বললো
“মিহির ভাই এই হলো সেই মেয়েটা।”
মিহির তীক্ষ্ম দৃষ্টিতে মায়ার দিকে তাকিয়ে বললো
“সিনিয়রদের সাথে বেয়াদবি করার শাস্তি কি জানো?”
মায়া এতোক্ষন এক দৃষ্টিতে মিহিরের দিকেই তাকিয়ে ছিলো।কিন্তু মিহিরের কথাটা কানে আসতেই ওর ধ্যান ভেঙে গেলো। ‘ও’ মিহিরকে উদ্দ্যেশ্য করে কাঠ কাঠ গলায় বললো
“জানি না,জানতেও চাই না।আর আমি কারো সাথে বেয়াদবি করিনি।সো শাস্তি পাওয়ার কোনো প্রশ্নয়ই উঠে না।”
মিহির রাগি কন্ঠে বললো
“ভালোই সাহস আছে দেখছি।প্রথমে আমার ফ্রেন্ডদের সাথে মিসবিহেব করেছো।এখন আবার আমার সাথে জোড় গলায় কথা বলছো?তুমি জানো আমি কে?”
মায়া মুখ বাকিয়ে বললো
“কেনো,আপনি জানেন না আপনি কে?”
মায়ার কথা শুনে মিহিরের ফ্রেন্ডরা সবাই ফিক করে হেসে দিলো।মিহির ওদের সবার দিকে রাগি দৃষ্টিতে তাকাতেই সবাই ঠোট কামড়ে নিজেদের হাসি আটকানোর চেষ্টা করতে লাগলো।মিহির মায়াকে কিছু বলতে যাবে তার আগেই কোথা থেকে একটা ছেলে দৌড়ে এসে মিহিরের পাশের চেয়ারটায় ধপ করে বসে পড়লো।তারপর হাপাতে হাপাতে মিহিরকে উদ্দ্যেশ্য করে বললো
“সরি ইয়ার আসতে একটু লেইট হয়ে গেলো।”
কথাটা বলে ছেলেটা সামনে তাকাতেই ওর চোখ মায়ার দিকে গেলো।ছেলেটা মায়ার দিকে তাকিয়ে একটা মুচকি হাসি দিয়ে ডান হাতটা ওর দিকে বাড়িয়ে দিয়ে বললো
“হাই,আমি আহির।”
মিহির ঝাড়া দিয়ে আহিরের হাতটা সরিয়ে ফেলে বললো
” এখানে কি তোকে ওর সাথে পরিচিত হওয়ার জন্যে ডেকেছি?”
আহির একটা বাকা হাসি দিয়ে বললো
“আরে শাস্তি দেওয়ার আগে নিজেদের পরিচিয়টা একটু দিয়ে নিবো না?নাহলে কিভাবে বুঝবে যে কারা ওকে শাস্তিটা দিলো।”
আহিরের কথা শেষ হতেই মাঝ বয়সি একটা লোক এক প্লেট নুডলস এনে মায়ার সামনের টেবিলের উপরে রাখলো।তারপর নরম কন্ঠে মিহিরকে উদ্দ্যেশ্য করে বললো
“মিহির বাবা এই মেয়েটা একটু আগে এটা অর্ডার করেছিলো।”
মিহির কিছুক্ষন নুডুলসের বাটিটার দিকে তাকিয়ে থেকে মনে মনে কিছু একটা ভাবলো।তারপর লোকটাকে উদ্দ্যেশ্য করে বললো
“চাচা আপনাদের কাছে চিলি সস আছে তাইনা?”
মিহিরের প্রশ্ন শুনে লোকটা হ্যা সূচক মাথা নাড়লো।মিহির লোকটার দিকে তাকিয়ে একটা হাসি দিয়ে বললো
“তাহলে এখনি গিয়ে আস্ত এক বোতল চিলি সস নিয়ে আসুন।”
মিহিরের কথা শুনে লোকটা দ্রুত পায়ে ভিতরে চলে গেলো।মায়া চোখ ছোট ছোট করে মিহিরের দিকে তাকিয়ে বোঝার চেষ্টা করছে মিহির ঠিক কি করতে চাইছে।কিছু ক্ষনের মধ্যেই লোকটা একটা চিলি সসের বোতল নিয়ে এসে মিহিরের হাতে দিলো।মিহির সসের বোতলের ঢাকনাটা খুলে পুরো বোতলের সসটা নুডুলসের উপর ঢেলে দিলো।মিহিরের কান্ড দেখে মায়ার চোখ দুটো রসগোল্লার মতো হয়ে গেলো।মিহির শয়তানি একটা হাসি দিয়ে বললো
“এখন তোমার কাছে দুটো অফশন আছে।আমাদের সাথে বেয়াদবি করার জন্যে হয় তুমি এখানে সবার সামনে কান ধরে উঠ-বস করতে করতে আমাদের সবাইকে পঞ্চাশ বার সরি বলবে।নাহলে এই বাটিতে থাকা ঝাল নুডলসটা তোমাকে এখনি খেয়ে শেষ করতে হবে।এবার ভেবে দেখো তুমি কোনটা করবে।”
মায়া রাগি কন্ঠে বললো
“দুটোর একটাও করবো না।আমি আপনার কথা শুনতে বাধ্য নই।”
মায়ার কথা শুনে মিহির আর আহির হো হো করে হেসে দিলো।সাথে ওদের ফ্রেন্ডরাও সবাই হাসতে লাগলো।আহির মায়াকে উদ্দ্যেশ্য করে বললো
“কে বলেছে তুমি আমাদের কথা শুনতে বাধ্য নও?এই ভার্সিটিতে লেখাপড়া করতে হলে তো তোমাকে আমাদের কথা শুনতেই হবে।নাহলে এক ঘন্টার মধ্যে এই ভার্সিটি থেকে তোমাকে সসম্মানে বের করে দেওয়া হবে।এবার ভেবে দেখো তুমি আমাদের কথা শুনবে নাকি এখান থেকে বিদায় নেওয়ার জন্যে নিজেকে প্রস্তুত করবে?”
আহিরের কথা শুনে মায়া থম মেরে বসে রইলো। ‘ও’ ভালো করেই জানে এখন যদি এদের কথা না শোনে তাহলে ওকে আর এই ভার্সিটিতে রাখা হবে না।কিন্তু সেটা তো কিছুতেই হতে দেওয়া যাবে না।এখান থেকে চলে গেলে তো ওর সব প্লান নষ্ট হয়ে যাবে।এতো দূর এসেও হেরে গিয়ে ফিরে যেতে হবে।কিন্তু তাই বলে সবার সামনে কান ধরে উঠ-বস করবে?যখন কোনো ভুল করেইনি তার জন্যে এদেরকে সরি বলবে?এতোটা নিচে নামিয়ে ফেলবে নিজেকে?মায়া অনেক ভেবে সিন্ধান্ত নিলো ‘ও’ নুডুলসটা খাবে।
কিন্তু ছোট বেলা থেকেই ওর ঝালে প্রচণ্ড রকম এলার্জি আছে।একটুখানি ঝাল খেলেই অসুস্থ হয়ে পড়ে।আর সেখানে এতোখানি চিলি সস দেওয়া নুডুলস খেলে তো মরেই যাবে।কিন্তু তারপরেও ওর কিছুই করার নেই।নিজের লক্ষ্যে পৌছাতে গেলে তো এতোটুকু রিস্ক নিতেই হবে।
মায়া একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে নুডুলসের বাটিটা থেকে নুডুলস খেতে শুরু করলো।কয়েক চামচ মুখে দিতেই ঝালে মায়ার চোখ থেকে অনবরত পানি পড়তে লাগলো।ওর পুরো ফেইজ লাল টকটকে হয়ে গেছে।কিন্তু তারপরেও ‘ও’ খাওয়া থামাচ্ছে না।মিহির,আহির সহ ওখানে উপস্থিত সবাই অবাক হয়ে মায়ার দিকে তাকিয়ে আছে।ওকে দেখেই বোঝা যাচ্ছে এই নুডুলসটা খেতে ওর কতোটা কষ্ট হচ্ছে।তারপরেও কিছু না বলে কিভাবে এতোটা ঝাল খাচ্ছে সেটা কারো মাথায় ঢুকছে না।মিহির মায়ার দিকে এক ধ্যানে তাকিয়ে থাকতে থাকতে হঠাৎ চোখ জোড়া বন্ধ করে ফেললো।আর চোখের সামনে ভেষে উঠলো আবছা কিছু স্মৃতি।
যেখানে দেখা যাচ্ছে ছোট একটা বাচ্চা মেয়ে ঝাল খেয়ে হিশাচ্ছে। মেয়েটা বারবার নাক টানছে আর তার চোখ থেকে অনরগল পানি পড়ে যাচ্ছে।একটা সময় মেয়েটা হিশাতে হিশাতে অজ্ঞান হয়ে চেয়ার থেকে ঠাস করে ফ্লোরে পড়ে গেলো।
মিহির ঝট করে চোখটা খুলে ফেললো।তারপর আর এক মুহূর্তও দেড়ি না করে মায়ার সামনে থাকা নুডুলসের বাটিটা ছুড়ে ফ্লোরে ফেলে দিয়ে বসা থেকে দাড়িয়ে সামনের দিকে হাটা দিলো।মিহিরের এমন কান্ডে সবাই হতবম্ভ হয়ে গেলো।মায়া মিহিরের যাওয়ার দিকে তাকিয়ে তাছিল্য হাসলো।তারপর মনে মনে বললো
আজকে যা করলেন এরজন্যে একদিন হয়তো অনেক আফসোস করবেন মিঃ তাসনিধ সায়াজ মিহির।সেদিন হয়তো অনেকটা দেড়ি হয়ে যাবে।আফসোস করা ছাড়া আর কিছুই হয়তো করার থাকবে না।
_____________________
#চলবে,,,
বিঃদ্রঃ আবার আপনাদের ফেবারিট জুটি গুলো নিয়ে হাজির হলাম।আশাকরি সবার ভালো লাগবে গল্পটা।