#মিঠা_রোদ
#পর্ব:৮
#লেখা:সামিয়া_খান_প্রিয়া
“সত্যি বলি?একটা পনের বছরের মেয়েকে আমি সাধারণ বাচ্চা হিসেবে নয়।নারী হিসেবে দেখতে আরম্ভ করেছি।না সে আমাকে যৌ ন তা মনে করিয়ে দেয়না।তোশা স্নিগ্ধ সুন্দর একটি অপরিপক্ক ফল।যার এখনও রোদে পুড়ে সুমিষ্ট হওয়া বাকী।তবে কেন আমি ওকে সাধারণ একজন নারী যার সাথে বৈধ সম্পর্ক গড়ে তোলা যাবে সেই হিসেবে দেখছি?আমার মাথায় কী কোনো সমস্যা হচ্ছে?মেবি আই এম গোয়িং ক্রেইজি বিকজ অফ দ্য লোনলিনেস।”
নিজের জীবনের অনেকটা সময় অতিবাহিত করা কবীর শাহ চোখ বন্ধ অবস্থায় কথাগুলো বলল।বিন্দু বিন্দু ঘাম তার কপাল জুড়ে ছড়িয়ে আছে।পুরুষালি সুললিত গম্ভীর কণ্ঠ তার।নিজের বিলাসবহুল অফিস রুমে বসে আছে।তার সামনে সমবয়সী আগুন্তকের ঠোঁটের কোণা ঈষৎ বেঁকে গেলো।
“এই কথা মায়ান ও তাহিয়া জানলে কী হবে জানিস তুই কবীর?”
“পারভেজ, ওরা জানবে কেন?”
“নাহ যদি জানে।কারণ আমার মনে হচ্ছে তোশার সঙ্গে তোর বিষয়টা একটুতে থেমে থামবেনা।”
“স্টপ।সেই বাচ্চাটা ছোট।ও হয়তো আমার অনুভূতি বা মাইন্ড চেঞ্জের বিষয়টা অনুধাবন করতে পারবেনা।”
“আজকালের বাচ্চা আমাদের মতোন নয়।এটা আধুনিক যুগ।একটু আগে গার্ডেনের বিষয়টা আমি খেয়াল করেছি।যদি বলি তোশার চোখে আলাদা টান কাজ করছে।”
“বেশী ভাবছিস।”
“আমি একজন সাইকোলজিস্ট।হিউম্যান বিহেভিয়ার সমন্ধে জ্ঞানকে তুচ্ছ করার অবকাশ নেই কিন্তু।”
কবীরের তামাটে কপাল কুঞ্চিত হলো।তার চোখেমুখে অবিশ্বাসের ছাঁপ।পারভেজ গলা পরিষ্কার করে শুধালো,
“বিশ্বাস হচ্ছে না তো?”
“অবশ্যই না।”
“হয়ে যাক পরীক্ষা।যদি আমার কথা সঠিক হয় তবে পরের শুক্রবার তোর বাসায় ওয়াইন দিয়ে শাওয়ার নিবো।”
“আমার বিশ্বাস দূর্লভ বোতল গুলো আমি বাজিতে হারবো না।”
“দেখা যাক।বাই দ্যা ওয়ে তোশা এখনও তো আছে তাইনা?”
“হয়তো।”
“একটা কথা বল তো।মেয়েটা কী বলে ডাকে তোকে।”
কবীরের স্মরণে হলো সম্বোধন নিয়ে দুজনের মান অভিমান।যা সবেমাত্র আজ ভেঙেছে।সে একটু লজ্জা পেলো বিষয়টা বন্ধুকে জানাতে।
“আমাকে কিছু বলে ডাকেনি এখনও।”
“ওকে।”
পারভেজ অফিস রুম থেকে বের হয়ে গেলো।শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত কক্ষ থেকে বের হওয়ার দরুণ পুরু ত্বকে জ্বা লা তৈরী হলো।দ্বিতীয় তলা থেকে নেমে আসতেই তোশার সঙ্গে দেখা হয়ে গেলো তার।তাহিয়ার সঙ্গে মাঝেমধ্যে এক দুইবার দেখা হয় পারভেজের।যার কারণে তোশাকে সে চিনে।পকেট থেকে কিটক্যাট বের করে মেয়েটির দিকে এগিয়ে দিলো।
“কেমন আছো তোশামণি?”
“পারভেজ আঙ্কেল।কেমন আছেন?”
তোশার কণ্ঠে উচ্ছাস মিশে আছে।সে কিটক্যাট হাতে নিয়ে বলল,
“থ্যাংক ইউ আঙ্কেল।”
“আমাকে নয় তোশামণি।কবীর আঙ্কেলকে বলবে?”
“সে আপনার আঙ্কেল লাগে?”
“আমার কীভাবে আঙ্কেল লাগবে বলো?তোমার কথা বলেছি।”
চওড়া বিস্তৃত হাসি মিলিয়ে গেলো তোশামণির মুখবিবর থেকে।প্রাণহীন হয়ে উঠলো কণ্ঠ।
“সে বলেছে আমি তাকে আঙ্কেল ডাকি?”
“হ্যাঁ কবীর বলল তো।”
“ভুল বলেছে।আমি কখনো তাকে এভাবে ডাকিনি।”
হুট করে তোশার কণ্ঠের তরঙ্গ বৃদ্ধি পেলো।সে শক্ত করে নরম চকলেটটি চাপ দিয়ে ভেঙে ফেললো।পারভেজের মুখে হাসি ফু্ঁটে উঠলো।জিতে যাওয়ার হাসি।একটু পিছন ঘুরে দেখলো কবীর অনতিদূরে দাঁড়িয়ে আছে।প্রচন্ড ঘামছে সে।পারভেজ উষ্ণ শ্বাস ফেলে বলল,
“এতো হাইপার হচ্ছো কেন তোশা?”
“মিথ্যাবাদী সুদর্শন পুরুষ।”
“কার কথা বলছো?”
“কারো না।আমি কারো কথা বলছিনা।”
তোশার মধ্যে অনেক ধরণের ইমোশন দেখা যাচ্ছে।মেয়েটা চোখের পানি লুকিয়ে জায়গা থেকে উঠে দাঁড়ালো।নিজেকে গুছিয়ে জোরে জোরে হেঁটে জায়গাটি ত্যাগ করলো।পারভেজের মুখে আত্নগরিমা ফুঁটে উঠলো।সে পিছন ফিরে আহত কবীরের উদ্দেশ্য উঁচু সুরে বলল,
“আমি যা বলেছিলাম।মেয়েটা তোকে পছন্দ করে।যা তোর সাব-কনশাস মাইন্ড ধরতে পেরেছে।”
কবীর আগের মতো জবাব দিলো,
“আই ডোন্ট বিলিভ ইট।”
“অবিশ্বাসে সত্য বা ভবিষ্যত বদলে যাবেনা।”
(***)
বিভ্রান্ত কবীর বাসায় ফিরে এলো আকাশসম দুঃখ নিয়ে।এমন সময় ফোনে ম্যাসেজ এলো।বিদেশ থাকাকালীন তার সবথেকে কাছের বন্ধু এলেক্সের বিয়ে আগামী পনের তারিখে।এই ছেলেটির কাছ থেকে সে শরীর চর্চা শিখেছিল।যা আজও তাকে তারুণ্য ধরে রাখতে সাহায্য করছে।কবীর বিয়েতে যাওয়ার জন্য সম্মতি দিয়ে দিলো।ভাগ্যিস দেশের বাহিরে যাওয়ার জন্য সুযোগ এলো তার।অনেকক্ষণ ধরে তোশার ব্যাপারটা মাথা থেকে সে বের করতে পারছেনা।এই বাহানায় যদি কিছু একটা হয়।কবীর ভেবে পায়না কেন আর কীভাবে তোশাকে সে পছন্দ করা শুরু করেছে।বিষয়টি কী নীতি বিরুদ্ধ নয়?বাড়ীর ভেতর ঢুকতেই গুনগুন করে কারো গীত গাওয়া শোনা গেলো।কবীর মুচকি হেসে মা বাবার রুমের সামনে দাঁড়ালো।নিজেকে সে খুব ভাগ্যবান মনে করে কারণ বাবা মা দুজন বেঁচে আছে তার।ছোট্ট আহনাফ মন দিয়ে দাদীর গীত শুনছে।
“মা।”
থেমে গেলো সেতু।বৃদ্ধ চোখ তুলে নিজের সুর্দশন ছেলেকে দেখলো।
“বাবু দেখ তো আমার নাতীটা ঠিক তোর মতো হয়েছে।সন্ধ্যা হলেই গা ঘেঁসে বসে পড়ে।”
“নিশ্চয় পড়তে না বসার বাহানা এটি।কী ব্যাপার আহনাফ শাহ।পড়া নেই আপনার?”
আহনাফ মাথা দুলালো এপাশ ওপাশ।যার অর্থ নেই।কবীর পুনরায় শুধালো,
“কেন নেই?”
“পড়া শেষ করেছি বিকেলে।”
“আচ্ছা।আহনাফ দেখছি গুড বয়।চলেন আমার সাথে।আজ ডোরেমনের মুভিটা শেষ করবো আমরা।চলেন।”
কবীর হাত বাড়িয়ে দিলে ছোট্ট আহনাফ তাতে ঝুলে পড়লো।সেতু পিছন থেকে তৃপ্তির হাসি হাসে।বাবা ছেলের এতোটা মিল।
আহনাফকে নিয়ে সোজা নিজের রুমে এলো কবীর।বাচ্চাটি কৌতুহলী হয়ে শুধালো,
“ডোরেমন বাস্তবে আছে বাবা?”
“না তো।”
“থাকলে আমি ওকে বলতাম এমন কোনো গ্যাজেট দাও যাতে আমি আইসক্রিমকে নিয়ে আসতে পারি।”
“তাই?কিন্তু আইসক্রিম তো আমি নিজেই এনে দিতে পারি।”
“সত্যি বাবা?”
“সত্যি তো।”
রুমের ভেতর নিয়ে আহনাফকে বিছানায় বসালো সে।পাশের ছোট্ট ফ্রিজ থেকে আইসক্রিম বের করে ছেলেটির হাতে দিলো।
“নাও খাও আমি গোসল করে আসছি।”
আহনাফ পিটপিট করে হাতে রাখা শীতল খাদ্য বস্তুটি দেখলো।তার বাবাকে সে ভীষণ করে বলতে চাচ্ছে আহনাফের বলা আইসক্রিম একটা জলজ্যান্ত সুন্দর মানুষ।যার ভালো নাম তোশামণি।
চলবে।
এডিট ছাড়া পর্ব।কী ব্যাপার উপন্যাসটি ভালো লাগছেনা?
চৈতি হাওয়া বইটি প্রকাশ পেয়েছে পাঠক।সুলভ মূল্য গ্রন্থাবলি.কম থেকে অর্ডার করতে পারেন।