#মিঠা_রোদ
#পর্ব:৫৬
#লেখা:সামিয়া_খান_প্রিয়া
“এতো রাত অবধি তুমি অফিসে?হুট করে কী দরকার হলো যে আজ মনে পড়লো তোমার একটা ইভেন্ট ম্যানেজমেন্টের কোম্পানিও আছে?বিশেষ কিছু কবীর?”
তাহিয়ার কণ্ঠে স্পষ্টত খোঁচা বিদ্যমান।সেটাতে অবশ্য কবীর ভ্রক্ষেপ করলো না।হাতের ফাইলটা সরিয়ে দিয়ে বলল,
“ম্যানেজার বলল কিছু পেপার্সে সাইন করতে হবে।তুমি নেই দেখে আমাকে কল করেছিলো।”
“বাহ!এতে বোঝা গেলে আমরা পার্টনার নয়।আমি তোমার অধীনস্থ চাকরি করা একজন মানুষ।”
“বেশ এগ্রে’সিভ লাগছে তোমাকে।বসো এতো রাতে তুমি এখানে কেন?”
তাহিয়া কবীরের সামনের চেয়ারে বসলো।বিগত দিন গুলোতে যা কিছু ঘটে গেলো সেই সুবাধে দুজনের এই মুখোমুখি বসা যেন ছবি তুলে ফ্রেমে বাঁধিয়ে রাখার মতো ব্যাপার।সবসময়ের মতো আজও কবীরের বেশভূষা শৈল্পিক।অসুস্থতা,কুচিন্তা গুলো বাহ্যিক অবস্থাকে বিন্দুমাত্র প্রভাবিত করেনি।
“এসেছিলাম কারণ এই কাজ গুলোর কথা হুট করে মনে হয়েছিল।তা দেখি আমার প্রয়োজন শেষ হয়ে আসছে।”
“মটেও না।তোমাকে সকলে স্পেস দিচ্ছে তাহিয়া।”
“দয়া?কী অদ্ভূত না কবীর?”
“এখানে অদ্ভূত ব্যাপার কিছু নেই।এখন যাওয়ার দরকার নেই।বসো আমি দিয়ে আসবো।রাত নয়টা বাজে।”
“তোমার সাথে দেখা হয়ে গিয়ে ভালো হলো।এসব তুমি করিয়ে চলেছো না?নিজের দিকে সবকিছু পজেটিভ ভাবে আনতে?”
দ্বিধা নিয়ে কবীর শুধালো,
“কীসের কথা বললে?”
তাহিয়া ফোন বের করে একটা পোস্ট কবীরকে দেখালো।দেশের স্বনামধন্য একজন সাংবাদিক তোশা ও কবীরের সম্পর্ককে বাহবা দিয়েছে।
“এইযে এটা।”
“আমার এসবের কোনো দরকার নেই তাহিয়া।তারা নিজে থেকে করছে।সবাই তো বুঝতে পারছে তোশা কতোটা পার্ফেক্ট আমার জন্য।”
তাহিয়া উচ্ছাসিত কণ্ঠে বলল
“একদম কথাটা তুমি।বিজনেস জগতে একজন বাঘ।যাকে মন্ত্রীরা তোয়াজ করে চলে।আমি জানি কতো টাকার মালিক তুমি।তো সে বারো বছরের মেয়েকে বিয়ে করলেও বাহ বাহ করবে সবাই।”
কবীর স্মিত হেসে ফাইল গুলোতে মনোযোগ দিলো।তাহিয়াকে এখন কিছু বোঝানো যাবেনা।কিন্তু তবুও তোশার কথা জিজ্ঞেস করার মতোন সাহস দেখালো।
“তোশা কেমন আছে তাহিয়া?খায় ঠিকমতো?”
“ওর কথাটা কী না বললে হতো না?”
“না।কারণ আমার সাথে কথা বন্ধ ছিল মাঝের চার বছর।তখন মেয়েটা ঠিকঠাক খাওয়া দাওয়া কিংবা অসুস্থতায় ভুগতো বেশী।”
তাহিয়া অবাক হয়ে কবীরের দিকে তাঁকিয়ে রইলো।স্মরণে হয়ে গেলো অতীত।ভ্রু কুঁচকে বলল,
“অথচ দারুণ অন্ধ ব্যক্তি আমি।তোমার সব গল্প ওর কাছে করতাম।দুজনকে আস্কারা আমি দিয়েছি।”
“যা হওয়ার ছিল তাহিয়া।প্রশ্নগুলোর জবাবটা দাও।”
“নাহ।”
তাহিয়া উঠে দাঁড়ালো।ইদানীং বুকটা ব্যাথা হয় ভীষণ।যদি হার্ট অ্যাটাক করে কেমন হবে?তোশাকে এই দুনিয়াতে একা রেখে চলে যাবে?কীভাবে থাকবে মেয়েটা?পরক্ষণে কবীরের নামটা মন থেকে ভেসে এলো।সে জানে তোশার জন্য মানুষটা সঠিক।কিন্তু অনেক কিছুকে আড়াল করে এই ভাবনাটা ভাবতে হবে।বয়স,সম্পর্ক,পদমর্যাদা, মানুষের কথা। দীর্ঘশ্বাস ফেলে রুম থেকে বের হয়ে গেলো তাহিয়া।কবীর অবশ্য আঁটকালো না।
হাতের ফাইলটা শেষ করে কবীর চেয়ারে হেলান দিয়ে বসলো।এসি আছে তবুও গরম লাগছে।বেলাডোনার সাথে কথা হচ্ছে না আজ চার দিন।মেয়েটা কেমন নেশা কবীরের জন্য।বিগত কয়েকটা দিন শরীর সুস্থ হলেও কবীরের দিন খুব খারাপ যাচ্ছে।দিশাকে ফিরিয়ে আনার জন্য তার মা খুব প্রেশার দিচ্ছে।কিন্তু এটা কখনো পসিবল না।বাড়ীতেও শান্তি নেই এখন।শুধু আহনাফকে একবার দেখার জন্য বাড়ীতে ফিরে।ফোন বেজে উঠলো কবীরের।তার বিজনেস ডিলের জোয়ার ভাসছে এখন।আশ্চর্য মানুষ ভাবে একটা জিনিসকে নেগেটিভভাবে প্রচার করলে সেটার পরিধি কমে যায়।কিন্ত বাস্তবে হয় উল্টো।কবীরের লাভ লাইফের উপর ভিত্তি করে সে এতোগুলো ডিল পাচ্ছে?হ্যা সেটাই দাঁড়ায়।ফোনটাকে পাশে রেখে গভীর চিন্তায় মন দিলো সে।হুট করে একটা বিষয় মাথায় এলো এবং তার অধরযুগল বিস্তৃত হয়ে গেলো।সে কীভাবে ভুলে এই কথাটি?
(***)
নিকষ কালো অন্ধকার।এই রাতের বেলা কে যেন পিঠা ভাজছে মনে হচ্ছে।কবীরের মা বলে এমন গন্ধে জিন আসে।কিন্তু তার সে ভয় নেই।তোশার নানার বাসার বাগানের ঝোপের এক কোণায় দাঁড়িয়ে আছে সে।গায়ের রঙ শ্যামলা হওয়ার দারুণ সুযোগ নিলো।যখন রাত গভীর হলো তখন পাইপ দিয়ে দোতালায় ওঠা শুরু করলো সে।নিজের শক্তপোক্ত ওজন নিয়ে ভয় ছিল অবশ্য।কিন্তু নেয়ামত সাহেব ভালো মজবুতভাবে বাড়ী তৈরী করেছে।মূলত যে পাইপটা ওটা ফাঁপা লোহার এবং খুব একটা কাজে লাগেনা।প্রায় পঁচিশ বছরের পুরোনো।অতীতে তাহিয়ার কাছে চিঠি এভাবে পৌঁছে দিতো সে।মায়ান ওতোটা শক্তিশালী না হওয়ায় বন্ধুর জন্য কাজটা কবীরই করতো।কে জানতো এতো বছর পর এই পথ কবীরকে সাহায্য করবে?
কবীর দুটো জিনিস ভেবে নিলো।ধরা পড়লে অন্তত পুলিশে দিবে না।কিন্তু আরো কথা শুনতে হবে অবশ্য।তোশাকে একবার দেখার জন্য এটা অন্তত করা যায়।শব্দহীন কদম ফেলে তোশার রুমের সামনে এসে দাঁড়ালো কবীর।তাহিয়া ভেতরে না থাকুক এটা প্রাণপণে চাচ্ছে।খুব অদ্ভূত ভাবে এ চাওয়া পূর্ণ হয়ে গেলো।তখুনি তোশা দরজা খুলে বিস্মিত দৃষ্টিতে তাঁকিয়ে রইলো।কবীর ছোট করে হেসে বলল,
“ভেতরে কেউ আছে?”
হাত ধরে তাকে ভেতরে টেনে আনলো তোশা।দুজনে বড় বড় নিশ্বাস নিচ্ছে।
“আপনি এখানে?আমার মনেই হচ্ছিলো আশেপাশে আছেন।”
“কীভাবে?”
“মেবি দুজনের টেলিপ্যাথি হয় একে অপরের সঙ্গে।আমার ভয় করছে।কেউ দেখেনি তো?”
“না।”
কবীর খুব করে খেয়াল করলো ভয়ার্ত ছোট এই মুখটাকে।আহারে তার মনের তৃষ্ণা।মিটলো কী এখন?তোশাকে হুট করে টেনে শক্ত করে নিজের বুকে মিশিয়ে নিলো কবীর।মিষ্টি সুগন্ধ নাকে এসে ঠেকলো।
“আমি মিস করেছি তোমাকে বেলাডোনা।কীভাবে কী করলে তোমাকে পাবো বলো তো?”
তোশার চোখ দুটো অশ্রুতে ভরে গেলো।কী জবাব দিবে সে?নিজেই তো প্রশ্নটির জবাব জানেনা।মুখটা উঁচু করে তামাটে পুরুষটিকে শুধালো,
“কেমন আছেন আপনি কবীর শাহ?”
“ভালো না।”
“হাতের ব্যাথা কমেছে?”
“মনের ব্যাথা বেড়েছে।”
“তাহলে চলুন পালিয়ে যাই।কেয়ামত থেকে কেয়ামত সিনেমার সালমান শাহ ও মৌসুমীর মতোন।এরপর পাহাড়ে
আশ্রয় নিবো।কিন্তু শেষে হ্যাপি এন্ডিং হবে আমাদের?”
শুভ্র কপাল থেকে চুলগুলো সরিয়ে কবীর শুধালো,
“হ্যাপি এন্ডিং যদি না হয় আমাদের?আমাকে ছাড়তে পারবে?আজ যদি বলি এটা আমাদের শেষ দেখা?”
চলবে।