মিঠা রোদ পর্ব ৪৬

0
1735

#মিঠা_রোদ
#পর্ব:৪৬
#লেখা:সামিয়া_খান_প্রিয়া

“তোশা নামের মেয়েটিকে প্রায় নিজের বাবার বন্ধুর সাথে দেখা যায়।বুঝিস না কাহিনী অন্যরকম।”

“এজন্য ভাবনায় চলে আসতো যার বাবা-মায়ের ডিভোর্স হয়েছে সে কীভাবে এতো উচ্চবিলাসী হতে পারে?”

নতসুরে ক্লাসের দুটো মেয়ে আলাপ করছে তোশার ব্যাপারে।অদ্ভূত কথা হলো তারা দুজন স্পিকারের অতি সন্নিকটে ছিল।এবং যেসব কথা বলেছে তা ক্লাসের সকলের কানে স্পষ্ট গিয়েছে।তোশা নির্বিকার দৃষ্টিতে বারংবার আঁখিপাতা ফেলছে।যে দুটো মেয়ে আলাপ করছিলো তাদের বান্ধুবীরা ইশারায় থামতে বলল।নিজেদের আড়ালের বক্তব্য এরকম সকলের শোনায় কোনো হেলদোল নেই যেন তাদের।

তোশা দীর্ঘ এক শ্বাস ছাড়লো।আশেপাশে তাঁকিয়ে দেখলো ছেলে-মেয়েরা তাকে দেখছে।চোখটি বন্ধ করে সে উঠে দাঁড়ালো।মেয়ে দুটির সামনে গিয়ে বলল,

“কথা পুরো করো।এক মিনিট স্পিকারটা নিজের দিকে ঘুরিয়ে নিতে পারো।”

“দেখো তোশা।”

“দেখছি।কী বলতে চাও ক্লিয়ার করে বলো।আমি নিজের বাবার বন্ধুর সঙ্গে যদি প্রেমটা রাঙিয়েও থাকি তবে সমাজের কী?”

“কিছুনা।বরং কিছু জিনিস দৃষ্টিকটূ।”

“সেক্ষেত্রে তোমাদের দৃষ্টিতে সমস্যা।তাছাড়া আমার মা সৎ ভাবে একজন সফল বিজনেস ওমেন।সে কতোটা ইনকাম করে আমি কীভাবে চলি তা না গুণলেও চলে।”

একটি মেয়ের তোশার কথাটি হয়তো হৃদয়ে লাগলো।সে অতি আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে উঠে দাঁড়িয়ে বলল,

“আমার খালাও ডিভোর্সি।তার সন্তানদের কাছে জিজ্ঞেস করলে জানতে পারবে বাবা ছাড়া কী অবস্থা হয়।অথচ তোমাকে দেখো?আর তোমার মায়ের কথা বললে?আমি যতোটা জানি সে নিজেও তোমার প্রেমিকের অফিসে জব করে।সুর কোথায় গিয়ে তাল হারিয়েছে সবটা আমাদের জানা।”

“তুমি কীভাবে জানলে সে আমার প্রেমিক?আমি তো বলিনি।”

“রোজ কার গাড়ীতে করে ঘুরে বেড়াও সব তো দেখা যায়।তাছাড়া এসব আমরা জেনে যাই।”

তোশা কপাল কুঁচকে রইলো কিছুক্ষণ।পরমুহূর্তে মনে পড়লো এই মেয়েটির সাথে বৃষ্টির ভালো চেনাজানা।বড় বিচিত্র অনুভূত হলো তোশার।কবীর শাহ তো বৃষ্টির সবথেকে আপন।তার সম্মান এভাবে উড়ানোর যৌক্তিকতা আসলে কোন জায়গায়?মেয়েটির সঙ্গে কথায় দ্বন্দে না গিয়ে সেখান থেকে উল্টো পথে হাঁটা ধরলো তোশা।পিছনে গুঞ্জন উঠে।হরেক রকমের কথার রঙ ছড়ায়।কিন্তু সে পাত্তা দেয়না।

(***)

“খুব বাজে পারফিউম।এটার জন্য তোকে দশ দিনের কারাদণ্ড দিলাম আমি।যা দূর হ।”

উল্লাসের মুখে কারাদণ্ডের কথা শোনে তার সেক্রেটারী মুখ ভেঙালো।সে এলেমেলো নায়কটার সান্নিধ্য থেকে মুক্তি পেলে স্বস্তি পায়।কিন্তু আফসোস রাজা নাম হলেও মনের জোর বড় দূর্বল ছেলেটির।

“স্যার,আপনার জুস।”

“জুস?তোর কী মনে হয় আমি বাচ্চা?এক মিনিট সেইভ করার পর একটু বেশী ইয়াং লাগছে কী?”

আয়নায় নিজের মুখটা ঘুরিয়ে ফিরিয়ে কিছুক্ষণ অবলোকন করলো উল্লাস।কিন্তু কোনো পরিবর্তন নেই।হ্যাঁ যদিও গালের মধ্যে নতুন একটা তিল উঠছে।মেয়েরা কী এটাও পছন্দ করবে?দরজা খোলার শব্দে আয়না দিয়ে সেদিকে তাঁকালো উল্লাস।তোশা ভ্রু কুঁচকে তাঁকিয়ে আছে।

“তোকে মটেও কবীর শাহ এর মতোন লাগছেনা সখা।সে কালো।তুই ভীষণ ফর্সা।বাদ দে।”

“তোর কী আমার অভিনয়ে সন্দেহ আছে সখী?”

“নব্বই শতাংশ।”

উল্লাস সেই কথাকে পাত্তা দিলো না।বরং নিজের হাতে ফাউন্ডেশন মাখতে লাগলো।ঘুরিয়ে ফিরিয়ে হাতটাকে দেখে বলল,

“আমাকে কালোতেও মানায়।কী বলিস সখী?”

“মন ভালো না রে সখা।আজকে ভার্সিটিতে কী হয়েছে শুনবি?”

উল্লাস সম্মতিতে মাথা দুলায়।তোশার সঙ্গে তার বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক অনেক মজবুত হয়েছে।কীরকম করে দুটো পাগল নিজেদের সখা হয়ে গেলো।সমস্ত ঘটনা উল্লাস শুনে বিজ্ঞের অনুরুপ শুধালো,

“এতোটুকুতে খারাপ লাগছে?অথচ সামনে এমন একটি সময় আসবে যখন এই বলবে।ওই বলবে।রাস্তার পাশে দাঁড়ানো ঝালমুড়ি ওয়ালা মুড়ির সঙ্গে তোদের ঘটনা বানাবে।সেক্ষেত্রে স্টেপ কী হবে তোদের?খুব অল্প সংখ্যায় মানুষ তোদের পক্ষে বলতেও পারে কিংবা না।”

তোশা গুরুগম্ভীর ভাবনায় ডুবে যায়।কাঁধের ব্যাগটা কোলে নিয়ে বসে পড়লো।সত্যি সে যেই সমুদ্রে নৌকা ভাসিয়েছে সেখানে ঝড় আছে।ক্ষণে ক্ষণে বৃষ্টি হয়।

“এলেমেলো উল্লাস,তুই কী সিওর যে কবীর শাহ বিয়ের ক্ষেত্রে পিছিয়ে যাবে?”

“নাহ।কবীর শাহ পিছাবে না কারণ সে কথা দিয়ে কথা রাখতে জানে।কিন্তু পরিস্থিতি যদি অনুকূলে না হয়?বাই দ্য ওয়ে তোদের ভালোবাসা মুহূর্তের কিছু তো পেলাম না স্ক্রিপ্টে।”

“মানে?”

“কবীর শাহ তোকে কিস করেনি?রোমান্টিক মোমেন্ট।”

রাজার মনে হচ্ছে দৌড়ে এখান থেকে চলে যাক।সে স্বভাবগত একজন প্রচন্ড লাজুক একজন মানুষ।আর তার কর্মজীবনে অর্ধেক পাগল এলেমেলো উল্লাসের সাথে জুড়ে গিয়েছে।এতক্ষণ তাদের কথা খুব মনোযোগ দিয়ে শুনছিলো সে।এবার চোখ বন্ধ করে নিশ্বাস টেনে নিলো।তোশা নির্বিকার ভাবে বলল,

“তোর নিউরনগুলোর সিন্যাপসে বহু সমস্যা আছে।জানতাম না এতো পাগল তুই।”

“আমিও তো জানতাম তুই অনেক আহ্লাদী।সেক্ষেত্রে এমন চুপ কেন?”

“কারণ মানুষের আহ্লাদের মানুষটি একজন হয়।”

তোশা পরবর্তীতে নিশ্চুপ হয়ে গেলো।সামনে রাখা ল্যাপটপে বাকী স্ক্রিপ্টটা লিখে দিয়ে যাচ্ছে।সময়ে সময়ে দীর্ঘ শ্বাস বের হচ্ছে মেয়েটির ভেতর থেকে।উল্লাস স্মিত হাসলো।কিছু ভালোবাসা এতোটা জটিল হয় কেন?

“তোশামণি।”

“হ্যাঁ।”

“ভেবে নে।এমন একটি দিন এলো যেখানে কবীর শাহ থাকলো না।কেমন লাগবে?”

তোশা না ভেবে জবাব দিলো,

“এমন দিনটা একদিন এলো।সেদিন আমি হারিয়ে যাবো।”

ভর্ৎসনা করে উল্লাস হাত নাড়ালো।

“টিপিক্যাল প্রেমিকার অনুরুপ ম’রা’র চিন্তা।তখন কবীর শাহ তোর স্মৃতিতে বানাবে চেরীমহল।যা শত শত বছর ধরে সকলের কাছে প্রিয় হয়ে থাকবে।”

তোশা মৃদু হেসে টাইপিং এ মনোযোগ দিলো।তার কথার আড়ালে অনুভূতিটি এলেমেলো উল্লাসের হয়তো বোঝার কথা নয়।

(***)

“বৃষ্টি।বৃষ্টি।”

কবীরের বলিষ্ঠ কণ্ঠ শুনে বাড়ীর সকলে নিজ রুম থেকে বের হয়ে এলো।বৃষ্টি ছাদে ছিল।দৌড়ে এসে শুধালো,

“কিছু বলবে চাচু?”

“আমার রুমে এসো।”

চামড়ার জুতোতে কঠিন শব্দ তুলে নিজ রুমের দিকে এগিয়ে গেলো কবীর।পিছনে বৃষ্টিও গেলো।

“চাচু ডেকেছিলে?”

কথার সমাপ্তিতে অনেক জোরে চ’ড় বসিয়ে দিলো কবীর মেয়েটির গালে।হতভম্ব হয়ে গেলো বৃষ্টি।যে চাচা ছোট্ট পুতুলটির অনুরুপ সামলে রেখেছে সে আজ গায়ে হাত তুলে দিলো?

“চাচু।”

“চুপ।তোমার কী মনে হয় মেয়ে?কবীর শাহ এতোটা সস্তা ও চরিত্রহীন যে টাকার বিনিময়ে নিজ বান্ধুবীর মেয়েকে র’ক্ষি’তা করে রাখবো?একটা মেয়ে হয়ে তার নামে এসব ছড়ানো কোন ধরণের মানসিকতার প্রমাণ।”

বৃষ্টি কোথাও থেকে সাহস জুগিয়ে বলল,

“যে মেয়ে বয়সের দ্বিগুণ মানুষকে পছন্দ করতে পারে সে কীভাবে ভালো হয় চাচু?বরং অর্থলোভীদের কাতারে সবার আগে তার নামটা থাকবে।”

কবীর খলবলিয়ে উঠলো।কপালের চুলগুলো সুবিন্যস্ত করে রাখলো।পুনরায় চড় বসিয়ে দিলো বৃষ্টির গালে।

“তোমাকে কেন কাওকে এক্সপ্লেনেশন দেওয়ার জন্য কবীর বসে নেই।তোমার যে বান্ধুবীকে এগুলো বলে ভার্সিটিতে ছড়িয়েছো তাকে আজকে সব ক্লিয়ার করে দিবে।তা নয় পরের চড়টা তোমার ফুপু সিয়া দিবে।”

“চাচু তোমরা কোনভাবে বিষয়টাকে ভালো ব্যাখায় দাঁড়া করিয়ে রাখতে পারবে না।বরং..।”

“শাট আপ বৃষ্টি।এখান থেকে যাও।”

“একদিন পস্তাবে তুমি চাচু।যখন মেয়েটা তোমাকে বিপদে ফেলে সব সম্মান নষ্ট করে চলে যাবে।”

“তোশা পালাতে চাইলেও ধরে রাখবো আমি।”

বৃষ্টির বড় দুঃখ লাগলো।সে কাঁদতে কাঁদতে রুম থেকে বের হয়ে গেলো।কবীর ক্লান্ত শরীরে ডিভানে গা এলিয়ে দিলো।শৈল্পিক দেহ তার।বড় বড় পা ছড়িয়ে দিলো সামনে।ফোন বের করে তোশার নাম্বারে ডায়াল করতে গিয়ে থেমে গেলো।হাতেগোনা কয়দিন পর বিয়ে করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে।অথচ নিজ মস্তিস্কের সঙ্গে সে লড়ছে।মূলত তোশা-কবীর প্রেমিক যুগল দুজনে লড়ছে তাদের মানসিক অবস্থান নিয়ে।কিন্তু কেউ কাওকে জানাচ্ছে না।ভালোবাসার রঙটা তাদের জীবনে বির্বণ হয়েই ধরা দিবে নাকী রঙিন মিষ্টি প্রজাপতি হয়ে?

চলবে।
এডিট ছাড়া পর্ব।সকল পাঠক রেসপন্স করবেন।আপনাদের দোয়ায় আমি এখন সুস্থ। পরিস্থিতি যে খারাপ হয়েছিল ভেবেছিলাম এ যাত্রায় গেলাম বলে!

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here