#মিঠা_রোদ
#পর্ব:৪৫
#লেখা:সামিয়া_খান_প্রিয়া
“ডিভোর্স হলে সন্তান হয়ে যায় জেদের জিনিস।স্বামী বলে সে রাখবে, স্ত্রী বলে সে রাখবে।যাক সেই কথা।তোশার উপর তোর থেকে তাহিয়ার অধিকার বেশী মায়ান।এতোগুলো বছর তুই দেশে আসিস নি।এখন এসে অধিকার দেখালে তো চলবে না।”
“তাই বলে আমার সাথে দেখা অবধি করতে দিবেনা মা?”
“দেখা করতে দেয়না?নাকী তোশা আসেনা?আমি ওর দাদী।বলতে পারবি?প্রত্যেক বছর ইদে ডেকে নিজ হাতে রান্না করিয়ে সামান্য সেমাই খেতে দিয়েছি?তাহিয়া অনেক আহ্লাদে বড় করেছে।কারো আদর পায়নি।”
মায়ান দীর্ঘ শ্বাস ছাড়লো।চোখের চশমাটি ঠিক করে বলল,
“কবীর মানিয়েছে তাহিয়াকে তোশামণিকে যেন এই বাড়ীতে আসতে দেয়।”
“তাহলে এতো কথা উঠছে কেন?হলো তো।”
“কথা উঠবেনা মা?দেখা গেলো আমার থেকেও তোশার বড় অভিভাবক হচ্ছে কবীর।”
নিজ পুত্রের চোখেমুখে হতাশার শীতল ঢেউয়ের ছায়া তিথির চোখ এড়ালো না।মায়ানের কষ্টটি ঠিক কোথায়?তা সরাসরি জিজ্ঞেস করে ফেললো,
“তোর কষ্টটা কোথায়?কবীরের শক্ত জায়গা তোশার জীবনে নাকী নিজের অবস্থান নিয়ে?”
“দুটোই মা।”
“বন্ধু হিসেবে কবীরের মতোন তুই আন্তরিক না।”
“কথাটা তোমার নতুন না।”
গেইট খোলার শব্দে মায়ান বারান্দায় এসে দাঁড়ালো।তোশা একা ড্রাইভ করে এসেছে।মায়ানের মাঝেমধ্যে বিশ্বাস করতে কষ্ট হয় মেয়েটা সেই ছোট্ট পুতুলটা নেই।
ড্রয়িং রুমে অচেনা অতিথির ন্যায় বসে আছে তোশা।এটা তার মায়ের প্রাক্তন সংসার। খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখছে সে।অদ্ভূত হলেও জায়গাটি আপন নয় তার নিকট।রান্নাঘর থেকে টুংটাং শব্দ হচ্ছে।তোশা উঠে গেলো।বরং ফোন বের করে কবীরের নাম্বারটিতে ম্যাসেজ পাঠিয়ে দিলো।
“তোশামণি?”
বাবার কণ্ঠে মিষ্টি করে হাসলো তোশা।মায়ান কন্যার মাথায় হাত বুলিয়ে বলল,
“ব্যাগ কোথায়? তুমি কী কয়দিন থাকবেনা?”
“ব্যাগ গাড়ীতে।”
“আমি কাওকে দিয়ে আনিয়ে নিচ্ছি।দাদীর সাথে কথা বলে নাও।সে তোমার অপেক্ষা করছিলো।”
তিথি মায়ানের পিছনে ছিল।নাতনিকে বসিয়ে আদর করে এটা ওটা জিজ্ঞেস করছে।এমনকি তার জন্য হরেক রকমের পিঠা তৈরী করেছে।টিনা দূর থেকে তোশাকে দেখলো।হাজার হোক স্বামীর অন্য পক্ষের মেয়ের আপ্যায়ণ তার মনমতো হলো না।মুহুর্তে ড্রয়িং রুমে কোলাহল জুড়ে গেলো।তোশার অন্য সব কাজিনরা এসে তার সাথে আলাপ করছে।এদের সঙ্গে বছরেরও একটি কথা হয় কীনা সন্দেহ।তবে ওইযে রক্তের সুমিষ্ট ঘ্রাণে সকল আত্মীয় আচ্ছাদিত হয়ে থাকে।তোশার ছোট চাচার মেয়ে তাকে আহ্লাদে জিজ্ঞেস করলো,
“তোমার বয়ফ্রেন্ড আছে তোশা আপু?”
তোশা মিষ্টি করে হাসলো।বড়রা এখন নেই আশে-পাশে।সে একটু গা ছাড়া ভাবে বসে বলল,
“আছে তো।”
“ওয়াও!সে কী করেন?”
অল্প বয়সী মেয়েদের কথাগুলো বেশ বিস্ময়কর হয়।তোশা হেসে বলল,
“তোমার আছে নিশা?”
“আছে।আমাদের ক্লাস টপার।তোমার জন কে?”
“শুনলে ভয় পাবে।”
“কেন?কী এমন মানুষ সে?”
“সে?সে হচ্ছে দৃঢ় ইস্পাত,কঠিন শিলা,শক্ত সেগুন কাঠ।”
নিশা কৌতুহলী হয়ে শুধালো,
“আপু সে কী কালো?কারণ এখানে সব কয়টার রঙ ময়লা।”
পরপর চোখের পাপড়ি ফেললো তোশা।কী আজব?কবীর শাহ যে কালো সেটা সকলে কেন বুঝে যায়?প্রিয় কোলনের সুগন্ধে তোশার টনক নড়লো।সে পাশ ফিরে দেখলো সেই দূঢ় ইস্পাতের মতোন পুরুষটি তার পাশ দিয়ে হেঁটে গেলো।তোশা নিজেকে সুবিন্যস্ত করে নিলো।ভেতর থেকে মায়ান ও কবীরের কথা শোনা যাচ্ছে।তোশাদের আলাপ জমলো না।তাকে নিয়ে নিশা নিজের রুমে চলে গেলো।মানুষটা কী সুন্দর মেয়ে তোশাকে এড়িয়ে গেলো?যুবতীর ভেতর স্বত্ত্বা মুখ বাঁকিয়ে নেয়।
(***)
চায়ের কাপে টুংটাং শব্দ হচ্ছে।বাহিরে কোথাও কাক বিরক্তিকর সুরে ডেকে উঠলো।দুজন কতো কালের বন্ধু।কিন্তু আজ যেন তাদের মধ্যে কোনো দেয়াল গড়ে উঠেছে।
“কী বলতে চাস তুই যে আমার বিয়ে করতেই হবে?এটা জরুরি নাকী?”
“আলবৎ জরুরি।মেয়ে দেখেছি।তোকে বিয়ে দিয়ে এরপর কানাডায় ফিরবো আমি।”
কবীরের ভ্রু যুগল আন্দোলিত হলো।বাহুদ্বয় আড়াআড়ি জুড়ে শুধালো,
“হঠাৎ আমার বিয়ে নিয়ে পড়লি যে মায়ান?দিশা বলেছে?”
“নাহ তো।”
“আমি জানি তুই ওর সঙ্গে দেখা করতে গিয়েছিলি।মনের কথাগুলো খুলে বল।”
“মনের কথা মনে থাকুক কবীর।মেয়ে কে শুনতে চাইবি না?”
“নাহ তো।”
“কেন?”
“কারণ তাকে বিয়ে করার কোনো কারণ দেখছিনা।বিয়ে আমি করবো।সময় হলে।”
“তাই নাকী?সেই মেয়েটি কে?”
“সময়টা হয়নি বলার।”
কবীরের রহস্যময় কথাবার্তায় মায়ানের মনটা কেঁপে উঠলো।সত্যি অর্থে তোশাকে নিয়ে ভয়টি তার কাঁটেনি।যদি বিষয়টি অবাঞ্চিত হয় তাহলে বন্ধুর সামনে কম নিচু হবেনা সে।
“আমি কী চিনি তাকে কবীর?”
মায়ানের প্রহেলিকাতে সন্দেহের আভাস পাওয়া যাচ্ছে।কবীর চায়ে শেষ চুমুক দিয়ে বলল,
“যদি বলি চিনিস?তাও থাক।সারপ্রাইজ হোক বিষয়টি।”
“শেষে এমন সারপ্রাইজ না পাই যেটা হজম করা কষ্টসাধ্য হয়।”
টিনা উচ্চশব্দে ডেকে উঠলো মায়ানকে।কবীরের থেকে ছুটি নিয়ে রুমের দিকে এগিয়ে গেলো সে।তার কথাগুলো ভাবাচ্ছে কবীরকে।বাঁধ ভাঙা পানির মতোন সময়গুলো বয়ে চলেছে।সবথেকে কঠিন পরীক্ষাতে বসবে কবীর।দেখা যাক পাশ করে নাকী হাঁটুভেঙে মুখ থুবড়ে মাটিতে গড়াগড়ি খায়।অনেকক্ষণ মায়ানের দেখা না পেয়ে উঠে দাঁড়ালো কবীর।সামনে ছাদের সিঁড়ি।কোনোকিছু না ভেবে সেদিকে অগ্রসর হলো।গা গরম হওয়া রোদ পায়চারি করছে কবীর।মায়ানকে দিশা কিছু বলেছে কীনা সেই বিষয়ে সন্দেহ হচ্ছে।অন্যমনস্ক কবীরের হাতটা হঠাৎ ছোট্ট বড়ই গাছটায় গিয়ে লাগলো।সামান্য আঁচড় লাগলো এতে।
“ব্যাথা পেলেন আপনি?”
তোশা ব্যস্ত হয়ে কবীরের হাতখানি ধরলো।আদরে জায়গাটিতে আঙুলের স্পর্শ দিলো।
“বেবি গার্ল,তোমার কী মনে হয়?কবীর শাহ এতো অল্প ছোঁয়ায় ব্যাথা পায়?তার এসবে কষ্ট হয়না।কিন্তু..।”
তোশাকে টেনে একদম নিজের কাছটায় নিয়ে এলো।কপালের সঙ্গে নিজের উষ্ণ কপালটা মিলিয়ে বলল,
“কষ্ট হয় এটা ভেবে যদি সমাজের দোহাই, সম্পর্কের চাদরে আমাদের ভালোবাসা মিথ্যা হয়ে যায়?বয়স ধরে তোমাকে আমার থেকে দূরে সরিয়ে দেয়?যতো সময় আসছে ভয় বাড়ছে।”
মুগ্ধ তোশা কবীরের গালে হাত বুলিয়ে দিলো।মায়াময় কণ্ঠে বলল,
“আমার খুব কান্না পায়।”
“আমার বুকে এসো।এরপর কাঁদো।যদি তোমার শীতল চোখের জলে আমার য’ন্ত্র’ণা কমে যায়।”
বাধ্য মেয়ের মতোন তোশা বুকে মাথা রেখে কাঁদছে।নিজের হাতে ধাতব কিছুর স্পর্শ পেয়ে চমকে মুখ তুললো মেয়েটি।হাতে সুন্দর একটি আঙটি পরিয়ে দিয়েছে কবীর।
“এটা আমাদের বিয়ের প্রথম রীতি ছিল বেলাডোনা।আঙটি বদল।”
চলবে।
এডিট ছাড়া পর্ব।আমি খুব কষ্টে আজকের পর্বটা দিলাম।অসুস্থতা এতো বেড়েছে যে আজ সকালে হসপিটালে ভর্তির কথা উঠেছিল।কিন্তু দুপুর থেকে সুস্থ।আড়াই ঘন্টায় মাত্র এতোটা লিখতে পেরেছি।ঠিকমতো রেসপন্স করিয়েন।