#মিঠা_রোদ
#পর্ব:৪৪
#লেখা:সামিয়া_খান_প্রিয়া
“আপনি লোকটাকে এভাবে মা’র’লে’ন কেন?”
“সেটা তোমার জানা আবশ্যক নয়।তবে মনে রাখো আজকের পর থেকে কখনো অভিনয় জগতের নামটাও নিবেনা।”
কবীরের লম্বা পা ফেলার সঙ্গে ঠিক পেরে উঠছেনা তোশা।দৌড়াতে হচ্ছে রীতিমতো।নিজের শারীরিক গঠণ নিয়ে প্রথমবারের মতোন আফসোস হলো তার।
“আমাকে বলতে হবে আপনার।কেন লোকটার এই অবস্থা করলেন।এবং অভিনয়ের সঙ্গে কীসের সংযোগ?”
“সব শুনতে হবে তোমার?”
তোশা মুখটা উঁচু করে বলল,
“হ্যাঁ।”
“আমি বলতে বাধ্য নই।”
“আরে কবীর শাহ।”
কথা বলতে বলতে নিচে নেমে এসেছে তারা।উল্লাস পূর্বেই নিজের গাড়ী নিয়ে চলে গিয়েছে।তোশাকে টেনে গাড়ীর ভেতর বসালো কবীর।
“তোশা মনোযোগ দিয়ে কথাগুলো শুনবে।অভিনয় জগত যতোটা চাকচিক্যময় দেখা যায় বস্তুত পক্ষে বিষয়টা তা নয়।একটা কনটেন্ট সেটা হোক সিনেমা,নাটক,শর্ট ফ্লিম তা হিট করানোর জন্য অনেকগুলো উপায় তৈরী করে।তোমার নাটকটা হিট করেছে।যা মানানসই।কিন্তু প্রোডাকশন টিম আরো বেশী হিট করার জন্য তোমার ফ্যামিলির কিছু ব্যাপার নিয়ে অপব্যবহার করতো।উল্লাস বিষয়টি জেনে আমাকে বলল।দেখো অভিনয় খারাপ সেটা নয়।বরং মার্জিত অনেক কিছু সিনিয়র এক্টররা তৈরী করেছেন।তুমি বুঝতে পারছো আমি কী বললাম?”
তোশা বিস্ময় নিয়ে কবীরের ঘর্মাক্ত মুখটা দেখছে।দীর্ঘ ললাট,পুরু অধরযুগলে মায়া জড়ানো।তোশা মুখ ফসকে বলে ফেললো,
“অপব্যবহার করলে কী হতো?মানুষ কী এখনও এতোটা বোকা যে অন্যের ফ্যামিলিতে কী চলে সেটা নিয়ে মাথা ঘামাবে।”
“জীবন এখন এমনটাই রয়েছে।বিষয়টা বলতে চাইনি।”
“আমার ফ্যামিলির ঠিক কোন বিষয়টা নিয়ে নিউজ হতো?”
“তোমার মা-বাবার বিয়ে।ডিভোর্স এসব।বাদ দাও।”
কথার সমাপ্তিতে গাড়ী চলতে শুরু করলো।তোশার কৌতুহলী মন।সে পুনরায় শুধালো,
“বাবা-মায়ের ডিভোর্স হয়েছে।তার মানে কী পরিবার খারাপ?শুধু শুধু।”
“হুম।”
তোশার মন অবশ্য সেটা মানলো না।স্মরণে হচ্ছে কিছু একটা লুকাচ্ছে কবীর।ঠান্ডা বাতাসে হালকা শীত লাগছে তোশার।গা গরম হওয়ার জন্য হাতে হাত ঘর্ষণ করলো।
“এসি অফ করে দিবো?”
“উহু।আপনি কিছু লুকাচ্ছেন।আমাকে সেটা বললে কী হয়?”
“শুনতে ভালো লাগবেনা।কিন্তু বিষয়টা না জানলে ভবিষ্যতে আবার মানুষ দূর্বলতা ভেবে নিবে।”
“ভয় দেখাচ্ছেন?”
কবীর নিশ্চুপ থেকে গাড়ী অচেনা একটা রাস্তায় নিয়ে গেলো।ক্ষণবাদে বিশাল বড় একটি বাড়ীর সামনে তা থামালো।বাড়ীটা এখনও পুরোপুরি তৈরী হয়নি।কবীর প্রথমে বের হয়ে তোশাকেও পথ করে দিলো।
“এটা কার বাসা?”
“মি.কবীর শাহ ও মিসেস.তোশা চৌধুরীর।”
শিহরণ বয়ে গেলো তোশার শরীর মন জুড়ে।মাথাটি নিচু হয়ে গেলো।কবীর বাঁকা হাসলো যুবতীর লজ্জা দেখে।কাছে এসে উষ্ণ শ্বাসের ছোঁয়া দিলো তোশাকে।
“মিসেস বলায় এতো লজ্জা?অথচ মানুষ শুনলে বলবে কী বুড়োর সাথে প্রেম করছে।”
“আপনি মটেও বুড়ো না।”
“সে তুমি মন ভুলানো যাই বলো।নেমে এসো।”
কবীরের শক্ত হাত খানা ধরে নেমে এলো তোশা।বাড়ীর চারিধারে উজ্জ্বল লাইট জ্বলছে।কয়েকজন দারোয়ানও রাখা হয়েছে দেখা যাচ্ছে।কবীর সোজা তোশাকে নিয়ে ছাদে চলে এলো।সাদা-কালো রঙে মেতে থাকা অনুভূতিহীন ঢাকা শহরকে দেখে তোশার দীর্ঘশ্বাস বের হয়ে এলো।কবীর তার পাশটায় এসে দাঁড়ালো।সমীরণে পুরুষটির কপালের চুলগুলো উড়ছে।
“বাবা -মায়ের বিয়ে নিয়ে কতোটা জানো তুমি?”
“এটা যে অনেক ছোট বয়সে বাবা মনে করলো মাকে বিয়ে করে ফেলবে।তাই করলো।কিন্তু আমি অনাকাঙ্ক্ষিত ভাবে..।”
“মায়ানের হঠাৎ এই খেয়াল কেন এলো কখনো ভেবেছো?মায়ান-তাহিয়া এক জায়গায় ঘুরতে গিয়েছিল কলেজ মিস দিয়ে।সেখানে কিছু ছেলেরা তাদের আঁটকে রাখে একদিন।পরবর্তীতে বিষয়টা ঢাকতে বিয়ের কথাটি ছড়ানো হয়।প্রায় তিনমাস দুজনে বিয়ে ছাড়া সংসার করেছে।বিষয়টা কিছু মানুষ জানতো।তাদের থেকে কীভাবে তোমার টিমেরা খবর পেয়েছে সেটা জানা নেই।”
“কবীর শাহ আমি বৈধ সন্তান তাদের?”
মেয়েটির কণ্ঠে কিছু একটা ছিল।যা কবীরকে বিভ্রান্ত করে দিলো।সে শশব্যস্ত হয়ে বলল,
“এই চুপ।তুমি শুদ্ধ একজন মানুষ।এমনটা ভেবো না।”
” তাহলে এভাবে কেন বলছেন?কেন বা আমাকে জানাচ্ছেন?নাহ আপনি সব বলছেন না।আমার জন্ম ইতিহাস আরো গভীর কিছু আছে।”
“নেই।এতোটুকু জানা প্রয়োজন ছিল।যাতে তুমি নিজেকে ডিফেন্ড করতে পারো।বেশী ভেবো না।”
“আপনি আমাকে স্বাত্বনা দিচ্ছেন?”
“নিজের মায়ের পবিত্রতা নিয়ে প্রশ্ন আছে তোমার?”
“না।”
“সেখানে এসব প্রশ্ন করা উচিত নয়।তারা নিজেদের সংযত রেখে পরবর্তী বিয়ে করে নিয়েছে।”
“আপনি সত্যিটা বলেন।”
“এটাই সত্যি।”
কবীরের খামখেয়ালিপনাতে তোশার রাগ উঠে গেলো।সে কাছে টেনে লোকটাকে শুধালো,
“আপনি কী আমাকে বলদ ভেবেছেন?এটাকে ইস্যু ধরে কীভাবে কী রটাতো লোকটা?”
“বলদ ভাবার কিছু নেই।টেকনিকালি তুমি সেটাই।”
অপমানে কেঁদে ফেললো তোশা।অন্ধকার ময় পরিবেশে যা ভুতুড়ে লাগলো।কবীর নিজের সঙ্গে কিছু একটা বলল।গরম লাগছে তার।অকস্মাৎ নিজের গায়ের শার্টটি খুলে ফেললো সে।তোশা কান্না থামিয়ে একমনে তা দেখছে।
“কী হলো কান্না থামালে কেন?শুনতে মধুর লাগছিলো।”
“আপনি কতোটা পা’ষা’ণ জানেন?”
“তাহিয়া-মায়ান কখনো এমন কিছু করেনি যার জন্য নিজেকে অপবিত্র বলবে।”
“আব্বুকে কবে আমাদের কথা বলবেন?”
“কেবল দেশে এলো।কয়দিন অপেক্ষা করো।”
“মিথ্যুক।আপনি বলবেন না।পরে সব শে’ষ হয়ে যাবে।”
“মেয়ে মানুষ তো সবুর নেই।”
“এই ছেলে মানুষ,আপনার সবুর দেখি।দেখি আপনার সবুর।”
“ওইযে আমার মাথায় সবুর।”
তোশা এগিয়ে এলো কবীরের কাছটায়।কিন্তু যেই না তাকে স্পর্শ করতে যাবে ঠিক তখুনি কবীর হাত মুচড়ে তাকে নিজের কাছটায় নিয়ে।
“আগামী সাতদিন পর আপনাকে আমি নিজের করে নিবো।বিয়ের জন্য খুব লাফান না তোশামণি?নিজেকে তৈরী করে নেন।”
তোশা অবাক হয়ে কবীরের সামনে দাঁড়ালো।বিস্ময় কণ্ঠে বলল,
“সত্যি?”
“হ্যাঁ।চলো তোমাকে এখানে নিয়ে আসার কারণ দেখাই।”
তোশার হাতটা ধরে নিচে নেমে যাচ্ছে কবীর।তিনতলা কিছুটা কমপ্লিট হয়েছে।বড় একটা রুমের সামনে তাকে নিয়ে এলো।সাইডে কালো রঙের আলমারি খুললো কবীর।
“তোমার বিয়ের শাড়ী।দেখো তো পছন্দ হয়েছে কীনা।”
একটি খয়েরী রঙের বেনারসি তোশার সামনে ধরলো কবীর।মেয়েটির চোখ অশ্রুতে ভরে গেলো।হুট করে তাকে আয়নার সামনে নিয়ে গেলো কবীর।পিছন থেকে স্বর্ণ রঙের পাথরখচিত ওড়না মাথায় পরিয়ে দিয়ে বলল,
“দেখো তো কবীর শাহ এর বধূকে কেমন লাগছে?”
“অনেক সুন্দর।”
“তাইনা?”
তোশা মাথা নাড়ালো।সে কবীর শাহ এর বধূ।ভাবতেই একটু আগের ভয়, কান্না মিলিয়ে গেলো।এই দিনটার জন্য সে কতো অপেক্ষা করেছে।তামাটে পুরুষটির সঙ্গে বৈধ হওয়ার জন্য।তোশার পিছনে কবীর বোতাম লাগানো বিহীন শার্ট পরে আছে। দুজনের পোশাক এখন বড় অদ্ভূত।কিন্তু তোশা এই অদ্ভূত পোশাকের সময়টি কখনো ভুলবেনা।বারংবার তার কানে বেজে চলেছে।
“সে কবীর শাহ এর বধূ।”
চলবে।
এডিট ছাড়া পর্ব।সকল পাঠক সুন্দর মতোন রেসপন্স করবেন তো।কী মনে হয়?এতো সহজে বিয়েটা হবে?